প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৫
Zannat Xhowdury
বাগানবাড়ির গেটটা ধীরে খুলল। চারদিক নিস্তব্ধ—গাছের পাতাও নড়ছে না। শুধু হেলমেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোজা। চোখে তার চিরচেনা কড়া আলো ,যেটা কারও অপেক্ষা করে না।
ব্ল্যাক ম্যাট ফিনিশে ঢাকা KTM Duke বাইকটার ইঞ্জিন গর্জন করে উঠল, একরাশ নীরবতা ছিঁড়ে ফেলে।
হেলমেট পড়ে ,গিয়ার পাল্টে দিল, ক্লাচ ছেড়ে দিল—আর বাইকটা ছুটে চল নিজ গন্তব্যে। পেছনে বাগানবাড়ির স্নিগ্ধ আলো মিলিয়ে গেল, আর সামনে জেগে উঠল শহরের কংক্রিটের গহ্বর।
শহরের ভেতর দিয়ে যখন বাইকটা ঢুকল, তখন চারদিকের ধরিতে বেশ কড়া রোদ।
রোজার চোখে তখন শুধু একটা জায়গা—তার ফ্ল্যাট। শহরের মাঝেই একটা পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট, বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু ওখানেই রাখা তার গিয়ার, অস্ত্র, ফাইল, স্কিম্যাটিকস—একটা যুদ্ধের ঘর।
বাইকটা দড়াম করে থামল বিল্ডিংয়ের নিচে। রোজা হেলমেট খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে নিঃশব্দে সিঁড়ি ভাঙতে লাগল।
চাবি দিয়ে রুমের প্রবেশ করতেই নজরে এলো নাদুসনুদুস বাচ্চা ছেলেটি যে কি না আপাতত গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিরে !
নিশ্চুপ পাপ্পু , মুখে কথা নেই তার !
রোজা এগিয়ে গিয়ে বসে পাপ্পুর কাছে। মুসকি হাসি দিয়ে হাত রাখে মাথায়।
কোথায় গিয়েছিলে তুমি ?
কাজ ছিল ; খেয়েছিস ?
মুখ গোমড়া রাখে পাপ্পু । হয়তো খায় না নি সে ! বাচ্চাটার মুখ পুরো শুকনো লাগছে , রোজা এক নজর তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় ।
লম্বা শাওয়ার নিয়ে রোজা যখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল, তখন তার শরীরটা যেন নতুন করে জেগে উঠেছিল। ভেজা চুলগুলো কাঁধ ছুঁয়ে পিঠ , পিঠ ছুঁয়ে কোমড় , কোমড় ছুঁয়ে হাঁটুতে নেমে এসেছে, প্রতিটি স্রোতের ফোঁটায় যেন আলো ধরা পড়ে।
হালকা ভিজে টিশার্ট গা ঘেঁষে থাকা গড়ন যেন আরও স্পষ্ট—তাঁর পেশীবহুল, প্রশিক্ষিত শরীর যেন যুদ্ধের ঠিক আগের মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চোখদুটো জলপরা আয়নার মতো টলমল করে, ভ্রু দুইটিতে কঠিন দৃঢ়তা—একজন এজেন্ট, একজন যোদ্ধার আত্মবিশ্বাস।
তার গালের পাশে কয়েকটা ভেজা চুল লেগে আছে—কিন্তু সেই এলোমেলো ভাবটুকুও যেন সৌন্দর্যের অংশ। তার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত কঠিন শীতলতা, যেন সে ঠিক এখনই ছুটে যাবে একটি গোপন মিশনে, যেখানে ভুলের কোনো জায়গা নেই। গোটা শরীরে একধরনের ঘনীভূত উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে, যা তাকে দেখে কারও বুঝতে বাকি থাকে না—এই মেয়েটি শুধুই সুন্দরী নয়, সে বিপজ্জনক।
ফোন হাতে খাবারে অর্ডার করে দেয় সে।
লম্বা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রোজা চুপচাপ নিজের চুল শাকাচ্ছিল। হোয়াইট টিশার্ট, যার নিচে ভেজা ত্বকের উষ্ণ আভা ফোঁটাফোঁটা জেগে আছে। লাইটের মৃদু আলোয় তার মুখের ছায়া আর আলো মিলে এক অনিন্দ্য বিমূর্ত সৌন্দর্য তৈরি করেছে—যেন একটি নিঃশব্দ আগুন জ্বলছে।
সে আস্তে আস্তে চুলগুলোকে হাত দিয়ে উলটে নিয়ে শাকাতে শাকাতে আয়নায় নিজের চোখের দিকে তাকায়। ভেজা চুলের গন্ধ, শরীর থেকে সদ্য শাওয়ারের পরের ঘ্রাণ, সব মিলিয়ে একটা হিপনোটিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি চুল যখন শুকিয়ে ঢেউ খেলানো রূপ নিচ্ছে, তখন রোজার মুখে একধরনের ঘন নীরবতা, যা রোমাঞ্চকরও, ভয়ানকও।
তার চোখে চোখ পড়লে মনে হয়, এই মেয়েটির ভেতর কোনও কষ্ট লুকানো, অথবা কোনও আগুন। সে চুল শাকাতে শাকাতে যেন নিজেকেই প্রস্তুত করছে “আরও একবার, আরেকটি কঠিন রাতের জন্য, যেখানে তার সৌন্দর্য, বুদ্ধি আর গোপন অস্ত্র—সবই একেকটা হাতিয়ার।
রোজার চুল শুকাতে থাকে, আর তার ভেতরের নারীকেও যেন ধীরে ধীরে এক যুদ্ধের সাজে প্রস্তুত করা হয়।
হঠাৎ দরজায় কড়া পড়ে । ড্রেসিং ছেড়ে উঠে দরজা খুলে রোজা, পাপ্পু বিছানায় বসে আকাবুকি করতে ঢেড় ব্যস্ত ।
দরজা খুলতেই খাবার হাতে এক মধ্যে বয়স্ক লোক, রোজা খাবার হাতে নিয়ে বিদায় দেয় । এগিয়ে যায় পাপ্পুর কাছে ।
পুরো প্লেট খাবার খাইয়ে দেয় পাপ্পু কে ,খাবার শেষ করেই নিজেকে বিশ্রাম দিতেই গা এলিয়ে দেয় বিছানায়
সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ, উত্তেজনা, টেনশনের পর একটা নিঃশ্বাস ফেলার মতো মুহূর্ত খুঁজছিল সে। বিছানার তুলোর মতো নরম গদিতে শরীরটা যেন একটু হালকা হয়ে এল। চাদরটাও এলোমেলোভাবে পড়ে ছিল, এক পাশে রাখা মোবাইল, আরেক পাশে আধখানা ভেজা চুল ছড়িয়ে আছে বালিশে।
সে চোখ বন্ধ করল। পাখার নিচে হালকা বাতাসে চুলগুলো নড়ে উঠছে, আর ভিতরে ভিতরে একটা ক্লান্তি ধীরে ধীরে ঝিম ধরে নামছে শরীরের ওপর।
ঠিক সেই সময়েই— ট্রিং… ট্রিং…
ফোনটা বাজতে শুরু করলো ঘুম চোখে ফোন হাতে নেয় রোজা রিসিভ হতেই ওপর পাশে,
“এজেন্ট রোজা, মিশন অ্যাক্টিভেট হয়েছে। আপনি এখনই হেড অফিসে রিপোর্ট করুন। কোডনেম—অপারেশন শ্যাডোচিপ।”
রোজা কোনো কথা না বলে ঘুম ছেড়ে উঠে বসলো । সে জানত, তার ডাক পরছে মানেই নতুন কিছুর সূচনা —তার মানে কেউ কাঁদছে, কেউ নিখোঁজ, কেউ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
দুপুর ৩টা ..৪৫
হেড অফিসে ঢুকতেই ডিরেক্টর রফিক তার দিকে তাকালেন।
— “তোমার মিশন দিনাজপুরের উপকণ্ঠে। একটা পুরোনো কলকারখানার ভিতরে চালানো হচ্ছে এক অবৈধ ক্যাসিনো—জুয়া, মাদক আর… শিশুপাচার। প্রতিদিন নতুন বাচ্চা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু অনুমান করছিলাম এতদিন, আজ প্রমাণ হাতে এসেছে।”
রোজা কাগজপত্রের দিকে না তাকিয়ে বলল:
— “লিডার কে?”
জানা নেই ,মিশন পূর্ণ হলেই জানা যাবে ।
হয়তো বিদেশে কেউ লাইট টানছে বাংলাদেশ থেকে ঘুরি উঠছে ।
এমন উত্তরে জন্য প্রস্তুত ছিলো রোজা । এর আগে যাদের ধরা হয়েছিল কেউ মুখ খুলেনি বলেই মরতে হয়েছিল তাদের।
রোজার ঠোঁট কাঁপল না, কিন্তু চোখটা লালচে হলো। — “আমার হাতে যদি একটাও বাচ্চা ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলে ওদের রাজ্য আগুনে পুড়িয়ে দেব।”
ডিরেক্টর নিষ্ফল চাহনি ও ঠাণ্ডা গলায় বললেন,
— “তোমার সাপোর্ট টিম থাকবে না। এই মিশন—সলো। কোনো ব্যাকআপ নেই।”
এগিয়ে আসে প্রেম , কিছু বলার জন্যে মুখ খুলবে , তার আগেই থামিয়ে দেয় রফিক । ইরফাজ বেশ অবাক , একটা মেয়েকে পুরো মিশনে দায়িত্ব, একটু বেশি হয় ব্যাপারটা
রোজা হেসে বলল, নারী ভেবে ভুল করবেন না স্যার ,নারী হতে পারি ভীতু নই ,আমি সেই কান্নাগুলো নিয়ে যাব, যেগুলো ওরা শুনতে পায় না। আমি যাচ্ছি। আর ফিরব ওদের রক্ত দিয়ে।”
দিনাজপুরের এক প্রান্তিক গ্রাম। বাইরে থেকে সাধারণ মনে হলেও গভীর রাতে এই এলাকাটাই রূপ নেয় এক আন্তর্জাতিক শিশু পাচার ও ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের হাব-এ।
পুরনো একটা চালকল যেটা এখন আর চালের কারখানা নয়, বরং নিচের তিন তলা ভূগর্ভস্থ বাংকারে চলে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নিলাম।
স্পেশাল অপারেশন অফিসার, যার কাজ ছায়ার মতো ঢুকে পড়া, তথ্য জোগাড় করা, আর প্রয়োজনে গুলি চালিয়ে পৃথিবীর মুখ থেকে অপরাধ মুছে ফেলা।
রাত্রি ১:৪৫AM
রোজা টিকরুলে ঢুকে। গায়ে সাদাকালো সালোয়ার, মাথায় ওড়না একজন নিরীহ নারীর ছদ্মবেশে। কোমরে লুকানো ম্যাগনেটিক বোমা, কানে ইয়ারপিস—কোডওয়ার্ড: “আসমান”।
হঠাৎ ইয়ারপিসে আওয়াজ , প্রেমের কন্ঠ
“রোজা, ভিতরে ৩৭ জন শিশু, ২৯ জন ক্লায়েন্ট, ও ৫ জন heavily armed গার্ড। ভিতরে ঢুকেই EMP ডিভাইস একটিভ করবে।”
চালকলের পেছনের গুদামের নিচে গোপন লিফট। রোজা চাবি ব্যবহার না করেই ঢুকে পড়ে, EMP একটিভ করে পুরো ক্যাসিনো অন্ধকার করে ফেলে। গেটের সামনে দুই গার্ড তখনও বুঝে ওঠার আগেই,
প্যাঁক! প্যাঁক!
রোজা নিঃশব্দে নামিয়ে ফেলে। ভেতরে ঢুকে দেখে—দেয়ালে চীন, থাইল্যান্ড, দুবাই, কলকাতা—এসব শহর
রাত ২:৪০AM ভূগর্ভস্থ বাংকারে গোলাগুলির আওয়াজে কেঁপে ওঠে দেয়াল। রোজা লড়ছে একা পেছনে গুলি, সামনে ধোঁয়া। তিনটা ম্যাগাজিন শেষ, শরীর কাঁপছে, নিঃশ্বাস ভারী। সে আশ্রয় নেয় একটা লোহার কনটেইনারের আড়ালে।
তখনই একটার পর একটা স্নাইপার শট—
ফাট! ফাট!! ফাট!!!
তাকিয়ে দেখে দূর থেকে তিনজন শত্রু স্নাইপারে উড়ে গেছে। রোজা কপাল থেকে রক্ত মোছে, তাকিয়ে দেখে এক অচেনা গাড়ি।
Black Prado।
গাড়ির দরজা খুলে নামে এক যুবক, কালো শার্ট, রোলড আপ হাতা, চোখে তীব্র রাগ, ঠোঁটে সিগারেট , রিভালবার হাতে এগিয়ে আসছে নির্ণয়।
“… তোকে কেউ ছোঁয়ার আগে আমি মরবো রোজ পাখি ।”
রোজা অবাক, কাঁপা গলায় বলে
“তুমি এখানে কেন?”
নির্ণয় গলা কাপছে তবুও ধীর গলায় উত্তর দেয়
তুই একা মরলে , আমি বাঁচি কিভাবে !
নির্ণয় পকেট থেকে বের করে একটা ছোট EMP grenade, ছুঁড়ে মারে গার্ডদের দিকে। সিস্টেম বন্ধ—ক্যামেরা অফ। তারপর একে একে—
ট্যাং! ট্যাং! ট্যাং!
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৪
তিন গার্ড একে একে পড়ে যায়। রোজা আর নির্ণয় পেছন ঠেকে ঘর থেকে ঘরে এগোয়। মাঝে মাঝে নির্ণয় বলে—
“এমন সাহস কার যে তোকে ছুঁয়েছে, রোজ? আমি তাদের বংশপুঞ্জি মুছে ফেলবো।”
ভরকে যায় রোজা , কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকায় মানুষ টির দিকে , সে আদতেও ভেবে পায় না মানুষ টি পাগল নাকি
উফফ থামো তোহ “আমার মিশনে তুমি কেন এলে ? তুমি তো সিভিল।”
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে নির্ণয় সেই চিরচেনা হাসি , যা চক্ষু আড়ালে থেকে যায় রোজার ।
” তোর কিছু হয়ে গেলে , আমি কাকে ভালোবাসবো, বল?”