প্রণয় আসক্তি পর্ব ২

প্রণয় আসক্তি পর্ব ১
লেখিকাঃমাহযাবীন

ফেসবুকেও প্রেম হয়।গভীর থেকে গভীরতম প্রেম।অপরিচিত দুটো মানুষ অল্প স্বল্প কথা বলার মধ্য দিয়ে পরিচিত হতে থাকে।১-২ ঘন্টার চ্যাটিং সকালের গুড মর্নিং দিয়ে রাতের গুড নাইট অব্দিতে যেয়ে পৌঁছায়।ফোনের ওপাশের ব্যক্তি ও ফোনের এ পাশের ব্যক্তির মধ্যে যে কয়েক হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব আছে তা মিটে যায় প্রতিটি মুহূর্ত একে-অপরের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে।অচেনা,অপরিচিত মুখ দুটো একে-অপরের খুব পরিচিত হয়ে মনে গেঁথে যায় ছবি আদান-প্রদানের মাধ্যমে।দু’টো মানুষের মাঝে শারীরিক দূরত্ব টা খুব বেশি হলেও দু’টি মানুষের হৃদয় অনুভূতির একই সুতোয় বেঁধে যায়।

আর্শির সাথেও ঠিক এমনটিই হচ্ছে।নিজের অজান্তেই বিহানের সাথে হৃদয়ের এক গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।এ এক মায়ার সম্পর্ক, মুগ্ধতার সম্পর্ক,নেশালো সম্পর্ক।
সকাল ১০ টায় গভীর ঘুম টা হালকা হতেই বন্ধ চোখে নিজের মাথার কাছ দিয়ে বিছানায় হাত বুলিয়ে নিজের ফোনটি পেতেই তা হাতে নিয়ে এক চোখ খুলে ফোনের স্ক্রিন অন করে আর্শি।ওমনি চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি “গুড মর্নিং” ম্যাসেজ। ম্যাসেজটি দেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে আর্শির। সে এবার দু’চোখ খুলে বিহানের ইনবক্সে ঢুকে নিজেও “গুড মর্নিং” ম্যাসেজ লিখে পাঠায়।প্রায় সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ম্যাসেজ আসে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-ঘুম ভাঙলো ম্যাডামের!(বিহান)
-হুউউ।কই আপনি?
-রিসোর্টে।
-বেরোবেন কখন?
-একটু পর।
-ব্রেকফাস্ট?
-ডান।
-ওকে।
-আজ বিছানাকান্দি যাচ্ছি।জায়গা টা ভিষণ সুন্দর।
-তাই?আমাকে ছবি,ভিডিও দিতে ভুলবেন না কিন্তু।

বিহান যেখানেই যায় সেখানে তোলা তার প্রতিটি ছবি আর্শিকে পাঠায়।বিহানের এতো এতো ছবি দেখে আর্শির মনেই হয় না সে ঐ জায়গায় বিহানের সাথে নেই বরং তার মনে হয় সে ও বিহানের সাথে ঐ জায়গায় উপস্থিত এবং প্রতিটি মুহূর্ত সে বিহানের সাথেই আছে।

-জায়গা টা তোমাকে ভিডিও কলে দেখালে ভালো হতো।ভিডিও কল দেওয়া যাবে?
বিহানের এ ম্যাসেজটি পড়ার সাথে সাথেই এক অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতি হৃদয় ছুঁয়ে দিলো আর্শির। ১ বছরে এই প্রথম বিহান তাকে ভিডিও কলের কথা বলছে।কিন্তু এখন অব্দি তারা অডিও কলেও কখনো কথা বলেনি।

বাড়ির কলিং বেল টা বেজে উঠতেই সানিয়া বেগম বুঝে যান,মিয়ামি এসেছে।বিকেল ৪ টায় মিয়ামি ও আর্শির কোচিং।আর এখন ঘড়ির কাঁটায় ০৩ঃ২০ বাজছে।যেদিন আর্শ বাসায় থাকে সেদিন মিয়ামি এমন সময়েই আসে নাহয় আসে না আর আসলেও ০৩ঃ৫০ এর দিকে আসে।
দরজা খুলতেই কাঁধে ব্যাগ ও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রাখা মিয়ামিকে দেখে নিজের ঠোঁটেও হাসি ফুটিয়ে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,

-ভিতরে আয়।
উত্তরে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।সানিয়া বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-খেয়েছিস দুপুরে?
-হ্যা মামনি,তোমরা খেয়েছো?
-হ্যা।শুধু তোর হবু উনি আর ননদ খায়নি।
-কেন?
উত্তরে বিরক্ত কন্ঠে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-বুঝিস না এক এক জন নবাবের বংশধর!

উত্তরে একটু শব্দ করেই হাসে মিয়ামি।সানিয়া বেগমও ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠেন,
-নবাবজাদী তার রুমেই আছে আর তার বড় ভাই অর্থাৎ বড় নবাবজাদাও তার রুমেই আছে।কোন রুমে যাবি?(ব্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে সানিয়া বেগম)
ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,

-বড় নবাবজাদার সাথে আগে দেখা না করলে তার অপমান করা হয়ে যাবে না?পরে যদি এ অপমানের শাস্তি স্বরূপ আমায় মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়?
উত্তরে নিজের ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি প্রশস্ত করে মিয়ামির মাথায় আলতো বারি দিয়ে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-হ্যা খুব।ফাজিল মেয়ে!
উত্তরে মিয়ামি তার ঠোঁট দুষ্টু হাসি টা দীর্ঘ করে।সানিয়া বেগমও আর কিছু না বলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যান।

সানিয়া বেগমের সাথে কথা শেষে আর্শের কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ায় মিয়ামি।আর্শের কক্ষের পাশেই আর্শির কক্ষ। কিন্তু সেদিকে নজর না দিয়ে আর্শের কক্ষের দরজার কাছে আসতেই দেখে আর্শের কক্ষের দরজা খোলাই শুধু চাপিয়ে রাখা।মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসায় সে দরজায় নক না করে দরজার ফাঁকা হতে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে আর্শ একা একা নিজের কক্ষে কি করছে! উঁকি দিতেই মিয়ামি দেখতে পায় খালি গায়ে আর্শ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে নিজের ভিজা চুল মুছতে ব্যস্ত হয়ে আছে।আর্শের বুক হতে পেট অব্দি লোম আছে।

কিন্তু তা তেমন ঘন নয়।দেখতে বেশ আকর্ষনীয়। লোমগুলো ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।শ্যামবর্ণের এই ভিজে শরীরে আর্শকে এতোটাই সুন্দর লাগছে যে মিয়ামি নিজের চোখ টাও সরাতে পারছে না।কিছুটা সময় আর্শকে দেখে নিয়ে সে কক্ষে প্রবেশ করে আর্শকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
“বাহ ভাইটু, তোমার লোমশ বুক দেখতে এতোওওওও আকর্ষনীয়!”

মিয়ামির কন্ঠ কানে আসতেই চমকে পাশে তাকাতেই দেখে মিয়ামি ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে বিছানা থেকে নিজের শার্ট টি হাতে নিয়ে নিজের বুকের উপর দুহাতে চেপে ধরে নিজের শরীল ঢাকার চেষ্টা করে আর্শ।রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
-বিনা অনুমতিতে কারো রুমে প্রবেশ করা অভদ্রতা, জানো না?
উত্তরে মিয়ামি ভাব নিয়ে বলে ওঠে,

-এটা আমার হবু জামাইর রুম তাই আমার অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।
রাগী কন্ঠে আর্শ কিছু বলার আগেই মিয়ামি চেহারায় অবাক হওয়ার মতো ছাপ ফেলে বলে ওঠে,
-ভাইটু, তুমি মেয়েদের মতো এতো লজ্জা পাও যে শার্ট বুকে চেপে ধরে নিজের ইজ্জত রক্ষা করছো!
কথাটি বলে ঠোঁট চেপে হাসে মিয়ামি।তার এমন কথায় আর্শ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বুক হতে শার্ট সরিয়ে তা গায়ে জড়িয়ে নেয়।অতঃপর শার্টের বোতামে হাত দিতেই দুটি কোমল হাতের স্পর্শে বাঁধা প্রাপ্ত হয় সে।

চোখ তুলে হাতের মালিকের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মিয়ামি ঠোঁটে আলতো হাসি নিয়ে একটি একটি করে ধীরে ধীরে তার শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে।কত স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটিকে।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক ছাড়া পুরো চেহারায় আর কোনো সাজ বা প্রসাধনীর উপস্থিতি নেই।মায়াবী গভীর চোখজোড়ায় ঘন পাপড়ির সৌন্দর্যে এক গভীর ও স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে আর্শ।

নিজের অজান্তেই সে দু’হাতে মিয়ামির কোমর আঁকড়ে ধরে মিয়ামিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। হটাৎ আর্শের এমন কাজে চমকে উঠে আর্শের সেই চোখে চোখ রাখে মিয়ামি।উভয়ের দৃষ্টিই স্থির হয়ে আছে।একে-অপরের চোখে যেনো হারিয়ে গিয়েছে উভয়ই।আর্শের গরম নিঃশ্বাস মিয়ামির চোখমুখে এসে পরছে।মিয়ামি অনুভব করতে পারছে তার হৃৎস্পন্দন ঠিক কতোটা জোরে স্পন্দিত হচ্ছে।অতি সুখ অনুভব হওয়ায় মিয়ামি তার ঠোঁটে আলতো হাসি টেনে আর্শের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতেই আর্শের ধ্যান ভাঙে।ওমনি সে মিয়ামির কোমর আঁকড়ে ধরে থাকা হাত দু’টো দিয়ে মিয়ামির কোমর খামচে ধরে। এতোটাই জোরে খামচে ধরে যে ব্যথায় সাথে সাথে মিয়ামির চোখে পানি চলে আসে।আলতো চিৎকার করে “আহহ” শব্দ করে ওঠে সে।

প্রণয় আসক্তি পর্ব ১

হটাৎ আর্শের এমন ব্যবহারের কারণ বোধগম্য না হওয়ায় মিয়ামি ঝাপসা চোখে আর্শের দিকে তাকায়।আর্শ তাকে ওভাবেই খামচে ধরে বলে ওঠে,
-আমার যত কাছে আসবা ঠিক এভাবেই কষ্ট পাবা।এখনো সময় আছে মিয়ু,আমার কাছে আসার চেষ্টা করো না।
উত্তরে কিছু টা সময় নিশ্চুপ থাকে মিয়ামি।একটু সময় নিয়ে বলে ওঠে,
-সখী,ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।সে কি কেবলই চোখের জল?সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ!

আর্শের চোখে স্থির দৃষ্টি রেখে কথাগুলো শেষ করে মিয়ামি।অতঃপর ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে আর্শের শার্টের অবশিষ্ট বোতাম গুলো লাগিয়ে আর্শের দিকে তাকাতেই আর্শ তার হাতের বাঁধন থেকে মিয়ামিকে মুক্ত করে দেয়।মুক্তি পেয়ে নিজের ঠোঁটে হাসিটি বজায়ে রেখে কক্ষ ত্যাগ করে মিয়ামি।আর আর্শ?সে অবাক নয়নে তার সামনে থাকা পিচ্চি মেয়েটিকে দেখে চলছিলো।মেয়েটি সবেই তো এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।এইটুকু মেয়ের অনুভূতি এতো তীব্র?

প্রণয় আসক্তি পর্ব ৩