প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭১

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭১
আদ্রিতা নিশি

বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। সারহান, ইরফান এবং সাদাত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে অরিত্রিকা, ইশরা এবং রাহার। লাগেজ গুলো গাড়িতে রেখে চোখ মুখ শক্ত দাঁড়িয়ে আছে। তিনজনের মুখাবয়বের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্তবোধ করছে। হয়তো মনে মনে ভাবছে মেয়েরা কোথাও যাওয়ার জন্য বের হতে এতো দেরী কেনো করে? ছেলেদের তো দশ – পনেরো মিনিটে রেডি হওয়া হয়ে যায় আর মেয়েদের এক – দুই ঘন্টাতেও হয়না। এরা সাজগোজ করতে এতো বেশী সময় নেয়! সারহান পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে গাড়িতে হেলান দেয়। গম্ভীর ভাব নিয়ে ভাবে— বিয়ে না করলে কখনো বুঝতে পারতো না বউয়ের জন্য অপেক্ষা করা কতোটা কঠিন।

সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাশে ঘাড় বাকিয়ে তাকায়। ইরফান ও সাদাতের অবস্থা তার মনের মতোই। পুনরায় সদর দরজার তাকায়। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন ঘটে অরিত্রিকা, ইশরা ও রাহার। সেই তিনজনের সাজ দেখে সারহান, সাদাত ও ইরফানের মুখ হা হয়ে যায়। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে চক্ষুদ্বয় বড় হয়ে যায়। এরা আদৌও ঘুরতে যাচ্ছে নাকি ফ্যাশান শো করতে যাচ্ছে? তিনজনের ঠোঁটে অতি উজ্জ্বল লিপস্টিক। চুলগুলো খোলা এবং স্টাইল করে বাঁধা। পরনে গাউন, গলার দুইপাশ দিয়ে ওড়না দেওয়া, পায়ে উঁচু হিল। হাতে,কানে সিম্পল ডিজাইনের অর্নামেন্টস। হাতে ডিজাইনার পার্স। তিনজনের প্রায় একই রকম সাজ।
অরিত্রিকা হেঁটে এসে দাঁড়াতেই দেখল দুটো গাড়ি দাঁড় করানো। তারমানে গ্রামে দুটো গাড়ি নিয়ে যাবে। সে সামনে দন্ডায়মান মানবটির দিকে তাকাল। হাস্যজ্জ্বল মুখে শুধালো ;

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমরা কোন গাড়িতে যাবো?”
সারহান সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিজের ভাবাবেগ স্বাভাবিক করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল মেয়েলী মুখশ্রীতে। ভ্রুযুগল গুটিয়ে প্রশ্ন উপেক্ষা করে গম্ভীর কন্ঠে বলল;
“ ঠোঁটে কি দিয়েছিস?”
অরিত্রিকা অবাক হয়ে গেল। মানুষটা কি কখনো লিপস্টিক দেখেনি? নাকি চেনে না? ভেবেই চক্ষুদ্বয় সংকুচিত হয়ে গেল।ক্ষীণ স্বরে বলল ;
“লিপস্টিক।”
“মুছে আয়।”
“কেন?”
“আমার রঙ দেওয়া ঠোঁট পছন্দ নয়।”

“রঙ কেন বললেন? আপনি জানেন না এটা লিপস্টিক! আপনার লিপস্টিক পছন্দ না হলেও আমার ভীষণ পছন্দ। আমি মুছব না।”
অরিত্রিকা থমথমে গলায় বলে উঠল। রাহা ও ইশরা চুপচাপ নিরব দর্শকের ন্যায় দাঁড়িয়ে দুজনের কাহিনি দেখছে। সারহান এবার তাদের দিকে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল;
“পেছনের গাড়িতে গিয়ে বসো।”
রাহা ও ইশরা থতমত খেয়ে গেল। দুজনে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত সেখান থেকে হেঁটে গিয়ে পেছনের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। ওরা যেতেই সারহান প্রগাঢ় চাহনিতে একবার অরিত্রিকাকে পরখ করল। পায়ের দিকে তাকাতেই নজরে আসলো উঁচু হিল। তা দেখেই আরেকদফা মেজাজ বিগড়ে গেল। সে রাগ সংবরণ করল। অতঃপর রুঢ় কন্ঠে বলল;
“গাড়িতে উঠে বস।”

অরিত্রিকা অবুঝের ন্যায় সারহানের দিকে তাকাল। মানুষটা হঠাৎ রেগে কেন গেল? সে তো রাগারাগি মতো কোনো কাজ করেনি। তবে কি এমন হলো? ভাবতে ভাবতে হেটে ওপর পাশে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পড়ে যেত লাগল। তখনি সারহান অরিত্রিকার হাত ধরে বাঁচিয়ে নিল। রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুক্ষ কন্ঠে বলল;
“পায়ে এসব কি পড়েছিস?”
অরিত্রিকা খানিকটা কেঁপে উঠল। শুকনো ঢোক গিলে নেত্রপল্লব ঝাপটে ভয়াতুর ভঙ্গিতে মিনমিন করে বলল ;
“হিল পড়েছি।”
“এখনই পাহাড়-চূড়া খুলে কম্ফোর্ট জুতা বা নিচু হিল পড়ে আসবি।”
“কিন্তু।”
“আমার কথা শুনবি নাকি তোকে রেখে চলে যাব।”
“আচ্ছা হিল বদলে আসছি।”

অরিত্রিকা মুখখানা ভার করে বলে হাতটা ছাড়িয়ে ছুটল বাড়ির দিকে। সারহান একপলক সেদিকে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল। অরিত্রিকার দেখা পাওয়া গেল পাঁচ মিনিট পরে। লেভিকে কোলে নিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে আসছে। পিছু পিছু অরিন, তানিয়া বেগম এবং সাথী বেগম আসছেন বিদায় জানাতে। সারহানের দৃষ্টি পড়ল সাদাটে লোমশ তুলতুলে প্রাণীটির দিকে। কেমন মেয়েটার গায়ে লেপ্টে আছে যেন মন খারাপ করে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অবুঝ প্রাণীটা কি বুঝতে পেরেছে তার মালকিন তাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে। বোধ হয় বুঝতে পেরেছে। সেই সুন্দর দৃশ্য দেখে মনটা শান্ত হয়ে গেল। অরিত্রিকা গাড়ির দরজা খুলতেই সারহান কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করল;

“লেভিকে নিয়ে যাবি?”
অরিত্রিকা মাথা দুদিকে নাড়িয়ে মন খারাপ করে জবাব দিল;
“নাহ। ও আপুর কাছে থাকবে।”
কথাটা বলে পেছনে এসে দাঁড়ানো অরিনের কোলে লেভিকে দিয়ে দিল। অতঃপর ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়ল। তানিয়া বেগম সারহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন;
“গাড়ি আস্তে চালাবি। সাবধান এবং চোখ কান খোলা রাখবি। ওখানে পৌঁছে কল দিবি।”
সারহান ভদ্র ছেলের মতো জবাব দিল;
“ওকে।”
“আর শোন আমার বউমাসহ বাকীদের দেখে শুনে রাখবি।”
“ঠিক আছে।”

“আয়নাল ভাই ও তারা ভাবীকে আমার তরফ থেকে সালাম জানাস।”
কথাটা বলে পেছনের গাড়ির দিকে গেলেন তানিয়া বেগম। সাথী বেগম বাহির হতে অরিত্রিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সারহানকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“আব্বা আমার বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে রেখো। জানোই তো কতো বাচ্চামি করে।”
সারহান সহালকা হেসে আশ্বস্ত করে বলল;
“চিন্তা করো না চাচী। আমি ওকে দেখে রাখব।”
সাথী বেগম হাসলেন। তিনি জানেন সারহান এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করবে না। দেখেশুনে রাখবে। তিনি হাসি বজায় রেখে পেছনের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। অরিন হেসে অরিত্রিকাকে বলল;
“ওখানে যেয়ে কিন্তু নিয়মিত কল করবি, ছবি পাঠাবি। মনে থাকবে?”
অরিত্রিকা বোনের দিকে তাকিয়ে হাসার ভাণ করে বলল;

“মনে থাকবে। লেভিকে দেখে রেখো।”
“আচ্ছা।”
“ওকে রাতে তোমার রুমে রাখবে আর আগামীকাল গোসল করিয়ে দিবে।”
“ওকে ডিয়ার।”
অরিত্রিকা অনিমেষ তাকিয়ে রইল লেভির দিকে। বাচ্চাটাকে রেখে যেতে একদম মন টানছে না। সে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নতুন জায়গা আর সারহান ভাই অপছন্দ করে তাই ভেবে নিয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি। তিন চারদিন লেভিকে ছাড়া থাকবে ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে আসছে।সবার কথোপকথন শেষে পার্কিং প্লেস থেকে দুটো গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো। মহুর্তে চৌধুরী বাড়ির মেইন গেইট পেরিয়ে রওনা দিল গন্তব্যে।

“শুনলাম তুমি নাকি এনগেজমেন্ট করবে না তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো?”
গাড়িটা ব্যস্ত নগরীর যানবাহন পিছু ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। তারা এখনো রাজশাহী জেলার ভেতরে অবস্থান করছে। ইরফান ড্রাইভ করছে। ড্রাইভিং সিটের পাশে বসেছে রাহা। এখানে অবশ্য সাদাতের বসার কথা ছিল। কিন্তু সে মিথ্যা বলেছে — পেছনে বসলে তার মাথা ঘুরে যায়। সাদাত প্রথমে নিজের বরাদ্দকৃত জায়গা ছাড়তে নারাজ ছিল। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে পেছনের সিটে ইশরার পাশে বসেছে। রাহার মন আজ ভীষণ ফুরফুরে। সে যেন উন্মুক্ত আকাশের একটা পাখি হয়ে উড়ছে, স্বাধীনতা উপভোগ করছে। সবচেয়ে বেশী উচ্ছসিত হওয়ার কারন ইরফান! মানুষটার পাশে বসে ঘুরতে যাচ্ছে। তিন – চারদিন একসাথে ঘুরাফেরা করবে। সে জানালার বাহিরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছিল। আচমকা ইরফানের গম্ভীর কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল। গম্ভীর মুখটা দেখে মৃদু হেসে জবাব দিল;

“জ্বি।”
ইরফান আশ্চর্য হলো। মেয়েটা অবলীলায় স্বীকারোক্তি দিল? সে ভাবমূর্তি বুঝতে দিল না। পুনরায় প্রশ্ন করল;
“পালানোর কারণটা কি? বয়ফ্রেন্ড?”
“আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।”
“তাহলে কেন পালিয়েছো?”
“বিয়ে করতে ইচ্ছে করছিলো না তাই পালিয়েছি।”
“কিন্তু আমি তো শুনলাম তুমি কাউকে পছন্দ করো তাই পালিয়েছো?”
ইরফানের সন্দিগ্ধ কন্ঠস্বর। রাহা থতমত খেল। মূর্তির মতো সোজা হয়ে বসে সামনে তাকাল। আমতা আমতা করে বলল;
“জ্বি।”
ইরফানের মুখখানায় গাম্ভীর্য ভাব ধরা দিলো। দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“কে সে?”
“ওয়াহাজ আলী।”
“ওয়াহাজ আলী? এটা আবার কে?”

“আমার ক্রাশ। উনাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করব না। জানেন ওয়াহাজ আলীকে আমি কতোটা ভালোবাসি! উনার একটা মেয়ে আছে জেনেও আমি দূর থেকে ভালোবেসে গেছি। আমার মনে হয় উনি ও আমায় ভালোবাসেন।”
“হোয়াট? এইটুকু মেয়ে হয়ে এক বাচ্চার বাবাকে ভালোবাসো? এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”
ইরফান ধমকে বলল। রাহা মুখখানা কাচুমাচু করে বলল;
“ভালোবাসা কি আর বয়স, কয় বাচ্চার বাপ তা দেখে হয়? ওই গানটা শোনেন নি — যখন তার ওই রুপ স্মরণ হয়, থাকেনা লোকলজ্জার ভয়।”
ইরফানের মাথা বিগড়ে গেল। শক্ত কন্ঠে বলল;
“ইউ? তোমার বাবা একদম ঠিক কাজ করতে যাচ্ছিল। তোমাদের মতো মেয়েদের বাল্য বিবাহ দেওয়া দরকার।”
কথাটা শেষ হতেই রাহা এবং ইশরা উচ্চস্বরে হেসে উঠল। ইরফান ও সাদাত হতবাক হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারল না দুজন কেন হাসছে? ইশরা ইরফানকে উদ্দেশ্য করে হাস্যরত কন্ঠে বলল;
“ভাই! ওয়াহাজ আলী কিন্তু আমারও ক্রাশ।”

সাদাতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। রাগান্বিত দৃষ্টিতে সরাসরি তাকাল ইশরার দিকে। ইশরা এক জোড়া জ্বলন্ত চোখের চাহনি তার দিকে নিবদ্ধ হতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। হাসি গায়েব হয়ে গেল। ইরফান বেজায় চটে গিয়ে বলল;
“ওই এক বাচ্চার বাপের ঠিকানা দে।”
রাহা হাসি থামিয়ে বলল;
“ওয়াহাজ আলী পাকিস্তানি এক্টর মশাই। উনাকে খুঁজতে হলে পাকিস্তান যেতে হবে। যাবেন? গেলে আমায় নিয়ে যাবেন কিন্তু।”

ইরফান আড়চোখে রাহার হাস্যরত মুখখানা দেখল। দৃষ্টি স্থির করতেই রাগ যেন হাওয়া মিলিয়ে গেল। সে খেয়াল করল মেয়েটার কাজল কালো চোখ দুটো হাসছে।সে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাল। আনমনা ভাব নিয়ে ভাবল— মেয়েদের চোখ বুঝি হাসে! ইশরা সাদাতের দৃষ্টি উপেক্ষা করে পার্স থেকে ফোন বের করে করল। অতঃপর ভাব নিয়ে ফোনটা স্ক্রোল করতে লাগল। সাদাত তা দেখে আরও রেগে গেল। মেয়েটা তাকে ইগনোর করছে! খুব সাহস বেড়েছে। সকালে কান্নাকাটি করে এখন ভাব দেখানো হচ্ছে? সে হঠাৎ বাঁকা হাসল। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে কাউকে কল করল। কল করতেই অপর পাশ থেকে রিসিভ হলো। সে কানে ফোন গুঁজে হাসি মুখ নিয়ে ধীরজ কন্ঠে বলল;

“তনি কেমন আছো?”
ইশরার কান সজাগ হলো। সে ফোনে দৃষ্টি রেখে কান খাড়া করে সাদাতের বলা কথা শুনতে লাগল। সাদাত হেসে পুনরায় বলল;
“হুম ডার্লিং! দিঘাপতিয়া যাচ্ছি।”
ডার্লিং শব্দটা শুনে ইশরা তড়িৎ বেগে তাকাল সাদাতের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইল।সাদাত বলল;
“আচ্ছা টমেটোর থেকে দূরে থাকব। তুমি আসবে ওখানে?”
“হ্যা।”
“তোমায় লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি আগামীকাল সকালে চলে এসো।”
“ওকে। তুমি ওর থেকে একশ হাত দূরে থাকবে।”
“আচ্ছা। একশ হাত দূরে থাকব।”
ওপর পাশের থেকে কিছু বলতেই সাদাত বাঁকা হেসে বলল;
“ওকে জান।”
ইশরা রাগে তার ফোনটা পার্সে ঢুকিয়ে রাখল। অতঃপর বাঘিনীর ন্যায় সাদাতের কান থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল। এই ছেলে মোটেও সুবিধার নয়! কয়েকদিন আগে কি যেন বলেছিল— ইশু তোকে ছাড়া বাঁচব না,তোকে ভালোবাসি, অনেক বদলে গেছি আরও কতো রঙ- ঢঙের কথা! এসব বলে তাকে পটানোর চেষ্টা করেছে ভাবতেই রাগ তরতর করে বাড়ল। সেই ঘটনার পর থেকে সে কতো কষ্ট পেয়েছে বেয়াদব ছেলেটা কি জানে? সারাদিন ঘরবন্দী থেকেছে,সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে, ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেয়েছে, অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করেছে! শুধু কি বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে এমনটা হয়েছে নাকি অন্য কোনো কিছু?

“আমার ফোন কেন নিয়েছিস? ফোন দে টমেটো।”
সাদাত গম্ভীর কণ্ঠে বলল। ইশরা রাগত চাহনিতে তাকাল। খেঁকিয়ে বলে উঠল;
“আবার নতুন গার্লফ্রেন্ড পটিয়েছিস? এই তোর লজ্জা সরম নেই।”
সাদাত কাটকাট কন্ঠে জবাব দিল;
“নাহ! আমার লজ্জা সরম নেই। আমি গার্লফ্রেন্ড পটিয়েছি, ভবিষ্যতে আরও পটাবো তাতে তোর কি?”
“সাদুর বাচ্চা তুই একটা নির্লজ্জ। সেদিন গলা ফাটিয়ে বললি আমি বদলে গেছি। এই তোর বদলে যাওয়ার নমুনা?”
“আমার ফোন দে।”
“দিবোনা কি করবি?”
“ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।”

সাদাত গমগমে কন্ঠে বলল।ইশরা মুখ বাঁকিয়ে সাদাতের ফোনের লক খুলল। তার সাদাতের ফোনের লক আগে থেকে জানা অথচ কোনোদিন ফোন হাতে পেলেও ঘেটে দেখেনা। আজ দেখবে কোন খাচ্চর বেডির সাথে কথা বলছিল। সে ফোনটা ওপাশে নিয়ে কল লিস্ট চেক করতে লাগল। কল লিস্টের প্রথমে Best Frnd Tuhin লেখা। সে হতবাক হয়ে গেল। রাগ নিমেষে কর্পূরের ন্যায় কোথাও পালাল। সে হতবুদ্ধির ন্যায় সাদাতের দিকে তাকাল। বোকার মতো বলল;

“তুহিনের সাথে কথা বলছিলি? আমি তো ভাবলাম গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলি।”
সাদাতের ওষ্ঠকোণে বিরাজ করছে হাসির রেখা। সে ইশরার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ধীর হাস্যরত কন্ঠে বলল;
“আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলিয়ে দেব?”
“তুই তোর বন্ধুকে জান, ডার্লিং বলছিলি? ছিহঃ ইয়াক।”
“জাস্ট তোর রিয়াকশন দেখার জন্য ওসব বলেছি।”
“আমার রিয়াকশন দেখার কি আছে?”
“শুনেছি কেউ যখন কাউকে পছন্দ করে তখন কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে জেলাস ফিল করে।”
সাদাত ওষ্ঠ কামড়ে অতি আস্তে বলল। ইশরার বুকের ভেতর ধরফর করে উঠল। সে একটু অপ্রস্তুত হলো। অন্যত্র তাকিয়ে বলল;

“আমি জেলাস নই।”
সাদাতের হাসি আরও প্রশস্ত হলো। সে একপলক তাকাল ইশরার মুখপানে। মেয়েটা মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়েছে। তবে কি টমেটো তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে? ভাবতেই মনের ভেতর রঙিন প্রজাপতি উড়তে লাগল। সে হাসি থামাল। ওষ্ঠ কামড়ে বলল;
“ইউ আর জেলাস ইশরা শেখ।”
“তোর মতো প্লে বয়ের জন্য কেন জেলাস ফিল করব?”
“বিকজ ইউ লাইক মি।”
“নো।”
“দেখা যাক, না থেকে হ্যা হতে কতোদিন সময় লাগে। কথায় আছে, নসিবে যদি থাকে তবে আপনি আপনি আসিবে।”
কথাটা বলে সাদাত চক্ষুদ্বয় বন্ধ করল। ইশরা পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকানোর সাহস করল না। নিজের বোকামির জন্য সাদাত কি ভেবে বসল। সে সতর্কতার সহিত তাকাল ইরফানের দিকে। তার ভাই গাড়ি ড্রাইভ করতে ব্যস্ত। তারমানে কিছু বুঝতে পারেনি। সে হাঁপ ছেড়ে বাহিরের দিকে তাকাল।

“আপনি লেভিকে কেন অপছন্দ করেন সারহান ভাই?”
অরিত্রিকা সিটে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। গাড়ির গ্লাস খুলে রাখা! মৃদু- শীতল বাতাস হুর হুর করে গাড়ির ভেতর ঢুকছে। মেয়েলী কৃষ্ণ বর্ণের চুলগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা বারবার আলতো হাতে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজতে ব্যস্ত! সেই মহনীয় দৃশ্য একটু পরপর আড়চোখে দেখছে প্রেমিক পুরুষ। ইচ্ছে করছে প্রিয়তমার কানের পিছে নিজ হাতে চুলগুলো গুঁজে দিতে। সেই দৃশ্যের ফাঁকে পুরুষালী দৃষ্টি নিবদ্ধ হচ্ছে মেয়েলী লিপস্টিক দেওয়া ওষ্ঠদ্বয়ে। সারহান দৃষ্টি সংযত করে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগী হয়। মেয়েটা কেন এতো অবুঝ? কেন তার মন বোঝার চেষ্টা করেনা? এসব ভাবনার মাঝে অরিত্রিকার অভিমানী কন্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করল। সে তাকাল না। নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল;

“তুই লেডিকে ভালোবাসিস তাই।”
অরিত্রিকা এবার সারহানের দিকে তাকাল। বিস্ময়াহত কন্ঠে বলল;
“আপনি লেভিকে হিংসে করছেন সারহান ভাই?”
“যে আমার ভালোবাসার ওপর ভাগ বসাচ্ছে তাকে হিংসে করা উচিত।”
“লেভি একটা বাচ্চা বিড়াল। ওকে ভালোবাসতে হবে, আদর করতে হবে অথচ আপনি অবুঝের মতো কথা বলছেন।”
“আর আমি কি তোর?”
“আমার নেতাসাহেব আপনি।”
অরিত্রিকা কিছুক্ষণ মৌন থেকে মিনমিন করে জবাব দিল। সারহানের মুখাবয়ব অতিশয় গম্ভীর হয়ে উঠল। গাম্ভীর্য ভাব এটে বলল;
“শুধু নেতাসাহেব?”
অরিত্রিকা ওষ্ঠ টিপে হেসে বলল;
“উহু!আপনি আমার কল্পপুরুষ।”
“আর?”
“আমার গুরুগম্ভীর, রগচটা, যন্ত্রমানব সারহান ভাই ওরফে হাসবেন্ড!”
“ভাই বলে ডাকতে নিষেধ করেছি আমি। এটা ডাকলে কেমন বাচ্চার মামা ফিল হয়। ডিজগাস্টিং! ”
“লেভির মামু!”

কথাটা বলে উচ্চস্বরে হেসে উঠল অরিত্রিকা। সারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল৷ মেয়েটা মোটেও শুধরাবার নয়!সারাক্ষণ উদ্ভট কথা বলে তার মেজাজ বিগড়ানোর চেষ্টায় থাকে। আর কতো দিন ভাই ডাক শুনে কাটাতে হয় কে জানে? সে তপ্ত শ্বাস ফেলল। ধমকে বলল;
“একদম ওই জঘন্য নামে ডাকবি না।”
অরিত্রিকা হাসি কোনোমতে থামিয়ে বলল;
“তাহলে কি নামে ডাকব? সিনেমায় ডাকে ওমন ভাবে ডাকব? ওগো শুনছো, অমুকের বাবা শুনছো?”
“মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিবো?”
“ওগো আমায় মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিও না।”
অরিত্রিকা কথাটা বলে ফিক করে হেসে দিল। সারহান রাগত দৃষ্টিতে তাকাল। অতঃপর গমগমে কন্ঠে বলল;
“একসপ্তাহ ধরে কিছু বলছি না তাই সাহস বেড়ে গেছে? গ্রামে যেয়ে নেই তারপর তোকে দেখে নিচ্ছি।”
সারহান সামনে তাকাল। অরিত্রিকা হাসি থামিয়ে এক গালে হাত দিয়ে অনিমেষ তাকিয়ে লাজুক কন্ঠে বলল;

“ওমন ভাবে তাকাবেন না নেতাসাহেব। ”
“কেন?”
“আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।”
“বাজে না বকে চুপ করে থাক।”
“ধ্যাত! মুডটাই নষ্ট করে দিলো।”
অরিত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠল। সারহান নিঃশব্দে হাসল। মেয়েটার এমন বাচ্চামি কথাবার্তাগুলো যেন মনে প্রশান্তি দেয়! যখন অরিত্রিকা বাড়ি থেকে দূরে ছিল তখন প্রতিটা দিন বাচ্চামি, উদ্ভট কথা, কাজ মিস করেছে। দূরে থেকেও মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু প্রেয়সী ছিল। ক্ষণে ক্ষণে উপলব্ধি করেছে ভালোবাসার দহন এবং গভীরতা। সে মেয়েটাকে মিস করবেই না কেন? এসব কান্ডেই তো তাকে অরিত্রিকার প্রতি কৌতূহল জাগিয়েছিল। সেই কৌতূহল মেটাতে গিয়ে কিভাবে যেন ভালোবেসে ফেলল।

“সাদা পাঞ্জাবিতে আপনাকে দারুন মানায় নেতাসাহেব।”
অরিত্রিকা কিছুক্ষণ মৌন থেকে সারহানের দিকে তাকাল। এক ধ্যানে কিয়ৎ সময় তাকিয়ে থেকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত পাষাণ হৃদয়ের পুরুষটিকে অবলোকন করে মোহাচ্ছন্ন হয়ে অস্ফুটস্বরে হঠাৎ বলে উঠল। সারহানের ওষ্ঠ প্রসারিত হলো;
“আর তোকে শাড়িতে দারুন মানায়।”
অরিত্রিকা হাসল। ইস! যদি সময়টা এখানেই থমকে যেত তাহলে অনেক ভালো হতো। কিন্তু এমনটা হওয়ার নয়। তার ইদানীং আফসোস হয় কেন যে আগে প্রেমে পড়ল না? যদি প্রেমে পড়ত তখন লুকিয়ে চুরিয়ে দূর থেকে দেখত? গোপনে ভালোবাসার পাহাড় গড়তো। ডায়েরিতে কল্প পুরুষের কথা ভেবে যত কথা লিখেছিল — তা সারহান ভাইকে ভেবে লিখত। এখনো লিখছে ডায়েরিতে। তবে সেসব অতি গোপনীয়! নতুন করে আরেকটি ডায়েরি লিখছে যেখানে সারহান ভাইকে নিয়ে মনের সব কথা লেখা আছে। এই ডায়েরিগুলো যত্ন করে রাখবে। কোনোদিন মন চাইলে সারহান ভাইকে দিবে পড়ার জন্য। আচ্ছা সারহান ভাই কি তাকে৷ নিয়ে ডায়েরিতে কিছু লিখে? তিনবছর ধরে ভালোবেসেছে তখনকার অনুভূতি সেথায় লিখে প্রকাশ করে? নানাবিধ ভাবনায় মত্ত হলো সে।

নাটোরের দিঘাপতিয়া অতিক্রম করে দুইটি গাড়ি পাকা রাস্তা ধরে ইসলাবাড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেল। প্রায় আধা কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তারা পৌঁছে গেল গন্তব্যে। রাস্তার শেষ প্রান্তে এসে গাড়িগুলো থামল—একটি পুরনো দুই তলা বিশিষ্ট বাড়ির সামনে। বাড়িটির দেয়ালে সময়ের ছাপ স্পষ্ট মলিন রং, ধূসর দেয়ালে জেগে থাকা শ্যাওলা আর কাঠের জানালায় পুরনো দিনের ছোঁয়া। বাড়িটা বাইর থেকে দেখে যতই পুরনো মনে হোক না কেন, জমিদার বাড়ির মতো মহিমা কম লাগছে না। বড় শৌখিন গেটটি দৃষ্টিনন্দন, কাঁটা লোহার নকশা আর ঝকঝকে রঙে সজ্জিত। গেটের দুপাশে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান রঙিন ফুল আর গাছগাছালি।বাড়ির প্রবেশ পথের পাশে আরামদায়ক বসার জায়গা সাজানো।যেখানে কেউ গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় বসে হালকা বাতাসের সুরে সময় কাটাতে পারে। ঐসব ছোটখাটো জিনিসপত্র আর সাজসজ্জা যেন বাড়িটির গৌরবকে তুলে ধরেছে।তবে সন্ধ্যার মায়াবী আলো ও কৃত্রিম বাতির কারণে পুরো বাড়ির আসল রূপ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।

সারহান গাড়ি থামিয়ে দু’বার হর্ণ বাজিয়ে নেমে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল কাউকে। অরিত্রিকা দেরি না করে গাড়ির দরজা খুলে নেমে দাঁড়াল, চোখে বিস্ময় আর কৌতূহল মিশিয়ে দাদুর বাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল, এটি কোনও সাধারণ বাড়ি নয় যেন একটি বিশাল জমিদার বাড়ির মতো এক প্রাসাদ। পেছনের গাড়ি থেকে রাহা আর ইশারা দৌড়ে এসে তার পাশে দাঁড়াল, তাদের মুখেও বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট। আগে কখনো এত বড় ও অভিজাত বাড়ি কাছ থেকে দেখেনি তারা। সাদাত আর ইরফান পা মেলিয়ে চলে এসে একপাশে দাঁড়িয়ে গেট খোলার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক দম্পতি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে গেট খুলে দিল। অতঃপর সবার সামনে এসে দাঁড়াল।
সারহান ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে একটু এগিয়ে এসে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিটির সাথে হ্যান্ডশেক করে বিনয়ী কন্ঠে বলল;

“কেমন আছেন চাচা?”
ব্যক্তিটি হেসে জবাব দিলেন ;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা! তুমি কেমন আছো?”
সারহান স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। চাচী আপনি কেমন আছেন?”
পঁয়ত্রিশার্ধ মহিলাটি শাড়ির আঁচল মাথায় টেনে বললেন ;
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা।”
সারহান উপস্থিত সবাইকে দেখিয়ে একে একে সবার পরিচয় করে দিল। সবার শেষে অরিত্রিকাকে ইশরা করে দেখিয়ে বলল;
“এটা আপনাদের বউমা।”
আয়নাল সাহেব অবাক হলেন। অবাকরতার রেষ নিয়ে বলে উঠলেন;
“এটা আজমল ভাইয়ের মেয়ে না?”
অরিত্রিকা নড়েচড়ে উঠল। নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সারহান ক্ষীণ হেসে জবাব দিল;
“জ্বি।”
“তারমানে চাচাতো বোনকে বিয়ে করেছো? ভালোই করেছো। মাশাল্লাহ মামনি কেমন আছো?”
আয়নাল সাহেব হেসে জিজ্ঞেস করলেন। অরিত্রিকা আড় চোখে সারহানের দিকে একপলক তাকিয়ে ভদ্রভাবে জবাব দিল;

“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আংকেল।”
আয়নাল সাহেব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“বাকী কথার পর্ব পড়ে সাড়া যাবে। ভেতরে চলো সবাই।”
তারা বেগম সবাইকে ডেকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। বাইরে রইল কেবল সারহান ও ইরফান। কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়নাল সাহেব এসে গেট পুরোপুরি খুলে দিলেন। সারহান ও ইরফান তখন গাড়িগুলো যথাস্থানে পার্ক করে লাগেজ বের করতে লাগল। তারা চারটি লাগেজ নিজেরাই নিয়ে ভেতরে গেল, বাকি দুটো লাগেজ আয়নাল সাহেব তুলে নিলেন।

আয়নাল সাহেব আগে থেকেই তিনটি রুম পরিষ্কার করে পরিপাটি করে রেখেছিলেন। একটি রুমে অরিত্রিকা, ইশারা ও রাহার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সারহানের জন্য নির্ধারিত হয়েছে একটি আলাদা রুম, আর তৃতীয় রুমটি রাখা হয়েছে ইরফান ও সাদাতের জন্য। তারা বেগম সবাইকে সবার রুম দেখিয়ে দিলেন যেন কেউ কোনও অসুবিধায় না পড়ে। অরিত্রিকা ক্লান্ত ভঙ্গিমায় ধীরে ধীরে হেঁটে নির্ধারিত রুমে ঢুকল। পায়ের হিল জুতো খুলে এক পাশে ছুড়ে দিয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়েই যেন শরীরটা একেবারে অবসন্ন হয়ে গেছে। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিছুক্ষণ পর রাহা ও ইশারা রুমে এসে বিছানার এক পাশে বসে পড়ল। তারাও অনেকটা নিঃশ্বাস ফেলে বিশ্রাম নিল।একেবারে অপরিচিত পরিবেশে এসে একরকম বিস্ময় আর ক্লান্তি মিশে ছিল তাদের চোখে মুখে।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭০ (২)

“বাড়িটা বাহির থেকে পুরনো লাগলেও ভেতরটা নতুনের মতোই আছে। মনে হচ্ছে জমিদার বাড়িতে এসেছি।”
অরিত্রিকা চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে বলে উঠল। ইশরা রুমটা পরখ করে সম্মতি জানিয়ে বলল;
“আমারও মনে হচ্ছে জমিদার বাড়িতে এসেছি।”
রাহা কথার প্রেক্ষিতে বলল;
“আমার মনে হচ্ছে নানাশ্বশুর বাড়ি এসেছি।”
কথাটি বলেই জিভ কাটল রাহা। ইশরা চক্ষুদ্বয় বড় করে রাহার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। অরিত্রিকা ক্লান্তি ভুলে হুর মুড়িয়ে বসে পড়ল। কপাল কুঁচকে কটমট করে তাকাল।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭২