প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৪

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৪
মহুয়া আমরিন বিন্দু

ভার্সিটি ক্লাস,সন্ধ্যায় বাড়ির সব গুলো মানুষের সাথে বসে আড্ডা দেওয়া,রাতে সকালে এক সাথে খাওয়া। রোজকার এই নিয়ম গুলো খুব সাধারণ তবুও কেমন এক ভালোবাসা মিশে আছে।
আজ ভার্সিটি থেকে ফিরতে দেরি হলো নেহা,বৃষ্টির ল্যাবে কাজ করতে করতে দুজনই ভীষণ ক্লান্ত।বাড়িতে ঢুকেই দেখলো বাড়ির পরিবেশ জমজমাট, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে নিখিল,সাব্বির, জেরিন,রৌফ বসে পাশেই সেতারা বেগম।সাহারা বেগম,তাহমিদা বেগম হাতে করে কিছু প্লেট দিয়েছে বাকিদের হাতে।সাদা সাদা জিনিস গুলো দেখে চিনতে বেশি সময় নিলো না নেহা তার পছন্দের অপরিপক্ক নারিকেলের নরম শাস।হাসি হাসি মুখ করে বসার ঘরে আসলো।
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আমাদের কে ছেড়েই খেতে বসে গেছো তোমরা?
সাহারা বেগম বললেন–,,আজ এতো দেরি করলি কেনো তরা?তাও এই সন্ধ্যায় এসেছিস একা একা নিখিল কে পাঠাতাম না হয় তোদের আনতে!

–,,আর বলো না মেজো মা,ল্যাবের ভিতর এতোক্ষণ ক্লাস হবে কে জানতো,তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো শেষ!
বৃষ্টির কথা শুনে সাহারা বললেন–,,যা যা সোফাতে বস আমি শরবত করে দিচ্ছি তোদের।
তাহমিদা বেগমের হাতে আর একটা প্লেট অবশিষ্ট আছে যা বৃষ্টি কে দিতেই,নেহা ঠোঁট উল্টে বললো–,,তোমরা আমার জন্য রাখোনি?একা একা সব খেয়ে ফেলেছো? কেউ একটুও ভালোবাসো না আমায়!
সাব্বির খেতে খেতে বললো–,,চুপ!নাটকবা’জ যেই না নিজের ভাগ পেলো না তখনই ইমোশনাল কথাবার্তা শুরু!তুই যখন একা একা খাস তখন কি আমাদের কথা মনে রাখিস?
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,তুমি এটা বলতে পারলা আমাকে?আমি তোমাদের না দিয়ে খাই?লাগবে না তো তোমাদের টা তোমরাই খাও!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাহমিদা বেগম রান্না ঘর থেকে নেহার টা আনতেই গিয়েছে,কিন্তু মেয়েটা যদি একটু বুঝদার হতো তার আগেই গলা ফাটিয়ে বক বক শুরু করেছে।বাড়ি শুদ্ধ লোক জানে এই নরম নারিকেল নেহা আর নিখিলের বেশি পছন্দ, দুনিয়ার সব অমিল থেকেও এই একটা খাবারে এদের মিল।
তাহমিদা যখনই সামনে এগিয়ে যাবে হামিদা বেগম এসে হাত টেনে থামিয়ে দিলো।তাহমিদা চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি?হামিদা বেগম বুঝালেন দেখতে থাক পরীক্ষা চলছে!
তাহমিদা বেগম বিমুঢ় হয়ে চাইলেন।নিখিল তখনও ফোনে ব্যস্ত ছিলো।নেহার কথা শেষ হতেই নিজের প্লেট টা নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো—,,নে খা!
নেহা যেনো হঠাৎ এমন হওয়ায় অবাক হয়েছে,কতোক্ষণ পিট পিট করে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আপনার টা আমাকে কেনো দিচ্ছেন?

–,,মন চেয়েছে তাই।এখন তুই খা আমি দেখবো!
—,,আপনার টা আমি খাবো না!
নিখিল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো–,,কেন খাবি না?খেতে বলেছি খা!
শেষের কথাটা ধমকের সুরেই বললো নিখিল তিন জা তা দেখে মিট মিট করে হাসছে,ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা দেখা হয়তো কারো কারো কাছে লজ্জার, অস্বস্তির তবে,কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব দেখেও যেনো বাবা মায়েরা খুশি হয়,বুঝতে পারে তাদের ছেলে মেয়েরা একে অন্যের সাথে ভালো আছে, এক জন অপর জনের খেয়াল রাখতে জানে,ভালো লাগা, মন্দ লাগা, পছন্দ অপছন্দ সব কিছু জানে বুঝে,নিজেরাই নিজেদের সামলাতে পারে!
নেহা হাতে প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করার আগেই নিখিল হাত চেপে ধরে থামিয়ে দেয়।
নেহা তাকিয়ে তার পানে মিন মিন করে বললো–,,আবার কি হলো?

নিখিল একটা ধমক মে’রে বললো–,,সারাদিন কতো কতো জীবাণু লাগিয়ে এসেছিস হাতে?তার উপর কেমি”ক্যাল, খাওয়ার পর মরা’র সখ জাগছে তোর!
বৃষ্টি মুখে দেওয়ার আগে এক ছুটে গেলো বেসিনের সামনে,আল্লাহ কখন জানি ওকেও ধমক লাগায়!
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,সরুন তো খাওয়ার ইচ্ছাই নাই আমার।রুমে যাবো।
নিখিল নিজের হাতে নিয়ে নেহার মুখে দিয়ে বললো–,,হা কর।
কি হলো কথা কানে যায় না।

নেহা মুখ ভেংচি কাটলো, এভাবে ধমক দেওয়ার কি আছে?আজব লোক।নেহা মুখ খুললো অর্ধেক খাওয়া শেষ হতেই, নিখিলের হাত থামিয়ে দিয়ে উঠে পড়লো।
দাঁত কেলিয়ে বললো–,,বাকিটা আপনি খান দাদী বলেছে ভাগ করে খেলে,,,,
সাব্বির কথা টেনে নিয়ে বললো–,,ভালোবাসা বাড়ে!
হু হা করে হেসে দিলো সবাই,এতোক্ষণ ধরে যে তাম’শা দেখছিলো বুঝতে বাকি রইলো না নিখিলের।
সাব্বির বলে উঠলো–,,জেরিন মনা তুমি ওট্টু খাইবা?
জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,ওরে সুবহানাল্লাহ!কি দরদ মাইরি,এতো পিরিত লাগাইয়া কথা কওয়া কবে শিখছছ!

সাব্বির এগিয়ে এসে বললো–,,নেও নেও বাবু একটু খাও!
জেরিন সরতে সরতে সোফায় শুয়ে পড়ছে একদম,শাসিয়ে বলছে–,,দেখ দেখ সাব্বির বেশি ভালো হবে না, এসব আমি খাই না জানস না?মুখে দিলে কেমন ক্যাচ ক্যাচ করে উঠে।
সাব্বির জোর করে জেরিনের মুখের ভিতর দিয়ে, মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে যাতে ফেলতে না পারে।পরে শয়”তানি হাসি দিয়ে বললো–,,এবার দেখ কেমন লাগে,তুই আমারে ওইদিন জোর করে পটল ভাজি খাওয়াই ছিলি না ওইটার শা’স্তি!
জেরিন সাব্বিরের দিক তাকিয়ে হেসে বললো–,,আজকের টা তো খেতে মজা ছিলো, এবার বাকিটাও দে তুই আর খেয়ে কি করবি।

জেরিন পুরো প্লেট নিয়ে নিলো নিজের হাতে।সাব্বির চেঁচিয়ে বললো–,,হাই’জেক! আমার টা দে ঘসেটিবেগম বেগম।
যে যার কাজে মনোযোগ দিলো কারন সবাই জানে এরা একবার শুরু হলে সহজে থামবে না।
জেরিনের পেছন পেছন সাব্বির পুরো বসার ঘরে দৌড়াদৌড়ি করছে।
অবশেষে দুজন ক্লান্ত হয়ে বললো–,,আজকের মতো এখানেই স্থগিত! বাকিটা কাল।
সাব্বির সোফায় বসতেই,জেরিন গিয়ে সোফার উপরে পা রেখে সাব্বিরের পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।সাব্বির চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,একটা আস্ত বিল্ডিং ভাইঙ্গা পড়লো গো আমার পায়ের উপর!
কিন্তু জেরিনের তাতে কোনো কিছু যায় আসে না সে তার মোবাইলে গেইমস খেলায় মনোযোগ দিলো!
সেতারা বেগম রুমে গেলেন,নাতি নাতনিদের সাথে সময়টা এই বুড়ো বয়সেও তার মন্দ যাচ্ছে না!
কিছুক্ষণ পরেই সাহারা বেগম আসলেন এখনো বসার ঘরে জেরিন আর সাব্বির।

সাহারা বেগম এসে বললো–,,এই তোদের কি ঘরে জায়গার অভাব পড়েছে এখানে এভাবে শুয়ে আছিস কেন?
সাব্বির বলে উঠলো–,,এক জায়গায় শুয়ে পড়লেই তো হয় মা!
জেরিন বললো–,,মেজো মা গেইমস খেলছি তো,সোনা মনা মা তুমি না ভালো যাও নিজের কাজ করো গিয়ে!
সাহারা বেগম আচমকা দুইজনের কান টেনে ধরে বললো–,,দুইজন কি এখনো ছোট আছিস?বিয়ে করেছিস জ্ঞান বুদ্ধি কবে হবে তোদের!

–,,আহ,,!মা লাগছে তো।
রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতেই নিচে আসছিলো হামিদা বেগম দুজন কে কান ধরে রাখতে দেখে বললো–,,কি করেছে রে মেজো দুইটায়?
–,,কি করে নি বলো আপা।যেখানে সেখানে যা তা শুরু করে, বাচ্চা আছে নাকি এখনো এরা জিজ্ঞেস করোতো?
সাব্বির বললো–,,আচ্ছা আর এমন করবো না।এবার ছাড়ো এতো বড় ছেলের কান ধরেছো তোমার লজ্জা করে না মা?
জেরিন বলে উঠলো–,,এই তুই চুপ থাক তো,মেজো মা আমি তোমার মেয়ে না বলো,তুমি কতো ভালো আগে আমার কান ছাড়ো!

সাহারা দুজনের কান ছেড়ে বললো–,,আল্লাহ এদের বুঝ দাও না হয় আমার আর জীবনে দাদী হওয়া হবে না!
জেরিন বললো–,,তা ঠিকই বলেছো মেজো মা।তোমার ছেলে তো কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না,তাহলেও একটা মেয়ে ধরে আনা যেতো!পরে তুমি দাদী হতে পারতে!
সাব্বির চোখ বড় বড় করে তাকালো জেরিনের মুখ চেপে ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো–,,মা তুমি যাও রান্না করো।এর কথায় কান দিয়ো না।
জেরিন হাত সরিয়ে বলে উঠলো–,,এই শয়তা’নের নানা আমার মুখ ধরলি কেন?আমি তো মেজো মায়ের কষ্টের কথা ভেবে বলছিলাম!
–,,গা’ধী একটা!

নেহা মুখ গুমরা করে বসে আছে।নিখিল একটু পর পর তাকাচ্ছে ওর দিকে।
একটু পর উঠে এসে নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বউজান!মন খারাপ?
নেহা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নিখিল ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো–,,স্যরি বলছি তো।সত্যি অনেক কাজ ছিলো এ কয়দিন!
–,,থাকুন আপনার কাজ নিয়ে আমাকে বলতে বলেছি আপনাকে?সরুন তো ঘুমাবো!
নিখিল নেহাকে ঘুরিয়ে নিজের মুখোমুখি করলো।কপালে চুমু দিয়ে বললো–,,চল তোকে একটা জিনিস দেখাই
–,,না কিছু দেখতে চাই না আমি।

–,,আমার স্পেশ্যাল খাবার টা কিন্তু তুই এখনো খেতে পারিস নি নেহা!
নেহা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,আপনি তো দিলেনই না রান্না করে।
নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে চুমু দিলো ফিসফিস করে বললো–,,তুই এতো অবুঝ কেন জান?
এই খাবার তো রান্না করা যায় না,কোথাও পাওয়া যায় না।
–,,তাহলে?
–,, আমার কাছে বিরিয়ানি মানে তুই।

নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো।লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা।চোখের পলক পড়লো পর পর।
নিখিল আরো একটু মিশে গিয়ে বললো–,,তুই এখনো এতো লজ্জা পাস নেহা?আমাকে পাগ’ল করার এতো তাড়া কিসের তোর?যখন সুযোগ পাস তখনই কোনো না কোনো ভাবে আমাকে একদম তুইতে মত্ত হতে বাধ্য করিস!
নেহা নিখিল কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমি আপনাকে বাধ্য করি আমার কাছে আসার জন্য? না হয় আসতেন না?ভালো তো!
নিখিল নেহার গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো –,,আপনি সামনে না থাকলেও তো আমি পাগ’ল হই মেডাম।আপনার যে একটা নিজস্ব মন মাতানো বউ বউ গ্রান আছে যেটা সব সময়ই আমার নাকে লেগে থাকে।আমার সাথে তো পুরোপুরি মিশে গেছেন,আপনি না থাকলে ও আপনাকে আমি অনুভব করি জান!ভালোবাসি তো মিসেস চৌধুরী।
–,,আদিখ্যেতা!

নিখিল ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।নেহা নিখিলের বুকে এলোপাতাড়ি মে’রে বললো–,,আপনি একটা খা’রাপ লোক!
নিখিল নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,বিরিয়ানি টেস্ট করতে মন চাচ্ছে জান!
নেহা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে বার বার। বলে উঠলো–,,ছি!ছি! নির্লজ্জ অস’ভ্য লোক।
–,,না না জান!তোমার একমাত্র স্বামী।
নেহা হেসে উঠলো নিখিল বুকে হাত দিয়ে বললো–,,এভাবে হেসো না প্রিয়তমা বুকে এসে লাগে তো!
নেহা বলে উঠলো–,,ধুর!
নিখিল আবার বললো–,,আমি কি আপনাকে পেতে পারি এখন!
–,,না!
নেহা ঠোঁট চেপে হাসছে।নিখিল নেহার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে বললো–,,বল আমি আর তুই দুজন কি আলাদা?
নেহা হাসতে হাসতে বললো–,,না।

–,,মজা নিচ্ছিস?
–,,কখন?কার ঘাড়ে কটা মাথা আপনার সাথে মজা নিবে!
নিখিল নেহা কে কোলে তুলে নিয়ে বললো–,,ভদ্রলোক হতে চেয়েছিলাম তুই তা হতে দিলি না।
নেহা নিখিলের গলা জড়িয়ে ধরে বললো–,,মিস্টার নিখিল।আমার প্রিয় স্বামী তোমার অ’সভ্য,নির্ল”জ্জ,
রাগী, কন্ট্রোল হারানো অভদ্র রূপটাই আমার ভীষণ পছন্দ!
–,,তাই বুঝি।তবে আজ আবার হলার না হয় তোমার জন্য চরম অসভ্য!

মিহিরের বাচ্চা তুমি কি আসবে?
–,,আমার বাচ্চা তো তোমার পেটে থাকবে জান!
বৃষ্টি চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,মিহির!
মিহির নিঃশব্দে হাসলো।বৃষ্টি রেগে বললো–,,তুমি আসবা কিনা বলো?আমার তোমাকে ছাড়া ঠিক মতো ঘুম আসছে না।
–,,তাই বুঝি?সেদিন কে জানি বলেছিলো তোমাকে লাগবে না আমার যাও চলে যাও,বার বার শ্বশুর বাড়ি আসা নাকি শোভা পায় না!
–,,আসো প্লিজ তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি বলো,রাগ করে কি না কি বলেছি তাই বলে তুমি আসা বন্ধ করে দিবে?আমার কথা তো তোমার একটুও মনে পড়ে না,পুরনো হয়ে গেছি তো এখন!
শ্বশুর বাড়ি না আসতে পারলে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবে,এক্ষুনি মানে এক্ষুনি আমি তোমার কাছে থাকবো!

–,,পারবো না, চুপচাপ ঘুমাও!
–,,ঠিক আছে আসতে হবে না।তোমাকে ফোন দেওয়াই ভুল হয়েছে আমার।
বৃষ্টি ফোন কেটে দিতেই, দরজায় টোকা পড়লো।বৃষ্টি বিরক্তি নিয়ে বললো–,,কে?
কেনো জবাব এলো না।আবার টোকা পড়তেই বৃষ্টি রেগে উঠে গিয়ে দরজা খুললো,দরজার বাহিরে বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে মিহির।বৃষ্টি মিহির কে দেখেই দরজা আটকে দিতে চাইলো,মিহির জোর খাটিয়ে দরজা খুলে ভিতরে চলে আসলো!বৃষ্টি গিয়ে বসে পড়লে খাটে।
মিহির দরজা আটকে এসে বসলো তার পাশে।
বৃষ্টি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।মিহির শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বৃষ্টি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না মিহির ও ছাড়লো না।বেশ কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি মিহির কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।
মিহির বৃষ্টি মুখ উঁচিয়ে চোখ মুছে দিতে দিতে বললো–,,এই আমার ব্যক্তিগত মেঘ,তোমার শুধু আমার হৃদয়ে বর্ষনের অধিকার আছে, নিজের চোখের কাজল লেপ্টে ফেলতে তার ব্যবহার করার পারমিশন কিন্তু আমি দেই নি!

–,,নির্দ’য় লোক,কেনো এসেছো এখন যাও লাগবে না আমার তোমাকে।
–,,সত্যি চলে যাবো?
–,,তোমাকে খু’ন করবো আমি।
মিহির হেসে দিয়ে বললো–,,খু’ন হতেই এসেছি মেডাম!আপনার হাতে ম’রেও শান্তি!
–,,ঢং দেখাবা না আমাকে!
মিহির বৃষ্টি কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি! মিহিরের সব ভালোবাসার মালিক শুধু তার মেঘবালিকা আর কেউ না!
বৃষ্টি মিহিরের গালে একটা চুমু দিলো,পর পর আরো কয়েকটা দিয়ে লজ্জায় টুপ করে লুকিয়ে পড়লো মিহিরের বুকে!
মিহির শব্দ করে হেসে বললো–,,ওরে আমার লজ্জা বতী লতা!

সকালে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই খাবার প্রায় শেষের পথে,পুরুষরা ছুটে গেছে অফিসের উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ পরই যাবে,নেহা,বৃষ্টি, জেরিন,সাব্বির,রৌফ।
এর মধ্যে জেরিন বললো–,,সে নাকি ভার্সিটি যাবে না ইদানীং মন চায় না তেমন।পড়াশোনা আর করবে না।
হামিদা বেগম রেগে গেলেন আজ মেয়ের এরকম হেয়ালি পনা আর ভালো লাগছে না।
—,,কেমন কথা বলছিস এসব জেরিন?পড়াশোনা নিয়ে কেমন ধরনের মজা, চুপচাপ ভার্সিটি যা কয়েকদিন পর পরীক্ষা।
জেরিন বিরক্তি নিয়ে বললো–,,সব কিছুতে জোর দেখাও কেনো তোমরা।বললাম না যাবো না!
সাব্বির বলে উঠলো–,,বেয়া”দবি করছিস কেনো জেরিন?কথা বলার ধরন এমন কেনো তোর!
জেরিনের হঠাৎ মাথা গরম হলো বিয়ের ঝা’মেলার পর থেকেই কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে,ভালো কথাও যেনো সহ্য হয় না এখন।সাব্বির কে জোরেই বলে ফেললো

–,,নাম মাত্ররো বিয়ে করে কি সব অধিকার পেয়ে বসেছিস নাকি?তুই আমার বিষয় কোনো কথা বলবি না একদম,নিজের মতো থাক।আমার যা খুশি করবো তোর কি!
হামিদা বেগম চেঁচিয়ে মেয়েকে ডাকলো–,,জেরিন!
সাব্বির হা হয়ে গেলো,এর আবার কি হয়ে গেলো?তবে মনটা হঠাৎই কেমন খচ করে উঠলো তবে কি জেরিন ওদের এই বিয়েটা নিয়েই বিরক্ত? সবার জন্য কিছু বলতে পারে না!ওর সাথে একবার কথা বলতে হবে এই বিষয়ে।
সাব্বির টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো উপরে তখন নেহা, বৃষ্টি ও উপরে যাচ্ছিলো।
বৃষ্টি ডাকলো সাব্বির কে কিছু একটা বলার জন্য!
জেরিন সাব্বিরের হঠাৎ উঠে যাওয়ায়, বুঝলো ও হয়তো কষ্ট পেয়েছে এভাবে বলা উচিত হয় নাই।
হামিদা বেগম বললো–,,তোর যা খুশি কর।আমি আর বাঁধা দিবো না যেহেতু মা হয়েও তোর চোখের কা’টা হয়ে গেছি!

হামিদা বেগম চলে যেতেই জেরিন উপরে ছুটলো মাকে পরেও সামলাতে পারবে,তার আগে সাব্বিরের কাছে মাফ চাইতে হবে!নিজের মাথায় নিজেই দুইটা থাপ্পড় মারলো,কেনো এতো মাথা গরম হয়!
জেরিন সিঁড়ির মাথায় উঠতেই সাব্বির ওর হাত চেপে ধরলো টেনে নিয়ে গেলো রুমের ভিতর,দরজাটা ধাপ করে লাগিয়ে বললো–,,আমি তোর উপর কোনো অধিকার আজ অব্দি খাটিয়েছি?শুধু তোর বন্ধু মনে করি নিজেকে আর কিছুই না,আগেও তো তোকে কতো কথাই বলতাম তখন তো অধিকার খাটানোর কথা আসেনি জেরিন!বিয়েটা নাম মাত্র এর কোনো মূল্য নেই তোর কাছে আমি জানি,এটা নিয়ে বারাবাড়িও করিনি আমি,তোকে প্রথমেই বলেছিলাম যেদিন চাইবি সেদিনই মুক্তি পেয়ে যাবি!তোর যদি মন চায় বিয়ে নামক ট্যাগ টা না থাকলে তুই বেশি শান্তিতে থাকবি তো সরাসরি বলতে পারতি আমায়,এভাবে সবার সামনে এরকম করার কি দরকার ছিলো?

তোর ব্যপারে আর কোনো দিন কিছু বলবো না।তুই মুক্তি পেয়ে যাবি, আমি উকিলের সাথে কথা বলবো,একটা উটকো ঝামে’লা না রাখাই ভালো!আর আমি কাল বাড়ি ছেড়েও চলে যাবো তোর যেহেতু আমাকে সহ্য করতে সমস্যা হচ্ছে সেহেতুু আমাদের দূরে থাকাই ভালো এক সাথে থাকলে তোর বিরক্তির পরিমাণ বাড়বে বাড়ির লোক এসব দেখে কষ্ট পাবে তার থেকে ভালো আলাদা থাকা!

–,,আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি!তুই বাড়ি ছেড়ে যাস না প্লিজ!
জেরিনের ধরা হাত টা ঝা’পটা মেরে ছাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো সাব্বির।জেরিন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নিজেকে প্রশ্ন করলো আদো কি সে সাব্বির থেকে মুক্তি চায়?ও না থাকলে শান্তিতে থাকবে!
জেরিনের বুকের ভিতর টা অদৃশ্য ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো,যদি সাব্বির চলে যায় তখন?কেনো সে জানে না তবে সাব্বির কে না দেখলে ভীষণ রকম কষ্ট হবে এটা বুঝতে পারছে!
জেরিন ছুটে নিচে চলে যায় কিন্তু সাব্বির কে পায় না!ছেলেটা রাগ করে চলে গেলো এভাবে?

বলুন ইলিয়াস খান
অগ্যাত ব্যক্তির কন্ঠে রাগে হিসহিসিয়ে উঠলো ইলিয়াস খান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,সাহিল কোথায়?কে তুমি?কেনো আটকে রেখেছো আমার ছেলেকে!
–,,ভুল করছেন আপনি?সাহলি আপনার ছেলে না শাহআলম চৌধুরীর ছেলে যাকে প্রায় সাতাশ বছর আগে হসপিটাল থেকে চুরি করেছিলেন আপনি!
ইলিয়াস খান বিচলিত কন্ঠে বললো–,,কে,,কে তুমি!এ কথা কি করে জানলে?হ্যালো!
ফোনটা কেটে গেলো নিঃশব্দে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেলেন ইলিয়াস খান,এতোদিনের ধামাচাপা দিয়ে রাখা সত্য টা এভাবে কে জেনে গেলো!আর কিভাবে?

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৩

কিছুক্ষণ পর আরো একটা মেসেজ আসলো ইলিয়াস খানের মোবাইলে
_____সত্য কোনো দিন চাপা থাকে না!আর হ্যাঁ পা’প তার বাপকেও ছাড়ে না,,আপনার ধ্বং’সের সময় শুরু এখন থেকে! টিক টিক টিক,,,,

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৫