প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪
জান্নাত নুসরাত

আম্মা আপনি এভাবে বলবেন না। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আর সমীহ ও করি! আপনার কথা আমি ফেলে দিব না। আপনি যা ভালো বুঝবেন তাই করবেন।
নাছির সাহেব মায়ের কথার এদিক সেদিক কোন-দিন করেননি। মেহেরুন নেছা হ্যাঁ বললে হ্যাঁ, আর না বললে না।নাছিরকে মতামত দিতে দেখে হেলাল সাহেব ও কিছু ভাবলেন।
” আম্মা আপনি যা ভালো বুঝেন করেন। আমার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু জায়িনকে রাজি করাতে পারলে আমি ও রাজি।

লিপি বেগম স্বামীর কথায় অসন্তুষ্ট হলেন। মায়ের উপর সব ছেড়ে দিলেন এভাবে। নাজমিন বেগম প্রতিক্রিয়াহীন! পাত্র হিসেবে জায়িন অবশ্যই ভালো। মেয়ে নিজের বাড়ি থাকবে অন্যের ঘরে অন্যের সংসারে যেতে হবে না, মেয়ে নিজের সামনেই থাকবে। অন্যত্র চিন্তা থাকবে না তাকে নিয়ে।জায়িনের সাথে বিয়ে হলেও ভালো নাহলে ও ভালো।
“তোমাগো ভালো চাই বইলা নিজের ঘরের মাইয়া ঘরে রাকবার চাইছি। মাইয়া তোমাগো সামনে বড় হইছে খারাপ না ভালো সেইডা তোমরা দেখতাছ। মাগার তোমাগো ভালো লাগবো ক্যা আমার প্রস্তাব? বাইরে থাইকা একডা মাইয়া লইয়া আইবা ওইডা যখন খারাপ বাইর হইব তখন বলবা মাইয়াডা খারাপ। নিজের ঘরের ছ্যাঁড়ি ঘরে থাকবে। আমাগো সামনে থাকবো। ঝর্ণা আর রুহিনি এইহানে কোন পবলেম হওয়ার কথা না। ওগো পোলা মাইয়ার বিয়া দিবো না এখন। তোমাগো স্ত্রীগোর কোনো সমইস্যা থাইকলে ঝটপট বইলা ফালাইতে কও?
নাজমিন বেগম নির্লিপ্ত। উনার স্বামী হ্যাঁ করে দিয়েছেন, উনি আবার না করার কি আছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আপনারা যা ভালো বোঝেন, তাই করেন। এতে আমার কোনো সমস্যা নাই।
লিপি বেগমের দিকে তাকালেন। তিনি গাইগুই করে স্বামীর দিকে তাকালেন। স্বামী ভরসা দিলেন হ্যাঁ বলে দেওয়ার জন্য।
“আম্মা আমার কিছু বলার নাই। আপনি যা ভালো বোঝেন তাই করেন।
শোহেব আর সোহেদের দিকে তাকালেন।
” তোমাগো কিছু কওয়ার আছে? পরে কইবা আমি জিজ্ঞেস করিনাইগা।
সোহেদ বলল,
” আম্মা আপনি যা ভালো বোঝেন করেন। আর জায়িন আর ইসরাতের জীবন। তারা একসাথে সংসার করবে আপনি বরং তাদের পারমিশন নিন। তারা রাজি থাকলে না হয় কথা সামনে আগাবেন। মেয়ে-ছেলে তো ঘরের কোথায় পালিয়ে যাচ্ছে না? ধীরে সুস্থে কথা আগান।
শোহেব বলল,

“আমার ও বিশেষ কিছু বলার নেই। দু-জন রাজি থাকলে সামনে কথা আগান আম্মা।
” সব হুইনালো ওগো কোনো পবলেম নাইগা। তাইলে শুধু জায়িনকে এখন রাজি করাইতে হইব। ওইডা আমার বাঁ-হাতের খেল। শুধু তোমাগো একটু আমার সাথে তাল মিলাইতে হইব। সবাই রাজি! এইখন আমাগো মিশান হইল জায়িনকে রাজি কইরানো।
সকলে সমস্বরে বলে উঠল,
“মিশন স্টার্ট নাও টুডে!
কিন্তু টেবিলের এক কোণোয় মুখ কালো করে বসে রইলো ইসরাত। পাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলো না, সেকি এ বিয়েতে রাজি আছে?

জোরে জোরে শ্বাস ফেলে ইসরাত সতর্কতার সহিত চিৎকার করে উঠলো যাতে শব্দ রুমের বাহিরে না যায়। নাক ফুলিয়ে রুমের এদিক সেদিক পায়চারি করলো। চুলে হাত দিয়ে চুলগুলো টেনে ধরলো।
” কি বাল? এইভাবে চিল্লাও ক্যা? তোমার জামাই মইরা গেছে।
“এইইইইই,তুই জানতি, বুড়িটা আমার আর ওই উফ নাম মুখে নিতেই ঘৃন্না লাগছে। যাই হোক, ওইটার সাথে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিল। রাগে ইসরাতের মুখ দিয়ে
আবোল- তাবোল কথা বের হলো।
নুসরাতের নির্লিপ্ত গলার আওয়াজ,
” হ্যাঁ জানতাম!
“আমাকে বললি না কেন? কবে থেকে জানতি? আর কীভাবে জানলি?
” এতো প্রশ্ন বাবারে! আস্তে ধীরে কর আমি কোথাও যাচ্ছি না। প্রথম প্রশ্ন কি ছিলো আবার বল? আজকাল ভুলে যাই সবকিছু ঠাস করে।

দাঁতে দাঁত চাপল ইসরাত। এ বাড়ি তে যা যা হয় বা ভবিষ্যতে যা হবে তার নব্বই শতাংশ এই মেয়ে জানে ইচ্ছে হলে বলে নাহলে চেপে যায়। পরে যখন এসব বের হয় নুসরাতের বিশেষ প্রতিক্রিয়া এসব বিষয়ে থাকে না। আর বিশেষ প্রতিক্রিয়া থাকলে বোঝা যায় এই বিষয়ে নুসরাত অবগত ছিল না।
“আমাকে বললি না কেন? আর কবে থেকে জানতি?
“বলার প্রয়োজন বোধ করিনি। এই ধর যেদিন নাহিদদের বাড়ি গিয়েছিলাম ওই দিন থেকে।
” একজেক্ট টাইমটা বল! আর কীভাবে জানলি?
“আই শালী যেদিন তোকে দেখতে আসলো, ওইদিন বিকেলে জানতে পেরেছি। আর কীভাবে জেনেছি সেটা না হয় তোলা থাক! পরে একদিন সময় করে বলব।
ইসরাত নুসরাতের কাছে বসল তোষামোদ করার জন্য। কথায় আছে না, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। ইসরাত ও রাগ গিলে এসে বিছানায় নুসরাতের গা ঘেঁষে বসলো। হাত দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। নুসরাত ভ্রু কুঁচকে নিল। আবার কী ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উঠলো।

” এভাবে তোষামোদ! চুকচুক শব্দ করল মুখ দিয়ে। ব্যাপারটা কি ছালী? ঝেড়ে কাশো তো বাবু। এতো আপ্পায়ন মানা যাইতাছে না যে…
ইসরাত হালকা করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। হাত সরালো না। নুসরাত দু-তিনবার হাত সরিয়ে দিল। ইসরাত আবার হাত দিয়ে পিঠ মাথা কপাল চুল বুলিয়ে দিতে লাগলো।
“কি হয়েছে ছালী? আজ তোর ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না। এবার বলে ফেল বাল কি বলবি?
” প্লিজ বইন, তোর দুই ঠ্যাং এ ধরি বিয়েটা ভেঙে দে। এর আগে তো অনেকগুলোকে ভাগিয়েছিলি। এবারেরটা ভাগিয়ে দে! আমার সোনা-রুপা-তামা-ময়না প্লিজ ভেঙে দে।
“ভেঙে দেওয়া যায় কিন্তু,,
” কিন্তু কি?

নুসরাত বুড়ো আর তর্জনী আঙুল একত্রে করে মানি দেখাল।
“আচ্ছা যত লাগবে ততো দিব। প্লিজ ভেঙে দে, বইন আমার! আমি তোকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে পার্টি দিব।
” আচ্ছা টাকা দে, তারপর বলছি কি করতে হবে?
ইসরাত পাঁচশত টাকা নুসরাতের হাতে দিল। নুসরাত হেসে উঠলো কী রকম করে?
“জায়িন ভাইয়া এই বিয়েতে রাজি হবে না দেখে নিস। এতো চিন্তা কিসের ব্রো! ইনজয় এন্ড চিল, আর ভাববি বিয়ে ভেঙে গেছে। কোনো প্রবলেম নেই। নাথিং এলস..
” সত্যি বলছিস! তাহলে টাকা নিলি কেন? তোর তো কোনো কষ্ট করতে হবে না। ওইটা নিজেই বিয়ে ভেঙে দিবে। দে আমার টাকা দে!
“চুপ কর শালী। এতো বড় একটা সমাধান দিলাম উনার হচ্ছে না। এর পরেরবার যখন বিয়ের কথা আসবে কে ভাঙবে। এই আমি! চিনে রাখ আমাকে!

” আপনি কে আপনাকে চিনে রাখতে হবে? আপনাকে আমার বিশেষ কেউ লাগছে না।
“আমি নাছির উদ্দিনের দ্বিমাত্র কন্যা সৈয়দা নুসরাত জান্নাত। ইসরাত জান্নাতের একমাত্র বোন, ইরহাম জেনের একমাত্র এবং দ্বিমাত্র বোন, মানুষের বিয়ে ভাঙায় উস্তাদ নুসরাত। এবার চিনে রাখবেন তো।
“হ্যাঁ বইন হ্যাঁ! এবার ঘুমা। চৌদ্দ ঘুষ্টির হিস্ট্রি বলতে বলিনি। সত্যি রাজি হবে না তো!
“সত্যি মানে কী? একশ পার্সেন্ট সত্যি… নয়! আমি জানি না, রাজি হয়ে গেলে বুড়ি ভঙ্গ ধরবে, আর জায়িন ভাই রাজি হয়ে যাবে। আমি এটা একশ দশ পার্সেন্ট নিশ্চিত। ওই বিষয়ে মোটেও নিশ্চিত না। এবার তোকে বিয়ের লাড্ডু খেতেই হবে রে, বোন! বুড়ি হাত-পা ধুয়ে মাঠে নেমেছে। আমি কিছু জানি না!
নুসরাত বিড়বিড় করে বলল। প্রথম অংশটা জোরে বললেও শেষটা আস্তে ধীরে বলল, যাতে ইসরাত শুনতে না পায়।

মিস ডায়নাকে আরশ ডেকে পাঠালো। উনাকে ফাইল একটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
“মে আই কাম ইন স্যার!
” ইয়াহ!
“স্যার হাউ কেন আই হ্যাল্প ইউ?
” আপনি কি এভাবে ছাড়া অন্যভাবে কথা বলতে পারেন না? কি রকম অদ্ভুত শোনায় আমার কাছে।
“স্যার আমি এইভাবে কথা বলি! অদ্ভুত শোনাবে কেন স্যার? আপনার কি পছন্দ হয়না আমার কথা?
” এসব ছাড়ুন ডায়না যে প্রয়োজনে আপনাকে ডাকলাম তা নিয়ে কথা বলি।
“সিউর স্যার!
“মিস রুবার কাছে গিয়ে বলবেন একটা ফাইল গতকাল উনাকে দেওয়া হয়েছে। ওইটা নিয়ে আসার জন্য।
” ওকে স্যার!

আরশ চোখ তুলে তাকালো না ডায়নার দিকে। ল্যাপটপে একধ্যানে হাত চালিয়ে যাচ্ছে। কাজ করে করে কথা বলল ডায়নার সাথে। ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে সামনে তাকানোর সময় নেই আরশের। প্রচুর কাজ জমে আছে।
ডায়না ভেংচি কেটে আরশের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। ডায়না রুবা কাছে গেল ফাইলটা নেওয়ার জন্য। রুবার সিটের আশে-পাশে অনেকেই ছিল। ডায়না টাইট ফিট জামা কাপড় পরার জন্য উনার কোমর দৃশ্যমান। শরীরের ভাঁজ কাপড়ের উপর দিয়ে ভেসে উঠেছে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৩

রুবার দিকে ঝুঁকে ফাইল নিলেন যখন ডায়না তখন কিছুটা ক্লিভেজ দেখা গেল। ফাইল দিতে গিয়ে রুবার চোখ পুরুষ কর্মচারীদের উপর পরতেই গা শিরশির করে উঠলো। কয়েকজন নতুন যোগ দেওয়া কর্মচারী ডায়নাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। যে কাপড় এরুপ পরিধান করেছে তার বিন্দুমাত্র লজ্জা লাগছে না। রুবার লজ্জা লাগলো। ডায়নার অশালীন পোশাক দেখে। এসব কি পরে এই মেয়ে? এর কি বিন্দুমাত্র লজ্জা লাগে না।?কতো মানুষ এর শরীর এভাবে গিলে খায়?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here