প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৮

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৮
মহুয়া আমরিন বিন্দু

নিখিল ভরা লিভিং রুমে এক পায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে,তার সামনে দু হাতে কোমর জড়িয়ে নামিরা খিলখিলিয়ে হাসছে।নেহা বিরক্ত হয়ে দুজনের দিক তাকিয়ে। বাড়ির বাকি বড়রা সেই কান্ড দেখে হেসেই চলেছে।
ছোটরা সব তখনই সিঁড়ি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামলো,একজন অন্যজনের উপর পড়ে যাওয়ার উপক্রম।
সাব্বির তো এসেই নামিরার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,সাব্বাশ!এই না হলে আমার মেয়ে,একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে এমপি মশাইয়ের।একটা স্টরি তো বান’তাহে,কি বলো বাকিরা!
ছোটরা সব মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো ঠিকই,কিন্তু নিখিলের তাকানো দেখে চুপসেও গেলো।নেহা তো শাসিয়ে বলে উঠলো–,,এই ওদের চোখ রাঙা’চ্ছেন কেনো?দুই বাপ মেয়ে মিলে রুমের বারোটা বাজানোর সময় মনে ছিলো না?আমার কাছে পি’য়ার আসা সব প্রো’ডাক্ট দুজন মিলে নষ্ট কেনো করেছেন?

নিখিল কিছুটা জোর গলায় বললো–,,তোর জামাইয়ের কি টাকা পয়সা কম পড়ে গেছে?তিন বেলা খেয়ে পড়ে থাকতে পারবি না তার টাকায়,তোকে ভালো করে বললাম, না তুই উল্টো ভাব নিয়েছিস,আমার মেয়েকে সময় না দিয়ে কাজ করা, বন্ধ তোর।তাই ন’ষ্ট করেছি।
নামিরা পাশ থেকে বলে উঠলো–,,আমিও পাপা কে হেল্প করেছি মাম্মা!
নেহা রেগে বললো–,,তাহলে তোমার ও শা’স্তি পেতে হবে এখন!
নিখিল চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,খব”রদার নেহা আমার মেয়ে কে যদি কিছু বলেছিস তুই।
নেহা তেড়ে এসে বললো–,,কি করবেন আপনি?হ্যাঁ আমার মেয়ে আমি যা খুশি বলবো!
নিখিল নামিরা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো–,,আমার মেয়েকে একদম ব”কা দিবি না!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নেহা রেগে তেড়ে গেলো,তাকে পেছন থেকে আটকে দিলো সাহারা বেগম,তিনি নেহা কে শান্ত করে বললো–,, আহা মা রাগ করছিস কেনো।তুই একটু শান্ত হয়ে বস তো এখানে।
সাব্বির ততক্ষণে নিখিলের কান ধরা ছবি, বাবা মেয়ের আর একটি সুন্দর ছবি তুলে পোস্ট করে দিলো ফেইসবুকে,ট্যাগ করলো নিখিল কে।
মুহুর্তেই নোটিফিকেশনের টু টাং আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো।আর নিখিল সে তো রেগে সাব্বির কে তাড়া করছে।মুগ্ধ চোখে সব দেখে চলেছে বাড়ির বড়রা কতোদিন পর বাড়িতে আনন্দ উল্লাসে ভড়ে উঠেছে, তাহমিদা,রাহা চলে আসলেই পরিবার টা আগের মতো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে আবার!

ইরফান পৌঁছেছে একটা পুরনো পরিত্য”ক্ত বাড়ির সামনে,এখানেই সেই গাড়িটি এসে থেমেছে, যে গাড়িতে আরুশি কে দেখা গিয়েছিলো।তাও সিসি”টিভি ফুটে’জ টা চার দিনের পুরনো,চারদিনে ওই অমা’নুষ গুলো মেয়েটার কি হাল করেছে ভেবেই ইরফানের কপাল ঘেমে উঠছে বার বার,এতোদিন তো কম কেইস সলভ করেনি কিন্তু আজ কিনা একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য সে ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে,মনটা কেমন যেনো করছে,নিজেকে যথাসম্ভব ঠিক রাখলো সে,অপরা’ধীদের কাছে হোক বা অন্য যে কেউ, কারো সামনেই দুর্বলতা প্রকাশ করা উচিত না!
আশেপাশে সব জায়গা পুলিশ দ্বারা আবৃত,ইরফান সাথে সহকারী এক অফিসার ঢুকলো ভিতরে,ইরফানের মনের ভিতরটা অস্থির হয়ে উঠলো, ভিতরের গা ছমছমে পরিবেশ দেখে।ভেতরে ঢুকতেই একটা রুম থেকে ভেসে আসলো কারো গোঙা”নির শব্দ,তীব্র ব্যাথায় কেউ ছ’টফট করছে!
ইরফান দেরি না করে সেদিকে দৌড়ে গেলো,দরজা ধাক্কা দিলো খুললো না,আশেপাশে খুঁজে বড় পাথরের টুকরো নিয়ে এলো দরজায় বার বার আঘা”ত করার পর খুলে গেলো।

ভাঙ্গা দরজার ফাঁ’কে এ’প্রোন পরিহিত কাউকে দেখতে পেলো ইরফান দ্রুত ভিতরে গেলো দুই তিন জন পুলিশ।
ডক্টর শেলি ঘাব”ড়ে গেলো,পুলিশ কে কে খবর দিলো, এই মেয়েটা পুলিশ কে আবার সব ইনফরমেশন দিয়ে দেয় নি তো?ভয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো শেলির কপালে, পালানোর পথ খুঁজলো সে কিন্তু পেলো না।
ইরফান কয়েক মুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আরুশি কে দেখে,মেয়েটার মুখ নীল বর্ণ ধারন করছে,মুখের বিভিন্ন অংশ কে’টে রক্ত শুকিয়ে গেছে।চোখ জোড়া বন্ধ তার,চারপাশে অধিক পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ খোলার চেষ্টা করলো, ঝাপসা দেখলো সবকিছু তার মনে হলো সে পুলিশ দেখছে,তার মানে কি ইরফান তার কথা বিশ্বাস করে এই অব্দি এসেছে?অজান্তেই মলিন হাসলো মেয়েটা হাত ছেড়ে দিয়ে ডুবে গেলো ট্যাংকের ভিতর!
ইরফান আঁতকে উঠলো, চেঁচিয়ে বলে উঠলো ট্যাংকের ভিতর থেকে ওকে নামাও কেউ!
সে নিজেও উঠে গেলো সেখানে,শেলির পালানোর পথ নেই,তাকে এরে’স্ট করা হয়।

আরুশির দেহ টা পানি থেকে বের করেই আকষ্মিকভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইরফান।মনে হচ্ছিলো কিছু সময়ের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো তার!
ইরফান আরুশির নাক গলায় চেক করে দেখলো এখনো বেঁচে আছে,সে মেজেতে বসেই বড় বড় শ্বাস নিলো!
ইরফানের বেহা’ল দশা দেখে তার সহকারী কি বলবে বুঝতে পারলো না,মেয়েটা কি স্যারের কিছু হয়?জিজ্ঞেস করার সাহস ও করতে পারছে না।
ইরফান ক্লান্ত শরীলে আরুশি কে কোলে তুলে নেয়,এক প্রকার ছুটে যায় গাড়ির কাছে মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে, ফিরবে কখন সে চিন্তায় চিন্তায় ইরফান ভিতরে ভিতরে উত”লা হয়ে উঠছে!
আরুশি কে নিয়েই হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।মেয়েটার জ্ঞান ফেরা”র পর যখন জানবে রনির লা”শ পাওয়া গেছে তখন না জানি তার কি অবস্থা হয়।ইরফানের ধারনা রনি আরুশির ভালো বন্ধু ছিলো।
ইরফান হসপিটাল থেকে ছুটলো থানায়,সেখানে গিয়ে তাকে শেলি কে জিজ্ঞাসা বাদ ও করতে হবে,কার হয়ে কাজ করতো এই মহিলা তাদের যথা দ্রুত সম্ভব জানতেই হবে!

নেহা রাগ করে বসে আছে,এই লোকটা কি পেয়েছে কি।আগে তো যখন খুশি প্রেম দেখাতো যখন খুশি অবহেলা করতো।আর এখন এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে যেনো সে দিন দুনিয়া ভুলে গেছে তার একটাই কাজ সেটা হলো নেহা কে বিরক্ত করা।নেহা মানছে তাদের দুজনের মধ্যেই ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে কয়েকবার,ভুল যেমন নিখিলের ঠিক তেমনি তার ও ভুল আছে,তবে নিখিল?সে তো ওই শিলা কে সব সময় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে,তার জন্যই ওই মেয়েটা তাদের মাঝে আসতে পেরেছে।নিখিল ও বললো তারা ভালো বন্ধু তার বন্ধুর কোনো দোষ নেই সব দোষ নেহার, নেহা কি রাগ করা উচিত না?নাকি শুধু নিখিলই রাগ করতে পারবে অন্য কেউ পারবে না,মেয়েটার সাথে তার কতো গুলো ছবি, সে সম্পর্কে সামান্য প্রশ্ন টুকু করার অধিকার নিখিল নেহা কে দেয়নি।আর এখন এমন ভাব করছে সে খুব অনুতপ্ত, তার শিক্ষা হয়েছে নেহা যতদিন মাফ না করবে তাকে মেনে না নিবে ততদিন সে নেহার সাথেই বসে থাকবে!

দরকার পড়লে সব ছেড়ে দিবে,কেনো ভাই?আগে তোমার এতো দরদ কোথায় ছিলো?এখন এসব গ্রহন করবে না নেহা।
নেহা রুমের ভিতর বসে মোবাইলে নিখিল আর নামিরার ছবি দেখছে,তখনই নোটিফিকেশন আসলো,নেহা দেখলো নিখিল কিছু একটা পাঠিয়েছে।
নেহা নিখিলের প্রোফাইলে ঢুকতেই পর পর ছবি গুলো তার সামনে ভেসে উঠলো তার সাথে আরো একটা দুই মিনিটের ভিডিও।
নেহা সব কিছু দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।শিলা মেয়েটা এতো বা’জে কাজ করতে পারলো কি করে?
শিলার সাথে অন্য একটি ছেলে যার সাথে সে অন্ত’রঙ্গ মুহুর্ত পার করছে।সে সময়কার তোলা ছবি গুলোতেই নিখিলের ফেইস বসিয়ে দিয়েছিলো!
নেহা ফোন হাতে নিয়েই চুপচাপ বসে তখনই দরজা লাগানোর শব্দ হলো নেহা পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিখিল।
নেহা কিছু বললো না,নিখিল এসে নেহার পাশে বসলো,ওর হাত দুটি নিজের দু হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো–,,সেদিন যদি আর একটু থেকে যেতি আজ আমাদের মাঝে এতোটা দুরত্ব থাকতো না।

তুই তো জানিস তোর ভালোবাসার মানুষ টা কেমন,সে রাগের মাথায় কি থেকে কি বলেছে সেটা গায়ে মেখে এভাবে চলে যেতে পারলি তুই?এতটুকুও বিশ্বাস ছিলো না আমার উপর?মানছি আমি কথায় কথায় তোকে অবিশ্বাস করতাম,এর পেছনেও কারন ছিলো আমার সব সময় মনে হতো তোকে হারিয়ে ফেলবো,তুই অন্য কারো হয়ে গেলে আমি কখনো সেটা মেনে নিতে পারবো না।তাই তো কারো সাথে দেখলেই আর মাথা কাজ করতো না আমার।
ওইদিন রেগে থাকার পেছনে মূল কারন ও কিন্তু শিলা আর ওর ভাই।ওইদিন ওর ভাইয়ের সাথে আমার ঝা”মেলা হয়, আমি রাজনীতি ত্যাগ করি।বাড়ি আসার পর তুই আবার সেই শিলার সাথে ছবি গুলো দেখালি,বল ওই সময় টাতে তোর মাথা কাজ করতো?আমি জানি ভুল করেছি,বুঝতে পেরে তো তোর কাছেই ছুটে এসেছিলাম, জানিস তোকে যখন খুঁজে পাইনি তখন নিজের ভেতরটা কেমন করছিলো,সারারাত প্রতিটা রাস্তায় তোদের খুঁজেছি পাইনি।আমি তোকে হারানোর ভয়ে থাকতাম সেই তুই আমাকে একা রেখে হারিয়ে গেলি, বল দোষ টা কি একার আমার?তোর কোনো দোষ নেই!

নেহার চোখে জল,নিখিলেরও তাই ছেলেটার চোখ লাল হয়ে এসেছে।
নেহা এবার শব্দ করে কেঁদে ফেললো বলে উঠলো–,, শুধু নিজের টাই তো বলবেন আপনি। আমার পাশে যেমন অন্য কাউকে আপনার সহ্য হয় না,আপনি কি করে ভাবলেন আপনার সাথে কাউকে দেখে আমি ঠিক থাকতে পারবো?আর ওই দিন,আমি কতোটা খুশি ছিলাম আপনি জানেন?ওইদিন আমি জেনেছিলাম আমার নামিরা আমার কাছে আসবে,আমরা বাবা মা হবো নিখিল,আপনাকে কথাটা বলার জন্য কতোটা অপেক্ষায় ছিলাম আমি।আর সেই মুহুর্তে যদি আমি আপনাকে কারো সাথে ওই রকম অবস্থায় দেখি কিভাবে সহ্য করতাম কিভাবে আমি বিশ্বাস করতাম,আমার বিবেক বুদ্ধি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।তার উপর আমি ভেবেছিলাম আপনি এসে বলবেন সব কিছু মিথ্যা, আমার বিশ্বাসই ঠিক আমার নিখিল কখনো আমার ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না।কিন্তু আপনি তা করেননি আপনি আমার দুঃ”স্বপ্ন কে বাস্তবতায় রুপান্তর করে দিলেন।এসে বললেন এসব সত্যি, তার পরও কি করে আমি আমার সন্তান কে নিয়ে আপনার সাথে থাকতাম বলুন তো?যেখানে পুরোপুরি আপনি অন্য কারো হয়ে গেছেন,আমাকে আর আমার মেয়েকে তো কখনো মেনেই নিতেন না আপনি,তাই চলে গিয়েছিলাম,বেশি করেছি গিয়েছি আবার চলে যাবো,থাকবো না আপনার সাথে!

নিখিল নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসি তো,প্লিজ থেকে যা না প্রাণপাখি!তোকে ছাড়া কি করে থাকবো বল তো,তুই ও তো থাকতে পারবি না।এই বোকা টাকে ছেড়ে যদি এবারও চলে যেতে চাস তাকে একেবারে মে’রে ফেলে যাবি।না হয় তোকে থাকতে হবে,তুই চলে গেলে সে এমনিতেই ম’রে যাবে।যদি চাস আমি ম’রে যাই,আমার মৃ”ত্যুতে তোর কিছু যায় আসে না তাহলে চলে যা আটকাবো না!
নেহা নিখিল কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,এই একদম আজে”বাজে কথা বলবেন না!
নিখিল নেহার মুখ দু হাতে জড়িয়ে বললো–,, বল আরেকটা সুযোগ দিবি?ভালোবাসবি আমায়?আবদার টুকু রাখবি না বল!

নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো–,, দেখুন একদম ইমোশনাল ব্লা’কমেইল করবেন না।আমি মোটেও আপনার কথায় গলবো না।
নিখিল নেহার গালে চুমু খেয়ে বললো–,,তাই?মেয়ের মা হয়ে গেছিস এখনো মিথ্যা বলা শিখতে পারিস নি!
নেহা নিখিলের দিক বাঁকা চোখে তাকালো। নিখিল বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো–,,এবাবে তাকিয়ো না বউ আমার ভীষণ প্রেম প্রেম পায়!
নেহা কিছু বলছে না দেখে নিখিল হেসে উঠলো, নেহার কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসি অভিমানী, অভিমান ভাঙ্গলে এই অধম কে একটু ভালোও তো বাসতে পারেন কথা দিচ্ছি আর কখনো কষ্ট দিবো না!
নেহা তাকিয়ে আছে নিখিলের দিক, এবার নিজ থেকেই জড়িয়ে ধরে বললো–,,আর যদি আমার সাথে ভাব মারা’স তুই নিখিল তোরে আমি মে”রে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।আমারে কষ্ট দিয়ে তো তুমি সুখ পাও শান্তি তে থাকো তাই এরকম করো বুঝি না মনে করছো!

নিখিল নেহা কে জড়িয়ে রেখেই বললো–,,জামাই কে তুই তোকারি করছিস কেনো?আমি তোর বড় না।
নেহাও বললো–,,বউ কে তুই তোকারি করছেন কেনো?সে ভালোবাসার জিনিস না?
নিখিল দুষ্টুমি করে বললো–,,আদর করার জিনিস, আদর নিবি?
নেহা নিখিলের পিঠে মার’লো কয়েটা নির্লজ্জ ছেলে একটা।
তখনই দরজায় নক পড়লো–,,এই তোরা কি যাবি না নাকি?নেহা নামিরা টাকে তো রেডি করে দে।মেয়েটা চাচ্চুর বউ দেখতে যাবে বলে বলে পা”গল করে দিচ্ছে!
নিখিল বলে উঠলো–,,আহা মা,বউয়ের রাগ টা তো অন্তত ভাঙ্গাতে দিবে নাকি,তোমাদের জ্বালা”য় যদি আমার বউটা আবার চলে যায় তখন আমার মতো মিসকিনের কি হবে!
হামিদা বেগম দরজার ওপার থেকে বললো–,,চুপ বদমা”ইশ!মাকে ও ছাড় দেয় না বের হ রেডি হয়ে সাহিলদের বাড়িতে যেতে হবে।মেহেরিনের সাথে সাথে সাহিলের বউ কেও দেখে আসবো!

নেহা এসে দরজা খুলে দিলো,হামিদা বেগম কে বলে উঠলো–,,বড় মা তোমার এই ছেলের মুখে ক”স্টিপ লাগিয়ে নিয়ো, না হয় মানুষের বাড়িতে গিয়ে কখন কি বলবে আল্লাহ মালুম!
নিখিল তেড়ে এসে বললো–,,এই দেখ নেহা,আমার মুখ নিয়ে কোনো কথা বলবি না।
নামিরা এসে বললো–,,পাপা আমি রেডি হবো,সাজিয়ে দাও।
নেহা বললো–,, আসো মাম্মা করে দিচ্ছি।
নামিরা দু দিকে মাথা নেড়ে বললো–,,না না পাপার কাছে সাজবো!
নেহা বাবা মেয়েকে ছেড়ে নিচে চলে গেলো।

আগে ভাগে রেডি হয়ে চলে এসেছে সাব্বির এসেই সোফায় বসে গুন গুন করে গান গাইছে,জেরিন এসে বললো–,,শা”লার একটা জামাও পছন্দ হইতাছে না!
সাব্বির ভ্রু কুঁচকে বললো–,,পছন্দ দিয়ে কি করবি,একটা পড়লেই হয়।তোরে তো আর বিয়ে দিতে নিতাছি না।
জেরিন বিরক্ত নিয়ো বললো–,,চুপ থাক তো বিয়ে করার জন্য কি মেয়েরা সাজে নাকি!
সাব্বির মোবাইলে মনোযোগ দিয়েই বললো–,,শাড়ি পড় তাইলে!
জেরিন খুশি হয়ে বললো–,,বন্ধু তুই সত্যি আমার ভালো বন্ধু থাং”কু থাং”কু।যাই রেডি হয়ে আসি।
জেরিন চলে যেতেই সাব্বির মুচকি হাসলো।

ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে রোহান আর তোহার ঝগ’ড়া দেখছে বৃষ্টি। সে তৈরি হয়েই বসে ছিলো।
তোহা ঝগ”ড়া করে নিজেদের গেইটের ভিতরে ঢুকে পড়লো।রোহান ও মুখ ঝা’মটা মে”রে বাড়িতে ঢুকলো।
বৃষ্টির ধ্যা’ন ভাঙ্গলো মিহিরের কন্ঠস্বরে,মিহির বৃষ্টির কানের নিচে এসে ভাও করে উঠলো।
বৃষ্টি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মিহির বলে উঠলো–,, ভালোবাসবি আমায়?
বৃষ্টি মলিন মুখে বলে উঠলো–,,আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মিহির ভাই কেনো আমার পিছে পড়ে আছেন বলুন তো?মামি বললো আপনার জন্য ভালো পাত্রী পেয়েছে,নিঝুম ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলেই আপনার টার কথা তুলবেন।বাবা মা বলছিলো তখনই শুনলাম,যাক ভালোই হয়েছে আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
মিহির যেনো আকাশ থেকে পড়লো তার বিয়ে মানে সে তো কিছুই জানে না!

বৃষ্টি কথাটা বলেই সেখান থেকে ঘুরে মুচকি হাসলো ব্যাটা এবার বসে বসে কাঁদো। কথায় আছে না হাসির পর কান্না আর কান্নার পর হাসি!আপনি ও না হয় হাসবেন পূর্ণতার হাসি এখন একটু কাঁদলে ও ক্ষ’তি নেই!
বাড়ির সবাই তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো নিঝুম নিজেকে কোর”বানির গরু মনে করছে,তাকে যেভাবে ট্রি’ট করছে সেতারা বেগম এটা না ভেবে তো উপায় নেই,যেনো বিয়ে করাতে না বিয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছে নিঝুম কে।বেচারা নিঝুম কে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে সাব্বির!
সাহারা বেগম তাহমিদা বেগম কে ফোন দিয়ে বললো–,,
তুই কি আসবি ছোটো?আমি কিন্তু ছেলের বিয়ে বন্ধ করে দিবো বলে দিচ্ছি।রাহা টা বড় হয়ে গেছে না ওকে বল ওর মেজো মা কথা বলবে।

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৭

সাহারা বেগমের জোড়াজুড়ি তে তাহমিদা বেগম আর রাহা আসতে রাজি হলো,মোবাইলের অপর পাশ থেকে শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,বউ আর মেয়ে আসবে আমি কি না এসে থাকতে পারি!
সেতারা বেগম কপাল চাপড়ালো ছেলেটা তার মানুষ হলো না!

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ১৯