প্রণয় আসক্তি পর্ব ৬

প্রণয় আসক্তি পর্ব ৬
লেখিকাঃমাহযাবীন

“আর্শ,তোর কি কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক চলছে?”
বিস্মিত চোখে নিজের মায়ের দিকে চেয়ে আছে আর্শ।হটাৎ তার মায়ের এমন প্রশ্ন করবার পেছনের কারণটি বোধগম্য হচ্ছে না তার।ভ্রু জোড়া কুঁচকে সে বলে ওঠে,

-হটাৎ এ প্রশ্ন?
-আমি এ প্রশ্নের উত্তর চাই,আর্শ।তার আগে ওয়াদা কর মিথ্যা বলবি না।
মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে একটু হাসি টেনে আর্শ বলে ওঠে,
-তোমাকে মিথ্যা কখনো বলেছি?
-বেশ তো।তবে আজও সত্যি করে বল,তোর কি কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে যা আমরা কেউ জানি না?
-উহু নাহ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটি কানে আসতেই ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো সানিয়া বেগমের।এতোক্ষণে যেনো একটু স্বস্তি পেলেন তিনি।কিন্তু মূহুর্তেই ঠোঁটের হাসি বিলীন করে অভিযোগের সুরে নিজের ছেলেকে বলে উঠলেন,
-তাহলে মিমিকে বিয়ে করতে তোর আপত্তি কিসের?
সানিয়া বেগমের প্রশ্ন কানে আসতেই আর্শের চেহারার স্বাভাবিকভাব টা পরিবর্তন হয়ে গম্ভীর রুপ ধারণ করলো।আর্শ গম্ভীর সরে বলে ওঠে,

-আমি বিয়েই করতে চাই না,মা।
উত্তরে সানিয়া বেগম ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠেন,
-ওরেহ, আমার শুদ্ধ পুরুষ!নারী বিদ্বেষী।
সানিয়া বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই মিয়ামি আর্শের কক্ষে প্রবেশ করে বলে ওঠে,
“কি কথা হচ্ছে মা-ছেলের?”
মিয়ামির কন্ঠ শুনে সানিয়া বেগম নিজের ছেলের থেকে চোখ সরিয়ে মিয়ামির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন,
-তুই কখন এলি?

-একটু আগে।মামনি শোনো না! তুমি একটু তোমার বান্ধবী মানে আমার মাকে বলো না,আজ রাতে যেনো আমাকে এ বাসায় থাকতে দেয়।
-আচ্ছা, বলবো।এ নিয়ে তোর চিন্তে করতে হবে না।
-ধন্যবাদ মামনি।
কথাটি বলেই মিয়ামি সানিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে। সানিয়া বেগমও ঠোঁটে হাসি টেনে মিয়ামিকে বলে ওঠেন,

-তুই বয় এখানে।আমার রান্নাঘরে একটু কাজ আছে।
কথাটি বলে সানিয়া বেগম আর্শের কক্ষ ত্যাগ করেন।
সানিয়া বেগম যেতেই আর্শ ভ্রু কুঁচকে মিয়ামির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-মতলব টা কি তোমার?রাতে থাকতে চাইছো কেন?
ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-যে মতলবই থাকুক তা আপনার জন্যে মোটেও শুভ নয়, স্যার।
বলেই আর্শের দিকে তাকিয়ে একটি চোখ মারে মিয়ামি।উত্তরে আর্শের কিছু বলার অপেক্ষা না করেই কক্ষ ত্যাগ করে সে।

পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আর্শি।তার পাশেই বিছানায় বসে “প্রেমাতাল” উপন্যাসটি পড়ছে মিয়ামি।পড়ার মাঝে বেশ ক’বার আর্শির মুখ পানে তাকিয়েছে সে।বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বইয়ের মাঝে যে আর্শির এক বিন্দুও মনোযোগ নেই তা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না মিয়ামির।আর্শির চোখমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু এর কারণ কি তা বুঝতে না পেরে মিয়ামি উৎসুক কন্ঠে বলে ওঠে,

-কি হয়েছে তোর?কি নিয়ে এতো চিন্তা করছিস?
এক বার মিয়ামির দিকে তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে নিন্ম স্বরে আর্শি বলে ওঠে,
-বিহান নেটওয়ার্কের বাইরে।গতকাল দিয়ে কথা বলতে পারছি না।ছেলেটা ঠিক আছে কি না আল্লাহ জানেন।
-এতো চিন্তা করিস না তো।ট্যুরে কি ও একা গেছে?আরো মানুষ আছে না সাথে?
-আছে।কিন্তু বিপদ কি মানুষের সংখ্যা গুনে আসে?

-তা বলছি না।বোঝাতে চাইছি, এতো মানুষ একসাথে গেছে নিশ্চয়ই নিজেদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা করেই গেছে।
মিয়ামির কথার উত্তরে মন খারাপের স্বরেই আর্শি বলে,
-হুম।
নিজেকে হাজার বার বুঝিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে আর্শি।কোনো লজিকই তার চিন্তা এক বিন্দু পরিমাণ কমাতে সক্ষম হচ্ছে না। মন অস্থির হয়ে আছে তার।বার বার ফোনের দিকে তাকিয়ে বিহানের একটি ম্যাসেজের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সে।সেই সাথে মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ে বিহানের সুরক্ষা কামনা করে চলছে সৃষ্টিকর্তার কাছে।

ঘড়ির কাটা ঠিক ২ এ অবস্থান করছে।ঘরের প্রতিটি মানুষ ঘুমে বিভোর।তেমনই ঘুমিয়ে আছে আর্শও।কিন্তু নিজের বুকে কোনো কিছুর স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় তার।ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখতে পায়, মিয়ামি অপলক তার বুকের দিকে তাকিয়ে বুকের লোমগুলো চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে দিচ্ছে।
মাঝ রাতে এই মেয়ের এমন পাগলাটে কাজ দেখে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা বুঝে উঠতে পারছে না আর্শ।সে কিছুটা সময় নিয়ে নিজের বিস্ময় কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
আর্শকে উঠতে দেখে মিয়ামি ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,

-ভালোই হয়েছে নিজে উঠেছ নাহয় আমার উঠাতে হতো!
রাগে দাঁতে দাঁত চেপে আর্শ বলে ওঠে,
-রাত দুপুরে এসব কি?সমস্যা কি তোমার?
-আমার কোনো সমস্যা নেই।যত সমস্যা সব তো তোমারই হয়।কিন্তু যা বলো তা বলো,তোমার বুকের লোমগুলো না বড্ড আকর্ষণীয়।

বলেই দুষ্টু হাসে মিয়ামি।মিয়ামির এমন কথায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পরে যায় আর্শ।আসেপাশে তাকিয়ে নিজের টি-শার্টটি খুঁজে চটজলদি তা গায়ে জড়িয়ে নেয় সে।আর্শের কাজে মিয়ামি নিজের হাসি থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ছেলে মানুষেরও এতো লজ্জা থাকতে পারে তার বিন্দু পরিমাণ ধারণা ছিলো না মিয়ামির।
মিয়ামির হাস্য উজ্জ্বল মুখ খানার দিকে তাকিয়ে অপলক কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত করে আর্শ এক-দু বার কাশি দিয়ে বলে ওঠে,

-বের হও তো আমার রুম দিয়ে।অসহ্য!
-উহু।আমি তোমাকে দু’টো অপশন দিবো।এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিবা,ঠিক আছে?
-না।কোনো কাহিনি চাই না।বের হও রুম থেকে।
-আমার কথা না শুনলে এই বিছানা দিয়েই নামবো না।
-মন ডা চায়,একটা আছার মারি।

-হাও আনরোমান্টিক!আচ্ছা অপশন ১ হচ্ছে, তুমি ঘুমাবা আর আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো।অপশন ২,এখন আমার সাথে ছাঁদে যাবা।
-একটাও না।

বলেই আর্শ নিজের বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরে। যাতে মিয়ামি তার বুকে মাথা রাখার সুযোগ না পায়।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই সে নিজের পিঠের উপর ভার অনুভব করতে আরম্ভ করে।মিয়ামি তার শরীরের উপর উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।মুহূর্তেই আর্শের চোখে মুখে চরম বিরক্তি ফুটে ওঠে।সেই সাথে অসহায়ত্ব ও।কোনো উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে সে মিয়ামিকে নিজের উপর দিয়ে সরিয়ে উঠে বসে অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে,
-ছাঁদেই যাই?
ঠোঁটে বিজয়ের হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-চলো।

-ভাইটু,দেখো আকাশে কত্তো বড় চাঁদ উঠেছে!
-হু।আজ পূর্ণিমা।
-ওয়াও!
ছাঁদে পাটি বিছিয়ে আর্শ ও মিয়ামি চন্দ্র বিলাস করছে।মৃদু বাতাস তাদের আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মিয়ামি চাঁদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আর্শের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
-ভালোবাসি।
আর্শ এক পলক তাকায় মিয়ামির চোখ পানে। তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও চাঁদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিন্ম স্বরে সে বলে ওঠে,
-কেনো?
-ভালোবাসতে কারণ লাগে?

প্রণয় আসক্তি পর্ব ৫

-লাগে তো।নাহয় এতো মানুষের ভিরে কেনো তোমার হৃদয় আমাকেই চাইছে?
-উম,ভাবিনি তো।
উত্তরে মৃদু হাসে আর্শ।মিয়ামি আর্শের দিকে তাকিয়ে আবারও বলে ওঠে,
-তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
এবার আর মিয়ামির দিকে তাকায় না আর্শ।কিছুটা সময় এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে সে বলে ওঠে,

-ভালোবাসার সংজ্ঞা কি তোমার কাছে,মিয়ু?
-অসংখ্য অনুভূতির সংমিশ্রণ।একটি মানুষকে ঘিরে একাধিক অনুভূতির সমাহার।তোমার কাছে ভালোবাসা কি,ভাইটু?
এবার আবারও মিয়ামির চোখে চোখ রাখে আর্শ।কিছুটা সময়ের জন্য উভয়ই একে অপরের চোখের পানে চেয়ে থাকে।আর্শের চোখে কিছু একটা লুকায়িত আছে যার অর্থ মিয়ামির বোধগম্য হচ্ছে না।আর্শ তার দৃষ্টি সরিয়ে বলে ওঠে,
-ভালোবাসা মানে ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখা।

প্রণয় আসক্তি পর্ব ৭