প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২০

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২০
মারশিয়া জাহান মেঘ

“এই ধ্রুব আঁধারীনি কোথায়? দেখেছিস ওকে? আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
“বাসায় যাচ্ছি।”
“আমাদের ছাড়া?”
“আমাদের বলতে? আমার সাথে আঁধারীনি এসেছিল। আর আঁধারীনিকে তুই-ই নিয়ে যাবি। আমি নয়।”
“কিন্তু আঁধারীনি কোথায়?”
“কেন? রুমে নেই?”
“রুমে থাকলে তোকে বলতাম?”
ধ্রুব ট্রলি ব্যাগের চেইন লা’গি’য়ে বসলো বিছানায়। তারপর বললো,
“তুই গিয়ে দেখ কোথায় আছে।”
“কোথাও নেই ধ্রুব, আ’ম সিরিয়াস।”
“সো হুয়াট?”
“ধ্রুব আঁধারীনি নেইইই ভাই।”
ধ্রুব এইবার সিরিয়াসভাবে নিলো। আঁধারীনিতো এইখানের কিছুই তাকে ছাড়া চিনে না। গেল কোথায়?
“রিসোর্টের নিচে দেখেছিস?”

“হ্যাঁ।”
“একটু আগেইতো আমার সাথে দেখা হলো। হঠাৎ কোথায় গেল? চলতো গিয়ে দেখি…”
ধ্রুব বেরিয়ে গেল রুম থেকে। শায়ানও চিন্তিত হয়ে ধ্রুবর পেছন পেছন গেল। ধ্রুব সব জায়গায় দেখে আঁধারীনিকে না পেয়ে বললো,
“আঁধারীনির ফোনে কল দিয়েছিস?”
“সুইচ অফ।”
“সুইচ অফ! ওর ফোনতো অফ থাকে না সহজে।”
তখনি ধ্রুব কিছু একটা ভেবে ফোনটা হাতে নেয়। পরিচিত সেই নাম্বারে কল দিতেই রিসিভ করলো কেউ একজন। তাচ্ছিল্য স্বরে ওপাশ থেকে স্মিতা বললো,
“আমি জানতাম ধ্রুব, তুমি আমাকে কল দিবেই দিবে। আর যাইহোক, তোমার জান আমার কাছে কিনা….!”
ধ্রুব দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
“আঁধার কোথায়?”
“এত উতলা হচ্ছো কেন জা’ন? তোমার আঁধার আমার কাছে।”
“ওকে কেন নিয়েছ তুমি?”
“তোমাকে আমার করার জন্য।”
“স্মিতা, তুমি চেনো না আমাকে। তুমি কাকে নিয়ে গেছ তা বোধহয় ভালো করে বুঝতে পারছ না।”
“সিরিয়াসলি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি ফান করছি?”
“করতেওতো পারো বেব।”
ধ্রুব এইবার তেজী কন্ঠে বললো,
“আঁধার কোথায়? কি করেছ তুমি ওর সাথে?”
“এখনো কিছু করিনি, তবে তুমি যদি আমার কথা না শুনো, তাহলে আমি করব। আর যা করব তা আর নাই-ই বলি…”
“তোমার কোন কথা শুনতে হবে?”
“আমাকে বিয়ে করতে হবে।”
“ইম্পসিবল।”
“হুয়াই বেব? এক্টিং এক্টিং খেলা থেকে ভালো না? বিয়েটা একেবারে করে ফেলা।”
ধ্রুব কিছু একটা ভেবে বললো,
“আচ্ছা তোমায় করব আমি বিয়ে। আগে বলো, আঁধার কোথায়?”
“আমার সামনেই আছে। দেখবে নাকি ভিডিও কলে?”
মুহূর্তেই ভিডিও কল দিলো স্মিতা। কল ধরতেই ধ্রুবর বু’ক কেঁ/পে উঠলো। আঁধারীনিকে চেয়ারের সাথে বেঁ/ধে রাখা হয়েছে। চোখে পট্টি। অচেতন অবস্থা। ধ্রুব বললো,
“তুই আঁধারের সাথে এমন করেছিস না? আমি দেখ তোর সাথে কি করি।”
“তুমি কিচ্ছু করতে পারবে না। যা করার আমি করব।”

শায়ান চিন্তিত হয়ে বসে আছে। এই দেশে পা রাখার পর তার সাথে কিছুই ভালো হচ্ছে না। একটার পর একটা ঝামেলা যেন লেগেই আছে। সবকিছুতে সে ভীষণ বিরক্ত অনুভব করছে। ধ্রুবকে রুম থেকে পরিপাটি হয়ে বেরুতে দেখে শায়ান বললো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আঁধারকে আনতে।”
“হাউ ধ্রুব?”
“যেভাবেই হোক।”
“ধ্রব…”
“বল।”
“স্মিতাকে বিয়ে করে ফেল। তোর জন্য আঁধারের জীবন এখন বিপদে।”
ধ্রুব জবাব দিলো না। শায়ান আবারও বললো,
“কি ভাবছিস? চুপ কেন তুই?”
“আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে শায়ান।”
“কি?”

ধ্রুব চোয়াল শ’ক্ত করে মিনমিনিয়ে বললো,
“স্মিতা, তোমার খেলা শে’ষ।”
ধ্রুব প্ল্যান মাফিক সবকিছু শায়ানকে বলতেই, শায়ান বললো,
“ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া ধ্রুব। লাঠিও ভাঙ্গবে না, সা’পও ম’র’বে’ না।”
“একদম…”
“আমি তোকে সিগনাল দিলেই চলে যাবি।”
“ওকে, সাবধানে থাকিস।”
“ঠিক আছে।”

“আমার ধ্রুবকে আমার থেকে কেঁড়ে নিতে চেয়েছিলে তাই না? জা’নে মে’রে ফেলব তোকে। তুইও থাকবি না, ধ্রুব অন্য কারোরও হবে না।”
আঁধারীনির গা’ল চে’পে কথাগুলো বললো স্মিতা। আঁধারীনি ছোট ছোট চোখ মেলে তাকালো। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সে। কোনোরকমে থেঁতলে যাওয়া চোখ মু’খ নিয়ে বললো,
“আল্লাহ প্রদত্ত জুটি আমাদের। পৃথিবীর কোনো শ’ক্তি আলাদা করতে পারবে না। তোমাদের মতো মেয়েদের কেবল জেলাসী করার জন্য এক্টিংয়েই মানায় স্মিতা।”
সঙ্গে সঙ্গে ক’ষি’য়ে থা’প্প’ড় মা’র’লো স্মিতা আঁধারীনির গা’লে। তখনি স্মিতার ফোনে কল আসে। ফোনে ধ্রুবর নাম্বার দেখে হেসে হেসে আঁধারীনিকে বললো,
“এই যে দেখ, তোর ধ্রুব এখন শুধু আমি আমি করে।”
আঁধারীনি পা’নি চোখে বললো,
“হ্যাঁ, এই কলটাও আমার জন্যই।”
স্মিতা রে’গে বললো,
“তোকেতো আমি…”
আবারও কল আসায় স্মিতা বললো,
“কথা বলে আসি, তারপর তোকে আমি দেখে নিব….”
“বলো বেব।”
“স্মিতা, বিয়ে করব, কাজী অফিসে আসো।”
“কি! সত্যি!”
“হ্যাঁ আসো। আচ্ছা শুনো না…”
ধ্রুবর কোমল কন্ঠে স্মিতা লাজুক হেসে বললো,
“বলো ধ্রুব, সব শুনছি। বলো…”
“আমার একটা ইচ্ছে আছে। পূরণ করবে?”
“বলো না….”
“আমার ইচ্ছে, আমি বর সেজে তোমাকে বউ রুপে নিয়ে আসব।”
“অপূর্ণ থাকবে কেন? আসো, আমি তোমার অপেক্ষায়….”
“কোথায় আসব বলো?”
“আমাদের বাগান বাড়িতে।”

চারিদিকে পুলিশ দেখে পালাতে যায় স্মিতা। তখনি একজন মহিলা পুলিশ ধ’রে ফেলে। স্মিতা ধ্রুবর দিকে আ ত ঙ্ক চোখে তাকায়। ধ্রুব সানগ্লাস পরতে পরতে বললো,
“আমি ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী। ডাক্তারির সাথে সাথে, কিভাবে তোদের মতো মানুষকে শিক্ষা দিতে হয়, তাও জানি।”
“আমি এর প্রতিশোধ নিবই ধ্রুব চৌধুরী। আসব, আবার ফিরে আসব আমি।”
“হ্যাঁ জে’লে গিয়ে স্বপ্ন দেখ।”
শায়ানকে ধ্রুব বলেই রেখেছিল, ম্যাসেজ করার সাথে সাথে পুলিশ নিয়ে যেতে সেইখানে। ধ্রুবর ন’র’ম কথায় গ’লে গিয়ে স্মিতা আনমনেই ঠিকানা বলে ফেলেছে। মোমের মতো গ’লে গেছে। স্মিতাকে নিয়ে যেতেই ধ্রুব ভে’ত’রে গেল। শায়ানও পেছন পেছন গেল। ধ্রুব আঁধারীনির অবস্থা দেখে আ ত কে উঠলো। ধ্রুব গিয়ে গা’লে হাত রাখলো আঁধারীনির। মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“এই আঁধার, চোখ খুল… আঁধার….”
তাকালো না আঁধারীনি। সেন্সল্যাস হয়ে গেছে সে। ধ্রুব শায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ফাস্ট পানি নিয়ে আয়। ওর চোখে, মুখে দিতে হবে।”
“আঁধারীনির অবস্থা ভালো না ধ্রুব। ব্লা’ডি’ং হচ্ছে। হসপিটালে চল।”
ধ্রুব কোনো উপায় না পেয়ে আঁধারীনিকে পাঁজাকোলো নেয়।

আঁধারীনি চোখ মেলতেই ধ্রুবকে পাশে দেখতে পায়। ধ্রুব খবরের কাগজ পড়ছে। আঁধারীনির দু চোখের কোণে পা’নি পড়ছে। হসপিটালের পেশেন্টের ড্রেস পরে আছে সে। ধীর কন্ঠে ডাকলো,
“ধ্রুব ভাই….”
আঁধারীনির কন্ঠ শুনে সঙ্গে সঙ্গে ধ্রুব সেইদিকে তাকায়। এগিয়ে আসে আঁধারীনির কাছে। কোমল কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে আঁধার?”
“আমাকে অনেক মে’রে’ছে স্মিতা। আমি ভীষণ ব্যা’থা পেয়েছি। এই যে দেখুন, আমার হাতে দেখুন, কেমন র’ক্ত জ’মে আছে। বেল্ট দিয়ে মে’রে’ছে আমাকে। ”
মুহুর্তেই ধ্রুবর চোখে পানি চলে আসে। আঁধারীনি বললো,
“চোখে পানি কেন ধ্রুব ভাই?”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৯

“আমার চোখে পানি? হুয়াট ননসেন্স আঁধার। ডক্টর ধ্রুব চৌধুরী আমি। সহজে কারো জন্য কাঁদি না।”
“আমিতো আপনার জন্য সহজ কিছু নয় ধ্রুব ভাই। কঠিন। ওই জন্যইতো কাঁদছেন। ধ্রুব ভাই শুনুন…”
“শুনছি বল।”
“ভালোবাসি।”
“কি! আমি কি ভুল কিছু শুনতে পেলাম?”
লাজুক হাসলো আঁধার। ল’জ্জা মাখা কন্ঠে বললো,
“জানি না।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ২১