প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩১
জান্নাত নুসরাত
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। সৈয়দ বাড়ির কর্তীরা কাজ শেষ করে গোসল করার জন্য নিজ নিজ রুমে গিয়েছেন। আরশ মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। এক হাত দিয়ে বাথরুমের দরজা আটকিয়ে অন্য হাত দিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছল। বারান্দায় গিয়ে টাওয়াল নেড়ে দিয়ে রুমে ফিরে আসলো। হাত দিয়ে ঝাকড়া চুলগুলো কপালের উপর থেকে পিছনের দিকে ঠেলে দিল।
কিং সাইজ বিছানার সাথে এট্যাচ বক্স থেকে মানিব্যাগ আর গাড়ির চাবি বের করে নিয়ে শর্ট ট্রাউজারের পকেটে পুরে নিল। রুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজার নব ঘুরিয়ে লক করলো।
জায়িনের রুমে নক করলো আরশ। আরশ ভিতরে ঢুকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জায়িনের দিকে। জায়িনের আজ বিয়ে তা তাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে না। চুল আর দাড়ি লম্বা হয়ে জঙ্গলের মতো হয়ে গিয়েছে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গিয়ে মুখের সৌন্দর্য কমে গিয়েছে। আগের তুলনায় কিছুটা শুকিয়ে গিয়েছে জায়িন।
“বিয়ের প্রিপারেশন কেমন?
” ভালো।
“চলো সেলুনে চলো। তোমার চুল, দাড়ি কেটে আসবে। আর ফেসিয়াল ও করে আসবে। মুখের অবস্থা দেখছ কি হয়েছে? মনে হচ্ছে জঙ্গল থেকে উঠে আসছ। তুমি ইসরাতের পাশে দাঁড়ালে বেচারির মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। তোমাকে জঙ্গলি লাগছে।
” আমি যাব না! ফেসিয়াল মেয়েদের জিনিস এসব আমি কেন করবো? আর আমি এমনিতেই সুন্দর এসব ছাড়া।
“তুমি যাবে না।
” না।
“আবার বলো কি বলছ?
” যাব না বলছি।
“আরেকবার জিজ্ঞেস করবো তুমি যাবে নাকি না?
” আমি শুদ্ধ বাংলা বলছি, আমি যাব না।
“শেষবার বলছি তুমি যাবে না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
” তুই মনে হয় আজ কাল বাংলা বুঝছিস না। না বুঝতে পারলে কোন সমস্যা নেই আমি ফরাসিতে বলছি, জে নে ভাইস পাস (আমি যাব না)।
আরশ নিজের গেঞ্জির হাতা কনুই থেকে একটু গুটিয়ে উপরের দিকে তুলল। গেঞ্জির হাতা গুটিয়ে নিতেই জিম করা বাহু বের হয়ে আসলো।
“বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়। তাহলে মনে হচ্ছে আঙুল বাঁকাতে হবে।
জায়িন গম্ভীর গলায় বলল,
” কি করবি তুই?
আরশ মাথা নিচু করে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। জায়িনের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বলল,”দেখতে চাও বড় ভাইয়া?
“দেখতে চাচ্ছি না। কি করবি সেটা বল?
” বেশি কিছু না জাস্ট তোমাকে কোলে তুলে নিব। তারপর গাড়ির ভিতর নিয়ে নামিয়ে দিব। আর শাহপরান সেলুনের সামনে গিয়ে কোলে তুলে তোমাকে সেলুনে নিয়ে পৌছে দিয়ে আসবো। এইটুকু, বেশি কিছু না।
জায়িন শীতল কণ্ঠে বলল,
“তুই আমাকে কোলে নিতে পারবি?
আরশ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। শান্ত চোখে জায়িনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”শি টু ভেউক্স ভইর যেতে প্রেন্দ্রাই সুর মেস গেনউক্স (তুমি যদি দেখতে চাও অবশ্যই কোলে নিব)
আরশের চোখে মুখে কিছু একটা ছিল যা দেখে জায়িন রাজি হলো। বিশ্বাস নেই এই ছেলে যা ঘাড়ত্যাড়া দেখা যাবে কথা না শুনলে কোলে করে শাহপরান সেলুনে নিয়ে যাবে, সেলুনের ভিতর নিয়ে গিয়ে কোল থেকে নামাবে।
” তুই গাড়ি বের কর আমি আসছি।
“ওকে তাড়াতাড়ি আসো।
জায়ান কোমরে ব্যথা পেয়েছে হঠাৎ করে প্লটে গাড়ি পড়ে যাওয়ার জন্য। নুসরাত হুইলের সাথে বাড়ী খেয়ে কপালের এক পাশ ছেচে গিয়েছে। জায়ান গাড়ির দিকে তাকিয়ে হায় হুতাশ করতে লাগলো। নুসরাতকে ধমকে বলল,
” বলেছিলাম আস্তে চালাও! আমার কথা শুনলে এইটা দেখতে হতো না। আমার ভালোবাসা, আমার জান, আমার গাড়ির এটা কি করলে নুসরাত? গাড়িটা বিনাষ করে দিলে?
নুসরাত গাড়ির যেখানে স্ক্রেচ পরেছে সেখানে পা দিয়ে লাথ মারলো। গাড়িতে লাথ মেরে নিজে পায়ে ব্যথা পেল। জায়ানকে আবার হায় হুতাশ করতে দেখে নুসরাত জায়ানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ধমকে উঠলো।
“ট্রিপিকাল মাইয়াগো মতো করছেন কেন? মনে হচ্ছে এক্ষুণি কান্না করে দিবেন। পুরুষ মানুষ আবার এসব ন্যাকামি করে না কি?
জায়ান চিৎকার করে বলল,
” আমার এতো কষ্ট করে কিনা গাড়ি তুমি এভাবে ভেঙে দিলে। তোমার কাছে গাড়ি দেওয়া আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল হয়েছে। গাড়ি ধীরে চালালে তো আর এক্সিডেন্ট হতো না।
নুসরাত গাড়িতে আরো একটা লাথ মারলো। জায়ানের রাগ গাড়ির উপর দেখালো। জায়ানকে তার উপর চিৎকার করতে দেখে নিজেও চিৎকার দিল।
“এটা কিসের গাড়ি? এটাকে গাড়ি বলতে আমার লজ্জা লাগছে। একে তো ঠেলাগাড়ির মতো চলে তার মধ্যে হালকা স্প্রিড দিতেই পড়ে গিয়ে লাইট ভেঙে গিয়েছে সাথে স্ক্রেচ পড়ে গিয়েছে। ঠেলাগাড়ি বললে ঠেলাগাড়ির অপমান হবে। বালের জাতের গাড়ি। গাড়ির নাম কি? এসব গাড়ি কিনার কথা কে বলে আপনাদের?
জায়ান নুসরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়িতে স্ক্রেচ ফেলে বিন্দুমাত্র লজ্জা বা অনুশোচনা হচ্ছে না! গলা ফাটিয়ে তার উপর চিৎকার করছে। আর বলছে এসব গাড়ি কে কিনছে?
“AUDI A4.
” দাম কত হবে বাংলাদেশি টাকায়?
“আমি জানি না! আরশ কিনছে?
” আচ্ছা আরশের কাছ থেকে জেনে আমাকে জানিয়ে দিবেন আমি টাকা দিয়ে দিব নাহলে এর থেকে দ্বিগুণ দামি কার আপনাকে গিফট দিব। কষ্ট পাবেন না।
“যাও গাড়িতে উঠে বসে।
” আপনি এই সামান্য গাড়িতে স্ক্রেচ আর ভাঙায় আমার উপর চিড় চিড় করছেন। আপনাদের থেকে শতগুণ ভালো আশিক। ওর গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে ও এভাবে রাগ করতো না। যেভাবে আপনি করছেন!
“আশিক কি এমন কাজ করলো যে, আমাদের তোলনায় শতগুণ ভালো আশিক।
” শুনতে চান তাহলে শুনুন, আমি আর ইসরাত গাড়ি চালানো শিখতে ইন্টারেস্ট ছিলাম তাই আশিক আমাকে আর ইসরাতকে ড্রাইভিং শিখিয়েছে। আশিকের কার কতবার ইসরাত আমাদের বাসার বাউন্ডারির সাথে ধাক্কা লাগিয়ে স্ক্রেচ ফেলেছে ও কিছুই বলেনি।
আশিক আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। আমি জোর করে গাড়ি চালানোর জন্য ওর কাছ থেকে চাবি নিয়ে নিয়েছিলাম। পাকিং থেকে বের হওয়ার সময় আশিকের গাড়ি আরেক গাড়ির সাথে লেগে কাচ ভেঙে গিয়েছিল। লোকটার গাড়িতে স্ক্রেচ পড়ে গিয়েছিল। আশিক গাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে মেনেজ করেছিল। তারপর ও আপনার মতো চিড় চিড় করেনি।হেসে কথা বলেছে আমার সাথে। আসলে আশিক গরীব হলে কি হবে ওর মন অনেক বড়? আর আপনারা ধনী হয়ে ও মন ছোট। অতএব বোঝা যায়, আপনারা ধনী হয়েও গরীব আর আশিক গরীব হয়েও ধনী। আশিকের মতো ভাই ঘরে ঘরে জন্মানো উচিত।
“আচ্ছা বোন এবার আপনার ভাষণ শেষ হলে পিছনে বসুন। বাসাতে যাবেন না! প্রায় তিনটা বাজতে চলল।
নুসরাত ব্যাকসিটে গিয়ে উঠে বসলো। বসার আগে গাড়িতে আরেকবার লাথ মারতে বুলল না। গাড়ি হঠাৎ প্লটে পরে যাওয়ায় মেরুদণ্ডের হাড্ডিতে ইসরাত ব্যথা পেয়েছে। তাই গাড়ি থেকে নামলো না। পিঠে চিনচিন ব্যথা করছে। জায়ান করুন চোখে গাড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই জায়ানের গাড়ি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। গাড়ির থামার পর ইসরাত গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতর চলে গেল। ইসরাতের সাথে হায় হ্যালো করে আরশ বাসার ভিতর থেকে আঙুলে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বের হয়ে আসলো।
জায়ান আর নুসরাত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে ঝুঁকে স্ক্রেচ দেখছিল। লাইট ভেঙে যাওয়ায় লাইটের আশে-পাশে যেসকল কাচ ঝুলে রয়েছে নুসরাত পা থেকে জুতো খুলে বারি দিয়ে ভেঙে ফেলল।
আরশ নুসরাত আর জায়ানকে গাড়ির দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে কৌতূহল বসত এদিকে আসলো। গাড়ির কাছে এসে গাড়ির এই অবস্থা দেখে আরশের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। জায়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার গাড়ির দিকে তাকালো আরশ। অতিরিক্ত শকড হয়ে আরশের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না।
নিজেকে ধাতস্থ করতে আরশের সময় লাগলো। জায়ানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে তাকলো। দাঁতের সাথে দাঁত চেপে কটমট শব্দ করলো।
” গাড়ির এই অবস্থা কে করেছে?
আরশ গাড়ির যেখানে যেখানে স্ক্রেচ পড়েছে হাত দিয়ে স্পর্শ করলো। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো গাড়ির দিকে।
নুসরাতের আরশের মুখ দেখে হাসি আসলো। নুসরাত নিজেকে ধমকালো ডোন্ট লাফ, ডোন্ট ডু দিজ নুসরাত। আই উইল কিল ইউ নুসরাত। ডোন্ট লাফ,। নিজেকে শাসিয়ে ও নুসরাতের হাসি থামলো না। হাত দিয়ে ঠোঁট থেকে মুখ পর্যন্ত চেপে ধরলো।
“গাড়ির এই অবস্থা কীভাবে হলো?
নুসরাত জায়ানের শার্ট ধরে টেনে নিচের দিকে নামালো।জায়ান কিছুটা কাথ হয়ে নিজের কান নুসরাতের মুখের কাছে নিয়ে আসলো।
“ভাইয়া আরশ এরকম রিয়েক্ট করছে কেন? মনে হচ্ছে গাড়ি তোমার না আরশের। এখন এটা বলো না গাড়ি তোমার না আরশের। এটা বললে আমি বিশ্বাস করবো না।
” হ বোন গাড়ি আমার কিন্তু,
নুসরাত স্বস্থির নিশ্বাস ছেড়ে দিতে গিয়ে আটকে নিল।
“কিন্তু কি?
” গাড়ি যেমন আমার তেমনি আরশের। গাড়ি কিনার সময় ফিফটি পার্সেন্ট টাকা আরশ দিয়েছে আর ফিফটি পার্সেন্ট আমি।
“ভাইয়া এটা আপনার ও তো গাড়ি তাহলে আপনার দিকে এরকম চিবিয়ে খেয়ে ফেলা লোক দিচ্ছে কেন?
” আমার দিকে না বোন, তোমার দিকে দিচ্ছে।
“আমার দিকে।
নুসরাত আরশের দিকে একবার তাকিয়ে জায়ানের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আরশকে তার দিকে লাল চোখ নিয়ে তাকাতে দেখে নিজের দু-গাল চেপে জায়ানের পিছনের দিকে গেল। আরশ কাচ চেক করতে ঝুঁকতেই নুসরাত পালানোর চিন্তা করলো। নুসরাত পিছন ঘুরে যেতে নিবে
আরশ চিৎকার করে উঠলো,”একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে এতো সময় লাগে? কে করেছে এই অবস্থা গাড়ির?
নুসরাত জায়ানের কানে কানে বলল,
” ভাইয়া এবারের মতো বাঁচিয়ে নাও।
“পারবো না।
” প্লিজ ভাইয়া! আমার মতো একটা বাচ্চা অকালে মারা যাবে সেটা আপনি মেনে নিতে পারবেন।
“হ্যাঁ পারবো না কেন? অব্যশই পারবো!
” ভাইয়া এবার বাঁচিয়ে নিলে, আমি তোমাকে আমার সম্পত্তির দুই পার্সেন্ট দিব। ডিল ফাইনাল করো ভাইয়া সূবর্ণ সুযোগ।
“তুমি সম্পত্তি কই পাবা?
” নাছির উদ্দিনের সম্পত্তি আমি আর ইসরাত ছাড়া কে পাবে? ওখান থেকে আপনাকে দুই পার্সেন্ট দিব। প্লিজ এই বেডার থাপ্পড়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিন।
“ওকে ডিল! আমি তোমাকে বাঁচাবো আর তুমি আমাকে তোমার সম্পত্তির দুই পার্সেন্ট দিবে।
” এই মুখে আমের আঁটি ঢুকিয়েছিস দু-জন কথা বলছিস না কেন? আমার মাথা গরম হচ্ছে।
নুসরাত কিছুটা পায়ে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে বলল,
“ভাইয়া, এতো প্রচুর সিরিয়াস গাড়ির বিষয়ে।
” হু! গাড়ির প্রতি ওর ইমোশন বেশি।
নুসরাতের সাথে কথা বলা শেষে জায়ান আরশের দিকে তাকালো। যে উত্তরের অপেক্ষায় তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” গাড়ি ভুলে মমোদের বাসার গেইটে ধাক্কা মেরে দিয়েছি।
“ছোট ভাইয়া মিথ্যা বলবা না। আমি জানি তোমার ড্রাইভিং স্কিল অনেক ভালো।
” ড্রাইভিং এর সময় হঠাৎ মাথায় চক্কর দিয়েছিল তাই ব্যালেন্স হারিয়ে গাড়ি ধাক্কা খেয়েছে।
আরশ জহুরে নজরে নুসরাত আর জায়ানের দিকে তাকালো। নুসরাত চোরের মতো মুখ লুকালো জায়ানের পিছনে।
“তাহলে তোমার কপাল ফেটে রক্ত না বের হয়ে ওর বের হচ্ছে কেন? তুমি তো ড্রাইভিং সিটে ছিলে তাহলে ওর কপাল ছেচে গেল কীভাবে? দেখে তো মনে হচ্ছে হুইলে লেগে আঘাত পেয়েছে।
নুসরাত জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান চোখ দিয়ে ভরসা দিল সে বলছে কিছু।
” আসলে নুসরাত সিটবেল্ট লাগায়নি এজন্য গাড়ি ধাক্কা খাওয়ার সাথে ও ধাক্কা খেয়েছে। ওই সময় গাড়ির সামনে আঘাত লেগে কপাল ছেচে গিয়েছে।
“সত্যি কথা বলছ তো?
” হ্যাঁ সত্যি!
আরশ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
“মিথ্যা বলছ না তো?
” না একদম না।
নুসরাত জায়ানের কথার সাথে মাথা উপর নিচ নাড়ালো।
আরশকে তার দিকে তাকাতে দেখে মুখ কাচুমাচু করে আরশের চোখের দিকে তাকালো। আরশকে সন্দেহের চোখ তাকাতে দেখে নুসরাত ফুল কনফিডেন্স নিয়ে আরশের চোখের দিকে তাকালো। চোখ সরাল না চোখ বড় বড় করে আরশের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশ তার চোখ সরিয়ে নিল। বিড়বিড় করে বলল, “নির্লজ্জ!
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” গাড়ির তুই ধাক্কা দিসনি?
নুসরাত উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। আবার দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল।
“মুখ দিয়ে বল! তোর ইশারার কথা বলা আমার মতো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বুঝতে পারবে না।
” আমি কিছু করিনি।
সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
“সত্যি তো!
“হান্ডেন্ড এন্ড টেন পার্সেন্ট!
জায়ান এসে বলল গাড়ি বের করার জন্য। কোথায় যাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য? আরশ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে নিয়ে আসলো। বাড়ির গেটের বাহিরে যাওয়ার আগে নুসরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে গেল।
নুসরাত বিড়বিড় করলো,
” শালা আমাকে শুধু সন্দেহ করে।
ইসরাত গোসল করে বের হতেই নুসরাত গোসল করতে গেল। পার্লারে গিয়ে পরার জন্য লেহেঙ্গা বের করে বিছানার উপর রাখলো। ইসরাত দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে গেল। পাঁচ মিনিট পর নুসরাত গোসল করে চলে আসলো।
“গোসল শেষ?
” হ্যাঁ!
“মাত্র পাঁচ মিনিটে গোসল করে ফেললি?
” হ্যাঁ বাথরুমে গিয়ে কি তোর মতো শুয়ে পড়ব? আমি দুই মিনিটে গোসল করতে পারি।
ইসরাত কথা না বলে নুসরাতের জন্য প্লেটে খাবার বেড়ে দিল। নুসরাত প্লেট হাতে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসলো।
খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে বিয়েতে পরার জন্য কাপড় বের করলো। ইসরাত চুল শুকিয়ে জুতো অর্নামেন্ট সব বের করলো।
নুসরাত আর ইসরাত দু-জন নাছির সাহেবের রুমের সামনে গেল। নক করার পর নাছির সাহেব বললেন ভিতরে আসার জন্য। তিনি গোসল করতে যাচ্ছিলেন দুজনকে একসাথে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
“কি?
নুসরাত ইসরাতকে ধাক্কা দিল বলার জন্য ইসরাত নুসরাতকে ধাক্কা দিল।
” কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো? আমি গোসলে যাব।
ইসরাত বলল,
” আপনার গাড়ির চাবিটা দিন আব্বু?
“কি করবে?
” জি পার্লারে যাব আব্বা।
“তোমাদের ড্রাইভিং করে যাওয়ার দরকার নেই। জায়ানের গাড়ির অবস্থা কিছুক্ষণ আগে কি করেছ তা তো দেখেছি?
” আব্বু আমি কিছু করিনি।
“তুমি না করলে তোমার সাথের জন তো করেছে। আমি জায়ানকে বলে দিব তোমাদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য। যাও যা যা পার্লারে নিবে তা গুছাও।
নুসরাত আর ইসরাত মুখ কালো করে বের হয়ে গেল। রুমের পাশে কান পেতে বসে রইলো। নাছির সাহেব ওয়াশরুমের দরজা লাগানোর শব্দ শুনতেই নুসরাত এসে আবার রুমে ঢুকলো। বিছানার পাশের বক্সের উপর নাছির সাহেবের গাড়ির চাবি খুঁজে পেল। ঝটপট হাতে নিয়ে রুম বাহিরে থেকে লক করে চাবি নিয়ে দৌড় দিল।
ইসরাত, সাদিয়া আর সৌরভিকে বলল,
” তাড়াতাড়ি আয়। আব্বা বের হতে পারলে আস্তো রাখবে না।
নুসরাত গাড়ির কী তে চাপ দিতেই হর্ণ বেজে গাড়ি আন লর্ক হলো। নাছির সাহেব ওয়াশরুম থেকে সাবান মাখা শরীরে নিয়ে বের হয়ে আসলেন। দরজা খুলতে গিয়ে দেখলেন দরজা বাহির থেকে লক করা। সাবান মাখা শরীর নিয়ে নাছির সাহেব বারান্দায় গেলেন।
নুসরাত গাড়ি পাকিং থেকে বের করে নিয়েছে। নাছির সাহেব বারান্দায় থেকে নুসরাতকে বললেন,”নুসরাত গাড়ির কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না। আজ গাড়ি ঠিক থাকলে তুমি ঠিক থাকবে।
নুসরাত গাড়ির কাচ নামিয়ে জানালার উপর দিয়ে মাথা বের করলো।
” আচ্ছা আব্বা ছাড়বেন না। আপনার বাড়িতেই সারাজীবন ধরে রাখবেন। টা টা আব্বা, আস্তে ধীরে কনভেনশন হলে পৌঁছে যাবেন। আমাকে আর ইসরাতকে ওখানে পাবেন। বায় বায় আব্বা। চিন্তা করবেন না আব্বা। নাহলে প্রেশার হাই হয়ে যাবে।আপনার প্রাণপ্রিয় গাড়ি ওখানে পাবেন। টা টা বায় বায় আব্বা। আবার দেখা হবে রাতে। ঔষধ খেয়ে নিবেন মনে করে।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩০ (২)
নুসরাত গাড়ি টান মেরে বাসার বাহিরে চলে গেল। আর নাছির সাহেব সাবান মাখা শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি যাওয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। গাড়ি অদৃশ্য হতেই হেসে দিলেন।