প্রথম প্রেম সিজন ২ শেষ পর্ব 

প্রথম প্রেম সিজন ২ শেষ পর্ব 
লেখিকা- খেয়া

আমার মেয়েটা চারবছর আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।সে আর কখনো ফিরবেনা আমার কাছে।
—- আপনি যে বললেন উনি মারা যাননি।তাহলে,,,
—- ও তো মারা যায়নি,ওকে মেরে ফেলা হয়েছিল। জানোতো ও একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।ছেলেটা ভালো ছিল না।অনেকগুলো সম্পর্ক ছিল ওর।এজন্য তোমার আংকেল তাকে মেনে নেয়নি।কিন্তু পরি লুকিয়ে সেই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিয়েছিল।

” কথাগুলো বলতে গিয়ে প্রহরের মা বারবার কেঁপে উঠছেন।উনার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে।উনি আবারও বলতে শুরু করলেন”
—-বিয়ের কিছুদিন ভালো গেলেও তারপর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়।খুব অত্যাচার করত আমার মেয়েটাকে ওরা।ওকে কত বললাম তুই ফিরে আয়।এলো না।ওর একটাই কথা ও কোন মুখে ফিরে যাবে।
টানা তিনবছর ওদের অত্যাচার সহ্য করে চারমাস আগে আমার পরিটা সুইসাইড করেছিল।কিন্তু আমি জানি ওদের জন্যেই আমার মেয়েটা এমন করতে বাধ্য হয়েছে।
এখানে থেকে আর এসব সহ্য করতে পারিনি বলে তোমার আংকেল আমাদের এখানে নিয়ে এলো। অবশ্য এখানে না এলে তোমার মতো আরেকটা মিষ্টি মেয়ে পেতাম নাকি।
—- আচ্ছা আন্টি, আপনারা কোনো পুলিশকেস করেননি।
—- করেছিলাম কিন্তু ওরা খুব প্রভাবশালী ছিল বলে সব চাপা পড়ে যায়।
আরো কিছুক্ষন আন্টির সাথে কথা বলে বাসায় চলে এলাম।আন্টির কথাগুলো শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ অনন্যা আপুর সাথে গল্প করলাম। তারপর রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলাম।
রাতে ভাইয়া এলে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলাম।তখন ভাইয়া বলল
—- আফরা!আসলে প্রহরের বাবা- মা চাচ্ছিলো তোদের বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে।
আমি জানি তোর বয়সটা কম।আমি তোর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায়না। তোরর যা ভালোমনে হয় তুই সেটাই করবি।
আর ওরা এখন শুধু কাবিন করিয়ে রাখবে।বাকি তুই যেখানে থাকতে চাস সেখানেই থাকবি।
—- আমাকে একটু টাইম দে ভাইয়া।আমি ভেবে তোকে বলল।
—- হুম।কোনো চাপ নিস না, বনু।তোর যেটা ভালো মনে হবে তুই সেটাই করবি।
—- হুম।

” ভাইয়াকে আর কিছু না বলে চলে এলাম।আমার এটা নিয়ে ভাবার জন্য সত্যি একটু টাইম দরকার।”
রাতে অনেক ভাবার পরও আমি কোনো ডিসিশন নিতে পারলাম না। আমার আসলে কী করা উচিৎ?
পরদিন সকালে উঠে ভার্সিটি গেলাম।আজ রাহার সাথে বিয়ের কথাটা শেয়ার করব।
কিন্তু রাহা আজ ভার্সিটি এলোই না।
আমিও দুটো ক্লাস করেই চলে এলাম।

ভাইয়া আর অনন্যা আপু দুজনেই হাসপাতালে গেছে।অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম বিয়েটা আমার করে নেওয়া উচিত।আমি প্রহরকে ছাড়া ভালোথাকতে পারব না।
রাতে ভাইয়াকেও বলে দিলাম আমি বিয়েটাতে রাজি।
ভাইয়াও সে মতো প্রহরের বাবা- মায়ের সাথে কথা বলল।
রাতে নিবির ভাইয়া ফোন দিলো।এতরাতে নিবির ভাইয়ার কল দেখে বেশ অবাক হলাম।বেশিকিছু না ভেবে ফোনটা তুললাম।
—- বিয়ে করছিস, আফরা!
—- নিবির ভাইয়া আসলে,,,

—- কী জানিসতো আফরা,কথাকে আমি হয়ত সত্যি ভালোবাসতাম।ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল হয়ত প্রথম প্রেম ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। তখন আমি তোকে চেয়ে ছিলাম শুধু কথাকে ভুলে থাকার জন্য।তুই ঠিকই বলে ছিলি, তোর প্রতি আমার যা ছিল তা শুধুই মোহ ছিল।কিন্তু রাহা আমার লাইফে আসার পট বুঝেছি মানুষ প্রথম প্রেম ভুলেও নতুন করে প্রেমে পড়তে পারে।
তোর হয়ত মনে হতে পারে আমি এত রং কেন বদলায়।কিন্তু বিশ্বাস কর ভালোবাসা মন থেকে আসে।সেটা জোর করে হয়না।

—- আমি জানি ভাইয়া,ভালোবাসা মন থেকে হয়।আমি যেমন প্রহরকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে খুশি থাকি আর তুমিও রাহাকে নিয়ে খুশি থাকবে।
—- হুম।ভালো থাকিস, আফরা।আর মাঝের ঘটনাগুলোর জন্য ক্ষমা করে দিস।প্রহর খুব ভালো ছেলে, তোকে খুব ভালো রাখবে।
—- হুম।
নিবির ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।আজ আর প্রহরের সাথে কথা হলোনা।

প্রহরের বাড়ির লোক আগামী শুক্রবার বিয়েটা সেরে নিতে চাই।কালই শুক্রবার।বাড়িতে তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে।ভাইয়া আর অনন্যা আপুও ছুটি নিয়েছে।
ভাইয়া তো খুব ব্যস্ত। তার একমাত্র বোনের বিয়েতে সে কোনে ত্রুটি রাখতে চায় না।
সকাল থেকেই রাহা আমার পিছনে পড়ে আছে।তার সাথে নাকি পার্লারে যেতে হবে।কিন্তু সকাল থেকেই মনটা বড্ড খারাপ।
আজ যদি বাবা – মা থাকত তাহলে তারা কত খুশি হতো।তারা থাকলে হয়ত আজকের দিনটা অন্যরকম হতে পারত।
সকাল থেকে বিশবার প্রহর ভিডিও কল করেছে।এত লোকের মাঝে কল ধরাটা মোটেও ভালো লাগেনি আমার।তাি ধরিনি।
কিন্তু এবার ধরেই ফেললাম।যতক্ষণ না ধরব ততক্ষণ কল করতেই থাকবে।

—- কী চাই?
—- তোমাকে।একটু দেখতেই তো চায়ছি তোমাকে।
—- রোজই তো দেখেন। আজ আবার নতুন করে দেখার কী আছে।
—- এতদিন তোমাকে শুধু আফরা হিসেবে দেখেছি কিন্তু এখন তো মিসেস প্রহর হিসেবে দেখবো।
—- তাই নাকি।আচ্ছা আমাকে না নিচে ডাকছে ।
আমি পরে কথা বলছি, বাই।
—- ওকে।
বিকেল হয়ে এসেছে।সন্ধ্যেবেলা কাবিন।খুব সাধারণভাবে সব হবে।বাসায় খুব অল্প মানুষই আছে।
খালামণিদেরও বলা হয়েছিল কিন্তু আসেনি।তবে আরাব ভাইয়া ফোন করে বলেছিল আসবে।
কিছুক্ষন পর রাদিফ আর আরাব ভাইয়া এলো।আরাব ভাইয়ার সাথে একটা মেয়েও এসেছিল।হয়ত আরাব ভাইয়ার ওয়াইফ হবে।

ভাইয়া মেয়েটার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো।ওর নাম প্রীতি।প্রীতি ভাবি প্রচুর মিশুক মানুষ।খুব সহজেই আমাদের সাথে মিশে গেলো।
আমি রাদিফকে জিঙ্গেস করলাম
—- তোরা যে এখানে এলি, আংকেল রাগ করবেনা।
—- তোকে এতকিছু নিয়ে ভাবতে হবেনা।তুই শুধু তোর ফিউচার নিয়ে ভাব।বাই দ্যা ওয়ে, তোর কোনো ননদ থাকলে বলিস কিন্তু।ট্রাই করে দেখতাম আরকি।ভেবেছিলাম তোর ঐ বোন আরশিকে একটি পটাবো। কিন্তু সে তো আমাকে পাত্তায় দেয় না।
—- সিরিয়াসলি, রাদিফ। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।
—- তো ব্রেকআপ করিয়ে দে না।
—- রাদিপ!

সন্ধ্যেবেলা প্রহররা এলো।অল্প কিছু লোক এলো ওদের সাথে।তবে আন্টি আসেনি।আংকেলকেও খুব হাসিখুশি লাগছে।উনাদের ভিতরে যে এতো কষ্ট লুকানো আছে তা উনাদের দেখলে বোঝায় যায়না।
সব নিয়ম ঠিকমতোই হলো।কাজী সাহেব প্রহরকে কবুল বলতে বললেই সে কবুল বলে দিলো।যেন এই মুহূর্তেরর জন্য উনি কতযুগ অপেক্ষা করতেছিল।
আমি প্রায় ঘন্টা খানিক সময় নিয়ে কবুল বলে দিলাম।”কবুল” এই ছোট্টো শব্দটার মধ্যে যে ঠিক কতটা প্রশান্তি লুকিয়ে আছে তা আজ বুঝলাম।হয়ত পবিত্র জিনিসের ক্ষমতা এটাই।
দুটি মন আজ এক হলো।প্রহরের মুখে আজ খুব সুন্দর একটা হাসি দেখলাম।এতদিন কখনো তাকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখিনি।

রাতের খাবার খেয়ে বাকি সবাই চলে গেলো।শুধু প্রহর আর ওর দুটো কাজিন থেকে গেলো।
আমাদের বাড়িতে বাসরের আয়োজন করা হয়েছে।
রাতে প্রহর আমাকে নিয়ে ছাদে গেলো।
—- এতরাতে আমরা ছাদে কেন এসেছি।
—- এই রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে তোর হৃদস্পন্দন টাকে অনুভব করতে চাই।
জানো তো আফরা, সবার জীবনেই প্রথম প্রেমটা স্পেশাল হয়।জানি প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়া কঠিন।তবুও প্রথম প্রেম ভুলে কিন্তু মানুষ ভালো থাকতে পারে।নতুন ভাবে কাউকে ভালোবেসে ভালো থাকার মাঝে কিন্তু কোনো ভুল নেই।
—- আমার প্রথম প্রেমম পূর্ণতা পায়নি তো কী আপনার প্রথম প্রেম তো পূর্ণতা পায়নি।
আর আমি তো আমার আসল ভালোবাসা পেয়েছি।

প্রথম প্রেম সিজন ২ পর্ব ৮

—- উহু,,, আপনি না তুমি।
—- আচ্ছা,তুমি।আমার তুমি।
—- হুম।খুব ভালোবাসবো তোমায় দেখেনিও।তোমার আমার ভালোবাসা দেখে লোকেরা জ্বলবে দেখো।
—- হুম।জানেন তো প্রথম প্রথম নিবির ভাইয়ার বিহেবে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু যখন আমি আপনার সাথে থাকতাম তখন সেগুলো মনেই থাকত না।আমার জন্য তো তোমার আর রাহার প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পেলো।এটাই আমার আনন্দ।
—- প্রথম প্রেমটা আসল না ভালোবাসাটাই আসল।
—- হুম।খুব ভালোবাসি তোমায়।

—-আমিও।সারাজীবন এভাবেই আমার হয়ে থেকো।যদি কখনো ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছো তো।
—- একদম না,,, জানি তুমি কতটা ফাজিল পিচ্চি বউ।
—- কীহহ,,আমি ফাজিল।আবার পিচ্চি।
—- হুম।আমার পিচ্চি বউ।
আমি নিঃশব্দে উনার কাঁধে মাথা রাখলাম।একটা শান্তির হাসি দিলাম।অবশেষে কেউ তো আমার হলো।একান্তই আমার হলো।যাকে আমার বড্ড প্রয়োজন।
জীবনে প্রথম প্রেম না আসল ভালোবাসার দরকার।

(লেখাঃ খেয়া ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন