প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৩

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

“আজ চায়ের প্রয়োজন নেই। মাথা ব্যথা কমাতে, আমার আদরই যথেষ্ট তোর জন্য।”
আভা আমতা আমতা করে বলল,
“আজ নয় প্লিজ…”
“স্বামীর ডাকে স্ত্রীদের সাড়া দিতে হয়।”
“দে’হে’র খা’য়ে’শ মেটালেই সংসার হয়ে যায়? মন থেকে কি আদৌ আমাকে মেনে নিতে পেরেছেন তাশরীফ ভাই?”
আভাকে ছেড়ে দিলো তাশরীফ। এত অবুঝ কোনো মেয়ে হয়? সে এত কিছু করেও নিজেকে বুঝাতে পারলো না আভার কাছে? আভা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
” ইচ্ছের বিরুদ্ধে সাময়িক সুখ হয়তো উপভোগ করা যায়, সংসার করা যায় না।”
রুম থেকে বেরিয়ে গেল আভা। তাশরীফ দাঁড়িয়ে আছে৷ মিনমিন করে বলল,
“তোহা, ফারাবী চলে যাক, তোর ব্যবস্থা আমি করছি। অনেক বেশি বুঝিস তাই না? তাহলে আমার মনটা কেন বুঝলি না?”

সকাল হয়েছে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ছোট ছোট করে চোখ মেলে তাকায় তোহা। পাশে ফারাবীকে দেখেই ভেতরটা আঁ’ত’কে উঠে তার। ফারাবী জো’র করে তার সাথে গত রাতে যা করেছে তাতো ভুলার নয়। এই জন্যই তাকে ফারাবী বিয়ে করেছিল? অনেক কিছুই ভাবছিল তোহা। অভিমান নাকি রাগ, সে তা বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে। তোহা কোনোরকমে উঠে পাশ থেকে শাড়িটা আ’ক’ড়ে ধরে। চোখ দুটো ভি’জে উঠছে তার। ফারাবী তোহার উঠে যাওয়া টের পেয়ে তাকায়। ঘুম কন্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আরেকটু পাশে শুয়ে থাকো না জান।”
ক্রোধে এমনিতেই তোহার মাথা গরম। ফারাবীর কথা শুনে আরও বেশি রেগে যায় সে।
“আপনি আমাকে জান ডাকবেন না। ঘৃণা করি আমি আপনাকে।”
“ঘৃণা করো, আর যাইই করো। এখন তোমার দেহের প্রতিটি স্প’র্শ কেবল আমার। ঘৃণা করতে করতে ঠিক একসয়ম ভালোবেসে ফেলবে।”
“আপনাকে আমি কখনো ভালোবাসব না। কখনো না।”
“দেখা যাবে পরে, জলদি গোসলটা করে আসো। রেডি হয়ে নাও। ডেড নিশ্চয়ই এতক্ষণে রেডি হয়ে বসে আছে।”
“রেডি হব মানে? আমি কোথাও যাব না। এই বাড়িতেই থাকব।”
“যেতে হবে। বিয়ের পর, ঘরজামাই থাকার ইচ্ছে কোনো কালেই আমার ছিল না।”
“আপনাকে জামাই হিসেবে মানে কে?”
“তুমি ছাড়া বাড়ির সবাইই মানে। আর তুমি….”
ফারাবী তাকালো তোহার দিকে। তোহা বাকিটা বুঝে বলল,
“আমি মানব না। মানতে হলে মরতে হবে।”

আভা চোখ মেলতেই, নিজেকে তাশরীফের বু’কে শুয়ে থাকতে দেখে লাফিয়ে উঠে। তারপর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই যা, ৯ টা বেজে গেছে? আর আমি এখনো ঘুমে? বাড়িতে মেহমান আর আমি কিনা শুয়ে আছি?”
জলদি বিছানা থেকে নামলো আভা। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে সে। তাশরীফকে উঠে বসে থাকতে দেখে বলল,
“এত জলদি উঠলেন কেন?”
“তোহা চলে যাবে ভুলে গেছিস?”
মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল আভার। তোহা ছাড়া সে ভীষণ একা। এ বাড়িতে সময় সুন্দরভাবে কাটাতো কেবল তোহার জন্যই। আভা ধীর কন্ঠে বলল,
“অনেক তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না সবটা?”
“না হয়নি, যা হয়েছে ভালো হয়েছে। ফারাবীর মত সুখী, ওকে আর কেউ রাখতে পারবে না। মিলিয়ে নিতে বলিস ওকে। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট রেডি কর। ওদেরকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে দিয়ে, আমি হসপিটালে যাব।”
“আজকেও!”

“দায়িত্ব সব জায়গায় সঠিক হওয়া উচিত। ভাই হিসেবে দায়িত্ব পালনতো করবই। সাথে, ডক্টর হিসেবে? আমার পেশেন্টরা ওয়েট করে আমার জন্য।”
“আর আপনার ঘরের স্ত্রী?”
তাশরীফ আভার এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না। সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে। আভাকে সে ভালোবাসে, ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু আভা বুঝতে পারছে না এখন। কখন বুঝবে তারও হয়তো কোনো হিসেব নেই। তাই সে আর কথা বাড়াতেই চায়লো না।

“তোহা, বাচ্চাদের মত কাঁদছিস কেন? আয়নায় দেখ, তোকে আজ কি সুন্দর লাগছে।”
তোহা তাকায় আয়নায়। নিজেকে পরখ করে বলল,
“আমিতো সুন্দর তোহাকে নয় আভা, অসুখী তোহাকে দেখতে পাচ্ছি। যার ঠোঁ/টের কোণে হাসি নেই। চোখে কেবল পানি আছে।”
আভা জড়িয়ে ধরে তোহাকে। ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল তোহা। বাবা-মা কেউ না থাকার ফলেই এমনটা হয়েছে। তাশরীফকে অনেক সময়, অনেক কিছু ভয়ে জানায়নি অবধি। তাশরীফ এলো তোহার রুমে। তোহাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে বলল,

“হোয়াটস ইউর প্রবলেম তোহা? বিয়ে সব মেয়েরই হয়। এই যে আভারও হয়েছে। এখন ওহ কি ওদের বাড়িতে? নাকি আমাদের? এইরকম করছিস কেন?”
তোহা চুপসে আছে। নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে শুধু। ভাইয়ের কথার জবাবে কিছু বলতে পারলো না সে। আভা বিরক্ত হয়ে বলল,
“আপনি আবার উপরে আসতে গেলেন কেন? আমিতো নিয়েই আসছিলাম ওকে।”
“ওর জন্য কি ফ্লাইট মিস হবে না? ওরা সবাই অপেক্ষা করছে নীচে।”
আভা তোহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“চল আভা, কাঁদিস না। দেখবি, সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানিয়ে নিতে পারবি।”
“সবসময় মানিয়েই কেন নিতে হবে আভা?”
“এইটাইতো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। যেই সময়টাকে, আমরা ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও মানিয়ে নিই।”

প্ল্যানে বসে আছে তোহা আর ফারাবী পাশাপাশি। তোহার কান্না কিছুতেই থামছে না। ফারাবী বিরক্ত। একটা মানুষ কত কাঁদতে পারে? তোহার এত এনার্জি কোথা থেকে আসে, তা সে বুঝতে পারে না। তোহার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সবাই এইদিকেই তাকিয়ে আছে তোহা, প্লিজ কান্না থামাও। আর কত কাঁদবে?”
কে শুনে কার কথা? তোহা ফারাবীর কথা তোয়াক্কা করলো না। ফারাবী তখন আবার বলল,
“তোহা, তুমি কি কান্না থামাবে? নাকি…”
তোহা চুপসে গেল। এখন এইখানে তাশরীফ নেই, আভাও নেই। তাই সে কোনোভাবেই আর কিছু বললো না। ওইটা নিজের বাড়ি ছিল বলে, বড় বড় কথা শুনাতো সে ফারাবীকে। এখন? এখনতো সে কিছুতেই কিছু বলতে পারবে না। যদি ফারাবী তাকে মা’রে? ভেতরে ভেতরে ভ’য় পায় তোহা। ফারাবী আর কিছু বললো না। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফেইসবুকে ঢু’কে সে। ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলো তোহা তার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ -মুখে বিস্ময়ের ছাপ। ফারাবী ভ্রু কুঁচকে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২২

“কি হয়েছে?”
“আপনার আইডির নাম কি?”
“জায়ান কাব্য।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ২৪