প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৬
জান্নাত নুসরাত
জায়িন বিয়ের করার জন্য রাজি হওয়ার সাথে সাথে মেহেরুন নেছা এই মুহুর্তে বিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়া দিলেন। হেলাল সাহেব বললেন আম্মা আগামীকাল বিয়ে দিব, এতো রাতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বিয়ে কীভাবে দেব? কিন্তু মেহেরুন নেছা মানতে নাড়াজ। তার এক কথা আজ যখন রাজি হয়েছে তখন আজই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। যেকোনো সময় জায়িন পল্টি মেরে দিতে পারে। জায়িনের উপর বর্তমানে কোনো প্রকার বিশ্বাস নেই উনার। রাজি হয়েছে যখন, তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিতে হবে। এই সুবর্ণ সুযোগ কে মিস করবে?
রাত সারে এগারোটার দিকে মসজিদের ইমাম সাহেবকে ফোন করে বাড়িতে ডাকা হলো। মসজিদের ইমাম সাহেব কাঁচা ঘুম রেখে আসতে চাইছিলেন না। মেহেরুন নেছা ধমক দিয়ে বললেন আসার জন্য তিনি যতো টাকা দিয়ে বিয়ে পড়ান তার থেকে দ্বিগুন টাকা দিবেন। দ্বিগুন টাকার পাওয়ার লোভে কাঁচা ঘুম রেখে মসজিদের ইমাম বললেন পনেরো মিনিটের ভিতর আসছেন তিনি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ইসরাত ভার্সিটি থেকে সন্ধ্যার দিকে আসায় ভাত খেয়ে সন্ধ্যায় বেলা থেকে ভাত ঘুম দিচ্ছিল। ক্লান্ত শরীর পেট ভরা থাকায় আজ রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠেনি। ঘুমন্ত ইসরাতকে নাজমিন বেগম ঘুম থেকে টেনে তুলে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ না দিয়ে ধরে ধরে ড্রয়িং রুমের নিয়ে এসে সোফার উপর বসিয়ে দিলেন। ইসরাত ঘুমে তাকাতে পারছে না। এক চোখ খুলে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে সোফার পিছন দিকে ভর দিয়ে চোখ বুজে নিল। আগে ঘুম তারপর অন্যকিছু।
ইরহাম হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। তার জীবনে দেখা সবচেয়ে অদ্ভুত বিয়ে এইটা। বিয়ের কনে সোফায় বসে ঘুমাচ্ছে আর বর টাউজার, মাথায় টুপি আর গেঞ্জি পরে সোফার উপর বসে মাথা নিচের দিকে রেখে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে না, এদের দুজনের বিয়ে। নাজমিন বেগম উনার বিয়ের ওড়না নিয়ে এসে ইসরাতের মাথায় পেঁচিয়ে দিলেন।
ইমাম সাহেব এসে সোফায় বসে গেছেন। কনে এখনো ঘুমাচ্ছে! জায়িন গম্ভীর গলায় সালাম দিল ইমামকে।
জায়িন বলল,
“আমি বিয়ে করার আগে ইসরাতের সাথে কথা বলতে চাই?
” হ কথা কও। আমাগো কোন সমস্যা নাই গা। কিন্তু যা কইবার এইখানে দাঁড়াইয়া কইবা। এখন পারিসনাল কথা কইবার সময় নাইগা।
জায়িন মেহেরুন নেছার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল।
“সবার সম্মতি নিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ইসরাত। হ্যাঁ অথবা না তে উত্তর করো। তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও ইসরাত? তুমি না করে দিলে এই বিয়ে হবে না। কেউ তোমাকে জোর করবে না।
ঘুমন্ত ইসরাত কোন কথা শোনলো না। তার মাথায় এখন একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সবকিছু মেনে নিলেই গিয়ে আরমের ঘুম দিতে পারবে। কোনো রকম এখান থেকে বের হতে পারলেই হলো। মাথার ভিতর ভু ভু শব্দ হচ্ছে ঘুমের অভাবে। সবাই চুপ করে আছে ইসরাতের উত্তর শোনার জন্য। নিস্তব্ধ পরিবেশে মেয়েলি রিনরিনে শব্দ ভেসে আসলো,” হ্যাঁ।!
ইসরাতের স্বীকার উক্তি দেওয়ার সাথে সাথে ইমাম সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
“দেনমোহর কত টাকা বাঁধব?
হেলাল সাহেব বললেন,
” বিশ লক্ষ টাকা বাঁধেন।
নাছির সাহেব বললেন,
“ভাই নগদ টাকা দিতে হবে আমার মেয়েকে, মনে রাখবেন কিন্তু।
হেলাল সাহেব বললেন,
” আমার ছেলের কি টাকার অভাব?
কাজী সাহেব বললেন,
“তাহলে বিয়ে পড়ানো শুরু করি?
চার ভাই একসাথে বলে উঠলেন,
” জি শুরু করুন।
ইমাম সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন। বিশ জুলাই রাত বারোটা ত্রিশ মিনিটে নগদ বিশলক্ষ টাকা ধার্য করিয়া সৈয়দ জায়িন হেলালের সহধর্মিনী হলেন সৈয়দা ইসরাত নাছির দু-জনের জীবন এক সুতোয় বাঁধা পড়ল। বিয়েতে উপস্থিত ছিল আরশ, ইরহাম,নুসরাত,আর বাড়ির কর্তীরা। বাচ্চারা সবাই ঘুমাচ্ছে তাই আর ঘুম থেকে তুলতে নিষেধ করে দিলেন হেলাল সাহেব।
বিয়ে শেষ হতেই ইসরাত ইমামকে সালাম দিয়ে নিজের রুমে গেল ঘুমানোর জন্য। আগামীকাল সকালে ভাবা যাবে কি হয়েছে? এখন ঘুমানো প্রয়োজন! আজ এতো আরামের ঘুম আসছে কেন? ঘুমে মনে হচ্ছে চোখ খুলে পড়ে যাবে। এখন না ঘুমালে মনে হচ্ছে মরে যাবে। ইসরাত কোনো রকম রুমে গিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়ল। আহ শান্তি! চোখ দুটো লেগে আসলো। চোখের সমনের সবকিছু ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে গেল।
অন্যদিকে,
নুসরাত নখ কামড়াতে কামড়াতে নখ ব্যাথা করে ফেলেছে তারপর ও কামড়ানো বন্ধ করছে না। গভীর চিন্তা করছে ইসরাতের বিয়ে হয়ে গিয়েছে জায়িনের সাথে ইসরাতে পরে, বিয়ে হওয়ার কথা ছিল জায়ানের। জায়িনের বিয়ে হয়ে গেল এবার জায়ানের পালা। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবে জায়ানের ও। তারপর কার পালা? ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এতো তাড়াতাড়ি ইসরাতের বিয়ে দেওয়ার কি ছিল? সোফার উপর দু-পা তুলে বসল। গভীর চিন্তায় লিপ্ত নুসরাত! খাল কেটে কুমির নিয়ে এসেছে নিজে নুসরাত। বুড়ির কানে এসব কথা ঢুকানোর কি ছিল? আরো দু-এক বছর পর ইসরাতের বিয়ে হলে কি এমন হতো? চুর গেলে বুদ্ধি বাড়ে নুসরাতের অবস্থা সে রকম। কি করা যায়? কি করা যায়? চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসলো।
সাথে আরেকটা চিন্তা আসলো মাথায় আরশের বাচ্চা এখন তার বেয়াইন। দু-জন বিয়াই-বেয়াইন! শেষ সব শেষ! জীবনে যা স্বপ্ন দেখেছিল সব শেষ! ভেবেছিলাম কত কি ইসরাতের জামাইয়ের ভাইয়ের সাথে ইটিস-পিটিস করবে। সব ধূলিসাৎ হয়ে গেল! বেয়াইয়ের হাত ধুইয়ে আর টাকা পাওয়া যাবে না। ইসরাতের জামাইয়ের জুতো লুকিয়ে টাকা পাওয়া যাবে না। বিয়ের দিন গেইট ধরলে ও টাকা পাওয়া যাবে না। আরশের বাইচ্চা ওখানে দাঁড়িয়ে ধমকা-ধমকি করবে। সবকিছু নুসরাতের চোখে এখনি ভাসছে।
চিন্তা করতে করতে পা নামিয়ে বসলো নুসরাত। নখ কামড়াতে কামড়াতে সিঁড়ির দিকে হেঁটে গেল। দুই-তিন দিন আগের কথা মাথায় আসলো নুসরাতের। ইচ্ছে করল মাথা নিয়ে দরজার সাথে বারি দিতে। কে লাড়া দিয়েছিল তাকে? এসব আইডিয়া দেওয়ার জন্য? ধীরে ধীরে নিজের কর্মকান্ডের কথা মনে হলো। শয়তানে লাড়া দিয়েছিল ওই সময়।
“দাদি জায়িন ভাইয়ের বিয়ে দিতে চাও তুমি?
মেহেরুন নেছা মাথা নাড়ালেন তিনি দিতে চান।
“শুনো,এসব ইমোশনাল কথা বলে কোনো লাভ নেই।অনেক তো ইমোশনাল কথা বললে। পটলো, উঁহু পটলো না! তুমি ভাইয়াকে ধোঁকা দাও! আই মিন ভাইয়াকে তোমার কথা দিয়ে ফাঁসিয়ে ফেলো। দেখবে এমনি রাজি হবে?
” কীভাবে ফাঁসাবো বইলা দে?
“কেন বলব? আমার কি বেনিফিট এখানে? বলব না! বেনিফিট ছাড়া এই নুসরাত সৈয়দ কোনো কাজ করে না।
” টাকা দিমুনে তোরে? কত চাইস তুই?
“বেশি না তুমি বুড়ি মানুষ দাদা, ১০০০ টাকা দিলে হবে। আমি আবার মানবতার ফেরিওয়ালা।
” আইচ্ছা ডাইন। এইবার ক?
“এদিকে আসো! জানো না, দেয়ালের কান আছে। কানে কানে বলি।
কানে কানে নুসরাত শিখিয়ে দিল কি কি করতে হবে? মেহেরুন নেছা বললেন” কাজ করবে?
“না করলে টাকা ফিরত। একদম একশত পার্সেন্ট সত্যি কথা। ধান্দার বিষয়ে কোন মিথ্যা কথা বলে না নুসরাত।
কথাগুলো মাথায় আসতেই নুসরাতের নিজেকে ইচ্ছে করলো নিজেকে ঠাস করে থাপ্পড় মারতে। মাত্র একহাজার টাকার জন্য এদের বিয়ে দিয়ে দিল। এসব কূটনামি আইডিয়া দিল বুড়িকে। নিজের পায়ে কুড়াল মারলিরে গাঁধি! ইসরাতের অন্য জায়গায় বিয়ে হলে আরো বেশি টাকা আয় করতে পারতি। বলদি কোথাকার? নিজ মনে নিজেকে ধিক্কার জানালো। আর করবি টাকা দিয়ে কাজ? লে এবার লোকসান সামলা।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে নিজের মাথায় নিজে দু-একটা গাট্টা মারলো। আরশ সোফার উপর বসে কখন থেকে খেয়াল করছিল নুসরাতকে। সোফার উপর পা তুলে বসে আবার নামায়, কীভাবে আবার চোখ বড় বড় করে? পরে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে নিজেকে গাট্টা মারে, মাথায় বারি মারছে। পাগল হয়ে গেল না কি? বোনের বিয়ের শুকে?
আরশের হঠাৎ মনে হলো অনেকদিন হয়েছে নুসরাতকে জ্বালায় না। আজ একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করলো! নিজের চিন্তা-ভাবনায় নিজে অবাক হলো। কি ভাবছে এসব? তবুও জ্বালাতে ইচ্ছে করছে। সবকিছু এক সাইডে রেখে আরশ উঠে দাঁড়ালো। টাউজার ঠিক করে টি-শার্ট টেনে ভাঁজ ঠিক করল।
নুসরাত ডিপ্রেশনে মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে হাঁটছিল। আর ভাবছিল কত বড় লস করল নিজের। নিজ মনে গান গাইল পরান যায় জ্বলিয়া, পরান যায় জ্বলিয়া, আহা, আহা,আহা। একেতো রোগা তার উপর চুলগুলো কোনরকম বান করে রাখা থাকে। যা দু-মিনিট পর পর শুধু খুলে যায়। রোগা শরীরের উপর ওভার-সাইজড টি-শার্ট আর ব্যগ্গি প্যান্ট পড়ে হাঁটছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে কোন মৃতদেহ হেঁটে চলেছে। নাজমিন বেগম ইসরাতের রুমে এয়ার কন্ডিশন আনার জন্য গিয়েছিলেন হঠাৎ ঝুঁকে কিছু আসতে দেখে চিৎকার করে উঠলেন।
নুসরাত সোজা হয়ে মায়ের দিকে তাকালো। চুলগুলো সামনের দিকে এসে মুখ চোখে ঢুকে গিয়েছে। হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। ডিপ্রেশনে মুখ দিয়ে বের হলো আউলা-ঝাউলা কথা।
“চিৎকার করছে কেন আম্মা?
নাজমিন বেগম বুকে থুথু ছিটিয়ে নুসরাতের পিঠে হালকা জোরে থাপ্পড় মারলেন।
” মরা মানুষের মতো হাঁটছিস কেন? আর চুলগুলো বাঁধিস না কেন? সারাদিন জিনের মতো ঘুরে বেড়াস। এখন যদি তোকে দেখে আমি হার্ট – অ্যাটাক করতাম তখন কি হতো?
“যখন হতো তখন দেখা যেতো, এখন এতো ভেবে কি লাভ?
” থাপড়ে লাল করে দিব! যা, চুলগুলো গিয়ে বাঁধবি না হলে তোর একদিন কি আমার একদিন?
“আম্মা আমার হাত কী রকম লক্কর-ঝক্কর হয়ে গিয়েছে। এই দেখ কাজ করছে না।
হাত নাড়িয়ে দেখালো নুসরাত। কান্না করে দিবে দিবে করে আবার হেসে উঠলো। আবার ভঙ্গ ধরা কান্না করে দিল।
” এই মরা মানুষের মতো করবি না। তুই খাবার পাস না। আর পাগলের মতো হাসা বন্ধ কর! পাগল হয়ে গিয়েছিস! এই রকম রোগা হলি কীভাবে? আর এসব কি কাপড় পরিস এর ভিতর তো আমার জায়গা হয়ে যাবে। এসব কাপড় পরিস বলে তোকে আরো বেশি মরা মানুষ লাগে। যা চুল বাঁধ গিয়ে। আমি যদি আজ চুল খোলা পাই নুসরাত তোর চুলে আগুন ধরাবো।
নাজমিন বেগম ধমকে-ধামকে এয়ার কন্ডিশনার নিয়ে চলে গেলেন। নুসরাত এবার সিড়ির রেলিং ধরে বসে পড়ল। পায়ে শক্তি পাচ্ছে না! কান্না আসছে আবার হাসি ও আসছে। একি হলো? আরশের বাচ্চা তার বেয়াই হয়ে গিয়েছে। আহা আহা আহা। হাত পা ছড়িয়ে বসে রইল। রুমে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই নুসরাতের। আরশ এতক্ষণ মা-মেয়ের কথা শুনছিল এবার এসে নুসরাতের সাথে লেগে বসল।
“কি হয়েছে তোর? এভাবে মরা মানুষের মতো পড়ে আছিস কেন?
আরশের কথার উত্তর দিল না। নুসরাতের গান গাইতে ইচ্ছে করলো। ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে গান গেয়ে উঠল,” আমার টাকা গুলো সব উড়াইয়া লইয়া গেল জায়িইন্না। কত কি ভাবছিলাম। সব মাটির মতো ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আরইশ্শা আমার প্লেনে সব পানি ঢেলে দিল,,, নানানান্নান নান্না ন্নন্নন্নন্না আমি নিজেই নিজের প্লেনে পানি ঢালছি। আহা আহা আহা হা হা হা বলে হু হু করে মুখ দিয়ে শব্দ করল কান্না করার মতো করে। তারপর আবার হেসে উঠল।
আরশ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এর কি হয়েছে? এরকম করছে কেন? আর এসব কি গান গাচ্ছে। কোনো মানুষের গলায় সুর এতো বেসুরা হয়। আরশের ভিতর থেকে কেউ বলল, হয়তো তোর সামনে যেটা বসে আছে এর হয়।
আরশের মনে হলো আজ আর ঝগড়া করবে না। কীভাবে জিম মেরে বসে আছে? রুমে গিয়ে ঘুমানোই উত্তম। চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো। নুসরাত বসে রইল নিজ জায়গায়। ও ডিপ্রেশনে এখানে বসে ডিপ্রেশন দিবস পালন করবে আজ। পরে রুমে যাবে! আরশ একবার তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। আফসোস রইলো আজ জ্বালাতে পারলো না বলে মেয়েটাকে।
পরের দিন সকাল বেলা,
ইসরাতের যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন রাতের কথা ধীরে ধীরে মনে হতে লাগলো। ইসরাতের মনে পরলো জায়িন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল বিয়েতে রাজি কি না? সে স্বীকার উক্তি হ্যাঁ দিয়েছিল। বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাদের? ঘুমের কারণে জিনিস গুলো আধো আধো মনে আছে। ইমাম সাহেব তাকে কবুল বলার কথা বলতেই ইসরাত সেকেন্ডের সাথে কবুল বলে দিয়েছিল। একটু কান্না -কাটি করেনি। হায় আল্লাহ এ কি করলো? সত্যি বিয়ে হয়ে গিয়েছে নাকি নিজে স্বপ্ন দেখছে। চিমটি কাটলো না সব ঠিক আছে! পাশে তাকিয়ে দেখল নুসরাত ঘুমিয়ে আছে। ইসরাত ধাক্কা দিল নুসরাত নড়েচড়ে ঘুমিয়ে গেল।
“এই উঠ কাল রাতে কি হয়েছে এ-টু জেড বল!
নুসরাত ঘুমের কারণে কথা বলতে পারলো না। রাত তিনটার সময় এসে ঘুমিয়েছে। ও প্রচুর ডিপ্রেশনে! কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। ইসরাত মাংস ধরে হাতের বাহুতে চিমটি কাটল। নুসরাত চোখ বুঝে থেকেই থাপ্পড় মারলো ইসরাতকে।
” জ্বালাস নাতো ঘুমাতে দে, সর এখান থেকে।
ইসরাত ঘাড়ত্যাড়ার মতো পড়ে রইল। আবার জিজ্ঞেস করল “আগে বল কি হয়েছে কাল রাতে? আমি কি কিছু ভুল ভাবছি, না কি এটা সত্যি?
নুসরাতের ইচ্ছে করল ইসরাতকে মাথায় তুলে আছাড় মারতে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” কাল রাতে তোর আর তোর জামাইয়ের বাসর হয়েছে। তারপর একটা বাচ্চা তোর জামাই পয়দা করছে। হয়েছে, খুশি এবার যা এখান থেকে বাল। জ্বালাস না তো!
ইসরাত নাছোরবান্দা। সে নড়লো না! আবার ধাক্কা দিল নুসরাতকে। নুসরাত এবার চিক্কুর দিয়ে ভয়ংকর গালি দিল। ইসরাত গায়ে মাখলো না। কিছু জানতে হলে কিছু সইতে হবে। এটা কোন বিষয় না!
“প্লিজ বল কি হয়েছে? আমি মরে যাবো বোন। চিন্তায় আমার মাথা ফাটছে!
নুসরাত উঠে বসলো। ইসরাতের মাথার আশ পাশ তাকিয়ে বলল,” কই ফাটছে? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।
“হেয়ালি না করে বল, কি হয়েছে?
নুসরাত সব খুলে বলল। ইসরাত প্রচুর সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে তাকালো। তারপর হু হু করে কান্না শুরু করলো। বালিশের মধ্যে মাথা দিয়ে বারি দিল।
” আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আর আমি কি সুন্দর রাজি হয়ে গেলাম? এই তুই কোথায় ছিলি ওই সময়? তুই না আমার থেকে নগদ পাঁচশত টাকা নিলি বিয়ে ভাঙার জন্য। বিয়ে ভাঙলি না কেন? কি করছিলি ওই সময়?
ইসরাত রাগে নুসরাতের চুল চেপে ধরলো। নুসরাত ও চুল চেপে ধরলো।
“তুই কেন হ্যাঁ বললি! তোকে জিজ্ঞেস করেছিল তুই না করলি না কেন? মা-বাবার ভদ্র সন্তান আপনি হ্যাঁ বলেছেন কেন? আমি কি বলেছিলাম হ্যাঁ বলার জন্য?
” তুই কেন থামালি না আমাকে? তুই থামালে তো বিয়েটা হতো না। টাকা নিয়ে এভাবে বাটপারি করিস? তোকে আমি কি করবো নুসরাত?
“টাকা দিয়েছিস তুই আমাকে? কখন? কোন সময়? এক্সাক্ট টাইমটা বল। আমি কি কোন দায় নিয়ে রাখছি তোর বিয়ে ভাঙার জন্য। খুব ভালো হয়েছে ছ্যাঁকা খোরের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে। তোর জামাই ছ্যাঁকা খোর। চ্যাহ চ্যাহ,,
তারপর কি দুই বোনের মধ্যে ঠাস ঠুস করে ফাইট হলো। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই! একজন লাত্তি মারে তো আরেকজন কিল মারে। একজন কিল মারে তো আরেকজন খামচি মারে।
সচারাচর মারামারি সৈয়দ বাড়িতে কেউ করে না আরিশা আর আহান ছাড়া। নুসরাতের রুমের পাশে জায়িনের রুম আর জায়িনের রুমের সামনের রুম আরশের মারামারির শব্দ শুনে আরশ দৌড়ে আসলো। নক ছাড়া দরজা খুলতেই নুসরাত আর ইসরাতকে দেখলো বসে আছে। আরশ ভ্রু কুঁচকে তাকাল। দু-জনের চুলের অবস্থা ব্যাঘাতিক। ইসরাত ফর্সা হওয়ায় মুখ কিছুটা লাল হয়ে আছে। আরশ বোঝলো মুখে মার পড়েছে। সচারাচর দেখা যায় নুসরাতের হাতে মার খেয়ে ইসরাতকে কান্না করতে। তারপর কি? নাজমিন বেগমকে বিচার দে ইসরাত! নাজমিন বেগম এসে নুসরাতের গালে ঠুস ঠুস করে থাপ্পড় দেন। তারপর ও এ শোধরাচ্ছে না।
” কি করছ দু-জন? এই সকাল বেলা তোমাদের রুম থেকে ঠুস-ঠাস শব্দ আসছে কেন? আর কোনো ভদ্র ঘরের মেয়েরা সকালবেলা এসব করে না। তোমাদের আচরণ দিন দিন দেখছি খারাপ হচ্ছে। আর নুসরাত তুই, বড় বোন একটা মারলে ঘুরিয়ে মারতে হয় না জানো না। কেউ শেখায়নি তোকে? অভদ্র হয়ে যাচ্ছিস তুই?
“কি করেছি আমরা? আমরা তো জিম করছিলাম। তাই ঠুস-ঠাস শব্দ আসছিলো। আর আপনার কাছে কখন আমি ভদ্র ছিলাম সবদিন তো বেয়াদব, অভদ্র, অদ্ভুত আরো কত কি ছিলাম?
” তাহলে চুলের এই অবস্থা কেন? আর ইসরাত তুমি বড় ওর মতো পাগলের সাথে মারামারি করতে যাও কেন? সেই তো তুমি বেশি ব্যথা পাও। পাগলের সাথে ভালো মানুষ লাগতে যায় না। মুখে কিছু লাগিয়ে নিও! আঁচর পড়ে গিয়েছে। এসব পাগলের সাথে এক রুমে তুমি থাকো কীভাবে? আমার ভাবতেই ভয় লাগে!
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২৫
নুসরাত কিছুক্ষণ আরশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে আধখোলা দরজা পুরো খুলল। আরশের পাশে জায়গা থাকা সত্ত্বেও আরশকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আরশ নুসরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করল, “আধপাগল মেয়ে মানুষ।