প্রিয়োসিনী পর্ব ৩৪

প্রিয়োসিনী পর্ব ৩৪
নীরা আক্তার

সকাল সকাল সাগরের কলে ঘুম ভাঙ্গে ইসরাকের।এতো সকালে সগারের কল পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকায় ইসরাক।কপালে বিরক্তের ভাজ।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নওরিন কথা বলে উঠে,ইসরাক আরেকবার ফোনের দিকে চোখ বুলায়।না এটা সাগরেরই নাম্বার।

-কাজী অফিসে আসুন। বিয়ের সাক্ষী হতে হবে আপনাকে।
ইসরাক থ হয়ে বসে থাকে মাথা ঠিক আছে এই মেয়ের?
ইসরাক ঘুম ঘুম গলায় প্রশ্ন করে,
-কার বিয়ে?কিসের বিয়ে….সকাল সকাল কি শুরু করলা!
-যার ফোন তার বিয়ে।
-মাথা ঠিক আছে তোমার নওরিন? পাগল হয়ে গেছো?
-আসুন। আসার সময় আইডি কার্ডটাও নিয়ে আসবেন…..যদি কোনো ঝামেলা হয় আর আপনাকে কিন্তু সাক্ষী দিতে হবে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-নাহ্ আপনি তো বলেছেন আমার সুখের জন্য সব পারেন তাই আপনার কাছে আবদার করলাম এখন আসুন।আসলে বিয়েটা সাগরের বাড়িতে কেউ মানছে না।মেজো খালা তো বলেই দিয়েছে এই বিয়ে করলে নাকি তাজ্য করবে।কিন্তু সাগর এই সবের পরোয়া করে না।তার কাছে ভালোবাসাটাই সব।আমিও তার সিদ্ধান্তে বাঁধা দেই নি। তাই বাধ্য হয়ে কাজী অফিসেই বিয়েটা হচ্ছে।বিয়ে করে একবারে বাড়ি গেলে কেউ ফেলে দিতে পারবে না।আর ফেলে দিলেও কি…আমার বিশ্বাস সাগর তার বউকে ঠিকিই যোগ্য সন্মান দেবে।কিন্তু আপনি প্লিজ আসুন এখানে আপনার থাকাটা জরুরি।আপনাকেই একমাত্র পাত্রীপক্ষ হতে হবে।

নওরিন ইসরাককে ঠিকানা দিয়ে দিয়ে কলটা কেটে দেয়।ইসরাক বার কয়েক কল ব্যাক করলেও অপর পাশ থেকে কোনো রেসপন্স নেই।ইসরাক বাধ্য হয়েই কোনো রকমে উঠে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পড়ে ছুট লাগায় যাওয়ার জন্য….দ্রুত পৌছাতে হবে তাকে।

মাঝের কয়েকমাস নওরিনের সাথে তার যোগাযোগ ছিলো না বললেই চলে।নওরিন কলেজে আসলেও ইসরাককে ইগনোর করে চলতো।সামনে নওরিনের পরীক্ষা এটা ভেবে ইসরাকও তাকে সম্পর্কের এই সব জটিলতায় টানতে চায় নি।নওরিনকে সময় দিয়েছে।সবটা বুঝে নিতে…..তবে নওরিনের এই দূরত্ব তাকে বড্ড পুড়িয়েছে।তবে ইসরাক সেটা মেনে নিয়েছে। এর মাঝে সে নিবিড়ের সাথে সরাসরি কথা বলেছে।নিবিড় আর তার মাঝে যেই মিসআন্ডারস্টান্ডিং গুলো ছিলো তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

তবে নিবিড়ের একটায় কথা ছিলো নওরিনের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করা যাবে না।তাই সে নিজেও চায় অন্ততঃ পরিক্ষা পর্যন্ত ইসরাকের সাথে দূরত্ব বজাই থাক।আর বাঁকিটা নওরিনের ইচ্ছে নওরিন যা চাইবে তাই সে মেনে নেবে।
ইসরাক ভেবে পায় না হটাৎ এই মেয়ের মাথায় কি ভূত চাপলো….ডিভোর্স নিয়েও সে কনফিউজড। কারণ একটা সইয়ে কখনো ডিভোর্স হয় না।কাগজটা আদও ডিভোর্স পেপার ছিলো কি না তারও ঠিক নেই।
নওরিন কি চাইছে সেটা ইসরাকের মাথায় ঢুকছে না।

সে কি সাগরকে বিয়ে করতে চাইছে?কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? আর যদি নাই হয় তাহলে কাজী অফিসে কেন ডাকলো?
ইসরাক সজোরে গাড়ির স্টিয়ারিং এ বাড়ি দেয়।রাগে গা জ্বলছে তার।ভেবেছিলো নওরিনকে সময় দিলে সে হয়তো সবটা বুঝে নেবে।কিন্তু এই মেয়ের পাগলামো তো বেড়েই চলেছে।আর সহ্য হচ্ছে না তার….।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একবারে তুলে নিয়ে আসি।কিন্তু এমনটা করলে আবারও নওরিনকে অসন্মান করা হবে।

মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে।আমান এখন অনেকটা ম্যাচিউর।পারিবারিক ব্যবসার কাজে হাত লাগিয়েছে সে।আজ আমান ইউকে চলে যাবে।সেখানে নতুন একটা ব্রান্ঞ্চ ওপেন হবে।সেখানের সবটা সে নিজেই সামলাবে।ইশা এখন মোটামুটি সুস্থ হবে সে পুরোপুরি হাটতে পারে না।আমান রেডি হচ্ছে।ইশা বিছানায় বসে বসে দেখছে।
বিছানার উপর দুটো টিকিট রাখা।ইমতিয়াজ চৌধুরী দুজনরেই যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
আমান ইশার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে উঠে

-রেডি হবি না?
ইশা একগাল হেসে বলে,
-কাকে নিয়ে যেতে চাও নিজের বউকে নাকি বউয়ে রূপে থাকা বন্ধুকে?বলো?তোমার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আমার যাওয়া না যাওয়া….
আমান ফোস করে একটা শ্বাস ফেলে বলে উঠে,
-সারা জীবনের বন্ধুকে…..আপাতোতো এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
-আপাতোতো?
-হুম্ম….তোকে কখনো আমি সেই চোখে দেখিনি। তিন বার কবুল বললেই কি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে?
ইশা মুখ কালো করে নেয়,

-আমি যাবো না।এই বন্ধত্বটা আমায় কষ্ট দেয় আমান।তুমি চলে যাও।আমি অপেক্ষা করবো তুমি কখনো আমাকে ভালোবেসে ফিরে আসবে এই অপেক্ষা করবো।জানি অপেক্ষা কষ্টের তবুও আপেক্ষা করবো।নিজের অধিকার পাওয়ার অপেক্ষা।আমার স্বপ্ন ছিলো তোমায় বিয়ে করা বিয়ে তো করে নিয়েছি তবে স্বামী হিসেবে কখনো পাই নি।বলতে গেলে সবকিছুই আমার পাওয়া হয়ে গেছে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কিছুই পাই নি আমি।কাছে থেকে এভাবে দূরে থাকার চেয়ে একেবারে দূরত্বটাই ভালো।কম পোড়াবে….

-আই আম সরি…
আমান তৈরি হয়ে নিচে চলে আসে।ব্যাগ পত্র গুছিয়ে গাড়িতে তোলা হয়।ইমতিয়াজ সিকদার সেখানেই দাঁড়ানো ছিলো।আমানকে একা যেতে দেখে চেঁচিয়ে উঠে,
-ইশা কোথায় ও যাবে না?আর কতো সময় লাগবে রেডি হতে শুনি?তুমি একা নেমে এলে কেন আমান?
ইশা পেছন পেছন এসে বাবাকে থামিয়ে দেয়,

-আমি যাবো না বাবা।আমি তোমাদের সাথে এখানেই থাকবো।শুধু শুধু ওখানে গিয়ে একা থাকতে কষ্ট হবে।
ইমতিয়াজ সিকদার আরো কিছু বলতে চাইলে ইশা বাবাকে থামিয়ে দেয়।ইমতিয়াজ সিকদার অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়ের দিকে।
জিনাত সিকদার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-এভাবে থাকতে পারবি কষ্ট হবে না?

-যেভাবে আছি তার চেয়ে কম কষ্ট হবে।আমি অপেক্ষা করবো ওর ফিরে আসার।আমার বিশ্বাস হয়তো ও ফিরে আসবে।না ফিরলে বুঝবো ভুল পথে ভুল জিনিস চেয়েছি,তার শাস্তি এটা।
আমান একটা শুকনা কাশি দেয়,
-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এবার যেতে হবে।
আমান ইমতিয়াজ সিকদারকে জড়িয়ে ধরে,দুজনকেই সালাম করে বেরিয়ে যায়।যেতে যেতে ইশাকে হাত নাড়ে বিদায় নেয়।

ইশা আমানের দিকে তাকিয়ে মলিন একটা হাসি দেয়।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার সব কিছু পেয়েও না পাওয়াই থেকে গেলো।এখন তাকে অপেক্ষা করতে হবে।ভালোবেসে অনিশ্চিত একটা জীবনকে সে বেছে নিয়েছিলো।সেই অনিশ্চয়তার টানা পোড়েনেই হয়তো তাকে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।নয়তো কোনো একদিন আমান নিজে থেকেই এসে দাঁড়াবে তার দরজায়।হাত বাড়িয়ে গ্রহন করে নেবে তাকে।
তবে এই মুহূর্তে অপেক্ষার চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু নয়…

সত্যি বলতে চাওয়া পওয়া প্রত্যাশা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনেই থাকে।চাওয়ার মাত্রা বেশি হবে পাওনা নিজে থেকেই ধরা দেয়।যদি হাজার চাওয়ার পর যদি সেই পাওয়না ধরা না দেয় তবে মানতে হবে তা কখনো তোমার নসিবেই ছিলো না।তবে, ভুল পথ অবলম্বন করে যদি সেই পাওনা পর্যন্ত পৌছাতে চাও তবে দিন শেষে পাওনার খাতা শূন্যতেই থেমে যাবে…….

নোহা আর তিয়াশ এখন তিয়াশের ফ্লাটে শিফট করে গেছে।এখান থেকে তার কলেজ আর তিয়াশের হাসপাতাল দুটোই কাছে হবে।মেডিকেল এ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নিতে ভীষন ব্যস্ত সে।তবে হাজার ব্যস্ততার মাঝে তাকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য তিয়াশ নামক একজন স্বামী আছে।যখনই নোহার কোনো সাহায্যে প্রয়োজন হয়, কোথা থেকে তিয়াশ উড়ে এসে হাজির হয়।ঝড়ের মতো এসে সব ঝুট ঝামেলাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।দুজন মিলে টোনা টুনির সংসার দিব্যি সামলে নিচ্ছে। দিন শেষে এমন সুখই তো নোহা চেয়েছিলো…….এমন একজন পুরুষ।
বাচ্চা কাচ্চার চিন্তা না হয় আরো কিছু দিন পর করা যাবে……আপাতোতো তারা নিজেদের গুছিয়ে নিতে,আর একে অপরকে সামলাতে ব্যস্ত।

ইসরাক একরক ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে নিওরিনের বলা ঠিকানায় পৌছে যায়।নওরিন একটা কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নওরিন একটা হালকা গোলাপি শাড়ি পড়েছে তার সাথে হালকা সাজ।কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে পরীর মতো।ইসরাক রোজই তাকে দেখে।তার রূপে রোজই মুগ্ধ হয়।রোজই নুতন করে তার প্রেমে পড়ে। ইসরাককে দেখে সে হাত নাড়ায়।

ইসরাক দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।ইসরাক দুম করে এসে নওরিনকে জড়িয়ে ধরে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো নওরিন?তোমার মাথা ঠিক আছে?কিসের বিয়ে!
নওরিন ইসরাককে ঠেলে সরিয়ে দেয়,
-কি করছেন?এমন দুম দাম করে জড়িয়ে ধরছেন লজ্জা লাগে না?
ইসরাক থমথমে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে,

-বাবা এই ক দিনে তো তোমার অনেক শক্তি বেড়েছে দেখছি।সে যাই হোক নিজের বউ কে ধরতে লজ্জা কিসের?
-কিসের বউ? আমাকে না আপনি তালাক দিয়ে দিলেন…ভুলে গেলেন?
-উহু,হুদাই,বিচ্ছেদ এতোই সোজা?খোদাই প্রদত্ত পবিত্র কালেমা পড়ে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছি।বিয়ের বন্ধন ভাঙ্গা এতো সোজা নয় নওরিন।
-চুপ করুন তো।
-মজা করার জন্য ডাকছো?

-আমাকে কি পাগল মনে হয়।নাকি জোকার মনে হয় সব সময় মজা দিবো?আমি সিরিয়াস ইসরাক সিকদার।
-বরের নাম ধরে ডাকো কেন বউ গুরুজনরা বিয়াদব বলবে।
নওরিন মুখ বাঁকায়,
পেছন থেকে নিবিড় আর সাগর বেরিয়ে আসে।
নিবিড় এসে ইসরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-নওরিন তোমাকে সব জানিয়েছে?এই বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?পরে কোনো ঝামেলা করবে না তো?তোমাদের সিকদারদের বিশ্বাস নেই কখন কি করো!

এবার ইসরাকের গলা শুকিয়ে যায়
নিবিড়ও তো একই কথা বলছে।সত্যিই কি তবে তার বউকে অন্যকারো সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে?এতো বড় অনাচার। সে কিছুতেই মানবে না।
ইসরাক কোনো কথা না বলেই নওরিনকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে
-আমি জীবিত থাকতে এটা হতে দেবো না।বিয়ে তো হবেই না ।আর করতে চাইলে নওরিন আমি মরে যাচ্ছি আমার লাশের উপর দিয়া গিয়া বিয়ে করো!

নওরিন নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়,
-দুইজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করতে চাইছেন লজ্জা করে না আপনার?কিসের লাশ আশ্চর্য।আমি তো ভাবলাম আপনি খুশি হবেন।
ইসরাক সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে যায়,

-ভালোবাসো?আচ্ছা নওরিন আমি কি এতোই খারাপ?মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি…তোমাকে কষ্ট দেয়েছি অপমান করেছি তার পেছনে কারন ছিলো….আমি যা করেছি ভুল বুঝে করেছি।আমার চোখের সামনে সব প্রমান ছিলো আমি কি করে সেগুলোকে অগ্রাহ্য করতাম বলো?তুমি নিজেও তো কখনো কিছু বলো নি?দোষ কি আমার একার?আচ্ছা মানলাম সব দোষ আমার….আমার অন্যায়ের অনেক তো শাস্তি দিলে আর কতো পুড়াবে বলো?
নওরিন একটু অবাক হয়ে বলে

-কোথায় শাস্তি দিলাম?
-এই দূরত্বটা কি কম শাস্তি? আগুনের মতো জ্বলছি।কাছে থেকে নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে পারছি না।
-কিসের কষ্ট?আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন নি?
-কে বলেছে?আমাদের সম্পর্কটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছিলো।তবে আমি কখনো এই সম্পর্কটা অস্বীকার করি নি।এতো কিছু এক্সপ্লেইন করতে পারবো না।শুধু বিশ্বাস করো এই পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আমার থেকে বেশি আর কেউ তোমাকে ভালোবাসে না।
ইসরাক হাটু গেড়ে নওরিনের সামনে বসে পড়ে,

-প্লিজ ক্ষমা করে দাও…আচ্ছা ক্ষমা না করো আরো শাস্তি দাও। যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো।প্লিজ আমাকে ত্যাগ করো না।
ইসরাক কথা বলতে বলতে কেঁদে দেয়,
নওরিন কি বলবে ভেবে পায় না।
তবে মনে মনে সে খুশি,
নিজেকে দেওয়া কথা সে রেখেছে “ইসরাক সিকদারের চোখের পানি নাকের পানি এক করেই ছেড়েছে….কিন্তু কি ভাবে?ওমা ইসরাক কি তবে ভাবছে সে সাগরকে বিয়ে করছে?আশ্চর্য লোক তো….কিছুই কি নিজে থেকে বুঝে না?সবকিছুই কি বলে বলে বুঝিয়ে দিতে হবে?”
নওরিন কপালে হাত দেয়।
তার মাঝেই সাগর চেচিয়ে উঠে,

-নওরিন প্লিজ চলে আসো।এবার তো ফ্লাইটের দেড়ি হয়ে যাবে।বিয়ে শেষ করে ঠিক সময়ের মধ্যে পৌছাতে হবে
সাগর কথাটা বলা মাত্র ইসরাক উঠে দাঁড়ায়। রক্ত চক্ষু করে সাগরের দিকে তাকায়।ছুটে যায় সাগরকে আঘাত করার জন্য সেই মুহূর্তে কোথা থেকে স্নেহা এসে ইসরাকের সামনে দাঁড়ায়।
-ভাইয়া প্লিজ।
ইসরাক চোখ বুলায়। স্নেহার পড়নে বউয়ের পোশাক।লাল শাড়ি সাথে গাঢ় লিপস্টিক। তেমন গয়না না পড়লেও দেখতে বউ বউ লাগছে।

ইসরাকের চক্ষুচড়ক গাছ।নওরিনের দিকে তাকায়।নওরিন মুচকি হেসে জানায়।
-ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।মেজো খালা মানছে না তাই আমিই বলেছি এভাবে বিয়েটা সেড়ে ফেলতে।যদিও বিয়ে হয়ে গেলেও রিস্ক থেকে যায়।মেজো খালা কোনো না কোনো ঝামেলা করে হওয়া বিয়েও ভেঙ্গে দিতে পারে তাই সাগর আজই স্নেহাকে বিয়ে করে বিদেশ চলে যাবে।ঐখানে কিছুদিন থাকার পর সবটা শান্ত হলে ফিরবে।আর হ্যা স্নেহার আপন বলতে বর্তমানে একমাত্র আপনিই আছেন যে ওর পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে পারবে তাই আপনাকে আসতে বলেছি।প্লিজ না করবেন না সাগর ওকে ভালো রাখবে দয়া করে মেনে নিন।

ইসরাক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।সে বর্তমানে শকে আছে।ভেবেছিলো কি আর ঘটলি কি?তার চেয়ে বড় কথা স্নেহা আর সাগর সম্পর্ক সেটা তো কল্পনাতেও সে ভাবে নি।তবুও সে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
যেমনটা ভেবেছিলো তেমন ভয়ংকর কিছু ঘটছে না এটাই অনেক।
সব বোঝা পড়া শেষে সাগর আর স্নেহার বিয়েটা হয়ে যায়।
স্নেহার পক্ষ থেকে সাক্ষী দেয় নওরিন আর ইসরাক।

বিয়ে শেষ করে সাগর আর স্নেহাকে নিয়ে ইসরাক আর নওরিন রওনা হয় সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
স্নেহা বিদেশ যাওয়ার আগে একবার জিনাত সিকদারের সাথে দেখা করতে চায়।
বাড়ি গিয়ে ইসরাক মাকে সব বুঝিয়ে বলে।জিনাত সিকদার তাদের দোয়া করে দেয়।
জিনাত সিকদারকে সালাম করে তারা রওনা হয় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য। স্নেহাকে কয়েকবার মায়ের সাথে দেখা করতে বললও সে মায়ের সাথে দেখা না করেই চলে যায়।
তারা পাড়ি জমায় নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্যে।সেখানে নতুন জীবন শুরু করবে তারা।

সাগর আর স্নেহার সাথে সাথে নওরিনও সিকদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।ইসরাক বাঁধা দিলেও সে মানে না।ইসরাকের প্রতি তার অনুভূতিগুলো নিয়ে তার মনে এখনো বেশ কিছু সংকোচ এখনো রয়ে গেছে।ভালোবাসাটা সে অনুভব করতে পারে না।এতোগুলা মাসের দূরত্ব ও তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে দিতে পারছে না।
নওরিন ফিরে আসতে চাইলে জিনাত সিকদার তার হাত ধরে কান্না কাটি করে।আপাতোতো সে বাড়ির একমাত্র বউ।ইশা তো তার পায়ে পরে যায়।তবুও নওরিন কেন যেন তার মনকে মানাতে পারছে না।সে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
ইসরাকও সমস্যাটা বুঝতে পরেছে।এখন এর একটা সমাধান করা উচিৎ……নওরিনকে বুঝাতে হবে তার ভালোবাসাটা।তারপরও যদি সে নিজে অনুভূতি গুলো অস্বীকার করে তাহলে নওরিনকে সে একেবারে মুক্তি দিয়ে দেবে।

ভোর ভোর উঠেই নওরিন ফজরের নামাজটা পড়ে নেয়।আজকে তার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে।চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তার।পরীক্ষা খুব ভালো দিয়েছে এমন নয়, তাই তো চিন্তায় এই অবস্থা।
নওরিন নামাজ পড়ে কিছুসময় জায়নামাজে বসেই দোয়া করে।তারপর উঠে জ্বানালার পাশে দাঁড়ায়। ইসরাক আজকে আসে নি।এই ক মাস সে রোজ নামাজ পড়ে পর্দা সরালেই ইসরাকের মুখটা দেখতে পেতো।লোকটা রোজ এখানে এসে দাঁড়াতো। একবার চোখাচোখি হতেই সে আবার ফিরে যেতো। আজ না থাকাতে নওরিনের বুকের ভেতরটা কেমন করে যেন করে উঠে।

প্রিয়োসিনী পর্ব ৩৩

কেন নেই লোকটা….
এইসব ভাবতে ভাবতেই নওরিনের ফোনে কল আসে তিয়াশ কল করেছে।নওরিন কল রিসিভ করতেই,তিয়াশ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,
– নওরিন প্লিজ দ্রুত চলে এসো……

প্রিয়োসিনী পর্ব ৩৫