প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৩

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৩
Zannat Xhowdury

দুপুর গড়িয়ে রাত ,
পাপ্পু কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে রোজা , পুরো বিকেল জুড়ে পাপ্পুর বেশ কিছু ড্রেস ব‌ই এইসব কিনে তার পর বাড়ি ফিরছে তারা। নিষ্পাপ ছোট মুখের পানে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে।
পাপ্পুর খেয়াল রাখতেই এক মহিলা মেড ঠিক করা হয়েছে । কাল সকাল থেকে আসবে , কপালে ছোট ভালোবাসা পরশ একে গায়ের চাদর টেনে দিলো রোজা
বেড টিবিলের উপরে থাকা বাইকের চাবি হাতে তুলে নিয়ে
আবারো তাকালো ঘুমন্ত ছেলেটির মুখের পানে । হাতে চাবির দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে গেলো ঘর ছেড়ে । গেটের কাছে আসতে নজরে এলো দোরোয়ান ঘুমে বিভোর অথচ পুরো রাত জাগার কথা তার । কোনো প্রকার রাগ না দেখিয়ে শান্ত ভয়েসে ডাকলো রোজা।

হামিদ‌ চাচা , চাচা ।
ফোঁস ফোঁস করে নাক ডাকার আওয়াজ । তবে নেই ডাকের সাড়া।
এবার বেশ কড়া কড়েই ডাকলো রোজা ।
চাচা আ আ আ
চমকে ধিকপিক করে উঠে দারোয়ান , চোর চোর ।
কোথায় চোর ?
সামনে কারো উপস্থিত টের পেয়ে ঘুম একদম পালিয়ে যায় হামিদের । চোখ কচলে বড় একটা হাই তুলে তরিঘরি করে উঠে দাড়ায় সে ,
আম্মাজান কিছু লাগবো আপনের ?
না চাচা , আমার ঘরে পাপ্পু ঘুমোচ্ছে , আমি কাজে বাহিরে যাচ্ছি একটু খেয়াল রাখবেন ওর । আমি ভোরের দিকে , ফিরে আসবো
আপনে কোন চিন্তা ক‌ইরেন না আম্মা , আমি খেয়াল রাখমু ।
আর কথা না বাড়িয়ে গেরেজ থেকে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় রোজা, কাজ শেষ করে কালকেই ঢাকা বেক করতে হবে তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রায় মাঝ রাত গাড়ির বেক সিটে বসে ফোনে কার রেসিং গেম খেলছে নির্ণয় । আর পাশেই আধসোয়া হয়ে ঘুমে ঝিমুচ্ছে রিয়ান এতো রাতে , এখানে বসে গেম না খেলে বাসায় নরম বিছানায় শুয়েও তো খেলা যেতো। বিড়বিড়িয়ে কথা গুলো বলে আবারো ঝিমতো শুরু করে রিয়ান।
কিছু বললি ?
সহসাই চমকে উঠে সে , শুষ্ক ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় ।
ইয়ে মানে ভাই , ক ক‌ই কিছু না তো !
তোর‌ কি কোন দিক দিয়ে আমাকে বয়রা মনে হয় , নাকি আমি কানে আঙ্গুল দিয়ে আছি ?
আ আসলে আমি বলছিলাম কি , এতো রাতে এখানে গেম খেলতে এসেছো , সামনেই দেখো কত বড় জঙ্গল যদি হিংস্র কোন ‌প্রাণী বেড়িয়ে আসে !
তোর কেন মনে হলো আমি এখানে গেম খেলতে এসেছি ?

– এখানে গাড়ি থামিয়ে , তুমি মোবাইলে গেম ছাড়া আর কোন কাজ করেছো বলে তো আমার চোখে পড়লো না ;
সাধে কি আর তোকে মাথা মোটা বলি ।
নিজের মাথায় হাত রেখে একবার পরীক্ষা করে নেয় রিয়ান , ক‌ই আমার মাথা তো ঠিকি আছে , আর আমি কিছু ভুল বলেছি বলে তো মনে হচ্ছে না ।
– ভাই প্লিজ বলো না এখানে কেন এসেছি আমরা
– আমার ব‌উকে নিতে ।
– মানে কি এই রাতে তাও আবার জঙ্গলের পথে ব‌উ কোথায় পাবে তুমি ? ওয়েট ওয়েট তুমি রোজ কে রেখে বিয়ে কবে করলে ,

– বাকা হাসে নির্ণয় , ঠোট গলিয়ে বাহিরের বেড়োয় না সেই হাসি , নিজেকে এটে নেয় শক্ত খোলস দিয়ে ।
হঠাৎ দূরে কোনো এক আলো গাড়ির কাচ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ নিচে বন্ধ করে নেয় রিয়ান‌। তবে একজনের দৃষ্টি এখনো স্থির সামনের পানে , শান্ত চোখ জোড়ায় নেই কোন রাগের আভাস , শিকারী চোখ জোড়ায় প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে,এই দূরে কালো শট ক্রপটপ সাথে ব্যাগি , মাথায় জোড়ানো হেলমেট , দূরে থেকে ছুটে আসা এক কালো হলুদ মিশ্রণের বাইকের উপর ।
বাইক যেন ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে সামনের পানে, তবে মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কালো পোশাক পরিহিত কতগুলো গার্ড । রানিং বাইক জোরে বেক কোশে ক্ষিপ্ত চোখে সামনের থাকা মানবগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে রোজা। সব কয়টা পুরুষ যেন অতিশয় লম্বা স্বাস্থ্যবান । মাথার হেলমেট খুলে বাইকের উপর রেখে কিছুটা আয়েশি ভঙ্গিতে বসে‌‌ সে ।
কি চাই এখানে ?

সকলেই নিশ্চুপ , কারো মুখেই যেন নেই কোনো কথা । মাথা নিচু করে সকলেই মাটির পানে তাকিয়ে রয়েছে ,
হোয়াট হ্যাপেন ! আমি কি দেখতে সুন্দর ন‌ই ? তোমরা আমাকে না দেখে মাটিতে তাকিয়ে আছো কেন ?
রোজার করা প্রশ্ন শুনে কাশি উঠে যায় রিয়ানের । সামনের মেয়েটা যে রোজা এটা সে কিছুক্ষণ আগেই বুঝেছে ,। নির্ণয় এখনো শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের পানে , তার চোখ জোড়া শান্তি অনুভব করছে যে, সামনে প্রেয়সীর মুখ পানে তাকিয়ে , হৃদয়ের সকল‌ অস্থিরতা যেন নিমেষেই মিলিয়ে গিয়েছে তার ।
গার্ডদের থেকে কোন‌ উত্তর না পেয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে নে রোজা। সামনের পানে চোখ স্থির রেখে নেমে দাঁড়ায় বাইক থেকে ।‌ সকলের দৃষ্টি এখনো মাটির পানে । এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় তাদের কাছে
কে পাঠিয়েছে তোমাদের , কি চাই ।

না , সবগুলোর মুখেই যেন কুলুপ এটে দিয়েছে কেউ , নিজের ধৈর্য্য যথাসাধ্য পরীক্ষা নিজেই নিচ্ছে রোজা । ‌
কি হলো কথা বলছো না কেন‌ কে …. দূর থেকে আসা পায়ের শব্দ কানে আসছে রোজার কথা গলায় আটকে গিয়েছে যেন এক এক করে পাশ‌ কেটে গার্ডরা সকলে , ওভার‌ কোট পরিহিত কেউ একজন এগিয়ে আসছে তার পানে , সব গার্ডরা দুপাশে ভাগ হয়ে গিয়েছে মুখে কালো কাপড় বাধা , চেনার উপয় নেই ।মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে এক গাড়ি দাঁড়ানো , তা সবে মাত্র নজরে এলো রোজার , দূরত্ব কাটিয়ে রোজার একদম নিকটে এসে দাঁড়ায় যুবক টি।
কে কে আপনি ?

নিশ্চুপ ছেলেটি । পা থেকে মাথা অবদ্ধি একবার নজর বুলিয়ে নিলো রোজা ,তবে চোখ জোড়া থেমে গেল যুবকের স্লিলকি এলোমেলো চুল গুলোতে । চোখ ছুঁই ছুঁই চুল গুলো বেশ অযত্নেই পড়ে রয়েছে । হাত এগিয়ে কিছুটা ছুঁয়ে দেয় রোজা , ঘোর লাগানো চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে রহস্য মানবের পানে ।
কে আপন…. ‌ পানির মতো কিছু মুখে পড়তেই চোখ বন্ধ ড়য়ে আসে রোজার ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে থাকে ঘুমের দেশে । পড়ে যেতে নিলেই হাত বাড়িয়ে আগলে নেয় নির্ণয় ! অশান্ত ঝড়তোলা বুকে জড়িয়ে নেয় তার পাখি কে‌।
আলতো হাতে তুলে নে কোলে । এতোক্ষণে পুরো ঘটনাই গাড়িতে বসে দেখছিলো রিয়ান , ঠোঁটে খেলে যায় তার মুসকি হাসি । রোজা কে কোল নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই একজন গার্ড এগিয়ে এসে খোলে গাড়ি দরজা । নির্ণয় বেশ যত্নেই গাড়ির বেক সিটে বসিয়ে দেয় রোজাকে ।

রিয়ানের‌ দিকে তাকাতেই শয়তানি হাসি দিয়ে ভ্রু জোড়া নাচায় রিয়ান । বিরক্ত এসে ঘিরে ধরে নির্ণয়ের মাঝে নিজেকে শান্ত রেখেই মুখে ফুটিয়ে তোলে মিষ্টি এক হাসি , নাটকীয় ভঙ্গিতে বলতে থাকে
রিয়ান শশুরের ছেলে আমার , তুমি দয়া করে সামনের সিটে বসো ভাই !
হয়নি আর একটু করুন স্বরে প্লিজ ভাই ?
তোর টুনটুনিতে দিবো শালা , নাম গাড়ি থেকে ।

কি ভাই তুমি কি ভেবেছো ধমক দিলেই আমি আমার বোন কে তোমার কাছে রেখে নেমে যাবো ।
কাভি নেহি ! ওটি একদম হচ্ছে না ভাই ।
ও ও তাহলে কি আমার আর তো বোনের বাসর দেখবি বলে ঠিক করে রেখেছিস? তুই চাইলে দেখতেই পাড়িস তবে রোজ জেগে উঠলে তাকে কি বলবি ভেবে রাখিস ।
সে তুমি যাই বলো না কেন আমি নামছি না ।
ঠোটে শয়তানি ‌, হাসি রেখে প্যান্টে জিপারে হাত রাখে নির্ণয় । রিয়ান এখনো‌ বেশ এক‌ই ভাবে গাড়িতে বসা।
তো তাহলে শুরু করা যাক শালা বাবু ?
কথা শেষ করেই জিপার এক টানে খুলে ফেলে সে । রিয়ানের চোখ জোড়া গোল গোল হয়ে যায় । এখনি হয়তো কটোর থেকে বেড়িয়ে এলো‌ বলে।

ইয়ো , ছিঃ ভাই করছো টা কি ?
তোর বোনের সাথে বাসর করছি !
এখনো নামবি নাকী বাকিটা,,
এক লাফে গাড়ি থেকে নেমে যায় রিয়ান এখানে থাকলে যে আরো কত কি হবে ভেবেই , মাথা ঘুরছে তার ।
জিপার উপরের দিকে লাগিয়ে হো হো হেসে উঠে নির্ণয় , পানসে মুখে গাড়ির সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে গিয়ে বসে রিয়ান । রাগে গজগজ করতে করতে গান ছাড়ে গাড়িতে …

আমি দুঃখে ম‌ইরা যাই,
আমি লজ্জায় ম‌ইরা যাই
আমি দুঃখে ম‌ইরা যাই,
আমি লজ্জায় ম‌ইরা যাই
আমার সাথে প্রেম করতে চায়
শেফালীর জামাই
আহঃ আহঃ উফঃ

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২২ (২)

বেক সিটে নির্ণয় করা আওয়াজে মেজাজ যেন আরো বিগরে দেয় রিয়ানের, তবে মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না সে । অপর দিকে ব্লুটুথ কানেক্টেড এর মাধ্যমে রিয়ানের সিলেক্ট করা গান নিমেষেই পাল্টে দেয় নির্ণয় , রিয়ান বেক সিটের দিকে তাকাতেই টুক করে চোখ মেরে দিয়ে গানের সাথে গলা মিলিয়ে গান ধরে নির্ণয় ।
খাঁ খাঁ খাঁ আমায় চুসে চুসে খাঁ
আমায় গিলে গিলে খাঁ
খাঁ খাঁ খাঁ

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৪