প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৬
মারশিয়া জাহান মেঘ
তোহা আর ফারাবী একে অপরের পাশাপাশি বসে আছে খো’লা আকাশের নিচে। যেইখানে কেউ নেই তোহা আর ফারাবী ছাড়া। নির্জন একটা জায়গা। অদূরে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটা খাল। দুই সারিতে গাছ, মধ্য জায়গা। তোহার চোখে পা’নি। ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কি থেকে কি হয়ে গেল! এমনটাতো হওয়ার কথাই ছিল না।
“তোহা…”
“খবরদার, আপনি আমার নাম আপনার মুখে উচ্চারণ করবেন না। আমাকে এইখানে এনেছেন কেন? আমাকে বাড়ি নিয়ে চলুন। নয়তো আমি একাই চলে যাব।”
“অনেক রাগ হচ্ছে আমার উপর?”
“রাগ? আপন মানুষদের উপর রাগ করা যায়। রাগ, অভিমান, ভালোবাসা এই তিনটা ভীষণ মূল্যবান শব্দ।”
“আমি জানি, তুমি তোমার ভাইয়াকেও ভুল বুঝতেছ। আসলে, তাশরীফ এই বিষয়ে কিছুই জানে না।”
তোহা অবাক হয়ে তাকালো ফারাবীর দিকে। একটু আগ অবধিও সে ভাবছিল, তাশরীফ সবটা জানে। তোহা ফারাবীর শার্টের কলার চে’পে ধরে। বলল,
“আমার ভাইয়ার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে আপনার একবারও খারাপ লাগলো না? আপনি জানেন? আপনি কি করেছেন?”
“জানি।”
তোহা চিৎকার করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” না, না আপনি জানেন না। জানলে এই কাজটা করতেন? আমার ভাইয়া জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছেন আপনি? আপনাকে মে’রে লা’শ পাঠাবে আপনার মা-বাবার কাছে। বন্ধুত্ব নামক শব্দটা আপনাদের মাঝে আর থাকবেই না।”
“তুমি যদি চাও আমাদের বন্ধুত্বটা থাকুক, তাহলে তুমি এইসব তাশরীফকে জানাবে না তোহা।”
দৃঢ় দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে মুখ গম্ভীর করে কথাটি বলল ফারাবী। তোহা চোখ বড় করে তাকালো ফারাবীর দিকে। বলল,
“আপনি এত নিচু মন-মানসিকতার ফারাবী? এত্ত বড় কিছু হয়ে গেছে, আর সেইটা আপনি জানাতে না করছেন? তাও আমার ভাইয়াকে? আমার ভাইয়া আমার কাছে সব। আমার মা-বাবা সব আমার ভাইয়া। এত বড় সত্য তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার প্রশ্নই আসে না। আমি এক্ষুনি গিয়ে ভাইয়াকে সব বলব।”
কথাটি বলেই তোহা উঠে দাঁড়ালো। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে ফারাবী বলল,
“সত্যটা জানলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট তোমার ভাইয়াই পাবে তোহা।”
থেমে যায় তোহা’র পা। শ’রী’র আর এত মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছে না। নিঃশক্তি হয়ে বসে পড়ল আগের জায়গায়। হঠাৎই কান্না করে উঠে তোহা। চিৎকার করে ফারাবীকে বলল,
“আমি একজনকে ভালোবাসিইইইই, আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না ফারাবী ভাই, পারেন নাহহহহহ।”
তোহার মুখে এমন কথা শুনার পর ফারাবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তোহা অন্য কাউকে ভালোবাসে? অথচ, সে দেশের বাইরে থাকতেই তাশরীফের ফোনে তোহার ছবি দেখে মনে মনে কত কি ভেবে রেখেছে তোহার জন্য। এইভাবে সে নিজের কাছে হেরে গেল? তার ভালোবাসাতো পবিত্র এবং সত্যি।
“তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো!”
ফারাবীর কথার জবাব না দিয়ে তোহা কেবল কান্না করছে। সে কাব্যকে কি জবাব দিবে? কাব্যকে সে গত ৩ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে। কখনো কাব্যকে বলার সাহস হয়নি তার। কাব্য নিজেও বাংলাদেশের বাইরে থাকে। ভার্চুয়ালে পরিচয় তাদের। আরও কয়েক মাস পরই বাংলাদেশে আসবে কাব্য। তোহা ভেবে রেখেছিল, কাব্য সামনে আসলেই, মনের অগোছালো অনুভূতি তুলে ধরবে। কিন্তু এখন! এখন কি হয়ে গেল এইটা? ভাবতেই কান্নার সুর বেড়ে যায় তোহার।
“তোহা… জবাব দাও।”
“এখন বলে কি হবে? আপনি আমার জীবনে যা ক্ষতি করার তাতো করেছেনই। কিন্তু কি বলুনতো?; এইটা থেকে মুক্তির উপায়ও আমি ভেবে রেখেছি। আপনি যত দ্রুত সম্ভব, ডিভোর্স লেটারের ব্যবস্থা করুন।”
ফারাবীর বু’ক’টা ফেটে যাচ্ছে। পুরুষ মানুষের ভালোবাসা ভয়ংকর। সে অনেক বেশি ভালোবাসে যে তোহাকে। তোহাকে ছাড়া বাঁচা প্রায় অসম্ভব।
তাশরীফ হসপিটাল থেকে তড়িঘড়ি করে ফিরেছে। ড্রইং রুমে দ্রুতবেগে প্রবেশ করে, আভাকে ডেকে বলল,
“আভা, এই আভা… ফারাবী আর তোহা এখনো আসেনি?”
তোহা আচমকা এই সময় তাশরীফের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে। রুম থেকে বেরিয়ে নিচতলায় আসে সে। বলল,
“কি হয়েছে? আপনি এখন বাসায় যে?”
“তোহা আর ফারাবী আসেনি?”
“নাতো, এখনো আসেনি। কেন?”
“ফারাবীর জন্য একটা গুড নিউজ আছে। কিন্তু, এখনো আসেনি কেন? এতোক্ষণেতো বাসায় এসে যাওয়ার কথা।”
“কি গুড নিউজ?”
“ফারাবীর বাবা আমাকে কল দিয়েছিল, লারার বাবার সব টাকা পরিশোধ করে ফেলেছে। এখন আর ফারাবীকে ওই মেয়ের কথায় উঠতে-বসতে হবে না। ওই লারাকে বলো, ব্যগপত্র গুছিয়ে এইখান থেকে বেরিয়ে যেতে।”
আভা লাফিয়ে বলল,
“কি! সত্যিইইই?”
“হ্যাঁ, ফারাবীর ফোন সুইচ অফ বলছে কেন? তোহাকে নিয়ে গেছে, চিন্তা হচ্ছে আমার।”
“বোনকে নিয়ে অনেক চিন্তা হয় তাই না?”
আভার কথা শুনে আভার দিকে তাকায় তাশরীফ। মুচকি হেসে বলল,
“তোকে নিয়েও চিন্তা হয়।”
লাজুক হেসে আভা বলল,
“কফি দিব?”
“হ্যাঁ…”
ফারাবী আজ খুশিতে আত্মহারা। জীবনকে আজ তার ভীষণ সহজ মনে হচ্ছে। বাসায় ফিরতেই তাশরীফ তাকে জানালো তার বাবার কথা। লারা ফারাবী আসার আগেই ন্যাকা কান্না জুড়ে আমেরিকায় ব্যাক করার জন্য, বেরিয়ে পড়েছে।একটু আগেও তার বাবা কল দিয়েছে। কল দিয়ে করুণ স্বরে বললেন,
“ফারাবী, আর্লি তুমি ব্যাক করো, তোমার মমকে আনতে যাব আমরা দুজনে।”
ফারাবী তখন কাঁ’পা স্বরে বলেছিল,
“সত্যি ডেড? গ্রেনিদের বাসায় যাব?”
“ইয়েস মাই সান।”
কিন্তু, সব কিছুর মাঝেও তোহার কথা ভেবে তার কষ্ট হচ্ছে। খুশির কারণ হাজারটা থাকলেও সে কিছুতেই খুশি হতে পারছে না। তোহা বাসায় ফিরতেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। তখন আভা তাকে জিগ্যেস করেছিল,
“ফারাবী ভাইয়া, তোহার কি হয়েছে?”
জবাবে ফারাবী কোনোভাবে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“জানি নাতো। আসার সময় থেকেই মুড অফ।”
ফারাবী, ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে আছে। তাশরীফ তার পাশে গিয়ে বসলো। বলল,
“কিরে? চুপ হয়ে আছিস কেন? তোরতো হ্যাপি থাকার কথা এখন। তুই কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশড ফারাবী?”
“কোথায়? নাতো…”
“তোকে দেখে মনে হচ্ছে, তুই কোনো কিছু নিয়ে অনেক চিন্তিত।”
“আচ্ছা, তোদের রিসিপশনের ডেকোরেশন আজই শুরু করে দিই?”
“হ্যাঁ, স্টার্ট করে দে। আমাদের উপর এত প্যারা গেল বিয়ের পর পর, যে অনুষ্ঠান আজ করব, কাল করব করে করাই হচ্ছে না।”
“তাশরীফ, আভাকে তুই মানিয়ে নিয়েছিসতো?”
তাশরীফ তাকালো ফারাবীর দিকে। উদাস হয়ে বলল,
“মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিতো ফারাবী। মন বার বার আ’ট’কে দিচ্ছে।”
“তাহলে এতো আয়োজন কেন?”
“নিয়মের অজুহাত।”
“তোর মনে হয় না? আভা তোর প্রতি দিন দিন উইক হয়ে যাচ্ছে?”
“আভাকেও কন্ট্রোল করতে হবে ওর ইমোশন। এত তাড়াতাড়ি সবটা হয়ে গেছে, যে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট পাচ্ছি।”
“তাহলে সেইদিনই অনুষ্ঠান করিস, যেইদিন সত্যি সত্যি মেয়েটাকে তুই ওয়াইফের অধিকার দিতে পারবি।”
আভা পেছন থেকে সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। আর একমুহূর্তও সে দাঁড়ালো না সেইখানে। নিজের রুমে চলে এলো। গাল বেয়ে নোনা চোখের পানি পড়ছে তার। অথচ সে ভেবেছিল, তাশরীফও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তাহলে কি তার ভাবনা এতদিন ভুল ছিল! এত বড় ভুল!
এইদিকে ফারাবী কিছু একটা ভেবে তাশরীফকে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৫
“তাশরীফ, তোকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম…”
তাশরীফ ফোনে দৃষ্টি রেখে বলল,
“হ্যাঁ, বল।”
“আমি তোহাকে বিয়ে করতে চাই।”