প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮২ (২)

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮২ (২)
আদ্রিতা নিশি

“চাচী ফাইরুজ কোথায়?”
সারহানের কন্ঠস্বর উদগ্রীবতা, ব্যাকুলতা। সাথী বেগম ডাইনিং রুমে খাবারগুলো গুছিয়ে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন। সিঁড়ির সামনে সারহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলেন। বললেন;
“অরিত্রি ওর রুমে আছে।”
সারহান নিজের ভাবাবেগ সংবরণ করে বলল;
“রুমে নেই।”
“আমি কিছুক্ষণ আগেই ওকে ওর রুমে দেখলাম সাথে লেভিও ছিল। তুমি দাঁড়াও আব্বা আমি ওকে খুঁজে আনছি।”
“আপনার খুঁজতে যাওয়ার দরকার নেই আমি যাচ্ছি।”

সারহান প্রতিত্তোর করে সিঁড়ি ভেঙে দ্বিতীয়তলার দিকে যেতে লাগল। মেয়েটা বড্ড চঞ্চল। সারাদিন এক মুহুর্তের জন্য স্থির হয় না। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ মাথায় উদ্ভট চিন্তা আর উদ্ভট কান্ডকারখানা করে বেরানো। অরিত্রিকা ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী নয়। তখন থেকে ফাঁকিবাজি করে এ ক্ষেত্রে। স্কুলে যাবে না তাই কতো নাটক করতো। কখনো পেট ব্যথা, কখনো জ্বর, কখনো বাড়ির আনাচকানাচে লুকিয়ে থাকা। সবার আদুরে ছোট সদস্য ছিল তাই ফাঁকিবাজি, বাঁদরামি মেনে নিয়েছে। পড়াশোনার জন্য চাপও দেয়নি। সারহানের অরিত্রিকার এমন কার্যকলাপ বিরক্তি লাগত। মাঝে মাঝে বোঝাতো পড়াশোনা ঠিকঠাক ভাবে করার জন্য। কিন্তু মহারানী সেসব পরামর্শকে পায়ে ঠেলে নিজ মর্জি মতো চলতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে এতে বিরক্তি হয় তারপর পড়াশোনা বিষয়ক কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। একদিকে বাচ্চামী করতো, অপরদিকে পড়াচোর ছিল এককথায় তার সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী ছিল। তাই উড়নচণ্ডী মেয়েটা তার অপছন্দের শীর্ষে অবস্থান করতো। সেই ছোট বেলার অভ্যাস এখনো আছে মেয়েটার মাঝে। ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে অথচ এমন চিল ভাবে চলাফেরা করে যেন জীবনে পড়াশোনা নেই। এই তো আকদের পরে সে বলেছিল পড়াশোনার করার কথা। মেয়েটা তখন উল্টো উঠে বলেছিল ; আমার পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না। বই দেখলে শ্বাসকষ্ট হয়। শরীর অসুস্থ লাগে।কেমন যেন জ্বর জ্বর করে। এতো চাপ নিতে পারব না।

বিয়ে হয়েছে, স্বামী হয়েছে। দুইদিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে তারপর জমিয়ে সংসার করব। সারহান কিছু বলবে তখন ছুটে পালিয়েছিল। সেদিন সে বিষয়টা মজা হিসেবে নিয়েছে অথচ মেয়েটা সত্যি সেদিন সিরিয়াসলি কথাটি বলেছিল তা এখন দিব্যি বুঝতে পারছে। সেদিন ঔষধগুলো যে অরিত্রিকা ইচ্ছে করে খায়নি তা বুঝতে বাকী নেই আর। সে সত্যি হতবাক একটা মেয়ে পড়াশোনা থেকে বাঁচতে এমন একটা পদক্ষেপ নিতে পারে সত্যি আশ্চর্যের বিষয়! মেয়েটা কেন এতোটা অবুঝ? পড়াশোনার থেকে যে বাচ্চা, সংসার সামলানো কঠিন এটা কেন বোঝে না?

সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অরিত্রিকার রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে—পুরো রুম ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই। সে ফিরে আসতে গিয়ে থেমে যায়। নুপুরের থেমে থেমে বেজে ওঠা ক্ষীণ শব্দ ভেসে আসছে কোথাও থেকে। একটু থামছে আবার বেজে উঠছে। সে সতর্ক হয়ে সামনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়। অরিত্রিকা দরজার পেছনে মুখে ওড়না গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পেরেছে সকালে পালিয়ে এসেছিল তাই এখন খুঁজতে এসেছে। সে নেত্রপল্লব ঝাপটে উঁকি দিয়ে দেখল সারহান বেলকনির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই সুযোগ আবারও পালানোর। সে আস্তে ধীরে বেরিয়ে দরজার সম্মুখে এসে দাঁড়ানোর চিন্তা করল। চোরের মতো নিঃশব্দে পালাবে এমন সময় পৌরষালি দৃঢ়-শক্ত হাতটা এসে কোমর পেঁচিয়ে ধরল। কিছু বোঝার আগেই সারহান কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো নিজের রুমের দিকে। অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। সে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল মানুষটার গম্ভীর মুখপানে। অতঃপর নিজের করা মাত্তবরির কথা ভাবতেই শুকনো ঢোক গিলল। এবার নিশ্চয়ই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া লাগবে।

“পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাচ্চা, স্বামী নিয়ে সংসার করার এতো শখ তোর? আগেই বলতি, তাহলে চাচা তোর পড়াশোনার পেছনে এতো টাকা নষ্ট না করে বিয়ে দিয়ে মেয়ের মনের ইচ্ছে পূরণ করে দিতো।”
অরিত্রিকা চকিত চাহনিতে তাকায় সারহানের দিকে। তার সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে তীক্ষ্ণ চোখের চাহনিতে। সে বিছানায় বসা অবস্থায় খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে। নেত্রপল্লব ঝাপটে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সাহস সঞ্চার করে মিনমিন করে বলল;

“তখন যদি আমার বিয়েটা হয়ে যেত আপনার বউ কীভাবে হতাম?”
সারহান তাজ্জব বনে গেল। কপালের মধ্যাংশে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ল। গম্ভীরতা মোড়ানো কন্ঠে বলল;
“তুই কবে নিজের জীবন নিয়ে সিরিয়াস হবি ফাইরুজ?”
অরিত্রিকার মুখ ভার হলো। মানুষটা এমন কাঠখোট্টা কেন? বাবা হবে অথচ ভাবভঙ্গি এমন করছে যেন মস্ত বড় ভুল করেছে। সে সরাসরি তাকাল। সহসা বলে উঠল;
“আমি আমার জীবন নিয়ে সিরিয়াস হয়ে গেছি।”
সারহান ভ্রুযুগল গুটিয়ে পূর্বের ন্যায় বলল;
“তাই? এতো বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে বলছিস সিরিয়াস হয়ে গেছিস?”
অরিত্রিকা মিইয়ে গেল। চক্ষুদ্বয় নিবদ্ধ করল নিচে। সারহান নিবিড়, শান্ত চাহনিতে ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে দৃঢ় কন্ঠে বলল;

“ঔষধগুলো কেন খাসনি?”
“এমনি।”
“কারণটা জানতে চাইছি আমি।”
“পড়াশোনা করতে ভালোলাগে না। বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে পড়াশোনা করে কী হবে?এখন সংসার করার সময়। তাই আমি পড়াশোনা..”
“পড়াশোনা থেকে বাঁচতে এতো বড় কান্ড ঘটালি? একবারও ভাবলি না নিজের কথা? তুই তো সারাক্ষণ বাচ্চামি, উদ্ভট কাজকর্ম করে বেড়াস কীভাবে বাচ্চা সামলাবি?”
সারহানের কন্ঠস্বর নরম হয়ে গেল। কেন যেন রাগটা স্থায়ী হলো না। অরিত্রিকা মুখ ভার করে ক্ষীণ কন্ঠে বলল;
“দাদীর যখন বিয়ে হয়েছিল তখন উনার বয়স তেরো বছর। পনেরো বছরে প্রথম বাচ্চা হয়। কতো ছোট ছিলেন অথচ বাচ্চা, সংসার দুটোই সামলেছেন… আমার বয়স তো বিশ।”

সারহান হতাশ হলো। এতোক্ষণ ধরে কাকে কী বোঝাচ্ছে?মেয়েটা যে আগে থেকেই মস্তিষ্কে উদ্ভট পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছিল৷ একবার যদি ঘুণাক্ষরে টের পেত তাহলে সে নিজেকে অনিয়ন্ত্রিত হতে দিতো না। পড়াশোনা থেকে বাঁচার জন্য বাচ্চা নেওয়া এটা নিতান্তই হাস্যকর ব্যাপার। অরিত্রিকা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ উঁচিয়ে তাকায়। সারহানকে নিশ্চল চাহনিতে গাম্ভীর্য নিয়ে নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় বসে থাকতে দেখে ভড়কে যায়। হঠাৎ তার অন্তঃকোণে ভয় বাসা বাঁধে। তবে কি মানুষটা খুশি নয় বাবু আসার খবরে? আতংকে বক্ষস্থল ধক করে ওঠে। শঙ্কায় চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কেমন যেন দিশেহারা লাগল। তবে কি সে মনের অজান্তে মানুষটাকে কষ্ট দিল? চক্ষুদ্বয় বেয়ে অঝরে অশ্রু গড়ায়।আচানক সারহানকে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নিস্তব্ধতা ভেঙে ফুপিয়ে উঠে। ভেজা ভাঙা কন্ঠে আওড়ায়;

“সারহান… ভাই বাবু আসার খবর পেয়ে আপনি কি খুশি হননি?”
সারহান মুহুর্তে স্তম্ভিত হয়ে গেল এহেন কান্ডে।সে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। সহসা দুহাত মেলে জাপ্টে ধরল মেয়েলী নরম শরীরটা। অতি সাবধানে তাদের মাঝের দুরত্ব মিটিয়ে নিল। বাহিরের আবহাওয়া বড্ড চমৎকার। আজ বৃষ্টি বালাইটুকু নেই। সূর্যের সোনালী আলোয় পরিবেশ নতুন আবহ প্রকাশ করছে। প্রকৃতিতে বইছে শীতল হাওয়া। সেই হাওয়া হুরহুর করে বেলকনির দরজা ডিঙিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। অরিত্রিকা হেঁচকি তুলে কাঁদছে। মেয়েটা কি তবে ভাবছে সে বাবা হওয়াতে খুশি নয়! সারহান রুদ্ধ শ্বাস ফেলে। অতঃপর মেয়েলী কানের নরম লতিতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে কোমল কন্ঠে বলে উঠল ;

“আমি ভীষণ খুশি, ফাইরুজ। আমাদের সন্তান আসছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না। ধন্যবাদ বাবুর আম্মু, আমাকে বাবা হওয়ার মতো অনন্য অনুভূতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।”
অরিত্রিকার কান্নার বেগ কমে আসে। তার অন্তঃকোণ পুলকিত হয়ে ওঠে এমন অনুভূতিতে মোড়ানো শব্দগুচ্ছে! তবুও নাক টেনে অভিমানী বিরস কন্ঠে বলল;
“তাহলে আমার সাথে ওমন করে কথা বলছিলেন কেন?”
সারহান অরিত্রিকার দুই বাহু ধরে স্বাভাবিক ভাবে বসিয়ে দেয়। অমসৃণ হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে অশ্রু মুছে দেয়। অতঃপর রুক্ষ ভাব কমিয়ে নরম কন্ঠে বলল ;

“তোর এখন পড়াশোনা করার বয়স। সামনে তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ আছে অথচ তুই সেসব না ভেবে এতো বড় কাহিনী ঘটালি ভেবেই আমি অবাক হয়ে গেছি। তোর এখনো সংসার কিংবা বাচ্চা সামলানোর মতো ম্যাচিউরিটি আসেনি। এসব ভেবে গতকাল থেকে আমি চিন্তিত।”
অরিত্রিকা এবার বুঝতে পারল মানুষটার কেন ওমন করছে। তার সিদ্ধান্তে অনুশোচনা হওয়ার কথা থাকলেও হলো না। উল্টো মিনমিন করে বলল;
“আমার ভবিষ্যৎ আপনি আর আমাদের বাবু। আপনি চিন্তা করবেন না আমি আজ থেকে ম্যাচিউর হয়ে যাব আর আমাদের বাবুর যত্ন নেব।”
“সেটাই করবি আজ থেকে। লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করা অফ তোর।”

“উমম… আচ্ছা।”
“মনে থাকে যেন।”
“আচ্ছা। শুনুন, বাড়ির সবাই কি জানে?”
অরিত্রিকা কৌতূহলী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল।
সারহান শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল;
“হুম, জানে।”
অরিত্রিকার মুখখানা ছোট হয়ে গেল। লাজুক ভাব নিয়ে বলল;
“আমি সবার সামনে কীভাবে যাব? কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।”
সারহান হঠাৎ ওষ্ঠ কামড়ে হাসল ;
“সেটা আগে ভাবার দরকার ছিল।”
অরিত্রিকা হাপ্যিতশ করে বলল;
“তখন কি আর এসব মাথায় ছিল?”

“তা ঠিক। তখন তো আমার বিবিজানের পড়াশোনা থেকে বাঁচার জন্য পরিকল্পনা চলছিল।”
“আপনি আমায় লেগ পুল করছেন কেন?”
অরিত্রিকা অবাক হয়ে বলল। সারহান অরিত্রিকার কোমর পেঁচিয়ে সন্নিকটে আনল। মেয়েলী মুখশ্রীতে নিগূঢ় চাহনিতে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল;
“আমার মানসম্মান নিয়ে কেউ টানাটানি করার সাহস পায়নি অথচ তুই আমার মানসম্মানের সাথে ব্যক্তিত্ব ধরে টানাটানি বাঁধিয়ে দিয়েছিলি।”
অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। পিটপিটিয়ে চেয়ে কম্পনরত কন্ঠে বলল;
“মানে?”
সারহানের আঙ্গুলের স্পর্শ তখন মেয়েলী কোমরে গভীর ছাপ ফেলছে।সেভাবেই আরেকটু অরিত্রিকাকে সন্নিকটে এনে দৃঢ় কন্ঠে বলল;

“ইতিহাসে বোধহয় এটাই প্রথম, কোনো হাসবেন্ড বাসর ঘরে ঢোকার ত্রিশ মিনিট পরেই শুনল সে বাবা হতে চলেছে। ঠিকমতো ধরলামও না, ছুঁলামও না অথচ বাবা হয়ে গেলাম!”
অরিত্রিকা ভয় পেয়ে গিয়েছিল অথচ সারহানের এমন কথা শুনে ভয় উবে গেল। লজ্জায় হাসফাস করে উঠল। সেসবকে ছাপিয়ে হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। ইশ! কি আক্ষেপ? সে দুহাত বাড়িয়ে মানুষটা গলা ধরল। হাসি থামিয়ে কোনো মতে বলল;
“এমপি সাহেব তাহলে বোধ হয় আপনিই ইতিহাস গড়লেন।”
সার হান অনিমেষ চেয়ে রইল মেয়েলী হাস্যজ্জ্বল মুখপানে। প্রতিত্তোরে ছোট্ট করে বলল;

“হুমম।”
“একটা বলি?”
“বল।”
“পড়াশোনা থেকে মুক্তি পেতে আর আরেকটা কারণে এমনটা করেছি।”
“আরেকটা কারণ?”
“হুমম,ভেবেছিলাম বাবা হয়তো রিসেপশন করবে না। কারণ উনি আপনার ওপর রেগে ছিলেন। তাই আরকি একটু পাকনামি করে ছিলাম যেন আপনার ওপর বাবা রাগ না করে থাকে। রাগ ভাঙানোর জন্য এর থেকে ভালো উপায় মাথায় আসেনি তাই আরকি..”

সারহান আবারও একবার অবাক হয়ে গেল। বিস্ময়াভিভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অরিত্রিকার লাজে রাঙা, হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে। সে ভেবেছিল মেয়েটি শুধু পড়াশোনার ভয়ে এমনটা করেছে, অথচ এখন বুঝল অরিত্রিকা আসলে আরও একধাপ এগিয়ে।ঠিক তখনই অরিত্রিকা মুচকি হেসে মাথা রাখল সারহানের প্রশস্ত, পুরুষালী বুকে। মুহূর্তেই তার ভেতরে বয়ে গেল অজানা সুখের স্রোত।যা এ মুহুর্তে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
❝ আমার জীবন ধন্য হলো স্বামীর আদর পাইয়া
কতো নারী আফসোস করে আমার দিকে চাইয়া
টাকা পয়সা সোনা-দানায় কোনো শান্তি নাই
মনের শান্তি বড় শান্তি জেনে রাখবেন ভাই
আমার লক্ষী জামাই ❞

উচ্চ-মৃদু আওয়াজ ভেসে আসতেই সারহান স্বাভাবিক ভাবে বসল। ঘাড় বাঁকিয়ে সরাসরি তাকাল দরজার দিকে। অরিত্রিকা অদ্ভুত রকমের গান শুনতে পেয়ে চমকে উঠল। হন্তদন্ত হয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে ঘাড় বাঁকিয়ে সরাসরি তাকাল সামনে। মুহুর্তে লজ্জা পেয়ে গেল।ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে আবির। বন্ধুর ওমন চাহনি দেখে দ্রুত রিলস টা কেটে ফোনটা পকেটে রেখে অন্যত্র তাকিয়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলল;
“ইয়ে মানে.. স্যরি। রিলসের গানটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম তাই খেয়ালই ছিল না বন্ধু আমার বিবাহিত।”
সারহান টি-শার্ট টেনেটুনে ঠিক করে দাঁড়াল। রুঢ় কন্ঠে ডাকল;

“এদিকে আয়।”
আবির সামনে তাকিয়ে হেসে বলল;
“পরে শুনব তোর কথা। অরিনের এক্সাম আছে ওকে নিয়ে যেতে হবে।”
সারহান বলল;
“তুই কেন ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাইকে কথাটা জানিয়েছিস?”
“খুশি ভাগ করে নিতে হয় জানিস না? আমিও তাই ভাগ করে নিয়েছি।”
“তোর জন্য সবাই কল করে যাতা বকে যাচ্ছে।”
“ওরা বলেই যাতা। তুমি করলে… ”
“মুখে ফুলস্টপ লাগা।”

আবির ক্যাবলামার্কা হেসে সটকে পড়ল। তখুনি সাথী বেগম এসে দাঁড়ালেন দরজার সামনে। হাসি মুখে বললেন;
“দুজনে এসো। সবাই টেবিলে বসে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
অরিত্রিকা মায়ের কন্ঠস্বর শুনে দ্রুত মাথায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে। সারহান ভদ্রতাসূচক বলল ;
“আপনি যান আমরা আসছি।”
ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। সারহান এবার অরিত্রিকার দিকে তাকাল। ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা দেখে ভ্রুযুগল বেঁকে গেল। স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“নিচে চল।”
অরিত্রিকা মিনমিন করে বলল ;
“যাব না। আপনি যান।”
“যাবি নাকি কোলে তুলে নিয়ে যাব।”
“যাচ্ছি।”

ডাইনিং টেবিলে বসে নানা রকম পদের খাবার খাচ্ছেন চৌধুরীরা। তাদের সবার মুখে যেন হাসি সরছে না। বাড়ির ছোট সদস্য আসছে খুশি তো হওয়ারই কথা। তবে আজমল সাহেব মুখ গম্ভীর করে চুপচাপ খেয়ে চলেছেন। এমন ব্যবহারের কারণ অবশ্য চারজন জানে। গতকাল রাতে সারহান যে টাইট দিয়েছে সেটার রেষ এখনো আছে। অরিত্রিকা মাথায় ওড়না টেনে দিয়েছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না ওমন করে চুপচাপ ভাত খাচ্ছে। সারহান পাশে বসা। সে খাওয়ার মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকিয়ে মেয়েটার কান্ড দেখছে।
“সারহান! এগারোটার দিকে অরিত্রিকার ডক্টরের এপোয়েন্টমেন্ট আছে। তুমি নিয়ে যাবে নাকি আমি নিয়ে যাব?”
আজমল সাহেবের ভড়িক্কি কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। সারহানের খাওয়া শেষ। সে সরাসরি চাচার দিকে তাকাল। স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বলল;

“আমি নিয়ে যাব।”
আজমল সাহেব বললেন;
“সাবধানে যেও আর ভালোভাবে সবকিছু বুঝে নিও।”
কথাটা বলে ভদ্রলোক খাবার শেষ করে উঠে পড়লেন। তারপর পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলেন। তিনি ছোট মেয়ের দিকে তাকালেন। নরম কন্ঠে বললেন;
“আম্মা!”
অরিত্রিকা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে ওড়নাটা সরিয়ে ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করলেন;
“হুম আব্বু।”
আজমল সাহেব এগিয়ে আসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন;
“দোয়া করি, তোমরা যেন ভালো বাবা-মা হয়ে সন্তানের জীবনে অফুরন্ত ভালোবাসা আর সঠিক পথনির্দেশ দিতে পারো।”

অতঃপর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন। সেই দৃশ্য দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সারহান নিঃশব্দে হাসল। তার চাচা যতোই নিজেকে কঠিন দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন মন থেকে নরম। সবার সামনে কঠিন্যতার সত্তা ধারণ করে থাকে।অরিত্রিকার চক্ষুদ্বয় ছলছল করে উঠল। সে ভয় পেয়েছিল বাবার ওমন নিশ্চুপতা দেখে। ভেবেছিল হয়তো মানুষটা এখনো রেগে আছে। কিন্তু এখন মনটা শান্ত হলো। যাক, তার বাবা রেগে নেই। আরশাদ সাহেব গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললেন;
“অরিত্রিকা মা, এখন থেকে তোমার যা যা খেতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলবে। আমি নিজে গিয়ে বাজার থেকে নিয়ে আসবো। শোনো, ভুলেও সারহানকে বলো না কিন্তু। ব্যাটা আমার লাটসাহেব! বাজারে কিনতে নিশ্চিত নাকানিচুবানি খেয়ে উল্টোপাল্টা জিনিস কিনে আনবে।”
কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠল। অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। সারহান উঠে পড়ল। অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল;

“খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে নে।”
অরিত্রিকা মাথা দুলাল। সারহান সেখান থেকে চলে গেল। সবার খাওয়া প্রায় শেষ। একে একে উঠে গেল কিন্তু ইশরা, রাহা গেল না। তারা মিটিমিটি হেসে অরিত্রিকার পাশে দাঁড়াল।
“তোরা আমার দিকে তাকিয়ে পেত্নীর মতো হাসছিস কেন?”
অরিত্রিকা দুজনকে হাতে দেখে গমগমে কন্ঠে শুধালো। রাহা মুখ চেপে হাসল। ইশরা হাসি বজায় রেখে বলল;
“খালামণি হওয়ার খুশিতে হাসছি।”
অরিত্রিকা মুখখানা শান্ত হয়ে গেল। সে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে বলল;
“ওমন করে হাসবি না জঘন্য লাগছে।”
ইশরার হাসির মাত্রা বাড়ল। রাহা রসিয়ে বলল;
“এতোদিন লেভিকে বাচ্চার মতো পেলেপুষে বড় করলি। এবার নিজের বাচ্চা পেলেপুষে বড় করার জন্য রেডি হো।”
“হ্যা, এখন থেকে রেডি হচ্ছি।”

“অবেশেষে আমার জামাই বাবা আসছে। শুনুন, বেয়ান আমার জামাইটাকে ভালোভাবে দেখে শুনে রাখবেন যেন আমার মেয়ে ব্যতিত অন্য কোনো মেয়ের দিকে নজর না দেয়।”
“আচ্ছা বেয়ান।”
কথাটা বলে হেসে উঠল অরিত্রিকা। তার সাথে তাল মিলিয়ে ইশরা ও রাহা বেশ কিছুক্ষণ হাসল। হাসি থামিয়ে রাহা বলল;
“তিশা, রুহান, রুদ্র ওরা সকাল থেকে আমায় কল করে যাচ্ছে। আমি কল ধরিনি। কখন দেখবি তিনটা এ বাড়িতে এসে টপকাবে।”
অরিত্রিকা অবাক হয়ে বলল;

“ওদের কে বলেছে?”
“আমি।”
কথাটা বলে রাহা ছুটল। অরিত্রিকা কপাল চাপড়ালো। এদের জন্য তার মানসম্মান টুকু অবশিষ্ট রইল না। ইশরাও হাসতে হাসতে চলে গেল। তানিয়া বেগম এসে বললেন;
“আর কিছু লাগবে?”
অরিত্রিকা বলল;
“লাগবে না বড় মা।”
“কতো বার বলব মা বলে ডাকবি।”
“ভুল হয়ে গেছে মা।”
“এই তো ভালো মেয়ে।”
অরিত্রিকা হাসল। সাথী বেগম এসে ওপর পাশের টেবিলে বসে মেয়েকে সাবধান করে বললেন;
“আজ থেকে ভদ্র মেয়ের মতো থাকবি। সিঁড়ি বেয়ে ওপর নিচ করবি না।”
অরিত্রিকা লক্ষী মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে উঠে পড়ল। অতঃপর আস্তেধীরে সেখান থেকে প্রস্থান করল।

চৌধুরী বাড়িতে আজ ভিন্ন রকম আমেজ।সবার মাঝে উৎসবমুখর আনন্দ ছড়িয়ে আছে। অনেকদিন পর আজমল সাহেব বাজারে গিয়েছিলে, সঙ্গে ছিলেন আরশাদ সাহেব। মেয়ের পছন্দের ফল, মাছ ও সবজি আরও পছন্দসই খাবার কিনে এনেছেন তারা। বাড়ির গিন্নিরা ব্যস্ত সেগুলো গুছিয়ে রাখতে, সাথে আচারের বোয়ামগুলোও সামনের দিকে সাজিয়ে রেখেছেন।

সারহান দুপুরের আগে অরিত্রিকাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। চেকআপে জানা গেছে সবকিছুই স্বাভাবিক, তবে অরিত্রিকার শরীর কিছুটা দুর্বল। নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়া করলে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, আর বাচ্চাও সুস্থ থাকবে।এদিকে সাদাত আর ইশরা মিলে বাচ্চার জন্য অনলাইনে খেলনা ও পোশাক খোঁজা শুরু করেছে। আবির ও অরিন এখনও আসেনি, তবে জানিয়েছে আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে এসে দেখে যাবে। অন্যদিকে ইরফান আর রাহা খুশির এই সময়ে নিজেদের মতো করে আনন্দে সময় কাটাচ্ছে।
“মিস্টার, আমাদেরও কিন্তু একটা ছানাপোনা হলে মন্দ হয় না।”

সোফায় বসে ফোন টিপছিল ইরফান। হঠাৎ অর্ধাঙ্গিনীর মুখে অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে যেন হোটচ খেল। তড়িৎ বেগে তাকাল রাহার দিকে। মেয়েটা নিষ্পাপ চাহনিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে ফোনটা পকেটে রেখে নড়েচড়ে বসল। অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে বলল;
“হঠাৎ ছানাপোনার কথা মাথায় কেন আসলো?”
রাহা হাসল;

“অরিত্রিকাকে আগে বলে রেখেছিলাম ওর যদি ছেলে হয় তবে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দেব। দুজনের অবশ্য অমত নেই। জামাই বাবা তো চলে আসছে। এখন আমাদেরও জামাই বাবার বউকে দ্রুত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।”
ইরফান অতিব আশ্চর্য হলো। সহসা বলে উঠল;
“তোমরা মেয়েরা ছেলে-মেয়ের বিয়েও ঠিক করে রাখো?”
“হুম। তাহলে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। শুনুন না, আমারও একটা ছানাপোনা চাই।”
“মাথা থেকে ওসব বের করে দাও। আগে পড়াশোনা তারপর সবকিছু।”
“কি বললেন? তারমানে আপনি আমার হবু জামাইকে মেনে নিচ্ছেন না?”
“আজব! তুমি কি করে জানলে ছেলেই হবে? মেয়ে ও তো হতে পারে।”
ইরফান ভরাট কন্ঠে বলল। রাহা গমগমে কন্ঠে বলল;
“আপনি মিলিয়ে নিয়েন আমার কথা। শুনুন, একদম আজমল আংকেলের মতো করবেন না। আমি চাই আপনার জন্য আমার মেয়ে কষ্ট পাক।”

ইরফান কপাল চাপড়ায়। বাচ্চা পৃথিবীতে আসেনি তার আগে দুই বান্ধবী কি সুন্দর প্ল্যান করে রেখেছে। মেয়েটা কিনা শেষমেষ সারহানের ছেলেকে জামাই বানানোর ধান্ধা করছে? এ অসম্ভব। সে গাম্ভীর্যতা এঁটে নিয়ে বলল;
“সময় হোক তারপর এসব নিয়ে ভাববো। অগ্রীম ভাবনা ভেবে উল্টোপাল্টা বলো না।”
রাহা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্যত্র তাকিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল;
“আপনার সাথে আজ থেকে কোনো কথা নেই মিস্টার ইয়ারফোন। যতোক্ষণ আমার কথা না মানবেন ততক্ষণ কোনো কথা নেই।”

ইরফান হতাশ হয়ে তাকিয়ে রয় বউয়ের দিকে। এ কোন ঝামেলায় ফাঁসল সে। মেয়েদের বন্ধুত্বটাই এমন। বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য এ কথা বলে অনেকসময়। তাই বলে এতোটা সিরিয়াস হওয়া কি আদৌও যুক্তিযুক্ত? অরিত্রিকা বাগান, পার্কিং প্লেসের আশেপাশে দিয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক হাটাহাটি করার পর লিভিংরুমে পা রাখল। তার সঙ্গে সারহান আছে। দুজনে এগিয়ে আসতেই দেখল রাহা রাগ করে আছে আর ইরফান রাগ ভাঙাচ্ছে।
“ইরফান ভাই, আমার বান্ধবীকে কেন রাগিয়েছেন?”
অরিত্রিকা আস্তেধীরে এগিয়ে এসে ওপর পাশের সোফায় বসে কৌতূহল মেটাতে শুধালো। সারহান ও অরিত্রিকার পাশে এসে বসল। ইরফান বউয়ের রাগ ভাঙানো বাদ দিয়ে অসহায় চাহনিতে তাকাল। মুখ ভার করে বলল;

“তোর বান্ধবীর থেকে জেনে নে।”
অরিত্রিকা এবার রাহাকে জিজ্ঞেস করল;
“ রাহা কি হয়েছে? ইরফান ভাই তোকে বকেছে?”
ইরফান তাজ্জব বনে যায়। সে দু-মাসে একবারও মেয়েটাকে বকেনি। রাহা মন খারাপ করে বলল;
“কিছু হয়নি।”
“নিশ্চয়ই ইরফান ভাই তোকে কিছু বলেছে তাই না?”
“বকেনি আমার কথা না মেনে আংকেল হতে চাইছেন।”
“আমার বাবা এর মধ্যে কেন আসলো?”
“উনাকেই জিজ্ঞেস কর।”

রাহা গমগমে কন্ঠে বলল। অরিত্রিকা না বুঝে অবুঝের মতো তাকিয়ে রইল। সারহান কখনো কারো পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলে না। তবে এ মুহুর্তে চুপ থাকতে পারল না। ইরফানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল;
“তুই রাহাকে কি বলেছিস?”
ইরফান উপায়ন্তর না পেয়ে বলল;
“ভাই! কাহিনী গোলমেলে। তোকে পরে বলব।”
রাহা তখুনি বলে উঠল ;
“পরে কেন বলবেন? এখুনি বলুন।”
“তুমি চুপ করো। বাচ্চা মেয়ে কিছু বোঝে না হাঁসের মতো প্যাক প্যাক করে।”
“আপনি আমায় হাঁস বললেন? আপনি তাহলে নষ্ট ইয়ারফোন।”

ব্যস! দুজনের ঠুকঠাক লেগে গেল। সাদাত, ইশরা ফোন থেকে নজর সরিয়ে ঝগড়াতে মনোনিবেশ করল। অরিত্রিকা হতাশ হয়ে গেল। দুজনকে থামাতে চাইল। কিন্তু কেউ থামল না। সে ক্লান্ত ভঙ্গিমায় সারহানের বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে লাইভ ঝগড়া দেখতে লাগল। সারহান দৃঢ় হাতে মেয়েটাকে আগলে নিয়ে নিল।
“তোমরা দুজন ঝগড়া করছো কেন?”
আরশাদ সাহেবের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে দুজনে চুপ হয়ে গেল। অরিত্রিকা দ্রুত সারহানের হাত ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসল। ইরফান গলা খাকড়ি দিয়ে বলল;
“তেমন কিছু না মামু।”

আরশাদ সাহেব গোয়েন্দা চাহনিতে তাকিয়ে চশমা ঠেলে বললেন;
“আর যেন ঝগড়া করা না দেখি। জানো না, মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতে নেই।”
ইরফান হাসার ভাণ করে বলল;
“আচ্ছা, আর কোনোদিন ঝগড়া করব না।”
ভদ্রলোক বোধ হয় সন্তুষ্ট হলেন। সামান্য হেসে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে। সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। ইরফান সারহানকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“ভাই তুই আমায় কোন মসিবতে ফেললি?”
সারহানের কপাল কুঁচকে গেল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;
“আমি কি করেছি?”

“তোর জন্যই সবকিছু হচ্ছে। আমার ভোলাভালা বউটাও রেগে আছে।”
“তোর বউ রেগে আছে, কিন্তু আমি কি করলাম?”
“ভেবে দেখ কি করেছিস।”
ইরফান কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল। সবাই কাহিনী না বুঝে অবুঝের মতো বসে রইল। সারহান রাহাকে জিজ্ঞেস করল;
“রাহা তোমার হাসবেন্ড আমায় দোষারোপ কেন করছে?”
রাহা কি বলবে? সে মুখটা কাচুমাচু করল। অতঃপর বলল;

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮২

“জানি না ভাইয়া।”
রাহা ও কোনো মতো নিজেকে বাঁচিয়ে পালাল। অরিত্রিকা হাঁক ছাড়ল;
“আরে বেয়ান! আসল কাহিনী না বলে কথা যাচ্ছেন?”
সারহান হতভম্ব হয়ে বলে উঠল;
“হোয়াট? বেয়ান!”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৩