প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৯
মারশিয়া জাহান মেঘ
আভা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার দৃষ্টি স্থির। ফারাবী আভার অগোচরে বাঁকা হেসে আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভুল মানুষকে বিশ্বাস করলে এইভাবেই ঠ’ক’তে হয়।”
আভা এক মুহুর্তও অপেক্ষা করেনা। এগিয়ে যায় তাশরীফের দিকে। তাশরীফকে সরিয়ে আনে রাহার থেকে। রাহা চমকে যাওয়ার ভান করে বলল,
“আভা! তুমি এইখানে!”
আভা যতটা রাগ নিয়ে কথা বলা সম্ভব ততোটা রেগে বলল,
“ল’জ্জা করলোনা তোমার একবারও? এইভাবে নিজের বন্ধুর সাথে বিশ্বাস নিয়ে খেলতে?”
“মানে! কি যা তা বলছ আভা? তাশরীফইতো আমাকে ডেকে আনলো এই রুমে। নয়তো কি আমি পার্টি ছেড়ে এই রুমে আসি সবার আড়ালে? আর আশা করি যা দেখেছ তা ফোর্সলি কিছু নয়।”
আভা তাকাল এক পলক তাশরীফের দিকে। তাশরীফকে শার্ট পড়াতে পড়াতে বলল,
“এত নে’শার ঘো’রে আর যাইহোক তাশরীফ ভাই আপনাকে ডেকে পাঠাতে পারেনা।”
“নে’শা করেছে বলেই তাশরীফ আমাকে কাছে টে’নেছে। আমি এখন এই মুখ কাকে দেখাব? কাকে?”
কথাগুলো বলেই রাহা ন্যা’কা কান্না জুড়ে দিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আভা যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে তাকালো ফারাবীর দিকে। গলা শুকিয়ে গেছে আভার। কিভাবে পারে মানুষ এমনটা করতে? আভা বলল,
“মিস্টার ফারাবী রাজ, ষ’ড়’যন্ত্র বড্ড কাঁচা হাতে করলেন। আরেকটু সতর্ক হয়ে করার দরকার ছিল।”
ফারাবী বাঁকা হেসে বলল,
“শুধু তুমি জেনেছ সত্যিটা কি, সকাল হতে দাও, তারপর বুঝবে কোনটা কাঁচা হাতের খেলা আর কোনটা পাকা হাতের খেলা।”
“মানে?”
ফারাবী তাকালো রাহার দিকে। রাহাও তাকিয়ে আছে ফারাবীর দিকে। হুট করেই দুজন খুব বিশ্রীভাবে হেসে উঠল।
“কি হয়েছে আভা? তাশরীফের এই অবস্থা কেন?”
সদর দরজা দিয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই রাফসান চৌধুরী কথাটি আভাকে বলল। আভা মাথা নিচু করে বলল,
“মামা, আমি তাশরীফ ভাইকে আগে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি? পরে সব বলছি।”
রাফসান চৌধুরী চারিদিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বলল,
“জলদি নিয়ে যা, তোর মামী দেখলে তোকে আবার এ নিয়ে কথা শুনাবে। অথচ দেখা যাবে, তোর কোনো দো’ষ নেই।
আভা তাকালো মামার দিকে। বলল,
“মামা, ক’টা অবধি জেগে থাকবে?”
“কেন? কি হয়েছে? তুই যা, আমি সজাগ আছি। আমি জানি তুই হয়তো কিছু বলতে চাস আমায়।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি তবে যাই, ওনাকে ঠিক করি।”
কথা বলেই আভা উপরতলায় চলে গেলো তাশরীফকে নিয়ে। কোনোরকমে হাঁটছে তাশরীফ। রাফসান চৌধুরী অবাক হয়েছে ছেলের এহেন অবস্থা দেখে। কারণ, তাশরীফ কখনোই ড্রিংক করে না। তিনি দী’র্ঘশ্বাস ছেড়ে সোফায় বসে পড়লেন। ‘ভাগ্যিস! নীরা জেগে নেই।’
“কি! কিন্তু তাশরীফতো এইসব খায় না আভা। রাহা? এখন ওই রাহা নামের মেয়েটা কোথায়? সেতো এখনো ফিরেনি।”
“আমি নিজেও জানি মামা, তাশরীফ ভাই এইসব খায় না। সম্পূর্ণটা ওরা দুজন আগে থেকে প্ল্যানিং করে রেখেছিল।”
“ওই মেয়ে আজ আসুক, আমি ঘা’ড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দিব। আমার ঘরে থেকে, আমার ছেলের স’র্ব’না’শ করতে ওই মেয়ের বু’ক কাঁ’পে’নি?”
“তাশরীফ ভাই এখন ঘুমাচ্ছে। সকালে ঘুম ভাঙ্গলে সম্পূর্ণটা জানতে পারব। কিন্তু ওই রাহা এখনো ফিরছে না কেন? কি চাইছে মেয়েটা? আবার কোনো ঝামেলা পাকাবে নাতো?”
রাফসান চৌধুরী কিছু একটা ভেবে বলল,
“ওহ শিট, আভা… আমি শিউর আগামীকাল প্রেসের মানুষজন আমাদের বাড়িতে এসে ভীড় করবে।”
কথাটা বলেই রাফসান চৌধুরী কপালে হাত রাখেন। চিন্তার ছাপ মুখমণ্ডলে স্পষ্ট। আভা ন’খ কা’মড়া’তে কা’ম’ড়া’তে ভাবছে কিছু একটা। তারপর বলল,
“মামা, কোনোভাবে রাহা আর ফারাবী প্রেসকে আজ রাতেই ইনফর্ম করে দিবে নাতো?”
“হ্যাঁ, ওইটাই ভাবছি। এখনতো রীতিমতো তাশরীফের মানসম্মান যাওয়ার পথে। সাথে আমারও।”
আভা তৎক্ষনাৎ কিছু একটা ভেবে মুচকি একটা হাসি দিলো। রাফসান চৌধুরীর চোখ এড়ায়নি সেই হাসি। তিনি বললেন,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৮
“তুই হাসলি কেন আভা?”
“মামা, সকালটা হতে দাও। যেই ফাঁ’দ ওরা পেতেছে, সেই ফাঁ’দে এরা নিজেরাই ত’লি’য়ে যাবে। ইট মারলেতো পাটকেল প্রয়োগ করতেই হয়।”