প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৮

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৮
মারশিয়া জাহান মেঘ

তাশরীফ তাকালো রাহার দিকে। রাহা আভাকে তাড়া দিয়ে বলল,
“কি হলো আভা? জুসটা খাচ্ছনা কেন? খাও…”
তাশরীফ আভার হাত থেকে জুসের গ্লাসটা ট্রেতে রেখে রাহাকে বলল,
“দুটো গ্লাসের জুসই আগে তুমি খাও রাহা।”
রাহা থতমত খেয়ে বলল,
“হ্যাঁ..?”

তাশরীফ আলতো হেসে বলল,
“হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি খাও।”
রাহা তখন আমতা আমতা করে বলল,
“আমি কেন খাব তাশরীফ? জুসতো তোমাদের জন্য এনেছি।”
“কে বলতে পারে? এই জুসেতো কিছু থাকতেও পারে। তাইনা?”
রাহা অবাক হয়ে বলল,
“ওয়েট ওয়েট….তুমি কি কোনোভাবে আমাকে কোনো কিছু নিয়ে ডাউট করছ তাশরীফ?”
তাশরীফের শীতল চাহনি। সে মুচকি হেসে বলল,
“তোমাকে না, ফারাবীকে আমি সন্দেহ করছি।”
রাহা না জানার ভঙ্গিমাতে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হু ইজ ফারাবী তাশরীফ?”
তাশরীফ আভার দিকে এক পলক তাকালো। আভার দৃষ্টি সবুজ ঘাসে। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। তাশরীফ বলল,
“শত্রু, আমার ভীষণ কাছের শত্রু।”

রাহা হাঁ/পা/তে হাঁ/পা/তে বলল,
“আমিতো আর একটুর জন্য ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম ফারাবী।”
ফারাবী ড্রিংস খেতে খেতে বলল,
“সতর্কতার অভাব রাহা। তোমাকে এক্টিংয়ের উপর পি এইচ ডি করতে হবে।”
রাহা চোখ ক/ঠি/ন করে বলল,
“আমি তোমার সাথে মিলে আর কোনো প্ল্যানে যাবনা ফারাবী। তুমি অন্য কাউকে খুঁজে নাও।”
ফারাবী মনে মনে বলল,

“না, এখন রাহাকে হাত ছাড়া করা যাবেনা। নয়তো আমি আভাকে হারাব।”
ফারাবী চ’ট করে বলল,
“হেই রাহা, কুল ডাউন। নেক্সট প্ল্যান মনে আছে তোমার?”
“ইয়েস।”
“কোনো ভুল যেন না হয় রাহা, খুব কেয়ারফুলভাবে কাজটা করতে হবে।”
ফারাবীর দিকে হুট করেই তাকালো রাহা। চেকের মধ্যে শার্ট পড়েছে সে। হাতা গুটিয়ে রেখেছে। জিন্স পড়েছে সাথে। হাতে ব্রাউন ফিতার ঘড়ি। চুলগুলো উল্টানো। সিল্ক তা বুঝায় যাচ্ছে। ফারাবী রাহার এমন চাহনি দেখে আঙ্গুলের তুড়ি বাজিয়ে বলল,

“হেই রাহা… এনি প্রবলেম?”
রাহা চমকে উঠে বলল,
“হ্যাঁ.. না না কিছুনা। আচ্ছা আমি আমার কাজে যাই। তুমি এইদিকটা দেখ।”
“ওকে।”

“আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।”
তাশরীফ ফোনের থেকে নজর সরিয়ে আভার পানে তাকাল। তারপর বলল,
“আমিতো চুপই ছিলাম। তুইইতো আমাকে কথা বলাচ্ছিস।”
“আচ্ছা আপনি ডক্টর কিভাবে হলেন তাশরীফ ভাই?”
“কেন? তোর কোন অকাজে কাজের কাজ করতে গিয়ে আমার নামে ব’দ’না’ম হয়েছে?”
“আপনি ডাক্তার হলে আমার মন বুঝেন না কেন তাশরীফ ভাই?”
আচমকা আভার মুখে এমন কথা শুনে তাশরীফ কি জবাব দিবে ভেবে পেলোনা। তাড়া দেখিয়ে বলল,
“ভেতরে চল… কাপেল ডান্স হবে।”
“আপনি আমার সাথে নাচবেন তাশরীফ ভাই?”
“সারাজীবনইতো নাচাবি, পার্টিতে নাচলে সমস্যা কোথায়?”

ফারাবী ডান্স করতে করতে রাহাকে তাশরীফের দিকে ছাড়তেই তাশরীফ সরে যায় আর রাহা পড়ে যায়। আচমকা এমন ঘটনায় হকচকিয়ে উঠে রাহা। তাশরীফ দেখেও না দেখার ভান করে ডান্স করছে আভার সাথে। তাশরীফ আভার চোখে চোখ রাখতেই আভা লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে ফেলে। তাশরীফ চারিদিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর এত সুন্দর হওয়ার কি প্রয়োজন ছিল আভা?”
আভা তাশরীফের মুখে এহেন বাক্য শুনে বাকরুদ্ধ। ধীর কন্ঠে বলল,

“আপনার দৃষ্টি সুন্দর বলে, আমাকে আপনার সুন্দর লাগছে।”
“বাহ্ তুইতো কবি হয়ে গেলিরে আভা।”
“আমিতো কবি না, আমি লেখিকা। আপনি জানেন না?”
“কখন থেকে লিখতে শুরু করলি? কোথায় লিখিস?”
“ওমা! অনেক আগে থেকেইতো। জানেনা? আমি ফেইসবুকে লেখালেখি করি। আমার পেইজের নাম: Story Of Megh-মারশিয়া জাহান মেঘ।”

তাশরীফ তাকালো ফারাবীর দিকে। ফারাবীর সাথে এখন অন্য একটা মেয়ে ডান্স করছে। রাহা রক্তিম চাহনি নিয়ে দেখছে ফারাবীকে। পা ব্যথায় সে এক জায়গায় ঝিম মে’রে বসে আছে। ফারাবী হাত মুঠো করে মেয়েটিকে ছেড়ে রাহার কাছে গেল। দাঁ/তে দাঁত চে’পে বলল,
“রাহা, তোমাকে দিয়ে কি একটা কাজও ঠিকমত হবে না?”
রাহা রাগী কন্ঠে বলল,

“আমি পড়ে গেলাম তুমি উঠালে না অবধি? আবার এসেছ আমাকে ধমকাতে?”
“শাট আপ রাহা, জাস্ট শাট আপ। এইটা আমাদের পরবর্তী প্ল্যান ছিল। যে তাশরীফ আভাকে ছেড়ে তোমাকে ডান্স করতে ধরবে। আর আমি এই সুযোগে আভাকে নিজের কাছে টে’নে নিব। তারপর ড্রিকংস করিয়ে একটা রুমে নিয়ে যাব। ওইখানে তুমি তাশরীফকে নিয়ে আসবে, আমি আর আভা ঘ’নিষ্ঠ মুহূর্তে থাকব। কি? এইটা আমাদের প্ল্যান ছিলনা?”

“ছিল, দো’ষ’টাতো তোমারই। তুমিইতো আমাকে ভালোভাবে তাশরীফের দিকে ছাড়তে পারোনি।”
“হ্যাঁ, সব দো’ষ আমার। আর তুমি? দারুণ কাজ কর তাইনা?”
রাহা মুখে আঙ্গুল রেখে ভাবনার ভঙ্গিমাতে বলল,
“একটা দারুণ প্ল্যান আমার মাথায় এসেছে।”
“পার্টি শেষের দিকে, এখন কোনো প্ল্যানই কাজে দিবেনা।”
“ফারাবী, এই প্ল্যানটা কিন্তু জোশশ, ভেবে দেখ।”
“আচ্ছা আমাকে বল….”

আভা ওয়াশরুম থেকে এসেই দেখে তাশরীফ এইখানে নেই। ডান্স করতে করতে তার শাড়ির আঁচল কিছুটা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। তাই সে ওয়াশরুমে গিয়েছিল ঠিক করতে। এসেই দেখে তাশরীফ নেই। আভা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সবাইকে দেখতে পেলেও তাশরীফকে তার চোখে পড়লনা। এইতো… রাহাও আছে। তখনি আভার চোখ যায় তার হাতের কাছে একটা সাদা কাগজ। সে কাগজটা খু’লে দেখল, সেইখানে গুটিগুটি করে লেখা,
“বাইরে অপেক্ষা করছি তোর জন্য, চলে আয়।”
আভার মুখশ্রীতে ফোটে উঠেছে হাসি। সে লাজুক হেসে মনে মনে বলল,
“ভালোবাসি আপনাকে, প্রিয় ডাক্তার সাহেব।”
এইদিকে….

“রাহা, আভাকে দেখেছ?”
“নাতো তাশরীফ। কেন?”
“ইশ এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কি করি। এক্ষুণি এইখানে দেখি, আবার ওখানে দেখি। এক জায়গায় মেয়েটাকে কখনোই দেখিনা।”
“হেই তাশরীফ ডোন্ট ওয়ারি। হয়তো কাছেই আছে। এনজয় করছে পার্টিকে। আমার কাছে আসো। আমরা দুজন ড্রিংকস করি?”
“নো থেংকস রাহা। আমি এইসব খাইনা।”
“আই নো, বিকজ ইউ ডক্টর। আ’ম অলসো এ আইডিয়্যাল ডক্টর। বাট, একটা দিনইতো। প্লিজ?”
“সরি রাহা, আমি খেতে পারব না।”

রাহা তাশরীফের হাতে ড্রিকংস দিয়ে জো’র করে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল,
“অনলি ওয়ান ডে বেব।”
তাশরীফ নে’শার ঘোরে পড়ে এক গ্লাসের বদলে ৩ গ্লাস খেয়ে ফেলেছে ড্রিংকস। রাহা রাজ্য জয়ের হাসি হেসে কল করল ফারাবীকে। আর বলল,
“কাজ হয়ে গেছে।”
তাশরীফের জায়গায় ফারাবীকে দেখে চমকে উঠে আভা। সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে রাখা হাত দুটো ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে বলল,
“আপনি?!”
ফারাবী স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

“ছাড়লে কেন? আরও কিছুক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরেই থাকতে।”
পিছু ফিরে দাঁড়িয়ে থাকায় আভা বুঝতেই পারেনি যে এইটা তাশরীফ নয়, ফারাবী। আভা অনেকটা রেগে বলল,
“তাশরীফ ভাই কোথায়?”
“অন্য মেয়ের সাথে রোমান্স করছে তোমার তাশরীফ ভাই।”
“কি!”

“হ্যাঁ আভা। ডক্টর তাশরীফ চৌধুরীকে তুমি চিনো না। সে মুটেও ভাল ছেলে নয়। ড্রেসের মত সে মেয়েও চেইঞ্জ করে। তুমি হয়তো জানোইনা, যে হসপিটালেও তাশরীফ অনেক নার্সের সাথে ফ’ষ্টি’ন’ষ্টি করে।”
সজোরে থা’প্প’ড় পড়ে ফারাবীর গা’লে। আভা চিৎকার করে বলল,
“নেক্সট টাইম ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী সম্পর্কে আর একটাও বা’জে কথা বললে আমি আপনাকে ছাড়বনা মিস্টার ফারাবী রাজ।”
ফারাবী গা’লে হাত রেখে বলল,

“তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে নাতো আভা? চলো আমার সাথে… নিজের চোখে দেখবে চলো..”
“কি দেখব আমি? কি দেখবববব?”
আভা চিৎকার করে কথাটি বলতেই ফারাবী তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বলল,
“তোমার ডাক্তার সাহেবের আসল চেহারা দেখবে চলো। তার বেষ্ট ফ্রেন্ড রাহার সাথে সে এখন এক বিছানায় শুয়ে কিভাবে নো ং রা সময় কাটাচ্ছে দেখবেনা? চলো….”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৭

ফারাবী আভার হাত টা’ন’তে টা’ন’তে নিয়ে গেল ভে’তরে। সবার অগোচরে একটা রুমের দরজা ধা’ক্কা দিতেই আভা চমকে উঠল। মুখ তার বো’বা বনে গেল। নি’শ্বা’স বন্ধ হয়ে আসছে তার। রাহার উপর তাশরীফ। রাহা তাশরীফের পি’ঠ খা’ম’চে ধরে আছে। আনমনে সে বলল,
“ডাক্তার সাহেব!”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৯