প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬ (২)

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬ (২)
আদ্রিতা নিশি

“ শুভ জন্মদিন সাদুর বাচ্চা। ”
সাদাত আনমনা চোখে সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি স্থির করে শুয়ে আছে বিছানায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের আলো জানালার ফাঁক গলে রুমে প্রবেশ করছে। বাহির হতে মৃদু শীতল হাওয়ায় থেমে থেমে নড়ে উঠছে জানালার আকাশী রঙা পর্দাগুলো। বাহিরের পরিবেশ আজ রোমাঞ্চকর অথচ তার চারপাশে বিরাজ করছে কেবল একঘেয়ে বিষণ্ণতা। আজকের দিনটিতে অন্তত একটুখানি হাসি তার প্রাপ্য ছিল তা ভুলে গেছে সবাই। একফোঁটা পানি যেমন নেমে আসে খরস্রোতা নদীর পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে সাদাতের বক্ষেও তেমনি অসহনীয় অদৃশ্য ভার জমা হয়ে আছে।দুপুরের খাবার খায়নি সে।

ক্ষুধা যেন তার মনমেজাজের সঙ্গে আপোস করে নিয়েছে চুপচাপ এবং নিরুত্তাপ ভাবে। গতরাত ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধুমহলের অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছে, ফোনের পর ফোন, মেসেজের বন্যা। অথচ তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অরিত্রিকা ও ইশরা ছিল সম্পূর্ণ নিশব্দ, নিঃসাড়। এই নৈঃশব্দ্যই সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠে কথা বলে উঠেছে তার ভেতরে।হয়তো তারা ভুলে গেছে তার জন্মদিনের কথা। হয়তো জীবনের ঘূর্ণিপাকে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ভারে দিনটি চোখের আড়াল হয়ে গেছে তাদের। তবু যে আশাটা বক্ষস্থলের গভীরে কুন্ডলী পাকিয়ে বসে ছিল। যাদের থেকে সে সর্বপ্রথম প্রথম শুভেচ্ছা জানানোর আশা করেছিল তারা এখনো নিশ্চুপ। যে রমণীকে নিঃশব্দে নিভৃতে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ভেবে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে সে মেয়েটাই কি না আজ তাকে মূল্য দিতে জানে না! হয়তো অবহেলাই করেছে সাদাতকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সম্পর্কের সূক্ষ্ম সুতোয় গাঁথা সৌজন্যের জায়গায় একটুখানি গুরুত্ব এবং একটুখানি ভালোবাসা মিশিয়ে দেখলে খুব বেশি ক্ষতি হতো?যদি ইশরা একটিবারের জন্যও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাতো তাহলে হয়তো তার চোখে সাদাত নামের এই ছন্নছাড়া অস্থির প্রকৃতির মানুষটার অস্তিত্ব একটু গুরুত্ব পেত।এইসব ভাবনায় সাদাতের মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। ভাবনার অন্তঃশীলতাকে বিষিয়ে তুলেছে। একরাশ তিক্ততা ভর করেছে তার চিন্তায়, অনুভবে, মুখাবয়বে। তার প্রাণোচ্ছল দৃষ্টিভঙ্গি স্তব্ধ, নিস্পন্দ ধারণ করেছে।ঠিক এমন সময় মনভুলানো এক মেয়েলী কণ্ঠস্বরে তার ভাবনার জাল ছিন্ন হয়ে যায়। অন্য সময়ে সে নিশ্চয়ই হাসিমুখে তাকাতো কণ্ঠটির অধিকারিণীর দিকে। হয়তো নিঃশব্দে ভালো লাগার আলতো ভাব খেলে যেত চোখে-মুখে। কিন্তু আজ তার ইচ্ছে হয় না কিছু বলার না কিছু দেখার।এমন বেখেয়ালি মুহূর্তে হঠাৎ মনের গহিনে কিছু পুরোনো শব্দগুচ্ছ ভেসে ওঠে।অপ্রকাশিত অভিমানের এক টুকরো শব্দগুচ্ছ। সেসব মনে পড়তেই সাদাত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

“তুমি আপন মনে থাকো,
আমি ভালোবেসে যাই
তুমি বুঝিবে না কোনোদিন।” (সংগৃহীত)
ইশরা আধখোলা দরজার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ওষ্ঠকোণে বিরাজ করছে এক টুকরো প্রাণবন্ত হাসি। হাতে ধরা ছোট্ট একটা গিফট বক্স আর দুটো ঝকমকে হলুদ গোলাপ। চক্ষুদ্বয়ে ভীড় করেছে আনন্দিত ভাব ও একরাশ উচ্ছ্বাস। বহুক্ষণ ধরে জমিয়ে রাখা ভালো লাগার আবেশ নিয়ে সে তাকিয়ে আছে সাদাতের দিকে।দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আর দাঁড়িয়ে না থেকে দ্বিধাহীন পায়ে এগিয়ে আসে রুমের ভেতর। একেবারে সহজ ভঙ্গিতে স্বচ্ছন্দ ভরসায় ধপ করে বসে পড়ে সাদাতের বিছানায়। উপহার ও গোলাপগুলো সাবধানে পাশে রাখে। মুখভর্তি হাসি নিয়ে তাকায় সাদাতের দিকে।কিন্তু মুহূর্তেই তার হাসিমাখা মুখখানা স্তব্ধ হয়ে আসে। সাদাতের মুখের অভিব্যক্তি দেখে আনন্দের রঙ ফিকে হয়ে যায়। উচ্ছ্বলতা যেন হঠাৎ শূন্য হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কপালে কুঁচকে ওঠে দুশ্চিন্তার ভাজ।তবু নিজেকে দ্রুত সামলে নেয় ইশরা। চেনা ভঙ্গিতে ওষ্ঠকোণে শান্ত স্বর এনে বলে;

“আমি তোকে উইশ করেছি অথচ তুই চুপ করে আছিস। হোয়াট হ্যাপেন্ড, সাদাত?”
সাদাত ধীরে ধীরে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। তার ভঙ্গিমায় ছিল একরাশ ক্লান্তি, অভিমানের অব্যক্ত অনুভূতি। সে এলোমেলো চুলে আঙুল চালিয়ে একটু ঠিক করে নিলো। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে একপাশে রাখা ফোনটা হাতে তুলে নেয়। অতঃপর ফোন স্ক্রোল করতে লাগল। ফোন স্ক্রিনে দৃষ্টি স্থির রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল;
“নাথিং। আর আমাকে কষ্ট করে উইশ করার জন্য ধন্যবাদ।”
“মন খারাপ করার কারণ কি?”
“আমি মন খারাপ করিনি।”
“আমাকে মিথ্যা বলছিস কেনো?”
“আমি মিথ্যা বলছি না। সবসময় বেশী বুঝিস কেন?”

সাদাতের কণ্ঠ কঠোর এবং সংযত। তার স্বরে লুকোনো আছে অভিমান। কিন্তু প্রকাশটা এতটাই নিস্পৃহ যে ইশরার উচ্ছলতা নিমিষে মিলিয়ে গেল বাতাসে। মনটা খারাপ হয়ে গেল তার। সাদাতের ঠান্ডা ব্যঞ্জনায় মোড়ানো কথাবার্তা তার অন্তঃকোণ নাড়িয়ে দিয়ে গেল।সে বুঝতে পারলো হয়তো কোনো কারণ বশত সাদাতের মন খারাপ। ইশরা শান্ত এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল সাদাতের আচরণ। একেকটা ভঙ্গি, একেকটা আচরণ সবই যেন বলে দিচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু সময় এভাবে কেটে যাওয়ার পর নিশ্চয়তায় পৌঁছে ইশরার ভিতরটা রাগে ফুঁসে উঠল।এই ছেলেমানুষি, এই নির্বোধ অভিমান তাকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। মুখের প্রসন্ন রেখাগুলো এক মুহূর্তে কেটে গিয়ে গাঢ় বিরক্তির ছাপ ফেলল তার চোখেমুখে। সে হঠাৎই সাদাতের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।সাবলীল ভাবে গমগমে কন্ঠে জিজ্ঞেস করল;

“আমাকে ইগনোর করার কারণ কি?”
ইশরার আচরণে সাদাত মুহূর্তে থমকে গেল। সে বিস্মিত নয়নে তাকাল সামনে। ফোনটা হঠাৎ কেড়ে নেওয়ার মতো স্পর্ধায় সে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ মৌন থেকে রুক্ষ কন্ঠে বলল;
“আমি কাউকে ইগনোর করছি না।”
“কাউকে?এখন আমাকে সরাসরি বলতেও বাঁধছে? কি হয়েছে বল নয়তো তোর খবর আছে।”
“শরীরটা ভালোলাগছে না। প্লিজ আমায় একলা থাকতে দে।”
“এখন শরীরও খারাপ হয়ে গেল? আমি আগেই বুঝতে পেরেছি তুই আমায় ইগনোর করছিস আর এখন তোর কথা শুনে পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়ে গেলাম।”
“বেশী না বুঝে নিজের কাজে যা। কানের কাছে বকবক না করে নিজের কাজে যা।”

সাদাতের বিরক্তিভরা কন্ঠ স্বর স্বাভাবিক পরিবেশটা ভারী করে তুলল। তাতে ইশরা কিছুটা দমে গেল। সে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে চুপ করে গেল। মনে হলো, এই ছেলেটা কেন এত অবুঝ? কিছু তো বলছে না অথচ ঠাণ্ডা অভিব্যক্তির আড়ালে জমে থাকা অভিমান, রাগ দুটোই বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রকাশ করছে।তা মন বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল ভাবনার জালে। কি এমন ঘটেছে যার জন্য সাদাত এভাবে উদ্ভট আচরণ করছে? কেনো আচানক রাগ দেখাচ্ছে তার ওপর? আচমকা তার মনে পড়ে গেল গতরাতে তো সত্যিই সে প্রতি বছরের মতো ঠিক বারোটায় উইশ করেনি। ব্যস্ততা আর ক্লান্তিতে হয়তো মুহূর্তটায় দেরি হয়ে গিয়েছিল আর সেই ছোট্ট ফাঁকটাতেই হয়তো জমে উঠেছে অভিমান। এই কারণটাকেই মূখ্য কারণ বলে মনে হলো৷ অন্য কারণও হতে পারে। অনেকক্ষণ নীরব থেকে ম্লান মুখে কুণ্ঠিত ভঙ্গিতে বলল;

“জানিনা কেনো আমার কারণে মন খারাপ করে আছিস। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, গতরাতে প্রতিবছরের মতো বার্থডে উইশ করিনি বলে মন খারাপ করেছিস। সে কারণের জন্য আই অ্যাম স্যরি, সাদাত।”
ইশরার কথাগুলো সাদাতের মন ছুঁয়ে গেল। অভিমানে জর্জরিত ভেতরটা খানিকটা ছেদ পড়ল ঠিকই। কিন্তু সে তবুও নিজেকে সংযত রাখল। চুপচাপ, নিঃস্পন্দিত সত্তাকে আঁকড়ে ধরল যেন কোনো অনুভূতি নেই তার মধ্যে।ইশরা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝে ফেলল সে আর অরিত্রিকার না উইশ করাই মূলত সাদাতের এই চুপ হয়ে থাকার কারণ। মনে মনে হেসে ফেলল সে। কী ছেলেমানুষই না এই ছেলেটা! একুশ বছরের যুবক হয়েও ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে আছে! এই ছেলে নাকি একুশ বছরে বিয়ে করার জন্য লাফায়। আদৌও কি বিয়ে করার জন্য লায়েক হয়েছে?সে বিছানায় পাশে রাখা ছোট্ট বক্সটি হাতে তুলে নিলো। নিঃশব্দে খুলে বের করল সেই যত্ন করে কেনা ঘড়িটি। ঘড়িটা দেখতে সত্যিই চমৎকার। আর হবে না-ই বা কেন? কত সময় কত চিন্তা খরচ করে পছন্দ করেছে এই ঘড়িটা। পেজের পর পেজ ঘেঁটে তিন চার ঘণ্টা কেটে গিয়েছিল পছন্দ করতে। সে এক মুহূর্তও দেরি না করে সে সাদাতের অনুমতির অপেক্ষা না করেই হাতটা টেনে আনল নিজের কাছে। দৃঢ় এবং কোমল ভঙ্গিতে ঘড়িটা সাদাতে হাতে যত্ন করে পরিয়ে দিলো। তার চোখে-মুখে তখন প্রশ্রয়ের হাসি। ওষ্ঠকোণে এক টুকরো মুচকি হাসির অভিব্যক্তি। সেই হাসি বজায় রেখে বলল;

“আমার তরফ থেকে ছোট্ট উপহার তোর জন্য। পছন্দ হয়েছে?”
সাদাত ধীরে নিঃশব্দে নিজের হাতটা ইশরার নরম মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিলো। চোখেমুখে কোনো তাড়াহুড়ো নেই কিন্তু কপালে মধ্যাংশে স্পষ্ট ফুটে উঠল সূক্ষ্ম ভাঁজ। অন্তঃস্থিত মন ও মস্তিষ্কের নিরব দ্বন্দ্বে মনে প্রশ্নের রেখা এবং বক্ষস্থলে অনুভূতির মৃদু ঢেউ খেলে গেল।সে নিঃশব্দে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল। ঘড়িটা সত্যিই দারুণ। তার হাতে পড়ে সেটা আরও নিখুঁত হয়ে উঠেছে। ঠিক যেন একে অপরের পরিপূরক।
ঘড়ি থেকে ধীরে দৃষ্টি সরিয়ে সাদাত তাকাল সামনে বসে থাকা হাস্যময় রমণীর দিকে। ইশরার মুখে তখনো ঝলমল করছে সেই মুগ্ধ প্রশ্রয়ের হাসি।যা কোনো অশান্ত মনকে শান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠল।সাদাতের ভিতরের বিষন্নতা যেন কিছুটা উবে গেল।নিজেকে সামলে কোমল কন্ঠে সংক্ষিপ্ত জবাব দিলো;
“নাইস ওয়াচ।”

“তারমানে পছন্দ হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম তোর পছন্দ হবে না। জানিস, তিনদিন আগে ঘড়িটা অর্ডার দিয়েছিলাম। একটু আগে ডেলিভারিম্যান এসে দিয়ে গেল।”
“আমি ভেবেছিলাম তুই আমার বার্থডের কথা ভুলে গেছিস।”
“তোর বার্থডে আগে কখনো ভুলেছি? উহু ভুলিনি। তবে এবার আগে থেকে কোনো কিছু প্ল্যান করার সময় পাইনি বাড়ির উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে। এবার জমজমাট ভাবে বার্থডে সেলিব্রেট করতে পারিনি তবে আগামী বছর করব।”
“স্বান্তনা দেওয়ার দরকার নেই। এবার বল অরিত্রিকা কোথায়?”
সাদাত কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করল। ইশরা মুখখানা গোমড়া করল। অতি দুঃখের সহিত জানাল;
“আমাদের দুজনকে ফাঁকি দিয়ে অরিত্রিকা সারহান ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গেছে।”
সাদাতের কপাল কুঁচকে গেল। অবাক হয়ে বলল;
“ভাই তো আবির ভাইয়ের বাড়িতে গেছে।”

“আবির ভাইয়ের বাড়িতে যায়নি। ছোট মামী কিছুক্ষণ আগে অরিন আপুর কাছে কল দিয়েছিল দুজনে পৌছেছে কিনা জানার জন্য। অরিন আপু বলল, সারহান ভাই ও অরিত্রিকা যায়নি তাদের বাড়িতে।”
“বাড়ির সবাইকে মিথ্যা বলে ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে! বাহ।”
“দুজনের বিয়ে হবে তাই হয়তো স্পেশাল টাইম স্পেন্ড করছে। বাই দ্যা রাস্তা, আমারও ভালোলাগছে না বাড়িতে। চল নোঙর থেকে ঘুরে আসি। এমনিও অনেকদিন যাওয়া হয়নি সেদিকে।”
“আর ইউ শিউর! আমার সাথে নোঙরে যাবি?”
সাদাত ইশরার দিকে ঝুকে এসে নিচু স্বরে বলল। ইশরা থতমত খেয়ে গেল। সে খানিকটা চমকে পিছিয়ে গেল। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে তড়িঘড়ি করে বলল;
“আই অ্যাম হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর। তোর সাথে নোঙরে না যাওয়ার কারণ দেখছি না আমি।”
সাদাত ইশরার থমথমে মুখখানা দেখে মৃদু হাসল। হাসি বজায় রেখে সামনে বসে থাকা ইশরাকে বলল;

“নোঙরে বেশীরভাগ কাপলরা যায়।”
“কাপলরা বাদেও অনেকে যায়। মাথায় এসব উদ্ভট চিন্তার পসরা না সাজিয়ে রেডি হো।”
“ওকে। কি রঙের ড্রেস পড়বি?”
“আমার ড্রেসের রঙ জেনে কি করবি?”
“আরে বল।”
সাদাত গম্ভীর কণ্ঠে বলল। ইশরা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। মুখ বাঁকিয়ে বলল;
“আমার একটা ব্লাক ড্রেস আছে। ওইটা পড়বো। ”
সাদাত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে নিঃশব্দে ক্ষীণ হাসল;
“ ওওহো ব্লাক ড্রেস!”
“পাগলের মতো না হেসে রেডি হোন সাদাত চৌধুরী।”

কথাটি শেষ করে ইশরা সাদাতের কৃষ্ণ বর্ণের সিল্কি চুলগুলো দুহাতে এলেমেলো করে দিয়ে উচ্চ স্বরে হেসে দ্রুততার সহিত দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।সাদাত হতবাক হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরক্ষণে বক্ষের বাম পাশে দুহাত দ্বারা ধরল। চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে প্রাণ খুলে হেসে বিরবির করে বলে উঠল;
“আপনি সম্বোধন তোর মুখে দারুণ মানায় ইশু। ”

কথাটা সম্পূর্ণ করে ঝড়ের বেগে বিছানা থেকে নামল। অতঃপর হাতে পড়া ঘড়িটি খুলে টেবিলে রেখে দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মিনিট পাঁচেক পর ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসল। ফুরফুরে মেজাজে শাণিত পায়ে এগিয়ে গিয়ে আলমারী খুলল। চোখ বুলিয়ে খুজতে লাগল কিছুদিন আগে কেনা কালো শার্টটা। কিছুক্ষণ খোঁজার পর শার্টটা পেয়ে গেল। শার্ট এবং প্যান্ট বের করে আলমারি বন্ধ করে বিছানার কাছে এসে সেগুলো রাখল। হঠাৎ দৃষ্টি আঁটকে গেল বিছানার ওপর রাখা হলুদ দুটো গোলাপ এবং ঘড়ির বক্সের ভেতর রাখা ছোট্ট চিরকুটের দিকে। সে ফুলগুলো না নিয়ে কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটা নিলো। তারপর খুলে ক্ষীণ কন্ঠে পড়তে লাগল ;
“শুভ জন্মদিন সাদুর বাচ্চা ( আমার দুষ্ট শত্রু)।”

সাদাত পড়ে শব্দ করে হাসল। মেয়েটা পারেও এমন উদ্ভট নামে ডাকতে। সে চিরকুটটা ভাজ করে সযতনে টেবিলের ড্রয়ারে রাখল। তারপর এসে হলুদ গোলাপ দুটো হাতে তুলে নিলো। সুগভীর নয়নে তা দেখতে ব্যস্ত হলো। সে জানে, হলুদ গোলাপ বন্ধুত্ব, আনন্দ ও শুভেচ্ছার প্রতীক।সাদাত ফুল দুটো নাকের কাছে নিয়ে সুঘ্রাণ নেয়। অনুভব করল ভালোবাসার মানুষের দেয়া ফুলের ঘ্রাণ। নিরবতা এবং প্রণয়ানুভূতিতে মোড়া মনোভাব নিয়ে ভাবে ;

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৬

❝হলুদ গোলাপের ঘ্রাণে ছুঁয়ে যায় মন,
বন্ধুত্ব সম্পর্কটা যেন এক অনন্ত চয়ন।
দিনের আলাপে রাতের নির্জন,
অজান্তেই জাগে হৃদয়ের স্বজন।
হাসির আড়ালে লুকোনো স্পন্দন,
চোখের ইশারায় গড়ে এক গভীর বন্ধন।
ভাবনার কুঠিরে জোছনার ছায়া
বন্ধুত্ব থেকেই শুরু হবে প্রণয়ের মায়া।❞

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৭