প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭
Zannat Xhowdury

নির্ণয়ের কথা শুনে কাশি উঠে যায় রোজার । খুক খুক করে কাশতে থাকে সে । নির্ণয় সামনে থাকা পানির গ্লাস দ্রুত হাতে তুলে তাকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।
রোজার কাশিতে দাঁড়িয়ে থাকা রিধিমা এগিয়ে ফু দিতে লাগে রোজার মাথায় । কাশি প্রায় কমে এসে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে রিধিমা ।
উফ কি যে করিস না তুই ?
ওসব কথা বাদ , আমরা ঢাকা কবে ফিরছি ব্রো ?

রিধিমার কথার মাঝে সকলে টয়লেট করে ভালো করে ওয়াস না করা হাত ঢুকিয়ে দিলো রিয়ান ।
নির্ণয় নিশ্চুপ কোনো কিছুর উত্তর করার বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই তার। নিজের মতো ভাতে প্লেটে ভাত মাখিয়ে লোকমা তৈরি করছে সে । প্লেট থেকে এক লোকমা ভাত তুলে রোজার মুখের সামনে ধরে ।
নির্ণয়ের খামখেয়ালি বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে রোজা।
তুই ওভাবে তাকালে আমার কেমন কেমন লাগে ..!
ভরকে যায় রোজা , এক টেবিল মানুষের সামনে এতো লজ্জা ।
ইচ্ছে করছে এখনি টেবিলের তলে ঢুকে যেতে ।
— টেবিলের তোলে যেতে হবে না , আমার বুকে আয় এটা অল‌ওয়েজ তোর জন্য ফাঁকা ।
এবার যেন খাবার টেবিলে হাসির রোল পড়ে যায় । বেচারা পাপ্পু আগা মাথা কিছুই বুঝে‌না তাই মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে । সকলে হাসির মাঝেও একজন ভীষণ গম্ভীর ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ব্রো !
বল শুনছি ?
আমরা বেক কবে করছি ?
রিয়ানের কথায় টন টেনে ধরে তৃধা । আশকারা দিয়ে বলে,
হ্যা এ্যানসি, আমরা রাজধানী কবে ব্যক করবো বল তো , এই ভুতুড়ে এরিয়া থেকে এবার বেড়োনো উচিত ভাই ! এখন তো বার্বিও ডল ও চলে এসেছে। এখন হয়তো ফেরা উচিত আমাদের
মুখ ভর্তি ভাত চিবোতে চিবোতে হতে সাহায্যে তৃধাকে থামাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে রোজা ।
দ্রুত মুখে অবশিষ্ট ভাত গিলে বলতে লাগে সে
আমাকে ছাড়াই প্লান করো আমি ফিরছি না …

খেকে ওঠে রিয়ান । আগুনে ঘি ঢালার মতোই রোজার কথায় ছ্যাচ করে ওঠে রাগি স্বরে বলে
কোনো কথা শুনতে চাইছি না , তুই বাড়ি ফিরবি আমাদের সাথে।
কিন্তু ভাইয়া , এভাবে যাওয়া পসিবল না ..!!
আর ডিপার্টমেন্টে একটা নিয়ম আছে যার বাহিরে আমি যেতে পারবো না । আমার কাজ এখনো পুরো শেষ হয়নি
নিকুচি করি তোর চাকরির ..? এই মেয়ে এই , তোরে চাকরি করার পরমিশন কে দিয়েছে ?
ভাই..!

ডোন্ট টক রোজ ! তুই বাড়ি ফিরবি
দু ভাই বোনের কথার মাঝে সকলেই যেন দর্শক । করো মুখে নেই কোনো কথা । নির্ণয় নিজেও চুপচাপ বসে রোজা কে খাইয়ে বেচে যাওয়া অবশিষ্ট খাবার গুলো তুলে খাচ্ছে । একদম শান্ত মুখে নেই কোনো রাগের আভা ।
দরজার ঠক ঠক আওয়াজে খাবার টেবিলের নিস্তব্ধ পরিবেশে ব্যঘাত ঘটে রিধিমা দরজা খুলতে যাবে , এমন সময় খাবার ছেড়ে দ্রুত উঠে আয়ান গিয়ে দরজা খুলে ।
দরজা খুলতেই হনহনিয়ে বাসায় প্রবেশ করে প্রেম। আশেপাশে কোথাও তাকানোর হয়তো বিন্দু পরিমাণ সময় নেই তার বা হয়তো খেয়াল করতে চায়নি ‌। এগিয়ে এসে দাঁড়ায় রোজার সামনে
Are you okay মেহরিন ?

শুষ্ক ঢোক গিলে রোজা , এমন সময় প্রমকে এখানে একদমই আশা করেনি সে । নিশ্চুপ রোজা
রোজার চুপ থাকা যেন প্রেমের মনে আরো জালা ধরিয়ে ছাড়ে ।
মেহরিন কথা বলো ?
প্রেম এগোতে যাবে ঠিক এমন সময় হাতের শক্ত পোক্ত বাঁধনে আটকে যায় তার। । হাতের মালিকের দিকে তাকাতেই প্রেমে চোখ স্তব্ধ হয়ে নির্ণয়ের উপর যার নজর এখানো খাবার প্লেটে স্থির । ভাতের শেষ লোকমা মুখে তুলে , নজর ঘুরায় প্রেমের দিকে ।
আরে আরে ভায়রা ভাই ,
ছোঁয়া ছুয়ি খেলবে বুঝি ..??
তা ওদিকে কেন আমায় ছুঁয়ে দেও ।
তুমি চাইলে আমার ওটাও ছুঁতে পারো ..!!
But don’t touch my queen ..!!

এবারো যেন বুকের মাঝে ধুক করে ওঠে প্রেমের । নির্ণয় চৌধুরীর
” my queen ” শব্দ দুটো যেন তার মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে দেয় । শ্রবণ ইন্দ্রিয় জ্বালা শুরু করে, বুকে কোথাও হাহাকার করে । কিছু হারানো বেদনা , প্রেম অসহায় চোখে তাকায় রোজার দিকে । তবে মনোহরণীর চোখ জোড়া প্রেমের হাত ধরে থাকা সুদর্শন পুরুষেই আবদ্ধ। চোখ কণা চিকচিক করে প্রেমের
হেই ব্রাদার্স , লুক অ্যাট মি ?
রোজার থেকে চোখ সরিয়ে আবারো নির্ণয়ের দিকে তাকায় প্রেম। চেহারায় বিরক্তি তবে মুখে তাচ্ছিল্য ,
পাখিরে খাঁচায় জোড় করে বন্ধ করলেই
পাখি খাঁচার হয়ে যায় না !

হো হো করে পুরো ফ্লোর কাঁপিয়ে হাসে নির্ণয় যেন এর থেকে মজার আর কিছুই নেই তার কাছে । হাসি থামাতেই চোখে হিংস্র তার প্রতিফলন
ওর জন্মটাই আমার নামে
ওই যে উপরে একজন বসে চাবি ঘুরাচ্ছে ওনি ,ঠিক ওনি
আমার জন্য পাঠিয়েছে ওকে । আর নির্ণয় চৌধুরীর জিনিস মানেই , সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিস অমূল্য রত্ন ।
প্রেম কিছু বলতে মুখ খুলবে ঠিক তার আগেই রিয়ান এগিয়ে এসে হাত রাখে প্রেমের কাঁধে
আরে অফিসার , বাদ দেও এসব ।
কি কাজে এসেছো সেটা বলো ?
প্রেম রিয়ানের হাত কাঁধ থেকে নামিয়ে আবারো তাকায় রোজার মুখে । প্রেম তাকাতেই মাথা নামিয়ে নেয় রোজা । ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের এক হাসি হাসে প্রেম । পকেট থেকে খাম জাতীয় কিছু বের করে এগিয়ে দেয় রোজার দিকে ,

Take it .
তবে রোজা হাত বারানো আগেই চিলের মতো ছো মেরে খামটি নিয়ে নে রিয়ান । খুব বেশি আশ্চর্য হয় না প্রেম তার নজরে এখনো রোজা শুকিয়ে যাওয়া মুখ ।
তোমাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে তোমার ইনজুরি ও সুস্থতার তাগিদে ।
Sick leave দেওয়া হয়েছে ৬ মাসের জন্য । ৬ মাস পর আবারো জয়েন্ট তোমার । এই মিশনের পুরো দায়িত্ব ডিপার্টমেন্ট আপাতত স্থগিত রাখছে ।
চোখ দুটো গোল গোল হয়ে যায় রোজার । রসগোল্লা মতো করে তাকিয়ে রয় প্রেমের দিকে ।
হ্যা হ্যা অনেক হয়েছে এবার আসুন তো মশাই আপনি ..!!
রিয়ানের কথার পিটে আর কোনো‌ কথাই বলে না প্রেম আড়চোখে তার হৃদয়নাষিনী কে দেখে নিয়ে উল্টো ঘুরে স্থান ত্যাগ করে সে ।

তার ?
প্রেমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসে তৃধা । হৃদয়ে ফুটতে সদ্য কলি গুলোতে হালকা স্পর্শে দোলাতে থাকে সে । প্রেমের আগমনের পুরো সময় জুড়ে‌ই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তৃধা ।
প্রেম যেতেই , রোজা হাত ধরে টানটানতে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে নির্ণয় ঘটনা এত দ্রুত হ‌ওয়ায় চমকে যায় সকলে । রিয়ান নিজেও ভরকে যায় । কিছু করার আগে রুমে প্রবেশ করেই দরজা আটকে দেয় নির্ণয় । রিয়ান ছুটে এসে ধাক্কা দিতে লাগে দরজায় ।
ব্রো ওপেন দ্যা ডোর প্লিজ ।
রোজ কে কিছু করবে না তুমি ব্রো !
রুমের ভেতর থেকে নেই কোনো সাড়া আসেনা কোনো কথার আওয়াজ। রিধিমা এসে দাঁড়ায় দরজায় সামনে ।
রিয়ান !
রিধিমার ডাকে তার দিকেই ক্ষিপ্ত চোখে তাকায় রিয়ান। বিলিভ মি রিদি তোর ভাই যদি আমার বোনে উপর কোনো টর্চার করে

“I swear ” আমি তোর সাথে এমন কিছু করবো যা তোদের কারোর জন্য ভালো হবে নাহ ।
থমকে যায় রিধিমা বুক দুরদুর করছে তার ।
ভাই তোরা ওদের প্রাইভেট টাইমে বেঘাত না ঘটিয়ে এগিয়ে আয় ‌। যাওয়া প্লান করি । অপূর্বের ডাকে রিধীমাকে রেখেই চলে যায় রিয়ান
বদ্ধ ঘরে জানালায় পর্দা নড়ে না। বাতাস নেই। শুধু নিঃশ্বাস—
একটা ধীর, আরেকটা ধ্বংসের মত ভারী।
দুজন দাঁড়িয়ে আছে জানালার গা ঘেঁষে।
চোখ লাল।
মুখে একটা কথাও নেই।

শুধু দাঁড়িয়ে আছে। হাতদুটো মুঠো। বুকের ভেতর কেমন আগুন চেপে রাখা শব্দ।
ভয়ে এলোমেলো, চুলগুলো গাল ছুঁয়ে পড়ে আছে। ঠোঁট কাঁপে না, কিন্তু চোখ… চোখ দুটো নরম না, ভাঙা।
নির্ণয় ক্ষিপ্ত চোখে এগিয়ে আসছে রোজার দিকে ,মুখ শান্ত তবে নজর বলে দিচ্ছে মনে কি চলছে তা । গলা কাঁপছে রোজার
এভাবে কাছে আসবেন না দোহাই লাগে আপনার..!
এগিয়ে আসছে নির্ণয় থামবার নাম মাত্র নেই , রোজা গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে । চোখ নিচে বন্ধ করে নেয়।
বাঁকা হাসে নির্ণয় । এগিয়ে এসে সম্মুখে দাঁড়ায় রোজার সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে থাকে ভীত মুখের পানে ।
পুরো দুনিয়ায় তুই সাহসী আমার কাছেই কিসের এত নাটক তোর , এত নেকা সাজিস কেন?
নিশ্চুপ রোজা মুখ ফুটে কোনো উত্তর করে না সে । নিজকে সংযত রাখে। পুরুষের রাগের কাছে নারী জেদ বৃথা , আর তাই মুখে কুলুপ এঁটেছে সে ।

—লুক !
চোখ আরো খিচে বন্ধ করে নেয় রোজা ,
“রোজ পাখি”
পিটপিট করে চোখে পাতা খুলে রোজা , নির্ণয় ঠিক তার মুখে সামনে ।
—তোর স্পর্শ ছাড়া আমি শান্ত হ‌ই না , ছুঁয়ে দে আমায়..!! ” Touch me rose ”
রোজা নিশ্চুপ শ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছে সে । কোথাও
পাখির ডাক নেই, গ্রামের সাঁঝ নামে না,
এই ঘরে শুধু দুটো মানুষ।
রোজা চুপ থাকাই যেন বিপদের সংকেত ধৈর্যের সাথে পেরে ওঠে না নির্ণয় । আবারো মস্তিষ্কে আগুন ধপ করে জ্বলে ওঠে

“I say touch me rose”
রাম ধমকে আবারো চোখ বুঝে নেয় রোজা , চোখের কোনে এক ফোটা পানি । রোজা কি কাঁদছে , হ্যা কাঁদছে প্রিয় মানুষের রাগেও মেয়েরা কাঁদে তাদের , সামান্য ধমকে কাদে । সারা দুনিয়ার কাছে শক্ত থাকা মেয়েটাও কারো কাছৈ নিজের বাচ্চা মোঃ গুলো প্রকাশ করে । একটা নিজস্ব মানুষ মানেই শান্তি ।
রোজা চোখের পানি , নির্ণয় বুকের রক্ত ক্ষরণ করে , ক্লান্ত নির্ণয় নিজেকে হাত স্টিলে দেয়ালে কয়েক বার পাঞ্চ মারে । এবার বেশ শব্দ করেই কাঁদে রোজা ।

থেমে যায় নির্ণয় , চোখে মুখে ঘোর বিরক্তি নিয়ে বলে
শালার নারী জাত—সব সর্বনাশের মুল! মিষ্টি গলা, ভেজা চোখ, আর কোমরের দুলুনি দিয়া প্রথমে কাছে টানে, তারপর বুক ফাটায়। বিশ্বাস করলেই শেষ—এই জাত শুধু ভালোবাসা নয়, রক্ত খায়।”
এত কঠিন কথা আর সহ্য হচ্ছে না রোজা আচমকাই ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্ণয়ের বুকে । জোড়ে জোড়ে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগে সে। একটু ছোঁয়া , হ্যা সামান্য একটু ছোঁয়াই যেন ক্ষিপ্ত বাঘ কে শান্ত করতে যথেষ্ট । ‌মনে জ্বলতে থাকা দাবানল ঠান্ডা করতে যথেষ্ট। নির্ণয় দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় রোজা ,
ইস্ যদি পারতাম তোরে বুক চিরে আমার হৃদয়ে মাঝে ঢুকিয়ে রাখতাম , যদি পারতাম তোরে লোহার খাঁচায় বন্দী করতাম । পরিনি কিছুই পারি নি ।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৬ (৩)

আমি ভালোবাসি ভীষণ রকমের ভালোবাসি ।
অসম্ভব ভালোবাসি , আমার কাছে ভালোবাসা মানে তুই ।
তোর সব , তোর বডি স্মেল তোর বিউটি স্পর্ট এভরিথিং ।
You are only mine .
নিজেকে আরো নির্ণয়ের বুকের মাঝে চেপে ধরে রোজা ।
ফিরতে হবে !
নির্ণয়ের কথায় মাথা নারে রোজা । তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে নির্ণয় , মনে সেই পুরোনো হিসেবের খাতা খুলে নতুনে সুচনা করার নিখুঁত পরিকল্পনা।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭ (২)