প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪ (২)
জান্নাত নুসরাত

জং ধরা ফ্যানের গটগট শব্দ। ফ্যানের গটগট শব্দে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায় তার মধ্যে এই কাঠফাটা রোদ। অর্গানিক রসায়নের ক্লাস করাচ্ছেন প্রফেসর আনোয়ার।ক্লাসের ভিতর বসে গরমে ছটফট করছে ছাত্রীরা। এর মধ্যে প্রফেসর আনোয়ারের বকবকের শব্দে কানে ভু ভু করছে।প্রফেসর আনোয়ার ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে একবার তাকালেন। দু-একজন ছাড়া সবাই বিরক্ত হয়ে বসে আছে ক্লাসে। বয়স তেত্রিশ পার হয়েছে প্রফেসর আনোয়ারের। গলার স্বর যথেষ্ট ভারী ও গম্ভীর। এই ডিপার্টমেন্টের সবথেকে গম্ভীর ও রসকষহীন স্যার আনোয়ার।

” যারা ক্লাস করতে চাচ্ছেন না। বিরক্ত হচ্ছেন আমার ক্লাসে, আপনারা বের হয়ে যেতে পারেন।
প্রফেসর আনোয়ারের বলতে দেরি হলো, ক্লাস থেকে মাছির মতো করে ছাত্র-ছাত্রীরা বের হতে দেরি হলো না। প্রফেসর আনোয়ার স্টুডেন্টের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ওই দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে ক্লাসে বসে থাকা নয় জন স্টুডেন্টের দিকে তাকালেন।
“আপনারা বসে আছেন কেন? আপনারা ও চলে যেতেন। এতো কষ্ট করে আমার ক্লাস করার আপনাদের প্রয়োজন নেই। যখন বড় বড় ডিম নিয়ে বাসায় যাবেন তখন আপনাদের বাসা থেকে অভিযোগ নিয়ে আসবে কি ক্লাস করিয়েছি? আপনারা কেন বড় বড় ডিম পেয়েছেন?
সৌরভি চিরবির করে উঠলো। নুসরাতকে কিছু ভয়ংকর গালি দিল সৌরভি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” নুসরাতের বাইচ্চা, বলছিলাম না চল চলে যাই। দেখ মা* এখন বালটা কীভাবে জ্ঞান দিচ্ছে? শালা বাই**ত… লু লু করে চিৎকার করছে। ও বাবাগো ,ও মাগো শালারে কি করতে ইচ্ছে করতেছে?
“বালডা মুখ বন্ধ কর! শালা দেখ কীভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে? মনে হ,চ্ছে ওখান থেকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।
” তোমাদের মতো খারাপ ব্যাচ আমি আর একটাও দেখিনি। ওই দেখো, এতো কথা বলছি ওখানে বসে বেয়াদবের মতো কথা বলছে।

নুসরাতের ভুল টাইমে হাসি উঠার ব্যামো আছে। হি হি করে হেসে উঠলো। ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে হেসি থামিয়ে স্যারের দিকে তাকালো। তখন সাদিয়ার অট্টহাসির শব্দ শোনা গেল। নুসরাত আর সৌরভি বিভ্রান্ত হয়ে তাকালো সাদিয়ার দিকে। সাদিয়া হাসি থামানোর চেষ্টা করে ও হা হা হি হি করে হেসে উঠে। নুসরাত আর সৌরভি ও ব্যাগের দিকে মুখ দিয়ে হেসে উঠলো।
প্রফেসর আনোয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি বন্ধ হয়ে গেল সাদিয়ার। লোকটা দাঁত কটমট করে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া লোকটার কটমট চাহনি দেখে হে হে করে হেসে উঠলো।
“দেখো, দেখো,কী রকম অসভ্যের মতো হাসছে? বেয়াদব, দাঁত ভিতরে ঢুকাও। খুব হাসি আসছে। দেখব ফিফথ সেমিস্টারে কি করো? এই নাম কি তোমার? তোমার নাম বলো!
পকেট থেকে ছোট আকারের নোট বুক বের করতে জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর আনোয়ার।
চোখে চশমা আটা বোকাসোকা ধরনের মেয়েটা বলল,

” কে স্যার?
“ওই কালো ড্রেস পরিহিত মেয়েটার নাম বলুন। আমার ডায়েরিতে উনার নাম তুলব। দেখব ফিফথ সেমিস্টারে কত মার্ক পান।
সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রফেসর আনোয়ার বললেন, “আপনি এখন আমার চোখে পড়ে গিয়েছেন, এখন থেকে সবসময় আমার নজর আপনার উপর থাকবে।
” জিইইই স্যার ওর নাম সাদিয়া।
নুসরাত বিড়বিড় করলো,
“দেখবেন কীভাবে? আমরা অনলি ওয়ান পিস! এই পৃথিবী তে আমাদের ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পিসের জন্মই হয়নি।
” অভদ্র ব্যাচ, ভদ্রতার লেসমাত্র নেই তোমাদের মধ্যে!
কথাটা বলে প্রফেসর আনোয়ার আর না পড়িয়ে চলে গেলেন।

রুবার কাছ থেকে ফাইল নিয়ে চলে গেল ডায়না। হাঁটার সাথে স্টিলেটো মার্বেল টাইলসে টকটক শব্দ তুলছে। আরশের কেবিনের সামনে গিয়ে নক করলো ডায়না। ভিতর থেকে শব্দ এলো ভিতরে আসুন। ডায়না কোমর বাঁকিয়ে হেঁটে গেল আরশের কেবিনের ভিতর।
“স্যার, ফাইল!
” ক মিনিট মিস ডায়না।
ডায়না দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ দিয়ে গিলে খেল উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের ছেলেটাকে। কোট খুলে রাখায় পরণে শুধু গ্রে কালার শার্ট। শার্টের উপর দিয়ে জিম করা বডি ভেসে আছে। ল্যাপটপে ট্যাপ করতে করতে আরশ ঝাকড়া চুল গুলোতে হাত বুলালো। টাই টেনে নিচের দিকে নামিয়ে নিল। ডায়না এক জায়গায় দাঁড়িয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করতে থাকলো আরশকে।

“মিস ডায়না ডিভানে এসির রিমোট আছে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে এদিকে আসুন।
ডায়না এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে আরশের দিকে এগিয়ে গেল। আরশ নিজের সামনের চেয়ার দেখিয়ে বলল, “এখানে বসুন!
ডায়না বিনা বাক্য ব্যয়ে বসে পড়ল। ফাইলটা এগিয়ে দিয়ে লাল মার্ক করা কিছু দাগ দেখালো। ডায়না নিচের দিকে ফাইল দেখার জন্য ঝুঁকতেই আবার ক্লিভেজ দৃশ্যমান হলো। আরশ তাকালো না। ডায়নাকে বুঝিয়ে দিয়ে বলল,” এবার আপনি আসতে পারেন।
ডায়না কেবিন থেকে বের হওয়ার সময় আরশ কাপড় নোট করলো। পিছন থেকে আবার ডাক দিল ডায়নাকে। ডায়না ফিরে তাকাতেই আরশ চোখ নামিয়ে নিল। তার ডায়নাকে কিছু বলতেই মুখ বাঁধছে। চোখ নামিয়ে রেখে কথায় ঝাঁঝ মিশালো।

“এটা কোন মডেলিং বা শো এর জায়গা না যেখানে আপনি নিজের শরীর দৃশ্যমান করে আসছেন। এখানে আরো অনেকে কাজ করে আমি নোটিশ করেছি তারা তো এরুপ পোশাক পরিধান করে না। আপনি নিজের শরীর ঢেকে রাখতে না পারলে আমার কোম্পানিতে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। যে কাজের জায়গায় এসকল ড্রেস পরিধান করে তাকে আমি কি বলব? বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! দয়া করে আপনি আপনি আজ যান, এসকল কাপড় চেঞ্জ করতে পারলে আগামীকাল থেকে আসবেন, নাহলে আসার দরকার নেই। ইট’স মাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং।

ক্যাম্পাসে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে সৌরভি কথা তুলল,
“স্যার তোকে তার নজরে রাখছে,মানে এই বুড়ো বয়সে স্যারের সামথিং সামথিং ফিলিং হচ্ছে সাদিয়াকে দেখে। বুড়ো বয়সে প্রফেসর আনোয়ারের প্রেমে পরার ভিমরতি হয়েছে।
” আমি মরছি আমার জ্বালায় আর তুই আছিস সামথিং সামথিং নিয়ে। আমাকে বেডার খাতায় মার্ক করে নিয়ে চলে গিয়েছে। এখন আমার কি হবে? কোনো রকম টেনে-টুনে পাশ করি তার মধ্যে স্যার এখন আমার পেপার এ-টু জেড অক্ষর ভাই অক্ষর আমার খাতা দেখবে।
“ওসব বাঁধদে। তুই ওইসময় হাসলি কেন?

” বইন বলিস না, প্রফেসর আনোয়ার যখন কথা বলছিলেন, সাদিয়া হাসতে হাসতে ক্যাম্পাসে বসে গেল। আমার বলতেই হাসি আসছে। স্যারের উপরের পাটির সামনের দাঁত খুলে ঝুলে পড়েছিল। তুই আর সৌরভি কথা বলায় ছিলি আর আমি স্যারের দাঁত ঝুলে পড়া দেখে প্রথমবার হেসেছিলাম। পরেরবার আবার সেটা মনে করে হেসেছিলাম। আমার স্যারের ওইসময়ের কথা মনে হলেই হা হা হিহি করে হাসতে ইচ্ছে করে। এই দেখ বইন হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যথা হয়ে গিয়েছে।
সৌরভি আর নুসরাত দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। মেহেরুন নেছা পায়চারি করছিলেন বাগানে। কীভাবে জায়িনকে রাজি করানো যায়? মনে মনে ফন্দি আটলেন কীভাবে বিয়ে দিবেন? কি করলে খচ্চর ছেলেটা রাজি হবে?
পায়চারি করতে করতে হঠাৎ দেখলেন জায়িন এদিকে আসছে। মেহেরুন নেছা হাঁটা-হাঁটি বাঁধ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন লাঠিতে ভর দিয়ে।
“দাদি কি করছেন?
মেহেরুন নেছা কথার উত্তর না দিয়ে চোখ ধীরে ধীরে বুযে নিলেন। হাত থেকে লাঠি ফসকে পরে গেল। লাঠি বিহীন মেহেরুন নেছা পড়ে যেতে গেলেন জায়িন দৌড়ে এসে মেহেরুন নেছাকে চেপে ধরলো নিজের শরীরের সাথে। মুখে হালকা চাপড় দিয়ে ডাকল জায়িন ” দাদি শুনতে পাচ্ছেন! হ্যালো দাদি! ও দাদি! কি হয়েছে আপনার?
মেহেরুন নেছার সারাশব্দ পাওয়া গেল না। জায়িন কোলে তুলে নিল মেহেরুন নেছাকে। কোলে করে নিয়ে গিয়ে মেহেরুন নেছার রুমে শুয়ালো।

“মা ও মা! দেখো দাদির কি হয়েছে? বাগানে অযথা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।
নুসরাত, রুহিনি আর ইরহাম দৌড়ে আসলো।
” ছোট আম্মু, আম্মু কোথায়?
থতমত খেলেন রুহিনি। কিছু বলতে গিয়ে কথা পালটে নিলেন।
“ডাক্তারের কাছে গিয়েছে এসে যাবে।
” শরীর খারাপ করেছে।
“বিশেষ কিছু না।
মেহেরুন নেছাকে শুয়ে থাকতে দেখ আঁতকে উঠলেন রুহিনি।
“আম্মার কি হয়েছে?

” জানি না, হঠাৎ দেখলাম চোখ বুজে ফেলছেন। তারপর আমার উপর পুরো ভর ফেলে দিলেন। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। পানি ছিটালে জ্ঞান ফিরবে। আপনি একটু দেখুন ছোট আম্মু।
বেড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে জায়িন মেহেরুন নেছাকে ছিটালো। মেহেরুন নেছার প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না।
“আমি ডাক্তারকে কল করে আসছি। আপনারা ততক্ষণ চেষ্টা করুন জ্ঞান ফেরানোর।
জায়িন চলে যেতেই নুসরাত এক লাফে বিছানায় উঠে গেল। মেহেরুন নেছার কানের কাছে গিয়ে বলল,” ভালো অভিনয় শিখেছ বুড়ি। জায়িনকে জব্দ করতে তুমি একি পথ বেছে নিলে?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৪

মেহেরুন নেছা উঠে বসলেন। আশ-পাশ তাকিয়ে সতর্ক গলায় বললেন,” চিন্ডা করতাছিস এইরকম কর! নইলে জায়িন বিশ্বাস কইরব না। আর ডাক্তার জায়িনের কাছে আইসার আগে সব বুঝাইয়া বইলাদিস।
জায়িনের বোটের শব্দে মেহেরুন নেছা আবার আগের মতো চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন। নুসরাত ফিসফিস করে বলল,” এতো চোখের পাতা নাড়ালে হয় বুড়ি। অভিনয় ঠিকভাবে করতে পারছ না তুমি! এইভাবে তো ফেইল করবা। সুন্দর করে অভিনয় করো! চোখের পাতা যেন না নড়ে। তাহলে তো বুঝে ফেলবে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here