প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১১

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১১
জান্নাত নুসরাত

অনিকা ন্যাকা গলায় বলল,
“ভাইয়া দেখো না, নুসরাত আপি আমাকে এখানে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছে। আমি এখানে আসতে চাইনি, তারপরও নিয়ে এসেছে। আর ঐ লোকের সাথে আমাকে ডেটে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আরশ তাকাল নুসরাতের দিকে যে চোখ বড় বড় করে অনিকা কে শাসাচ্ছে। আরশকে তাকাতে দেখে চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।
জায়িন গম্ভীর স্বরে বলল,
” নুসরাত তুমি অনিকাকে জোর করে কেন নিয়ে এসেছ এখানে?
মমো নুসরাতের হয়ে সাফাই দিতে যাবে তার পূর্বেই ডেলা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো। গোল হয়ে সবাইকে দাঁড়িয়ে তাকতে দেখে বলল,”এই জায়িন ডাঁড়িয়ে(দাঁড়িয়ে) আছিস কেন? কি হয়েছে?
নুসরাত ও ইসরাতের দিকে তাকিয়ে ডেলা বলল,

” এরা টোর (তোর) কাজিন না?
জায়িন বলল,
“হু
সৌরভি, মমো ও সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” টুমাদের (তুমাদের) তো চিনটে (চিনতে) পারলাম না।
“আমি জায়িন ভাইয়ার কাজিন মমো। আর ওরা আমাদের ফ্রেন্ড সৌরভি ও সাদিয়া।
ডেলা বলল,
” ওহ! টোমরা (তোমরা) আমাদের সাথে জয়েন করো!
অনিকা বলল,
“জি আপু অব্যশই!
নুসরাত নাক মুখ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো অনিকার দিকে। সাদিয়ার কানে কানে বলল,” বালডা কীভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিল দেখলি সাদিয়া? এর শোধ যদি না নেই, তাহলে আমার নাম নুসরাত না।
ফেসফেসে গলায় গজম্বর আলী বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আগামী শুক্রবারে আমি কল করব! সময় মতো চলে এসো!
নুসরাত অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল,
“অব্যশই ভাইয়া! জায়গাটা এই নাম্বারে মেসেজ দিয়ে দিবেন। অনিকা চলে আসবে সময় মতো।
গজম্বর আলী চলে গেলেন রেস্টুরেন্ট থেকে। আরশ শুধু তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে সব দেখলো। মুখ দেখে বোঝা গেল না মনে কি চলেছে?
” আজ বাসায় গেলে মামার হাতের একটা মার মাটিতে পরবে না। আমি আর আপু তো যেমন তেমন করে বেঁচে যাব। তোর কি হবে? দেখ আরইশার বাচ্চা কীভাবে তাকিয়ে আছে, তোকে বাঁশ দেওয়ার জন্য। রেডি থাকিস বোন? পিঠ
শক্ত করে বাসায় যাস!
নুসরাত কথা বলল না। চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনলো মমোর কথা। আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিল যা হওয়ার হবে এখন একটু জায়িনের টাকা খাওয়া যাক। সব চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

“আরে ইসরাত ডাঁড়িয়ে (দাঁড়িয়ে) আছো কেন? বসো!
নিজের পাশের সিটে ইশারা করে ডেলা বলল,
” এখানে বসো!
ইসরাত হালকা হেসে ডেলার পাশে গিয়ে বসলো। ডেলা আরশ ও জায়িনের সাথে কিছু ব্যবসা বিষয়ক কথা বলে খাবার অর্ডার দিল। নুসরাত হট ললিপপ,ইসরাত ক্রিসপি চিকেন ফ্রাই, মমো, সৌরভি বার্গার,সাদিয়া নাচুস অর্ডার দিল। মমোর ফোনে কল আসায় সে টেবিল থেকে উঠে গিয়ে কল ধরলো।
“হ্যালো ভাইয়া!
ফোনের ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেল না।

” হ্যাঁ, হ্যাঁ, মামাদের বাসা থেকে বের হওয়ার পর যে, মোড় পাওয়া যায় ঐখানে যে রেস্টুরেন্ট আছে ঐটাতে আছি।
“………
” আচ্ছা চলে আসো! আমি ক্যাফের বাহিরে আসছি।
ফোনে কথা বলা শেষ করে মমো টেবিলে গিয়ে বসল।
নুসরাত জিজ্ঞেস করল কে কল দিয়েছে? মমো বিস্তারিত জানাল যে আশিক থাকে নিতে আসছে।
নুসরাত ফিসফিস করে বলল,
“তুই আজ আসলি আবার আজই নিতে আসছে! আমি কতো প্ল্যান করলাম দুজন মিলে আজ পার্টি করব আর তুই চলে যাবি।

” স্যরি দোস্ত! চলে যেতে হবে। দু-এক দিন পর আবার আসব! আম্মু আগে আসুক বাসায় তারপর আসব!
“আচ্ছা যা! তাড়াতাড়ি আবার আসিস! আমার কান্না পাচ্ছে তোকে বিদায় দিতে।
ডেলা বলল,
” টোমরা (তোমরা) কি কঠা (কথা)বলছো?
নুসরাত বলল,
“নাথিং!
ডেলা প্রশ্ন না করে ইসরাতের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হলো।
” টুমি (তুমি) সবসময় এরকম চুপচাপ ঠাকো (তাকো) ইসরাট?
” না না! কই চুপচাপ থাকি কথা বলি তো!

” আমি অনেক্ষণ ডরে খেয়াল করছি ওরা কঠা বলছে টুমি (তুমি) শুধু ওদের সাথে মাথা নাড়াচ্ছ।
“আমি কথা বলি! কিন্তু বাহিরে বের হলে কথা বলতে একটু অস্বস্তি হয়! এজন্য একটু কম কথা বলি?
সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল টুকটাক । এর মধ্যে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল। নিজ নিজ খাবর নিজের দিকে টেনে নিল সবাই। খাবার খাওয়ার মাঝখানে ব্যাঘাত ঘটালো উচ্ছাসিত এক পুরুষ কন্ঠ। ইসরাতের মাথায় হালকা থাপ্পড় মেরে বলল,” রাক্ষসের মতো খেতে খেতে কি রকম মোটা হচ্ছিস! কমিয়ে খা! পরে বিয়ে হবে না! আর বিয়ে হলে বুড়ো বেডার সাথে বিয়ে হবে, নাহলে রিক্সাওয়ালা মামার সাথে!

কথাটা বলে ইসরাতের ফ্রাইড চিকেন এক পিস নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিল। এতক্ষণ আশিক সামনের দিকে না তাকিয়ে এতো কথা বলল। সামনে তাকিয়ে যখন দেখলো নতুন একটি মুখ তখন নিজের বকবকের জন্য কিছুটা লজ্জা পেল। ডেলার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হাসি দিল।
ডেলা মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,
“ওয়াট আ আওস্যাম(awesome) বয়?
ডেলা পাশে জায়িন বসা ছিল। ডেলার মুখ থেকে নিচু শব্দে বের হওয়া কথাটা জায়িনের ঠিক পছন্দ হলো না। তারপর ও চুপচাপ হজম করে নিল।
আরশ বলল,
” তুই এখানে কেন?
নুসরাত বিড়বিড় করল,

” শালার তুই তুকারি ছাড়া কোনো কথা বের হয় না মুখ দিয়ে। আর বলবে আমার ম্যানার্স নেই। নিজেরটা আগে ঠিক কর পরে না হয় আমার টা ঠিক করবি! শালা খবিশ..
মমো বলল,
” আস্তে বল বইন! সব শোনা যাবে তো!
নুসরাত বলল,
“শোনা গেলে শোনা যাক! আমি কি কাউকে ভয় পাই নাকি? হুহ….!
আশিক বলল,
” মমো কে নিতে এসেছি।
আশিক আরশের কথার উত্তর দিয়ে বলল,
“তুই আর ভাইয়া এখানে কি করছিস? আমি তোদের দেখে সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছি।আর ডেলার দিকে ইশারা দিয়ে বলল,”উনি কে?

আরশ কিছু বলতে যাবে তাকে থামিয়ে দিয়ে ডেলা বলল,”আমার পরিচয় নাহয় আমি ডিলাম? হ্যালো মিস্টার! আমি ডেলা আমান! মিস্টার আরশের নিউ বিজনেস পার্টনার এন্ড আরেকটা পরিচয় হলো আমি জায়িনের ফ্রেন্ড।
ডেলা নিজের হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশ্যাক করার জন্য।
“নাইস টু মিট ইউ মিস্টার!
আশিক হ্যান্ডশ্যাক করে বলল,
” মি টু!
ডেলার সাথে কথা বলা শেষ করে আশিক মমোকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। আশিকের যাওয়ার পথে তাকিয়ে তাকল ডেলা। নিজ মনে বিড়বিড় করলো,
“লাভ এট ফাস্ট সাইট কি আমার সাথে হয়েছে? আই এম ইমপ্রেসড অন ইউ মিস্টার! নাও ওয়াট কেন আই ডু? ওয়াট কেন আই ডু…….

জায়ানকে নিয়ে শপিংমলে এসেছে ইনায়া। জায়ান মুখ কাঁদো কাঁদো করে ট্রায়াল রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে, ” আজ সব টাকা উড়ে যাবে? কতো কষ্ট করে আমি টাকা সেভিংস করি আর এ শপিং মলে এসে আমার এতো পরিশ্রমের টাকা উড়িয়ে দেয়। হায় আল্লাহ…..আমাকে এই আজাবের হাত থেকে বাঁচাও…!
ঠিক তখনই জায়ানের চিন্তার ব্যাঘাত ঘটিয়ে ইনায়া ট্রায়াল রুম থেকে বের হলো।

“বাবু আমাকে কেমন লাগছে?
” অনেক সুন্দর সোনা!
“উম্মাহ! এজন্য তো আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি। এটা ও প্যাক করে নেই।
জায়ান নিজের হাতের ব্যাগের দিকে একবার তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বলল, ” হ্যাঁ বাবু! প্যাক করে নাও।
মিনমিন করে বলল,
“সেই তো নিবে তাহলে আবার জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন? যত্তসব নাটক!
” কিছু বলছো বাবু?
” না সোনা! কিছু বলিনি!
ইনায়ার মোবাইলের রিংটোন শুনে ইনায়ার দিকে তাকালো জায়ান। সেইভ নম্বারে ভেসে উঠল ডেলা নামটা। মুখ দেখে বুঝা গেল ইনায়ার গলা শুকিয়ে গিয়েছে। হালকা ঢোক গিলে ফোনটা ধরলো।

“হ্যালো! ইনায়া, টুই কোথায়?
“জি আপু! আমি ভার্সিটি থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিচ্ছি।
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,
” টুই এখানে ডাড়িয়ে ঠাক আমি আসছি!
“জি আপি!
ফোন কাটার পর জোরে শ্বাস নিল ইনায়া। জায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ইনায়ার চিন্তিত মুখের দিকে।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইনায়া বলল,” আপু কল দিয়েছিল! ভার্সিটি থেকে আমাকে পিক করার জন্য আসছে।তাড়াতাড়ি চলো! আমাকে ভার্সিটির রাস্তায় নিয়ে নামিয়ে দাও!
শপিং ব্যাগ দেখিয়ে জায়ান বলল,

” আর তোমার আপু ফ্রান্সে ছিল না কবে আসলো? আর ওর সাথে আমার মিট করাবে না।
“এক মাসের মতো হয়েছে এসেছে। আর তোমার আস্তে ধীরে আপুর সাথে মিট করাবো। আরো কিছুদিন যাক।
” আচ্ছা! এগুলো নেবে না? আর এইমাত্র যেটা ট্রায়াল দিলে সেটা কি করবে?
” না ভাই কিছু নেব না! আমাকে শুধু ভার্সিটির রাস্তায় দিয়ে আসো তাহলেই হবে।
“আচ্ছা চলো।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১০

জায়ান ব্যাগগুলো গাড়ির ডিক্কিতে রাখলো। ইনায়া কে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে মনের সুখে গাড়ি চালাতে লাগলো। মনে মনে বলল,” আজ যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠে ছিলাম? দিনটাই ভালো হয়ে গেল। আহহাহা আহা হাহ আহহা। আর ওদিকে ইনায়া চিন্তায় অজ্ঞান হওয়ার পর্যায়ে আজ যদি জায়ান এর আগে ডেলা ভার্সিটিতে পৌছে যায় তাহলে কি হবে?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here