প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭ (৩)
Zannat Xhowdury
ফোন কাটতেই বাঁকা হাসে নির্ণয় , ঠোট গলিয়ে উপচে পড়া সেই হাসি আড়াল হয় না রোজার চোখে । চোখে মুখে যেন অদ্ভুত এক রাগ তার ,
আপনি ভাইজানের সাথে এইসব কি কথা বললেন ?
কি আবার যা শুনতে পেয়েছিস তাই হ..!!
আপনার কি বিন্দু পরিমাণ লজ্জা নেই , এতো নির্লজ্জ কিভাবে হতে পারেন ?
যা বাবা আমি আবার কি করলাম । এই জ্যামে কি মাথা তাড় একটু ছুটে গিয়েছে ।ওয়েট ওয়েট আমি ঠিক করে দিচ্ছ ।
ছুঁবেন না আমাকে ;
যাহ ছুঁয়ে কোথায় দিলাম আমি তো , তাড় ঠিক করতে চেয়েছিলাম।
এতো খেপেছিস কেন কি প্রবলেম , খিদে পেয়েছে খাবি কিছু ?
বিষ খাবো , দেবেন ?
এখন নেই তবে কিনে দিবো ,এখন কি খাবি বল ।
ঠোঁট হালকা কাঁপছে রোজার ,কন্ঠ ধরে আসছে , চোখে পানি চিকচিক করছে । বারবার নজর দিচ্ছে জানালার বাইরে , ধীরে ধীরে চোখ জোড়া লাল হতে শুরু হয়েছে ।
নির্ণয় বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থাকে রোজার মুখে , শান্ত চোখ জোড়ায় অদ্ভুত এক রাগ এসে পাড়ি জামায় নির্ণয়ের চেহারায় , ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যান্ডেজ হাতে টেনে রোজার মুখ ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে ।
কি সমস্যা ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিশ্চুপ রোজা , চিকচিক চোখে তাকিয়ে আছে নির্ণয়ের চোখ জোড়ায় । অস্থিরতা বাড়তে থাকে নির্ণয়ের , এই মেয়ে কি তা বুঝে । ব্যান্ডেজ জায়গা হতে আড়ারো তাজা রক্তে ভিজতে থাকা ব্যান্ডেজ তবুও যেন বিন্দু পরিমাণ ব্যথা অনুভব হচ্ছে না তার মনে।
কি হয়েছে তোর ?
জ্যাম ছুটে যায় এক এক করে সব গাড়ি কেমন পাশ কাটিয়ে যেতে থাকে । এতোক্ষণ গাড়ির ভীর মূহুর্তেই ফাঁকা হতে শুরু হয়েছে ।
রোজা কাঁদছে , চোখে কোণে জামানো পানি তার জানান দিয়ে যাচ্ছে । ভীষণ ভাবে জানান দিচ্ছে,
এই কি হয়েছে মরেছে কেউ , আমি মরেছি ?
ডানে বামে মাথা নাড়ায় রোজা , এক হাতে নাকের পানি টানে !
তাহলে মরা কান্না জুড়েছিস কেন ?
অধৈর্য্য নির্ণয় বেশ কিছু সময় জুড়েই ধৈর্য্যের সাথে লড়াই চালিয়ে যায় । একরাশ বিরক্তি এসে এবার ভর করে তার মস্তিষ্কে । নিউরনের ছুটোছুটি আরো বাড়িয়ে দেয় ।
ডান হাতে কপাল চুলকে নেয় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম , কালো স্লিকি চুল গুলো ঠিক কপাল এসে পড়েছে । দাঁত কটমটিয়ে গাড়ির বাহিরে একবার তাকায় সে , বেশ বড় এক নিঃশ্বাস ছেড়ে শান্ত করে নিজেকে ।
রোজ পাখি , প্লিজ টেল মি ..!
জান আমার কি হয়েছে তোর ।
এনি প্রবলেম?
ফুঁপিয়ে ওঠে রোজা । অলরেডি হেঁচকি উঠে গিয়িছে তার ,
আ আ আপনি ;
আমি কি ?
দুই ভ্রু কুঁচকে রোজা চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে নির্ণয় তার চোখে হাজারো কৌতুহল খেলা করছে ! তবে আপনিতে থেমে যায় রোজা ..
কি হলো বল আমি কি ?
আপনি ভীষণ অসভ্য !
এ আর নতুন কি ? ইউনিক কিছু থাকলে বল..!!
এবার যেন আরও তোড় বেড়ে যায় কান্নার হেঁচকি মাঝেই বারবার ফুঁপিয়ে ওঠে । খেপে যায় নির্ণয় , এই মেয়ে কি বুঝে না তার চোখের পানি কারো বুকে হার্ট ছিদ্রের কারণ … ক্ষেপা মস্তিষ্কে আগুন ধরেছে , তেড়ে গিয়ে দু আঙুলে চেপে ধরে রোজার গাল …
চুপ একদম চুপ জানে মেরে দিবো একদম !
ব্যথায় চোখ খিচে নেয় রোজা হাতের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয় নির্ণয় । কিছু হলেই তোরা মেয়েরা এতো কাদিস কেন ?
আর এক ফোঁটা পানি যদি চোখ থেকে বের হয়
বিলিভ মি রোজ , আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেলভ ।
কথা শেষ করেই রোজার গাল ছেড়ে দেয় নির্ণয় । ফর্সা মুখশ্রীতে লাল আভা ফুটে উঠেছে । দুই গাইলেই আঙ্গুলের ছাপ
ভাই কে এসব বলা কি খুব জরুরী ছিলো ?
হয়তো !
আপনি এমন কেন ?
আমি এমন তাই এমন !
আমাদের সম্পর্কের বৈধতা কোথায় ?
মূহুর্তে থ ধরে যায় নির্ণয় । তবে দৃষ্টি শান্ত , ঠোঁটে চিরচেনা সেই বাকা হাসি ..
আপনার আমার সম্পর্কের বৈধতা নেই..!!
বৈধতার সংঙ্গা কি ?
Papers .
Oh really বৈধতার সংঙ্গা পেপার ।
হ্যাঁ !
তাহলে ভালোবাসার সংজ্ঞা কি ?
Physical attraction !
হো হো করে হেসে ওঠে নিয়ে । ভয়ংকর সেই হাসি , চমকে ওঠে রোজা । তবে খুব বেশী একটা আবাক হয় না সে …
Do you know about this physical attraction
মুখ ঘুড়িয়ে নেয় রোজা , এই লোকের সাথে কথা মানে কলা গাছ কে মনের কথা বলা ।
কী হলো বল ?
অবশ্যই জানি যেইটা আপনার আর আমার মাঝে আছে ..!! আপনি আমাকে ভালোবাসেন না ..!!
তোর কেন মনে হলো এমন ?
অস্বীকার করতে পারবেন ? ব্যবহার করছেন আমাকে , প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলবেন ।
মুক্তি চাইছি আমি !
আমি কখনোই তোর কাছে আসি নি । তুই এসেছিলি প্রথম , মেনুপুলেট করছিস আমাকে । এখন নাটক করবি তো মেরে পিস পিস করে গাঙ্গে ভাসিয়ে দিবো ।
আপনি অভিশাপ !
সাদরে গ্রহণ করেছিস অভিশাপ কে , এখন আমি না চাওয়া অবদ্ধি মুক্তির আশা বৃথা ।
কি … আচমকাই গলায় চাপ অনুভব করে রোজা , ঘটনা এত দ্রুত হয়েছে যে কিছু রোজার আগেই রোজার গলা নির্ণয়ের হাতের মুঠোয় ।
এই মেয়ে এই ,
নাটক করছিস নাটক।
আমি বলেছিলাম তোকে আমার কাছে আসতে, বলেছিলাম বল ? বলিনি , তুই এসেছিস নিজের স্বার্থে এসেছিস … আমার থেকে মুক্তির আশায় এসেছিস …
কি ভেবেছিস আমার থেকে পালালেই তোর মুক্তি ।
এই জিবনে তার আশা ভুল ।
আর কি , বলছিলি ভালোবাসার সংজ্ঞা Physical attraction ,
বেশ হয়েছে তোকে ছুঁয়েছি । গভীর ভাবে ছুয়েছি … আমার ব্যক্তিগত জিনিস আমি ছুঁয়েছি ।
বৈধতা চাই তোর , আমি বলছি এই নির্ণয় চৌধুরী বলছে ,
মেহরিন জান্নাত রোজা সম্পূর্ণ বৈধ আমার জন্য ।
আলগা হয় হাতে বাঁধন । গলা ছাড়া পেতেই জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে রোজা শরীর নেতিয়ে গেছে তার । গাড়িতে থাকার পানির বোতল এগিয়ে দেয় নির্ণয় । বোতল হাতে না নিয়েই মুখ ঘুরিয়ে নেয় রোজা।
রোজার চোখে ঘৃণা অজানা কারণেই ঘৃণার ছাপ , নির্ণয় ব্যর্থ তার বুকের মাঝে বাস করা ছোট পাখির মন বুঝতে ব্যর্থ
রোজ !
-এতোটাও পিরা দিস না যতটা দিলে মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেল।
মুখ ঘুরায় না রোজা । জানালার বাহিরে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতেতে ।
পিছনে বেশ অনেক্ষণ থেকেই গাড়ি হর্ন দিয়ে যাচ্ছে কেউ তবে এতো কথার মাঝে সেদিকে খেয়াল নেই নির্ণয় । গাড়ির মিররে তাকাতে চোখ কপালে উঠে যায় তার গাড়ির পিছনে বেশ কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে । মানে জ্যাম ছাড়ার পরেও সে নিজেই আবারো জ্যাম বাঁধিয়েছে । জলদি গাড়ির স্টার্ট দেয় সে ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ,
বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিট ,
বিমানবন্দরের কাঁচের দরজাগুলোর ওপারে ধীরে ধীরে ভেসে উঠলো কালো শার্ট, চোখে কালো সানগ্লাস, ধূসর জ্যাকেট, ভারী বুটজুতো পরা একটা ছায়ামূর্তি।
রেহান।
চোখে কোনো অনুভূতি নেই, ঠোঁটে হালকা বাঁকা হাসি, যেটা দেখে বোঝা যায়, এই মানুষটা ফিরে এসেছে উদ্দেশ্য নিয়ে।
তাকে চুপচাপ অনুসরণ করে আসছে জারা
মাথা নিচু, পড়নে ওয়েস্টান , যাতে হাতের অর্ধেক অংশ উন্মুক্ত চোখ দুটো তীক্ষ্ণ, স্থির যেন কোনো বিস্ফোরণের আগে নিস্তব্ধতা।
রেহান বেশ ফরমাল গেটাপে , হাতে স্বর্ণের ঘড়ি .. চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা । পুরোই ঝাক্কাস টাইপ
রেহান আর জারা যখন দরজা পেরিয়ে আসে, তখন সামনের রাস্তার ধারে একটা নিঃশব্দ লাইন।
চারটে গাড়ি দাঁড়ানো।
সবকটাই কালো। টিন্টেড গ্লাস, নম্বর প্লেট ঢাকা। সামনে-পেছনে দুটো বাইকে মুখ ঢাকা দুজন লোক পাহারা দিচ্ছে।
শুধু বাতাস বইছে, আর মাথার ওপরে হালকা বৃষ্টির গন্ধ।
প্রথম গাড়িটার দরজা ধীরে ধীরে খুলে যায়
একজন গার্ড, কালো স্যুট, কানের পাশে ওয়াকিটকি, মাথা নিচু করে দরজা ধরে রাখে।
রেহান একটুও না তাকিয়ে সোজা গিয়ে উঠে পড়ে গাড়িটায়।
জারা একটু থেমে দাঁড়িয়ে, একবার পেছনে ফিরে তাকায়। যেন কোনো কিছু হাতছানি দিচ্ছে।
তারপর চুপচাপ উঠে যায় রেহানের পাশে।
গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটা রিয়ারভিউ মিররে একবার তাকিয়ে নেয় ড্রাইভার গলা খাদে নামিয়ে বলে
“স্যার, প্লিজ টেল মি লোকেশন?”
রেহান সানগ্লাস খুলে একপাশে রাখল। হালকা বাঁকা হাসি ঠোঁটে, গলাটা ঠান্ডা, মাপা।সিগারেট কেসটা খুলে একটা তুলে নিল, জ্বালাল না।
তারপর বলে—
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৭ (২)
“নীর কুঞ্জ।”
ড্রাইভারের চোখ বড় হয়ে গেল। ঠোঁট শুকিয়ে এল, সে মাথা হেঁট করে ইঞ্জিনে চাপ দিল।
চারদিক নিস্তব্ধ।
আর তখনই গাড়িগুলো একসাথে স্টার্ট নিয়ে ছুটে যেতে লাগলো পুরোনো পথের দিকে।