প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৮
মারশিয়া জাহান মেঘ
আঁধারীনির ভীত চেহারা বার বার চোখে ভাসছে শায়ানের। ভেতরটা মুচড়ে উঠছে বার বার তার। সে জানে, আঁধারীনির প্রতি তার উইকনেস অনেক বেশি। সে কিছুতেই আঁধারীনিকে কারোর হতে দিবে না। ধ্রুব যা শুরু করেছে হীতে বিপরীত ঘটবে সব। তাই, আজই সে আঁধারীনিকে নিয়ে যেভাবেই হোক ব্যাক করবে। বিয়েটা সেরে ফেলতে পারলেই স্বস্তি পায় সে। এইসব ভাবতে ভাবতেই, রিসিপশনে গেল শায়ান। চোয়াল শ’ক্ত করে রাগান্বিত স্বরে বললো,
“আপনাদের সার্ভিসে কি মানুষদেরকে বি’ষ দেওয়া হয় নাকি মিস্টার?”
“হুয়াট! সরি স্যার, আপনার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“এই রিসোর্টের ম্যানেজার কে?”
দূর থেকে কালো ব্লেজার পরিহিত একজন এগিয়ে আসলো। এসে ব্যস্ত স্বরে বললো,
“আমি ম্যানেজার স্যার, কি হয়েছে? আপনি এমন বিহেভ কেন করছেন?”
“আমাদের সাথের একজনকে বি’ষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কুল্ড ড্রিংকসে।”
“কি!”
“ইয়েস। ভালোই ভালোই ওয়েটারকে বলবেন? সে এইটা কেন করেছে। নাকি এই রিসোর্ট বন্ধ করার বন্দবস্ত করব?”
শায়ানের দাম্ভিক কথায় ভ’য় পেলেন ম্যানেজার। সঙ্গে সঙ্গে বললেন,
“ওই টেবিলে কে ছিল?”
“ফখরুল ছিল স্যার।”
“ডাকো ওকে।”
আরেকজন ওয়েটার বেশ জো’র করে ধরে নিয়ে আসে ফখরুল নামক ওয়েটারটাকে। শায়ান গা’লে থাপ্পড় মে’রে বললো,
“বল, কেন করেছিস এইটা? কে বলেছে এইটা করতে?”
মা’র খেতে খেতে ওয়েটার কোনোরকমে বললো,
“স্মিতা, স্মিতা ম্যাডাম।”
শায়ান অবাক সুরে বললো,
“স্মিতা! আমাদের সাথে যে মেয়েটা এসেছিল সে?”
“হ্ হ্যাঁ স্ স্যার হ্ হ্যাঁ।”
শায়ান ওয়েটারের কলার ছেড়ে দেয়। পাশেই শত্রুকে রেখে, বাইরের মানুষকে সে মা’র’তে বসেছিল? আজ ধ্রুবর সাথে তার নিশ্চিত বড় কিছু হয়ে যাবে। এমন একটা ক্ষতিকারক মেয়েকে সে আঁধারের পাশে কিভাবে রাখতে পারছে! শায়ান এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না সেইখানে। চোয়াল শ’ক্ত করে এগিয়ে গেল রুমের দিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্মিতার গা’লে ক’ষি’য়ে থা’প্প’ড় মা’রে ধ্রুব। রা’গে বার বার হাতটা কাঁ’প’ছে ওর। শায়ান স্মিতার হাত শ’ক্ত করে ধরতেই স্মিতা বললো,
“ছাড়ো আমাকে, আমার হাত কোন সাহসে ধরেছ শায়ান?”
“তোমার সাহস কি করে হয়? আঁধারীনিকে মা’রা’র চেষ্টা করার?”
আঁধারীনি বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে আছে স্মিতার দিকে। সে কল্পনাও করেনি, স্মিতার এত ক্ষো’ভ তার প্রতি। সে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“আমি তোমার কি এমন ক্ষতি করেছি স্মিতা? যে তুমি এত বড় একটা অ প রা ধ করতে গিয়েছিলে?”
“তুমি, আমার ধ্রুবকে আমার থেকে কেঁড়ে নিতে এসেছ।”
“আমি!”
“হ্যাঁ তুমি। তোমার জন্য ধ্রুব আমার দিকে তাকায় না। তুমি যেন ওর চোখে হারাও।”
ধ্রুব থমকে দাঁড়িয়ে আছে। স্মিতাকে সে এনেছিল আঁধারীনিকে জেলাস ফিল করাতে। কিন্তু হীতে যে বিপরীত হয়ে যাবে সে তা ভাবতেও পারেনি। শায়ান আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না স্মিতাকে। হাত টে’নে বললো,
“বেরিয়ে যাও এইখান থেকে।”
“আমি বের হব না।”
ধ্রুব আরেকটা থা’প্প’ড় মে’রে বললো,
“বের হয়ে যা, আর একবারও যদি তোকে চোখের সামনে দেখি, কি যে করব তুই জাস্ট ভাবতেও পারছিস না। মেয়ে বলে ছেড়ে দিলাম।”
“কিন্তু আমি তোমায় ছাড়ব না ধ্রুব। আমার ডেড আমাকে আজ অবধি যা চেয়েছি সব দিয়েছে। তোমাকেও দিবে। পৃথিবীতে যা করার হয় আমি করব। কিন্তু তোমাকে আমার হতেই হবে। যেভাবেই হোক।”
কথাটি বলেই স্মিতা বেরিয়ে গেল। আঁধারীনি চুপসে বসে গেল বিছানায়। তার সামনে এইগুলো কি ঘটে গেল এখন? খুব শীঘ্রই তাকেও বোধহয় এই দেশ থেকে চলে যেতে হবে। অশান্তি আর ভালো লাগছে না তার। আর ধ্রুব? ধ্রুব তাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য স্মিতাকে এনেছিল? এত তীক্ষ্ণ চা’পা রা’গ ধ্রুবের? যে বাইরের একটা মেয়েকে নিজের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে এক্টিং করাতে হয়। নাটক না হয় ঠিক আছে। কিন্তু ধ্রুব যে স্মিতার এত কাছে মেলামেশা করেছে? ওটা? ওটা কিছু না? আর ভাবতে পারলো না আঁধারীনি। মুহুর্তেই পড়ে গেল অজানা কোনো ক’ষ্টে।
“আঁধার…”
মৃদু চি’ৎ’কা’র করে শায়ান গিয়ে ধরলো আঁধারীনিকে। ধ্রুব এগিয়ে আসতেই শায়ান বললো,
“একদম কাছে আসবি না ধ্রুব। আঁধারীনির পাশে তোকে আমি আর ঘেঁষতে দিব না। এমনিই অনেকটা কাছে এনে ফেলেছিলাম। ওই জন্যই আজ আঁধারীনির এই অবস্থা।”
“আঁধারীনি সেন্সল্যাস হয়ে গেছে শায়ান, দেখতে দে আমাকে। প্লিজ…”
“না, তোর দেখতে হবে না। তুই ছাড়াও বাংলাদেশে অনেক ডাক্তার আছে।”
“তুই ভুলে যাচ্ছিস শায়ান, আঁধার আমার কাজিন।”
“আর আমার ভালোবাসা।”
পা দুটো এগিয়ে যেতে নিলেও থামিয়ে ফেললো ধ্রুব। চোখ থেকে অজান্তেই পা’নি চলে আসলো। তার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আঁধারীনি আজ এতলটা ডিপ্রেসড অবস্থায় পড়ে গেছে।
“ধ্রুব ভাই…”
আঁধারীনি চোখ মেলে ধ্রুবকে ডাকতেই ধ্রুব চিন্তিত মুখটা উঁচু করে তাকালো। দ্রুত পায়ে বিছানায় গিসে বসলো সে। আঁধারীনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“এখন কেমন লাগছে আঁধার?”
“ভালো। তোমাকে একটা কথা বলি?”
“হুম বল…”
“তোমার আমাকে পছন্দ নয় তাই না?”
“এইসব কি বলছিস আঁধার?”
শব্দ করে হাসলো আঁধার। তারপর এক ধ্যানে তাকালো ধ্রুবর দিকে। বললো,
“উন্মাদ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনার মন পাথরের মতো। ব্যর্থই চেষ্টা করে গেলাম, আমার অনুভূতি বুঝাতে। ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনি ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী। ডক্টর ধ্রুব চৌধুরীর মন ঘায়েল করা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী, মানুষের রোগ নির্ণয় হয়তো করতে পারে। কিন্তু, প্রেমিকার চোখের ইশারা বুঝতে অসক্ষম। আপনি ডক্টর হিসেবে বেস্ট, ধ্রুব ভাই। তবে, প্রেমিক হিসেবে ভীষণ ব্যর্থ, অনুভূতিহীন।”
“আঁধারররর….”
“কষ্ট হচ্ছে ধ্রুব ভাই? কথাগুলো খুব কঠিন তাই না? এই কয়টা কঠিন বাক্য স’হ্য হলে না? এইবার ভাবুনতো, দিনের পর দিন ভালোবাসার অনুভূতি না বুঝাতে পেরে আমার কতোটা ক’ষ্ট স’হ্য করতে হয়েছিল।”
শায়ান খাবার হাতে নিয়ে রুমে আসে। ধ্রুবকে আঁধারীনিকে কাছে বসে থাকতে দেখে গম্বীর স্বরে বললো,
“তুই আঁধারের কাছে কি করছিস ধ্রুব? ওকে রেস্ট করতে দে।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৭
আঁধারীনি আচমকাই বললো,
“শায়ান ভাইয়া…”
“কি হয়েছে আঁধারীনি? কিছু বলবে?”
“আমাকে আপনি বিয়ে করবেন?”