প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬
আদ্রিতা নিশি

“সারহান ভাই আমরা আবির ভাইয়ের বাড়িতে না গিয়ে এখানে কেনো এসেছি।”
অরিত্রিকা মুখ ভার করে বসে আছে এক অচেনা বাসার বসার রুমের সোফায়।চোখে মুখে কৌতূহলী উদ্বিগ্নতার ভাব। ঘাড় বাঁকিয়ে আশপাশে তাকিয়ে একদৃষ্টে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে দেয়ালে টাঙানো বিভিন্ন ধরনের চিত্র, বসার রুমে রাখা আসবাবপত্র এবং অচেনা বাসার পরিবেশ। তার চঞ্চল দৃষ্টি যেন একমুহুর্ত স্থির হচ্ছে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একবার সামনের জানালার দিকে, একবার কোণের ফুলদানি আবার কখনো পাশের বন্ধ দরজার দিকে স্থির করছে। অস্বস্তি, জড়তায় ছেয়ে গেছে অন্তঃকোণ। এ বাসায় যখন এসেছিল তখন একজন মহিলা দরজা খুলে দিয়েছিল। মহিলাটিকে দেখে বাসার মালিক মনে হয়নি তার। আর কতক্ষণ এমন অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকবে তারা। আদৌও কি বাসায় কেউ আছে?তার পাশেই যেন এক বিপরীত মেরুতে আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে সারহান।পায়ের ওপর পা তুলে নীরব শীতলতায় মোড়া এক নির্বিকার উপস্থিতি। হাতে ফোন, তাতে ব্যস্ত সে। ওষ্ঠকোণে এক চিলতে উদাসীনতা, চোখে নিরাসক্ত দৃষ্টি।

অরিত্রিকার কণ্ঠস্বর তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করেছে নিঃসন্দেহে।তবু মুখে কোনো সাড়া নেই, চক্ষুদ্বয়ে আলগা কোনো উত্তেজিত ভাব নেই।এমন ভাবলেশহীনতা যেন আরও তীক্ষ্ণ করে তোলে অরিত্রিকার বিরক্তি।সে ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ে থাকে সারহানের দিকে।দৃষ্টিতে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে ভাবে “এই মানুষটা আদৌ অনুভব করে কিছু?”
তার মুখ আমাবস্যার আকাশের মতো কালো হয়ে যায়।ভ্রু কুঁচকে ওঠে কিন্তু নিজেকে সংযত করে পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞেস করে;
“এটা কার বাসা?”
সারহান ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির রেখে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে নিরবতা ভাঙে।শব্দ গুলো তার ওষ্ঠ থেকে ধীরে ভারহীনভাবে ঝরে পড়ে;
“আমার ফ্রেণ্ডের বাসা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শব্দগুলোর ভেতরে কোনো উত্তাপ নেই।তবু অরিত্রিকার মনে যেন কিছুটা অস্বস্তি ছড়িয়ে দেয়।
সে চক্ষু বিস্ফারিত করে তাকায় সারহানের দিকে
ভ্রু খানিকটা কুঁচকে ওঠে। দৃষ্টি জিজ্ঞাসু হয়ে ওঠে মুহূর্তে।অপ্রস্তুত লাগলেও নিজেকে গুছিয়ে নেয় সে। অবাকতা আড়াল করে ওষ্ঠ ভিজিয়ে শুধায় ;
“আমরা এখানে কেনো এসেছি?”
সারহান হঠাৎ থেমে গেল।আঙুল থেমে গেল ফোনের স্ক্রিনে। চোখের দৃষ্টি সরে এলো ধীরে ধীরে। সে স্থিরভাবে তাকাল অরিত্রিকার দিকে।
চোখজোড়া শীতল, চাহনি গভীর।মনে হলো, যেন তার দৃষ্টির রোষানলে পড়ে অরিত্রিকা নিজের সমস্ত অভিব্যক্তি হারিয়ে ফেলছে। সারহান অতি শান্ত কন্ঠে জবাব দিল;
“ইম্পোর্টেন্ট কাজে এসেছি।”
“ইম্পোর্টেন্ট কাজ? তাহলে আবির ভাইয়ার বাড়িতে যাবেন না? ”
“সময় পেলে যাবো।”

“সময় পেলে যাবেন মানে? আজকে কী এখানে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে? ”
অরিত্রিকা কপাল কুঁচকে বলে উঠল। সারহান ভ্রুযুগল গুটিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল;
“ নো।”
অরিত্রিকা মুখ ভার করে বলল;
“আমি আপুকে জানিয়ে দিয়েছি আমি আর আপনি যাচ্ছি আবির ভাইয়াকে দেখতে। এখন যদি না যাই তাহলে কী ভাববে? আম্মুকে বলে এসেছি আবির ভাইয়ার বাসায় যাচ্ছি আপনার সাথে। আম্মু যদি আপুকে কল করে জানতে চায় আমরা পৌঁছেছি কিনা। তখন কি হবে বুঝতে পারছেন?”
“কি হবে?”
“কি আর হবে!আম্মু ভাববে আমি বাড়িতে মিথ্যা কথা বলে আপনার সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছি।”
“ভাবলে ভাবুক।”

“আপনি বিষয়টা বুঝতে পারছেন না। যদি আব্বু জানতে পারে তাহলে রাগারাগি করবে।”
“রাগারাগি কেন করবে? তোর বাপ কি তোর মতো ব্রেনলেস?”
ব্রেনলেস কথাটা যেন অরিত্রিকার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। কটমট করে তাকিয়ে ক্রোধ দেখিয়ে বলল;
“আমাকে ব্রেনলেস কেনো বললেন?”
সারহান অরিত্রিকার মুখপানে চাইল। বাঁকা হেসে বলল;
“আমি মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হই তোর মতো ঘিলু বিহীন মেয়েকে কীভাবে ভালোবাসলাম! বড্ড আশ্চর্যের বিষয়। এবার বল, বর্তমানে আমি সম্পর্কে তোর কী হই? ”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন! আপনি আমার সারহান ভাই হোন।”
“স্টুপিড কোথাকার। দুইদিন পর আমাদের বিয়ে অথচ এখনো ভাই ভাই বলে আমার মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছিস?”
“আপনি তো সম্পর্কে আমার কাজিন ব্রো হোন। তাই ভাই বলছি।”
“আমাদের বিয়ে যেহেতু ঠিক হয়েছে তাই বর্তমানে আমরা সম্পর্কে উডবি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ হই। উডবি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ বিয়ের আগে ঘোরাফেরা করলে বাড়ির কেউ কিছু বলবে না। বুঝেছিস?”
“ ইয়ে মানে বুঝেছি। সারহান ভাই একটা কথা বলবো?”
“বলুন আমার উডবি ওয়াইফি।”
সারহানের চোখেমুখে ক্রোধের রেশ স্পষ্ট।

তবু সে নিজেকে সংবরণ করে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে শান্ত কন্ঠে প্রতিত্তোর করে বলে। অরিত্রিকা মাথা নিচু করে বসে থাকে।সে জানে কথাটা না বললেই ভালো হতো।তবুও নিজেকে সামলাতে পারেনি।লজ্জায় বক্ষস্থল কেঁপে ওঠে।গালে ছুঁয়ে যায় উষ্ণ ভাব । মনে পড়ে যায় কিছু স্মৃতি। সারহানকে জ্বালানোর জন্য যখন পরিচয় গোপন করে কল করেছিল। সেসময় কাঠখোট্টা মানুষটা তাকে উডবি ওয়াইফি বলে ডেকেছিল। সে মুখ তুলে শান্ত এবং অনড় ভঙ্গিমায় তাকায় সারহানের দিকে। অস্বস্তিভাব আড়াল করে নরম কন্ঠে বলল ;
“আমার ইচ্ছে ছিল আমার বিয়ের আগে ধুমধাম করে এনগেজমেন্ট হবে, হলুদ সন্ধ্যা হবে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তেমন কিছু হলো না। এমন শুকনো বিয়ে কেউ করে?”
সারহান কোনো প্রতিত্তোর করল না। কিছুক্ষণ নিবিড় চাহনিতে অরিত্রিকার অভিমানে জর্জরিত মুখখানা পরখ করল। অতঃপরসে দৃষ্টি সরিয়ে আবারও ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখল। গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে পূর্বের ন্যায় ফোন স্ক্রোল করতে লাগল।কিন্তু তাতে কোনো উৎসাহ নেই। নেই কোনো আগ্রহের স্পন্দন।একটি নিষ্প্রাণ অভ্যাস যেন কেবল চলছে।অরিত্রিকার মেজাজ বিগড়ে গেল চরমভাবে।হৃদয়ের গভীরে যে আবেগটুকু সে এত কষ্টে উন্মোচিত করেছিল।তা যেন পায়ের নিচে মাড়িয়ে চলে গেল এই যান্ত্রিক, উদাসীন মানুষটি।
“অসভ্য লোকটা একটা!”মনে মনে গর্জে ওঠে সে।

তার চোখ রাগে জ্বলে ওঠে।ওষ্ঠদ্বয় কামড়ে ধরে অভিমান চেপে রাখতে।সে অভিমানী মনে ভাবে,
“কেন? কেন এমন একজনকে ভালোবাসলাম আমি?যে অনুভব করে না, বোঝে না, বলেও না কিছু!”সারহানের এই নিরামিষ ভঙ্গি, প্রতিটি উপেক্ষা তাকে ক্ষ*তবিক্ষ*ত করে দেয়।ভেতরটা তার ফুঁসতে থাকে ক্ষোভে, রাগে, অব্যক্ত অভিমানে।এমন মুহূর্তে মনে হয়”ইচ্ছেটা প্রকাশ করাই বুঝি ভুল হয়েছিল একদম।”হৃদয়ের যে কোণে সে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছিল নিজের স্বপ্ন,
সেখানে এখন জমে উঠছে একরাশ হতাশার সুর।
“হ্যালো গাইস! ”
আবেগ, অভিমান আর অব্যক্ত কথার ভারে নুয়ে পড়ছিল সে।ঠিক সেই সময়এই নিস্তব্ধতার বুক চিরে ভেসে এলো এক মেয়েলী কণ্ঠস্বর।

নরম, স্বাভাবিক কিন্তু অরিত্রিকার কানে যেন হঠাৎ বজ্রপাতের ন্যায় মনে হলো।সে চমকে তাকাল সামনের দিকে।দেখল কালো থ্রি পিস পরিহিত এক তরুণী ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে।
চেহারায় অপার মায়া। আঁখিযুগল মায়াবী ভীষণ।
মেয়েটার হাসিটা এতটাই কোমল যে কেউ মুগ্ধ হবে। অরিত্রিকা তড়িঘড়ি করে সারহানের দিকে তাকাল। চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করল;
“সারহান ভাই, এই আপুটা কি আপনার ফ্রেণ্ডের ওয়াইফ?”
সারহান ফোন স্ক্রোল করা বন্ধ করে। রাখঢাক না করে সরাসরি গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দেয়;
“আমার ফ্রেন্ড।”
অরিত্রিকার কৌতুহলী ভাব দমে গেল। প্রাণবন্ত মুখখানা চুপসে গেল। মনটা নিমেষেই খারাপ হয়ে গেল। তারমানে যন্ত্র মানবের মেয়ে ফ্রেন্ড আছে! কখনো সে দেখেনি কাঠখোট্টা, বদমেজাজি মানুষটাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে। তবে এই বান্ধবী নামক রমণীর আগমন কীভাবে ঘটল। মুন এগিয়ে এসে অপরপাশের সোফায় বসল। মৃদু হেসে সারহানকে উদ্দেশ্য করে বলল;

“আপনার এখন আসার সময় হলো?”
সারহান স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে বলল;
“ব্যস্ত ছিলাম তাই সময় হয়ে ওঠেনি তোর বাসায় আসার।”
“বুঝেছি। এক্সপ্লেইন করতে হবে না।আবিরের কী খবর?”
“মোটামুটি সুস্থ এখন।”
“তোরা দুজন কেন যে রাজনীতিতে নিজেদের জড়িয়েছিস? কতোবার নিষেধ করেছি রাজনীতি করার দরকার নেই। কিন্তু আমার কথা তোরা শুনলি না। দুইদিন পরপর মা*রামা*রি কা*টাকা*টি — বিরক্তিকর।”
অরিত্রিকা চোখমুখ কালো করে নিরবচিত্তে দুজনের কথোপকথন শুনছে। তার মোটেও ভালোলাগছে না বসে থাকতে। সামনে বসা অচেনা মেয়েটাকে তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। মুন কথা থামিয়ে তাকাল সারহানের পাশে বসা অরিত্রিকার দিকে। চিনতে অসুবিধা হলো না মেয়েটি তার বন্ধুর কাজিন এবং হবু বউ। সে দুবছর আগে থেকে চিনে অরিত্রিকাকে। সারহানের ফোনে ছবি দেখেছিল। পরে জেনেছিলো বন্ধু তার সতেরো বছর বয়সী কাজিনকে ভালোবাসে। এই নিয়ে সারহানকে সবসময় খুঁচিয়েছে তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে। সে সময়ের কথা ভেবে মৃদু হাসল। অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল;

“কেমন আছো অরিত্রিকা।”
অরিত্রিকা মুনের দিকে তাকাল। সৌজন্যতা বজায় রেখে হাসার ভাণ করে জবাব দিলো;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন আপু?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমাকে চেনো?”
“ নাহ আপু।”
“আমি মুন। সারহানের ভার্সিটির ফ্রেন্ড।”
“ ওহহ।”
অরিত্রিকা অস্বস্তি নিয়ে ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল। মুন অরিত্রিকার মনোভাব বুঝল। মেয়েটাকে স্বাভাবিক রাখতে কোমল কন্ঠে বলল;
“তুমি আমাকে না চিনলেও, আমি কিন্তু তোমায় খুব ভালোভাবে চিনি।”
অরিত্রিকা আগ্রহী কন্ঠে বলল;
“ কীভাবে?”
“সারহানের ফোনে তোমার ছবি দেখেছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়েটা কে? পরে আমাদের বলেছিল তুমি কে।”
“ওহহ।”
অরিত্রিকা মৃদু হেসে বলল। সারহান ও মুন পুনরায় নিজেদের মাঝে কথোপকথন শুরু করে দিলো। অরিত্রিকা বিরস মুখে সেসব শুনতে লাগল। এ মুহুর্তে সে একজন নিরব দর্শক ছাড়া কিছু না। যদি বাড়িতে থাকত তাহলে ইশরা এবং সাদাতের সাথে অনেক মজা করতো। এসব ভাবতেই মনে পড়ে গেল আজ সাদাতের জন্মদিন। কিন্তু সে এখনো উইশ করেনি। অরিত্রিকা সোফায় হেলান দিয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে। আশেপাশে কে কী করছে তা মোটেও খেয়াল করছে না। মন বাবাজী বড্ড বেজার। কেমন যেন উদাসীন এবং নিরব।
“মামনি আমার ক্ষুধা লেগেছে।”

হিমি ঘুমু ঘুমু চক্ষুদ্বয় ডলে ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে এগিয়ে আসে বসার রুমের দিকে। রুমে আসতেই দেখতে পায় অচেনা দুজন মানব মানবী কে। সে ওষ্ঠ উল্টায়। ড্যাবড্যাব করে তাকায়। কিছুক্ষণ চুপ করে মনোযোগ দিয়ে চেনার চেষ্টা করে দুজনকে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। মুখ কুঁচকে দৌড়ে এসে মুনের কোলে হামলে পড়ে। দুহাতে মামনিকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী ভঙ্গিমায় বলে;
“মামনি ক্ষুধা লেগেছে।”
হিমি হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় মুন চমকে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বাচ্চাটাকে আগলে নেয় বক্ষে। মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে কোমল কন্ঠে বলে;
“আচ্ছা খাবার খাইয়ে দিচ্ছি।”
অরিত্রিকার চুপসে যাওয়া মুখখানা জ্বলজ্বল করে উঠে হিমিকে দেখে। অশান্ত বক্ষে অজানা আনন্দে শীতল হয়ে যায়। সে চনমনে ভঙ্গিমায় ভাবে হিমি মুনের মেয়ে। বাংলার পাঁচের মতো মুখখানায় হঠাৎ হাসি খেলে যায়। উচ্ছসিত ভাব নিয়ে মুনকে জিজ্ঞেস করে ;

“আপু, বাচ্চাটা কি কিউট! কত্তো সুন্দর গুলুমুলু গাল। ইচ্ছে করছে টেনে দিতে। বাচ্চাটা কিন্তু দেখতে একদম আপনার মতো হয়েছে। বেবি তোমার নাম কি?”
শেষোক্ত কথাটি হিমিকে উদ্দেশ্য করে বলল। কিন্তু হিমি যেন শুনেও উপেক্ষা করল। সে উত্তর না দিয়ে মুনকে আরও শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরল। মুন বুঝতে পারল অচেনা কারো সাথে মেয়েটা কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। সে হিমিকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“ ওর নাম হিমি। সারহান তুই আর অরিত্রিকা একটু বস। আমি হিমিকে খাইয়ে আসছি।”
সারহান বলল ;
“ ওকে। ”
মুন হিমিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। অরিত্রিকা প্রফুল্লচিত্তে বলল ;
“সারহান ভাই, হিমি কত্তো কিউট। আপনি আগে কেন বলেননি মুন আপুর বাচ্চা আছে। যদি বলতেন তাহলে বাচ্চা মেয়েটার জন্য চকলেট, খেলনা নিয়ে আসতাম।”
অরিত্রিকার উচ্ছসিত ভঙ্গিমায় কথা বলা দেখে সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ক্ষীণ কন্ঠে বলল;
“ হিমি মুনের মেয়ে নয়। মুন অবিবাহিত।”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৫

অরিত্রিকার প্রফুল্লতা মাখানো মুখশ্রী চুপসে গেল। উচ্ছসিত ভাব লেজ গুটিয়ে পালাল। বিবশ নয়নে সারহানের দিকে তাকাল। সারহান বাঁকা হাসল। অরিত্রিকার ভাবমূর্তি বলে দিচ্ছে মেয়েটা জেলাস। সে এলোমেলো চুলগুলো হাত দ্বারা ঠেলে দিল। হাসি বজায় রেখে গলা খাদে নামিয়ে বলল;
“ আর ইউ জেলাস মিস. চৌধুরী?”
অরিত্রিকা অভিমানে ওষ্ঠ ফুলালো। সে বুঝতে পারলো সারহান তার মনে চলমান ভাবনা বুঝে গেছে। তাই এখন মজা নিচ্ছে। সে অন্যত্র তাকাল। মুখ ভার করে বলল;
“ আমি মোটেও জেলাস নই মিস্টার চৌধুরী। ”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬ (২)