প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৩
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভা পেছনের সিটে বসতে যাবে এমন সময় তাশরীফ ধ’মক দিয়ে বলল,
“সামনের সিট কি তোর চোখে পড়ে না আভা? পেছনের সিটে বসতে যাচ্ছিস কেন?”
“ড্রাইভারের সাথে বসব কেন আজব!”
“ড্রাইভার কই পেলি তুই? আমি তোর হাসবেন্ড, ড্রাইভার না।”
আভা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি ড্রাইবিং করবেন?”
“হুম।”
“ড্রাইবার চাচা কোথায়?”
“ছুটি দিয়েছি আজ। এত কথা না বলে সামনে এসে বস। তোর মত এত বকবক করতে পারব না আমি।”
“কি! আমি বকবক করি?”
“তো কি করিস?”
“আমি বকবক না, কথা বলি।”
“তোর কথাগুলোই বকবক মনে হয়। কাকের মত।”
“কার মত!”
“কাকের মত।”
“আমি যাবই না।”
“না গেলে আমার কি? রাত্রির বিয়ে মিস।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাশরীফের এমন এটিটিউড দেখে আভা দ’মে গেল। গা’ল ফুলিয়ে সিটে গিয়ে বসে। তাশরীফ ড্রাইবিং সিটে বসে সানগ্লাসটা লাগিয়ে ড্রাইবিং করতে করতে বলল,
“সানগ্লাসটা পড়ে নিলাম। নয়তো একজনের মেজাজের তে’জে চোখ দুটো অন্ধ হয়ে যাবে।”
নাং বেংচি কা’ট’লো আভা। আঁড়চোখে তাকালো তাশরীফের দিকে। ব্লু কালারের ব্লেজারের নিচে এ্যাশ কালারের একটা টিশার্ট পড়েছে। জিন্স প্যান্ট। হাতে কালো ঘড়ি। চুলগুলো হাল্কা ভেজা যেতে যেতে শুকিয়ে হয়তো কপালে এসে বার বার পড়বে। যা সিল্ক চুল তার!। তাশরীফও তাকালো আভার দিকে। চোখাচোখি হতেই আভা জানালার বাইরে তাকালো। তাশরীফ মিনমিন করে বলল,
“সুন্দর ছেলে দেখলে বুঝি মেয়েরা এমন করেই তাকিয়ে থাকে?”
মিনমিন করে কথাটি বললেও আভা স্পষ্টই শুনতে পেলো কথাটি। আভা বলল,
“আমি বুঝি না, মানুষ নিজের ঢো’ল নিজে কিভাবে পি’টা’য়? হাউ?”
“তুই জানিস? হসপিটালে কত ইয়াং ডক্টর আমার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। ডেটেও যেতে চায়?”
“পচা জিনিসে মাছি একটু বেশিই ভনভন করে।”
“এখনতো এইভাবে আমাকে সস্তা করবিই, পেয়ে ফেলেছিস না? একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে। এখনতো তুই জানিসই আমি ম্যারিড, কাউকে চাইলেও সময় দেওয়া পসিবল না আমার। বিকজ ওই যে, ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী ম্যারিড।”
আভা নাক মুখ কালো করে বলল,
“বিয়ে না হলে বুঝি সব মেয়ে গুলোকে পাত্তা দিতেন? আপনারতো দেখছি চরিত্র খা’রা’প তাশরীফ ভাই। অথচ বিয়ের একদিন আগেও আমি ভেবেছিলাম আপনার মত ভদ্র, ম্যাচিউরড আর একটিও নেই।”
“আমার চরিত্র খারাপ যেহেতু বলেই ফেলেছিস, এখন একটু দেখাবো নাকি চরিত্রের প্রভাব?”
ঘা’ব’ড়ে গেল আভা। তারপর বলল,
“মা, মানে?”
তাশরীফ গাড়িটা সাইড করে আভার দুই গা’ল চে’পে ধরে আভার ঠোঁ/ট জোড়া নিজের দখলে আনে। আভাকে ছেড়ে দিতেই তাশরীফ আলতো হেসে বলল,
“এখন একটু দেখালাম, খুব শীঘ্রই গভীর কিছু করে দেখাব মিসেস তাশরীফ চৌধুরী। ”
আভা হাঁ’পা’তে হাঁ’পা’তে কেবল তাকালো তাশরীফের দিকে। এই ছোঁয়াইতো সে মনে মনে সবসময় চেয়েছিলো। এইভাবে খুব সহজেই পেয়ে যাবে তাতো সে ভাবেনি।
গাড়ি সাইড করে আভার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামলো তাশরীফ। আভা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
“আমরা এই জায়গায় এসেছি কেন তাশরীফ ভাই?”
“জায়গাটা অনেক সুন্দর তাই। তাকিয়ে দেখ চারিদিকে নারিকেলের গাছ সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শীতল হাওয়া, ঘাস, সামনে নদী। সব মিলিয়ে দারুণ একটা জায়গা। চল এইখানে বসি..”
তাশরীফ আর আভা ঘাসের উপর বসে পড়ল। তাশরীফ নদীর দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
“আভা..”
“হুম।”
“রাত্রির বিয়েতো হয়েই যাচ্ছে।”
“হুম তো?”
“না, কিছু না।”
“হঠাৎ এই কথা? আর এইখানে আমরা বসে আছি কেন? যাব না?”
“যাবতো।”
“আভা..”
“আমাদের এই বিয়েটা আমি মানি না।”
তাশরীফের মুখে এই বাক্য শুনে চমকে উঠল আভা। এই কথা শুনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। আভা নিজেকে সামলে বলল,
“আমি জানি তাশরীফ ভাই, চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আভা উঠে দাঁড়ালো। তাশরীফকে তোয়াক্কা না করে নিজেই গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। তাশরীফ অবাক হলো আভার কার্যকলাপে আজব! সেতো পুরোটা বলতেই পারলো না, এমন রিয়েক্ট করল কেন?
অবশেষে বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জাতে এসে পৌঁছালো দুজন। সারা রাস্তায় একটাও কথা বলেনি আভা। আভা গাড়ি থেকে নেমেই দৌঁড়ে ভে’ত’রে গেল। তাশরীফ গাড়ি থেকে নামতেই রাফসান চৌধুরী আসল। ছেলেকে বলল,
“এত লেইট হলো কেন? আভা তোকে না নিয়েই ভে’ত’রে চলে গেলো যে?”
“জানি না আমি।”
গটগট করে তাশরীফ চলে যাওয়াতে অবাকই হলো রাফসান চৌধুরী। ছেলে রেগে গেল! কিছু একটাতো হয়েছেই।
আভা রুমে আসতেই আভা জ’ড়ি’য়ে ধরে তাকে। আভা ভে’ত’রে কান্না আ’ট’কে রেখে হাসিমুখে বলল,
“কি সুন্দর লাগছে তোমাকে আপু!”
“এতক্ষণে আসার সময় হলো তোর? তুই কনের বোন, তুই থাকবি আগে আগে। তা না করে তুই সবার পেছনে। জলদি যা, রেডি হয়ে আয়।”
আভা নিজের রুমে গেলো। সারা বাড়িতে অতিথি,বাচ্চাদের হৈচৈ। আভা রুমে যেতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। চোখ টলমল করছে পানিতে। “যদি দূরেই সরিয়ে দেবে, তাহলে কাছে টানলেন কেন তাশরীফ ভাই? এখন কি কেবল আপনার ওইটুকু স্প’র্শকে মনে রেখে আমাকে কা’টি’য়ে দিতে হবে আমার জীবন?” আভা এইসব ভেবে চোখ মুখ মু’ছে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। এখন সবাইকে সবটা বলা যাবে না। যা বলতে হবে তা রাত্রির বিয়ের পর। নয়তো খামোখা সবার আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। আভা সবকিছু ভেবে নিজেকে সামলে নেয়।
এইদিকে তাশরীফ অন্য একটা রুমে এসে পড়েছে মহা বিপদে। এইখানে আভার কাজিন তিশা, প্রাপ্তি, অনু সবাই তাকে ঘিরে আছে। একটার পর একটা মিষ্টি খাওয়াচ্ছে তাকে। তাশরীফ মুখ নাড়াতেই পারছে না। তাশরীফ কোনো রকমে অনুর হাতের মিষ্টিটা খেতে খেতে বলল,
“এত মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না শা’লীকারা। এইবার আমাকে ছাড়ো, নয়তো আমার আর পাঞ্জাবি পড়া হবে না।”
“কেন দুলাভাই, আভার স্পেশাল মিষ্টি খেতে খেতে কি এখন এই মিষ্টি তিতা লাগে?”
অনু কথাটা বেশ রসিকতা নিয়েই বলল। অনুর কথা শুনে তিশা আর প্রাপ্তি ফিক করে হেসে ফেলে। তাশরীফ কোনোরকমে তাদেরকে এইটা ওইটা বুঝিয়ে ওই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তাশরীফ আভার রুমে ঢু’ক’তে’ই চমকে উঠে। আভা হলুদ একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। তাশরীফ মনে মনে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১২
“তোমাকে কি নামে সম্বোধন করব মেয়ে? রুপবতী, মায়াবতী, নাকি গোলাপী সুন্দরী?”
তাশরীফের এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা দেখে সংকোচ বোধ করে আভা। তাশরীফ বলল,
“এত সেজেছিস কার জন্য? বিয়েটা কি তোর নাকি রাত্রির?”
তাশরীফের কথাকে এভয়েড করল আভা। সে তাশরীফকে এড়িয়ে চলে গেল রুম থেকে। তাশরীফ অবাক হয়ে বলল,
“আজব! মিষ্টি কুমড়োর মত এইভাবে গা’ল মু’খ ফুলিয়ে রেখেছে কেন?”