প্রমত্ত অঙ্গনা শেষ পর্ব 

প্রমত্ত অঙ্গনা শেষ পর্ব 
আরোহী নুর

আঁখির নবম মাস চলছে,আঁখির সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকে মির্জা বাড়ির প্রতিটা মানুষ,সেবা যত্ন আর পরিচর্যার কোনো কমতি নেই তার প্রতি কারো,সাথে একজন নার্স রাখা হলেও আদৃত নিজেই থাকছে তার কাছে বেশিরভাগ সময়,শেষের এই মাসে হাসপাতালে এমারজেন্সি ছাড়া যায় না সে,নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আঁখির জীবনে এমন কিছুসংখ্যক মানুষকে পরিবার হিসেবে পেয়ে।শুভ্রতা,আদিল,জাহানারা রাহমান প্রায়ই আসেন আঁখিকে দেখতে।আদ্রিশের সাথে আর কথা হয় না আঁখির।

আজ আঁখি বাগানের দিকটায় হাঁটছে সাথে তার নার্স, আদৃত হাসপাতালে গেছে একটু আগেই,আঁখি হাঁটছিল হঠাৎ আদ্রিশকে সামনে দেখতে পেল জলভর্তি চোখে দাঁড়িয়ে আছে।
″আরে আদ্রিশ তুমি?″
″শুনেছি তোমার টুইন বেবি হবে তাই তোমাকে দেখার ইচ্ছেটা আর চেঁপে রাখতে পারি নি,যদি তোমার সমস্যা না হয় তবে কি আমি ওদের একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?″

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবদারটা আঁখির মনে বেশ অস্বাভাবিক অনুভুতির জন্ম দিলেও মানা করতে পারল না আদ্রিশকে।বরং অনুমতি দিলে আদ্রিশ তার হাতটা আঁখির পেটের উপর রাখল।আঁখি লক্ষ্য করল আদ্রিশের হাত তখন কাঁপছিল আর চোখ দিয়েও অশ্রুধারা বইছিল।

″জানো আঁখি তুমি আগের থেকেও আরও সুন্দরী হয়ে গেছ।শুনেছিলাম গর্ভাবস্থায় মায়েদের না কি আলাদা মায়াবী দেখায়,তোমাকে তো অতিরিক্ত মায়াবী লাগছে।দেখলে তো নিয়তির খেলা যে বাহানায় তোমাকে পীড়াদায়ক জীবন দান করেছিলাম আল্লাহ তা লিখে দিলেন আমার কপালেই।আজ তোমার কোল ঠিকই ভরে গেছে আমিই নিঃস্ব হয়ে আছি।″
″আদ্রিশ শুকরিয়া করো আল্লাহ প্রাণ রেখেছেন,তোমাকে প্রায়শ্চিত্বের একটা সুযোগ দিয়েছেন।জীবন থেমে যায় না আদ্রিশ,এমন তো জরুরি নয় জীবনে বংশ বাড়াতে হলে বাচ্চা নিতে হলে নিজের অংশেরই প্রয়োজন হবে,তুমি একটা বাচ্চা দত্তক নিতে পারো,যাতে একটা অনাথ পাবে মাথার ছায়া,তুমি পাবে জীবনে বেঁচে থাকার নতুন কারণ।″

সুখে দুঃখে খুনসুটিতে পেরিয়ে গেল ৫ টে বছর,রিদিকার বিরুদ্ধে কোর্টে সাক্ষী হয়েছে তার নিজের পরিবার,আজিজ,আদ্রিশ,ও আদ্রিশ–আমিরুল এর পরিবার।সব সাক্ষ্য প্রমাণ সহিত রিদিকার সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড তবে ও শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণ হওয়ায় তাকে যাবতজীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হলো,

ওকে একটা পাগলাগারদ পাঠিয়ে দেওয়া হলো আইনি ব্যবস্থায়,কখনও ওর ভালো হওয়ার কোনো দিক দেখা গেলে ওকে জেলে নিয়ে আসার আদেশ রয়েছে,এদিকে রিদিকার চুল এবং দাঁত সব পরে গেছে,চামড়া শুকিয়ে গেছে,চোখের পাপড়িসহ ভ্রু এর চুলগুলো পরে গেছে,নখগুলো সব উঠে গেছে,তাকে দেখতে এতটা ভয়ংকর লাগে যে কেউ ওর সামনে যেতে চায় না,কেউ কথা বলে না ওর সাথে,

সারাদিন বোঝা হিসেবে পরে থাকা ছাড়া ওর কোনো কাজ নেই।আদ্রিশ একটা মেয়ে বাচ্চা দত্তক নিয়েছে,নাম দিয়েছে তার আরুশি।আদ্রিশ কখনও আঁখির সাথে বসে নিজের বাচ্চাদের নাম নির্বাচন করেছিল,যদিও আঁখি নেই তার জীবনে তবে তার স্মৃতিতে বাচ্চাটির নাম রাখল আরুশি।আরুশি বলতেই আদ্রিশের প্রাণ,আদ্রিশের সবকিছু জুরেই এখন আরুশির বসবাস,১০ মাস বয়স থেকে ওকে লালন-পালন করছে আদ্রিশ,আজ তার বয়স ৫ বছর ২ মাস।আদ্রিশ এবং আরুশির সাথে মাঝেমধ্যেই দেখা হয় আঁখি আদৃত ও তাদের বাচ্চাদের, আঁখি আদৃত স্বাভাবিক ভাবেই আদ্রিশের সাথে দেখা করে, কথা বলে থাকে।

″আয়াত,আয়াত,আয়াত।″
″কি হয়েছে আমার সুখপাখিটার?আমার মেয়েটার উপর এমন হিটলারি জারি কেন করছে?″
″জানেন আপনি কি করেছে ও?পাশের বাড়ির মিজান চাচার গাড়িতে কাঁদা মাখিয়ে এসেছে,উনি আমাকে এসে নালিশ দিয়ে গেছেন।″
″মাম্মা,মাম্মা,চলদি চলো মাম্মা,আয়াত ক্ষেপেছে?″

″কি হয়েছে আহনাফ? কি করছে ও?″
″মাম্মা,আমি আর আয়াত ক্রিকেট খেলছিলাম পাশের মাঠে,হঠাৎ পাশের বাড়ির দুই ছেলে ইরান–ইশান,দু’জন আমাদের সিনিওর,ক্লাস থ্রি তে পরে ওরা দু’জন এসে আমাদের ব্যাট বল কেড়ে নিয়ে খেলতে চায়,আমি আসছিলাম তোমাদের নিয়ে যাব বলে কিন্তু আয়াত এর আগেই ব্যাট তুলে একজনকে মেরে বসেছে,একজনকে বল দিয়ে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে,আমি আটকাতে পারি নি,ওদের হয়ত আরও মারছে,প্লিজ তোমরা চলো।″

″এই আয়াতকে নিয়ে আর পারি না।″
আদৃত,আঁখি দু’জনই ছুটে গেল সেদিকে,দেখল গিয়ে আয়াত মারামারি করছে ছেলে দু’টোর সাথে,ছোট্ট একটা মেয়ে হলেও দু’জনকে বেশ জব্দ করেছে,একজনকে কা*ম*ড়ে ধরেছে তো একজনকে খা*ম*ছে ধরেছে,আঁখি আদৃত ছুটে গিয়ে ওদের থামায়।
সবদিক ঠিকঠাক করে আয়াতকে নিয়ে বাড়ি আসে দু’জন।

″আঁখি বাচ্চা তো যেতে দাও।″
″আপনি একটাও কথা বলবেন না,এই আপনার আশকারা পেয়ে ও মাথায় চড়ে বসেছে।চুপচাপ বলো আয়াত মিজান চাচার গাড়িতে কাঁদা কেন মাখিয়েছ?ওই ছেলে দু’টোকে এভাবে কেন মেরেছ?″
″মাম্মা মিজান নামক দাদুর গাড়ির পাশ দিয়ে মাঠে খেলতে যাচ্ছিলাম আমি গত পরশু,তখন শুধু শুধু উনি বলেন আমি না কি উনার গাড়িতে ধুলা দিয়েছি যেখানে উনার গাড়িতে আগে থেকেই ধুলা ছিল।

আমি মানা করলে আমাকে বকাবকি করেন,বলেন আমার নামে না কি নালিশ করবেন তোমার কাছে,এখন নালিশই যখন করবেন মিথ্যে নালিশ কেনো করবেন যেখানে আমি কোনো দোষ করি নি,তাই কাঁদা মাখিয়েছি,মিথ্যে নালিশে বকা খাওয়া থেকে তো সত্য নালিশে বকা খেলে বেশি শান্তি লাগবে।তুমি বলো ওখানে কি আমার কোনো দোষ ছিল।আর ওই ছেলে দুইটা আমাদের ব্যাট বল কেড়ে নিচ্ছিল,আহনাফ আটকাতে গেলে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়,আমাদের জিনিস কেড়ে নিবে আর আমাদেরই মা*র*বে তাই রাগ উঠে গেছিল।″

″রাগ উঠে যায় তোমার এই বয়সে!এভাবে মারবে তুমি মানুষকে!বেয়াদবি করবে তুমি!তুমি আমায় এসে বলতে পারো নি?আমি বলি নি রাস্তাঘাটে মারামারি, অসভ্যতা না করতে?″
″সরি মাম্মা,কিন্তু আমার রাগ উঠে যায় আমি কি করব বলো?″
″তোমাকে তো আমি।″
″পাপা।″
আয়াত গিয়েই আদৃতের পিছন লুকিয়ে যায়।

″আজ থেকে বাড়ির বাইরে খেলতে যাওয়া বন্ধ, বাড়িতে এতো জায়গা থাকা সত্ত্বেও বাইরে খেলতে হবে তোমাদের?খবরদার যদি গার্ডদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছ তো।″
″হয়েছে আঁখি যেতে দাও,আমি ওকে বুঝিয়ে বলব।″
আয়াতকে কোলে নিল আদৃত।

″প্রিন্সেস রাগ উঠে গেলেই তো তাকে উঠতে দেওয়া যায় না,আমাদের তাকে দমন করতে হয়,মা*র*পি*ট অসভ্যতা এসব ভালো ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না,তুমি না আমার গুড গার্ল,আর গুড গার্লকে এসব মানায়।″
″সরি পাপা,আমি সামনে থেকে খেয়াল রাখব।″
″এই তো আমার গুড গার্ল।″
″আই লাভ ইউ পাপা,উম্মাহ।″

আদৃতের গালে চুমু কেটে তার কোল থেকে নেমে আঁখির কাছে যায় আয়াত এবার।
″মাম্মা,আই এম সরি,আর এমনটা হবে না,কোলে নাও না আমায়।″
″আঁখি আয়াতকে কোলে নিলে আয়াত আঁখির গালেও একটা চুমু কাটে।″
″আই লাভ ইউ মাম্মা।″
″হয়েছে এবার তোদের বিচারকার্য শেষ হলে আমার সোনাদের এদিকে দে।″হেসে বললেন শায়েলা মির্জা।
″যাও দাদু দিদুর সাথে,আর হ্যাঁ একদম দুষ্টুমি করে উনাদের পেরেশান করবে না এই বলে দিলাম।ভাইয়ার মতো শান্তশিষ্ট থাকবে।″

″কি মাম্মা,তোমার ছেলে তো একটা গোমরা ভিতুর ডিম,ওর মতো আমায় হতে বলো না তো।″
কথাটা বলেই আয়াত এক ছুটে চলে গেল।আরিয়ান আর শায়েলা মির্জা হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
″ছেলেটা আমার যেমনই হোক না কেন মেয়েটা কিন্তু তোমারই ফটোকপি।″
″এটাই তো ভয় আমার।″
শুকনো মুখে বলল আঁখি।
রাত ১ টা,বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে এই মাত্র বিছানা নিয়েছে আঁখি আদৃত।আদৃতের বুকে শুয়ে আছে আঁখি।

″ডা.সাহেব।″
″হুম?″
″আমার না আয়াতকে নিয়ে খুব ভয় হয়।এই বয়সে এতো রাগ জেদ।″
″এতে ভয়ের কি আঁখি?যতটুকু জানি তুমিও তো ছোটবেলায় এমনই ছিলে,তাছাড়া ও তোমারই প্রতিচ্ছবি,আর তুমি তো আমার জানামতে নিজের সীমালঙ্ঘন করে গিয়ে কিছু করো নি,কোনো অন্যায় করো নি নিজে জেনেশুনে।বরং তুমি সকল সিদ্ধান্ত খুব ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় নাও,ও স্পেশাল চাইল্ড,যেমনটা তুমি ছিলে।

আহনাফ সারাদিন পড়ালেখা করে যতটুকু জ্ঞান আয়ত্ব করতে পারবে না ও তা দশ মিনিটে করে দিতে সক্ষম,ওর বয়সের বাচ্চাদের তুলনায় ও সবকিছুই বেশি বুঝে,তাই ওকে কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়া বড় জিনিস হবে কি?এটা তো ওর ভালো লক্ষণ।এতো কিছু ভেবো না,আল্লাহ সব ঠিক রাখবেন।ঘুমিয়ে পরো সকালে হাসপাতাল আছে।″

″এটাই তো ভয় ডা.আদৃত,ও আমার মতো হয়েছে,মনে মনে ভয় পাই ও আমার পথেই না চলে আসে আবার।যতই হই না কেন দিনশেষে আমি একজন মা।″
″আমি জানি আঁখি তুমি কিসে ভয় পাচ্ছো।তুমি ভয় পাচ্ছো আয়াতও তোমার মতো কোনো প্রমত্ত অঙ্গনায় না পরিণত হয়,কিন্তু আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই।তোমার মতো প্রমত্ত অঙ্গনা বাংলাদেশের প্রতি ঘরে জন্ম নিলে পৃথিবীর রুপটাই পাল্টে যাবে।নিজেকে নিয়ে গর্ব হয় আমি প্রমত্ত অঙ্গনার স্বামী,আরও একজন প্রমত্ত অঙ্গনার বাবা হলে দোষ হবে কি তাতে।

হ্যাঁ আঁখি সেদিন যখন তুমি রিদিকাকে সবকিছু বলছিলে তখন আমার জ্ঞান ফিরে এসেছিল,কিন্তু তোমাকে কথা বলতে শুনে আমি আর প্রতিক্রিয়া করি নি কারণ আমি জানতাম তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সক্ষমতা খুব প্রখর,যাক সেদিন তোমার কথাগুলো শুনতে পেয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেই নি।আর কখনও বুঝতে দিবও না।তোমার রহস্য না হয় রহস্যই থাকল পৃথিবী সহিত আমার কাছেও,আমার যে এই রহস্যময়ীকেই বেশি পছন্দ।″

″আমি জানি ডা.আদৃত, আপনি জানেন আমি প্রমত্ত অঙ্গনা,কথাগুলো আমিই আপনাকে জানিয়েছি,কারণ আপনি আমার প্রথম ভালোবাসা,আপনাকে যতটা ভালো আমি বাসি তার থেকে বেশি বিশ্বাস করি,তাই আপনার থেকে জিনিসটা লুকোতে চাই নি,সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে,আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে আপনি পারেন নি,কিন্তু আমি কখনও আপনাকে বুঝতে দিব না যে বিষয়টা আমি জানি।

আপনি আমার রহস্য মনে চেঁপে রাখলেন আর আমি না হয় আপনার টা রাখলাম।সত্যিই আজ নিজের ভাগ্যের উপর নিজেরই হিংসে হয়,এতো ভালো ভাগ্য কি করে পেলাম!আপনার মতো কাউকে জীবনে পাবো কখনও কল্পনায়ও ভাবি নি।জীবনের প্রতি পদে এভাবে সাথে থাকার,এভাবে ভালোবাসার মতো সাথী যেন আল্লাহ সবাইকে দেন।সেদিন সবকিছু জেনেও আমার সাথে ছায়ার মতো থেকেছেন,আমাকে ভালোবেসেছেন,আমার জীবনের আসল সত্যটা জেনেও তাকে মিথ্যে বানিয়ে মানিয়ে নিয়েছেন আর কিছুই চাই না আমার,আপনি হলেই চলে।সেদিন যে বিশ্বাসে কথাটা আমি আপনাকে জানিয়েছিলাম আপনি সে বিশ্বাস অটল রেখেছেন।প্রমাণ করেছেন আরেকদফা আপনিই আমার জীবনের সবথেকে বেশি আপনজন।″

আজ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানের আগেই প্রাণ যায় একটা ১২ বছরের মেয়ের,ধ*র্ষ*ণে*র স্বীকার হয়েছে সে।মেয়েটির মা চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন।
″রা*ক্ষ*স*গু*লো কেঁড়ে নিল আমার মেয়েকে।নিজেরা শান্তিতে বেঁচে আছে আমার মেয়েটাকে ছিঁ*ড়ে খেয়ে,আল্লাহ তুমি তাদের দেখো আল্লাহ।″
সাদাবিছানা মেয়েটির র*ক্তে লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।সারাশরীরে নখ আর কামরের দাঁগ,মেয়েটির উন্মুক্ত চোখগুলো যেন ডেকে ডেকে বলছে আঁখিকে।

″আপু ওরা আমায় ছাড়ে নি,শকুনের মতো ছিঁ*ড়ে খেয়েছে আমায়,তুমিও ওদের ছিঁ*ড়ে খেও,ওদের একদম ছেড়ো না।রাগে বিষাদে আঁখির চোখ বেয়ে পরল টপটপ করে জল,যা আদৃত দেখতে পেল স্পষ্ট। বুঝতে পারলো এই জল না*শ*ক*দে*র না*শ হয়ে বয়ে পরেছে,ছাড় পাবে না কেউ এবার।″

দু’জনই পালিয়ে বেড়াচ্ছে,আঁখি নিজে খোঁজ নিয়েছে ওদের, অবশেষে জানতে পেরেছে তাদের গা ঢাকা দিয়ে লুকনোর স্থান,প্রায় চারদিন লেগেছে আঁখির তাদের সঠিক খোঁজ নিতে,রাত ২ টা,একটা ঝুপড়ি ঘরে শুয়ে আছে দু’টি লোক,পুলিশের হাত থেকে বেঁচে এখানে ঠাই নিয়েছে দু’জন। নির্দ্বিধায় শুয়ে ছিলো তারা হঠাৎ একজন কক্ষে কিছুর নড়াচড়া শুনলে উঠে বসে,ওপরজনকেও ডেকে তুলে।

″এই বিজু,ঘরে যেন কেউ আছে।″
″কে হবে এতো রাতে!″
তখন ঘরের ছোট জানালা দিয়ে বাইরে থেকে আগত জোৎস্নার আলোতে দু’জন কারো অবয়ব দেখতে পায় নিজেদের ঠিক সামনেই।ভিতু কন্ঠে দু’জনই বলে উঠে।
″কে তুমি?″
″প্রমত্ত অঙ্গনা, তোদের নাশ।″
আরও দু’টি লা*শ পাওয়া গেল আজ,লা*শের পাশে লিখা।
মায়ের বুক খালি করা ধর্ষককারীদের বেঁচে থাকা মানায় না।

প্রমত্ত অঙ্গনা।
গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকজন ইন্সপেক্টর আগ্রহ বশত প্রমত্ত অঙ্গনা কেস হাতে নিলেও এখনও কেস ঝুলন্ত।মিডিয়া থেকে সাধারণ জনগণ অব্দি সবাই চায় প্রমত্ত অঙ্গনা এভাবেই অন্যায়ের প্রতিরোধ করে যাক।দেশে জন্ম নিয়েছে প্রবল জনসমর্থন প্রমত্ত অঙ্গনার পক্ষে, যার ফলস্বরূপ তাকে ধরার আগ্রহ কম হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসনেরও।

আজ আয়াত আহনাফের ৫ম তম জন্মদিনে অনেক বড় অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে মির্জা হাউজে,অনেক মেহমান এসেছেন সেখানে,তবে অনুষ্ঠান শুরুর প্রথম থেকেই আঁখি লক্ষ্য করছে একটি মেয়ে আদৃতের সাথে বেশ ঘেঁষাঘেঁষি করার চেষ্টা করছে,তবে আদৃত তাকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না,বরং এরিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ একটা কল এটেন্ড করতে আদৃত একা একটা কক্ষের দিকে গেলে মেয়েটিও পিছু যায়,আঁখিও পিছু নেয় তাদের।
আদৃত ফোনে কথা বলে আসতে নিবে তার আগেই মেয়েটি তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,আদৃত সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।

″এটা কোন ধরনের ব্যবহার তানজিন!″
″আমি তোমাকে ভালোবাসি আদৃত,তুমি যা চাইবে তাই পাবে আমার কাছে,প্লিজ একবার হ্যাঁ বলো,তোমার স্ত্রী কিছুই জানবে না।″

″আর এক বার যদি এই কথাটা তোর মুখে শুনি বা তোকে আমার আশপাশে দেখি তবে আমি ভুলে যাব তুই একটি মেয়ে,আমি আঁখিকে ভালোবাসি,আমি শুধুই ওর,এক নারীতেই আমার বাস,আর সেই নারীতেই আমার নাশ,ওর আর আমার মধ্যে তৃতীয় কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে শেষ করে দিতেও দু’বার ভাববো না আমি,চুপচাপ চলে যা নইলে গার্ড ডেকে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়েবের করে দিতে বাধ্য হবো আমি,মায়ের বান্ধবীর মেয়ে ভেবে এতদিন কিছু বলি নি তাই বলে ভাবিস না তুই সুযোগ পেয়ে যাবি।″

অতিরিক্ত রাগে আদৃত একপ্রকার গর্জে কথাগুলো বলে বেড়িয়ে গেল।
আদৃতকে আসতে দেখে আঁখি লুকিয়ে গেল।অতঃপর আলতো হাসলো।
রাতে আঁখি বিছানা গোছাচ্ছিল ঘুমানোর জন্য।তখন আদৃত তাকে নিজের পাশে বসিয়ে বলল।
″আঁখি আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।″
″হুম বলেন?″

″ঐ যে মায়ের বান্ধবীর মেয়ে তানজিন,কয়েকদিন ধরে আমার পিছু ঘুরঘুর করছিল,আমি পাত্তা দেই নি,কিন্তু আজকে সব লিমিট ক্রস করে ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল তখন আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই,কিছু কঢ়া কথাও শুনিয়ে দেই।″
″কি! ও আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিল!আপনি সুযোগ না দিলে এমনিই জড়িয়ে ধরবে?″
″আমি কোনো সুযোগ দেই নি আঁখি।আর দেওয়ার হলে তোমাকে কেন সবকিছু বলতাম?″
″বলছেন যাতে আপনি সত্যিই অন্যত্র গেলে আমি আপনার উপর বিশ্বাস রাখি,ভালো করে জানি আমি আপনার মতো পুরুষদের। ″

″আমার মতো পুরুষদের মানে?আমার চরিত্র কি খারাপ পেয়েছ তুমি?″
″অনেক কিছুই। ″
আদৃত জবাবে কিছুই বলল না,ছলছল নয়নে আঁখির দিকে তাকিয়ে অভিমান নিয়ে শুয়ে পরল একপাশ হয়ে।আঁখি মুখ চেঁপে হাসল।

অতঃপর এগিয়ে গিয়ে আদৃতের গালে চুমু কাটল। হাতে মুছে দিল তার চোখের জল,তারপর তার কপালে চুমু দিয়ে বলল।
″ভালো করে ঝগড়াটাও করতে জানেন না আপনি।বরং অভীমান করে শুয়ে থেকে চোখের জল ত্যাগ দিতে জানেন।কয়েকটা কটু কথা শুনিয়ে দিলেই তো পারেন আমায়।″
″এর মানে এসব ফাজলামো ছিল তোমার!″
″তা নয় তো কি,হা হা হা হা।″

″সবকিছুতে ফাজলামো ভালো লাগে না আঁখি,জানো কতটা ভয় পাই আমি তোমাকে হারানোর,তাও আমার অনুভুতি নিয়ে মজা করতে ভালো লাগে তোমার।″
″জানেনই তো কতটা বিশ্বাস করি আমি আপনাকে তবে কেন এতো ভয় পান,আর আপনার অনুভুতি তো সব আমার জন্য তবে তা নিয়ে আমি মজা করব না তো কে করবে শুনি…তানজিন?হা হা হা।
″তোমাকে না আমি।″

″মা গো বাঁচাও,একটা চোখা নাকওয়ালা মে*রে ফেলল আমায়।″
″এখনই টেনে তোমার নাকটাও চোখা করছি দাঁড়াও।″
″আমার নাক এমনিতেই চোখা আছে আর করতে হবে না।ছাড়ুন আমায় লু*চ্চা পুরুষ।″
″তোমার সাথে লুচ্চামি না করলে কার সাথে করব সুন্দরী?″
হা হা হাহা।

সমাপ্ত

আসসালামু আলাইকুম। গতকাল একজন ভুল ধরেছিলেন আমি বলেছিলাম আদ্রিশের সাথে আঁখির পাঁচ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক তিন বছরের সংসার।এখানে বিয়ের পর তো ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় নি তাই বিয়ে সহিত পাঁচ বছর কাউন্ট করেছি আমি?আর অনেকে বলছেন আঁখি পরীমনির মতো,একটা যেতেই আরেকটা ধরছে আরও কতো কি,আদ্রিশের সাথে এতবছর থেকেও তাকে ছেড়ে দিলো এসব,সেক্ষেত্রে বলব আপনাদের চাহিদা কি?আঁখি আদ্রিশের পথ চেয়েই বসে থাকত জীবনভর?

এতবছরের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আদ্রিশ আঁখি থাকাকালীন আরেকটা বিয়ে করল,রিদিকার রূপ খা*রা*প না হলে,আর তাকে আদ্রিশের কাছে বা*জে প্রমাণ না করা হলে আদ্রিশ কখনই রিদিকাকে ছাড়ত না বরং একসাথেই দু’জনকেই পেতে চাইত।একজন রেখে আরেকজনের কাছে যাওয়া অন্যায় আর অ*শ্লী*ল*তা হতে পারে,তবে কেউ চলে গেলে নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে তিক্ততা মুছে দিতে নতুন কাউকে জীবনে নিয়ে আসা বাজে কিছু বলে আমার মনে হয় না।

কারো কাছ থেকে ধোঁকার উপর ধোঁকা পেয়েও তার পথ চেয়ে বসে থাকা মানুষ আদোও কি আছে আমার জানা নেই।যারা আদ্রিশের হয়ে এতো কষ্ট পাচ্ছেন আর আঁখিকে বা*জে ভাবছেন তাদের বলব নিজের জীবনে এমনটা হলে কি পথ চেয়ে বসে থাকতেন এমন আদ্রিশের?আর কিছু বলার নেই আমার,কিছু লোক ভালোতেও খারাপ খুঁজে নিজেদের মানসিকতার পরিচয় দেয়,শেষ পর্বে তাই কারো উত্তরে কটু কথা বলে কারো মন খারাপ করতে চাই না।কথাগুলো বাজে লাগলে ক্ষমা করবেন আমায়।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪৯