প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৩
মহুয়া আমরিন বিন্দু
জোরে চিৎকারের শব্দ পেয়ে শোয়া থেকে দরফরিয়ে উঠে বসলো জেরিন।জেরিন উঠে পড়ায় বেশ জোরেই ধাক্কা লাগলো সাব্বিরের উপর, সাব্বির আশেপাশে না তাকিয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়েছে।নিজেও দিলো আআআ..করে চিৎকার!
সাব্বির বলে উঠলো
–,,ওও মা গো আমার কোমর!কোন হাতির বাচ্চারে পড়ছিলো আমার উপর।
জেরিন চোখ মুখ ঢলতে ঢলতে বললো–,,কার বাসায় আগু’ন লাগছে,কে মর”ছে ভাই?সকাল সকাল এতো চিল্লাফাল্লা কিসের!
বৃষ্টি, নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে, এরা কি ভুলে গেছে নাকি এদের যে গত কাল রাতে বিয়ে হইছে!এমন টা’স্কি খাইয়া গেলো কেন?
জেরিন নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,তরা তিন জন সকাল সকাল আমার রুমে ঢুকছছ কেন?আহ আমার সাধের ঘুম! দরজা খুললি কিভাবে?
বৃষ্টি নেহা ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে, এরা কি বিয়ে করার শোকে পা’গল হইয়া গেলো নাকি?হায় আল্লাহ অবশেষে পাবনা!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাব্বির মনোযোগ দিয়ে আশেপাশে দেখলো পরে জেরিনের দিক চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললো–,,ওই সখিনা!চোখের মাথা খেয়েছিস নাকি?আমার রুমে এসে বলছিস তোর রুমে গিয়েছি।বের হ তিনটায়,বুঝলাম না সকাল সকাল কি আমার রুমে সার্কাস চালু হইছিলো নাকি,তরা কি দেখতে হাজির হইলি!
–,,ওই শা’লা আমারে সখিনা ডাকলি কেনো?আমার নাম নাই নাকি?আকিকা দিয়া সুন্দর নাম টা রাখছে তোর কি পছন্দ হয় নাই!জেরিন ডাকবি বুঝছছ।
নেহা বলে উঠলো–,,থামবে তোমরা!কখন থেকে কি শুরু করেছো দুজনের কি কিছু মনে নেই?
–,,কি মনে থাকার কথা বলছিস?আমি তো বুঝতে পারছি না এই ছা’গলের রুমে আমি কেমনে আসলাম!
সাব্বির দাঁতে দাঁত চেপে বলে –,,স্বপ্নে উড়ে উড়ে আইছছ বইন!এবার বিদায় হ ঘুমামু আমি।
–,,উফ!থামবে তোমরা?আগে বলো তো তোমরা দুজন আমাদের থেকে কি লুকাচ্ছো?তোমাদের মধ্যে এতো ভাব হইলো কবে?আমাদের তো কিছু বললা না!
সাব্বির বলে উঠলো–,,কিহ্! ভাব আর ঘসেটিবেগমের সাথে কাবি নেহি!ওই বজ্জা’ত মহিলা হাড় মাস জ্বা”লিয়ে খেলো, এটা কে উঠাইয়া নিয়া ভাগ তো নেহা বইন।ভাইয়ের প্রতি রহম কর,এটার না কাল বিয়ে হইলো এখনো শ্বশুর বাড়ি যাইলো না কেন?
বৃষ্টির যেনো চোখ ফে’টে বেরিয়ে আসার উপক্রম!কি বলে এসব তার ভাই ঘুমের মাঝে কি মাথায় কোনো চো’ট পাইলো নাকি?সকাল সকাল স্মৃতি শক্তি নাই হইয়া গেছে!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,বিয়ে তো করলা তুমি,এর মধ্যেই ভুলে গেছো!
জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ!এতো ভয়া’নক স্বপ্ন টা দেখেই কি তরা সকাল সকাল চিৎকার করছিলি!
নেহা বললো–,,আচ্ছা বুঝলাম!তোমরা দুজন আমাদের সাথে মজা নিতেছো,এখন নিচে চলো দাদী ডাকছে, খাবার টেবিলে।যদি কিছু মনে না ও থাকে সমস্যা নেই,নিচে গেলেই মনে পড়ে যাবে।
নেহা বৃষ্টি কে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই।হু হা করে হেসে উঠলো জেরিন আর সাব্বির!সকাল সকাল দুই বোন যে মজা নিতে এসেছিলো এটা বুঝতে পেরেই দুজন মিলে ওদেরই দেখার মতো অবস্থা করে ছেড়েছে!
সাব্বির জেরিনের সাথে একটা হাই ফাই দিয়ে নিলো।
সাব্বির মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কথা মতো তুই এখন থেকে নিজের ঘরে থাকবি ভাগ!
–,,এমন দূর দূর করতেছিস কেন?তোর রুমে মনে হয় ইচ্ছে করে নাচতে নাচতে এসেছি,যত্তসব আজকে আত্নীয় গুলা বিদায় হলেই চলে যাবো,ততক্ষণ জায়গা দে!
–,,বৃষ্টি, না হয় নেহার রুমে যা।
–,,ওরা দুইটায় বিবাহিত, আমি ওখানে থাকলে প্রাইভেসি নষ্ট হইবো বুঝছছ গর্দ’ব!
–,,ওরে আমার বুদ্ধির ঢেঁকি, তা আমারে দেখে কি তোর সন্নাসী মনে হয়?
–,,না বন্ধু তোমারে দেখে দেবদাস মনে হয়,পিউর ছেকা খাওয়া মোরগ!
সাব্বির একটা বালিশ ছুঁড়ে দিলো জেরিনের দিক।জেরিন তেতে গিয়ে বলে উঠলো–,,দেখ সাব্বিরা,বেশি ভালো হবে না বললাম!
সাব্বির আলমারি খুলে একটা শপিং ব্যাগ এনে জেরিনের হাতে ধরিয়ে দিলো,পরে শিস শিস বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
জেরিন হাতের ব্যাগ টা খুলে হা হয়ো তাকিয়ে, এই শা’লা শাড়ি কিনলো কোন মাইয়ার জন্য! আজকে চেপে ধরে জানতে হবে বিষয়টা।
সাব্বির ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে টা ছুঁড়ে মারলো জেরিনের মুখে,জেরিন রেগে বলে উঠলো–,,তোর রুমে এসেছি দেখে এভাবে অত্যাচা’র করবি সাব্বিরা। তোর চুল ছিঁড়ে কাক কে দিয়ে দিবো আমি অসহ্য!
এখন বল কোন মাইয়ার কাপড় আমারে ধরাইয়া দিলি?
–,,তোর জন্যই কিনা?ভেবেছিলাম তোর বিয়ের পর তোকে গিফট করবো,এখন তো তুই বিবাহিত তাই দিলাম।যা ভাই তৈরি হয়ে আয়,আমি গিয়ে খাই,কাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি!
–,,আমার তো রং লেগেছে এখন এই শাড়ি পড়ে গিয়ে আদিখ্যেতা করবো,সর তো সামনে থেকে।
জেরিন শপিং ব্যাগ রেখে নিজের রুমে গেলো।গিয়ে যা দেখলো তাতে মাথা আর ঠিক থাকে,ঘর তো নয় আস্তাবল! জেরিন রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আলমারি থেকে থ্রি পিস বের করলো।
রুম থেকে বের হয়ে ডাকলো–,,রমিজা খালা ওই রমিজা খালা শুনতে পাচ্ছো না নাকি,দয়া করে এসে আমার রুম টা একটু পরিষ্কার করে দিয়ে যাও।
সাব্বির এসে জেরিনের মুখ চেপে ধরে বললো–,,কি করছিস কি?তুই না ভালো রাগ কমা,আমি নিচে গিয়ে বলছি পরিষ্কার করে দিবে তুই যা গোসল করে মাথা ঠান্ডা করে নিচে আয়!
জেরিন ঝাপটা মেরে হাত সরিয়ে চলে গেলো পারলে আত্মীয় নামক কার্টুন গুলার কিমা বানিয়ে দান করতো!
খাবার টেবিলে এখন শুধু বাড়ির সদস্য, মেহমানদের প্রথমে খেতে দিয়েছিলো।
নিখিল নেহার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোরা না ডাকতে গেলি, দুই মহান ব্যক্তি এখনো আসলো না কেন?
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,হতাশ ভাইয়া পুরটোই হতাশ।এরা দুজন পাগ’ল হয়ে গেছে,স্মৃতিশক্তি বুড়িগঙ্গায় ভেসে গেছে!
তাহমিদা বলে উঠলো–,,ওই তো সাব্বির আসছে,তা জেরিন কোথায়?
সাব্বির চেয়ার টেনে মিহিরের পাশে বসতে বসতে বললো–,,মাথা গরম মহিলার সকাল সকাল নিজের রুম দেখে মাথা গরম হয়ে গেছে,কাউকে বলো যাতে রুমটা দ্রুত আগের মতো ঠিকঠাক করে না হয় মাথা ফাটিয়ে দিবে এসে আমাদের।বুঝিয়ে বাথরুমে দিয়ে এসেছি বলেছি মাথায় পানি দে বইন মাথা ঠান্ডা হইবো!
মিহির বললো–,,তা ভাই সাহেব বিরিয়ানির টেস্ট কেমন ছিলো?
সাব্বির প্লেট উল্টে বললো–,, টেস্ট করার পর বলবো ততোদিনে তুমি বাবা দাদা হয়ে যাবে!
নিখিল ঠোঁট কামরে হেসে ফেললো।নেহা গুঁতো মেরে ফিসফিস করে বললো–,,এই আমাকে একটু বলুন তো কাল থেকে শুধু সমুচা বিরিয়ানির কথা শুনছি,এরা কোন সমুচার কথা বলছে, কিছুই তো বুঝলাম না।
নিখিল চেয়ারের ফাঁক দিয়েই নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুই কোনটা খেতে চাস বল?সমুচা বিরিয়ানি নাকি নিখিল স্পেশ্যাল কিছু!
–,,আপনি কি সব কিছু বাদ দিয়ে এখন রান্না করে খাওয়াবেন?
নিখিল হেসে দিলো,নেহা মুখ ভেংচি কাটলো।নিখিল আবার বললো–,,তুই খেতে চাইলে আমি তোকে খাওয়াবো!
–,,তাহলে ওদের কেও বলবো আপনি একা আমাকে কেনো খাওয়াবেন?সবাইকেই খাওয়ান!
–,,না!এটা স্পেশ্যাল শুধু তোর জন্য রাতে রেডি থাকবি আমি তোকে নিখিল স্পেশ্যাল খাবার টা দিবো!
নেহা ছোট করে বললো–,,আচ্ছা!
সাব্বির মুখে পরোটা দিবে ঠিক তখনই জেরিন এসে ওকে একটা ঠেলা মারলো চেয়ার টেনে পাশে বসে পড়লো! ফুরফুরে মেজাজ তার,কাল যে কতো কাহিনি হলো এসব মাথায় ও নেই,ভালো ঘুম তার পরে একটা সুন্দরতম গোসল মন একদম ঝাকানাকা!
জেরিন সাব্বিরের প্লেট টেনে নিয়ে বললো–,,কম খা মোটা হয়ে যাবি ভাই!
সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,দুইটায় কি শুরু করলি তখন থেকে, সাব্বির বলছিস বইন,জেরিন বলছিস ভাই!তোদের না কালকে বিয়ে হলো।
জেরিন খাবার মুখে দিয়ে বললো–,,হইছে তো কি, এখন কি করবো,বিয়ে বিয়ের জায়গায় আমরা আমাদের জায়গায়।
–,,বিয়ে নিয়ে এ কেমন মন্তব্য বোন!
সাব্বির বলে উঠলো–,,বাদ দেও তো দাদি এটা একটা ঘসেটিবেগম, বিয়ে হয়েছে দেখে কি এখন সব নিয়ম পাল্টে যাবে নাকি,সব আগের মতোই থাকবে,এসব নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো!
সেতারা মুখ উল্টে বললো–,,তাহলে তখন বিয়ে করেছিলি কেনো?
সাব্বির দুঃখী দুঃখী ফেইস বানিয়ে বললো–,, কি আর বলবো দাদি তখন আমার আবেগ কাজ করেছিলো বিবেক কাজ করে নাই!
জেরিন বলে উঠলো–,,হ্যাঁ আমারও!
এর মধ্যে জেরিন বলে উঠলো–,,ওই ছোঁচা আমার প্লেট থেকে খাইলি কেন?
–,,প্লেট আমার যা তুই ডাকা’তের মতো কেঁ”ড়ে নিয়েছিস।
–,,তুই অন্যটা নে, এটা আমারে দে!
এক পর্যায়ে প্লেট নিয়ে টানাটানি লাগলো,সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে এদের কান্ড দেখছে,আসলেই ওরা কিভাবে ভাবলো এই দুই ইবলি’শ একদিনে ঠিক হয়ে যাবে, কোনো দিন হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ!
এক পর্যায়ে জেরিন বলে উঠলো –,,মেজো মা তোমার ছেলে কে বলো কম খেতে মটু হয়ে যাবে!
সাব্বির জেরিনের মাথায় একটা মেরে বললো–,,আর তুই জানি একটা ছোট খাটো হাতি,সারা রাত যে আমার কোলের উপর ঘুমালি আহ আমার বেচারা পা কোমর দুইটার নাই নাই অবস্থা হয়ে গেছে!কম কম খা না হয় তোকে আমি আমার খাটে জায়গা দিবো না পরবর্তীতে দেখা যাবে আমার বেচারা খাটের কোমর ভেঙ্গে গেছে!
এমন কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো শাহআলম চৌধুরী! তিন জা মিলে হাসছে,বংশের একটা পোলাও ভালা হইলো না,সব গুলা মুখ দিয়ে বেফাঁ’স কথা বলে ফেলে সেখানে সেখানে!
আজ অনেক দিন কেটেছে বাড়িতে খুশির আমেজ,পরিবারের সব সদস্য যখন হাসিখুশ থাকে তখন না চাইতেও বাড়িটা থাকে শান্তিতে ভর পুর বাড়ির ইট পাথরের তৈরি নির্জীব বস্তু গুলোও যেনো বলে,এই দেখো তোমরা ওরা কেমন হাসছে,ওদের চোখ মুখ হাসছে, মন ভরে কেমন আনন্দে মেতেছে,এতো এতো ক্লান্তি শেষেও কেমন এই শান্তির নিড়ে ফিরে নিজেদের ফুরফুরে করছে,আমরা কিন্তু এই নিড়েরই অংশ আমরাও খুশি ওদের খুশিতে!
ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে নেহা বৃষ্টির জেরিন সাব্বির দুজন মিলে বোনদের যথা সম্ভব সাহায্য করেছে। কাজের ফাঁকে নিখিল মিহির ও তাদের খেয়াল রেখেছে, পড়তে পড়তে জান প্রাণ লাগিয়ে দিয়েছিলো।তার ফল ও পেয়ে দুজনই পাবলিকে চান্স পেয়েছে,তাও একই ভার্সিটিতে,খুশি যেনো ধরে না আর,শাহআলম চৌধুরী মেয়েদের রেজাল্টের খুশিতে পুরো এলাকায় মসজিদে মিষ্টি বিলিয়েছেন!আর কি চাই ছেলে মেয়েদের কৃতিত্বই তো সব বাবা মায়ের পাওয়া।
বৃষ্টির জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ারিং মোটেও ভালো লাগে না জীব বিজ্ঞান নিয়ে মেয়েটা বরাবরই অনাগ্রহী। কিন্তু নেহার থেকে দূরে যাবে না তাই এই সাবজেক্টই চয়েজ দিয়েছিলো পেয়েও গেছে তাদের পজিশন ছিলো প্রথমের দিকে সে সুবাধে পেতে অসুবিধে হয়নি তেমন!
আজ ভর্তি হতে যাচ্ছে নেহা, বৃষ্টি সাথে যাবে সাব্বির,জেরিন।
কোম্পানির এক বড় ইভেন্ট হবে আজ সব প্রতিপক্ষ কোম্পানি গুলোই থাকবে সেখানে, যার যার কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট দেখানো হবে পরবর্তীতে মাস খানের মধ্যে রেজাল্ট আসবে কোন কোম্পানি সেরা হয়েছে!তাই নিখিল বা অন্য কেউ আসতে পারেনি, সাব্বির কিছুদিন হলো কোম্পানিতে জয়েন করেছে,যতই হোক বিয়েটা হয়েছে,জেরিনের দায়িত্ব টা নিতে চায় সাব্বির, তাই কাজ করাটা আবশ্যক মনে করেছে, এতে বড়রাও মত বিরোধ করেনি, ছেলেকে মেরুদণ্ডহীনের মতো বসিয়ে রাখতে চায় না তারা আত্মনির্ভরশীল হওয়াটা জরুরি, কাজ শিখুক পরবর্তীকে বড় পদে জয়েন করতে পারবে!
শাহআলম চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী একসাথে কথা বলছিলেন তখন মাহফুজ চৌধুরী এসে বললেন–,,ভাইজান খান পরিবারের কাউকে দেখলাম না তো, বিশেষ করে সাহিল ছেলেটা!কয়েকদিন আগে ও একটা ইভেন্টে আমি গিয়েছিলাম সেখানে শুধু ইলিয়াস খান ছিলো তার ছেলে কে ছাড়া তো সে কোথাও যায় না।তবে এখন কি এমন হলো ছেলে পুরোপুরি উদাও হয়ে গেলো!
শহিদুল চৌধুরী বললো–,,, এটা খানদের কোনো চাল নয় তো?ইলিয়াস দুর্ত মানুষ, ভালো কোনো পরিকল্পনা যে করবে না এটা নিশ্চিত আমি!
ভার্সিটি প্রাঙ্গনে পৌঁছালো নেহা, বৃষ্টি আজ মনটা ভীষণ ভালো,এতো দিনের পরিশ্রমের ফল, অনুভূতিটাই কেমন তৃপ্তিময়।
ভর্তি কার্যক্রম শেষে বের হলো দু বোন।এদিকে জেরিন ভার্সিটি চত্তরে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে ব্যস্ত।
সাব্বির, নেহা, বৃষ্টি সেখানেই গেলো।
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আপু একা একা খাচ্ছো আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে একটু!
জেরিন খাওয়ার ফাঁকে বললো–,,কে তুমি মহাশয়া,এখন এসেছো খেয়ে ফেলো আমি অপেক্ষা করতে পারি না এতো!
জেরিনের খোলা চুল বার বার বিরক্ত করছে,তা দেখে সাব্বির বলে উঠলো–,,পে’ত্নী সাজতে এতো ভালো লাগে তোর?চুল গুলা ছেড়ে এসেছিস কেনো?চুল বাঁধার কিছু থাকলে দে!
–,,তোর পকেটে দেখ!
–,,আমার পকেট কি তোদের কসমেটিকসের দোকান?যে সেখানে থাকবে আশ্চর্য!
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,দেখ আছে আমিই রেখেছিলাম বেঁধে দে।
–,,সখের তোলা আশি টাকা।আমাকে পেয়েছিস তো সরকারি কামলা!
সাব্বির পকেটে হাত ঢুকিয়ে অবাক মেয়েটা পারেও বটে আজকাল হুটহাট এসে ওর রুমে ঘুমিয়ে পড়ে, মাঝেমধ্যে নিজের জিনিস পত্র ফেলে চলে যায়,আবার কখনো কখনো বলে তুই এই করে দে ওই করে দে মানে সব কাজ পারলে সাব্বির কে দিয়ে করায়,বিয়ে করাতে রুমে আসার পারমিশন যেনো ফ্রিতে পেয়ে গেছে ঘসেটিবেগম, কিছু বলাও যাবে না বাড়ির সব মানুষ আবার কন্যা ভক্ত তাহাদিগকে কিছুই বলা যায় না!
জেরিনের চুল গুলো বেঁধে দিলো সাব্বির!পরে টিস্যু দিয়ে মুখ মুখে দিলো,তা দেখে নেহা বৃষ্টি মুখ চেপে হাসলো,ওরা মনে মনে ভাবলো এই দুই পাগ’ল জানেই না ওরা মনের অজান্তেই দুজন দুজনের কতোটা আপন হয়ে গেছে,একজনের অন্য জন ছাড়া চলে না,কিন্তু ঝগ’ড়া করে নিজেদের মহান প্রমান করে বুঝায় ওদের মধ্যে কোনো ভালো সম্পর্ক আদোতেও নেই!
মিহির নিখিল কে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে বললো–,,সাহিল আসেনি কেনো?তুই এতো স্বাভাবিক আছিস কি করে ওটাই তো বুঝতে পারছি না!
জেরিনের বিয়ের দিন এতো বড় কান্ড টা ঘটালো,তুই ওর সাথে দেখা করতে যাবি বললি পরে থেকে সাহিলের কোনো খবর নাই!কি হয়েছে বলবি তো নাকি?
নিখিলের শান্ত কন্ঠ
–,,সাহিল বর্তমানে কানাডা আছে।হসপিটালে ভর্তি!
–,,কি বলছিস এসব?কি হয়েছে ওর!
–,,কেউ জেনে বুঝে ওর এক্সি”ডেন্ট করিয়েছে!
ওইদিন রাতে ওর সাথে কথা বলতেই যাচ্ছিলাম, রাত তখন নয়টা হঠাৎই চোখে পড়লো রেস্টুরেন্টের সামনে মানুষের জটলা, কৌতুহল বশত গিয়েছি,দেখলাম সাহিল পড়ে আছে রক্তা”ক্ত অবস্থায়!পরে হসপিটালে নিলাম,পরে কন্ডিশন দেখে মনে হলো বিদেশ নেওয়াটা ভালো!
–,,তোর কি মাথা খারাপ?শত্রুকে তুই বিদেশ নিয়ে গিয়ো চিকিৎসা করাচ্ছিস?
–,,আমি কারো দুর্বলতার সুযোগ নেই না মিহির।ও সুস্থ হোক ওর সাথে তো অনেক হিসাব বাকি?একদম জন্মের সময় থেকেই তো ওর সাথে আমার হিসাব শুরু হয়েছে,এতো সহজে কি মিটবে!
–,,তোর শ্বশুর জানতে পারলে তোকে বিনা নোটিশে হরর মুভি দেখিয়ে দিবে!
প্রণয়ের সুর পর্ব ৩২
–,,ভাবছি এবার রিসিপশনটা সারবো,কতোদিন আর বিয়েটা লুকিয়ে রাখবো সময় হয়তো এসে গেছে এবার!
–,,নিরব কে গুটি করে সাহিল জেরিন নিরবের সব কথা শুনতো ভেবেছিলো অফিস সম্পর্কে তথ্য নিতে পারবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না,উল্টো জেরিনের জীবন নষ্ট করতে চাইলো।পরিবারের সম্মান টা হারাতে হারাতে বাঁচলো,তার পর ও তুই ওকে সাহায্য করছিস!
–,,সময় হলে জানতে পারবি সব,বুঝবি আমি ভুল ছিলাম নাকি সঠিক!