প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৩

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৩
জান্নাত নুসরাত

মেহেরুন নেছা রাগে গজগজ করছেন। নাছির সাহেব করুণ মুখ বানিয়ে বসে আছেন। হেলাল সাহেবের দিকে তাকালে, তিনি চোখ দিয়ে ভরসা দিলেন সামলে নিবেন।
নাছির সাহেব করুণ গলায় বললেন,
“আম্মা রাগ করছ কেন? মেয়ে বড় হলে তো বিয়ে দিতে হবে!
হেলাল সাহেব সহমত পোষণ করলেন নাছির সাহেবের কথায়। মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন। মেহেরুন নেছা পানের পিক ফেলে তাকালেন তার দুই সন্তানের দিকে।

” আমি তুমাগো মা না,তোমরা আমার মা! এতো কথা কইবার লাগি তুমাগোরে এখানে ডাকি নাই। আমি যা বলতাছি দুইজন চুপচাপ বইয়া আমার কথাডা হুনো। এর বাইরে আমি আর একডা কথা হুনবার চাই না।
নাছির সাহেব কিছু বলতে যেতেই মেহেরুন নেছা থামিয়ে দিলেন। মুখ থেকে কিছুটা পানের পিক ফেলে দিয়ে বললেন,” ইসরাতের জন্য আমি পোলা ঠিক কইরা রাখছি। তোমারে এই বিষয়ডা লইয়া চিন্তা করবার দরকার নাইগা। তুমি তোমার ছোডো মাইয়ারে কীভাবে বিয়া দিবা ওই বিষয়ে চিন্তা করো গিয়া?
নাছির সাহেব বললেন,
“আম্মা আমার কথাটা একবার শুনো।
মেহেরুন নেছা না শোনার ভান করলেন। রহিমাকে ডাক দিয়ে বললেন গরম পানি বসানোর জন্য উনি গোসল করবেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আম্মা আমি কথা দিয়ে ফেলেছি। একবার এসে দেখে যাক পড়ে নাহয় না করে দিব।
“ওইডা তোমার সমইস্যা! আমার নায়গা।
হেলাল সাহেবের দিকে নাছির তাকালেন। হেলাল সাহেব এতোক্ষণ চুপ ছিলেন এবার বললেন, ” আম্মা এসে দেখে যাক। পরে নাহয় আমি নিজে না করে দিব।
হেলাল সাহেবের কথা শুনে কিছুটা নরম হলেন মেহেরুন নেছা। নাছির সাহেবের দিকে তাকিয়ে সাবধান করে বললেন,” আইয়া দেখবাে মাইয়া। মাইয়া দেখার পর আলগোছে বিদায় করবা। এর আগে পিছে কোনো কডা যদি আমার কানে আসে নাছির আমি কি করুম নিজেই জানি না।
নাছির সাহেব হাফ ছাড়লেন। এতোক্ষণ শ্বাস আটকে বসে ছিলেন। মেহেরুন নেছার কথায় মাথা নাড়ালেন যে মেয়ে দেখার আগে পিছে কোনো কথা হবে না।
“এইবার আমার রুমডা খালি করো। দুজনে এখান থেকে বিদায় হও।

অন্যদিকে,
ইসরাত মুখ কালো করে বসে আছে। গতকাল রাতে যা খেয়েছিল এরপর সকালে কোনো কিছুই মুখে দেয়নি।নাজমিন বেগম অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু ইসরাতের একটা কথা সে খাবে না। ইসরাত নিজে মনে বিড়বিড় করছে,”আমার বিয়ে দিবে আর আমার পারমিশন নিল না।
নুসরাত আর ইরহাম মিলে মজা নিচ্ছে ইসরাতের। ইরহাম হু হু হা হা করে হাসছে। নুসরাত আর ইরহাম নিজেদের দিকে তাকায় আর একজন আরেক-জনকে থাপ্পড় মেরে মেরে হাসে। ইসরাত প্রচুর বিরক্ত হলো এদের আচরণ দেখে। বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ বের হয়ে আসলো।
কর্কশ গলায় বলল,

” কি হয়েছে তোদের? তোদের দু-জনের বিয়ে লেগেছে এভাবে হাহা রিরি করছিস।
ইসরাতের ধমক খেয়েও দু-জনের হাসি থামল না। আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। ইসরাতকে নাক ফুলিয়ে তাদের দিকে তাকাতে দেখে ইরহাম ও নুসরাত হাসি বন্ধ করল কিছুক্ষণের জন্য। তারপর আবার বিকট শব্দে হাসা শুরু করল।
ইসরাতের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো,
” পাগল নাকি!
নুসরাত বলল,
” বইন তুই বিয়ে করতে চাইছিস না! কিন্তু তোর জন্য শুধু বিয়ের স্বমন্ধ আসছে। আর এদিকে আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আমাকে কেউ বিয়ে দিচ্ছে না আবার কোনো স্বমন্ধ ও আসে না। আমার মতো দুঃখি ব্যক্তি এই সংসারে আর নাই।
ইরহামের দিকে তাকিয়ে নুসরাত বলল,

” এই ইরহাম হাসি কান্না ইমোজি।
বলে হা হা করে হেসে বিছানায় গড়াগড়ি খেল।
ইসরাত বলল,
“এই জন্য দু-জন আমাকে নিয়ে হাসছিছ?
ইরহাম বলল,
” আপুর জায়গায় আমি হলে কবেই লাগেজ গুছিয়ে চলে যেতাম ছেলের বাড়ি?
ইসরাত বলল,
” তাহলে আমার জায়গায় তুই বসে যাস ওদের সামনে গিয়ে! তারপর সাথে চলে যাস। কেমন?
ইরহাম বলল,

“৫০০টাকা দিয়ে দিও। আমি মেয়ে সেজে গিয়ে বসে যাব।
নুসরাত ইরহামকে থামিয়ে বলল,
” আরে আমাকে যেদিন দেখতে আসবে সেদিন আমি লাগেজ গুছিয়ে ছেলে পক্ষের সাথে তাদের বাড়ি চলে যাব। আহা বিয়ের মতো ভালো কাজ আর কি হতে পারে? আমাকে কবে বিয়ে দিবে?
ইরহাম বলল,
“এক কাজ কর নুসরাত তুই আপুর জায়গায় ছেলে পক্ষের সামনে বসে যা!
ইসরাত বলল,
” আইডিয়াটা ভালো দিয়েছিস ইরহাম নুসরাতকেই বসিয়ে দিব।
নুসরাত নাক ফুলিয়ে ইরহামের দিকে তাকালো। তার পার্টি থেকে ইসরাতের পার্টিতে এক মুহুর্তে চলে গেল। শালা খবিস!
ইরহাম নুসরাত কে বিড়বিড় করতে দেখে বলল,

“বড় আপু দেখ, আমাকে মনে মনে গালাগাল করছে।
নুসরাত চোখ দিয়ে শাসালো ইরহামকে। বুঝাল রুম থেকে বের হ দেখাচ্ছি মজা। ইরহাম ফাঁকা ঢোক গিললো। নিজ মনে ভাবল, ” শাকচুন্নিটা এভাবে তাকাচ্ছে কেন? বাবারে আর আপুর পক্ষ পাতিত্য করবো না। পরে দেখা যাবে আমাকেই মেয়ে বানিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে বসিয়ে দিয়েছে।
“আরে আমি তো তোর দলের। মজা করছিলাম তোর সাথে। তুই এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমি তোকে অনেক ভালোবাসি আমার বইন।

নুসরাত ভাব করলো ইরহামের কথা শোনেনি। বিছানার পাশ থেকে নিজের মোবাইল হাতে নিল। ইরহামকে শোনিয়ে শোনিয়ে বলল,” ইরহাম নামক এক যুবক, সৌরভি নামের এক যুবতীর কাছে…..
পরের লাইন বলার আগেই ইরহাম মুখ চেপে ধরলো। ইসরাত দু-জনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ইরহাম নুসরাতের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,”বোন তোর দুইটা পায়ে পড়ি বড় আপুর সামনে বলিস না। মানসম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। আমার সোনা, রুপা, তামা বোন। বলিস না! আর জীবনে তোকে পচাবো না, আপুর পক্ষ নিয়ে।
ইসরাত বলল,
” দুটো কি গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করছিস? আবার কোনো গন্ডগোল পাকানোর চিন্তা ভাবনা করছিস কিনা?
ইরহাম ও নুসরাত দুজন দুহাত তোলে না করলো। তারা কোনো গন্ডগোল পাকানোর চিন্তা করছে না।
“গন্ডগোল না পাকালেই হয়!

সন্ধ্যায় বেলায়,
সৈয়দ বাড়িতে কথা হচ্ছে আগামী বুধবার ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে ইসরাত কে দেখতে আসার জন্য বলছে যদি নাছির সাহেবদের কোনো সমস্যা নাহয়। নাছির সাহেব ও হ্যাঁ বলে দিয়েছেন! তাদের কোনো সমস্যা নেই।
যখন থেকে পাত্র পক্ষ আসার গুঞ্জন শুরু হয়েছে তখন থেকে ইসরাত ঠোস-ঠাস কাজ করছে। ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে আর চোখের পানি মুছছে। সকালে ইসরাত যখন খাবার খাচ্ছিল না, নাজমিন বেগম বলেছিলেন পাত্রদের না করে দিবেন। তাহলে এখন কেন ইসরাতকে দেখতে আসছে?
নুসরাত ইসরাতকে কান্না করতে দেখে কান্না না করার জন্য ফোর্স করছে। সান্ত্বনা দিচ্ছে কিছু হবে না! কিন্তু, ইসরাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! কোনো কথা শুনছে না! ইসরাতের ফুঁপানো কান্না কিছুক্ষণ পর হাউমাউ কান্নায় পরিণত হয়।
নাজমিন বেগম কিচেনে ছিলেন। রুহিনি জোর করে নাজমিন বেগম কে ইসরাতের রুমে পাঠালো যাতে মেয়েটা কান্না থামায়।

নাজমিন বেগম ইসরাতদের রুমে আসলেন। ইসরাতকে মেঝেতে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে ইসরাতের পাশে গিয়ে বসলেন। নাজমিন বেগম ইসরাতের পিঠে হাত বুলিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
” ইসরাত দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না। আসবে, দেখবে,দেখে চলে যাবে। আমরা না করে দিব মা! কান্না করিস না!
“তুমি মিথ্যা বলছ! সকালে বললে না করে দিবে আর এখন বলছ বুধবারে আসবে তারা। আমি থাকব না এই বাড়িতে। চলে যাব!
” ইসরাত বাচ্চামো কর না! আম্মা না করেছে তোমার এখন বিয়ে না দেওয়ার জন্য। কান্না করো না!
আরশ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল আজকে।অফিসে কাজের চাপ কম থাকায়। বাড়িতে এসে দু-তলা থেকে হাউমাউ কান্না শুনে ইসরাতের রুমের সামনে এসে দাঁড়াল আরশ। ঘটনা বোঝার জন্য দরজা পাশে দাঁড়িয়ে নাজমিন বেগম ও ইসরাতের কথা শোনার চেষ্টা করল।
নাজমিন বেগম আবার বললেন,

“আচ্ছা পাত্র পক্ষের সামনে তোকে যেতে হবে না। নুসরাতকে দেখিয়ে দিব পাত্রী হিসেবে। ওর কোনো সমস্যা নেই বিয়ে করতে! এতোদিন বিয়ে করার জন্য আমার কানের পোকা মেরে ফেলছিল। বুধবারে নুসরাতকে কনে বলে বসিয়ে দিব।
নুসরাতের মুখ হা হয়ে গেল। তাকে ফাঁসিয়ে দিল বিয়ের চক্করে। একটু মজা করে কথা বলে, বলে তাকে ইসরাতের জায়গায় বসিয়ে দিবে। জাতি কি মেনে নেবে থাকে?
নুসরাত তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। কর্কশ গলায় বলল,
” আমি বলেছি এটাকে বিয়ে করব? এইডারে দেখতে পুরাে আঙ্কেলের মতো! আমি সুগার ডেডি বিয়ে করব না! তোমার ইসরাতকে বিয়ে দাও। আমি বিয়ে করব একটা হ্যান্ডসাম ম্যানকে যাকে দেখে আমার পুরো বংশের মানুষ টাসকি খেয়ে যাবে। যে কথার সাথে টাকা বের করে তোমাদের হাতে ধরিয়ে দিবে। কথা বললেই টাকা বের হবে।
“তোর পরিকল্পনা দেখে আমি শিহরিত। এতো বাজে কল্পনা তুই কীভাবে করিস? ছিহ্… আর এক কাজ করিস এতো টাকা তো কারোর কাছে থাকে না, তুই টাকার মেশিনকে বিয়ে করে নিস তাহলেই হবে। কিছু বলবে না, সারাদিন তোর বকর বকর শুনবে আর চাপ দিলেই শুধু টাকা বের হবে।
কিছুক্ষণ থেমে আরশ আবার বলল,

“আর মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বিয়ের কথা বলতে তোর লজ্জা করলো না। তুই তো প্রচুর নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন। মায়ের সামনে কীভাবে কথা বলতে হয় তুই জানিস না।
” না আমি জানি না! দয়া করে, আপনি শিখিয়ে দিলে কৃতার্ত হবো আরশ…….
আরশকে ভ্রু তুলে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল, “ভাইয়া।
নুসরাতকে পাত্তা না দিয়ে এবার আরশ নাজমিন বেগমকে জিজ্ঞেস করলো, ” কি হয়েছে চাচি? ইসরাত কান্না করছে কেন?
নাজমিন বেগম বললেন ,
“গতকাল রাতে যে পাত্রে কথা বলা হয়েছিল তারা ইসরাতকে দেখতে আসছে বুধবারে। এই জন্য কান্না করছে! এখন বিয়ে করবে না ও!
আরশ বলল,
” কান্না করো না! ভাইয়া আছি না। সব সামলে নিব। বিয়ে না করলে না করবে! কে তোমাকে জোর করে বিয়ে দিবে?কান্না বন্ধ করো! কিছু খেয়ে পড়তে বসো! চাচি কিছু খেতে দিন ইসরাতকে।
নুসরাত আরশকে ভেঙ্গাচ্ছিল। হুবহু নকল করে মুখের আকৃতি পরিবর্তন করে বলল, “কান্না করিস না! ভাইয়া আছি না! সামলে নিব! কান্না বন্ধ করো! কিছু খেয়ে পড়তে বসো! চাচি কিছু খেতে দিন ইসরাতকে।

” তোর মুখের কি হয়েছে? এরকম করছিস কেন?
” কিছু হয়নি!
আরশ একবার ইসরাতের দিকে তাকিয়ে চলে গেল। আবার কি মনে করে অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে আসলো?
” চাচি নুসরাতের বেশি বিয়ের শখ হলে আমাকে বলবেন। আমার কাছে গজম্বর আলী নামক এক পাত্র আছে। আপনি চাইলে বায়োডাটা দিতে পারি চাচি।
কথাটা বলে মুচকি মুচকি হাসল। নুসরাত মুখ থমথমে করে ফেললো। আরশের উদ্দেশ্যে খুবই বাজে একটা গালি দিল।
“চাচি দেখুন কীভাবে তাকিয়ে আছে? মনে হচ্ছে আস্তো গিলে খাবে।
নাজমিন বেগম বললেন,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১২

” নুসরাত বড় ভাইয়ের দিকে কেউ এভাবে তাকায়! চোখ নামাও!
নুসরাত কিছু না বলে আরশকে ধাক্কা দিয়ে দরজা থেকে সরিয়ে দিল। বিড়বিড় করে গালি দিল,” শালা খবিস! সুযোগ পেয়ে আমাকে বাশঁ দিতে চলে এসেছে। আমার সুযোগ আসুক, আমিও তোকে বাঁশ দিতে ছাড়ব না।
আরশকে ধাক্কা দেওয়ায় দরজা থেকে কিছুটা দূরে ছিটকে সরে গেল। নাজমিন বেগম পিছন থেকে চিৎকার করে নুসরাতকে শাসালেন,” বেয়াদব মেয়ে! বড় ভাইকে কেউ এভাবে ধাক্কা দেয়? আর কোথায় যাচ্ছিস তুই?
নুসরাত যেতে যেতে চিৎকার করে বলল,” আমি জানি আমি বেয়াদব! বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না। অন্য কেউ ধাক্কা না দিলে আমি ধাক্কা দেই! ইরহামের ঘরে যাচ্ছি। আজ একসাথে গ্রুপ ক্লাস করব। সৌরভি আর সাদিয়া আসছে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ১৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here