প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩০
Zannat Xhowdury
সকাল ৯ট । দোতলার দক্ষিণে দুঘরের পরের ঘরটাই রেজোওয়ান চৌধুরী । ঘরটা বেশ পরিপাটি, একদম সাজানো-গুছানো । খাটের পাশে রাখা সাইড টেবিলে আধখানা চা, ধোঁয়া থেমে গেছে, কিন্তু কাপটা এখনো কুসুম গরম। দক্ষিণের জানালা দিয়ে রোদের তির ছড়িয়ে পড়েছে খবরের কাগজের পাতায়।
রেজোওয়ান চৌধুরী আধা হেলান দিয়ে বসে আছেন বালিশে।
চশমার ফ্রেমে চোখ গুঁজে রেখে তিনি পড়ছেন দৈনিক সংবাদ।
পত্রিকার পাতা ওল্টানোর শব্দে ঘরের নিস্তব্ধতা ভাঙছিল সামান্য।
ঠিক তখনই দরজার খট… খট…আওয়াজ কানে আসে ।দরজার ওপাশে এক চাপা শব্দ।রেজওয়ান চৌধুরী কপাল হালকা কুঁচকে পত্রিকার ভাঁজ বন্ধ করে মাথা তুলেন। একবার তাকান দরজার দিকে।
কন্ঠে অস্থির তবে মুখে এক গাম্ভীর্য টেনে আস্তে করে ফিসফিসিয়ে বলেন
এই সময় আবার কে এলো?”
কড় কড় করে আবারো একবার শব্দ হয় দরজায় শব্দ টা একটু জোরেই ছিলো ।রেজওয়ান চৌধুরী এবার উঠে দাঁড়ান। চশমাটা খুলে ধীরে টেবিলের উপর রাখেন। চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।
কে ওখানে ?
বড়আব্বু আসবো !
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রেজোওয়ান চৌধুরী এগিয়ে যান দরজার রিয়ান কে দেখেই গুরু গম্ভীর মুখটা হঠাৎ হাস্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে …
এসো দেখি আব্বাজান। আমার কাছে আসতে আবার পারমিশন লাগে আপনার ।
দরজাটা থকে পা বাড়িয়ে ধীরে ঘরে ঢোকে রিয়ান ।পড়নে ব্লাক ট্রাউজার সাথে খয়েরি রঙের গেঞ্জি ।
আজকাল চোখের আড়ালে যখন অনেক কিছু হয় তখন , পারমিশন তো কেবল ফর্মালিটিজ বড়অআব্বু।
মূহুর্তেই হাস্যোজ্জ্বল মুখ কিছুটা মলিন হয়ে আসে রেজওয়ান চৌধুরী। রিয়ানের থেকে মুখ ফিরিয়ে তিনি আবারও পা বাড়ান বিছানার দিকে তবে যেতে যেতে শান্ত কন্ঠে বলতে থাকেন।
কি বলতে চাইছো তুমি ?
আপনি নিশ্চয়ই অবুঝ নন ! তাই আশা করছি আমার কথার মানে আপনি ঠিক বুঝতে পেরেছেন।
রিয়ান !
কন্ঠে হালকা তেজ , রাগী কন্ঠে ধমকে ওঠেন রেজওয়ান চৌধুরী । চোখ দুটো প্রায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে ।
ভুলে যেও না আমি কে ?
আপনি কে , ভুলিনি বলেই এখনো সম্মান পেয়েছেন। আমিও আপনাকে সম্মান দিচ্ছি ! তা নাহলে আপনার কারণে আজ আমার বোন মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছে , আপনাকে নিশ্চয়ই পুজো করবো না , তাই না !
কি বলতে চাইছো কি তুমি ?
রোজা কে নিশ্চয়ই আপনি আপনার সুপারিশে ডিপার্টমেন্টে ঠিক আপনার কাজের সঙ্গি করছেন ?
হুঁ তোহ !
তোহ মানে ,ওর কিছু হয়ে যেতে তো পারতো। আর আপনি পানিতে থেকে কুমিরের সাথে বিবাদে নেমেছেন , তা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। যেখানে রোজার জীবনে ছোট এক সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার নির্ণয় চৌধুরী ছাড়া বাড়ির অন্য কোনো ব্যক্তির নেই , সেখানে তাঁর অগোচরে আপনি আমার বোন কে বিপদে ফেলছেন।
তুমি ভুলে যেও না নির্ণয় আমার ছেলে।।
আপনিও হয়তো অস্বীকার করতে পাড়েন না ভাই আর রোজের সম্পর্কের মানে ।
ওই অসভ্য টার সাথে থেকে থেকে অসভ্যতা শিখে ফিরেছো । অসভ্যতার বীজ তোমার মাঝেও ঢূকিয়ে দিয়েছে বেয়াদব টাহ ।
তার অসভ্য হওয়ার মূল চাবিকাঠি আপনি ভুলে যান নি নিশ্চয়ই। রোজের জন্য করা তার পাগলামী গুলো আপনি ভুললেও আমি ভুলতে পারি নি। হয়তো একটু ছোট ছিলাম তবে , মেমোরিতে এখনো গাঁথা রয়েছে সব।
এখন কি করতে এসেছো এখানে , ওটা বলে বিদায় হও ।
-আপনি যতদ্রুত সম্ভব রোজার রেজিগনেশন লেটার আমার হাতে তুলে দিবেন। আমার বোনকে আর কোনো বিপদে পড়তে দেখতে চাইনা আমি ।
সম্ভব নয় , ডিপার্টমেন্টে তোমার বা আমার বাপের কেনা গোলাম নয় । আর সেখানে চাইলে যাওয়া বা আসা যায় না । তোমার মতো শিক্ষত ছেলের জানা কথা ।
-আমি আমার বোনের নিরাপত্তার বাহিরে কিছু জানতে চাই না ।
মেহরিন ৫ বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ রয়েছে। ৫ বছরের আগে সে কখনোই এখান থেকে বের হতে পারবে না। আর শুনে রাখো খুব শীঘ্রই তাঁকে আবারো দেশের বাইরে পাঠানো হবে কাজ এখনো শেষ নয় ।
পুরো ঘরের ভিতর নিঃশব্দ।কাঠের ফার্নিচারগুলো ঠান্ডা, দেয়ালের ছবিগুলোও যেন তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
রিয়ান দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরে আছে। হাতের আঙুলগুলো মুঠো হয়ে গেছে, শিরা ফুলে উঠেছে। কিন্তু মুখে একটুও রাগের রেখা নেই।যেন নিজের রাগ নিজে গিলে নিচ্ছে সে।
মুখ খুলে আবার কিছু বলতে নিবে , হঠাৎ দরজায় আবারো সেই খট খট শব্দ । দু’জনের মনোযোগ উল্টে যায় , কথা থেকে মনোযোগ সরিয়ে আবারো দরজা কাছে যায় রেজোওয়ান চৌধুরী।এবারো সেই গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে , জিজ্ঞেস করে
কে ?
দরজার অপারে শান্ত , মিষ্টি এক কন্ঠে উত্তর আসে …
ব্যাস্ত আছো বড়আব্বু !
ছোট এক জবাব যেন মূহুর্তেই দুটো মানুষের মনের জ্বলতে থাকা তুশের আগুনেও পানি ঢেলে শীতল করতে সক্ষম। রেজওয়ান চৌধুরী দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়াঢ় । দরজা একটু ফাঁকা করে রোজা কে ভিতরে আস্তে সাহায্য করে !
কেমন আছো মামুনি ?
ঘরে ঢুকেই রেজওয়ান চৌধুরী কে আদুরে জড়িয়ে নেয় রোজা। স্নিগ্ধ এক হাসি দিয়ে শান্ত স্বরে উত্তর দেয় …
খুব ভালো বড়আব্বু ।
শরীর কেমন এখন আমার মা টার ?
একদম ফিট ,আমি আসলে তোমাকে একটা ইনফরমেশন….
বাকি কথা বলার আগেই চোখ চলে ঘরে দাঁড়ানো রিয়ানের উপর।
যে বর্তমানে তাদের দিকে তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে ।
ভাইজান তুমি এখানে ?
নিশ্চুপ রিয়ান , এখনো ঘোরের মাঝেই সীমাবদ্ধ , আশেপাশে কোনো শব্দ যেন তার কানে প্রবেশ করছে না । রোজা পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় রিয়ানে কাছে । একদম কাছাকাছি এসে বেশ জোড়ে চেঁচিয়ে ওঠে সে
ভাই জাননননননননন
মূহুর্তে থতমত খেয়ে চমকে ওঠে রিয়ান , চোখদুটো যেন হঠাৎ করে বড় হয়ে যায়, ঠোঁটের কোণে জমে থাকা নিঃশ্বাসটা আটকে যায় মাঝপথেই। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বুঝতে চাইছে আসলে এখানে কি ঘটলো । এদিকে দুহাতে কান চেপে ধরছে রেজোওয়ান চৌধুরী।
এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন তুই ?
তার আগে তুমি বলো তুমি কার কথা ভাবছিলে , বলো বলো ?
রিয়ান রোজার মাথায় এক গাট্টা মেরে এগিয়ে গিয়ে রুমের সোফায় বসে। রেজওয়ান চৌধুরী পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখেই কান থেকে হাত নামিয়ে বেশ জোরে এক নিঃশ্বাস ছাড়ে ।
আমি কি ভাবি তা তোকে বলতে আমার বয়ে গিয়েছে , আগে বল তুই এইখানে কেন ?
আমি বড়আব্বুর সাথে একটু দেখা করতে এসেছিলাম । ওয়েট ওয়েট তোমরা কী কোনো দরকারি বিষয়ে কথা বলছিলে আমি কি বিরক্ত করলাম?
আরে না মামুনি তেমন কিছু নয় । এসেছো ভালো হয়েছে কাল তো ওই ইডিয়ট টার জন্য তোমার সাথে কথা হয় নি।
আচ্ছা কাল কি হয়েছিল এত চেঁচামেচিতেও তোমার ঘুম ভাঙ্গে নি কেন ?
খুক খুক করে কাশি উঠে রিয়ানের রোজা রেজোওয়ান চৌধুরী কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যায় ভাইয়ের দিকে।
ভাইজান কি হলো তোমার ?
ব্যস্ত ভঙ্গিতে সামনের টেবিল থাকা পানি ভর্তি গ্লাস এগিয়ে দেয় রোজা । মূহুর্তেই এক গ্লাস পানি শেষ করে রিয়ান। ধরে এবার যেন প্রাণ ফিরে এলো।
রোজা ভীষণ উইক বড়আব্বু তাই হয়তো জেগে উঠতে পারে নি ।
কোনোমতে কথাটা বলেই ফোস করে শ্বাস ছাড়ে রিয়ান। রোজাকে পানির সাথে স্লিপিং ড্রাগ দিয়েছিলো নির্ণয় তবে খুব বেশি পরিমাণ নয় সামান্য ,যার প্রভাবেই ঘুমের ডুবে ছিলো সে । পুরো কথাটাই যেন এক মিথ্যের নিচে চাপা ফেলে দেয় সে।
সন্দিহান চোখে রিয়ানের দিকে তাকায় রেজোওয়ান চৌধুরী। চোখে তীক্ষ্ণতা , যেন মনে হচ্ছে কোথাও কোনো প্যাঁচ আছে , তার তীক্ষ্ণ
চোখদুটো সোজা রিয়ানের চোখে গিয়ে থেমে যায়।একটু ভ্রু কুঁচকে থাকে তার দিকে , ঠোঁটের কোণে দৃষ্টি-সন্ধানী একরকম নীরবতা।
এই নীরবতাই ভয়ংকর।
রিয়ান মুখ নিচু করে বসে, গলার স্বর শুকনো, চোখে ক্লান্তি
কিন্তু রেজোওয়ান চৌধুরী তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে খুঁজে নিচ্ছেন কিছু।একটা অসংলগ্নতা, একটা বিচ্যুতি…।
তাই বলে , এতো চেঁচামেচির শব্দ কি তার কানে ঢোকেনি ?
ঘরে তখন যেন অদ্ভুত একটা ভারী স্তব্ধতা। রিয়ান বুঝতে পারে রেজোওয়ান চৌধুরী তাকে ঘাটতে চাইছে , নিশ্চুপ থাকে সে ।
দুজনের কথা পুরোটাই যেন মাথা ভর্তি হালকা ব্রাউন কালার মিশানো চুল গুলো উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে রোজার ।
কি হয়েছে বলবে কেউ ?
সকলের কথার মাঝেই এক মোটা গালার সুর ভেসে আসে স্তব্ধ সকলে। মুখে যেন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউই কারো মুখেই নেই টু শব্দ
এখানে বসে গোল মিটিং করলেই বুঝি পেট ভরবে তাইনা ?
নাজমা চৌধুরী রাগিব স্বরে বলা কথাগুলোতে মুসকি হেসে এগিয়ে গীয়ে নাজমা চৌধুরী সামনে দাঁড়ায় রোজা সাথে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে
আল্লাহ কি যে বলো না বড়মা ,তোমার হাতের পরোটা আর মিষ্টি বুন্দিয়া না খেয়ে কথা বলেই কি করে পেট ভরাই বলো তো।
রাগের মাঝে ফিক করে হেসে রোজার কান টেনে ধরে নাজমা চৌধুরী। কন্ঠে নমনীয়তা সাথে আদুরে হয়ে বলে ,
দুষ্টু মেয়ে বড়মাকে বোকা বানানো হচ্ছে?
একদম না ডার্লিং , তোমাকে কি করে বোকা বানাই বলো তুমি তো এমনি বোকি ।
কথা শেষ করেই , এক ছুট দেয় রোজা আশেপাশে পাশ তাকানোর কোনো সময় নেই তার এখন বাঁচতে হবে হালকা খেপিয়ে দিয়েছে নাজমা চৌধুরীকে এখন বাঁচতে চাইলে পালা রোজা পালা।
তবে রে দুষ্টু মেয়ে !
রোজাকে ধরতেই হাত বাড়ান নাজমা চৌধুরী তবে তার আগেই রোজা পগার পাড় তাকে আর পায় কে ?
মূখে হাসি রেখেই এবার রেজোওয়ান চৌধুরী আর রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো বলে
তোমরা কী যাবে নাকি এখানেই থাকবে ?
আসছি বড় মা ! বলে রিয়ান ও রুম ছেড়ে বেড়িয়ে যান ।
ছুটছে রোজা। মুখে সেই মন ভোলানো হাসি যেন সারা বাড়িটার আকাশই তার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠেছে।
ঝুঁটিতে থাকা লম্বা চুলগুলো দৌড়ের ছন্দে তাল মিলিয়ে নাচছে।
পায়ের নিচে ঘষা খাচ্ছে মেঝে, বাড়ির পরিচ্ছন্ন দালান কাঁপিয়ে ছুটে চলেছে সে। একের পর এক ঘর করিডোর, মেঝেতে পড়ে থাকা ছোট কুশন সব পেরিয়ে হাওয়ার মতো ছুটে যাচ্ছে রোজা।
তার হাসির শব্দে যেন পুরো বাড়িতে প্রাণ ফিরে এসেছে। হঠাৎ
ঢাস! করে কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে চিতফাটাং হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে ।
মূহুর্তে যেন হাসি কান্নায় পরিণত হয় , পুরো বাড়ি চেঁচিয়ে কাঁদতে থাকে , সাথে নাটকীয় কিছু টা ভাব
“মাগো মা… আমার কোমড়!”
মাটিতে উবু হয়ে বসে পড়েছে রোজা। এক হাতে কপাল, আরেক হাতে কোমর চেপে ধরে গোঙাচ্ছে। চোখ মুখ কুঁচকে গেছে,
“হায় রে আমার হাড্ডি! এইবার বুঝি বিয়া-শাদি সব গেলো! কোমরই যদি না থাকে, বর খাটবে কী করে?”
ও মাগো
রোজার চিৎকার যেন সারা বাড়ি কাঁপিয়ে দেয়। তার পিছনেই আসছিলো রিয়ান । তবে রোজার কাছে আসতেই চোখ কপালে, সামনে মাটিতে পড়ে আছে রোজা, হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে, চোখ মুখ কুঁচকে ব্যথায় কাতর।আর তার এক হাত দূরে, দাঁড়িয়ে আছে রেহান।
রিয়ানের চোখ বড় হয়ে যায়। প্রথমে বোনের দিকে তাকায়, তারপর ধীরে ধীরে সরে আসে দৃষ্টি রেহানের দিকে। কোনো শব্দ নেই, কোনো প্রশ্নও না। শুধু একরাশ নিঃশব্দ ধাক্কা ভর করে পুরো পরিস্থিতির ওপর।তার বুঝতে বাকি নেই কি হয়েছে এখানে
রিয়ান হালকা ঝুকে যায় রোজার দিকে নিজের ডান হাত এগিয়ে দেয় তাকে
কিরে কিভাবে পড়লি তুই ? উঠে আয় দেখি ,
ভাইজান গো ভাইজান , আমার কোমড় গেছে । আমার বুঝি আর বিয়ে টা হলোনা ভাইজান । আমার আর বাচ্চা পয়দা হলো না , আমি আইবুড়ি রয়ে যাবো ।
চুপ , ফাজিল মেয়ে ।উঠে আয় বলছি
রিয়ানের ধমকের মাঝেই , এতোক্ষণ বিস্ময় কাটিয়ে দ্রুত রোজা কে ধরতে এগিয়ে আসে রেহান । তবে তার আগেই রিয়ানের রাম ধমকে আটকে যায় তার হাত।
তোর দূষিত হাতে ওকে ছুঁইয়ে ভাইরাস ধরানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
রাগে কটমট চোখে রিয়ানের দিকে তাকায় রেহান । যেন সুযোগ পেলে গিলে ফেলতো । চোখে এক রাশ বিরক্তি
উঠে আয় তো বোনু !
ভাইজান গো !
ওরে ময়না, সাবধানে বোন আমার ।
বেশ যত্নে বোনকে মাটি থেকে তুলে রিয়ান । ইতোমধ্যে রোজার চেঁচামেচিতে নাজমা চৌধুরী,রেজোওয়ান চৌধুরী দুজনেই এসে হাজির। দোতলার কোনে হওয়ায় শোরগোল নিচ পর্যন্ত এসে পৌঁছায় নি । নাজমা চৌধুরী জলদি এসে দাড়ায় রোজার পাশে ।
কিভাবে পড়লি তুই ? এইতো ছুটে এলি , ছুটতে গিয়ে কি চোখ কপালে তুলিস ?
রিয়ানের বোকাবোকির মাঝে রিয়ানকে ধমকের উঠে নাজমা চৌধুরী । কন্ঠে তেজ না থাকলে মুখে শাসন
আহ রিয়ান ! বাচ্চা মেয়ে ব্যাথা পেয়েছে ওকে সাবধান নিচে নিয়ে চলো।
কিযে বলো না বড়মা , ও আর বাচ্চা , দুটো শব্দ ভিন্ন । বয়স দেখেছো বিয়ে দিলে বাচ্চার মা হবে । তাও একটা দুটো না পুরো ক্রিকেট টিম।
মুসকি হাসে নাজমা চৌধুরী দুজনের পাগলামি বেশ এনজয় করছে তারা।
দেখো ভাইজান আমি নিজে থেকে পড়িনি । রেহান ভাই তো ডাইনোসরের মতো সামনে এসে দাঁড়ালো।তাইতো আমি বাচ্চা মেয়েটা আখাম্বা শরীরের সাথে উস্টা খেয়ে পড়লাম।
রেহানে দিকে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রিয়ান। রোজার আশেপাশে রেহানে ছায়াও যেন পছন্দ না তার ।
অনেক হয়েছে এবার সবাই নিচে চলো খাবার টেবিলের সকলে অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য।
নির্ণয় ভাই এসেছে বড়মা।
হাসি মুখে হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসে বুকে জমানো কষ্টগুলো যেন বুক চিরে বেড়োতে চায় । রোজা বুঝতে পারে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সে ।
হয়েছে আর কথা না এবার নিচে চলো !
পুরো পরিস্থিতি যেন মূহুর্তেই সামলে নেয় রিয়ান । এক হাতে রোজা কে আগলে পা বাড়া হলরুমের দিকে ।
খাবার টেবিলে জমছে সকলের ভীর , পুরো টেবিল জুড়ে রয়েছে হৈচৈ । তৃধা, আয়ান , রিধিমা, অপূর্ব সকলেই একেক পর এক কথা বলেই চলছে সাথে কত রকমের প্লানিং ।পাশে দাড়িয়ে এক এক করে সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে রত্না চৌধুরী।
সকলে গল্পে মজেছে ,, সিঁড়ি দিয়ে একেক করে নেমে আসছে রিয়ান , রোজা , মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী।
রিয়ান আস্তে আস্তে ধরে ধরে রোজা কে নিয়ে যায় টেবিলের কাছে , টেবিলের কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে রোজাকে।
সকলের চুপচাপ যেন ভুত দেখার মতো কিছু দেখছে এই কাহিনী কে আরো কিছু টা মজা দিতে, সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে রেহান খাবার টেবিলের কাছে আসতেই রত্না চৌধুরী এগিয়ে আসেন তার কাছে।
আয় বাবা আয় খাবার বেড়েছি ?
ভ্রু জোড়া কুঁচকে নেয় রিয়ান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ে রত্না বেগমের দিকে।
আমাদের কি তোমার চোখে পড়েনি আম্মু ?
তবে সে কথার কোনো উত্তর করে না রত্না চৌধুরী , রিয়ানে প্রশ্ন সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান তিনি । রেহান টেবিলের কাছে এসে কারো দিকে না তাকিয়ে ঠিক রোজার পাশে এসে দাঁড়ায় , তার পাশেই চেয়ার টেনে যেই না বসতে যাবে তার আগেই চেয়ার দখলে নেয় রিয়ান ।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রোজা , উপস্থিত সকলে মিটমিট করে হাসছে । রত্না চৌধুরী ক্ষিপ্ত চোখে তাকায় রিয়ানের দিকে তবে মাকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে রিয়ান । রেহান উপায়ান্তর না পেয়ে এগিয়ে যায় রিধিমা পাশের চেয়ারে টেনে বসবে বলে তবে তার পৌছানোর আগেই সে চেয়ার নিজের দখলে নেয় আয়ান। এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারে না তৃধা । উপস্থিত সকলের মাঝেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে সে।
রাগের বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে হনহন করে হেঁটে স্থান ত্যাগ করে রেহান। রেহান যেতেই রোজার মুখের মিটিমিটি হাসি এবার ঠোট গলিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। একসাথে সকলেই হেসে দেয়।
খাবার শেষেই বেড়িয়েছে সকলে । তবে আজ আর রোজা যায়নি কোথাও শরীরটা যেন একেবারে অবশ লাগছিলো, ভীষণ ক্লান্ত। প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে, হলরুমে নরম লাল সোফায় গা এলিয়ে বসে রোজা একমনে চিপস খাচ্ছিলো, আর টিভিতে চলছিলো রঙিন কার্টুন।
চোখে ছিলো একরকম শিশুসুলভ আনন্দ, ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি। এতক্ষণে যেন একটু নিঃশ্বাস ফেলার সময় পেয়েছে।
তার একদম পাশেই, সোফার অন্য প্রান্তে, আধশোয়া ভঙ্গিতে বসে রায়হান চৌধুরী একাগ্র চোখে ম্যাগাজিনের পাতায় ডুবে ছিলেন। মাঝে মাঝে চোখের কোণে ভাঁজ পড়ছে, হয়তো লেখার কিছু অংশ তাকে অস্বস্তিকর লাগছে। আবার কখনো চোখ তুলে এক ঝলক দেখে নিচ্ছেন পাশের মেয়েটির উচ্ছ্বাস।
হঠাৎয থেমে যায় রোজার হাত রোজা খিলখিল করে হেসে উঠে, আর সাথে সাথেই চিপসের কুরকুরে মতো আওয়াজে কিছুটা গুঁড়ো উড়ে এসে পড়লো সোফার কুশনে। সে তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে মুছতে মুছতে চেঁচিয়ে উঠলো
—”দাদুভাই! দেখো দেখো! টম কিভাবে জেরি’কে ধরছে!”
তার চোখে তখন এক শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস, গলায় কেমন একটা ঝাঁঝালো উত্তেজনা। টিভির পর্দায় দেখা যাচ্ছিলো টম লম্বা এক ছিপ নিয়ে জেরির গর্তের সামনে বসে আছে, ঠিক যেন শিকারির মতো।
রায়হান চৌধুরী এক চুলও না নড়ে, হাতের ম্যাগাজিন ধীরে নামালেন , রোজার দিকে তাকিয়ে একটা শান্ত হাসি দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললেন,
দেখো ব্যর্থ হবে শেষে… ধরতে পারবে না,”
রোজা মুখ ফোলালো,
“তুমি কিছুতেই টমের পক্ষে বলো না কেন দাদুভাই! বেচারা কত চেষ্টা করে!”
রায়হান হেসে ফেললেন রোজার কথায় ,হাসির মাঝেই বলেন,
কারণ জেরির মাথাটা তোর মতোই চতুর।”
বলেই একটা ভ্রু উঁচু করে তাকালেন।
রোজা চোখ কুঁচকে রায়হানের দিকে তাকালো, তারপর মুখ ঘুরিয়ে আবার টিভির দিকে, একটু নাক সিঁটকে বললো,
তাহলে তুমি টম! আর আমি জেরি!”
রায়হান হালকা হেসে বললেন,
“হয়তো… তবে টম যদি একদিন জেরিকে ধরে ফেলে?”
রোজা গম্ভীর চোখে তাকালো দাদুর দিকে , নাক কুঁচকে বলে ,
“তাহলে কার্টুন শেষ।”
একটা থমথমে নীরবতা ছড়িয়ে পড়ে কথাটার পর। সোফার পাশে রাখা ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা বাজে। টিভির আলো রোজার চোখে ছায়া ফেলে
রোজা আবারো মনোযোগ দেয় কার্টুনে। ঠোঁটে ঝুলে থাকা চিপসটা খেয়ে ফেলে চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে টমের দুর্দশার দিকে। হাসছে, কখনো ঠোঁট কামড়ে চেপে বসছে উত্তেজনায়।
ঠিক সেই মুহূর্তেই এক চিলতে ছায়া পড়ে তার উপর।
কি করছো মেহের ?
রোজা চোখ ছোট করে তাকালো উপরে।রেহান মুখ দেখেই সে আবারো তাকায় টিভির দিকে
কলিজা ভুনা ।
রোজার বাঁকা কথাতেই বিন্দু মাত্র ভরকালো না রেহান। শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো।
কিন্তু তুমি তো টিভি দেখছো ।
টিভির স্ক্রিনে তখন জেরি পনির নিয়ে পালাচ্ছে, আর টম হুমড়ি খেয়ে পড়ছে একটা ফুলদানির মধ্যে। রোজার নজর এখনো টিভিতে
যাক আল্লাহ চোখ দিয়েছে।
রোজার বলা কথাগুলো রেহানের গায়ে লাগলো কিনা কে জানে সে কিছুক্ষণ টিভিতে তাকিয়ে থেকে আবারো বলে
“অবাক লাগে, তুমি এখনো এইসব কার্টুন দেখো?এত বয়স হয়ে গেলো…”
রোজা বেশ বিরক্ত লাগে , একে তো তার পছন্দের কার্টুন দেখছে , টানটান উত্তেজনা এর মাঝে এই ঘাটের মরা এসেছে এবার সে চট করে বলে উঠলো,
আপনার মুখ দেখলে তো এমনি আমার মনটা বুড়ো হয়ে যায় রেহান ভাই ! তাই মাঝে মাঝে টম-জেরি না দেখলে বাঁচা দায়!”
রায়হান চৌধুরী পাশ থেকে হালকা গলা খাঁকারি দিয়েন..রোজা তাকালো তার দিকে মুসকি হাসি দিয়ে আবারো নজর দিলো টিভিতে
রেহানও তাকালো তাদের দিকেই। চোখে এক ঝলক খারাপ লাগা, কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করলো না।
দাদুভাই দেখো দেখো এইবার তো টম জিতবেই জিতবে ।
রায়হান চৌধুরী এবার পত্রিকা রেখে দিলেন টেবিলের উপর। রোজার সাথে তিনিও কার্টুন দেখতে ব্যস্ত হয়ে উঠলে। টিভিতে চলছে টান টান উত্তেজনা , টম এইবার জেরিকে ধরবে ধরবে ভাব এর মাঝেই রেহান আবারো বলে ওঠে
একটু বসি তোমার পাশে !
ধুর ! বেজায় বিরক্ত রোজা , ফোস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে দৃষ্টি দেয় রেহানের দিকে ।
টয়লেট করে ভালো করে ওয়াস করছিলেন?
রোজার করা প্রশ্নে কার্টুন রেখে রেহানের দিকে তাকিয়ে হাসছেন রায়হান চৌধুরী।
কি বলছো এইসব ?
যাহ বাবা চোখের সাথে কানেও কি সিন্দু পোকা ধরেছে ।
What পোকা
মা *লং পোকা ।
সিঁড়ি দিক থেকে আসা উরন্ত উত্তরে সকলের নজর এখন সিঁড়িতে।
নির্ণয় নামছে ।পড়নে হাফ প্যান্ট সাথে পেস্ট কালার টি- শার্ট রোজা হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে । এগিয়ে আসছে নির্ণয় , তার এগিয়ে আসাতেই রোজার মনে বয়ে যায় এক নতুন সুর
Handsome কটু বেডা , তুমি ছাড়া কেডা !
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ২৯
Handsome কটু বেডা, আগুনেরি গোলা ।
গেঞ্জি , পাঞ্জাবি যে যাই পরুক,
লাগে একচের সেরা ।
একটা মানুষ এত সুন্দর কেমনে যে হয় এইডাই বুঝিনা।