প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৪
Zannat Xhowdury
থাইল্যান্ডের ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫০ দূরে অবস্থিত পাতায়া শহর। এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি হানিমুন স্পষ্ট হিসেবে পরিচিত এই পাতায়া। সমুদ্রের হাতছানির সাথে দেখা মিলে অন্যতম রঙিন এক শহরের ।
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে হোটেল রুমে আবিষ্কার করে রোজা। আড়মোড়া ভেঙে আশে পাশে তাকিয়ে বেশ চমকে যায় সে । সব কিছু কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। চোখ কচলে আবারো আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করছে সে ।
কি রে ভাই , মুই কি স্বপ্ন দেখেছু নাকি ?
কথাগুলো বলে আবারও কচলাতে লাগলো নিজের চোখ ।না এবারেও যেন । সব একই আছে , রোজা এবার যেনো নিজের শরীরেই বেশ জোরে চিমটি কাটলো ।
আহ !
না স্বপ্ন না । আমি কোথায় , আমি কি কিডনাপ হয়েছি ।
কে কিডনাপ করলো আমাকে । কখন হলাম আমি তো বাহিরেও বের হই নি তাহলে ক কোথায় আমি এখন । এখানে কেন আনা হয়েছে, আমার কি আর তাহলে কারো সাথে দেখা হবে । এইখানেই কি আমার জীবন শেষ !
কিছু ক্ষণ থেমে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিল রোজা । আবারো টেপ রেকর্ডার চালু হলো তার ।
তাহলে কি এ জীবনে নির্ণয় ভাই আমার হলো না । আমি কি তার বউ হতে পারলাম না । তার সাথে বাসর করতেও তো পারলামনা । নির্ণয় ভাই কী আমাকে খুঁজবে না ।
নির্ণয় ভাই কি অন্য কাউকে বিয়ে করবে ।অন্য কাউকে বুকে নিবে ।
হোক তাতে আমার কি আমি তো মরেই যাবো! বলেই হামি তুললো রোজা ।
রিলেক্স ভাব নিয়ে আবারো গা এলিয়ে দিলো বিছানায় ।
আমি আছি টা কোথায় এখন?
কিডনাপ করে কি কেউ হোটেল রাখে । রাখে তো অভিশপ্ত পোড়া বাড়িতে । ভি আই পি কিডন্যাপার হয়তো তাই আমাকে হোটেলে রেখে ।
হঠাৎ রুমে দরজা ঠেলে ভেতরে কারো আসার অনুভব হতেই ধিপ করে উঠে বসে রোজা । সামনে তাকানো মানুষটাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো সে …
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মির্জা গালিবের একটা কথা আছে না—
‘সন্ধ্যা কাটে না অথচ বছর কেটে যায়’।
সময়ের সাথে আমরাও চলে যাচ্ছি । কোথায় যাচ্ছি জানি না। তবে বুঝতে পারছি কোথাও একটা যাচ্ছি। হয়তো সমুদ্রের দিকে– নয়তো নক্ষত্রের দিকে। নিয়ম করে আমাদের জ্বর, ঠান্ডা, অভিমান হচ্ছে। বিনা পারিশ্রমিকে দিনের পর দিন নিজের সাথে অভিনয় করে যাচ্ছি। নিরপরাধ দুটো চোখ ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমরা যাচ্ছি । প্রিয় মানুষ ফেলে, পরিচিত আকাশ ফেলে আমরা চলে যাচ্ছি। দূরে, বহুদূরে কোথাও!
সমুদ্রের ডাক চেয়ারে বসে সামনের চোরা বালুতে ঘর বানানো এক তরুণীর দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে কথা গুলো বলছে আয়ান ।
সি বিচের ডাক চেয়ারে গা এলিয়ে যখন সে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত তখনি চোখ পড়ে সামনের রিধিমার দিকে । যে সমুদ্রের বালু ঘর বানাতে মত্ত এখন ।
কি হবে এই ঘর বানিয়ে পানি তো সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ?
কথাগুলো বলেতে বলতে সেও এগিয়ে গেলো রিধিমা দিকে।
বালুর ঘরের ডেকরেশনটা তো বেশ সুন্দর হয়েছে মিস ।
করো কথায় পেছনে ঘুরে আকাশে পানে মুখে করে তাকালো রিধিমা । আয়ন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাথা নামিয়ে আবারো নিজের কাজে মন দিলো যে ।
নারীর ঘরে সৌন্দর্য , কথাটা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি তাই না ?
তা হবে কেন মিস ?
বালু হোক বা সংসার চেষ্টা করলে দু’টোকেই ডেকরেশন করা সম্ভব ।
আপনি কি সব সময় রেগে থাকেন ?
আয়ানের কথায় আবারো তার মুখে পানে তাকালো রিধিমা !
আপনার এমন কেন মনে হলো ?
এই যে গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে থাকেন যে ।
আপনাকে দেখলেই আমার গাম্ভীর্য ভাব চলে আসে । বিড়বিড়িয়ে কথাগুলো বললো রিধিমা ।
কিছু বললেন মিস ।
বললাম আপনি এখানে কি করছেন ?
আমি তো সমুদ্র বিলাস করতে এসেছিলাম ।
তা ওটা না করে এখানে কি কাজ ?
কাজই তো করছি।
মানে ?
আমি কি আপনি সাহায্য করতে পারি ?
তার দরকার হবে না ! ধন্যবাদ ।
দুজনে মিলে করলে কাজ টা তাড়া…… ।
কথা শেষ করার আগেই কারো ডাকে থেমে যায় আয়ান । সাথে সাথে মাথা ঘুড়িয়ে পিছনের দিকে ফিরে দুজন ।
এই শালা ..
আমার বোনের কাছে কি তোর ?
কথা শেষ করেই রিয়ান খুব জোরে কিল বসিয়ে দিলো আয়ানের পিঠে । আয়ান ব্যাথায় চোখ কুচকে নিলো ।
চলে এলি কাবাবে হাড্ডি হতে।
আমি হাড্ডি ।
তা নয়তো কিহ।
নির্ণয় ভাই কি তোদের আড্ডা দিতে এখানে আসতে বলেছে।
নাকি আমাদের প্লান সফল করতে ।
ডেকোরেশন এখনো অনেক বাকি।
একি নির্ণয় ভাই আপনি এখানে , তার মানে আমি কি কিডনাপ হই নি ।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে রোজার পানে তাকালো নির্ণয় .
বাই এনি চান্স তোর কি কিডনাপ হওয়ার শখ আছে রোজ
একদম ঠিক ধরেছেন ! আমার অনেক দিনের স্বপ্ন নির্ণয় ভাই কেউ আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাক ।
মানুষের চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন থাকে , নতুন জিনিস আবিষ্কারের স্বপ্ন থাকে , আর তোর কিনা কিডন্যাপ হওয়ার স্বপ্ন । বাহ রে বাহ !
স্বপ্ন তো স্বপ্ন 🥴
ওসব বাদ , আমি এখন কোথায় আছি বলেন তো ?
চার দেয়ালের ভিতরে ,
মানে ?
তুই তো ঘরেই আসিস ।
ওহ নির্ণয় ভাই !
আহ ! রোজ
রোজা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ রাখলো নির্ণয়ের মুখের পানে। তার ঠোঁটে খেলে যাচ্ছে দুষ্টু এক হাসি !
রোজ কিছুটা এগিয়ে আসলো নির্ণয়ের কাছে , এতে যেন বিন্দু পরিমাণ অবাক হলো না নির্ণয় । সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রোজার গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করছে । রোজা কিছু আরো কিছু টা এগিয়ে এসে পায়ের উপর পা রেখে দুহাতে গলা জড়িয়ে নির্ণয়ের ।
আচ্ছা নির্ণয় ভাই , আপনার কি কোনো প্রেমিকা আছে ?
না বউ আছে ।
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৩
চৌকিতে দূরে সরে যায় রোজা । অসহায় চোখে তাকায় সে ,
চোখের ভাষায় বুঝাতে চাইছে মনের কথা
কি হলো সরে গেলি কেন ?
না এমনি !
কাছে আয় .
না ।
আয় বলছি !
বলছি তো যাবো না , আপনি বেরিয়ে যান এই রুম থেকে ।
রোজ হয় তুই কাছে আয় না হলে