প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২১

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২১
জান্নাত নুসরাত

অন্যদিনের তোলনায় খাবার টেবিল আজ নিস্তব্ধ। যেখানে একে অপরের সাথে কথা বলা ছাড়া খাবার খাওয়া শেষ হতো না সেখানে খাবার টেবিলে কেউ টু শব্দ করছে না। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য আজ আরশ,জায়ান,জায়িন, নুসরাত কেউ নিচে আসেনি। জায়িনের দুপুরের খাবার পর্যন্ত আজ খায়নি। রুম বন্ধি হয়ে বসে আছে সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বের হয়নি। হেলাল সাহেব খাবার টেবিলে বসেছেন শুধু। হাত দিয়ে ভাত নাড়ছেন কিন্তু মুখে দিয়ে চিবোনোর শক্তি পাচ্ছেন না। লিপি বেগম মন খারাপ করে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। জা দের সাথে আজ সারাদিনে প্রয়োজনীয় কথার বাহিরে কোন কথা বলেননি। সবার মন মেজাজ খারাপ। শোয়েব ব্যবসার কিছু বলতে চাইছিলেন শোহেদ চোখ দিয়ে ইশারা করলেন এই পরিস্থিতিতে কোন কথা না বলার জন্য।

খাবারে পানি ঢেলে হেলাল সাহেব উঠে গেলেন খাবার টেবিল থেকে। যে মানুষ খাবার নষ্ট করা পছন্দ করতেন না সে নিজে আজ খাবার নষ্ট করে উঠে যাচ্ছেন। লিপি বেগম স্বামীকে তার মতো ছেড়ে দিলেন। যতোই হেলাল সাহেব দেখান উনি স্বাভাবিক কিন্তু হেলাল সাহেব ও সমানভাবে চিন্তিত জায়িনকে নিয়ে। তার ছেলেটার ভাগ্য এতো খারাপ কেন? তারপর হেলাল সাহেবের মনে হলো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। হয়তো বা এখানে আল্লাহর কোনো উত্তম পরিকল্পনা রয়েছে। ডেলার থেকে আরো দশ গুণ ভালো মেয়ে তার ছেলে পাবে। এসব ভাবতে ভাবতে জায়িনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালেন হেলাল সাহেব। হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন। দশটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। জায়িনের রুমে নক করলেন। জায়িনের নড়চড় না দেখে ডেকে উঠলেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” বাবা দরজা খুল!
জায়িন হেলাল সাহেবের কোনো কথা অগ্রাহ্য করে না তাই এসে চুপচাপ দরজা খুলে দিল। দ্বিতীয় বার নক করার আগে! দরজা খুলে মাথা নিচু করে জায়িন চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। হেলাল সাহেব ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। সুন্দর মুখটা আষাঢ়ের কালো মেঘে ঢেকে আছে। এই মুখে তো দুঃখ মানায় না এই মুখে মানায় গাম্ভীর্য আর শীতলতা। জায়িন চোখ তুলে বাবার দিকে তাকাল। হেলাল সাহেব ছেলের চোখে চোখ পড়তেই ভিতরের কিছু একটা নড়ে উঠলো। কি অবস্থা হয়েছে তার ছেলের? একদিনে চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। সুন্দর মুখটা ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে গিয়েছে। চোখ দুটো ভিতরে ঢুকে গিয়েছে। নিজের একি হাল করেছিস জায়িন? বিড়বিড় করলেন হেলাল সাহেব।
হেলাল সাহেব নিজেকে সামলে নিলেন। বাবা হিসেবে নয় আজ ছেলের বন্ধু হিসেবে তিনি এখানে এসেছেন। ছেলের সব দুঃখ আজ ভাগ করে নিবেন।

“ভিতরে আসতে দিবি না?
জায়িন কথা না বলে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। হেলাল সাহেব জায়িনের বিছানায় বসলেন। হাত দিয়ে
কাছে ঢাকলেন ” এদিকে আয়!
জায়িন বিনা বাক্য ব্যয়ে বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। হেলাল সাহেব হাত মেলে দিলেন জড়িয়ে ধরার জন্য। জায়িন হেলাল সাহেবের দিকে কতক্ষণ কেবলা কান্তের মতো তাকিয়ে রইলো। হেলাল সাহেব আবার বললেন, ” আয়! দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাবাকে জড়িয়ে ধরবি না।

জায়িনের ইচ্ছে হলো বাচ্চাদের মতো করে কান্না করতে, কিন্তু কান্না গলায় এসে বিধে রইলো। চোখ গুলো জ্বালা করল পানি বের হওয়ার জন্য। জায়িন ঢোক গিলে কান্না থামায়। ঝড়ের গতিতে হেলাল সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো। হেলাল সাহেব ভারসাম্য রাখতে না পেরে পিছনের দিকে হেলে পড়লেন। নিজেকে ধাতস্ত করে নিয়ে জায়িনেরপিঠে ভরসার হাত রাখলেন। জায়িনের চোখ দিয়ে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। হেলাল সাহেব কাধে ভেজা অনুভব করলেন। তারপর ও ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন।
” কিছু হবে না বাবা! সব ঠিক হয়ে যাবে।

নক ছাড়া লিপি বেগম রুমে প্রবেশ করে বাবা ছেলার এই সুন্দর মুহুর্তে দেখতে পেলেন। তার স্বামী যতোই সবার সামনে রাগী কঠোর হোক না কেন নিজের সন্তানের কাছে সব সময়ের একজন ভালো বন্ধু? আস্তে আস্তে রুমে প্রবেশ হলো জায়ান আর আরশের। বাবাকে বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে রাখতে দেখে নিজেরা ও চারপাশ থেকে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। লিপি বেগম দরজা লাগিয়ে দিলেন জায়িনের রুমের।
জায়ান চঞ্চল প্রকৃতির হলেও আজ সে নিশ্চুপ। একটা বেশি কথা বলছে না। বড় ভাইয়ের পিঠে হাত রাখলো। ভরসা দিয়ে বলল,” সব ঠিক হয়ে যাবে জায়িন সবকিছু।
বাবা ভাইয়ের আহ্লাদে জায়িন কান্না করে দিল। এই গম্ভীর পুরুষের কান্না বড় করুণ শুনালো। বড় হওয়ার পর জায়িন এই প্রথমবার কান্না করল। যার সাক্ষী হলো বাবা, ভাইয়েরা আর তার মা। জায়িন ভাঙা স্বরে বলে উঠলো ” আব্বু ওকে আমার কাছে এনে দাও! আমি জীবনে আর কোনো কিছু চাইব না আপনার কাছে।
লিপি বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলেন। হেলাল সাহেব স্ত্রীকে কান্না করতে নিষেধ করলেন না।

” জায়িন বাচ্চাদের মতো আবদার কর না। ডেলা কখনো তোমার ছিল না বাবা! ও আশিকের জন্যই তৈরি। না হলে এতো বছর ধরে তোমার সাথে ও ছিল তোমাকে উপর ফল না হয়ে কেন আশিকের উপর ফল হয়েছে? ও কখনোই তোমার তকদিরে ছিল না।
জায়িন নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করলো। হেলাল সাহেব মা ছেলেকে নিষেধ করলেন না কান্না থামানোর জন্য।
“যা কান্না করার করে নাও আগামীকাল থেকে যেন আমরা আমাদের আগের জায়িন ফিরে পাই। এই চার দেয়ালের ভিতর তোমার ডেলার জন্য যা অনুভূতি আছে পিষে ফেলো। আগামীকাল রুম থেকে বের হবে আগের মিস্টার পার্ফেক্ট জায়িন হিসেবে। আমি আমার ছেলেদের কখনো শিখায়নি এভাবে ভেঙে পড়তে। তাই যে ভুল আজ করেছ, তা যেন ভবিষ্যতে আবার রিপিট হতে না দেখি।

” আই লাভ হার বাবা! মোর দেন মি বাবা!
“কোনো মানুষ নিজের থেকে বেশি কাউকে ভালোবাসে না জায়িন।
” আমি ভালোবাসি বাবা। আমার থেকে বেশি ভালোবাসি বাবা। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
লিপি বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
“কিসব খারাপ কথা বলছিস? ওর জন্য তুই বাঁচবি না কেন?
হেলাল সাহেব স্ত্রীকে থামিয়ে দিলেন।
“”এখানেই শেষ করতে দাও! বাবা, কখনো শুনেছ, কেউ কারো জন্য জীবন থামিয়ে রেখেছে? বা কারো জন্য কেউ মরে গেছে? এসব মিথ্যা! কেউ কারো জন্য বাঁচে না, আবার মরে ও না। মানুষ নিজের জন্যই বাঁচে। তাই নিজের জন্য বাঁচতে শেখো, অন্যের জন্য নয়।
ছেলের কাধে চাপড় মেরে হেলাল সাহেব বললেন,

” আশা রাখি আগামীকাল তোমার জীবনে সুন্দর এক নতুন ভোর আসবে। নিজেদের মধ্যে সময় কাটাও! মন ফ্রেশ করো! নতুন ভোরের সাথে নতুন জায়িন হয়ে রুম থেকে বের হও! আমি রুমে যাচ্ছি। তোমার জন্য দোয়া রইলো।
লিপি বেগম স্বামীর সাথে চলে গেলেন চোখ মুছতে মুছতে। সারাদিন কান্নার জন্য চোখ ফুলে ডুম্বুল হয়ে গিয়েছে। চোখের জল মুছতে গিয়ে চোখ জ্বালা করছে। তার এই অবস্থা আর তার ছেলের কি অবস্থা হবে আল্লাহ ভালো জানে!

রাত৩:০০০। আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে জায়িন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিড়বিড় করে উঠলো,❝তোমাকে পাওয়ার আশা আমি হারিয়ে ফেলেছি। তুমি কেন আমায় ভালোবাসলে না? তোমাকে ভালোবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণা এই হৃদয় বয়ে বেড়াবে সবসময়।❞
অন্ধকারে জায়িন দেখল না পশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেউ তার কথা শুনছে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে লম্বা সুঠাম দেহের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তাকালো মেয়েটা। ছেলেটার জন্য মায়া হলো। নিজেকে তিরস্কার করলো মেয়েটা সন্ধ্যাবেলা ছেলেটাকে নিয়ে এভাবে হাসা উচিত হয়নি। তারপর চুপচাপ নিজের রুমে ফিরে গেল।

জায়িন সিগারেট ঠোঁটে পুরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলো অনেক সময়। কিছু সময়ের জন্য যদি এর জন্য মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে তাহলে এটা খেলে ক্ষতি কি? এক টানা দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ঠোঁটে পুরলো জায়িন। সিগারেটের প্যাকেট শেষ হওয়ার পর পাগলের মতো সিগারেটের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল । সিগারেট কে উদ্দেশ্য করে বলল,❝তুই বিষাক্ত জেনেও মানুষ সাময়িক সময়ের শান্তির জন্য তোকে বেছে নেয়। তেমনি ভালোবাসা বিষাক্ত। বিষাক্ত জেনেও সবাই চায় ভালোবাসার এই সুধা পান করতে।❞
জায়িন ফজরের আজানের সময় নিজের রুমে ফিরে গেল। ফজরের নামাজ পড়ে জায়ান আর আরশের মাঝখানে শুয়ে পড়ল। জায়ান আর আরশ ফিরে যায়নি নিজেদের রুমে। জায়ানের গল্প শুনতে শুনতে বেচারা আরশ এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

ঘুম থেকে উঠে নুসরাত আর ইরহাম চুপচাপ ভার্সিটি তে চলে গেল। নয়টা বেজে দশটার কাছাকাছি আরশ অফিস যাওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই। আজ এই বাড়ির ছেলেদের কোনো নড়চড় পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই নড়চড় থাকে না কিন্তু, আজ একটু বেশি নড়চড় বোঝা যাচ্ছে না। নুসরাত একা বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। ভার্সিটি তে চলে যাওয়ায় বাড়ি শান্ত হয়ে আছে।
ভার্সিটির গেইট দিয়ে আজ নুসরাত মুখ লটকিয়ে প্রবেশ করলো। অন্যের দিনের তুলনায় আজ কম কথা বলছে। সাদিয়া আর সৌরভি অবাক হয়ে শুধু নুসরাতের দিকে তাকাচ্ছে। যার কথা বলার দাপটে তারা কথা বলতে পারত না আজ সে চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছে। সৌরভি নুসরাতের গলায় কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করল। না সব ঠিক আছে তাহলে চুপ করে আছে কেন?
নুসরাত চেতে গেল। এই মেয়ে পাবলিক প্লেসে তার গায়ে এভাবে হাত দিচ্ছে কেন? মানসম্মান রাখবে না নাকি?

” এ্যাই, অসভ্য বেডি মানুষের মতো গলায় হাত দিচ্ছিস কেন? যেই দেখছিস একটু হিজাব না করে ভার্সিটিতে আসছি অমনি তোদের হাতাহাতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
সৌরভি চোখ টিপ দিয়ে নুসরাতের কোমরের হাত রাখল। নুসরাত সৌরভির পাশ থেকে এক লাফে সরে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,”সর্বনাশ, তুই তো দেখি ওই সব হয়ে গিয়েছিস।
সৌরভি ভ্রু উচাল। জিজ্ঞেস করলো,
” কোন সব হয়েছি?
“আরে, এতো গে হয়ে গিয়েছে। অশালীন মেয়ে মানুষ! বড় বোনের গায়ে কেউ এভাবে হাত বুলায়। চ্যাহ চ্যাহ! তোদের দিন দিন কি অবনতি হচ্ছেরে? এই জেনারেশনের বাচ্চাগুলো একেক টা উচ্ছনে যাচ্ছে।
সৌরভি হেসে দিল নুসরাতের কথায়।

” নিজের ফ্রমে ফিরে এসেছিস? এবার বল, কি হয়েছে? আর মুখ লটকিয়ে আছিস কেন?
সাদিয়া নুসরাতের কথা বলায় ভাগড়া দিল। নুসরাতের মাথা হয়ে গেল গরম ঠুস ঠাস সাদিয়ার পিঠে কিল বসালো। সাদিয়া মুখ কাঁদো কাঁদো বানিয়ে সৌরভি কে বিচার দিল, “দেখলি কিভাবে আমাকে মারল?
” তুই ওর কথার মাঝখানে বাম হাত ঢুকাচ্ছিস কেন? ওকে শেষ করতে দিয়ে তারপর বলতি। তাহলে তো এতো মার খেতি না।
সাদিয়া দমে গেল না। নিজের সাফাই গাইতে গেলে নুসরাত বলল, ” থাম! বল কি বলতে চাইছিলি?
“তুই বললি এই জেনারেশনের ছেলে মেয়েরা উচ্ছেনে যাচ্ছে। তুই কোন জেনারেশনের ছেলে মেয়ে?
” এই সামান্য কথা বলার জন্য তুই আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করলি। আজ বাদ দেই, আজ তোকে মাফ করে দিলাম। এরকম ভুল আর কখনো করবি না।
সাদিয়া বিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নুসরাত বলল,
” আমার কথাটা তেমন ইম্পর্ট্যান্ট নয়। এমনি ডং করছিলাম।
“তোরা এমনিতেই আমায় মারলি। এবার নুসরাতকে ধরে আমি দু-এক ঘা লাগাই
সৌরভি বলল,

” আচ্ছা, দু-একটা কিল ঘুষি বান্ধবীদের হাতে খেলে কিছুই হয় না। তুই কি বলছিলি বল?
“কাজিন বিয়ে করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।
সৌরভি হাত গুটিয়ে বলল,
” এটা তোর ইম্পর্ট্যান্ট কথা।
নুসরাত বলল,
” দূর না,আজ বিকেলে দুটো আমাদের বাড়িতে আসিস বাড়িতে গ্রুপ স্টাডি করে তোদের বলব আসলে ইম্পর্ট্যান্ট কথাটা কি? ইরহাম ও থাকবে আমাদের সাথে। চিল ব্রো চিল!

কারোর নাক ডাকার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আরশের। ঘুম থেকে উঠে নিজের পাশে জায়িনকে খুঁজে পেল না। জায়ান এখনো ভুসভুস করে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। আরশ বিরক্ত হলো জায়ানের উপর। মানুষ নাক ডেকে কীভাবে ঘুমায়? চোখ মুখ কুঁচকে আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে চাইলো আরশ সময় কয়টা বাজে। ওয়াশরুমের দরজা খুলে জায়িন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে বারান্দায় নেড়ে দিয়ে আসলো।
“কটা বাজে ভাইয়া?
জায়িন হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
” এগারোটা প্লাস বাজে। অফিসে যাবি না।
আরশ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভেঙে বলল,”আজ যেতে ইচ্ছে করছে না। আগামীকাল থেকে যাব। চাচারা সামলে নিবেন আজ।
কথা বলতে বলতে রুমের দরজার সামনে গেল আরশ। রুম থেকে বের হওয়ার সময় পিছন ফিরে তাকালো জায়িনের মুখের দিকে। কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করলো।

“কি বলবি বল?
” তুমি ঠিক আছো ভাইয়া।
জায়ান শান্ত চোখে আরশের দিকে তাকালো। চোখের পাতা ফেলে ইশারা করলো সে ঠিক আছে। আরশ বাক্য ব্যয় না করে নিজের রুমে গেল।
“জায়ান উঠ! আর কত ঘুমাবি?
জায়ান ঘুম ঘুম বলায় বলল,
” কিছুক্ষণ ঘুমাতে দে। একটু পর উঠছি!
জায়িন ছেড়ে দিল ওকে ওর মতো করে। মুখ গম্ভীর বানিয়ে কাপড় চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেল। কাপড় চেঞ্জ করে এসে নিচ তলায় গেল জায়িন।
“আম্মু নাস্তা দাও!
লিপি বেগম কিচেন থেকে দৌড়ে আসলেন। জায়িনকে শার্ট প্যান্ট পড়ে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন।

” তুই কোথাও যাচ্ছিস?
জায়িন অকপটে জবাব দিল,
“কিছু কাজ আছে শেষ করতে যাচ্ছি।
” এই অবস্থায় তুই বের হবি!
“আম্মু আমি ফিট এন্ড ফাইন। আমার আবার কি হবে?
লিপি বেগম কিচেন থেকে ব্রেড, অমলেট আর কফি এনে দিলেন জায়িনকে। জায়িন নাস্তা শেষ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। লিপি বেগম ছেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে তাকলেন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২০

গতকাল রাতে ছেলেটা কি পরিমাণ ভঙ্গুর ছিল,আর আজ সকাল হতে হতে নিজেকে ঠিক করে নিল। মানুষ সামনে থেকে দেখলে মনে করবে জায়িনের ভাষায় ফিট এন্ড ফাইন। কিন্তু, মায়ের মন যানে তো তার ছেলের মনে কি চলছে? লিপি বেগম ভাবতে ভাবতে আবার চোখ ভিজে উঠলো। শাড়ির কোণা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে কিচেনে ফিরে গেলেন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here