প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৭
Zannat Xhowdury
হুম তাড়াতাড়ি চল যেতে হবে ।
কথাটা শুনা মাত্রই তৃধা বাইকে উঠে হেলমেট পড়তে পড়তে বললো
চল ,
রিয়ান তৃধাকে বাইকে উঠতে দেখে ভ্রু জোড়া কুচকে বললো
তুই নাম আমি বাইক চালাবো । এতে যেনো তৃধার রাগ তিরতির করে বাড়তে শুরু করলো ।
কেনো রে শালা আমার বাইকের পিছনে বসলে কি তো জাত যাবে নাকি । দেব না মিডিল স্টাম বরাবর এক লাথি তখন পুরুষত্ব হারাবি, বসলে বস নাহলে আমি গেলাম তুই থাক । রিয়ান জানে তর্কে সে পাড়বে না তাই বাধ্য ছেলের মতো সেও বাইকে চড়ে বসলো তৃধাও বাইক স্টার্ট দিলো ।
কিছুদূর গিয়ে একটা বিটের ধাক্কায় রিয়ানে পড়ে যেতে নিলেই তৃধার কোমড় ধরে নিজেকে সামলে নেয় । তৃধার কোমড়ে রিয়ানের হাত বুঝতে পেড়ে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো
এই শালা, লুচ্চা হারামখোড় , বেহুদ্দা হাত সরা তোর ।।
একদম আমার শরীরের টার্চ করবি না শালা । তাহলে কিন্তু মেরে বৃন্দাবনের টিকিট ধরিয়ে দেব বলে রাখলাম ।
তৃধার কথায় শেষ হতেই রিয়ান বললো কেন রে আমার শরীরের কি নোংরা লেগে আছে যে তোকে ধরলে নোংরা হয়ে যাবি ।
আর আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে যে তোকে ধরেছে এটা তো তোর সাত পুরুষের কপাল রে শালী ।
তুই আর হ্যান্ডসাম হু । নিজেকে মনে হয় তুই আয়নার দেখছিস না তাই না । তোর সাথে হ্যান্ডসাম কথাটা যায় না বুঝলি । তুই যে কিভাবে এ্যানসির কাজিন হলি এটাই আমি ভাবি ।
রিয়ান এবার রেগে তৃধার মাথায় গাট্টা মেরে বললো এই শালি তো টেপ রেকর্ডার চুপ করে দ্রুত গাড়ি চালা নাহলে দ্যা গ্রেট নির্ণয় চৌধুরী আমাদের দৌড়ানি দিবে ওর ওই টাইগার দিয়ে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কি হলো কথা বলিস না কেন , কেন এসেছিস এই ঘরে ,
আরে অসভ্য লোক আগে তো আমাকে তুলুন। খাম্বার মতো শরীল নিয়ে কই থেকে এসে পড়লেন আমার সামনে । আল্লাহ গো আমার কোমড় । নির্ণয় রোজাকে কোলে তুলে বেডের দিকে যেতে শুরু করলো ।
এই এই কি করছেন কি ছাড়ুন বলছি ,
হুসসসসস , মুখটা চুপ রাখ ।
রোজা কিছু বললো না শুধু অপলক চেয়ে রইলো ওই নীল চোখ জোড়ায় ।
রোজাকে বেডে কাছে গেলো নীড় তারপর শুয়ে দিয়ে
নীড় যেতে নিলেই রোজার কথায় আবারো থেমে গেলো নির্ণয়।
সেদিন কি হয়েছিল নির্ণয় ভাই ।
আমাকে না বলে কেন হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি ।
ইসস্ কতো মায়া জড়ানো সেই কথা । কত অভিমান জড়ানো সে কথা ।
আর রোহ…….
Shut up Rose
বাকি কথা শেষ করার আগেই থেমে গেল সে । সামনে দাঁড়ানো রাগে চোখ লাল হওয়া নীড় কে দেখে গলা শুকিয়ে গেছে ওর । কি ভয়ংকর লাগছে নীড়ে ওই চোখ জোড়া । একটু আগেও কতটা শান্ত ছিল ওই চোখ জোড়া।
ওই নাম যদি তোর মুখে আর কখনো শুনি তাহলে তোকে জানে মেরে দিব রোজ ।
I swear একদম জানে মেরে দিব। Mind it
নির্ণয়ের হুঙ্কারে বেচারা টাইগার ও ঘরের এক কোণে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে
আআ আমি আআআ আসলে
আমাকে চিনতে পেরেও কেন এসেছিস তুই?
আমার ঘরে আসার সাহস কোথায় পেলি তুই ।
লিসেন মিস মেহরিন জান্নাত রোজা , তোর এইসব পাকনামি অন্য কোথায় দেখাবি আমার সামনে না । তুই যে চৌধুরী বংশের বংশধর এটা প্রমাণ করতে এসেছিস তাইনা আমার ঘরে । নির্ণয় রাগে গজগজ করতে করতে রুমে এককোণে কাচুমাচু হয়ে থাকা টাইগার কে বললো
Tiger just leave this room fast . I need privacy
টাইগার কি বুঝলো কে জানে তবে মালিকের করা হুকুমে রুমে ছেড়ে চলে গেলো ।
রোজা টাইগারের যাওয়ার পানে একবার তাকিয়ে আবার তার সামনে থাকা ভয়ংকর মানবের দিকে তাকালো ।
” ভয়ংকর ” হ্যাঁ এই মূহুর্তে নির্ণয় কে ভয়ংকর মানবের থেকে কম লাগছে না । তার হালকা নীল চোখ জোড়ার ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে ।
রোজা তার এই রূপ দেখে অনেক কষ্টে নিজের কান্না সামলে রেখেছে । এবার মনে কিছু টা সাহস জুগিয়ে নির্ণয়ের উদ্দেশ্য আবারো কিছু বলতে নিবে তার আগেই নির্ণয় শক্ত হাতে থাবা এসে রোজার চোয়ালজোড়া শক্ত করে চেপে ধরলো , হিসহিসিয়ে বললো
নিজের মুখ বন্ধ রাখ আর এখনি আমার রুম থেকে বের হো। আর কখনো আসবিনা আমার সামনে ।
রোজা নির্ণয়ে চোখের দিকে একবার তাকিয়ে
কোণোমতে কান্না থামিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল নির্ণয়ের রুম থেকে ব্যাথার কথা যেন এই মূহুর্তে ভুলে গেছে সে ।
রোজা যেতেই সামনে থাকা কাঁচের টেবিলে সজোরে লাথি মারলো নির্ণয় । এক মূহুর্তে ঝমঝম শব্দের কাঁচ গুলো গুড়িয়ে পড়লো ফ্লোরে ।
আমার পাখি আমার খাঁচায় এবার তাকে দূরে সরানোর ক্ষমতা কারো নেই । কেউ সরাতেই আসলে তাকে জানে মেরে দেব আমি ।
আর আমার রোজের জন্য শুধু পাঁচ জন কেনো আমি পুরো পৃথিবী ধ্বংস করতে পারি ।
রেস্টুরেন্টে ভিতরে ডুকেই কাজে লেগে গেছে নীলিমা ।
ইসস্ আজকের যদি ছেলেটা ঠিক সময় না আসতো না জানি কি হতো তার
পরমুহূর্তেই নিজেকে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো কি আর হতো।
রায়াতুল নিলীমা , বয়স ১৮ কি ১৯ এর কাছাকাছি , বাংলাদেশ থেকে লেখা পড়ার জন্যে এখানে এসেছে সে । নীলিমার মা মারা গিয়েছিল তার যখন ৫বছর বয়স তখন । মা মারা যাওয়ার পর , তার বাবা মেয়ের কথা ভেবে আবারো বিয়ে করেন ।
তবেই ওই বাঙ্গালীর কথায় বলেনা, ” পর কখনো আপন হয় না ” । নিলীমার বাবা নিলীমা কে ভালবাসলেও তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী কখনোই ভালোবাসে নি তাকে সুযোগ পেলেই মারধর করতো তাকে নিলীমার বাবা একজন ব্যবসায়ী টাকা পয়সার অভাব কোনকালেই ছিল না তার। তবে তার খরচের বেলায় ছিলো সৎ মায়ের ঘোর আপত্তি । সৎ মায়ের জন্য লুকিয়ে খরচ দিতে তার বাবা । নিজের চেষ্টায় ও বাবার লুকিয়ে করা সাহায্য এচইএসসি পাশ করে সে । স্বপ্ন ছিল বাহিরের দেশে পড়ার ।
ভালো স্টুডেন্ট হাওয়ায় জার্মানিত এক ইউনিভার্সিটিতে স্কোর্লারসীপে পড়ার সুযোগ হয়েছে তার ।
বাবাকে জানানোর পর তার বাবা তার সৎ মায়ের অত্যাচারে হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় তাকে জার্মানি পাঠানো ব্যবস্থা করে। তা নিয়েও কম জল ঘোলা করেনি তার সৎ মা । এখানে এসেই এই কফি শপে পার্ট টাইম জব পায় সে । পার্ট টাইম জব এবং আর বাবার পাঠানো টাকায় বেশ ভালোই চলে তার।
হাঠৎ এক স্টাফের কথায় ধ্যান ভাঙল তার ।
৪ নম্বর টেবিলে কফি দিয়ে এসো একটা ।
নীলিমা ও ধ্যান থেকে বের হয়ে কাজে মন দিলো ।
রুমে এসে বালিলে মুখ বুজে কান্না করছে রোজা । তার নির্ণয় ভাই তাকে এভাবে বকেছে ভাবতেই শরীলে কাটা দিয়ে উঠছে তার। কি ভয়ংকর ছিলো তার ওই চাহনি ।
কেন এমন করলে তুমি ভাই । কেনো আমাকে , হঠাৎ ভাবনায় ডুবে দিলো রোজা
সময়টা তখন বসন্ত কাল । বসন্তের রূপময় নিসর্গে ছুঁয়েছে বাংলার অলিগলি। ফুলের মহিরুহ সাজে সেজেছে বাংলার প্রতিকৃতি। কী অপরূপ, কী মায়ামি বাহারি ফুলের ছড়াছড়ি। মন হনন করা প্রতিক্ষণ প্রতিক্ষেত্র রঙিন করা ফুলের শোভা। মুগ্ধময় কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হয় গ্রাম ও শহরের পথঘাট। বসন্তের সবুজ-শ্যামল নয়ন কাড়া দৃশ্যপট নাড়া দেয় মনের মধ্যখানে। শীতের মায়া ছিঁড়ে এসেছে ঋতুরাজ। শুকনো পাতারা ঝরে গিয়ে জন্ম নেবে কচি নতুন পাতা। পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর ওই পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত দেয় নবযৌবনের ডাক।
দুপুরে খাওয়া শেষে সকলে যখন ঘুমে ছোট রোজা একাই বাড়ির থেকে বের হয়েছে এসেছে ,, কোকিলে ডাক শুনতে । সেকি কান্ড কোকিল কে সে দেখেই ছাড়াবে । তবে হতোছাড়া কোকিল না জানি কোন গাছে বসে ডাকছে কে জানে । বাগানে আস্তেই রোজার চোখ বাগানে ফুটে থাকা গোলাপ গাছে ইস কি সুন্দর । রোজা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে এক নজরে চেয়ে থাকে । যেই না ফুল তুলতে যাবে , ঠিক তখনি পিছন থেকে কেউ একজন এসে রোজাকে আটকে দেয়
আরে রোজা যে , কি করছো
রোজা ঘুরে দেখে পিছনে দাঁড়ানো রোজার মামাতো ভাই রোহান ।
রোহান ভাই তুমি ।
দেখো না ভাইয়া একটা পাখির ডাক শুনতে শুনতে এদিকে এসেছিলাম এখন ফুল দেখে চোখ আটকে গেছে তুমি ফুলটা দেবে আমায় ভাইয়া ।
ফুল নিবে , রোহান ফুল এনে দিলো ,
জানো আমার কাছে না আরো অনেক ফুল আছে তুমি যাবে আমার সাথে ।
সত্যি আছে ,
হ্যাঁ আছে তো অনেক গুলো , আমার সাথে গেলো তোমাকে অনেক চকলেট ও দিব ।
কিন্তু নীড় ভাই খোঁজবে বাড়ির সবাই খুঁজবে । আমি নীড় ভাইয়া কে ডাকে আনি।
আরে চলো তোমার নীড় ভাইয়া এখন নেই এখানে । আর বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছে ।চুপ করে যাবো তাড়াতাড়ি চলে আসবো
বোকা রোজা । না বুঝে সেদিন গিয়েছেছিলো
এইটা কোন জায়গা ওরা কারা ভাইয়া ।
আমি বাসায় যাবো , ভাইয়া , ছাড়ো ।
তারপর কি হয়েছিল মনে নেই রোজার প্রায় ২মাস হাসপাতালে ছিলো সে। বাসায় ফিরে তার প্রাণ প্রিয় নীড় ভাই কে আর সে দেখে নি । বাড়ির সবাইকে অনেক বার জিজ্ঞেস করলেও কেউ কোনো উত্তর দেই নি ।
আজকে নিচে নীড় কে দেখে সে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে ঠিকি চিনেছে , ছোটবেলার নীড়ের আর এখনকার নীড়ে চেহারার যদিও কোন মিল নেই তবে ওই যে চোখজোড়া। প্রথমে চেনা চেনা লাগলেও পরে যখন তার মুখে নির্ণয় চৌধুরী নাম শুনে তখনি একবারে নিশ্চিত হয় এইটাই তার ভাই তার নির্ণয় ভাই । তবে নির্ণয়ে এই রূপ যে বড্ড অচেনা তার ।
রোজা কি করিস
কারো ডাকে অতীত থেকে বেড়িয়ে এলো রোজা । চোখ মুখ মুছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দেখে রিধিমা ।
আরে আপু তুমি কখন এলে , একি কাঁদছিলি তুই ?
কি হয়েছে বোন ।
কই না তো , আসলে বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছিল তাই
একটু ।
পাগল মেয়ে একটা । চল কিচেনে আমি খাবার বানাবো তুই বসে থাকবি । দুজনের কথার মাঝেই নিচে কারো চেঁচামেচিতে রোজাকে রেখেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো রিধিমা হলরুমে এসেই দেখে তৃধা আর রিয়ান দুজন মারামারি করছে ।
রিয়ান তৃধা চুল টেনে ধরছে ।
তৃধাও রিয়ানের চুল ধরে বলেছে …..
এই শালা , গিরগিটির বাচ্চা , চুল ছাড় মেয়েদের চুল ধরিস লজ্জা করেনা
রিয়ান ও কম কিসে সেও বলতে শুরু করলো ।
ওই রাক্ষুসী , ডাইনিং অবলা একটা ছেলে কে নির্যাতন করছিস আগে আমার চুল ছাড় না হলে এখনি বাসর সেরে ফেলবো ।
তবে রে করাচ্ছি তোকে বাসর , বলেই তৃধা রিয়ানের পায়ের উপর পাড়া মারলো। পায়ের ব্যাথায় রিয়ান তৃধার চুল ছেড়ে দিলো রিয়ান । সেই সুযোগে রিয়ানের হাতে কামড় দিলো তৃধা ।
ওরে রাক্ষুসী , মাংস খেকো প্রাণী , শালির বেটি বউ জংলি।
ওরে তোর জামাই তোরে দিন রাত পিটাবে রে ।
আরেটা দিবো নাকি তোকে লাথি
রিধিমা কাউচের কাছে এসে চোখ গোল গোল করে দাঁড়িয়ে আছে । কি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে সে ।
আর ওদিকে রিয়ান আর তৃধার মারামারি সিঁড়ি থেকে দেখে হাসছে রোজা । ইসস্ কি সুন্দর সেই হাসি , যেন কোনো ছেলের হার্টবিট ফাস্ট করতে সক্ষম এই হাসি । রোজা কি জানে তার এই হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছে একজন ।
কি হচ্ছে কি এইখানে ,
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৬
কারো কথায় সকলের চোখ গেলো সিঁড়ির ওপর নির্ণয় রোজার ঠিক পিছনে দাঁড়ানো । রোজা ঘুরলো না তার দিকে । নির্ণয় একবার রোজার দিকে তাকিয়ে হেটে নিচে চলে এলো । নির্ণয় কে দেখে তৃধা বলতে শুরু করলো
দেখনা এ্যানসি এই হনুমান টা না আমার চুল টেনে ধরছে