প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২১

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২১
মহুয়া আমরিন বিন্দু

ইরফান কে অস্থির হয়ে ফোন দিয়েই চলেছে নিখিল,তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে যেনো।ওইদিকে নেহা কে সামলাতে পারছে না কেউই।চিন্তায় চিন্তায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সবার মস্তি’ষ্ক।
টানা ত্রিশ টা ফোন কলের পর রিসিভ করলো ইরফান,সে ও উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো–,,কি হয়েছে এমপি সাহেব।আমি তো এখন সোহলের বাড়ি ঘিরে ফেলেছি যে কোনো মুহুর্তে তাকে ধরে ফেলবো!আপনি এমন সময় কেনো ফোন দিচ্ছেন?
নিখিল বলে উঠলো–,,সোহেল কে ধরতে যাবে না কেউ।ওর কাছে আমার মেয়ে আছে,আমার মেয়ের ক্ষ’তি করে ফেলবে শয়”তানটা!
ইরফান সতর্ক হয়ে বললো–,,কি হয়েছে নিখিল? আপনি আমাকে খুলে বলুন।
এরই মধ্যে ইরফান বাকি পুলিশদের সরে পড়তে বললো।
নিখিল ইরফান কে সব বললো।ইরফান বললো–,,ভেবে চিন্তে নতুন প্ল্যান বানাতে হবে, আপনি আমার সাথে এখনই দেখা করুন।না হয় অপরাধী হাতের নাগালের বাহিরে চলে যাবে!

তাহমিদা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে, তার সামনে বসে শহিদুল চৌধুরী কিছুটা দূরে রৌফ দাড়িয়ে আছে,মূলত রৌফই তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।
তাহমিদা বেগম সাতপাঁচ না ভেবে শহিদুল চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
–,,আমার নাতনি টাকে আমার সামনে থেকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে গেলো শহিদুল আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমার মেয়েকে কি জবাব দিবো আমি।আমার মেয়ে যে ম”রে যাবে শহিদুল, তার বাঁচার সম্বল তুমি তাকে ফিরিয়ে এনে দাও।
শহিদুল চৌধুরী তাহমিদা বেগমের মাথায় হাত রেখে বললো–,,শান্ত হও তুমি।এভাবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে,নিখিল খোঁজ করছে নামিরার খুব তাড়াতাড়িই পেয়ে যাবো আমরা,বিশ্বাস রাখো ওর কিচ্ছু হবে না দেখো।
তাহমিদা বেগম বললো–,,নেহা কোথায় ও কি জানে সব কিছু।
–,,নেহা এই পর্যন্ত তিন বার জ্ঞান হারিয়েছে।মেয়েটা কাঁদছে আর নামিরা বলে বলে চিৎকার করছে,তুমি ও এখানে কে সামলাবে ওকে।
তাহমিদা বেগম চোখ মুছে বললো–,, এই বাড়ি চলো আমি একদম ঠিক আছি,আমার মেয়ে কে দেখতে হবে আমাকে চলো।
রৌফ এবার পেছন থেকে বলে উঠলো–,,আন্টি উত্তে”জিত হবেন না আপনি বাড়িতে তো সবাই আছে,আপনি রেস্ট নিন মাথায় আঘা’ত লেগেছে আপনার।
তাহমিদা বেগম উঠে গিয়ে বললো–,,কিছু হয়নি আমার, এখনই নিয়ে চলো না হয় তোমরা থাকো আমি নিজেই যাবো।
তাহমিদা বেগম হেঁটে চলে গেলেন তার পেছনে শহিদুল চৌধুরী আর রৌফ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

না পেরে নেহা কে শেষে ঘুমের ইনজে’কশন দিয়েছে ডক্টর।নিখিল অসহায় হয়ে পড়েছে একদিকে মেয়ে তো আরেক দিকে তার স্ত্রী। নেহা তো পাগ”লের মতো ব’কেই চলেছে।
নেহা যে রাগের ব’শে এসব বলেছে তা নিখিল জানে,তার পর ও দোষ টা আসলে তারই।এই রাজনীতি তার জীবনের সব সুখ কে”ড়ে নিচ্ছে।সে আসলেই ব্যর্থ বাবা,নিখিল গিয়ে পৌঁছালো থানায়।
নিখিল আসার পরেই ইরফানের সাথে ভিতরে গেলো।
এর কিছু সময় পর একজন কনস্টেবল এসে জানালো কেউ একজন তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।
ইরফান নাকচ করলেও নিখিল বললো যাতে আসতে দেয়।এরই মধ্যে ভিতরে প্রবেশ করলো বোরখায় আবৃত একজন মহিলা।
মহিলার মুখ উন্মোচিত হতেই নিখিল বলে উঠলো–,,আপনি!
মহিলা কিছুটা ইতস্তত করে বললো–,,আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই!
ইরফান কে নিখিলের কিছু বলা লাগলো না,মহিলা নিজেই সব কিছু বললো,ইরফান তার কথা প্রথম প্রথম বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে বিশ্বাস করলো।তাকেও তাদের প্ল্যানে সংযুক্ত করলো।

আরুশি বসে আছে বারান্দায়, বাড়িটা ইরফানের আরুশি এই পর্যন্ত কতোবার যে বলেছে আমি চলে যেতে চাই,মানুষটা এতো নাছোড়বান্দা যেতেই দিলো না উল্টো বলে দিলো এটা তার দায়িত্ব তাই সে করছে সুস্থ হওয়ার পর আর আটকাবে না।পুলিশের সহায়তা করার পরিবর্তে তাকে তারা সাহায্য করছে অন্য কিছুই না।
আরুশি ও এতো দিন রুম থেকে বের হয়নি এই বাড়িতে আর কেউ আছে কিনা তাও সে জানে না।
তবে মাঝেমধ্যে একটা মহিলা কে চিল্লাতে শুনেছে।
আরুশির ভাবনার মাঝেই সেখানে এসে হাজির হয় একজন অপরিচিত নারী, আরুশি তাকে চিনে না,না কখনো দেখেছে বাড়িতে কি করে ঢুকলো তাও বুঝলো না।
মধ্য বয়স্ক মহিলা এসেই আরুশির গালে একটা চ”ড় বসিয়ে দিলো।আরুশি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।

মহিলা কর্ক’ষ কন্ঠে বললো–,,এই নির্লজ্জ বেহা’য়া মেয়ে,বিয়ে না করে একজন ছেলের সাথে একই রুমে থাকছো লজ্জা করে না?কেমন মেয়ে মানুষ তুমি!
আরুশি অবাকের শেষ সীমানায় বলে কি এই মহিলা,কোন ছেলের সাথে আবার সে রাতে থাকলো!
মহিলা আবার বলে উঠলো—,, আমার ছেলের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?কেনো আমার বাড়িতে পড়ে আছো?এই বাড়িতে কি বাবা মা নেই, কিছু শিখায়নি তোমাকে,বেহা”য়া কোথাকার।কেমন বাপ মা তোমার মেয়ে কোথায় থাকে কি করে খোঁজ রাখে না।বের হও আমার বাড়ি থেকে আমার সহজ সরল ছেলেটাকে পটিয়ে বাড়ি এসে উঠেছো কেনো!
আরুশি অবাকের শেষ চূড়ায়, তবে কি এই মহিলা ওই পুলিশ অফিসারের মা?যেমন ছেলে তেমনই মা কি ব্যবহার বাবা।
আরুশির জবাব দেওয়ার ইচ্ছে হলো না সে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।কোথায় যে আছে কিচ্ছু জানে না,সে যেখানে থাকতো সে জায়গা এখান থেকে কতদূরে কে জানে!
তাও রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলো ও কাউকে জিজ্ঞেস করলে কিছু তো বলে দিবে ঠিক পৌঁছে যাবে। এসব ফালতু মানুষের কথা অযথা কেনো শুনতে যাবে,সে তো কোনো খারা”প কিছু করেনি, মহিলা শুধু শুধু তাকে আজে’বাজে কথা শুনিয়ে দিলো।

সোহেল, শিলা পরের দিন রাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে,এখস পর্যন্ত নিখিল কে চুপ থাকতে দেখে তারাও ভেবেছে ভয় পেয়ে গেছে নিখিল, সুযোগে পালাতে পারবে।
সে নিজের রুমে গিয়ে দেখলো নিখিলের মেয়ে তার ছেলেকে চুল টেনে ধরেছে!
সোহেলের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে গেলো–,,যেমন বাপ তেমন মেয়ে,এখনই কেমন মারা”মারি করছে!
সোহেল ধম”ক দিয়ে বললো–,,কি হচ্ছে এখানে,এই মেয়ে সাহস তো কম না!
নামিরা চোখের পলক ফেললো দুই তিন বার তার পর বললো–,,চুপ,পঁচা আংকেল।তুমি পঁচা এই ভাইয়াটাও পঁচা। আন্টি বলেছে ওর সাথে খেলার জন্য আর ভাইয়া টা আমাকে ব’কা দিয়েছে।
সোহেল আবার বললো–,,বেশ করেছে বকা দিয়েছে।

সোহেলের ছেলে মানান বলে উঠলো–,,বাবা ওকে ব’কা দিচ্ছো কেনো?
সোহেলে রেগে বললো–,,ব’কা দিচ্ছো কেনো?ওরে বাবা কি দরদ এতো দরদ কিসের রে ওর জন্য, কে হয় তোর!
মানান বলে উঠলো–,,মা বলেছে ছোট বোন হয় ও আমার।
–,,তোর মা বললেই হলো, যাকে তাকে বোন বানিয়ে দিচ্ছে।
নামিরা আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,এই যাকে তাকে বলছো কেনো?আমার নাম নামিরা তুমি জানো না?বোকা আংকেল।
সোহেল তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবে মিনা এসে বললো–,,কি করছো কি সোহেল,তুমি না বললে ও তোমার বন্ধুর মেয়ে তাহলে তো মানানের বোনই হয়। এমন করছো কেনো?
সোহেল আর কিছু বললো না রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।
নামিরা মিনা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুমি অনেক ভালো।আমাকে মাম্মার কাছে নিয়ে চলো।
মিনার বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করলো,তার সন্তান কে যদি কেউ তার থেকে কে’ড়ে নিতো এতো সময় নিজের সন্তান কে না দেখে তার মায়ের যে কি অবস্থা হচ্ছে আল্লাহই ভালো জানেন।মিনা নামিরা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,নিয়ে যাবো তো মা,আমি যাবো তোমার মানান ভাইয়া ও যাবে আমাদের সাথে,কালই যাবো আজকে তো আন্টির কাজ আছে।

নামিরার হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেলো সে ছুটে বিছানার উপর উঠে বসে পড়লো,ছোট বাচ্চাটার চোখে জল টলমল করতে লাগলো।কিছু সময়ের ব্যবধানেই সেই মাম্মা বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
মানান তার মায়ের দিক তাকিয়ে বললো–,,মা ওর মা কোথায়?ওকে এখানে কেনো রেখে গেছে!
মিনা কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারলো না, না পারলো কান্নারত মেয়েটার কান্না থামাতে।সে ও তো মা কি করে সহ্য করবে একটা বাচ্চার আহা’জারি!

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২০

চৌধুরী বাড়িতে এসে হাজির হলো সাহিলদের বাড়ির সবাই,নিখিলের মামা বাড়ির সবাই।সাব্বির, শিশির তাদের পরিবার ও এখানেই আছে।
সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারোর।নেহার কষ্ট যেনো কেউই সহ্য করতে পারছে না।নিখিল তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।আর বার বার তাকে বলছে–,,নিখিল আমার মেয়েকে এনে দাও তুমি যা বলবে তাই শুনবো আমি, কোনো দিন অবা’ধ্য হবো না। প্লিজ এনে দাও আমার মেয়ে ছাড়া আমি বাঁচ’বো না।

প্রণয়ের সুর ২ পর্ব ২১ (২)