প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২২

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২২
Zannat Xhowdury

হো হো করে হেসে ওঠে নির্ণয় ।
হাসছো সযে ?
রেডি থাকিস । জেট বুক করা আছে ফিরতে হবে
মানে !
ওতো মানে জেনে তোর কাজ নেই । বোন তো বানিয়েছিস একদম ঝাক্কাস ।
আসলে ভাই !

ডান হাত কিছুটা উঁচু করে রিয়ান কে থামিয়ে দিলো নির্ণয় । পকেট ক্যামেরার হাতরে বের করলো ব্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেট । মাথা খুলতে গিয়ে আড়চোখে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো রিয়ানের পানে। বেচারার মুখ কেমন পানপে হয়ে রয়েছে । ঠোঁটের কোনে সিগারেট রেখে দুই পকেট জুড়েই লাইটার খুঁজে চলছে অনাবরত ।
বেপার টা খেয়াল হতেই নিজের পকেটের লাইটা জ্বালিয়ে সিগারেটে আগুন দিলো রিয়ান ।
নিঃশ্বাসের সাথে সিগারেট প্রথম টান দিয়ে ধোয়া রিয়ানের মুখ বরাবর ছুঁড়ে নির্ণয় । অতঃপর হাত রাখে তার কাঁধে দু’জনে এগিয়ে যায় রুমের বেলকনিতে । বিশাল আকাশ তবে কোথায় দেখা মেলে না কোনো তারার । অন্ধকার আচ্ছন্ন পুরো আকাশ নিকোশ কালো ।
দু’জনের শান্ত দৃষ্টি আকাশের পানে ।
একদিন -একরাত ; – তারপর প্রেম গেছে চলে ।
সবাই চলিয়া যায় -সকলের যেতে হয় বলে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

( জীবনানন্দ দাশ)
নির্ণয়ের কন্ঠে হারানোর বেকুলতা গলা বেশ ধরে এসেছে তার । লাইন দুটো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো রিয়ান । অনুভব করছিলো সঙ্গি হারানো বেদনা ।
কাঁদছো ভাই ?
রিয়ানের প্রশ্নে বাকা হাসে নির্ণয় । এলোমেলো দৃষ্টি আবারো স্থির রাখে আকাশের পানে । বেলকনির রেলিং এ ধারে গা লাগিয়ে দাঁড়ায় ।
যদি এক সমুদ্র কাঁদি,
তাহলে কি তাকে ছুঁতে পারবো ।
নির্ণয়ের প্রশ্নে উত্তর জানা নেই রিয়ানের। কি জবাব দিবে ভেবেই শুষ্ক ঢোক গিলে নিলো সে ‌ । রিয়ানের অবস্থা ঠাওর করতে পেরে মৃদু হাসলো নির্ণয়। তবে তা রিয়ানের দৃষ্টি অগোচরে ।
আমি দাবার বোর্ডে সেই

আড়াই চালের ঘোরা
এমন ভাবে মন্ত্রী কে আঁটকে দিব।
মন্ত্রীর ছেঁড়ার ক্ষমতাও থাকবে না ।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে খান্ত হলো নির্ণয় । ঠোঁটে তাঁর রহস্যময় হাসি , অতীত টানছে , বড্ড খিদে তার । টানছে অতীত ,
আমার অস্তিত্বে মিশে থাকা প্রজাপতি
আমার আগমনে তুমি হবে বিলীন ।
–রোজ পাখি ।
ভাই ।

ধ্যানের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে নজর বুলায় রিয়ানের শুকনো মুখে । বেশ বড় এক দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে অন্তর আত্মা থেকে ।
দেশে ফিরবে ভাই ?
ফিরতে তো হতোই । অনেক হিসেব যে এখনো বাকি সেখানে ! এতো বছর অপেক্ষায় ছিলাম সঠিক সময়ে , হয়তো সময় টা আরো কিছুটা দেরিতে আসতোই তবে আমার মহারানী আমার উপরের চাল বাজি করছে রিয়ান ।
এদিকের সব !
ডোন্ট ওয়ারি ব্রাদার্স ! এভরিথিং ইজ ওকে ;
ভাই ! কখনো যদি সব সত্য তার সামনে আসে , কি হবে । সব ধ্বংস হবে ভাই ।
–যেখানে সব ধ্বংস কারিগর আমি ,
সেখানে ধ্বংসের ভয় আমার নেই !

অসম্ভব ঘুম এসে চোখ জোড়া দখল করে নিয়েছে রোজা । হাতে থাকা ল্যাপটপ এই কাজগুলো যেন শেষ হতে চাইছে না তার , চোখ জোড়াও ধীরে ধীরে লাল হতে শুরু করছে ।
বার হাই তুলছে । সময় দিকেও যেন খেয়াল রাখার ফুরসত নেই ।
দরজায় কড়া পড়তে এক ঝাক বিরক্তি এসে আবারও ভর করছে তার চেহারায় । পর পর কড়াঘাতে রাগে গজগজ করতে করতে উঠে দাঁড়ালো সে । হাতে থাকা ল্যাপটপ রকিং চেয়ারে রেখে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে ।
খট খট আওয়াজ এখনো বিদ্যমান । অপর পাশের ব্যাক্তিকে কিছু ক্ষণ সদরে আপ্যায়ন করবে ভেবেই দরজা খুলতেই। ধীরিম করে কিছু একটা পড়ার শব্দ। পেয়ে চমকে ওঠে রোজা দরজায় নজর দিয়ে মেঝেতে নজর বুলায় সে ।

কোমরে হাত রেখে মাটিতে বসে মাগো মা বলে কুকিয়ে উঠে ইরফাজ । হাসি থামিয়ে রাখা দায়, কোনো মতো নিজেকে সংযত করে এগিয়ে গিয়ে হাটু গেড়ে ইরফাজের সামনে বসে রোজা । কারো উপস্থিত টের পেয়ে এক বেক্কল হাসি দেয় ইরফাজ।
– আহা যে বেচারা ভেবেছিলাম তোমারে একটু সাবান ছাড়াই ধোলাই করবো , কিন্তু একি তুমি তো নিজে নিজে সবানে ধোলাই হয়েছো ।
যাক গে বাবা আমার আবার কষ্ট কম হলো ।
বলেই বাকা হাসলো রোজা । ইরফাজ ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে অসম্ভব সুন্দরীর পানে । এতো সুন্দর ও বুঝি কেউ হয় তার অজানা ছিলো । ঠোঁট নাকের মাঝবরাবর অসম্ভব সুন্দর এক তিল। ডান চোখের নিচে পাতায় এক কালো তিল । তিলের সৌন্দর্যৈ যেন চোখ জোড়া অসম্ভব সুন্দর তার দুধে আলতা গায়ের রং ।
মাসাআল্লাহ ।
মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই ঘোর কাটে ইরফাজের ।রোজা হাত গিয়ে তাকিয়ে আছে তার পানে ।
উঠে আসুন !

ইরফাজ হাত বাড়িয়ে রোজা হাত ধরবে তার আগেই হাত সরিয়ে নে রোজা আবার বেশ বোকা বনে যায় সে ।
এবার যেন নিজেকে আর কাটাতে পারলো না রোজা উচ্চ শব্দ হেসে উঠলো । ইরফাজের বেশ লজ্জা লাগছে একটা অল্পবয়সী মেয়ের কাছে বোকা বনে গেলো সে ভেবেই নিজেকে বলদ ভাবছে সে !
– ভাবার কিছু নেই আপনি সত্যিই বলদ ।
কথা শেষ করেই উঠে রকিং চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেল রোজা ।রেখে গেল একজোড়া বড় বড় চোখ ।
– তা কি কাজে এসেছেন তা বলুন ।
-আজলে ম্যাম আজকের প্রজেন্টেশনের ফাইলের জন্য এসেছি ।
ল্যাপটপ হাতে তুলে , টি টেবিলের দিকে ইশারা করে রোজা। পড়া থেকে উঠে ফাইল হাতে নেয় ইরফাজ নজর দে সামনে দাড়ানো রূপবতীর পানে । চোখ জোড়ায় ঘোর লাগে তার ।
-আর কিছু লাগবে ?
ল্যাপটপের সাটার অফ করতে করতে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রোজা ।
– না ম্যাম।
-আসুন তাহলে ।
অনুমতি পেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ইরফাজ । বুক ধুকপুক করছে তার হার্টবিট যেন অতি দ্রুত উঠানামা করছে তার

দরজা ভিজিয়ে আবারো রকিং চেয়ারে এসে বসে রোজা । তবে এবার আর হাতে ল্যাপটপ নয় খালি হাতে গা এলিয়ে দিয়েছে সে । চোখে ঘুম থাকা সত্ত্বেও ঘুম ধরা দিচ্ছে না দুচোখ তার ।
বুকের মাঝখানে ঠিক মাঝ বরাবর অসহ্য ব্যথা হচ্ছে তার । কিছু হারিয়ে ফেলার বেদনা পাশের টেবিলে রাখা ফোনটা হাতে এগিয়ে হাতে তুলে রোজা । ফোনের গেলারিতে ডুকতেই। নির্ণয় হাস্যোজ্জ্বল মুখের অসম্ভব সুন্দর এক ছবিতে দৃষ্টি স্থির হয় তার ।
অসম্ভব সুন্দর সেই হাসি , রাগি গোমরামুখো লোক টা যে হাসতেও পারে সেটা প্রমাণ করতেই ছবিটা তুলেছিলো সে । গালে টোল টা যেন তার হাসির সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে ।
-‌শুনেছি দেখলে আক্ষেপ বাড়ে
এমন কিছুর দিকে তাকাতে নেই !

তবে তোমার আমি বেলায় আমি মানি কি করে ।
ফোনের স্ক্রিনে জ্বলতে থাকা ছবিতে হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় রোজা । হঠাৎ মেসেজের টুং শব্দ কেপে উঠে ফোনটি । দুই ভ্রু কুঁচকে আসে রোজা । হাতে থাকা ফোনটির দিকে দৃষ্টি দিতেই চোখে আসে what’s app এ আসা অপরিচিত এক নাম্বার । প্রোফাইল এক রক্তমাখা হাতের ছবি ।
আগ্রহ নিয়েই মেসেজ বক্সে ঢুকে রোজা ।
কি দারুন ব্যাথার ঔষুধ তুমি
যে রোগে আক্রান্ত আমি ,
সে রোগের ঔষধ তুমি।
মেসেজ পড়তেই কপালে বেশ চিন্তার ভাঁজ পরে রোজা । বাংলাদেশে আসার পরে এটা তার নতুন নম্বর তবে এই নম্বরে কারো মেসেজ । আর ভাবলো না রোজা সঙ্গে সঙ্গে মেসেজে রিপ্লাই করলো সে ,

– কে আপনি ?
খুব কাছের কেউ যাকে তোমার মন খুঁজে।
যার বিহারে বুক পড়ে ।
যার অভাবে দুচোখে ঘুম হারানো ।
যাকে তীব্র থেকে তীব্র ভাবে চাইছো ।
আমি সে !
– মজা করছেন ?
একদম না ।
তাহলে ?

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২১

তোমাকে চাইছি ।
হাসির কয়েকটি ইমোজি পাঠায় রোজা ।
বুক কাঁপছে না ?
কাঁপছে তো ! তোমার বিরহে হার্টের রুগী হয়েছি জান ।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২২ (২)