প্রাপ্তির হাসি পর্ব ৬

প্রাপ্তির হাসি পর্ব ৬
DIYA

কলিংবেল বাজিয়ে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে রিয়ান।এ নিয়ে দুইবার সে বেল বাজালো কিন্তু কেউ দরজা খুলেনি।আবারো বিরক্তি নিয়ে বেল বাজাতে যাবে তখনি দরজা খোলার শব্দে রিয়ান সামনে তাকালো।নিজের সামনে প্রাপ্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিয়ান একা একাই বলতে লাগলো,
উফ মিস ধানি লংকা আপনি দেখি আমার স্বপ্নর পাশাপাশি কল্পনায় ও আসতে শুরু করেছেন। এখন কল্পনায় আপনি আমার বাসার দরজা খুলে দিলেন।ইশশ এটা যদি সত্যি হতো যে এই মূহুর্তে সত্যিই আপনি আমার সামনে থাকতেন।- একা একাই বিরবির করে বলতে লাগলো রিয়ান
আপনি কি কিছু বললেন না মিস্টার রিয়ান ? – আমি
হ্যা মানে না। – এতক্ষণে রিয়ান বুঝলো প্রাপ্তি সত্যিই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
এই এক মিনিট এক মিনিট আপনি আমার বাসায় কি করছেন? কোনো খারাপ মতলব নেই তো আপনার? – রিয়ান

আপনার মাথার চিকিৎসা দরকার মিস্টার রিয়ান। আমি সিউর আপনার মাথা গেছে – আমি
আচ্ছা সরো আমি মার থেকেই সব জেনে নিব।এখন আমি আগে ভিতরে ঢুকে নেই – বলতে বলতে রিয়ান বাসার ভিতরে ঢুকে আসলো।
বাসার ভিতরে ঢুকে রিয়ান আরেক দফা চমকে গেলো।এ কি এসব হচ্ছে টা কি? রিয়ান চিৎকার করে বলে উঠে,
স্টপ এভরি ওয়ান । করছো টা কি তোমরা। এত বড় বড় মেইডরা নাকি একটা পিচ্চি বাচ্চার সাথে লুকোচুরি খেলছো।তোমাদের মাথা কি ঠিক আছে – রিয়ান
আর অন্য দিকে সবাই রিয়ানের ভয়ে কাপছে।রিয়ানার ও ভয় করছে পাপা যদি তাকে বকে।অবস্থা খারাপ হতে দেখে আমি বলে উঠলাম,
আপু ভাইয়ারা তোমরা যে যার কাজে চলে যাও – আমি
আমার কথা এখনো শেষ হয়নি – রিয়ান
অফিসের কাজে তো গিয়েছিলেন বাসার খবর কি আপনি রাখেন? আর কারোর কথা বাদ দিন কিন্তু নিজের মেয়েটার কথা তো মাথায় রাখবেন নাকি ? আন্টি আপনাকে কতবার কল করেছিল জানেন।কিন্তু আপনার কোনো খবর নেই – আমি

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মানে কি হয়েছে রিয়ুর আর আপনি যে আমাকে এতকিছু বললেন আমি কোথায় মনের আনন্দে ঘুরতে যাইনি মিস প্রাপ্তি। আমি অফিসের কাজেই গিয়েছিলাম।আর যেখানে ছিলাম সেখানে প্রচুর নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল।এখন বলেন দেখি আমার দোষ কোথায় ? -রিয়ান
এর মধ্যে রিয়ানা এসে রিয়ানের কোলে উঠে পরে। তারপর বলতে লাগে,
পাপা পাপা – রিয়ানা
হ্যা পাপা বলো – রিয়ান।
তুমি কি আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসছো ? – রিয়ানা
এই রে পাপা আমি তো চকলেটের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।কালকে এনে দিলে কি হবে ? – রিয়ান
না হবে না। কিন্তু আরেকটা উপায় আছে যদি তুমি চাও তো আমি বলতে পারি।আমার এই উপায়টা যদদি তুমি মেনে চলো তাহলে আর আমি তোমার উপর কোনো রাগ করবনা – রিয়ানা।
আচ্ছা পাপা তাহলে বলো তুমি সেই উপায়টা কি – রিয়ান।
কালকে আমাদের স্কুলে বাচ্চাদের একটা পার্টি হবে।মিস বলেছে সেখানে যেন সবাই নিজের মা বাবাকে নিয়ে যায় – রিয়ানা।

ও এই উপায়। তাহলে তো আমি আর আমার রিয়ু মা অবশ্যই কালকের সেই পার্টিতে জয়েন করব- রিয়ান
শুধু তাই না পাপা – রিয়ানা
তাহলে আর কি মাম্মা তুমি বলো ? – রিয়ান
আমাদের সাথে আরো একজন যাবে – রিয়ানা
আমাদের সাথে আবার সে যাবে মাম্মা ? – রিয়ান
আমাদের সাথে আমার ভাল আন্টি ও যাবে – রিয়ানা
ও আচ্ছা ভাল কথা। তোমার ভাল আন্টি যদি তোমার সাথে যেতে রাজি থাকে।তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই মাম্মা।এখন আমি রুমে যাই। ফ্রেশ হয়ে এসে কথা বলবো – রিয়ান
ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে এসো রিয়ান।কিছু জরুরি কথা আছে আমার তোমার সাথে। – লিজা আহমেদ
আচ্ছা আম্মু – বলে রিয়ান নিজের ঘরে চলে গেল
আর রিয়ানা গিয়ে প্রাপ্তি পাশের একটা সিটে বসলো।তারপর আকুপাকু করে বলতে লাগলো,
ও ভাল আন্টি – রিয়ানা
হ্যা পাখি বলো – আমি
শুনোনা ভাল আন্টি – রিয়ানা
বলো না পাখি – আমি

কালকে কি আমার সাথে স্কুলে যাবা।জানো আমার সব ফ্রেন্ড রা তাদের মাকে নিয়ে যাবে।ওদের সাথে ওদের মাকে দেখলে আমার অনেক খারাপ লাগে।সবাই সবার মা বাবার সাথে কত মজা করে খেলা খেলে। সবার মা সবাইকে নিজের হাত দিয়ে খাইয়ে দেয় আর কত কি। তুমি ও চলো না ভাল আন্টি। কালকে তুমি আমার মা হয়ে যাবে কেমন।প্লিজ ভাল আন্টি একটা দিন শুধু – রিয়ানা
ওকে পাখি কালকে আমি তোমার মা হয়েই যাব এবার খুশি – আমি
হুম প্রচুর খুশি – রিয়ানা
এখন তুমি রূমে যাও আমি এজটু তোমার দাদুমনির সাথে দেখা করে আসছি – আমি
আন্টির রুমের সামনে আসতেই বুঝতে পারলাম ভিতরে মিস্টার রিয়ান আর আন্টি কথা বলছে।কারোর পার্সোনাল কথা শোনা ঠিক না ভেবে আমি চলে আসতে নিব।তখনি আন্টির একটা কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে যাই।কি বলছে আন্টি এসব উনি বেঁচে আছে, তাহলে উনি এখন কই ? আর থাকেন কই ? এখানে কেনো উনি থাকেনা ? আর উনাদের আলাদা থাকার কারণ কি ?

অন্য দিকে,,
লিজা – রিশাদ
হ্যা বাবু বলো৷ – লিজা
সমস্যা টা আমার। যে আমি কখনো বাবা হতে পারবনা – রিশাদ
তাতে কি আমরা একটা বাবু দত্তক নিবো। এতে তো আর কোনো সমস্যা নেই ? – লিজা
একটা কথা বলবা আমাকে সত্যি করে ? – রিশাদ
হুম বলো কি কথা ? – লিজা
কেনো আমাকে ধোকা দিলে ? – রিশাদ
কি বলছো তুমি এসব রিশাদ। তোমার মাথা ঠিক আছে ? – লিজা
লিজার দিকে সেই ছবিগুলো ছুড়ে দিয়ে রিশাদ বলতে লাগলো,

এগুলোর কথা বলছি আমি। তোমার সাথে রিলেশনে জড়ানোর সময় তুমি জানতে আমার বাসায় স্ত্রী আছে। তাকে ধোকা দিয়ে আমি তোমার সাথে রিলেশনে গিয়েছিলাম।প্রতারণা করেছিলাম আমি তার সাথে। জানো একটা কথা সত্যি। আমি আজ বুঝতে পারছি। আমরা ভালো থাকার জন্য যার সাথে প্রতারণা করি। দিনশেষে সেই মানুষ টাই ভালো থাকে।আল্লাহ প্রতারককে হয়তো প্রতারণার মাধ্যমেই শাস্তি দেয়।যা আজকে আমার সাথে হচ্ছে ।ভেবো না আমাকে ঠকিয়ে সুখে থাকবে।একসময় তোমার মতো আমিও ভেবেছিলাম। আজকে আমি নিঃস্ব। তোমারো একদিন এমন অবস্থাই হবে।ভেবো না বদদোয়া দিচ্ছি।এটাই বাস্তবতা – রিশাদ
দেখো রিশাদ আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না। আমার ডিভোর্স চাই – লিজা
হুম। তুমি বলার আগেই আমি এ ব্যবস্থা করে ফেলেছি।১ সাপ্তাহ সময় লাগবে উকিল সাহেব বলেছে – রিশাদ
আমি আজকেই আমার বাসায় চলে যাবো।আমি আর এখানে থাকতে চাইনা।ডিভোর্স পেপার রেডি হলে আমার বাসায় পাঠিয়ে দিও – বলে লিজা নিজের কাপড়চোপড় গুছিয়ে সবকিছু নিয়ে চলে গেলো।
রিশাদ বিছানায় বসে ভাবতো লাগলো অতীত,

বিয়ের পর সবই খুব সুন্দর ভাবে চলছিল।রিশাদ আর প্রাপ্তির জীবনে কোনো কিছুর অভাব ছিলনা। কিন্তু সমস্যাটা হয় বিয়ের তিন বছরের মাথায়।হঠাৎই রিশাদ বদলে যেতে শুরু করে।খুব বাজে ব্যবহার শুরু করে প্রাপ্তির সাথে। মেয়েটা খুব মনমরা হয়ে পরে।বুঝেনি তখন রিশাদ মেয়েটাকে।প্রিয়জনের অবহেলা যে কতটা পুড়ায় এটা সে আজকে বুঝতে পারছে। মিথ্যা অপবাদে মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়েছিল রিশাদ যে সে কখনো মা হতে পারবেনা। কতটা অন্যায় করেছিল মেয়েটার সাথে এটা সে আজকে বুঝতে পারছে।কিন্তু তারপরের কোনো ঘটনাই রিশাদ জানেনা।

একটা থ্রিপিস পরে মোটামুটি তৈরি হয়ে আন্টির রুমের সামনে আসি।কিছুক্ষণ আগে একজন মেইড আমাকে বলে গিয়েছে আন্টি নাকি আমাকে ডাকছে।তাই আমি বললাম,
আন্টি আসবো কি ? – আমি
হুম আসো মা – লিমা আহমেদ
কিছু বলবে আন্টি? – আমি
তুমি তৈরি মা ? – লিমা আহমেদ
একি এটা কি পরেছো তুমি? – লিমা আহমেদ
কেনো থ্রিপিস। আমাকে কি বাজে লাগছে আন্টি। চেঞ্জ করে আসবো ড্রেস ? – আমি
মা আজকে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেই।দেখবে তোমাকে শাড়ি পরে সাথে যেতে দেখে রিয়ু অনেক খুশি হবে – লিমা আহমেদ
ওকে আন্টি – আমি

প্রাপ্তির হাসি পর্ব ৫

তারপর আন্টি কোথা থেকে যেন আমার সাইজের একটা ব্লাউজ, পেটিকোট নিয়ে আসলো।আমি কৌতুহল দমিয়ে রাখলাম।কিছুই আর জিজ্ঞেস করলাম না।তারপর আন্টি আমাকে হালকা পিংক কালারের একটা শাড়ি পরিয়ে দিলো। সাথে আমি একটু সেজে নিলাম। আমি নিচে নামতেই দেখি রিয়ু আর মিস্টার রিয়ান আমার দিকে হতভম্ব ভাবে তাকিয়ে আছে।
কি হয়েছে আপনাদের? – আমি
ভাল আন্টি এটা কি তুমি? – রিয়ানা
অসাধারণ মিস ধানিলংকা।প্রচুর সুন্দর লাগছে আপনাকে – রিয়ান

প্রাপ্তির হাসি পর্ব ৭