প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৩ (২)
Zannat Xhowdury
রোজা ভয়ে ভয়ে তাকায় নির্ণয়ের চোখে টুক করে চোখ টিপে মুসকি হাসে নির্ণয়। চোরা চোখে নির্ণয়ের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে রোজা। রোজার শ্বাসধ্বনি কেঁপে উঠছে,
নির্ণয় ধীরে এগিয়ে আসে। চোখে যেন আজ অদ্ভুত এক জাদু, যা রোজার সারা শরীরটাকে বশে এনেছে। ধীরে তার ডান হাতটা উঠে এসে ছুঁয়ে যায়রোজার গালে
নরম তুলতুলে গাল বেয়ে আঙুলটা থেমে যায় রোজার কান বরাবর। রোজা চমকে ওঠে, ধ্যানভঙ্গ হয় মুহূর্তে। পা ঘষতে ঘষতে পিছাতে থাকে বেডের ওপর
দে দে …. দেখুন আমি কিন্তু চেঁচাবো। আ আপনি পাগল হয়েছেন।
নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে রোজার , বারবার শুষ্ক ঢোক গিলছে মেয়েটা এদিকে নির্ণয়ের চোখে মুখে এক দুষ্টু হাসি
তোর এই নিঃশ্বাসের শব্দ আমার ভীষণ প্রিয় জান।
সরুণ বলছি! অসভ্য , ইতোর , কন্ট্রোললেস একটা লোক। সব জায়গায় শুরু হয় আপনার। আজ মরে গেলে ..
সহসাই এক শক্ত হাতে থাবা এসে পড়ে রোজার গালে , নির্ণয় দু আঙুলে চেপে ধরেছে রোজার গাল। যে চোখে এতো সময় মুগ্ধতা ছিলো মূহুর্তেই কেমন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সেই চোখ
এই মেয়ে এই , উল্টো পাল্টা কিছু বলবি তো জানে মেরে দিবো।
খুব শখ না মরার, খুব শখ আমাকে তোর আমাকে জ্বালিয়ে মারার তাইনা। শোন মেয়ে , আমি মরার দু সেকেন্ড আগেই তোকে মেরে, মরবো। তুই যেহেতু আমার আমি না থাকলে তোর কোন অস্তিত্ব থাকবেনা এই পৃথিবীতে। তোকে করবে শুইয়ে তবেই নিজেকে সাদা কাপড়ে জরাবো আমি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উমমম ।
ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে রোজা। তার খেয়াল হতে আলগা হয় নির্ণয়ের হাত। ক্যানেল লাগানো হাতে হালকা জোড় দিতে তাজা রক্ত ফিকনি দিয়ে বেরিয়ে আসে রোজার। নির্ণয় ক্ষিপ্ত তাকে থামাতে হবে, ভেবেই দু হাতে জড়িয়ে নিতে চায় তাকে ।
মূহুর্তে যেন ক্ষিপ্ত বাঘ পোষ মানে, নির্ণয় দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় রোজারকে । এতো সময় রাগ যেন হঠাৎ কেমন চাপা কান্নায় পরিণত হয়।
স সরি নির্ণয় ভাই , আমি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি।
আমি মরে গেলে কে আপনাকে ভালোবাসবে বলুন তো।
নির্ণয় আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় রোজাকে ঠিক যে বুক ছিড়ে যদি হৃদপিন্ডের খাচায় বেঁধে নিতে পারতো ইসস্ অথবা যদি সোনার তৈরি কোনো খাচায় বন্ধ করতে পারতো। হায় আফসোস , কোনোটাই হচ্ছে ।
রোজ !
এই প্রথম নির্ণয়ের গলা কাপছে তার দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে তার রোজ পাখির সামনে , আজ যেন সে ভীষণ করে চাইছে বদ্ধ ডাইরির পাতার উন্মুক্ত করতে এতো কালের লুকানো সব যেন আজ ভীষণ করে চাইছে খোলাসা করতে।
ভালোবাসি জান। ভীষণ ভালোবাসি , পৃথিবীতে ঠিক যেমন চন্দ্র -সূর্য সত্যি , তেমনি তোর প্রতি আমার ভালোবাসা সত্যি। সব সত্যি,
আমি চাই তুই শুধু আমার থাক , শুধু আমার, একান্তই আমার।
আজ যেন চোখের নোনা পানি আটকে থাকতে চাইছে না নির্ণয় বারংবার চেয়েও পারছে না থামতে টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে প্রথম চোখ থেকে গালে তার গাল থেকে হয়তো বিছানায়।
জীবনে যা চেয়েছি, তার কিছু পাইনি। দেখনা ,সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে সব কেমন হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়েছি নিজের সুখ , শান্তি সব। ভালো থাকতে চেয়েছি , লড়াই করেছি। তুবুও যেন ব্যর্থ আমি। দুনিয়া ভীষণ স্বার্থপর জান , দুনিয়ার ঠিক যেমন চাওয়ার শেষ নেই , তেমনি পাওয়ার কোনো অপশন নেই ,একদম নেই। দুনিয়ার নিষ্ঠুরতায় বার বার ব্যর্থ হয়েছে আমার প্রচেষ্টা।
শেষ পর্যন্ত যখন কোনো চাওয়া পূরণ হলো না নিজেকে আড়াল করলাম মায়া ত্যাগ করে গুটিয়ে নিলাম নিজেকে। তোকে আমার প্রয়োজন জান , ভীষণ প্রয়োজন । খুব করে চাইছি … প্লিজ জান সবার মতো আমায় ভেঙ্গে দিস না।
এতো সময়ের পুরো কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে রোজা। মানুষ টা এত কষ্ট বুকে জমিয়ে রেখেছে ভেবেই বুকের মাঝে ঝড় ওঠে রোজার। আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় একে অপর কে।
হঠাৎ দরজায় কড়া পড়ছে বাহির থেকে ভেসে আসছে হাক ডাক। রোজা ছেড়ে দেয় নির্ণয়কে। নিজেকে ঠিক করে আধশোয়া হয়ে হেলাঞ দেয় বালিশের সাথে। নির্ণয় উঠে গিয়ে দরজা খোলে।
দরজার সামনে পুরো গ্যাং দাড়ানো সকলের মাঝে এক দাড়ানো এক বৃদ্ধ দাড়িতে পাকা। পড়নে সাদা পাঞ্জাবি , মাথায় টুপি। হাতে এক রেজিস্ট্রার খাতা টাইপ কিছু। নির্ণয় দরজা খুলতেই রিয়ান ক্ষিপ্ত নজরে তাকায় তার দিকে।
নির্ণয় দরজা খুলে আবারো এসে দাঁড়ায় রোজার পাশে। আয়ান সামনে এগিয়ে আত্নরিকতার সাথে কাজির উদ্দেশ্য বলে,
কাজি সাহেব ভেতরে আসুন?
সামনে থেকে আসা কাজি সাহেব কে দেখেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নেয় রোজা। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের অবস্থান দেখে নেয় সে।
এমা নির্ণয় ভাই , হাসপাতালে কাজি সাহেব কারো বিয়ে বুঝি। ইসস আমি তো রোস্ট খেতে পাবো না। আপনি এতো স্বার্থপর কিভাবে হতে পারেন আমাকে একটা লেহেঙ্গা কিনে দিলেন না। সেসব না হয় বাদ দিলাম , হাসপাতালে কে বিয়ে করে। কার বিয়ে আজ। ভাইজানের তো নাহ। রিধী আপুর ও তোহ না
কথার মাঝেই রোজার চোখ চলে যায় আয়ানের দিকে রোজা চোখ পিটপিট করে তাকায় আয়ানের দিকে , দুষ্টু হাসি হেসে বলে,
নিশ্চয়ই আয়ান ভাইয়ার বিয়ে , কিন্তু পাত্রী কে , পাত্রী কই ?
রোজার বলা কথায় যেন বিষম খায় আয়ান বেচরার কাশি উঠে গিয়েছে রিতিমত খুক খুক করে কাশতে কাঁশতে সে কাজির উদ্দেশ্য বলে,
কাজি সাহেব আপনি আপনার কাজ শুরু করেন।
রেজিস্ট্রারের পাতা খুললেই, কিছু একটা লিখতে থাকে কাজি, এদিকে নোনস্টোপ বক বক করে চলছে রোজা ,
কি হলো বলছো না কেন কেউ ! হাসপাতালে কার বিয়ে হচ্ছে?
রোজার কথা থুরি কেউ শুনছে। বেচারি যেন হাপিয়ে উঠেছে মুখটা পুরো বাংলার পাঁচ বানিয়ে গাল ফুলায় সে। এর মধ্যেই কাজি সাহেব বলে ওঠে,
দেনমোহর কত বাধা হবে যদি কেউ বলতেন।
আমার যা আছে সব কিছুর অর্ধেক , সাথে আমার কবরের পাশের আরেকটি করবের স্থান। আমার সব কিছুর পাসওয়ার্ড।
রোজা চোখ আটকে যায় নির্ণয়ের উপর এত সময়ে কি হয়েছে সব ভুলে তার কানে যেন শুধু নির্ণয়ের বলা কথাগুলোই বাজছে।
এদিকে কাজি সাহেব রেজিস্ট্রার খাতা এগিয়ে দেন আয়ানের হাতে
ছেলে মেয়ের সই লাগব।
আয়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়, রেজিস্ট্রার হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ায় নির্ণয়ের কাছে নির্ণয়ের দিকে এগিয়ে দিতেই নির্ণয় হাতে তুলে নেয়। নীল রঙের কলম দিয়ে। নিমেষেই সই করে দেয় সে । এবার পালা রোজার
নির্ণয়ের সই হতেই , খাতায় বাড়িয়ে দেয় রোজার দিকে , আবাকের চরম সীমায় পৌছে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে সকলের মুখ ভঙ্গি দেখে সে রিধিমা তৃধা একজায়গায় দাড়ানো ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ টুকছে রিয়ান। আয়ান যেন কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে রয়েছে ,
এসব কিহ হচ্ছে বলবে কেউ আমাকে ?
বিয়ে হচ্ছে ।
নির্ণয়ের সরল স্বীকারোক্তি। তবে এই উত্তরে যেন মোটেও খুশি না রোজা।
আপনার কি আমাকে কানা মনে হয় , নাকি চোখ নেই।আমি কি টেরা ,, এখানে বিয়ে হচ্ছে আমি দেখতে পাচ্ছি তবে বিয়ে টা কার
আমার ।
কিহ ?
হুঁম আমার আর তোর বিয়ে , তাই কথা না বাড়িয়ে জলদি সাইন কর।
নাহহহহ …এ হতে পারে ! এটা আমি কখনোই মানবো না। এভাবে বিয়ে কখনোই হতে পারে না। আমার কত দিনের শখ বউ সাজবো একটু রং ঢং করে ছবি তুলবো এভাবে বিয়ে কখনোই নাহ।
ও ভাইজান …
রিয়ান এখনো বিজি আঙ্গুল দিয়ে নখ কাটতে এটাই যেন তার একমাত্র কাজ। আশেপাশের কোনো কথাই যেন কানে যাচ্ছে না তার।
এ্যাঁ এ্যাঁ এ বিয়ে হতে পারে না। আমি বিয়ে করবো না …
‘ বিয়ে ছাড়া বাসর করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে কার জানি বৈধতার প্রয়োজন ছিলো। তবে সে যখন চাইছে না তবে থাক
কাজি সাহেব আপনি তাহলে আসুন পাত্রী রাজি নয়।
নির্ণয় কথায় মুখ টিপে হাসছে রুমের সকলে, তবে কারো মুখে কোনো কথা না। কাজি নিজের যেন চমকের উপর চমক খাচ্ছে, একে তো হাসপাতাল বিয়ে তার উপর
‘এমা নির্ণয় ভাই আপনি এতো পাষাণ কেন বলেন তো আমি কি বলেছি বিয়ে করবো না আমি বলেছি আমি বউ সাজবো।
তা পড়ে দেখা যাবে , এখন জলদি সাইন কর।
করবো তবে কথা দিন , আমাকে বউ সাজাবেন আমাকে।
হুঁম ঢাকায় ফিরে।
রোজা আর কথা বাড়ায় না দ্রুত হাতে সাইন কারে তার বৈধতার দলিলে। যেটা তার এতো বছরের স্বপ্নের বাস্তবায়নের সাক্ষী। রোজা সই করতেই। সাক্ষীর স্থানে একে একে আয়ান তৃধা দুজনেই সই করে।
সকলের সাইন হতেই কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করেন। এবার পালা কুবল বলার , কাজি সাহেব প্রথমে নির্ণয় দিকে তাকিয়ে কবুল বলতে বলেন ।
কাজির আদেশ পেতেই নির্ণয় তাকায় রোজার চোখের দিকে।নিজেকে ভাসিয়ে দেয় আজ আবেগে। শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করে…
তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য রোজ।আজ থেকে সেই সত্য সারা দুনিয়া জানবে। সকলে জানবে নির্ণয় চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনীকে , আমার ছায়াকে। বৈধতা দিলাম , বউ মানলাম , ভবিষ্যৎ মানলাম। কবুল করলাম ,
কবুল, কবুল, কবুল।
মূহুর্তেই পুরো ঘর যেন আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। কাজি সাহেব নিজেও আলহামদুলিল্লাহ পড়েন ,
এবার পালা রোজা , কাজি সাহেব রোজার মুখ পানে দৃষ্টি নিচে নামিয়ে কবুল বলতে বলেন
রোজা তাকায় নির্ণয়ের চোখে যেই চোখ জোড়া মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাকে। এতো সময়ে অপেক্ষার পর যেন আজ যেন সব কেমন নতুন রোজার কাছে। রোজা ডুব দেয় নির্ণয় চোখের মায়ায়
আমার খেপাটে মহা রাজ , জিবনে বুঝ হওয়ার পর থেকে ঠিক যেভাবে আপানাকে চিনেছি ,ঠিক যে ভাবে আপনাকে চেয়েছি , আজো ঠিক সেভাবেই চাই ছি। আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে খুশির দিন আমার আপনি আমার হবেন। দেখুন চোখের কোণায় পানি জমেছে। আজ আমি খুশিতে কাঁদছি।হ্যা আপনি আমার হয়েছেন , আমি কথা দিচ্ছি শেষ নিঃশ্বাস অবদ্ধি আমি আপনার থাকবো।
আমি মানছি আপনাকে স্বামী হিসাবে , কবুল করছি আমাদের ভবিষ্যত।
কবুল, কবুল কবুল।
এবারো পুরো ঘর জুড়ে আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনি ভেসে ওঠে। তবে এবার শুধু ঘরে নয় দরজার কাছ থেকে ভেসে একি শব্দ। সকলে তাকায় দরজার দিকে নার্স ওয়ার্ডবয় সকলেই। দাড়িয়ে সেখানে। আয়ান এগিয়ে গিয়ে ভেতরে আসতে বলে তাদের।
এবার মোনাজাত ধরার পালা সকলে এক হাত তুলে মোনাজাত ধরে নবদম্পতির জন্য। মোনাজাত শেষ হতেই , কাজিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় রিয়ান। এদিকে পুরো ঘর যেন মুখরিত হয়েছে। রোজা কেমন ব্লাস করছে করবে নাই বা কেন নতুন বউ কিনা। নির্ণয়ের খেয়াল হতে হাল ঝুকে আসে রোজার কানের কাছে ফিস ফিসফিসিয়ে বলে,
আপাতত অসুস্থ তাই ছেড়ে দিচ্ছি বউজান। তবে পরবর্তীতে কিন্তু ছাড় পাবেনা। সুস্থ হওয়ার সাথে নাহয় নিজের তৈরি করে নিও ,
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩৩
ভয়ংকর কিছু হতে চলছে ….
অসভ্য।
উহু তা বললে শুনছিনা এখন আপনি মিসেস চৌধুরী। তাই আপনার মাঝেও অসভ্যর বিজ রোপন করা হবে তবেই না মজা আসবে।