প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩
জান্নাত নুসরাত
মে মাসের দুপুর বেলার কাঠফাটা রোদে শরীর পুড়ে যাওয়ার উৎপাত। বারো বছর পর বাড়ির বড় ছেলে ও তার সন্তান ফিরে আসছে। আর তা নিয়ে এই বাড়িতে চলছে রমরমা তোড়জোড়।
বাড়ির নিচ তলা থেকে নাকি কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে কখন থেকে। নুসরাত বিরক্ত। মুখের অবস্থা এমন কেউ তিতা পাতার রস মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই মুখ দিয়ে বর্তমানে বের হয়ে আসছে শুধু তিতা কথা।
“বাল এসেছেন! এভাবে কান্না করার কী আছে ভাই?এদের এই এক সমস্যা, যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশ যায় কাঁদে,আবার আসলেও কাঁদে। কী ভাই? এদের কেউ থামা! আমার মাথা ব্যথা করছে, গত আধঘন্টা যাবত এদের নাটকের কান্না শুনতে শুনতে।
বিরক্তিতে’ চ ‘বর্গীয় শব্দ বের হয়ে আসলো নুসরাতের মুখ দিয়ে। ইসরাত শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় নিজের মনের কথা গুলো কারোর সাথে প্রোপ্রালি শেয়ার করতে পারে না। অনেকক্ষণ ধরে গাইগুই করছিল কিছু বলার জন্য, কিন্তু চুপচাপ থাকার ধরুণ মুখ ফুটে কথাগুলো জিহ্বার বাহিরে বের হতে পারছিল না। নুসরাত তা লক্ষ করল। তাই তীক্ত কন্ঠে ইসরাতকে শুধায়,”কী হয়েছে, অনেকক্ষণ ধরে দেখছি মোচড়া-মুচড়ি করছিস?
” আসলে,
ইসরাত বলতে গিয়ে থেমে গেল, নুসরাতের কথার মধ্যে ফোড়ন কাটার জন্য।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“আসলে নকলে তোকে বলতে বলেছি, কী বলবি সেটা বল?
নুসরাতের তীক্ষ্ণ আওয়াজে ইসরাত চুপ হয়ে গেল। তারপর আবার নতুন উদ্যোগে বলে ওঠল,”নিচে যাবি না, বড় আব্বু আর ফুপির সাথে দেখা করতে? অনেকক্ষণ হলো তো এসেছে!
নুসরাত চোখ রাঙাল। এর মানে সোজা কথায় না করে দিল। ইসরাত চোখ মুখ করুন করে তাকাল। শান্ত কন্ঠে নুসরাতকে জিজ্ঞেস করল, “আমি তোর বড় না তুই আমার বড়?
নুসরাত গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
” অবিয়াসলি তুই বড়! তুই কী জানিস না এটা? আজব প্রশ্ন করিস। ভুলে গেছিস না-কী?
ইসরাত নুসরাতের কথায় চোখের মণি ছোটো ছোটো করে তীক্ষ্ণ কন্ঠে ঝটপট জিজ্ঞেস করল,”তাহলে আমাকে চোখ রাঙাস কেন?
বোনকে রেগে যেতে দেখে নুসরাত নড়েচড়ে বসল। সোজা হয়ে বসতে বসতে বললে,”আচ্ছা রাগ করিস না, শোন একটা কথা বলি!
ইসরাত প্রশ্নাতীত কন্ঠে শুধায়,
“কী?
নুসরাত বড় ছোট এর টপিক কেটে দিল। অন্য টপিক নিয়ে কথা বলা শুরু করল ইসরাতের।
“তুই এদের থেকে দূরে থাকবি। এরা একেকটা বিষধর সাপ। সুযোগ পেলে ছোঁবল দিতে দেরি করবে নাহ। বিশেষ করে বড় ফুপির থেকে।
ইসরাত কিছু বলতে নিলে নুসরাত থামিয়ে দিল ইশারা করে। নিজের কন্ঠের শক্ততা বজায় রেখে বলে ওঠল,”আগে শেষ করতে দে, তারপর তোর বক্তব্য দিবি।
ইসরাত মাথা নাড়াল উপর নিচ। নুসরাত ফিকে হয়ে যাওয়া অবিচল কন্ঠে বলে ওঠে,”আর বিলেত ফিরত ওই কালো সাদা বিলাইদের থেকে দূরে থাকবি। আর বড় আব্বুর থেকেও! ওই বেডার সাথে কথা বলবি না! এতবছর খোঁজ নিল না এখন আসছেন ভালোবাসা দেখাতে। দেখবি এখন ভালোবাসা ভাতের ফেনার ন্যায় উতলে পড়বে। এদের আশেপাশে যেতে তোকে যেন না দেখি। দূরে থাকবি! বড় আব্বুকে আমার মোটেও পছন্দ না।
ইসরাত অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“ওরা আবার কী করেছে তোর সাথে?
“তুই বুঝবি না? ওদের আশেপাশে যাবি না। তুই এতো সুন্দরী, তোর নজর লেগে যাবে।
নুসরাতের কথায় ইসরাত লজ্জা পেয়ে বলে,
“যা কী সব বলিস?
কথা শেষ করে হালকা হাতে নুসরাতের পিঠে থাপ্পড় মারল।
“এসিটা অন কর!
“নাহ।
” তাহলে ফ্যানটা চালা!
“নাহ বিল ওঠে যাবে।
” তুই তো আর বিল দিবি না, আব্বু দিবে ।
“আহা,বুঝিস না কেন? সঞ্চয় করছি এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য!
” তুই এতো অলস কেন? বলে দেয় এখান থেকে উঠতে পারবি না। আর আব্বুর টাকা সঞ্চয় করে কি হবে? আমরা ছাড়া কে খাবে?
“জানিস তাহলে বলিস কেন কাজের জন্য? আব্বার টাকা আমি খাব, হয়েছে? এখন চুপ।
অন্যদিকে,
সকলের সাথে কুশল বিনিময় শেষে, নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল সৈয়দ বাড়ির লোকেরা। হেলাল সাহেব অনিকা আর আরিশা কে ডেকে নিজের পাশে বসালেন। হালকা হেসে বললেন,” মায়েরা আমার কেমন আছো?
“আলহামদুলিল্লাহ বড় আব্বু। আপনি কেমন আছেন?
” আলহামদুলিল্লাহ।
“পড়াশোনা কতদূর?
অনিকা বলল,
“আমি এবার এইচএসসি দিয়েছি আর আরিশা এস এস সি ক্যান্ডিডেট।
“ভালো! ভালো করে পড়াশোনা করো। রিজাল্ট ভালো হলে তোমাদের উপহার দেওয়া হবে।
অনিকা বলল,
“সেটা বুঝলাম কিন্তু ফ্রান্স থেকে আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসেন নি?
হেলাল সাহেব অধর মেলে হাসলেন।
“এনেছি মা এনেছি! তোমাদের জন্য না এনে আমি থাকতে পারি।
খুশিতে হৈ হৈ করে উঠলো অনিকা আর আরিশা।
” ইসরাত, নুসরাত কোথায়? আসছি পর্যন্ত দেখতে পেলাম না।
অনিকা বলল,
“আপুরা রুমে বড় আব্বু।
” ওহ।
তাদের কথার সমাপ্তি ঘটলো গম্ভীর, রাশভারী গলার আওয়াজে,
“আব্বু আমার রুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হতো।
হেলাল সাহেব বললেন,
“এই জায়িনকে কেউ তার রুম দেখিয়ে দাও?
লুৎফা বেগম ছুটে এসে বললেন,
“হ্যাঁ বাবা চলো! আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে তোমার রুমে।
দু-তলার ডান পাশের প্রথম বেড রুম পাড়ি দেওয়ার সময় রিনরিনে মেয়েলি গলা শোনা গেল,” নিচে যাবি না! বড় আব্বু আর ফুপির সাথে দেখা করতে।
ফর্মাল শার্টও প্যান্ট পরিহিত সুঠাম দেহের এক পুরুষ উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে।শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় বলল,”আপনারা কথা বলুন আমি রুমে যাচ্ছি। আরিশা প্লিজ আমাকে আমার রুমটা দেখিয়ে দাও!
“জ্বি, ভাইয়া চলুন!
দু-তলায় গিয়ে শুনতে পেল আরশ কর্কশ গলায় কেউ কাউকে শাসাচ্ছে,” বিলেত ফিরত কালো সাদা বিলাইদের থেকে দূরে থাকবি।
”আরিশা!
নিজের রুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল আরশ।
আরিশা শুনতে পাইনি তাই আরশ আবারো ডেকে ওঠল,
“আরিশা।
“জ্বি ভাইয়া।
হাঁটতে হাঁটতে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
“এই রুমে কে থাকে?
আরিশা মৃদু স্বরে বলল,
“জ্বি বড় আপু আর মেজ আপু।
আরশ আবারো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল,
“একটু আগে কার গলার স্বর শোনা গিয়েছিল?
“মেজ আপুর ভাইয়া।
” ওহ! ওকে বলে দিবে আস্তে আস্তে কথা বলতে। মেয়েরা এত জোরে কথা বলে না। আমার পছন্দ না, মেয়েদের গলার আওয়াজ নিজ রুমের বাহিরে যাওয়া।
“জ্বি ভাইয়া।
আরশ নিজের রুমে ঢুকে বলে ওঠল,
“এবার তুমি যেতে পারো।
আরিশা বের হয়ে গেলে আরশ রুমের দরজা লাগিয়ে দিল।বন্ধ করে রাখা শ্বাস নিল এতক্ষণে। অতঃপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেল।
দুপুর ৩:০০
রুমের দরজা নক পড়ল। ইসরাত দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত ব্যক্তি দরজার দাঁড়িয়ে আছে।
“কে আপনি?
ইসরাতের কাছে মুখের ডিজাইন টা চিনা পরিচিত মনে হলো।
” আরে আমাকে চিনতে পারছো না, আমি জায়ান তোমাদের কাজিন।
চঞ্চল চিত্তে বলে উঠলো সেদ বর্ণের ছেলেটা।
“ওহ জায়ান ভাইয়া,আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন?
” ওয়ালাইকুম আসসালাম! আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
“তুমি কেমন আছো?
” জ্বি ভালো।
“তোমার নামটা জানতে পারি? আসলে চিনতে পারছি না।অনেক দিন পর, না নাহ,কয়েক বছর পর দেখা।
”আমি ইসরাত। ভাইয়া আসুন ভিতরে আসুন।
জায়ান রুমের ভিতর প্রবেশ করে দেখলো,বেশ পরিপাটি করে রাখা। বিছানায় বসতে গিয়ে চোখ পড়ল মেঝেতে, সেখান থেকে চুল দ্বারা আবদ্ধ একটি মাথা বের হয়ে আসলো।
মেয়েটি মুখ থেকে চুল সরাতে সরাতে বলল,
” কোন বা*ল এসেছে এই অসময় আমাদের রুমে?
ইসরাত বলল,
“নুসরাত গালাগাল করতে না করেছি, তারপর ও তুই গালাগাল করছিস। মানুষ চোখে লাগে না তোর?
চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে নুসরাত শুধায়,
” কোথায় মানুষ?
জায়ানকে হঠাৎ করে খেয়াল করল সে। জায়ানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে জানতে চাইল,”এ আবার কে?
ইসরাত বলল,
“ও জায়ান ভাইয়া , আমাদের কাজিন।
” জায়ান এ আবার কে? কখনো তো নাম শুনিনি।আচ্ছা যাই হোক, কেমন আছেন? আমি জানি,আপনি ভালো আছেন। কষ্ট করে আর বলতে হবে না। ভালো আছেন বলে এখানে আসতে পেরেছেন।
“তুমি তো দেখি আমার তুলনায় বেশি কথা বলো। এতদিন জানতাম শুধু আমিই বেশি কথা বলি, এখন দেখি তুমিও।তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
নুসরাত মুখের উপর বলে ওঠল,
“আপনার কথা শেষ হলে আপনি আসতে পারেন।
” কি?নাক মুখ কুঁচকে জায়ান বলল।
“বলছি এবার নিজের রুমে যান। আর কতক্ষণ আমাদের রুমে থাকবেন। জায়ান এক দৃষ্টি তাকিয়ে থাকল শ্যাম বর্ণের মেয়েটির দিকে।
ইসরাত বিরক্তি নিয়ে শুধাল,
“নুসরাত এটা কি ধরনের অসভ্যতামি?
জআয়ান ইসরাতকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আচ্ছা তাহলে আসি ইসরাত।
নুসরাত বলল,’
” হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন।
জায়ান চলে গেল। এর মধ্যে নাজমিন এসে বলে গেলেন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। নুসরাত এমনভাবে বসে থাকলো যেন আজ বোম মারলেও এখান থেকে উঠবে না।আরো দশ মিনিট পর নিচ থেকে আবার ডাক এলো খাবার খাওয়ার জন্য। ইসরাত নুসরাতকে টেনে নিয়ে যেতে নিলে, নুসরাত বলল,”আরে বোন দাঁড়া, ওড়না তো নিতে দে!
রুমের ভিতর এসে ওড়না ভালোভাবে মাথায় পেঁচিয়ে নিচে নামলো নুসরাত। ধীরে ধীরে হেঁটে অগ্রসর হলো যেখানে দলবদ্ধ হয়ে বসে আছেন হেলাল সাহেব, লিপি বেগম, আর মেহেরুন নেছা।
ইসরাত চোখ নিচের দিকে নামিয়ে সালাম দিল,
“আসসালামু আলাইকুম বড় আব্বু,বড় আম্মু। ভালো আছেন আপনারা?
” ওয়ালাইকুমুস সালাম! আলহামদুলিল্লাহ মা। তুই কেমন আছিস?
“জ্বি আমি ভালো আছি।
ইসরাতের পিছন থেকে নুসরাত বের হয়ে আসলো।
সালাম দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। হেলাল সালামের উত্তর দিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেহেরুন নেছার দিকে তাকিয়ে বললেন,” ইসরাত কোনটা আর নুসরাত কোনটা? অনেক বছর পর দেখা,আর ভিডিও কল দিলে তো ওরা কখনো কথা বলত না।
মেহেরুন নেছা বললেন,
“তুই ‘ক’কোনটা বড়?
নুসরাতের দিকে আঙুল দ্বারা ইশারা করে বললেন,
” ওইটা নাছিরের বড় মেয়ে,আর ইসরাতের দিকে ইশারা করে বললেন, “ও ছোট মেয়ে।
” দূর, ওইডা ছোড মাইয়া,আর ইসরাত কে দেখিয়ে বললেন, “ওইডা বড় মাইয়া।
“নুসরাত কে দেখে মনে করেছিলাম ও ইসরাত,ইসরাতের তুলনায় তো ও লম্বা তাই আর কি! জায়িন আর আরশের সাথে দেখা করেছ?
ইসরাত উত্তর করল,
“জ্বি না।
মেহেরুন নেছা তাদের কথার মধ্যে বললেন,
” সবাই দেখে ভাইবা লয় বড়ডারে ছোড আর ছোডডারে বড়।
নাজমিন খাবার দিতে এসে দেখলেন,নুসরাত ব্যগি জিন্স, সাথে ক্রপ টপ, চুল গুলো কোনো ভাবে খোপা করে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিচে চলে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে ছয় -সাত মাস ধরে খাবার পায়নি।
নাজমিন বেগম নুসরাতকে সতর্ক বার্তা দিয়ে বললেন,
“তোর পিঠে অনেক মার পড়বে নুসরাত। এসব কি পড়েছিস? তুই গোসল ও করিসনি! ফকিন্নির মতো চেহারা নিয়ে মানুষের সামনে আসলি কীভাবে? তোর যদি এই ব্যাটাছেলে মার্কা কাপড় আমি না জ্বালাই তাহলে আমার নাম বদলে দিস।
নাজমিন বেগম চিবিয়ে চিবিয়ে নুসরাতের কানে-কানে বলে চলে গেলেন কিচেনে। সাথে ইসরাতকে ও চোখ দেখাতে ভুললেন না। এরমানে তোর ও হচ্ছে!
ইসরাত জিজ্ঞেস করলো,
ভাইয়ারা কোথায়?
হেলাল সাহেব বললেন,
“ওরা একটু একটু খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে রেস্ট করার জন্য।
“ওহ।
নুসরাত কে দেখিয়ে বললেন লিপি বেগম,
“ও মনে হয় কম কথা বলে।
মেহেরুন নেছা বললেন,
” হ বৌমা হ, ও কম কথাই বলে।দেইখা লও কেমনে চুপ মাইরা আছে ব্যাটাছেলে ?
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
“আচ্ছা আমি আসছি,আমার কিছু কাজ আছে। আপনারা ইসরাতের সাথে কথা বলেন।
শার্টের বোতাম লাগিয়ে নিচের দিকে নামছিল আরশ আর উপরের দিকে উঠছিল নুসরাত। চুলের খোপা খুলে যাওয়ার জন্য চুলে বান করছিল,মাঝ সিড়িতে আরশের বাহুর সাথে হালকা সংঘর্ষ হয় নুসরাতের। নুসরাত সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে রুমের দিকে চলে যায়।আরশ পিছনে ফিরে তাকাল কার সাথে সংঘর্ষ লেগেছে দেখার জন্য। লম্বা ফিনফিনে শরীরের একটা মেয়ে অতি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে দেখল। আরশের কাছে মনে হলো মেয়েটার কাছে ধাক্কা লাগাটা নিতান্তই স্বাভাবিক বিষয়। বিড়বিড় করে আওড়াল, “একবার স্যরি বলার প্রয়োজন বোধ মনে করলো না। বেয়াদব মেয়ে।
নিচে নেমে ইসরাতের সাথে দেখা হলো। কুশল বিনিময় শেষে বলল,” মাম্মা আমি মাহাদির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি ফিরতে লেট হবে।
কথা শেষ করেই বাড়ির বাহিরে চলে গেল আরশ।
শুভ জিজ্ঞেস করল,
“কি গো শালিকাগণ? কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?
নুসরাত বলল,
“রুমে ছিলাম দুলাভাই। আপনারা কখন এলেন?
শুভ বলল,
ওই তো সবার সাথে। ইসরাত তো নিচে ছিল,বলেনি তোমায়?
নুসরাত কথা কাটাতে বলে ওঠল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছিল ভুলে গিয়েছিলাম! চলুন দুলাভাই
বাহির থেকে হেঁটে আসি।
শুভ বলল,
“চলো শালিকাগণ।
বাগানে গিয়ে সাজিদা আর মমোর সাথে দেখা হলো নুসরাত আর ইসরাতের। মমো খেলা করছিল শুভ্র এর সাথে। সাজিদা তাদের পাশে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিল। সাজিদা আর মমোর সাথে কুশল বিনিময় করার পর নুসরাত ইসরাত শুভ্রের সাথে খেলা করতে লাগলো।
শুভ্র এর সাথে খেলা করতে করতে নুসরাত শুধাল,
“কিরে মমো দেখা হয়েছে বিদেশিদের সাথে?
মমো বলল,
হুম দেখা করেছি। তুই দেখা করেছিস?
নুসরাত বলল,
” নাহ এখনো করিনি রাতে এমনিতেই দেখা হবে।
”জানিস,জায়িন ভাইয়া আর জায়ান ভাইয়া দেখতে একইরকম।
“এই গাধি ওরা জমজ, এজন্য একরকম দেখতে ।
নুসরাত কথা শেষ করেই মমোর মাথায় গাট্টি মারল।মাথায় হাত বুলিয়ে মমো বলল,”উফ, মারস কেন?
নুসরাত বলল,
বলদের মতো কথা বললে মার খাবি।
আকস্মিক বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু হলো। সাজিদা আকাশের পানে চেয়ে বিরক্তির সহিত বলে ওঠল,” গরমের দিনে এসব কি হয়? সকালে রোদ, তো বিকেলে বৃষ্টি।
এরমধ্যেই জোড়ালো বাতাস শুরু হলো। বাতাসের সাথে কিছুটা বৃষ্টির বেগ ও বাড়ল। সাজিদা ওর ছেলেকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। মমো আর শুভ ও কথা বলতে বলতে ভিতরে চলে গেল।
নুসরাত চিৎকার করে বলল,
“ইসরাত আমার জুতোগুলো নিয়ে বাসার ভিতরে যা। আমি বাড়ির পিছনের দিকে যাচ্ছি।
ইসরাত শুধাল,
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ২
“এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস তুই?
“আসছি আসছি বাগানে একটু কাজ আছে।
বলতে বলতে নুসরাত হাওয়া হয়ে গেল।
এর মধ্যেই মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। ইসরাত দৌড়ে বাড়ির ভিতর যেতে গিয়ে থেমে গেল। কারণ পিছন থেকে কেউ তার হাত চেপে ধরেছে। ধীরে ধীরে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে তার হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইসরাত। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এমন সময় গমগমে পুরুষালি গলার স্বরে পুরুষটি জিজ্ঞেস করলো,
” বৃষ্টিতে ভিজচ্ছ কেন?