প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৫
আদ্রিতা নিশি
সময় নদীর স্রোতের মতো নিরন্তর বয়ে চলে। নদীর মতোই কারো জন্য থেমে থাকে না। চোখের পলকেই মিলিয়ে যায় সময়। ধীরে ধীরে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর…এক লহমায় পেরিয়ে যায়। মনে হয় এই তো সেদিন বছরের শুরু হলো, অথচ এরই মধ্যে আরেকটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের আগমন ঘটে।স্মৃতির পাতায় ফিরে তাকালে মনে পড়ে, এই তো সেদিন চৌধুরী বাড়িতে জন্ম নিল দুই ছোট্ট অতিথি। সবার মুখে হাসি, সবার চোখে খুশির দীপ্তি উতলে পড়ছিল।
কখনো বাচ্চাদের কান্নায় মুখরিত হতো বাড়ি, আবার কখনো সবাই মেতে থাকতো তাদের আদর করতে। এরপর সময় পেরোল.. চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ের সন্তানের আগমনে পুনরায় বাড়িতে বয়েছিল আনন্দের নতুন জোয়ার। সময়ের দ্রুততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ির ছোট ছেলের এনগেজমেন্টে খুশি দ্বিগুণ হয়েছিল সবাই। একের পর এক আনন্দের মুহূর্তে ভরে উঠেছিল চৌধুরীদের জীবন। সময় বয়ে গেছে, কিন্তু সেই সুন্দর হাসি-আনন্দের মুহূর্তগুলো আজও জমা আছে স্মৃতির পাতায়। সেই সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতিগুলো যত্ন করে রাখা হয়েছে অ্যালবাম কিংবা আধুনিক যন্ত্রের কোনো মেমরিতে।হয়তো সামনের দিনগুলো কাটবে আগের মতোই, আবার হয়তো হবে আরও সুন্দর কিংবা কঠিন। কিন্তু এ পরিবারের বন্ধন, এ সম্পর্ক আর ভাঙবে না। সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন, ভালো-মন্দের ঢেউ পেরিয়ে জীবন চলবে নৌকার মতো।কখনো শান্ত স্রোতে ভেসে, কখনো অশান্ত তরঙ্গের সঙ্গে লড়াই করে। তবুও নৌকাটি থেমে থাকবে না, ঠিকই পৌঁছে যাবে নিজের গন্তব্যে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
❝ সময় বয়ে যায়, ঋতু বদলায়, কিন্তু ভালোবাসা হারিয়ে যায় না; আবার ফিরে আসে নতুন সাজে,
নতুন উপলব্ধিতে, নতুন রঙ নিয়ে। ❞
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পেরিয়েছে দুবছর। বর্ষাকাল পেরিয়ে প্রকৃতিতে শরৎকালের আবির্ভাব ঘটেছে।শরৎ আসতেই অম্বর নীলচে , উন্মুক্ত অম্বরের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা পেঁজা তুলোর ন্যায় মেঘ। বর্ষার ঘন কালো মেঘ সরিয়ে প্রকৃতি নতুন করে সেজেছে। পদ্মা নদীর চড়ে কাশবনের সাদা ফুলের ঢেউ বইছে। বাতাস স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ আর প্রাণবন্ততা লক্ষণীয়। নীলচে অম্বরের শুভ্র মেঘ এবং প্রকৃতি মিলেমিশে এক অপার শান্তি ও সৌন্দর্যে মোদিত হয়েছে।
আজ সেপ্টেম্বরের উনিশ তারিখ; সাদাত আর ইশরার বিয়ের দিন।
চৌধুরী বাড়ি জুড়ে হইচই আর ব্যস্ততার পরিবেশ। সবাই কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হতে হবে বলে তোড়জোড় চলছে। বাড়ির কর্তা-ব্যক্তিরা ডেকে-চেঁচিয়ে সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলছেন, তাদের কণ্ঠস্বর নিচ থেকে ভেসে আসছে।তবে এসব তাড়াহুড়োর কোনো গুরুত্ব নেই বাড়ির ছোট সদস্যদের কাছে। তারা নিজেদের মতোই বিছানায় বসে খেলছে, মেঝেজুড়ে ছুটোছুটি করছে। বিশেষ করে ছোট্ট সানিয়াত আহলান চৌধুরী একদম ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিতে ল্যাপটপে কার্টুন দেখায় মগ্ন। আর ছোট্ট সারাহ্ নতুন প্রিন্সেস ড্রেস পরে যেন সত্যিকারের রাজকন্যা সেজেছে। সে আনন্দিত চিত্তে সারা রুমজুড়ে আনন্দে ছুটোছুটি করছে।
অরিত্রিকা সেজেগুজে তৈরী হচ্ছিল। নিচ থেকে ভেসে আসা বাবার উচ্চস্বর শুনে ভড়কে গেল। সে ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে শাড়ি পরিহিত নিজেকে পরখ করে তড়িঘড়ি করে ছুটে এসে ল্যাপটপ অফ করতে উদ্যত হয়। তখুনি আধো আধো সানিয়াতের কন্ঠস্বর শুনে থেমে যায়।
“মা..ম্মা নো।”
অরিত্রিকা কপাল কুঁচকে ছেলের দিকে তাকাল। সানিয়াত মায়ের চাহনি দেখেও পাত্তা না দিয়ে আবারও মনোযোগ দিল ল্যাপটপের কার্টুনে। মুহূর্তেই তার ভেতরে হতাশার ঢেউ বয়ে গেল। এতটুকু বাচ্চা অথচ বাবার মতো গম্ভীর! নিজের মতো চলবে, কারো কথায় কর্ণপাত নেই। তাকে দেখে মনে হয় বাবার হুবহু প্রতিচ্ছবি! একেবারে নেতাসাহেবের ডুপ্লিকেট। নয় মাস পেটে ধরে বড় করল অথচ হলো পুরোপুরি বাবার মতো।সে ধীরে বিছানায় বসে পড়ে। এবার মেয়েকে ডাকে। সারাহ্ খুশি মুখে টুকটুক করে মায়ের কাছে ছুটে আসে। অরিত্রিকা স্নেহভরা হাতে মেয়ের চুলে আলতো করে ক্লিপটা লাগিয়ে দিলো। কোমল কণ্ঠে মিষ্টি হেসে বলল;
‘সোনা, তোমার বাবাকে ডেকে আনো।”
সারাহ্ গোলগোল চোখ করে মায়ের দিকে তাকাল। মিষ্টি হাসল;
“আ..ত্তা, মা..ম্মা।”
সারাহ্ ছোট ছোট পা ফেলে দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে গেল। অরিত্রিকা ছেলের পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলল;
“নো! বাবার মতো ইংরেজ হচ্ছে।”
সানিয়াত আর সারাহর চেহারায় মিল থাকলেও স্বভাব, কথা বলার ভঙ্গি, চাহনি আর আচরণ একেবারেই আলাদা।দুই ভাই বোন দুই মেরুর মানুষ ;একজন বাবার মতো, আরেকজন মায়ের মতো। এ নিয়েই অরিত্রিকার আফসোসের শেষ নেই। স্বামী যেমন গম্ভীর, ছেলেও হলো ঠিক তেমন।কিছুক্ষণ পরে সারহান রুমে প্রবেশ করল৷ তার কোলে সারাহ্! সে শাণিত পায়ে এগিয়ে আসলো। সামনে তাকাতেই শাড়ি পরিহিত পরিপাটি সাজে অরিত্রিকাকে দেখে থমকাল। পূর্ণ দৃষ্টিতে পরখ করল পরিপূর্ণ নারী রুপে অর্ধাঙ্গিনীকে। মেরুন রঙের শাড়ি পড়ছে, দেখতে চমৎকার লাগছে। এ রূপে যতবার প্রিয়তমাকে দেখেছে, ততবার পুরুষালি সত্তা খেই হারিয়েছে, বিমোহিত হয়েছে। এ মুহুর্ত ঠিক তেমন অনুভূতি হচ্ছে। তবে সেসবকে ছাপিয়ে অনুধাবন করল তার বিবিজান থম মেরে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন। সে পাশে দৃষ্টি স্থির করতে দেখল সানিয়াত কার্টুন দেখছে। এক নিমেষে বুঝে ফেলল কেন অরিত্রিকা ওভাবে করে বসে আছে। সে ছেলের দিকে এগিয়ে গেল। নরম কন্ঠে বলল;
“বাবা কাম।”
সানিয়াত বাবার,দিকে তাকায়। সারাহ্কে কোলে দেখে কার্টুন দেখা বন্ধ করে উঠে দৌড়ে আসে। ছোট্ট ছোট্ট দু’হাত উঁচিয়ে আধো আধো কন্ঠে বলল ;
“তোলে..”
সারহান নিঃশব্দে হেসে ফেলল। বাক্য ব্যয় না করে ছেলেকে অন্যহাত দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বুকের সাথে আদরে আগলে নিল। সে সরাসরি ছেলের পানে তাকাল। ভ্রুযুগল গুটিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল;
“মাম্মাকে আবার জ্বালিয়েছো?হুম!”
সানিয়াত গাল ফুলিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিষ্পাপ ভঙ্গিতে বলল;
“নো..।”
সারহান হাসি থামিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“ আমার আম্মা, তোমার নামে অভিযোগ দিয়েছে।”
“বুন.. মিচা… বুনছে।”
“তোমার বোন মিথ্যা বলছে না।”
“বুন..পতা পাপা।”
“বোনকে কেউ পঁচা বলে? হুম!”
সারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল। সানিয়াত চুপ করে গোল গোল চোখ করে বোনের দিকে তাকাল। তখুনি সারাহ্ মুখ ভার করে টান টান কন্ঠে বলল;
“বাই..পতা পাপা।
অরিত্রিকা হতাশ হয়ে উঠে দাঁড়ায়। গমগমে কন্ঠে বলল;
“ছেলেটা একদম আপনার মতো হয়েছে নেতাসাহেব। সারাক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকে। কিছু বললেই নো, হোপ এসব বলে।”
সারাহ্ কি বুঝল কে জানে? হঠাৎ খিলখিল করে উঠল। সানিয়াত ওষ্ঠদ্বয় গোল করে থেমে থেমে বলল;
“নেতা..তাহেব, পাপা।”
সারহান ছেলের পানে স্নেহপূর্ণ চাহনিতে চায়। অরিত্রিকা মুখ ভার করে বিরবির করে আলমারি থেকে পার্স বের করতে যায়। সারাহ্ আধো আধো কন্ঠে বলল;
“পাপা..লেবি।”
সারহান মেয়ের কথা শুনে মেঝের দিকে তাকাল। লেভি পায়ের আশেপাশে লেজ উঁচিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। সারাহ্ র এবং সানিয়াতের খেলার সাথী লেভি। দু’জনে বেশীরভাগ সময় খেলে। সারহান মেয়ের দিকে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বলল ;
“লেভিকে নিয়ে যাবে?”
সারাহ্ খুশি হয়ে তালি দিয়ে বলল;
“লেবি.. নিবো।”
তানিয়া বেগম এবং সাথী বেগম তৈরি হয়ে ছেলের রুমে আসলেন। অরিত্রিকা এবং নাতি-নাতনীর দেরি হওয়ায় দেখতে এসেছেন। দুইজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে সানিয়াত, সারাহ্ উচ্ছসিত ভাব নেয়ে ডাকল ;
“নান্নু, দাদ্দু।”
চৌধুরী গিন্নিরা হেসে ফেললেন। তারা এগিয়ে আসতেই সারহান বলল;
“সানিয়াত- সারাহ্কে নিয়ে যাও। আমরা আসছি।”
তানিয়া বেগম হেসে বললেন;
“আমরা ওদের নিতেই এসেছি। তোর বাবা – চাচা একপলক না দেখতে পেয়ে যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। দুটোকে নিয়ে গিয়ে বুড়ো দুটোর কাছে দিয়ে শান্ত করি।”
সারাহ্ ছোট্ট করে বলে উঠল;
“বুলো… দুতো! ”
অরিত্রিকা বাদে সবাই হেসে ফেলল। সাথী বেগম হেসে বললেন;
“চলো, তোমায় বুড়োর কাছে দিয়ে আসি।”
সারাহ্ যেন ঝাপিয়ে পড়ল সাথী বেগমের কোলে। তানিয়া বেগম সানিয়াতকে কলে নিলেন। অতঃপর তারা নাতী-নাতনীকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে প্রস্থান করলেন।
অরিত্রিকা ফোন, বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সারহানের কাছে এসে দাঁড়াল। নেত্রপল্লব উঁচিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলল ;
“চলুন।”
সারহান সটান হয়ে দাঁড়ায়। পরনের পাঞ্জাবি টা টেনেটুনে ঠিক করে। অতঃপর শীতল চাহনিতে তাকায় মেয়েলী সুশ্রী মুখশ্রীতে। শান্ত কন্ঠে বলে;
“বিবিজান কি আমার ওপর অভিমান আছেন?”
অরিত্রিকা মুখখানা ভার হয়ে আসে। হুহ্! এখন এসেছে রাগ করেছে কি না জানতে? সে দৃষ্টি নিচু করল। অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলল;
“আমি অভিমান করেছি কিনা আপনার না জানলেও চলবে। আমি ব্যতিতও তো আপনার জীবনে আমার সতিন আছে, তাকে নিয়ে থাকুন।”
সারহান দু’পা এগিয়ে গিয়ে অরিত্রিকার সন্নিকটে দাঁড়াল। আচানক অরিত্রিকার কোমর পেঁচিয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল। কাজল কালো আঁখিযুগলে তার সুগভীর দৃষ্টি স্থির করল। অতি শান্ত কন্ঠে বলল;
“আপনার সতিন কে?”
অরিত্রিকা পুরুষালি ছোঁয়ায় কেঁপে উঠল। বিমূঢ় চাহনি স্থির করল। অনুভব করল সেই উষ্ণ হাতের ছোঁয়ার গভীরত্ব। সে শুকনো ঢোক গিলল। রিনরিনে কন্ঠে বলল;
“আমার সতিন রাজনীতি। সারাক্ষণ ওটা নিয়ে পড়ে থাকেন অথচ ভুলে যান বাড়িতে বউ আছে।”
“বউ আছে বলে বাড়িতে ফিরি।”
“বউ না থাকলে বুঝি বাড়ি ফিরতে না?”
“নাহ, আপনার সতিনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।”
“বউ থাকতেও আমার সতিনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন।”
অরিত্রিকা ক্ষীণ কন্ঠে বলল। সারহান কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ল। অতঃপর নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল;
“জেলাসিরও একটা লিমিট থাকে ফাইরুজ। শেষ পর্যন্ত তুই আমার কাজকে নিয়ে জেলাস ফিল করছিস?”
অরিত্রিকা সহসা জবাব দিলো;
“আপনিও তো লেভিকে নিয়ে জেলাস ফিল করেন।”
“আমি মোটেও তোর লেভিকে নিয়ে জেলাস ফিল করি না। উমম.. দুটো বছর পেরিয়ে গেল অথচ তুই আগের মতোই রয়ে গেছিস।”
“আগের মতো রয়ে গেছি মানে? দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছি।”
“দেখে মনেই হয় না।”
“তাহলে আমাকে দেখে কি মনে হয়?”
অরিত্রিকা ভ্রুযুগল কুঁচকে প্রশ্নাত্মক চাহনিতে তাকিয়ে বলল। সারহান খানিকটা ঝুকে মেয়েলী ললাটের মধ্যখানি ওষ্ঠ ছুঁইয়ে সুগভীর কন্ঠে আওড়ালো ;
“তোকে দেখে মনে হয়, তুই আমার নিভৃতসুধা, আমার প্রিয় বিবিজান এবং আমার বাচ্চাদের মা।”
অরিত্রিকার ওষ্ঠকোণে হাসি সঞ্চারিত হলো। সে বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল। রাগ-অভিমান কর্পূরের ন্যায় মিলিয়ে গেল। এতো সুন্দর করে কথা বললে কি মন খারাপ করে থাকা যায়। সে ভাবাবেগ সংবরণ করল। তাড়া দিয়ে বলল;
“চলুন। এভাবে বাড়িতে থাকলে সাদাতের বিয়েটা কিভাবে হবে? বেচারা বোধ হয় অধৈর্য হয়ে গেছে।”
সারহান অরিত্রিকা ছেড়ে দিয়ে বলল;
“হুম। বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
“চলুন।”
“হুম। চল।”
“আহির, সানিয়াত আর সারাহ-র সাথে মা*রামা*রি করবে না। যাও ভদ্র বাচ্চার মতো গিয়ে খেল।”
আবিরের কথা শুনে দুবছরের ছোট্ট আহির চঞ্চল পায়ে ছুটে গেল কমিউনিটি সেন্টারের বরাদ্দকৃত রুমে। আবির সেই চঞ্চল পায়ে ছুটে যাওয়া,দেখে হাসল। কেন যেন মনে হলো ছেলেটা একদম তার মতো হয়েছে। অরিন শাড়ি পড়ে হাটতে গিয়ে কুঁচি এলোমেলো করে ফেলেছে। সে দ্রুত পায়ে হেটে এসে আবিরের সামনে দাঁড়াল। অনুনয় করে বলল;
“আবির, শাড়ির কুচিটা ঠিক করে দিন।”
আবির মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। শাড়ি পরিহিত বউয়ের আগুনের ন্যায় রুপ দেখে বুকটা জ্বলে ওঠে। সে নিবিড় চাহনিতে পরখ করে তার একমাত্র বউকে। কপাল করে একটা সুন্দর বউ পেয়েছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় সারহান বিয়েটা দিয়ে ঠিক করেছে। নাহলে এতো সুন্দর বউ কোথায় পেত?
“ কি হলো? ওমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
অরিন কৌতূহল নিয়ে বলল। আবির স্বাভাবিক হলো। ওষ্ঠ কোণে হাসি ফুটিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল। অতঃপর নিখুত ভাবে কুচি ঠিক করে দিতে লাগল। সেই কার্য সম্পাদন করতে করতে প্রশংসা করল;
“তোমাকে আজ আগুনের মতো সুন্দরী লাগছে। আহ! দেখা মাত্রই প্রেমের আগুন বুকে জ্বলছে। এভাবে আমাকে বারবার কেন ঘায়েল করো বউ? এখন কি করব বলো, অসময়ে প্রেম প্রেম পাচ্ছে তো?”
অরিন হাসতে গিয়ে থেমে গেল। মানুষটা দু’বছরেও বদলালো না। যাই হোক, ভালোবাসাতে কোনো কমতি রাখে না। কপাল করে এমন একটা বর পেয়েছিল। এ যুগে এতো ভালো মনের মানুষ হয়তো খুব কম আছে। সে মুখখানা গম্ভীর করার চেষ্টা করল। বলল;
“বুকে কি প্রেমানলের গোডাউন আছে? আমাকে দেখলেই জ্বলে উঠে?”
আবির কুচি ঠিক করে উঠে দাঁড়াল। ওষ্ঠ কামড়ে হাসল ;
“হুম, গোডাউন আছে। এ প্রেমানল শুধু তোমায় দেখে জ্বলে বউজান।”
“জান ডেকে লাভ নেই।”
“ভালোবেসে ডাকছি তো।”
“আপনার ভালোবাসার ডাক পরে শুনব। চলুন, সাদাত আর ইশরার বিয়ে পড়ানো হবে।”
“তুমি সবসময় এমন করো বউ।”
আবির মন খারাপ করে বলল। অরিন ফিক করে হেসে দিল। অতঃপর খানিকটা ঝুকে গিয়ে পুরুষালী গালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল;
“এবার চলুন।”
কথাটা বলে আবিরকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল অরিন। সময় দুইটা বেজে দশ মিনিট। চৌধুরী বাড়ির সবাই একটার আগে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছেছে। আমন্ত্রিত মেহমানরা খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করেছে ইতোমধ্যে। এখন বিয়ে পড়ানোর পালা।
“দেখেছেন আবির ভাইয়া আপুকে শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছিল কতো সুন্দরভাবে অথচ আমি আপনাকে বলেছিলাম কিন্তু আপনি আমায় শাড়ির কুচি ঠিক করে দেননি। শাড়িও পড়তে দেননি হুহ্! বুঝেছি বিয়ের দুবছর পর ভালোবাসা কমে গেছে।”
ইরফান আর রাহা স্টেজের সামনে সারি করে সাজানো চেয়ারে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইরফান একটু আগে সারহানের সঙ্গে কথা বলে এসে বসেছে। বসার সাথে সাথেই কর্ণকুহরে ভেসে এল অভিমানী মেয়েলী কণ্ঠস্বর। সে তির্যক দৃষ্টিতে তাকাল রাহার গোলগাল মুখের দিকে, যেখানে অভিমান যেন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । রাহা পড়েছে ঢিলেঢালা থ্রি-পিস। আসলে সে শাড়ি পরতে চেয়েছিল, কিন্তু ইরফান রাজি হয়নি। কারণও যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত;রাহা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন অবস্থায় শাড়ি পরে হাঁটা-চলা করতে গেলে বিপদের ঝুঁকি থাকে। যদি পা পেঁচিয়ে পড়ে যায়, তবে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
“শাড়ি পড়তে দেয়নি বলে তুমি আমার ভালোবাসার দিকে আঙ্গুল তুলছো, রাহা!৷ তোমার ভালোর জন্য নিষেধ করেছি। এটা অন্তত বোঝো।”
ইরফান শান্ত কন্ঠে প্রতিত্তোর করল। রাহা মুখখানা কাচুমাচু করল। সে জানে, কেন ইরফান শাড়ি পড়তে নিষেধ করেছে অথচ বুঝেও অবুঝের মতো আচরণ করছে। আসলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে মাঝে মধ্যে এমন হয়। ইরফান বুঝতে পারল, রাহা হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। সে কোমল কন্ঠে বলল;
“ইরাধ্যার আম্মু!”
রাহা চকিত নয়নে তাকাল। মন খারাপ নিমেষেই ভুলে গেল। ড্যাবড্যাব করে চাইল ভালোবাসার মানুষটির মুখপানে। অস্ফুটস্বরে আওড়ালো ;
“হুম!”
“আমার সামনে মন খারাপ করে থাকবে না বুঝলে। দেখতে ভীষণ বাজে লাগে।”
“হুমম।”
“শোনো, আমাদের ইরাধ্যার জন্মের পর যত ইচ্ছে শাড়ি পড়ো। দরকার হলে আমি তোমায় আরও শাড়ি কিনে দেব। কিন্তু এ তিনমাস একটু সাবধানে থাকতে হবে বুঝেছো। মনে আছে নিশ্চয়ই, তিনমাস আগে আমার ফ্রেন্ডের বিয়েতে শাড়ি পড়ে গিয়েছিলে। সেখানে শাড়ি পায়ে জড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলে। ভাগ্য ভালো ছিল আমাদের বাচ্চার কিছু হয়নি।”
“আচ্ছা আর বায়না করব না।”
রাহা মোহিত নয়নে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল। ইরফান মেয়েলী হাতটা তার মুঠোবন্দি করে করল। নরম কন্ঠে বলল;
“বায়না করবে। তবে এ সময়ে শাড়ি পড়ার বায়না করা যাবে না লক্ষীটি।”
রাহার হাসির মাত্রা বাড়ল ;
“আচ্ছা!মিস্টার ইয়ারফোন।”
দুজনের কথোপকথনের সমাপ্তি ঘটল আজমল সাহেবের কথায়। তিনি আহিরকে কোলে নিয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ালেন। বললেন;
“ইরফান আহিরকে একটু রাখো। আমি কাজি সাহেবের সাথে কথা বলে আসি।”
ছোট্ট আহির নানুর গলা চেপে আধো আধো কন্ঠে বলল;
“দাব.. না।”
আজমল সাহেব হতাশ হলেন। কোমল কন্ঠে বললেন;
“নানু ভাই, মামার কাছে যাও।”
আহির মুখ ভার করে বলল;
“তককেত।”
ইরফান উঠে দাঁড়াল। মৃদু হেসে বলল;
“চলো চকলেট কিনে নিয়ে আসি আহির বাবু।”
কথাটা শুনতেই ইরফানের কোলে ঝাপিয়ে পড়ল আহির। দু’হাতে কাঁধ জড়িয়ে বলল;
“তলো।”
সবাই হেসে ফেলল। ইরফান আহিরকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের বাহিরে চলে গেল। আজমল সাহেব হেসে প্রস্থান করলেন। অরিত্রিকা একহাতে শাড়ি উঁচিয়ে ধরে হাঁটছে আর আশেপাশে তাকিয়ে রাহাকে খুঁজছে। চেয়ারে বসমান দেখে সে এগিয়ে আসলো। সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল ;
“তুই এখানে একা বসে কি করছিস?”
রাহা বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বলল;
“বসে ছিলাম।”
“ইশরা তোকে ডাকছে।”
“আমাকে কেন ডাকছে?”
“আমি কি জানি তোর ননদ কেন ডাকছে?”
“আচ্ছা চল।”
কথাটা বলে উঠে দাঁড়াল রাহা। অরিত্রিকা বান্ধবীর বাহু ধরে আস্তে ধীরে নিয়ে যেতে লাগল ইশরার কাছে।
বিকেল তিনটা পেরিয়েছে। সাদাত ও ইশরার বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর তারা অবশেষে একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেল, তাই দুজনের মনেই আনন্দের ছোঁয়া। সাদাতের এখনো স্থায়ী চাকরি হয়নি, তবে ফ্রিল্যান্সিং করে সে যথেষ্ট আয় করছে। এই বিষয়টি ভেবে আরশাদ সাহেব আর দেরি করেননি। তিনি মনে করেছেন, ছেলে স্ত্রীকে ভরণপোষণ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাই আর অপেক্ষা না করে বিয়েটা সেরে দিলেন। যদি সাদাতের আয় না থাকত, হয়তো বিয়েটি আরও পিছিয়ে যেত।
“ইশু! আজ তোকে দেখে আমার বউ মনে হচ্ছে।”
ভরাট কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই চমকাল ইশরা। ঘাড় বাঁকিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল শেরওয়ানি পরিহিত বরবেশে সাদাতের দিকে। বয়স চব্বিশের কোঠায়, এখন সে পরিপূর্ণ এক যুবক,চলন-বলনে এসেছে পরিণত ভাব, চেহারায় ফুটে উঠেছে আরও বেশি আকর্ষণ ও সুদর্শন ভাব। আগের তুলনায় অনেকটা বদলে গেলেও ভেতরের মানুষটা ঠিক আগের মতোই আছে। সময়ের স্রোতে কেটে গেল কয়েক বছর, আর আজ অবশেষে সে তার ভালোবাসার মানুষকে পেল। অজান্তেই ঠোঁটে ফুটল মিষ্টি হাসি,সাদাতের গভীর চাহনি ও মায়াভরা কথার ভঙ্গিতে সে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কুন্ঠা ঠেলে ক্ষীণ কন্ঠে বলল;
“হুম,সাদাত আসতাফ চৌধুরীর বউ।”
সাদাতের চাহনিতে বিমুগ্ধতা। লাল বেনারসি পরিহিত বউ বেশে ইশরার সুশ্রী মুখশ্রীতে অনিমেষ চেয়ে আছে। তার সত্যি অবিশ্বাস্য লাগছে বিয়েটা হয়েছে। টমেটো, এখন তার বউ ভেবেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল;
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তুই আমার বউ। মনে হচ্ছে আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি।”
ইশরা সাদাতের হাতে হাত রাখল। সহালকা হেসে বলল;
“এটা স্বপ্ন নয়, ডিয়ার হাসবেন্ড। আমাদের বিয়েটা সত্যি হয়েছে।”
সাদাত মেয়েলী হাতের ছোঁয়া পেয়ে থমকাল। অতঃপর ওষ্ঠ এলিয়ে হেসে বলল;
“মিসেস চৌধুরী!”
ইশরা লজ্জা পেল। অন্তঃস্থিত মন ভালোলাগার জোয়ার বইয়ে গেল। ইশ! এই শব্দগুচ্ছে অধিকারবোধ ঢালা। নতুন জীবনে প্রিয় মানুষটার হাত ধরে এগিয়ে চলার মতো সুখ আর কোথাও নেই। সাদাত শান্ত দৃষ্টিতে একবার পরখ করে নিল তার প্রিয় রমণীকে। যে মেয়েটি একসময় ছিল উনিশ বছরের মেয়ে, আজ সে পরিণত নারী,তার জীবনসঙ্গী, তার বউ। কখন যে প্লে বয়ের মতো ভেসে বেড়ানো মন এক নারীতে থিতু হলো, সাদাত নিজেও বুঝতে পারেনি। হয়তো ইশরার মায়া আর ভালোবাসার টানে নিজের ভুলগুলো থেকে ফিরে এসে সত্যিকারের ভালোবাসায় বন্দি হয়েছিল সে।
“তাতু… তোলে।”
আরশাদ সাহেব ছোট্ট সারাহকে কোলে নিয়ে স্টেজে উঠলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই একে একে চলে আসবে, কারণ নবদম্পতির সঙ্গে ছবি তোলার পালা শুরু হবে। ঠিক তখনই বাচ্চার মিষ্টি কণ্ঠস্বর কানে আসতেই সাদাত চমকে সামনে তাকাল। বাবার কোলে ছোট্ট পরীর মতো সারাহকে দেখে তার মুখে অজান্তেই প্রশান্ত হাসি ফুটে উঠল।হাত বাড়িয়ে ভাতিজিকে কোলের ওপর বসিয়ে স্নেহপূর্ণ কন্ঠে বলল;
“পরী, এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?”
সারাহ্ মিষ্টি হেসে বলল ;
“দাদ্দু।”
সাথী বেগম সানিয়াতকে নিয়ে আসলেন। ছোট্ট ছেলেটা গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে নবদম্পতিকে দেখতে লাগল। ইশরার পানে দৃষ্টি স্থির হতে কপাল কুঁচকালো। কিছুক্ষণ মৌন থেকে থেমে থেমে বলল;
“কাম্মি। ”
ইশরা হেসে ফেলল৷ হাসি বজায় রেখে বলল;
“হুম, বাবা।”
“দা..বো। ”
“আসো সোনা।”
এরই মাঝে চৌধুরী বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হলো। ইশরা সানিয়াতকে কোলে তুলে নিল। ইরফান আহিরকে সাদাত ও ইশরার মাঝখানে বসিয়ে দিল। এরপর আস্তে ধীরে চারপাশে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঠিক তখনই সারহান নিঃশব্দে এসে দাঁড়াল অরিত্রিকার পাশে। কিয়ৎ অপেক্ষা না করে মুহূর্তের মধ্যেই সবার অগোচরে তার কোমরে হাত রেখে টেনে নিল নিজের কাছে। আচমকা স্পর্শে অরিত্রিকা চমকে উঠল, মুখে ফুটে উঠল একরাশ লজ্জা ও অস্বস্তি। তটস্থ ভঙ্গিতে সে পাশে দাঁড়ানো দন্ডায়মান মানুষটির দিকে তাকাল। সেই চাহনি দেখে সারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল;
“কি হলো?”
অরিত্রিকা ব্যতিব্যস্ত চাহনিতে আশেপাশে তাকিয়ে সবাইকে দেখল। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছে তা দেখে স্বস্তি পেল। সে পুনরায় শ্যামমানবের পানে চাইল। অস্বস্তি নিয়ে নিচু স্বরে বলল;
“কি করছেন।”
সারহান কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে দৃঢ় কন্ঠে বলল;
“কি করেছি?”
“কি করেছেন জানেন না?”
“উমম..তোকে একটু নিজের কাছে এনেছি। সবার সামনে তো রোমান্স করিনি।”
“আস্তে বলুন। বিয়ের পর আপনি অনেক নির্লজ্জ হয়ে গেছেন নেতাসাহেব।”
“বিয়ের পর কেউ সাধু পুরুষ থাকে না বিবিজান।”
সারহান নির্লিপ্ত কন্ঠে আওড়ালো। অরিত্রিকা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে স্থির চাহনিতে তাকিয়ে রইল। সেই চাহনি দেখে সারহান ওষ্ঠ কামড়ে হাসল। মেয়েটার এমন চাহনি ভীষণ উপভোগ্য!
“এমপি সাহেব ও ম্যাম এদিকে তাকান।”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৮৪ (২)
ক্যামেরাম্যানের কণ্ঠ কানে পৌঁছাতেই দুজনেই সামনে দৃষ্টি ফেরাল। পরিপাটি ভঙ্গিতে পাশাপাশি দাঁড়াল তারা। ঠিক সেই মুহূর্তে অরিত্রিকার মনে পড়ে গেল তার আর সারহানের প্রথম কাপল ছবির কথা।অরিন আপুর হলুদের দিন, যখন তারা প্রথমবার একসাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিল। তখনও এমনভাবেই একে অপরের দিকে তাকিয়েছিল, আর ক্যামেরাম্যান একইভাবে ডাক দিয়েছিল। সময় কত দ্রুতই না কেটে যায়! দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেল অথচ স্মৃতিগুলো এখনো অমলিন।ক্যামেরাম্যান একের পর এক ছবি তুলতে লাগল। ফ্যামিলি ফটো শেষ হলে সাদাত ও ইশরার বন্ধুরা এগিয়ে এসে ছবি তুলল।