প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১০

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১০
জান্নাত নুসরাত

” কি হচ্ছে এখানে?
হেলাল সাহেবের গলার আওয়াজ শুনে নুসরাতের থেকে ছিটকে সরে গেল আরশ। নুসরাত কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আরশ বলল,
” আসলে পাপা,
হেলাল সাহেব বললেন,
“হ্যাঁ, সেটাই তো জানতে চেয়েছি! আসলে কি?
নুসরাত ঝটপট উত্তর দিল,

” অনেক বছর পর তো ভাইয়ার সাথে দেখা তাই ভাই -বোন মিলে একটু সুখ -দুঃখের আলাপ করছিলাম।
হেলাল সাহেব প্রচুর খুশি হলেন মুখ দেখে বোঝা গেল। তার গম্ভীর, নাক উঁচু ছেলে কারোর সাথে সুখ-দুঃখের আলাপ করছে এটাই অনেক।
হেলাল তটস্থ ভঙ্গিতে বললেন,
“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই-বোন গল্প করো। আমি কেমন রুমে যাই? তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম নাতো!
হেলাল সাহেব রুমে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরে গেলেন। দু পা ফেলতে পারলেন না পিছন থেকে নুসরাত ডেকে উঠলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আব,বড় আব্বু!
” জি,মা বল!
” ভাইয়া বলছিল আপনার সাথে কি যেন কথা বলবে?
আরশের দিকে তাকিয়ে বলল,”তাই না ভাইয়া!
আরশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। ও কখন বলল কথা বলবে। হঠাৎ মাথায় আসলো মেয়েটা তার হাত থেকে বাঁচার জন্য হেলাল সাহেবের কাছে তাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নুসরাত নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আরশ কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগে দেখে মেয়েটা সেখানে নেই। যখন হেলাল সাহেবের দিকে তাকালো আরশ দেখল হেলাল সাহেব প্রশ্নাতক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। আরশ কি জিজ্ঞেস করবে তার বাবাকে মাথায় আসলো না?
হেলাল সাহেব বিরক্ত হলেন। মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললেন, “কি বলবি হেয়ালি না করে বল তাড়াতাড়ি? আমি তোর মতো বসে নেই। আমার অনেক কাজ আছে?

” আসলে বাবা, ভাইয়ার বিয়ে কবে দিবে? অনেক তো বয়স হয়েছে! মুখ দিয়ে যা আসলো তাই বলে দিল আরশ। বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য।
হেলাল সাহেব বিরক্তির সাথে বললেন,
“এই প্রশ্ন করার জন্য তুই আমাকে এতোক্ষণ অপেক্ষা করালি? আমার মূল্যবান সময় তুই এভাবে নষ্ট করলি?
” হ্যাঁ মানে না!
” হ্যাঁ মানে না কি? বললে বলবি হ্যাঁ না হলে বলবি না! আর জায়িনের বিয়ের সময় হলে, বিয়ে দেব। যত্তসব..
হেলাল সাহেব গটগট পা ফেলে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে।

ক্যালেন্ডার থেকে এক মাস কাটা পড়লো। সেদিনের পর থেকে আরশ আর নুসরাতের দেখা হয়নি। আরশ যে পথে যায় নুসরাত তার উল্টো পথে যায়। দূর থেকে আরশকে তার দিকে আসতে দেখলে তাড়াতাড়ি করে ঐ স্থান ত্যাগ করে নুসরাত। কয়েকদিন ধরে আরশের ব্যবসার কাজ বেড়েছে আজকাল নুসরাত ও ভার্সিটি যাচ্ছে তাই এক বাড়িতে থেকে ও দু-জনের দেখা হচ্ছে না। দু-জনের দিন লুকোচুরি করে কাটছে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এক তলায় আসার পর পান সুপারি খেয়ে লাল দাঁত বিশিষ্ট এক ব্যাক্তির সাথে দেখা হলো ইসরাতের। ইসরাত ভদ্রতা খাতিরে সালাম দিলো। লোকটা সালামের উত্তর দিয়ে পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসি দিল। ইসরাত হালকা হেসে ঐ স্থান ত্যাগ করল।

” খালা আপনি বললে এই মাইয়ার জন্য আমেরিকান একডা দামান (ছেলে দেখবে)তোকামু?
ইসরাতের দিকে ইশারা করে বলল লোকটা ।
” আমি আপনাকে যে কাজের জন্য নিয়ে আসছি সেটা করেন। একটা ভদ্র, সুশিল,সুকন্যা, খুঁজে বের করবেন আমার ছেলের জন্য।
ঘটক সাহেব লিপি বেগমের কথায় মনযোগ না দিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকলেন।
লিপি বেগম বললেন,
“আমি আপনাকে কি বলেছি সেটা কি শুনতে পাচ্ছেন?
ঘটক বললেন,
” হ্যাঁ, হ্যাঁ, শুইন্তে পাইতাছি। কিন্তু ওই সুন্দর দেখতে মাইয়াডার বিয়া কবে দিবেন!
লিপি বেগম বললেন,
” ইসরাতের বিয়ে এখন দিব না। আর দু-এক বছর পর বিয়ে দিব।

দুপুরের দিকে লুৎফা বেগম এবং মমো আসলো সৈয়দ বাড়িতে। মমো আসার পর নুসরাতের রুমে চলে গেল।
মমো বলল,
“কি বান্ধবি কি করো? আজকাল অনলাইনে দেখাই যায় না।
নুসরাত মুখ দুঃখি দুঃখি বানিয়ে বলল,
” কিছু করি না দোস্ত। জীবনটায় কোনো এনজয়মেন্ট নাই। দিন দিন লাইফটা বোরিং হয়ে যাচ্ছে।
মমো বিরক্তির সহিত বলল,
“ঠিক বলেছিস দোস্ত।
দু-ভ্রু নাচিয়ে নুসরাত বলল,
” আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে।
“কি আইডিয়া দোস্ত?
” দাঁড়া কানে কানে বলি?
কতোক্ষণ গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করার পর জিজ্ঞেস করলো মমোকে,”কেমন আইডিয়া?

” এক্সসিলেন্ট!
তারপর দু জন হেসে উঠল।
কিছুক্ষণ পর রুমে ইসরাত আসলো।
“কী রে কি করিস তোরা দুটো এখানে।? আর তুই কখন এলি? আর কি নিয়ে এতো হাসাহাসি করিস?
” এইতো কিছুক্ষণ আগে আপু।
“এসব জেনে তুই কি করবি? ওটা আমাদের সিক্রেট।!
“বইনা ”
“হুম”
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমার বাহিরে যাবো।
“কোথায়”?
“আরে বইন এতো প্রশ্ন করিস না। গেলেই তো দেখতে পাবি।

“হ্যাঁ, হ্যালো সাদিয়া! হ্যাঁ হ্যাঁ আমি, মমো, অনিকা আর ইসরাত বের হয়ে গিয়েছি। তুই সৌরভিকে নিয়ে ক্যাফেতে আয়।
ওপাশ থেকে কি বলল শুনা গেল না। শুধু নুসরাতের উত্তর শুনা গেল,” হ্যাঁ আমাদের বাসার সামনের মোড়ে যে ক্যাফে আছে ঐটায়!
“……!
” না আমি আনতে চাইনি নিব্বিটা কান্না করে চলে আসছে।
কিছুটা আস্তে করে নুসরাত বলল,
” মুরগী টা মনে হয় চলে এসেছে এতক্ষণে। আচ্ছা রাখি তোরা দুটো আয় আমরা আসছি!

ক্যাফের বাহিরে থেকে সাদিয়া ও সৌরভি নুসরাতের সাথে যোগ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। কোনো এক ব্যাক্তির খোঁজে চারিদিকে চোখ ঘুরালো নুসরাত। কাঙ্কিত ব্যাক্তিকে খোঁজে পেয়ে নুসরাত ঐদিকে হাঁটা ধরল।
কাঙ্কিত সিটে গিয়ে বসে পড়ল নুসরাত। তার সাথে সাথে বসে গেল সৌরভি, মমো, সাদিয়া ও অনিকা। ইসরাত সবার শেষে এসে বসলো। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো নুসরাত কি গন্ডগোল পাকাচ্ছে?
নুসরাত দু-হাত নাড়িয়ে, ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি এনে বলল,” হ্যালো হ্যান্ডসাম! কেমন আছো?
ইসরাত ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। মাথায় টাক পড়া একটা লোককে তার বোন হ্যান্ডসাম বলছে। আবার তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে। এদের মতলব আসলে কি?
ইসরাতের চিন্তার অবসান ঘটিয়ে নুসরাত আবার বলল,
“আপনাকে যার কথা বলেছিলাম সেই মেয়েটা হলো এই মেয়ে। ওর নাম অনিকা। আপনার সাথে ডেটে যাওয়ার জন্য একেবারে পার্ফেক্ট তাই না।
লোকটা ডেটে যাওয়ার জন্য কচি সুন্দরী মেয়ে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে তা তার মুখ দেখে বুঝা গেল। অনিকার দিকে তাকিয়ে যখন দাঁত বের করে হাসলো লোকটা তখন দেখা গেল লোকটার উপরের পাটির সামনের দুটো দাঁত নেই।

সাদিয়া লোকটার সামনের দাঁত দুটো না দেখে হু হা করে হেসে ফেলল। পরমুহূর্তেই আবার নিজের মুখ চাপা দিল হাত দিয়ে হাসি বন্ধ করার জন্য। চেয়ারের নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসলো ইসরাত। সবাই হাসছে কিন্তু তাদের মধ্যে কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে অনিকা ভাবলো,
” নুসরাত আপি আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিল! কেন যে আসতে গেলাম আপির সাথে? আর জীবনে আপির সাথে আসার জন্য বায়না ধরবো না।
” কি হয়েছে? আপনারা হাসছেন কেন?
ফেসফেসে গলার আওয়াজে সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
সৌরভি বলল,
“তেমন কিছু না আঙ্কেল? এমনি হাসছিলাম।
লোকটা চেতে গেল আঙ্কেল বলায়। সৌরভিকে ধমকে বলল,” আমাকে দেখে কি আঙ্কেল মনে হয়!
মমো লোকটা কে পাম দিয়ে বলল,” না না,আপনাকে দেখতে আঙ্কেল মনে হয় না আপনাকে দেখতে একদম ইয়াং ছেলেদের মতো মনে হয়। ইয়াং ছেলেদের দেখতে ও এতো সুন্দর লাগেনা যতোটা আপনাকে লাগে।
কথাটি বলে মুখ টিপে হাসলো মমো।
লোকটা বলল,

” এই বেয়াদব মেয়েকে এটা বুঝিয়ে বলো! তোমাকে মনে হচ্ছে অনেক ভদ্র।
নুসরাতের পেট ফেটে হাসি আসলো। হাসি সামলে নুসরাত বলল, “জি আয়ায়ায়াননন.ভাইয়া! আমি সৌরভি কে বুঝিয়ে বলবো।
মমো বলল,
” ওহ স্যরি! এতো কথা বললাম,আপনার নামটাই জিজ্ঞেস করা হলো না।
লোকটা কিছু বলতে যেতেই লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে নুসরাত বলল, “আমি বলছি! এই হ্যান্ডসামের নাম হলো….. গজম্বর আলী।
বলে হু হু হাহা করে হাসলো।

মমো ক্যাফের টেবিলে থাপ্পড় মেরে মেরে হাসলো। সাদিয়া খেক খেক করে হাসলো। আর নুসরাত পারলে হাসতে হাসতে এখানে শুয়ে পড়ে। ইসরাত জোরে জোরে হাসতে পারে না তাই ভিতরে ভিতরে হাসলো।
এরমধ্যে ওয়েটার এসে দুটো এসপ্রেসো,দুটো আমেরিকানো,ও তিনটি ক্যাপুচিনোস দিয়ে গেল।
ক্যাপুচিনোসে চুমুক দিয়ে বলল নুসরাত,
” আপনি কবে ডেটে যেতে চাচ্ছেন?
“এই সপ্তাহে শুক্রবারে যেতে চাচ্ছি!
অনিকার দিকে ইশারা করে বলল,
” আপনার কোনো সমস্যা নেই!
অনিকা নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে কিছুই খুঁজে পেল না। নুসরাত সামলে নিল পরিস্থিতি।
“জি জি, কোনো সমস্যা নেই?
গজম্বর আলী বললেন,
” উনার নাম্বারটা দিলে ভালো হয়?
মমো বলল,
“আপনার নম্বরটা দিয়ে দিন। তাহলে আমরা কল করে নিব আপনাকে।
গজম্বর আলী একটা ব্যবসায়ীক কার্ড বের করে দিলেন। মমো ওয়েটারকে বলে একটা কলম আনিয়ে নিল। নম্বর দেওয়ার পর গজম্বর আলী নিজের পকেটে কার্ডটা ঢুকিয়ে নিলেন।

অন্যদিকে,
মেহেরুন নেছা রাগে গজগজ করছেন। লিপি বেগম ছেলের জন্য মেয়ে পছন্দ করছেন আর থাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেননি। আজ যদি ঝর্ণা থাকে এ কথা না জানাতো তাহলে তো তিনি জানতেই পারতেন না। লিপি বেগমকে ও হেলাল সাহেবকে ডেকে পাঠালেন মেহেরুন নেছা। যখন আসলেন হেলাল সাহেব ও লিপি বেগম মেহেরুন নেছা কিছুক্ষণ ধমকা ধমকি করার পর তিনি চুপ হলেন।
” হুনলাম ছেলের জইন্য মাইয়া দেখতাছ?
“জি আম্মা!

” আমারে জিগাইবার কথা একবার ভাবলা না। আমি কি তোমার ছেলের মন্দ ছাই? ভালোই তো ছাই তোমার ছেলের। আইচ্চা এইসব কথা এখন বাদ, জায়িনের জন্য মাইয়া দেখবার দরকার নাই, আমার কাছে একডা মাইয়া আছে, সময় হইলে আমি খোঁজ দিয়া দিমু নে।চিন্তা করবার লাগব না। মাইয়া কম কথা কয়, অনেক ভালা! কারোর কথার উপর কথা কয় না! একদম সোনায় সোহাগা মাইয়াডা!
হেলাল সাহেব মায়ের কথায় সহমত প্রকাশ করলেন। কিন্তু লিপি বেগমের মুখ দেখে বুঝা গেল তিনি মেহেরুন নেছার এই কথা খুশি হননি।
” বড় বৌমা তুমি কিতা খুশি হও নাই মোর কথায়?
“না মা, তেমন কিছু না!
” আচ্ছা এইবার তোমরা তোমাগো কাজে যাও। ছাইয়া ছাইয়া আমার মুখ দেখা বন্ধ কর! আমার এখন আরাম করতে হইব।
লিপি বেগম মুখ কালো করে চলে গেলেন। হেলাল সাহেব ও চুপচাপ হাঁটা ধরলেন হেলাল সাহেবের পেছন পেছন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৯

ক্যাফেতে গজম্বর আলীর সাথে কথা শেষ করে মমোরা সবাই উঠতে যাবে তখন পিছন থেকে চিনা পরিচিত গলা শোনা গেল। সবার আগে পিছন ফিরে তাকালো অনিকা। নুসরাতের পাশের চেয়ারে বসায় অনিকা, নুসরাতের কানে কানে বলল,”আরশ ভাইয়া আর জায়িন… কথা শেষ করার পূর্বেই আরশ বলল,”তোরা এখানে কি করছিস?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here