প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩০ (২)
জান্নাত নুসরাত
রাত একটার দিকে মাহাদি আসলো সৈয়দ বাড়িতে। আরশ কোমরে দু-হাত রেখে তাকিয়ে রইলো মাহাদির দিকে।
“না আসলে হতো, এতো কষ্ট করে এখানে আসার কি প্রয়োজন ছিল এতো তাড়াতাড়ি?
” আরে ভাই রাগ করছিস কেন? আমি তাড়াতাড়ি আসতে চাইছিলাম কিন্তু, আমার বাপ আটকে দিয়েছিল।
আরশ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো। মাহাদি আরশের রাগ ভাঙানোর জন্য জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় আরশ ব্যালেন্স হারিয়ে মাঝেতে পড়ে গেল সাথে করে মাহাদিকে নিয়ে পড়ল।
নুসরাত আর মমো ছাদ থেকে দু-তলায় ফিরছিল কারণ নাজমিন বেগম নুসরাতকে ডেকে পাঠিয়েছেন। হঠাৎ আরশকে আর মাহাদিকে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো মমো আর নুসরাত।
মমো কানে কানে বলল,
“বইন এরা এভাবে জড়াজড়ি করছে কেন? আরা গে নাকি?
” দূর কী সব বলিস? মাইন্ড ঠিক কর।
“আমার মাইন্ড ঠিক আছে। দেখ কীভাবে জড়াজড়ি করে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে ওইসব! ইয়াক, ভাবতেই আমার বমি আসছে। ছি্হ এরা কীভাবে জড়িয়ে ধরে পড়ে আছে দেখতেই তো ঘিন্না লাগছে।
নুসরাত জহুরে চোখে তাকালো আরশের দিকে। আরশ নুসরাত আর মমোকে তাদের দিকে এমনভাবে তাকাতে দেখে মেঝে থেকে উঠে বসলো। নুসরাত চোখ তীক্ষ্ণ করে আরশের উপর থেকে নিচে তাকালো।
আরশ আমতা আমতা করে বলল,
” কি? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? যেন কাপড়ের উপর থেকে সব স্ক্যান করে ফেলছিস।
নুসরাত উত্তর দিল না। মমোর কানে কানে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“এই আরশ যদি ওইসব হয় তাহলে একে বিয়ে করবে কে?
” তুই করে নিবি।
“যা বাল এখান থেকে। কী সব বলিস?
” তুই তো বিয়ে করতে চাস আরশ ভাইয়াকে। ভাইয়া ওইসব হলে কি হবে? তোর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
“দূর কী সব বলছিস? এরা ওইসব হলে কবেই বড় আব্বু লাত্তি মেরে বাসা থেকে বের করে দিত। এটা আমাদের অতিরিক্ত চিন্তার ফল! বুঝেছিস গাঁধি!
আরশ নুসরাত আর মমোকে তাদের দিকে তাকিয়ে বমি করার অঙ্গ বঙ্গি করতে দেখে বলল,” উল্টাপাল্টা চিন্তা করবি না নুসরাত। আমি নিশ্চিত তুই নিশ্চই কোন উল্টাপাল্টা চিন্তা করছিস। সাথে মমোকে ও মিশিয়েছিস।
“না আরশ ভাইয়া উল্টাপাল্টা কিছুই চিন্তা করছি না। আমি আর মমো শুধু ভাবছিলাম আপনি আর মাহাদি ভাইয়া ওইসব নাকি? এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবিনি। ভাইয়া অল ইজ ওকে।
” আমাদের নিয়ে এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা তোর মাথায় আসে কীভাবে? ছি্হ ছি্হ ছি্হ তুই আমাকে আর মাহাদিকে ওইসব বানিয়ে দিলি। তুই তো বোন নামের কলঙ্ক।
মমো বলল,
“আপনারা এভাবে জড়াজড়ি করছেন যে কেউ দেখলে বলবে আপনারা ওইসব। আমার ভাবতেই বমি আসছে। ওয়াক্ থু থু…।
” তোদের এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করতে কে বলেছে? আর পরে থু থু করতে কে বলেছে?
নুসরাত মমোকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
” হইছে আর থু থু করতে হবে না। আম্মা নিচে যাওয়ার জন্য বলছে চল!
নুসরাত আর মমো নিচ তলায় গেল। মেহেদি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর এসে ইসরাত শুয়ে পড়েছে। তার ক্লান্তি লাগছে অনেক। নাজমিন বেগম বলেছেন আগামীকাল অনেক ধকল যাবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার জন্য।
আরিশা আর অনিকা কিছুক্ষণ আগে খাবার খেয়ে শুতে গিয়েছে। মেহেদি অনুষ্ঠান শেষে খাবার যেগুলো ছাদ থেকে ফিরে আসছে নাজমিন বেগম সেগুলো ফ্রিজে তুলে রাখছেন।
আহান বসে বসে মোবাইলে কার্টুন দেখছিল আর চিপস্ খাচ্ছিল মমো গিয়ে তার পাশে বসলো। শুভ্র কান্না করার জন্য সাজিদা শুভ্রকে এনে মমোর কোলে দিল।
“কিছুক্ষণ শুভ্রকে রাখ! আমার মাথা ব্যথা করছে। একে তার মধ্যে আম্মু কল দিয়ে বলেছে বাসায় যাওয়ার জন্য। আম্মু নাকি কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। শুভ কাপড় গোছাচ্ছে আমি একটা ন্যাপ নিয়ে নেই ততক্ষণে। তুই রাখ শুভ্রকে।
” আপু ওখানে তো খালামণি আছে।
“খালামণি আর আম্মা মিলে সামলাতে পারছে না।
” আচ্ছা যাও আমি রাখছি শুভ্রকে।
সাজিদা শুভ্রকে দিয়ে ন্যাপ নিতে চলে গেল। আরশ আর মাহাদি এসে সোফায় বসলো। মমো আহানের সাথে কার্টুন দেখলো আর আহানের চিপসে্র প্যাকেট থেকে চিপস্ বের করে নিজের মুখে পুরলো।
মমো একটা একটা করে আহানের সব চিপস্ খেয়ে নিল। আহান প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে যখন চিপস্ খুঁজে পেল না তখন কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে মমোর দিকে তাকালো। আহান চিপসে্র প্যাকেট মমোকে দেখিয়ে উল্টিয়ে ঝাড়লো।
“আমার চিপস্ কই?
” আমি কি জানি, সব শুভ্র খেয়ে নিয়েছে।
শুভ্র কিছু না বুঝে মমোর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকলো।হাত তুলে মমোর গালে থাপ্পড় মেরে বলল,”আম না।
” আহান বিশ্বাস হলো তো আমি সত্যি বলছি। দেখ সত্যি বলায় শুভ্র আমাকে থাপ্পড় মেরেছে।
মাহাদি পিছন থেকে বলল,
” মিথ্যা কথা বলছ কেন? আমি দেখলাম তুমি ওর সব চিপস্ খেয়েছ।
মমো রাগী চোখে তাকালো মাহাদির দিকে। জায়ান চিপস্ নিয়ে ঝগড়া করতে দেখে কয়েক প্যাকেট চিপস্ এনে দিয়ে বলল,”হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। এইগুলো ভাগ করে খাও আর মাহাদির সাথে শেয়ার করো!
” আমি চিপস্, চকলেট, আর কোক বাহিরের মানুষের সাথে শেয়ার করিনা।
“তাহলে আহানকে দিচ্ছিস কেন?
” কারণ ও আমার কিউট মিষ্টি একটা ভাই।
নুসরাত পিছন থেকে চিৎকার করে বলল,
“বাহ, এদের চিপস্ খাওয়ানো হচ্ছে আর এদিকে আমি কাজ করতে করতে কোমর বাঁকা হয়ে যাচ্ছে তা কারোর চোখে লাগছে না। কেউ এসে আমার কাজে সাহায্য করছে না। ওরা বোন আমি তোমাদের বোন না।
আরশ পিছন থেকে এসে বলল,
” কি কাজ করছিস তুই?
“ঘর ঝাড়ু দিচ্ছি, দেখতে পাচ্ছেন না।
” হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি তোর মতো অকর্মার ঢেকি ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে। আর পুরো এলাকার মানুষকে জানাচ্ছে সে কাজ করছে।
“আমি তো কাজ করছি আপনি কি করছেন?
” আমি যা করি তা তোর জামাইয়ে চৌদ্দগুষ্টি জীবনে করতে পারবে না।
“আচ্ছা একটা প্রমাণ দেখালে বুঝতে পারবো, যে আপনি যেসব কাজ করেন তা আমার জামাইয়ের চৌদ্দ গুষ্টি জীবনে ও করতে পারবে না।
” কি কাজ? বল তুড়ি মেরে করে দিব। তুই আমাকে কি মনে করিস?
“বেশি কিছু না। জাস্ট ডায়নিং রুম, ড্রয়িং রুম আর কিচেন ঝাড়ু দিয়ে দিলেই হবে।
আরশ ভাবসাব নিয়ে নুসরাতের হাত থেকে ঝাড়ু নিয়ে কাজ করতে গেল। সে দেখিয়ে দিবে এসব তার জন্য কোনো বিষয় না। তার বাঁ-হাতের খেল এসব কাজ। নুসরাত মুচকি মুচকি হাসল। আরশ ডায়নিং রুম ঝাড়ু দিতে যেতেই নুসরাত লাফ দিয়ে সোফার উপর উঠে বসলো। চিপসে্র প্যাকেট খুলে মুখে চিপস্ টপটপ করে ঢুকালো।
মাহাদি বলল,
” তুমি আরশকে ফাঁসিয়ে কাজ করাচ্ছ তাই না।
“জি ভাইয়া! পাগলকে যদি পাগল না বললে পাগল খুশি হয় তাহলে পাগলকে পাগল না বলাই ভালো। দেখুন কীভাবে কাজ করিয়ে নিচ্ছি? ভালো মুখে বললে জীবনে করে দিতো কি? উঁহু না!
রুহিনি আহানের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিলেন। বললেন অনেক কার্টুন দেখেছ আজকের জন্য এনাফ। অনেক রাত হয়েছে তাড়া দিলেন সবাইকে ঘুমানোর জন্য। মাহাদি বাসায় ফিরে যেতে চাইলে রুহিনি আটকে দিলেন। আজ এখানে থাকার জন্য বললেন। আগামীকাল নাস্তা করে তারপর যাবে। মাহাদি না করলো না। আজ দু-জন একসাথে থাকার সুযোগ পেয়েছে তাই লুফে নিল। মাহাদি ঘুমানোর জন্য আরশের সাথে তার রুমে চলে গেল।
বাড়ির ভিতরের আলো ধীরে ধীরে সব নিবিয়ে দেওয়া হলো। অন্ধকার গ্রাস করে নিল দু-তলা বিশিষ্ট বাড়িকে। অন্ধকারের মধ্যে আগুনের স্ফুলিঙ্গের ছটা দেখা গেল। দু-আঙুলের ভিতর সিগারেট চেপে দীর্ঘশ্বাস নিল জায়িন। এই সিগারেট ও ধোঁকা দিচ্ছে। শালা স্ট্রেস রিলিফ করার জন্য এটা টান দিল এটা তো স্ট্রেস রিলিফ করবে মনে হচ্ছে আরো স্ট্রেস বাড়িয়ে দিচ্ছে। সিগারেটটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে ক্লান্ত দেহ টেনে এনে বারান্দার রকিং চেয়ারে বসলো জায়িন। চোখ বুজে শুয়ে থাকার মতো পড়প রইলো সারারাত বারান্দায়। ফজরের আজানের সময় রুমে গেল। ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করতে বসলো। নামাজ শেষে অনেক সময় নিয়ে আল্লহর কাছে দোয়া করলো জায়িন। নামাজ শেষে মনে হলো আগের তোলনায় শরীর ও মন দুটোই সতেজ হয়ে গিয়েছে।
দুপুর একটা বাজে সৈয়দ বাড়ির সবাই ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠলো। ঝর্ণা আর নাজমিন বেগম মিলে সকালের নাস্তা তৈরি করলেন। নাস্তা তৈরি করে নাজমিন বেগম ইসরাতের রুমে গেলেন। দরজায় নক করে রুমে প্রবেশ করলেন। ইসরাত দাঁত ব্রাশ করে মাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।
“তাড়াতাড়ি এসে নাস্তা করে যা। পার্লারে এপোনমেন্ট রেখেছিস কয়টা?
” চারটার সময়।
“নাস্তা করে এসে গোসল করে নিস।
” আচ্ছা আম্মু।
“নবাবজাদী কোথায়? রাতে এই রুমে ঘুমায়নি!
” এসেছিল দলবল নিয়ে এই রুমে শোয়ার জন্য সবার জায়গা না হওয়ায় ইরহামের রুমে ঘুমিয়েছে।
“ইরহাম কোথায় ঘুমিয়েছে?
” নুসরাতের রুমে।
“কিন্তু ওই রুম তো পরিস্কার করে রাখা হয়নি অনেকদিন থেকে।
” রাতে সৌরভি পুরোনো বিছানা তুলে নতুন বিছানা বিছিয়ে দিয়েছে।
নাজমিন বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। নুসরাতের উপর তিক্ত বিরক্ত হয়ে বললেন,” নুসরাত কোথায় ছিল? ও থাকতে সৌরভি কাজ করবে কেন? সৌরভি মেহমান এটা কি গাঁধিটা ভুলে গিয়েছে।
“আমি জানি কি?
” আচ্ছা নাস্তা কর গিয়ে আমি ওদের ডাক দিয়ে নিয়ে আসি।
নাজমিন বেগম ইরহামের রুমে প্রবেশ করে দেখলেন নুসরাত মমো আর সাদিয়া মাঝে শুয়েছে। মমো একপাশ থেকে নুসরাতের উপর পা তুলে শুয়ে আছে আর আরেক পাশ থেকে সাদিয়া জড়িয়ে ধরে আছে। নুসরাত ঘুমের মধ্যে হাত ঠেলে সরিয়ে দিল। শ্বাস কষ্টের রোগীদের মতো ছটফট করলো। বিড়বিড় করে বলল,”আমার শরীরে থেকে পা সরা নইলে পা ভেঙে গুড়িয়ে দিব।
“ঘুমের মধ্যে ও এই মেয়ে হুমকি দিচ্ছে।
” এইইই নুসরাত দুটো বাজে উঠ। আর কত ঘুমাবি?
“আম্মা আর পাঁচ মিনিট ঘুমাতে দাও। তারপর উঠে যাব।
” ইসরাত পার্লারে চলে যাচ্ছে তুই ঘুমিয়ে থাক।
কথাটা বলতে দেরি হলো নুসরাতের উঠতে দেরি হলো না। বিছানা থেকে এক লাফে ওয়াশরুমে গিয়ে ব্রাশ খুঁজে পেল না। ওয়াশরুম থেকে মাথা বের করে বলল,” আম্মা আমার ব্রাশ কই?
“গাঁধিরে গাঁধি এটা তোর বাথরুম! এক ঘুমে সব খেয়ে নিয়েছিস।
নুসরাত মাথা চুলকালো। বোকা হেসে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইসরাতের রুমে গেল। নাজমিন বেগম ততক্ষণে মমো আর সাদিয়াকে ডেকে তুললেন।
সকালের নাস্তা শেষ করে সবাই নিজ নিজ রুমে রেস্ট করার জন্য যাচ্ছিল। গতকাল রাতে ঘুম হয়নি বলে এখনো ক্লান্তি শরীরে রয়ে গেছে। মাহাদি নাস্তা করে বিদায় নিল। লিপি বেগম বললেন রাতে যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে নাহলে তিনি রাগ করবেন। মাহদি বলে গিয়েছে সে সময় মতো উপস্থিত হয়ে যাবে।
” বড় মামানি আমি বাসায় যাব।
“কেন? এখান থেকে হলে চলে যাবে। লুৎফা আর আশিক তো আসবে।
” এরকম কিছু না বড় মামানি। গতকাল বাসায় কোন অনুষ্ঠান না হওয়ায় এখানে এসেছিলাম। আপু তো রাতে চলে গিয়েছে আর আমি কাপড় আনিনি বিয়েতে পড়ার জন্য। তাই এখন গেলে ভালো হয়। বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে কনভেনশন হলে চলে যাব। আর আপনাদের সাথে ও দেখা হয়ে যাবে সেখানে। এখান থেকে গেলে যা ওখান থেকে গেলে ও তা।
“আচ্ছা আমি জায়ানকে বলছি তোমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
লিপি বেগম জায়ানকে ডাক দিলেন। জায়ান নিচে আসতেই থাকে বললেন মমোকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
” আসো মমো আমি গাড়ি বের করছি।
“বড় মামানি আসি তাহলে আসসালামু আলাইকুম।
” ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মমোর পিছন পিছন নুসরাত গেল। জায়ান গাড়ি বের করে বাড়ির গেটের বাহিরে বের করেছে। মমো গিয়ে বসতে যাবে নুসরাত বলল, ” পিছনে বস আমি তোকে নিয়ে যাব।
জায়িন বুঝলো না কথা। ড্রাইভিং সে করবে নুসরাত কিভাবে নিয়ে যাবে? জায়ান কিছু বলতে যাবে নুসরাত থামিয়ে দিল।
“ভাইয়া আমি জানি আপনি কি বলবেন? আপনি গাড়ি চালালে আমি কীভাবে নিয়ে যাব তাই না।
” হুম!
“আজ আমি আপনার কার চালাই ভাইয়া। প্লিজ… না করবেন না ভাইয়া। প্লিজ ছোট বোন হিসেবে আবদারটা রাখুন ভাইয়া প্লিজ!
” তুমি গাড়ি চালাতে পারো।
নুসরাত উচ্ছাসিত গলায় বলল,
“জি ভাইয়া!
” তোমার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে।
“জি না ভাইয়া। যদি ট্রাফিক পুলিশ লাইসেন্স দেখতে চায় আপনার টা দেখিয়ে দিব। ওকে…
” আচ্ছা আসো ড্রাইভিং করো। আজ প্রথমবার বলছ আর এতো রিকোয়েস্ট করছ বলে দিলাম নাহলে কোনো দিন দিতাম না।
নুসরাত গাড়িতে উঠতে যাবে ইসরাত পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো। নুসরাতকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো।
“একি তুই কেন বসলি ড্রাইভিং সিটে?
” মানুষ কেন ড্রাইভিং সিটে বসে?
“গাড়ি চালানোর জন্য।
” তাহলে জিজ্ঞেস করছিস কেন? বলদ কোথাকার?
“আমি আগে বলেছি আমি ড্রাইভিং করবো। এখন তুই উড়ে এসে জুড়ে বসলি।
” তো কি হয়েছে? তুই চালাস আমি চালাই একজন চালালেই তো হয়।
নুসরাত মুখ ফুলিয়ে ফ্রন্ট সিটের জানালায় এসে টক টক করে আওয়াজ করলো। জায়ান কাচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি
” ভাইয়া আপনি ব্যাক সিটে যান। আমি ফ্রন্ট সিটে বসবো।
“আচ্ছা আমার বোন বসে যাও। তবুও গাড়ি চালাও! বেচারির দেরি হয়ে যাচ্ছে। কখন থেকে গাড়িতে বসে আছি।
নুসরাত গাড়িতে উঠে বসলো। ইসরাত গাড়ি ধীরে ধীরে চালিয়ে বাসার মোড়ে আসলো। মেইন রুডে আস্তে আস্তে গাড়ি চালাতে দেখে নুসরাত বলল,” এই স্প্রিড দে। গাড়ি চালাচ্ছিস না টেলা গাড়ি চালাচ্ছিস। এরকম চালালে সারাজীবনে ও মমোর বাসায় পৌছাতে পারবি না।
ইসরাত নুসরাতের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।পিছিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “Attention please , take your sit belt. I will increase the speed of the car now. Be ready.
জায়ান আর মমো সিটবেল্ট লাগানোর আগেই ইসরাত গাড়ির গিয়ার পরিবর্তন করলো। রাস্তার চারিপাশ তাকিয়ে খালি দেখলো ইসরাত। রাস্তা খালি দেখে গাড়ি ঝড়ের গতিতে চালাতে লাগলো। গাড়ির গতি ৪০ থেকে ১৬০ নিয়ে গেল
” ইসরাত গাড়ির গতি কমাও। নইলে এক্সিডেন্ট হতে পারে।
নুসরাতের উচ্ছাসিত কন্ঠ সামনের সিট থেকে ভেসে আসলো।
” আরো স্প্রিড দে? মনে হচ্ছে গাড়ি না প্লেন।
মমো জোরে জোরে পড়ল,
” লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা হিল আলিয়্যিল আযীম। আল্লাহ মাফ করে দাও, আর জীবনে আপু গাড়ি চালালে আমি উঠবো না। এই শেষবার! শেষবারের মতো মাফ করে দাও।
নুসরাত বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মমোর দিকে। মমোকে ধমকে উঠলো।
“এই জান নিয়ে তুই আমাদের সাথে গাড়িতে উঠিস। তোকে তো আমার বন্ধু বলে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে। সামান্য স্প্রিডে তোর এই অবস্থা। আহলে হাই গতিতে আমি গাড়ি চালাব তুই তখন কি করবি?ইসরাত আরো স্প্রিড দে?
ইসরাত আর স্প্রিড দিল না। নুসরাতকে চুপ হয়ে বসতে বলল। নুসরাত চুপ হয়ে বসে থাকার মেয়ে না সে চিৎকার করে নিজের উচ্ছাস প্রকাশ করছে। আর ইসরাতকে গাড়ির গতি বাড়ানোর জন্য ইন্সপ্রিয়েশন দিচ্ছে।
মমোর বাসার সামনে এনে ইসরাত গাড়ি থামালো। মমো বুকে ফু দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। তার বুক এখনো কাঁপছে। ইসরাত গাড়ির কাচ নামালো।
“কেমন এনজয়মেন্ট করলি?
” আল্লাহ মাফ করুক, বেঁচে থাকলে আমি আমার সজ্ঞানে কোনো দিন যদি তুমি ড্রাইভ করো তাহলে জীবনে আমি ওই গাড়িতে উঠবো না। একটুর জন্য আমার প্রাণ পাখি ঠুস করে উড়ে যায়নি এটাই অনেক।
“তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ড্রাইভিং স্কিলের বদনাম করছিস। তোর তো খুশি হয়ে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা আমি তোকে উড়িয়ে পনেরো মিনিটে নিয়ে এসেছি।
” জি আপা অনেক ধন্যাবাদ। এবার বাসায় গিয়ে রেডি হোন। আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আজ আপনার বিয়ে।
“না না মনে আছে। ভুলে যাব কেন?
ইসরাত ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে দাঁড়াতেই নুসরাত গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। মমো পিছন থেকে কিছু বলার পূর্বেই নুসরাত ধোঁয়া উড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। জানালা খুলে মমোকে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল নুসরাত।
” টা টা ড্রালিং। রাতে দেখা হচ্ছে কনভেনশন হলে।
নুসরাত মেইন রোডে উঠেই হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। জায়ান আস্তে গাড়ি চালানোর কথা বললে ও নুসরাত গাড়ির গতি কমালো না। বলল ভাইয়া এনজয় ইট।
” নুসরাত আমার কথা শুনো। বড়সড় এক্সিডেন্ট হওয়ার আগে গাড়ির গতি কমাও। আমার ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে যাচ্ছে। এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে আস্তে গাড়ি চালাও।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩০
জায়ানের বলতে দেরি হলো নুসরাতের গাড়ি ঠুকতে দেরি হলো না। গাড়ি উল্টে গিয়ে প্লটের ভিতর পড়ল। জায়ান ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। গাড়ির সামনের কাঁচ ভাঙার সাথে লাইটগুলো ও ভেঙে গেল। নারী কন্ঠের চিকন ব্যথাতুর শব্দ ভেসে আসলো গাড়ির ভিতর থেকে।