প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৩

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৩
আদ্রিতা নিশি

সতেরো বছর বয়সী চঞ্চলা এক কিশোরীর প্রতি হঠাৎই অদ্ভুত টান অনুভূত হয়েছিল গম্ভীর, রগচটা ও স্বল্পভাষী যুবকের। সেই অদৃশ্য টান থেকেই জন্ম নিল অনুভূতির সূচনা। সময়ের সাথে সাথে সেই অনুভূতি হয়ে উঠেছিল আরও গভীর, আরও নিবিড়। হঠাৎ করেই যুবকটি অনুভব করেছিল এটা সাধারণ কোনো অনুভূতি নয়। এ হলো প্রণয়ানুভূতি! চক্রান্ত, সময়ের বেড়াজালে পড়ে প্রেমিক সত্তা হুট করে হারিয়েছিল প্রিয় মানুষটিকে। না চাইতেও দূরে ঠেলে দিতে হয়েছিল। তখনও সপ্তদশী ছিল সেই যুবকের ভালোবাসা সম্পর্কে বেখবর।

মেয়েটি অনুমানই করতে পারেনি তার অগোচরে কেউ একজন তাকে অসম্ভব ভালোবাসে! বর্তমান সময়ে বিষয়টি হয়তো খুবই স্বাভাবিক ও সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু যে যুবক দীর্ঘ তিন বছর ধরে নিজের অনুভূতি হৃদয়ের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেখে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছে, তার কাছে কি সহজ ছিল দূর থেকে গোপনে ভালোবাসা? অগোচরে থেকেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটানো? কিংবা শত্রুদের হাত থেকে প্রিয় মানুষটিকে আগলে রাখা? না, একেবারেই সহজ ছিল না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিন বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লড়াই করে যখন সে প্রিয় রমণীকে নিজের করে পেল তখন জীবনের হারিয়ে যাওয়া গোপন সুধা, আঁকড়ে ধরে বাঁচার কারণ এবং সবচেয়ে বেশী সুখানুভব করেছিল । ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েও যখন দ্বিতীয়বার ফিরে পেল, তখন যেন পূর্ণতার সাগরে ভেসে গেল প্রেমে মত্ত যুবক। প্রিয় নিভৃতসুধার অতীতের কলঙ্ক সে নিজের ভালোবাসা দিয়ে মুছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করল। ভুল বোঝেনি, অবহেলা করেনি বরং তাকে বুকের ভেতর আগলে রেখেছে। জীবনের নানা উত্থান-পতন, অতীতের দহন আর রোষানল পেরিয়ে তারা একসঙ্গে পা রাখল সুন্দর নতুন জীবনে। আর চৌধুরী বাড়ির সবাইও ধীরে ধীরে নতুন আশায় জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিচ্ছে।

নয়ন তালুকদার, নিশাদ এহসান এবং ইসমা বেগম বর্তমানে জেলে বন্দি। তাদের মামলা ইতোমধ্যেই আদালতে তোলা হয়েছে। শীঘ্রই শুনানি শুরু হবে। ধারণা করা হচ্ছে সবাই প্রাপ্য শাস্তি পাবে। বিশেষ করে নয়ন তালুকদার ও নিশাদ এহসানের ফাঁ*সির সম্ভাবনাই বেশি।এই দুই মাসে চৌধুরী বাড়ির কেউ ইসমা বেগমের খোঁজ নেননি।এমনকি তাকে দেখতে জেলেও যাননি। ইরফান আর ইশরা দু’জনই মায়ের জন্য কষ্ট পেলেও রাগ ও ক্ষোভে তাকে দেখতে যেতে রাজি হয়নি। বাড়ির সবাই এখন নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত, ফলে ইসমা বেগম থেকে ধীরে ধীরে সবাই দূরে সরে গেছে।

বারান্দার চেয়ারে বসে আছে সারহান। সামনে মাঝারি আকারের টেবিল, তার ওপর খোলা ল্যাপটপ। কপাল কুঁচকে মনোযোগ দিয়ে কীবোর্ডে আঙুল চালিয়ে জরুরি কাজ সামলাচ্ছে সে। আজ পার্টি অফিসে যায়নি। আরও কয়েকদিন না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন তার মূল দায়িত্ব অরিত্রিকার খেয়াল রাখা কীভাবে চলাফেরা করবে, কীভাবে খাবে-দাবে আর ব্যায়ামের নিয়ম আয়ত্ত করবে, সবই তাকে শেখাতে হবে।

অরিত্রিকা অবশ্য প্রথমে এসব মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।আজ একগাদা খাবার একসাথে গিলতে গিয়ে প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছিল সে। গত রাত থেকেই বাড়ির সবাই তার খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরায় নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়েছে। ইচ্ছেমতো ফাস্টফুড, চিপস বা আইসক্রিম আর খেতে পাচ্ছেনা,জোরে হাঁটাহাঁটিও করতে পারছেনা। শুধু বাবুটার জন্যই সবকিছু মেনে নিচ্ছে, নইলে এত শাসন সে সহ্য করত না।রুমে বসে ফোন ও বই ঘেঁটে বাচ্চার নাম খুঁজছিল অরিত্রিকা। কিন্তু কোনো নামই মনে ধরেনি। তাই ব্যস্ত মানুষটাকে একটু জ্বালাতে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। নিঃশব্দে ধীর পায়ে সারহানের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে উঠল মিষ্টি করে। তারপর চুলে হালকা ফুঁ দিল বারবার। কিন্তু সারহানের ভ্রূক্ষেপ নেই। কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তার হাসি নিভে এল। বুঝতে পারল, মানুষটা ইচ্ছে করেই চুপ আছে।

“সারহান ভাই আপনি আমাকে পাত্তা দিচ্ছেন না কেন?”
অরিত্রিকা এই প্রথম ইচ্ছে করে টেনে টেনে তাকে “ভাই” বলে ডাকল। তার চোখে-মুখে গভীর ভার। চাতক পাখির মতো চেয়ে রইল গম্ভীর মানুষটার দিকে। সারহান ল্যাপটপে কাজ করা থামিয়ে চেয়ারটিসহ খানিকটা পিছিয়ে হেলান দিল। এক মুহূর্ত দেরি না করে হাত বাড়িয়ে অরিত্রিকার মেদহীন কোমর জড়িয়ে টেনে বসিয়ে দিল নিজের উরুর ওপর।অপ্রস্তুত হয়ে চমকে উঠল অরিত্রিকা। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল সারহানের গম্ভীর মুখের দিকে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর কঠোর ভাবমূর্তি একবারে ভেদ করে গেল তাকে। অরিত্রিকা শুকনো ঢোক গিলে নীরবে সামলে নিল নিজের বিস্ময়।
“আমাকে আমার বাচ্চার মামা বানানোর পায়তারা করছিস ফাইরুজ?”

সারহান হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় করে দুরত্ব ঘুচিয়েছে ভরাট কন্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। এই রে! বাঘ ক্ষেপেছে। কেন যে ইচ্ছাকৃত রাগাতে গেল? সে মুখ কাচুমাচু করে দৃষ্টি নত করল। মনের ভাবাবেগ বুঝতে না দিয়ে ওষ্ঠ কামড়ে কিছু একটা ভাবতে লাগল। তখুনি অনুভব করল কোমরে অবাধ্য হাতের বিচরণ। সে নেত্রপল্লব উঁচিয়ে সরাসরি তাকাল মানুষটার পানে। খানিকটা নড়েচড়ে উঠে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে স্পর্শ যেন গাঢ় হতে লাগল। অরিত্রিকা কেঁপে উঠল। কম্পনরত কন্ঠে বলল ;
“এসব..কি হচ্ছে?”
সারহান নিগূঢ় চাহনিতে তাকিয়ে একটু ঝুঁকে এসে বাঁকা হেসে বলল;
“তোকে পাত্তা দিচ্ছি।”
সারহানের ভাবমূর্তি পাল্টাতে দেখে অরিত্রিকা ভড়কে গেল।কিছুক্ষণ পূর্বে বাঘের মতো গর্জন করছিল আর এখন… সে লজ্জা পেল। মিনমিন করে বলল;
“আমার..পাত্তা লাগবে না।নামিয়ে..দিন।”

সারহান অন্যহাত উঁচিয়ে মেয়েলী গালে রাখল। অরিত্রিকা চোখ মুখ খিঁচে নিল। হাতে খামচে ধরল মানুষটার টি-শার্ট।তখুনি কর্ণকুহরে প্রবেশ করল মদ্যক কন্ঠস্বর;
“নিজ থেকে কাছে আসলি এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দেই?”
অরিত্রিকা ধরফর করে উঠল;
“আমরা বেলকনিতে.. আছি। কেউ দেখে ফেলবে।”
সারহানের কর্ণকুহরে কি সেই কথা প্রবেশ করল? বোধ হয় না। সে মেয়েলী শঙ্কিত বদনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দুর্বোধ্য হাসল। অতঃপর খানিকটা ঝুঁকে মেয়েলী উন্মুক্ত ঘাড়ে ওষ্ঠপুট ছুঁইয়ে দিল। উষ্ণ ছোঁয়ায় অরিত্রিকার সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল। উষ্ণীষ ছোঁয়ায় শীতল শিহরণ বইয়ে গেল রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে থম মে*রে রইল। তার শরীর যেন বরফের ন্যায় জমে গেল। হাত-ঠান্ডা হয়ে আসল। পুরুষালি বিমোহিত চাহনি হঠাৎ আঁটকে গেল গোলাপী কম্পনরত ওষ্ঠে। সারহান একপলক সুশ্রী মেয়েলী মুখশ্রীতে তাকিয়ে গোলাপী মেয়েলী ওষ্ঠদ্বয় দখল করল। অকস্মাৎ এহেন কান্ডে চমকে নিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল অরিত্রিকা। তার শিরদাঁড়া বেয়ে বইয়ে গেল শীতল শিহরণ। উষ্ণ ছোঁয়ায় আবেশিত হলো দুই সত্তা। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল সেই তীব্রতা। অনুভূতি, অজানা সুখে ভেসে যেতে লাগল। বাহির থেকে শীতল হাওয়া উদ্দাম বেগে ছুটে আসছে শীতল হাওয়া। ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রেমোমত্ত দম্পতিকে। দীর্ঘক্ষণ এক সুখকর স্পর্শের সমাপ্তি ঘটল।

“আপনি..”
অরিত্রিকা কিছু বলতে পারল না লজ্জায়। সে মিইয়ে গিয়ে মাথাটা নত করল। সারহান ওষ্ঠ কামড়ে হেসে। অতঃপর গলা খাদে নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল;
“আমি এখন তোর ভাই নই। তোর হাসবেন্ড আর আমাদের অনাগত বাচ্চার বাবা হই।সেটাই বুঝিয়ে দিলাম।”
অরিত্রিকা হাসফাস করে উঠে সারহানের প্রশস্ত বুকে মুখ লুকালো। এই মানুষটা সবসময় তাকে লজ্জায় ফেলে। সারহান নিঃশব্দে হেসে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। অতঃপর সুগভীর কন্ঠে বলল;
“যদি বুঝতে না পারিস,অন্যভাবে বুঝিয়ে দিতে পারি।”
অরিত্রিকার অবস্থা লজ্জায় বেহাল। সে থেমে থেমে বলল;
“উমম..দরকার নেই।”

দুপুরের পরেই চৌধুরী বাড়িতে আগমন ঘটেছিল মুন এবং ইফাতের। ইফাত সেদিন ঢাকায় ব্যাক করেনি। দুজনে এসে একদফা সারহানকে জ্বালিয়ে মে*রেছে। সারহান অবশ্য সেসব সিরিয়াস ভাবে নেয়নি। তারপর বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফিরে গেছে।লিভিং রুমে আরশাদ সাহেব, আজমল সাহেব জমিয়ে গল্প করছে অরিত্রিকার সাথে। মেয়েটা দুই বাবার মাঝখানে বসে গল্প শুনছে আর একটু পরপর হেসে উঠছে। সেই আড্ডায় যোগ দিয়েছে রাহা, ইশরা ও বাড়ির গিন্নিরা। তারাও তাল মিলিয়ে গল্প করছে এবং হাসছে। বাড়ির তিন ছেলে কেউ বাড়িতে নেই এ মুহুর্তে। সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে বাহিরে গেছে।
“অরিনের বাবা মনে আছে আপনার? অরিত্রি ছোট বেলায় সারহানকে টিভি দেখতে দেবে না তাই আপনার জুতার ভেতর রিমোট লুকিয়ে রেখেছিল।”

সাথী বেগম আড্ডার মধ্যে হঠাৎ অরিত্রিকার কথার দুষ্টমির কথা বলে উঠলেন। সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। অরিত্রিকার হাস্যজ্জ্বল মুখখানা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। সে মায়ের দিকে মুখ ভার করে তাকাল। আজমল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসি বজায় রেখে বললেন;
“মনে আবার থাকবেনা!দুজন কেউ কাউকে দেখতে পারত না। তাই কতো কান্ড ঘটাতো। সেদিন অফিসে যাওয়ার সময় জুতা পড়তে যাব তখন রিমোটটা জুতোর ভেতর পেয়েছিলাম। তারপরেও আমার কোট ভেতরে বেশ কয়েকবার রিমোট পেয়েছিলাম।”
সাথী বেগম হাসি বজায় রেখে বললেন;

“আপনার কোট, জুতা এমনকি রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলও বাদ যায়নি। দস্যি মেয়ে ছেলেটাকে টিভি দেখতে দিবেনা তাই কতো কি করেছে।”
তানিয়া বেগম বলেন ;
“তোমার মনে আছে সাথী, সারহানের পছন্দের প্যান্টটা পাশের বাসার কুকুরকে পড়তে দিয়ে এসেছিল অরিত্রি। সারহান সেদিন রেগেমেগে কি চিৎকার চেচামেচি করা। পরে কতো কষ্ট করে শান্ত করেছিলাম ছেলেটাকে।”
আরেকদফা হাসির ফোয়ারা উঠল। ইশরা, রাহা হেসে হেসে ইশারায় অরিত্রিকাকে লেগ পুল করতে লাগল। অরিত্রিকা ওদের দিকে কটমট করে তাকাল। তার পুরনো কাহিনী শুনে সারহানের জন্য খারাপ লাগল। আহারে! কতো জ্বালিয়েছে মানুষটাকে। আরশাদ হেসে বললেন;

“এসব কান্ডের জন্য অরিত্রিকাকে সারহান একবার ধমক দিয়েছিল। মেয়েটা এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কি কান্না! আমার ছেলেটার নামে কেঁদে কেঁদে কতো অভিযোগ করল। কান্নাকাটি করার কিছুক্ষণ পরে গিয়ে নাকি সারহানের খাতায় কিসব লিখে দিয়ে এসেছিল। সেসব দিনগুলো মনে পড়লে মনটা শান্ত হয়ে যায়। কতো সুন্দর দিন কাটিয়েছি আমরা।”
তানিয়া বেগম হেসে বলল;

“সারহান ইন্টারে ওঠার পর থেকে হঠাৎ অরিত্রিকা চঞ্চলতা কমে গেল। আগের মতো অদ্ভুত কাজ, আচরণ সব কমে এলো। তখন আমি অবশ্য বুঝেছিলাম মেয়েটা আমার ছেলেটাকে হয়তো ভয় পায়। ভয় পাওয়ার কথা—সারহানটা যে গম্ভীর থাকতো। দুষ্টমি করা দেখলে মাঝে মধ্যে ধমক দিতো।”
অরিত্রিকা এতোক্ষণ তার করা গুণকীর্তন শুনছিল। যখন শুনল ভয়ের কথা আসছে তখুনি মুখ খুলে বলল;
“আমি উনাকে ভয় পেতাম না বড় মা।”
তানিয়া বেগম ভ্রুযুগল নাচিয়ে বলল;
“তাই! সারহান তোর বউ কি বলছে শুনেছিস?”
গম্ভীর মানুষটার নাম শুনে অরিত্রিকা থমকাল। সহসা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল। আরশাদ সাহেবের পাশে পায়ের ওপর পা তুলে লাট সাহেবের মতো বসে তির্যক চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাব হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সেই দৃশ্য দেখে রাহা রসিয়ে বলে উঠল;

“তারমানে ভাইয়াকে এই মেয়ে ভালোই জ্বালিয়েছে।”
ইশরা তাল মিলিয়ে বলল;
“তা আর বলতে? আরও অনেক কান্ড ঘটিয়েছে। কয়েক মাস আগেও ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য রাতে অচেনা…”
“চুপ। আর একটা কথা বললে তোর কথা বলা অফ করে দিব।”
অরিত্রিকা ধমকে উঠে বলল। ইশরা মুখ চেপে হেসে দিল। রাহাও তাল মিলিয়ে হেসে উঠল। সে জানে ইশরা মূলত চিরকুটের কাহিনীর পরের ঘটনা কথা বলছে। বাকীরা কিছু না বুঝে অবুঝের মতো বসে রইল। সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েটা ধরা পড়া চোরের মতো চুপচাপ বসে আছে। সে অনেকক্ষণ পূর্বে এসেছে অথচ খেয়ালই নেই।

“আপনাদের মেয়ে এসব উদ্ভট কান্ডকারখানা বাদে আরও অনেক কান্ড ঘটায়। সেসবের মধ্যে অন্যতম; বিয়ে না করে ছেলে-মেয়ের বিয়ে বান্ধবীর ছেলে-মেয়ের সাথে ঠিক করে রাখা।”
সারহান ভরাট কন্ঠে বলে উঠল। সবাই তৎক্ষনাৎ অদ্ভুত চাহনিতে তাকাল অরিত্রিকার দিকে। মেয়েটা লজ্জায়, অস্বস্তিতে সিঁটিয়ে গেছে। চোখ- মুখ শুকিয়ে গেছে। রাহারও একই অবস্থা। সে ঘাপটি মেরে বসে রইল। ইশরা মুখে হাত চেপে হাসতে লাগল। ইরফান ও সাদাত এসে দাঁড়াতেই এহেন কথা শুনে থম মেরে রইল। চৌধুরী কর্তা – গিন্নিরা একে ওপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে নিস্তব্ধতা ভেঙে হেসে উঠল। সেই সঙ্গে তাল মেলাল সাদাত, ইশরা। কিন্তু হাসি নেই দুই নবদম্পতির মুখে। তখুনি লেভি ছুটে এসে সারহানের পাশে বসে ডাকতে লাগল। সারহান দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাল প্রাণীটির দিকে। তার কেন যেন মনে হলো লেভি ও সবার সাথে আনন্দে সামিল হয়েছে।

সময়টা শরতের শেষ। প্রকৃতি শান্ত ও নির্মল রূপে আবির্ভূত। অম্বর নীলাভ, সেই বুকে ভেসে চলেছে তুলার ন্যায় শুভ্র মেঘমালা। নদীতীর, প্রান্তর জুড়ে দোল খায় কাশশুভ্রতার ঢেউ। প্রকৃতিতে হাওয়া বয় শীতল ও প্রাণস্পন্দনময়। ভোরে শিশিরকণায় সিক্ত ভূমি জাগ্রত হয় সতেজতায়,দুপুরে সূর্য নরম রশ্মি ছড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধ উষ্ণতা আর সাঁঝে নেমে আসে প্রশান্তির আবেশ।
অরিত্রিকা মুখভার করে বসে আছে লিভিং রুমে। সামনের ছোট টেবিলটায় পুষ্টিকর খাবারের পসরা অথচ সেসবে তার মন নেই। এ মুহুর্তে তার অন্যকিছু খেতে ইচ্ছে করছে। সারহান মাত্রই পার্টি অফিস থেকে ফিরেছে। শরীর ক্লান্ত, কেমন যেন মেজমেজ করছে। সেসব পরোয়া না করে ফ্রেশ হয়ে অরিত্রিকার কাছে এসে বসেছে। মেয়েটা মুখ ভার করে তখনো একদৃষ্টিতে খাবারগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকাচ্ছে। সারহান শান্ত চাহনিতে তাকায় স্ত্রীর দিকে। শীতল কন্ঠে শুধায় ;

“কি হয়েছে?”
অরিত্রিকা ডাগরআঁখিযুগল মেলে সরাসরি তাকায় মানুষটার দিকে। ওষ্ঠ উল্টে মিনমিন করে বলল;
“এসব খেতে ইচ্ছে করছে না।”
সারহান নড়েচড়ে উঠল। আগ্রহ নিয়ে শুধালো ;
“কি খেতে ইচ্ছে করছে?”
অরিত্রিকার ভার মুখখানা প্রাণবন্ত দেখাল। একগাল হেসে গদগদ কন্ঠে বলল;
“বার্গার,আইসক্রিম, ফুচকা।”
সারহান শোনা মাত্রই নাকচ করল;
“ওসব খাওয়া যাবে না।”
“কেন?”
“আনহাইজ্যানিক খাবার তাই।”
“আমার তো খেতে ইচ্ছে করছে। অল্প খাবো।”
“বললাম তো খাওয়া যাবে না।”

সারহান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকার চক্ষুদ্বয় ছলছল করে উঠল। প্রাণোচ্ছল প্রাণবন্ত মুখখানা ভার হয়ে এল। নাকের পাটাতন ফুলতে লাগল। ফর্সা মুখশ্রীতে রাগ, অভিমানে লালচে বর্ণ ধারণ করল। সারহানের গাম্ভীর্যতা কর্পূরের ন্যায় মিলিয়ে গেল। সে শীতল চাহনিতে অপলক চেয়ে রইল অরিত্রিকা সুশ্রী গোলগাল মুখপানে। মেয়েটা চারমাসের গর্ভবতী। চোখে – মুখে এসেছে মাতৃত্বের আভা। পূর্বের থেকে একটু মুটিয়ে গেছে। শরীরে এসেছে অল্পস্বল্প পরিবর্তন অথচ এমন অবস্থাতেও সৌন্দর্য ঠিকরে পড়ছে। দিন – দিন আরও স্নিগ্ধ, মোহনীয় দেখাচ্ছে,বাড়ছে লাবণ্যতা। পুরুষালি সত্তা তার বিবিজানের এ রুপে ক্ষণে ক্ষণে বেসামাল হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় চঞ্চলা হরিণীকে দেখে নতুন করে প্রেমে পড়ছে।
“আপনি আমায় খেতে দিবেন না! দাঁড়ান বড়আব্বুকে বলছি।”
অভিমানী মেয়েলী কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সারহানের ধ্যান ভাঙে। মেয়েটা উঠতে চাইলে হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। আলতো হাতে জড়িয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলল;

“আইসক্রিম খাওয়া যাবে না। ওটা বাদে কি খাবি বল।”
অরিত্রিকা অভিমানে চোখ তুলে না তাকিয়ে মুখ ভার করে বলল;
“আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“তাহলে কী করতে ইচ্ছে করছে?”
“ফুচকাওয়ালা মামার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।”
“এটা কী ধরনের ইচ্ছে?”
“বলুন নিয়ে যাবেন কিনা।”
অরিত্রিকা একটু রাগ দেখিয়ে বলল। সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল;
“আচ্ছা নিয়ে যাব। কিন্তু উনার সাথে দেখা করে কী করবি?”
অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল;
“ফুচকা খাব। আপনি কিন্তু পল্টি খাবেন না সার..
নেতাসাহেব।”

সারহান আগেই বুঝতে পেরেছিল এমন কিছু বলবে। প্রেগন্যান্সির পর থেকে মেয়েটার একটু পর পর মুড সুইং হয়। কখনো রেগে যায়। কখনো শান্ত নদীর মতো থাকে। কখনো হুটহাট কান্নাকাটি – উদ্ভট খাবার খাওয়ার বায়না করে। এমন ভাবেই দিন কাটছে। কারো গলা খাঁকড়ির আওয়াজ মাত্র সারহান অরিত্রিকা ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বসল। সামনে তাকাতেই দেখল আরশাদ সাহেব, আজমল সাহেব এবং আবির এসে দাঁড়িয়েছে। পেছনে অরিন ওষ্ঠ চেপে ধরে আসছে। অরিত্রিকার সবার দিকে নজর পড়তেই লজ্জার স্রোতে মুখখানি নিস্তেজ হয়ে এল, দৃষ্টি নিচে নেমে গেল। ওষ্ঠদ্বয় কাঁপল সামান্য। চৌধুরী বাড়ির কর্তারা হেসে প্রস্থান করলেন। অরিন মুখ চেপে হেসে মা-বড়মার কাছে ছুটল। আবির এসে বসে পড়ল অপর পাশের সোফায়।

“শালিকা! আমার বন্ধু তোমার ঠিকঠাক খেয়াল রাখছে তো? নাকি উঠতে বসতে ধমক দিচ্ছে?”
আবির হেসে বলল। সারহান শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে সূঁচালো চাহনিতে তাকাল। চোখ মুখ গাম্ভীর্যতায় ঢেকে গেল। অরিত্রিকা দৃষ্টি নত রেখে লাজুক ভাব নিয়ে প্রতিত্তোর করল;
“হুমম। রাখে।”
আবিরের ওষ্ঠ প্রসারিত হলো;
“ব্যাটা! এতো কেয়ারিং আগে জানা ছিল না।”
অরিত্রিকা হাসল। আবির সারহানের দিকে তাকাল। হাসি বজায় রেখে বলল;
“আগামী শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজশাহীতে আসছেন। সেই উপলক্ষে সোমবার দলীয় মিটিং রাখা হয়েছে। প্রাক্তন এমপি সাহেব তোকে জানিয়ে দিতে বললেন। অবশ্য উনি আজ রাতেই কল করে জানাতেন।”
সারহান সোজা হয়ে বসল। ভরাট কন্ঠে বলল;

“সকালেই খবর পেয়েছি।”
“ওহহ। শোন, তুই আজকে ইনানের সাথে কথা বলিস। মেবি কোনো জরুরী বিষয়ে ডিসকাস করবে। বেচারা তোকে ভয়েই কল করছে না।”
“ভয় কেন পাচ্ছে?”
“কাজে কোনো ভুল করেছে মেবি।”
“রাত এগারোটায় কল দিতে বলবি।”
সারহান বলল। আবির মাথা নাড়লো দু’দিকে। অরিত্রিকা চোখ উচিয়ে চাইল সারহানের পানে। অতঃপর খানিকটা ঝুকে এসে ক্ষীণ কন্ঠে বলল;
“শুনুন।”
সারহান ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে বলল;
“বল।”
“আমার বাইকে ঘুরতে ইচ্ছে করছে। অনেকদিন ঘোরাঘুরি করা হয়না।”

“কখন যাবি?”
“বিকেলে।”
“আচ্ছা। পাঁচটার সময় রেডি হয়ে থাকিস।”
সারহান কিছুক্ষণ মৌন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল। অরিত্রিকা খুশিতে সারহানের বাহু জড়িয়ে ধরে হাসল। আবির এ দৃশ্য দেখে খুকখুক করে কেশে বলল;
“ইয়ে মানে আমরা তোমাদের সাথে গেলে কি রাগ করবে শালিকা?”
অরিত্রিকা দ্রুত ভদ্র মেয়ের বসল। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। তা আড়াল করে মিনমিন করে বলল;
“উহু রাগ করব না।”
সারহান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে রয়। আবির উঠে দাঁড়াল। তারপর যেতে যেতে বলল;
“যাই ওদের বলে আসি।”

বিকেল পাঁচটা পেরিয়েছে। সবাই ঘুরতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে লিভিংরুমে অপেক্ষা করছে। অরিত্রিকা ঢিলেঢালা টু-পিস পড়েছে। গলার দুপাশে ওড়না অনায়াসে ফেলে রাখা। মাথাটা হিজাব দিয়ে আবৃত। সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরে-ফিরে দেখছে। তার নজর বারবার যাচ্ছে অল্প উঁচু উদরের দিকে। সে মিষ্টি হাসে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দেয় সেথায়। তার মনে হয় বাবুকে আদর করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। ইশ! কি সুন্দর অনুভূতি। কবে যে ছোট্ট ছোট্ট হাত, শরীর ছুঁয়ে আদর করতে পারবে? এ ভাবনার মাঝে আরেকটি উষ্ণ হাতের ছোঁয়া অনুভব করল তার উদরে। সে চমকে উঠে খানিকটা পিছিয়ে যেতেই পিঠ ঠেকল সুঠামদেহী প্রশস্ত বুকে। মুহুর্তে ভয় কমে আসল। সে বুঝতে পারল মানুষটা তার নেতাসাহেব।

“কি হচ্ছে?”
সারহান ঝুঁকে মেয়েলী কাঁধে চিবুক ঠেকায়। অতঃপর কোমল কন্ঠে শুধায়। অরিত্রিকা হাসে;
“বাবুকে আদর করছি। আপনিও ওকে একটু আদর করে দিন বাবুর পাপা।”
সারহান নিঃশব্দে হাসল। অতি সাবধানে ছুঁয়ে দিল উদর। অরিত্রিকা হাসির মাত্রা বাড়ল। সে আয়নার দিকে তাকিয়ে দৃশ্যখানা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। এভাবে দুজনে নিয়ম করে বাবুকে আদর করে দেয়। সারহান তার নিভৃতসুধার মাথায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বলল;

“বাবুর আম্মাকে দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
অরিত্রিকা লাজুক হেসে বলল;
“সুন্দর লাগবেই। কারণ আমি এমনি সুন্দর।”
“নিজের প্রশংসা করা হচ্ছে?”
“হুমম, সানিয়াত আহলানের বাবা।”
“বিবিজান! দুইমাস ধরে সানিয়াত আহলানের বাবা বলছেন —আপনার কন্ফিডেন্স দেখে মনে হচ্ছে অগ্রীম খবর পেয়েছেন আমাদের ছেলে হবে।”
“পেয়েছি তো।”

অরিত্রিকা মিষ্টি হেসে বলল। সারহান হাসি থামিয়ে একটু তারা দিয়ে বলল ;
“নিচে চলুন বিবিজান! সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
সারহান সটান হয়ে দাঁড়ায়। অরিত্রিকা পিছু ফিরে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অবলোকন করে মানুষটিকে। ব্ল্যাক শ্যার্ট, সানগ্লাস, জেল দিয়ে সেট করা চুল দেখতে ড্যাশিং লাগছে। সে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে নিচু হতে। সারহান কথামতো নিচু হয়। অরিত্রিকা লিপস্টিকযুক্ত ঠোঁট পুরুষালি গালে ছুঁইয়ে মিটিমিটি হেসে বলল;
“চলুন।”
সারহান বিস্ময়াভিভূত চাহনিতে তাকাল। অতঃপর সটান হয়ে দাঁড়াল। তখুনি অরিত্রিকা খেয়াল করল তার লিপস্টিক সারহানের গালে লেগেছে। সে তড়িঘড়ি করে টিস্যু এনে মুছতে লাগল। সারহান কপাল কুঁচকে বলল;

“কী?”
অরিত্রিকা অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে বলল;
“লিপস্টিকের দাগ।”
চারটা বাইক পার্কিং প্লেসের সামনে রাখা। তিনটি বাইকে ইতোমধ্যে তিন কাপল উঠে বসে পড়েছে। তারা অপেক্ষা করছে সারহান ও অরিত্রিকার জন্য। মিনিট দশেক পর অবশেষে তাদের দেখা পাওয়া গেল। আবির তখুনি বাইকের ওপর থেকে চিল্লিয়ে বলল;
“এতোক্ষণ ঘরে বসে কি লুডু খেলছিলি?”
সারহান দাম্ভিক ভঙ্গিমায় হেটে এসে বাইকে বসে পড়ল। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“ঘরের খবর বাহিরে জানাতে ইন্টারেস্টেড নই।”

আবিরের চোয়াল ঝুলে পড়ল। এ ছেলে তার থেকেও একধাপ এগিয়ে আছে। অরিন কটমট করে তাকাল বরের দিকে। এই মানুষটার কি কোনো আক্কেল হবে না? সে পেছনে বসেই এক কিল বসিয়ে দিল পিঠে। আবির আত্নচিৎকার করে উঠল। ইরফান শব্দ করে হাসল। রাহা ও তাল মিলিয়ে হাসল। সাদাত ও ইশরা নিজেদের হাসি চেপে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। এমন ভাব করল যেন কিছুই শোনেনি। অরিত্রিকা স্বাভাবিক থাকার ভাণ করে চুপচাপ বাইকে উঠে সারহানের কাঁধে হাত রাখল। সময় ব্যয় না করে চারজন যুবক একসাথে বাইক স্টার্ট দিলো। প্রথমে সারহান ও আবিরের বাইক চোখের নিমিষে চৌধুরী বাড়ির গেট পেরোল। তারপর আবির নিজেকে সামলে বাইক টান দিয়ে গেট পেরোল।

“ইশু বেবি ভালোভাবে আমাকে ধরে বস।”
ইশরা সাদাতের কথায় লজ্জা পেল। ছেলেটা কয়েকদিনে বড্ড ফাজিল হয়েছে। সে দুহাতে আঁকড়ে ধরল মানুষটা। অতঃপর হাসি বজায় রেখে বলল;
“ধরে বসেছি। এবার চলুন সাদু বেবি।”
সাদাত নিঃশব্দে হেসে উঠল। সামনে তাকিয়ে বলল;
“তিন বিবাহিত কাপলের মধ্যে আমরা এক অবিবাহিত হতভাগা কাপল।”
ইশরা ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল;
“চল, কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।”
সাদাত থমকাল। বিস্ময় ভাব নিয়ে বলল;
“কী? তুই সিরিয়াস?”
ইশরা দুষ্টুমি করে বলল;
“ইয়েস! সাদাত আসতাফ চৌধুরী।”
“তাহলে বিয়েটা করে ফেলা যায়।”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮২ (২)

সাদাত ওষ্ঠ কামড়ে হেসে বাইক টান দিয়ে চৌধুরী ভিলার গেট পেরিয়ে গেল।
গোধূলির লগ্নে, রোমাঞ্চে ভরা আবহে রাজশাহীর ব্যস্ত রাস্তায় চারটি ইয়ামাহা এম-টি ফিফটিন ভি থ্রি ব্ল্যাক মনস্টার বাইক ছুটে চলেছে। একই সারিতে লাইন বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চার কপোত-কপোতীর বাহন। উদ্দেশ্য একটাই এই বিকেলের শহরকে প্রিয় মানুষের সাথে পুরো শহর ঘোরা।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৩ (২)