প্রিয় ডাক্তার সাহেব শেষ পর্ব 

প্রিয় ডাক্তার সাহেব শেষ পর্ব 
মারশিয়া জাহান মেঘ

তাশরীফের ফুপ্পি বলে উঠল,
“নিবি না মানে, নিতেই হবে। আর আংকেল কি? বাবা বলতে শিখ তাশরীফ। আর আমাকে শুধু আম্মু ডাকতে পারলে ডাকিস নয়তো ডাকার দরকার নেই।”
“ফুপ্পি আম্মুইতো ভালো।”
“না, একদম না।”
তাশরীফ হেসে বলল,
“আচ্ছা আম্মুই ডাকব। এখন তাহলে যাই।”

“আচ্ছা সাবধানে যাস। আভা যা তাশরীফকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আয়।”
আভা তাশরীফের সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসলো। তাশরীফ গাড়ির দরজা খু’লে বসতে যাবে এমন সময় আবার বেরিয়ে আসলো। আভার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মুখ মলিন করার দরকার নেই। ২ দিন পরই হাসিমুখে নিয়ে যাব। আর খাবার না খেয়ে থাকার কথা যেনো আর না শুনি। দেখি কপালে কি এইটা…
কথাটি বলে আভাকে কাছে টে’নে আভার কপালে চট করেই একটা ” চু’মু দিয়ে ফেললো তাশরীফ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাশরীফ বাসায় প্রবেশ করতেই নীরা চৌধুরী তাশরীফকে দেখেও না দেখার ভান ধরে স্বামী রাফসান চৌধুরীকে বললেন,
“দেখেছ? তোমার ছেলে উপর দিয়েই একটু ক’ঠি’ন। ভেতর থেকে বউ পাগল। দেখলে না? কীভাবে না বলে চলে গেল আভার কাছে।”
তাশরীফ ল’জ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। মাথা নিচু করে সোজা উপর তলায় চলে গেছে। পেছন থেকে শোনা গেল মা-বাবার অট্টহাসি।

নিজ রুমে এসে গোসল সেরে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই শুনলো ফোনের রিংটোনের আওয়াজ। ফোন হাতে নিলো সে। ফুপ্পির নাম্বার। আভা কল করেছে বোধহয়। এইটা ভেবে কল রিসিভ করল তাশরীফ। ওপাশ থেকে আভার কোমল কন্ঠ শোনা গেল। “বাসায় গিয়েছেন? ”
“হ্যাঁ, এসেছি। মাত্রই গোসল করে বের হলাম। এখন লম্বা একটা ঘুম দিব।”
“একটু পরেইতো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।”
“গায়ে হলুদের আগেই উঠব তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।”
ওপাশ থেকে আর কোনো আওয়াজ এলো না। তাশরীফ বলল, “হ্যালো… হ্যালো…”
“শুনছি…”

আভার মলিন মুখের উত্তর। তাশরীফ বলল,
“কি হয়েছে? মলিন হয়ে আছিস কেন?”
“ওভাবে কথাটা না বললেও পারতেন।”
তাশরীফ বুঝতে পেরে বলল,
“আরে আমিতো সাধারণভাবেই বলেছি। এতে প্যাচানোর কি আছে?”
“আমি কথা প্যাঁচাই?”

কথাটি বলল তাশরীফ পড়ল আরেক বিপদে। এখন প্যাঁচাস বললেও দোষ, না বললেও দোষ। তারীফ বলল,
“আরে না আমি ওইটা বলতে চাইনিতো। আজব! তুই এখনো বাসায় কি করছিস? ড্রেস, গহনা রেডি কর। সন্ধ্যার আগে পার্লারে যাবি না?”
“না, যাব না, বিয়ে করব না আমি।”
“বিয়ে না করলেও সমস্যা নাই, তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করব।”
“আপনি ডাক্তার, কোনো ভিলেন নয়।”
“আমি তোর জন্য ডাক্তার থেকে ভিলেনও হতে পারি।”

আভা পার্লারে এসেছে সাজতে। ইশশ কত সুন্দরভাবে বাড়ি ভর্তি লোক। হাসিতে মশগুল প্রত্যেকটা মানুষ। আজ তার বিয়ে! সে বউ সাজবে। আগেরবার বিয়েটাতো একদম অপ্রস্তুত ভাবেই হয়ে গিয়েছিল। এখনের যতটা আনন্দ, ততোটা একদমই ছিল না। তখনি আভার কাজিন তিশা আসলো। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“আপু আপু, ভাইয়া কল দিয়েছে।”
আভা আনমনে হেসে তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিলো। ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“অডিও না, ভিডিয়ো কলে আয়।”
“না, এখন না। আমি পার্লারে।”
“আসতে বলেছি আয়।”

তাশরীফের দৃঢ় কন্ঠে কথাটি শুনে দ’মে গেলো আভা। ভিডিয়ো কল এলো। আভা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তাশরীফের ঝলমলে হাসি। একটা মানুষের হাসি এত সুন্দর কিভাবে হয়!
“আভা… দেখতো আমি কোন পাঞ্জাবি পড়ব।”
পার্লারের মেয়েরা হাসছে ওপাশ থেকে তাশরীফের কথা শুনে। আভা লা’জু’ক হেসে বলল,
“ওই যে মেহরুন কালারেরটা পড়ুন। ওইটা আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।”
“তুই লাইনেই থাক, কল কা’টি’স না। আমি চেইঞ্জ করে আসি।”
তাশরীফ ক্যামেরা অফ করল। ৫ মিনিট পর আসলো।

“কেমন লাগছে?”
“সুন্দর লাগছেতো।”
“আভা, তোর মত তিতাকে আসলে জিগ্যেসই করাই উচিৎ হয়নি।”
“কি করলাম?”
“একটু ভালোভাবে বলতে পারিস না? যে অনেক সুন্দর লাগে আপনাকে।”
আভা দাঁত বের করে হেসে ফেলল। পরক্ষণে বলল,
“এই যে শুনছেন? আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মাকে বলুন কালো টিপ লাগিয়ে দিতে কারোর যেন নজর না লাগে। সাবধানে থাকবেন বুঝলেন? না জানি কেউ আবার কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়।”
আভার কথা শুনে পার্লারে উপস্থিত সবাই ফিক করে হেসে ফেললো। ওপাশ থেকে তাশরীফ চুলে চু’ল’কা’নির ভান করে বলল,

“তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে আভা। ঠিক যেনো কোনো রাজ্যের রাজকন্যা, ঠিক যেনো কোনো বাগানের অপরাজিতা ফুল।”
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বেশ সুন্দরভাবে ই সম্পূর্ণ হলো। নাচে-গানে মেতে উঠেছিল পুরো বাড়ি। মনে হচ্ছিলে হ্যাঁ, এ বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে। রাফসান চৌধুরী স্ত্রীকে বললেন,
“তোমার ছেলের বিয়ে ধুমধামে দিচ্ছ, খুশীতো তুমি? অনেক ইচ্ছে ছিলো না?”
নীরা চৌধুরী বলল,

“খুশী হব না? এখন শাশুড়ী হয়েছি, কিছুদিন পর হব দাদী।”
হাসলেন রাফসান চৌধুরী। দেখতে দেখতে ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। এইতো সেইদিনইতো তাশরীফ রাগ করতো অফিস থেকে ওনি ফিরলে। তখনি তাশরীফ আসে বাবা-মায়ের রুমে। এসে বলল,
“মা…”
“কি হয়েছে বাবা?”
“তোমার বিয়ের শাড়িটা কোথায়? দেখিতো…”
নীরা চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন, “কেন?”
“দাও না…”
আলমারি থেকে শাড়ি বের করলেন নীরা চৌধুরী। তাশরীফ মায়ের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ চলবে…”
“কি চলবে?”
“মা, এই শাড়িটাই আভা বিয়ের দিন পড়বে।”
“কি!”
অবাক হয়ে রাফসান চৌধুরী আর নীরা চৌধুরী একসাথেই উচ্চস্বরে বলে উঠলেন।
তাশরীফ বলল,
“অবাক হওয়ার কি আছে? আমার মায়ের শাড়িতে আমার বউ আসবে।”
“কিন্তু বাবা…”

“মা, এইটাই পড়বে। এই শাড়ি দাদী তোমাকে দিয়েছিল। এত সুন্দর শাড়ি আজকালতো পাওয়াই যায় না। চুমকি-ঝুমকিম লেহেঙ্গা শাড়ি আমার একদম অপছন্দ। তাই এই সুন্দর শাড়িটা পড়েই আভা আসবে।”
ছেলেকে জ’ড়ি’য়ে ধরলেন নীরা চৌধুরী। তিনিও ভেবেছিলেন আগে থেকেই তাশরীফের বউকে এই শাড়িটা পড়িয়ে এই বাড়িতে আনবেন। কখনো বলা হয়নি। আজকালকের যুগের ছেলে-মেয়েদের এই শাড়ি পছন্দ নাওতো হতে পারে।

সারা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ। আজ বিয়ে। বিয়ে বাড়িতো বিয়ে বাড়ির মত হবেই। মানুষে ভী’ড় জমে আছে। আভাকে সাজাচ্ছে পার্লারের দুইটা মেয়ে। বাসায় আনা হয়েছে তাদের। বরপক্ষ আসবে না, এসে গেছে। শুধু জামাই আর বাকি পুরুষরা বাকি। মহিলারা চলে এসেছে শাড়ি গহনা নিয়ে। তাশরীফের কথা অনুযায়ী আভাকে আজ শাশুড়ীর শাড়ি পড়িয়েই সাজানো হচ্ছে। নীরা চৌধুরী আসলেন রুমে। আভা বলল,
“মা, দেখোতো আমাকে কেমন লাগছে।”
আভার হাসিমুখের কথাটি শুনে নীরা চৌধুরী কাছে টা’ন’লেন আভাকে। থুতনিতে হাত রেখে বললেন,
“কারোর নজর না লাগুক আমার মেয়ের উপর। বউ না আমি আমার বাড়িতে মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
হাসলো আভা। আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। তাশরীফ আসবে একটু পরই।
বর এসেছে, বর এসেছে শোনা গেল বাইরে থেকে। আভা জানালায় দাঁড়ালো গিয়ে৷ গাড়ি থেকে নামছে তাশরীফ। খয়েরী রংয়ের শেরওয়ানিতে কি সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ!” আমার বরকে জামাই জামাই লাগছে একেবারে”
কথাটা ভাবতেই হাসলো আভা। নিজের মাথায় নিজে টু’কা দিয়ে বলল,
“আমার জামাইইতো, জামাই জামাই লাগছে আবার কি?”
তাশরীফের নজরও জানালায়, ওইতো আভাকে দেখা যাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে সে।

বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো। আভাকে গাড়িতে বসানো হলো। সে আজ কাঁদছে না। কাঁদবে কেন? সেতো জানে, সে যখন চাইবে তখনি এইখানে চলে আসতে পারবে। তাশরীফ আর নয়তো তার মামা তাকে নিয়ে আসবে। তাশরীফ গাড়িতে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। তাশরীফ আভাকে বলল,
“তুই এমন কেনরে আভা? মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে বলে একটু কান্নাও করলি না!”
তাশরীফের এহেন বাক্যে থতমত খেয়ে গেল আভা। এইটা কি বলল তাশরীফ তাকে!
“এই এই আপনি জানেন? আমি সাজের জন্য কান্না করিনি।”
“তো কি? ভেবেছিস, এত টাকা দিয়ে আটা -ময়দা সুজি লাগিয়েছি, কান্না করলেতো এইসব শেষ হয়ে যাবে।”
“কে বলেছিল? পার্লারের কথা।”
“কে আবার? আমি।”
“তাহলে এখন কথা শুনাচ্ছেন কেন?”
“কথা শুনালাম কোথায়? আমিতো বললাম একটু।”
“এই একটু বলবেন কেন?”
“আমার বউ তাই।”

ফুলে সজ্জিত একটা রুমে বসে আছে আভা আর তাশরীফ। আভা ল’জ্জা’য় আজ চোখ তুলে তাকাতে পারছে না তাশরীফের দিকে। আজ এত ল’জ্জা পাচ্ছে কেন সে? বিয়ের এই রাতটাই বুঝি সব মেয়েই এমন লাজুক মুখে বসে থাকে? তাশরীফ বলল,
“তাকাচ্ছিস না কেন?”
“না মানে…”
“আমার না? কেমন জানি গ’র’ম গ’র’ম লাগছে আভা।”
“কোথায়? রুমের এসিতো অনই আছে।”
“এত সুইট হ’ট একটা বউ সামনে থাকলে এই এসিওতো গ’র’ম হয়ে যায়।”
“ইশশ, কি যে বলছেন, অসভ্যের মত।”
“প্রেমিক পুরুষরা অসভ্যই হয়। জানিস? আমার না? জ্বর জ্বর লাগছে।”
আভা হাতটা তাশরীফের কপালের দিকে বাড়িয়ে দিলো। বলল, “কই দেখিতো…”
আভা হাত দিয়ে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৮

“জ্বরতো আসেনি।”
তাশরীফ চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির নি’শ্বা’স নিয়ে বলল,
“এত ভালো মেডিসিন থাকলে রোগতো বলবেই, ” আ’ম কামিং স্যার?”
আভা এইবার লা’জু’ক হেসে বলল,
“কি যে শুরু করেছেন আপনি… আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাব।”
“আজ রাততো ঘুমানোর নয়। আজ তোকে ঘুমাতে দিব না। আমার বড্ড “বাবা, বাবা” ডাক শুনার ইচ্ছে হয়। আজ রাতে তোকে আমি আ’দ’র দিব, আর তুই আমাকে কিউট একটা বাবু গিফট করবি।”
ল’জ্জা’য় লা’ল হয়ে যায় আভা। খুব গ’ভী’রভাবে আভাকে কা’ছে টে’নে নেয় তাশরীফ। আজ রাত তাদের। একান্তই তাদের। সকালের সূর্যটা হয়তো অন্য দিনের চেয়ে আজ রাতের পর একটু বেশিই সুন্দর দেখাবে।

সমাপ্ত