প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৫ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৫ (২)
জান্নাত নুসরাত

প্রকৃতির অবস্থা শোচনীয়। কোনো আঘাম বার্তা ছাড়া ঝড় শুরু হয়েছে। এর মধ্যে লোডশেডিং হয়েছে। কোনো পূর্ববাস ছাড়া এরকম ঝড় আসায় কোন পূর্ব প্রস্তুতি নেই। কারেন্ট চলে যাওয়ায় হিটার বন্ধ। অতিরিক্ত শীতের জন্য ইসরাত বড় বড় কম্ফোটারের ভিতরে ঢুকে বসে আছে। এই শীতের মধ্যে কে আরাম ছেড়ে বের হবে। বাহিরে কলিং বেল বেজে উঠলো। ইসরাত তবুও পরে রইলো বিছানার মধ্যে। মনে হচ্ছে কম্ফোটারের নিচ থেকে বের হলেই সে জমে যাবে।

দরজা খোলার শব্দ বাহির থেকে আসলো। এপার্টমেন্টের ভিতর কারোর হাঁটার শব্দ শুনা গেল ইসরাত তবুও নড়লো না। নিজের পাশের রুম থেকে দরজার নব ঘোরানোর শব্দ শুনতে পেল। ইসরাত বুঝলো জায়িন এসেছে। মোবাইলে টাইম দেখলো। সন্ধ্যা ছয়টা বাজছে। এতো তাড়াতাড়ি আজ আসলো কেন?
হঠাৎ মনে হলো রাতের খাবার রান্না করেনি সে। শরীর থেকে শীত ঝেড়ে ফেলে ইসরাত কিচেনে গেল রান্না করতে। তার আর জায়ানের কাজ ভাগ করে নেওয়া। নিজের রান্না যে যার নিজের মতো করবে। জায়িন ঘর মুছবে আর ইসরাত রুম ঝাড়ু আর এপার্রমেন্টে থাকা জিনিস পত্র মুছবে। যে যে জিনিসে খাবে তার তার সে জিনিস ধোয়ে রাখবে। ইসরাত ডিম আর খিচুড়ি রান্না করে কিচেনে রেখে চলে গেল শুয়ার জন্য। এই শীতের মধ্যে বিছানা ছাড়া অন্য কোথাও দাঁড়াতে ও ইচ্ছে করে না। ইসরাত দরজা কোনরকম লক করে দৌড় দিল বিছানায়। কি শীতরে বাবা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরেরদিন সকাল বেলা,
আরশ রেডি হচ্ছিল অফিসে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে রুমের বাহির থেকে নকের শব্দ আসলো। আরশ ভিতরে আসার কথা বললে নুসরাত আরশের রুমের ভিতর এলো হাসি হাসি মুখ করে। আরশ নুসরাতের এতো হাসির কারণ বুঝল না। ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো নুসরাতের দিকে। নুসরাত জুসের গ্লাস আরশের দিকে এগিয়ে দিল। আরশ সন্দেহের দৃষ্টিতে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে জুসের গ্লাস হাতে নিল।
“হঠাৎ আমার জন্য জুস নিয়ে আসলি কেন?

” গতকাল রাতের আপনার কথাগুলো আমি অনেক ভেবেছি। ভাবলাম আপনার সাথে তো আর আমার কোন শত্রুতা নেই, আপনি তো আমার পিয়ারের বড় ভাই তাই এই জুস নিয়ে আসলাম আপনাকে খাওয়াতে। আর আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে। আমি আর কোনো দিন আপনার সামনে আসবো না,আর কোনো দিন বেয়াদবি করবো না।
আরশের কিছুটা সন্দেহ দূর হলো নুসরাতের উপর থেকে কিন্তু পুরোপুরি দূর হলো না।
“ভাইয়া আপনি আমায় বিশ্বাস করছেন না, আমি প্রমিজ করছি আপনি যতদিন পর্যন্ত আমাকে দেখতে না চাইবেন ততোদিন পর্যন্ত আমি আপনার দৃষ্টি সীমানার সামনে আসবো না। আমি ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন না।

” সত্যি তো!
“হার্ন্ডেড এন্ড টেন পার্সেন্ট।
আরশ এক চুমুকে পুরো গ্লাস খালি করে দিল। নুসরাত আরশের দিক থেকে হাসি হাসি মুখ করে পিছনে ফিরলো। আরশের উল্টো দিক হতেই মুখ শক্ত করে ফেলল।
আরশ গাড়ির চাবি, মানিব্যাগ পকেটে ঢুকিয়ে নিচতলায় আসলো। লিপি বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সদর দরজার সামনে যেতেই মাথা ঘুরে উঠলো। এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো আরশের কাছে পুরো দুনিয়ায় নড়ে উঠেছে। আরশ শরীর ঝাড়া মেরে ঠিক করলো। সদর দরজা থেকে বের হয়ে সামনে হাঁটতে যাবে সিঁড়ি থেকে ধুপ করে উল্টে পড়ল।
আরশ পড়ে যেতেই নিজের কাছে মনে হলো পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। নুসরাত আর ইরহাম দরজার পাশ থেকে দৌড় দিয়ে আসলো আরশকে পরে যেতে দেখে। চোখের সামনে হাত তুলে উপর নিচ করল নুসরাত। নুসরাত বিড়বিড় করল,” মরে গেল নাকি?কোন সারা শব্দ না পেয়ে নাকের কাছে হাত নিল। আবার নিজেকে বলল,”না বেঁচে আছে।

জায়ান এসে আরশের মাথার কাছে বসলো। আরশের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,”আমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ এই মেয়ের। আমি কিছু করিনি এ আমায় ব্ল্যাকমেইল করে সব করাচ্ছে। আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি আরশ আমার কোনো দোষ নেই। আমার গোপনীয় কথা ও ভাইরাল করে দিবে বলে আমি ওর কাজ করে দিচ্ছি।
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল,
“আরে ভাইয়া এতো ম্যা ম্যা করছেন কেন? এ এখন বেহুশ, এ কিছু শুনতে পাচ্ছে না, এক ঘন্টার আগে হুশ ফিরে আসবে না, তাই আপনার কথা ও শুনতে পাবে না।
মেহেরুন নেছা পিছন থেকে এসে নুসরাতের পিঠে খোঁচা দিলেন। নুসরাত বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকালো।
” কি হয়েছে? খোঁচা খোঁচি করছো কেন?
“তুই আমার আরশরে কই নিয়ে যাইতাছছ এই রকম বেহুশ কইরা।

” বিয়েতে করতে নিয়ে যাচ্ছি। শালাকে কোনো মেয়েই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না তাই আমি বোন হিসেবে উপকার করে দিচ্ছি বিয়ে করে,এবার বেশি কথা না বলে সাইড হও।
“তুই বিয়া কইরা ফালাইবি,তোর বাপ মারে জানাইবি না। আর আরশ তো বেহুশ বিয়া করবি কীভাবে?
” না পরে জানাবো! এখন বুড়ি তুমি চুপচাপ বাড়িতে গিয়ে বসো। পরে তোমার নাতির হুশ ফিরলে বিয়ে করবো। এখানে তোমার নাতির হুশ ফিরলে বিয়ে করা মুশকিল হয়ে যাবে। ভাইয়া আপনি মাথায় ধরুন আর ইরহাম তুই এক পায়ে ধর আর আমি আরেক পায়ে। একমিনিট একটা ফটো তুলে নেই। এলবাম করে রাখবো! পরে আফসোস করবো কেন একটা ও বিয়ের আগে ফটো তুলিনি!

ইরহাম মোবাইল নিয়ে সামনে গেল, আরশ মাটিতে পড়ে আছে, মেহেরুন নেছা লাঠিতে ভর দিয়ে পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসলেন আর নুসরাত, জায়িন আরশের পাশে বসে ভি সাইন দেখালো। ফটো তোলা শেষে সবাই মিলে ধরাধরি করে আরশকে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল।
“এ এতো ভারী কেন? তিনজন মিলে ধরে শালাকে নেওয়া যাচ্ছে না। খায় কি এ? গন্ডারের মতো ভারী।
গাড়িতে ব্যাকসিটে আরশকে কোনো রকম বসিয়ে ইরহামকে তার পাশে বসানো হলো। ইরহাম বসতে চাইলো না নুসরাত ধমক মেরে বসালো। জায়ান ড্রাইভিং সিটে আর নুসরাত বসলো ফ্রন্ট সিটে।
মেহেরুন নেছা বাহির থেকে বললেন,

” বেস্টি অফ লাকি!
নুসরাত ও বেস্ট অফ লাক টু বলে বুড়ো আঙুল দেখালো। জায়ান গাড়ি স্টার্ট দিলে নুসরাত জিজ্ঞেস করলো, ” এখান থেকে কাজী অফিসে যেতে কত মিনিট লাগবে?
“ত্রিশ মিনিটের মতো।
” আমি মাহাদি ভাইয়া, নাহিদ আর ইনায়া আপুকে আসার জন্য বলেছি ওরা হয়তো এতোক্ষণে পৌঁছে যাবে।
জায়ান কথা বলল না। ড্রাইভিং এ মনোযোগী হলো। নুসরাত ইরহামকে বলল,”এর পাশে বসে ফিল কেমন তোর?
“চুপ কর বেডি আমার ভয় করতাছে কখন না জানি সজাগ হয়ে যায়,আর আমার গলা টিপে ধরে।
” চিন্তা করিস না একটা গান শোনাই তোকে, চিন্তা থেকে চট করে রিলিফ হয়ে যাবি।
“না বোন গান গাস না। তুই গানের ধর্ষণ করে দিস গান গেয়ে।

” আচ্ছা একটা গান গাই?
“না করলে তো গাইবি নে গা এবার?
” না এখন ইচ্ছা হইতাছে না। আমার আই ফোন দেখ ব্যাক সিটে আছে ওটা দে। একটা গান বাজাই।
ইরহাম কপালে ভাঁজ করে নুসরাতের দিকে তাকালো।
“তুই আই-ফোন কই পাইলি?
” আরে ইসরাতের জন্য শপিং করতে গিয়েছিলাম ওখান থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকা মেরে দিয়েছি। ইসরাত আম্মারে টাকা দেওয়ার জন্য বলছিল আম্মা ভুলে গিয়েছে টাকার কথা। তাই আমি মেরে দিয়েছি আর কিছু টাকা আমি জমিয়েছি। দুজনের টাকা মিলিয়ে কিনেছি।
“তুই টাকা মারলি আমাকে বললি না কেন? আমি ও কিছু টাকা মারতাম ওখান থেকে। একা একা আইফোন কিনে নিলি।

” তুই ওই সময় বাড়িতে ছিলি শালা। যাও তো নাড়ে নাড়ে বেড়াতে। এখন মুখ খারাপ করতে চাইছি না। তাই ডোন্ট ফোর্স মি, যাতে আমি গালি দিয় আজ একটা আমার জন্য শুভ দিন! গালাগালি করে মুখ খারাপ করতে চাচ্ছি না। আরেকটা কথা আরশের থেকে উপরের টা কিনেছি।
“নতুন নতুন ইংরেজি শিখেছিস তাই না। আমি জানি, ভাইয়ার আই-ফোন দেখেই তুই আইফোন কিনেছিস টক্কর দেওয়ার জন্য।
” জানস যখন-তখন জিজ্ঞেস করছিস কেন?

মেহেরুন নেছা সৈয়দ বাড়ি হায় হুতাশ করে মাথায় তুলে ফেলেছেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে ও উত্তর দিচ্ছেন না। শুধু বলছেন আমার নাতনী।
“আম্মা কি হয়েছে না বললে বুঝবো কীভাবে?
মেহেরুন নেছা চোখে পানির লেশমাত্র নেই। তারপর ও তিনি শাড়ির কোণা দিয়ে চোখ মুছলেন। নাক টানলেন!
” তোর ছোড পোলা আমার নাছিরের মাইয়ারে কডনাপ কইরা লইয়া গেছে গা। মাইয়াডা যাইবার চায় নাই জোর কইরা উঠাইয়া লইয়া গেছে আমার নাছিরের মাইয়ারে। আমি থামাইতে গেলাম আমারে কইল দাদি এখানে আসবে না আমি কিন্তু তোমাকে মানব না। আর কইল বাড়িতে কাউরে কইলে নুসরাতরে বিয়া কইরা আর বাড়িতে আইতো না।
মেহেরুন নেছা এমনি এমনি কান্না শুরু করলেন। হেলাল সাহেব স্তব্ধ হয়ে গেলেন। আরশ এটা করতে পারে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন সোফার উপর। তার মাথায় কাজ করছে না। আরশ কীভাবে করলো এটা?

নুসরাত কাজী অফিসে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। আরশকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে হাত-পা বেঁধে। চোখে পট্টি বাঁধা অবস্থায়।
কাজী সাহেব মুখ চোখ করুন করে তাকিয়ে আছেন। নুসরাতের দিকে একবার তাকিয়ে আরশের দিকে তাকালেন।
“মা আপনি এভাবে বিয়ে করবেন?
নুসরাত নিজের কাপড়ের দিকে তাকালো। ঠিক তো আছে!
” এই কাপড় পরে বিয়ে করলে কোনো সমস্যা? আমি মাথায় তো ওড়না রেখেছি। তাহলে আর এতে সমস্যা হওয়ার কি আছে? আমার কি এখন মাথায় লাল কালার ওড়না দিয়ে বিয়ে করতে হবে?
কাজি সাহেব কিছু বললেন না। কনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বরের দিকে তাকালেন। বর চেয়ারের উপর বসে আছে আর তার মাথা নিচের দিকে কাথ হয়ে আছে কেউ হালকা ধাক্কা দিলেই চেয়ার সহ উল্টে পড়ে যাবে বর।
নাহিদ এসে নুসরাতের মাথায় টোকা দিল।
“তুই পুরুষ মানুষকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করছিস ছি্হ ছি্হ। তুই এতো নিচে নেমে গেলি, বড় ভাইয়ের বয়সী পুরুষকে বিয়ে করতে তোর বিবেকে নাড়া দিচ্ছে না, এইভাবে এই নিরীহ পুরুষটাকে তুই কিডন্যাপ করে বিয়ে করতে পারিস?

” তুই তোর বকবক বন্ধ কর!আর চুপচাপ দাঁড়া! তোকে আমার সাক্ষী হিসেবে এখানে এনেছি এতো পটর পটর করতে এখানে আনিনি। তুই আমার ভাই ওর পক্ষ পাতিত্য করছিস কেন?
নাহিদ ওই কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
“আমি ওই সময় আন্টিকে বলেছিলাম এটা লেডি গুন্ডি হয়ে যাবে,আমার মতো বেচারা পুরুষ মানুষদের অত্যাচার করবে। কিন্তু কেউ আমার কথা পাত্তা দেইনি। এখন দেখো, আমার মতো একজন নিরীহ পুরুষকে কিডন্যাপ করে এনে বিয়ে করছে।

” হইছে তোর কাকের মতো গলা দিয়ে কা কা বন্ধ কর, আমরা কেউ শুনতে ইচ্ছুক না।
আরশ এর মধ্যে নড়ে চড়ে উঠলো। শরীর চেয়ারের সাথে বাঁধা থাকার জন্য ঠিকভাবে নড়তে পারল না। ব্যথাতুর শব্দ মুখ দিয়ে বের করলো। হাত শক্ত করে বাঁধার জন্য তার উপর তখন সিঁড়ি থেকে উল্টে পড়ার জন্য।
নুসরাত আরশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইরহাম সুন্দর করে বসা মালকে। নাহলে চেয়ার নিয়ে কখন উল্টে পড়ে যায় কে জানে।
আরশ নুসরাতের গলার স্বর শোনে নুসরাতকে ডাকলো।
” এই নুসরাত আমার চোখ বাঁধা কেন আর আমরা এখন কোথায়?
নুসরাত কোমল স্বরে বলল,

“ভাইয়া এখন আমরা দু-জন কাজী অফিসে আছি।
আরশ বোঝলো না কেন তারা কাজী অফিসে আছে। সে তো বাসা থেকে বের হয়েছিল অফিসে যাওয়ার জন্য তারপর কি হয়েছিল? মাথায় চাপ দিতেই ঝাপসা ঝাপসা সবকিছু ভাসলো। কোনো কিছু স্পষ্ট চোখে ভাসলো না!
” নুসরাত আমার চোখে কি বাঁধা? ওটা খুল?
“ভাইয়া আমি প্রমিজ করেছিলাম না আপনি না বললে আপনার সামনে আসবো না তাই চোখে এই পট্টি বেঁধে দিয়েছি যাতে আপনি আর আমার এই অসুন্দর মুখটা দেখতে না পারেন। ভালো করেছি না ভাইয়া।
আরশের মাথায় আসলো এখানে নিশ্চয়ই কোনো গোলমাল পাকিয়েছে নুসরাত। নুসরাতকে আদেশের স্বরে বলল,
” আমি বলছি এখন আমার চোখ খোল?
“ইরহামরে চোখের পট্টিটা খোল?

ইরহাম খুলে দিল চোখে বাঁধা কাপড়। প্রথমে চোখ খুলতেই সবকিছু ঝাপসা ভাসলো আরশের চোখের সামনে। আলো সয়ে যেতেই আরশ চার-দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো। জায়ান, ইরহাম,আর আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আরশের ভ্রু কুঁচকে গেল এরা এখানে কেন? নিজের হাত নাড়াতেই বুঝতে পারলো হাত শক্ত করে বাঁধা চেয়ারের সাথে।
“তুই আমার হাত বেঁধে রেখেছিস কেন চেয়ারের সাথে?আর কাজী অফিসে আমরা কি করছি?
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
” আপনার মতো গন্ডার কে আটকানোর জন্য চেয়ারে বাঁধা হয়েছে।
“কাজী অফিসে আমার কাজ কি? যে তুই আমাকে এখানে বেঁধে রেখেছিস? আর গন্ডার কাকে বলছিস?
” আপনাকে দিয়েই তো সব কাজ হবে। আপনি তো মেইন! আপনাকে ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন হবে না। আর আপনি তো শুধু এখানে চেয়ারের সাথে বাঁধা আর কেউ না। তাহলে বুঝতে পারছেন না কেন? আপনাকেই বলছি গন্ডার।

মাহাদি আর ইনায়া এর মধ্যে এসে কাজি অফিসে ঢুকলো। আরশের সামনে দাঁড়াতেই আরশ অবাক হয়ে তাকালো মাহাদির দিকে। এ আবার এখানে কি করছে?
আরশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তোরা সবাই এখানে কি করছিস?
মাহাদি বলল,
” আজ আমার বন্ধুর বিয়ে তাই এখানে এসেছি।
আরশ বুঝলো ঘাপলা আছে এখানে। নুসরাতের দিকে তাকালো যে মুখ শক্ত করে বসে আছে সামনের দিকে তাকিয়ে।
আরশ মাহাদির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল, “মাহাদি আমার হাত চেয়ার থেকে ছুটিয়ে দে? কি শক্ত করে বেঁধে রেখেছে আমার হাতে ব্যথা হয়ে গিয়েছে।
মাহাদি হালকা হেসে হাত অপরাধীর মতো উপরের দিকে তুলল।

” ভাই মাফ করিস আমি পারবো না।
আরশ জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান দু-পাশ মাথা নাড়াল। ইরহামের দিকে তাকাতেই ইরহাম বলল,
“ভাই আমার দিকে তাকাবেন না আমি আপনার মতো এক অসহায় প্রাণী। আমি যদি আপনাকে এখন ছাড়িয়ে দেই তাহলে এই শাকচুন্নিটা আমার ঘাড় মটকাবে। আই এম স্যরি ছোট ভাইয়া। মাফ করে দিবেন আমাকে আপনাকে সাহায্য করতে পারলাম না।

ইনায়ার দিকে তাকালো সে আগে থেকে মাথা নাড়িয়ে না করছে আরশকে। এবার নাহিদের দিকে তাকাতেই নাহিদ উৎফুল্ল গলায় বলল,” ভাইয়া আমি একজন মানবতার ফেরিওয়ালা। আমি আপনার আজ সেবা করে নিজেকে ধন্য করবো। আমি আজ আপনাকে এখান থেকে বাঁচাবো।
তারপর আমার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণা অক্ষরে লিখাবো। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমার এই অমানবিক কাজের ইতিহাস পড়ে আমাকে বাহবা জানাবে। বলবে ওয়া ওয়া,…
আরশ হালকা হাসল। নাহিদ এসে আরশের চেয়ারে সাথে বাঁধা দড়ি ছুটাতে যাবে নুসরাত চিৎকার করে উঠলো।
“এই এইইইইইই, একদম দড়িতে ধরবি না। কত কষ্ট করে এই মোটা প্রোডাক্টকে আমরা এখানে বেঁধেছি তুই জানিস। নাহিদ ছুঁবি না বলছি। মোটা প্রোডাক্ট আমার সম্পত্তি! তুই হাত লাগাবি না আমার সম্পত্তিকে।
নাহিদ শোনল না। পায়ের কাছের দড়ি ছুটাতে গেল।
নুসরাত বলল,

” আজ যদি আমি একে বিয়ে করি তাহলে তোকে পাঁচখানা বাইক কিনে দিব। তুই জানিস এই বেডা প্রচুর ধনী বলতে পারিস মিলিয়নার। সৈয়দ বাড়ির বড়লোক্স পুরুষ। আমি বিয়ে করলে সব টাকা আমার আর আমার টাকা মানে তো সব টাকা তোর। তাই সুযোগ মিস করিস না নাহিদ। সু্যোগ একবার আসে বার বার না।
“সত্যি বলছিস তো পাঁচটা বাইক কিনে দিবি?
” একশত পার্সেন্ট সত্যি! তুই বিশ্বাস রাখতে পারিস আমার উপর।
নাহিদ আরশের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল। আরশ দাঁতে দাঁত চেপে একবার চাইলো। তার নুসরাতকে ইচ্ছে মতো কতোটা থাপড়াতে ইচ্ছে করছে, হাত বাঁধার জন্য শুধু কিছু করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে আরশ জোরে শ্বাস নিল।
নাহিদ প্রচুর ব্যথিত গলায় বলল,

“ভাইয়া আজ আর মানবতা আপনাকে দেখাতে পারলাম না আর ইতিহাসের পাতায় ও নিজের নাম লিখাতে পারলাম না। অন্য একদিন মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে আপনার সাহায্য করবো। নাহিদ নিজে নিজেকে জিজ্ঞেস করলো, মানবতা আজ কোথায়? তারপর নিজে উত্তর দিল, মানবতা আজ চাঁন্দে।
আরশ কিছু করতে না পেরে নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকালো। নুসরাত আরশের দিকে ফিরে ও তাকালো না।
“মা ছেলেটা কি এই বিয়েতে রাজি?
” ছেলের রাজি দিয়ে কি হবে? ছেলে রাজি নাহলে ও বিয়ে হবে, ছেলে রাজি হলে ও হবে।
“ছেলে রাজি নাহলে বিয়ে হবে কীভাবে?
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,

” আমি এই বিয়েতে রাজি না, এ পুরুষ নির্যাতন করে বিয়ে করতে চাচ্ছে।
কাজী সাহেব বললেন,
“তাহলে তো মা বিয়ে হবে না। ছেলে তো রাজি হচ্ছে না। এখন কি করব?
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
” কাজী বর রাজি হলে তো বিয়ে হবে,আর বর রাজি হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না।
কাজী সাহেব মাথা উপর নিচ নাড়ালেন। নুসরাত এবার একটু শব্দ করে হাসল।
“দাঁড়ান, আমার একটু গান গাইতে ইচ্ছে করতেছে, গান গেয়ে শুনাই আপনাদেরকে।
ইরহাম কিছু বলতে যাবে নুসরাত চোখ রাঙালো।
” আমার গানের মাঝে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। ভালো না লাগলে কান বন্ধ করে বসে থাকো। আমি আমার হবু জামাইকে গানটা শোনাতে চাই।
নুসরাত গলা পরিস্কার করে গান ধরল,

“তু বাঞ্জা মেরে বাচ্চেকা পাপা , মে বাঞ্জাউংগে তেরি বাচ্চিকে মাম্মা. হেই বয় হেই ফ্রান্সি বয়!
ইরহাম নুসরাতকে থামিয়ে বলল,
” বোন গানটার ধর্ষণ এভাবে করিস না। তুই গানটার ইজ্জত মেরে দিলি। এটা হেই বয় না হেই গার্ল হবে।
“আমি ঠিকই গাচ্ছিলাম। দেখছস তুই আমার গানটা বুঝতে পারছিস। তাহলে ভুল হবে কেন?
ইরহাম নাক কুঁচকে নুসরাতকে ভেংচি কাটলো। নুসরাত ওসবে পাত্তা না দিয়ে পা তুলে চেয়ারে বসলো। মাহাদির দিকে তাকিয়ে বলল, ” ভাইয়া যা বলেছিলাম এনেছেন?
নুসরাত কথা শেষ করার আগে আরশ বলল,

“অনেক তামাশা করেছিস এবার আমার হাত পা থেকে দড়ি খুলে দে। তোর ডং দেখেছি অনেক,আমার কাজ আছে। তোদের নাটক দেখতে ইচ্ছে করছে না।
নুসরাত এমন ভাব করলো যেন আরশের কথা শুনেনি। আরশ নামক কোনো ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছে বলে সে জানে না এরকম করলো। মাহাদি নুসরাতের হাতে বন্দুক এনে দিল। নুসরাত বন্দুক নাড়াচাড়া করে দেখলো। কাজি সাহেবের দিকে টার্গেট করলো। তারপর আরেকবার নাড়া চাড়া করলো।
কাজী সাহেব হেসে ওঠলেন। নুসরাতকে ঠাট্টা করে বললেন, ” মা এটা দেখে মনে হচ্ছে তো বাচ্চাদের খেলনার বন্দুক।

নুসরাত কথা বলল না। আরশের দিকে এবার সরাসরি তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,”বিয়ে করবেন আমাকে?
আরশের একই জবাব আসলো,
“না। আর এই খেলনার বন্দুক নাড়াচাড়া করা বন্ধ কর। তুই এটা দেখিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছিস।
নুসরাত সাইকোদের মতো মাথা কাথ করলো। আরশের চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে পৈশাচিক হাসি হাসল। কাজী সাহেব আরশের কথা শুনে নিজে ও হাসলেন। নুসরাত বন্দুক কাজী সাহেবের মাথার উপর দিয়ে রেখে ট্রিগার চাপলো। ট্রিগার চাপতেই বন্দুকের ভিতরের গুলি শু করে বের হয়ে গেল। একটুর জন্য কাজী সাহেবের মাথার খুলি উড়ে যায়নি। নুসরাত বন্দুক ধরে যেদিকে পারলো সেদিকে একটা গুলি মারলো। ইরহাম চিৎকার করে উঠলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “এই পাগলের হাত থেকে কেউ বন্দুক নাও, এর হাত সার্প না। কখন আমাদের ভুলে গুলি করে উড়িয়ে দিবে। ভাই আমি এখনো বিয়ে করিনি। বিয়ে করার আগে আমার বউকে বিধবা করে এই পৃথিবী থেকে আমি বিদায় নিতে চাই না।

নুসরাত মাথার উপর ছাদের দিকে আরেকটা গুলি করলো। কাজী সাহেবের দিকে তাকিয়ে টেনে টেনে হেসে জিজ্ঞেস করলো,” কাজী সাহেব বিশ্বাস হলো তো এটা আসল বন্দুক, কোনো খেলনার বন্দুক না। বিশ্বাস নাহলে আমি আবার আপনার উপর ট্রাই করে দেখাতে পারি।
বন্দুক কোলের উপর রেখে নুসরাত নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুকে আরশের সামনে কিছু ছবি তুলে ধরলো।
“এইগুলা তুই কোথায় পেলি?
” প্রমাণ জোগাড় করেছি! এগুলো এক কাজ করি ফ্যামেলি গ্রুপে ছেড়ে দেই আর আপনার রুবার কথা গুলো মিডিয়ায় ছেড়ে দেই। সেই রিচ এন্ড ভিউ হবে! আর আপনি ও ভাইরাল হয়ে যাবেন।
আরশ নুসরাতের দিকে লাল চোখ বানিয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছু না করতে পেরে রাগ হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। নুসরাত শব্দ করে হাসল।

“বড় আব্বুকে আপনি যে সিগারেট খান সেটা উনার ওয়াটঅ্যাপের ইনবক্সে পাঠিয়ে দেই। প্রমাণ হিসেবে আপনার একটা ছবি ও সিগারেট খাওয়া অবস্থায় আমার কাছে আছে।
আরশ হাত ছুটানোর চেষ্টা করলো। নুসরাত এক ঠোঁট উপরে তুলে আরশকে তাচ্ছিল্য করে হাসল।
” উঁহু নড়াচড়ার চেষ্টা করবেন না।!চেষ্টা করলে আপনি ব্যথা পাবেন। নুসরাত মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, আমাকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে আপনার। যে মুখ দিয়ে কথা বলছি ওই মুখ ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছে তাই না। আমার ও গতকাল রাতে ইচ্ছে করছিল আপনার মুখ থাপড়ে নকশা বদলে দেওয়ার। কিন্তু বড় ভাই তাই কষ্ট করে হাত সামলেছি।
আরশ গর্জে করে উঠলো।

“এই মহিলা আমাকে জোর করে বিয়ে করছে আর তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডং দেখছিস। মাহাদি আমি বলছি আমার হাত খুলে দে। আমি তোদের কিচ্ছু করবো না! শুধু এটাকে দুটো থাপ্পড় মারবো।
মাহাদি অসহায় মুখ বানিয়ে বলল,
” ভাই আমার ও হাত পা বাঁধা! আমার কিছু গোপন থেকে গোপনীয় জিনিস ওর কাছে ব্ল্যাকমেইলের জন্য আছে। বলেছে ওর কাজ না করলে প্রমাণ ভাইরাল করে দিবে।
আরশ সবার দিকে অসহায় চোখে তাকালো। সবার এক কথা তাদের কিছু না কিছু জিনিস নুসরাতের কাছে আছে। তার কথা না শুনলে, যা সে ভাইরাল করে দিবে।
“আরশ ভাইয়া কেউ নেই আপনাকে বাঁচানোর জন্য। এবার বিয়ে করে নিন আমাকে, আমি আপনাকে এখান থেকে বাঁচাবো বিয়েটা করে নিলেই।

আরশ নুসরাতের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” তোকে আমি বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃক্কে? আমি জীবনেও তোকে বিয়ে করবো না। এই দেহে প্রাণ থাকতে তো কখনো না।
“ভাইয়া আপনি বাংলা সিনেমার আগের ডায়লগ গুলা দিচ্ছেন। কি যেন ছিল ডায়লগ গুলা, শয়তান তুই আমার দেহ পাবি মন পাবি না। আমি আপনার দেহ পেলেই হবে, মন দিয়ে কি করব? দেহ দিয়েই তো সব কাজ! আচ্ছা যাই হোক গতকাল রাতে, আপনি আমাকে বলেছিলেন না আমাকে কে বিয়ে করবে, আমার চেহারা ভালো না, মন ভালো না,তাই আমি ভাবলাম বিয়ে যখন কেউ করবে না তখন আপনাকে করে নেই বিয়েটা। ভালো না জিনিসটা! আপনি এতো এডভাইজ দিলেন আপনার এডভাইজ আপনার উপর প্রয়োগ করলাম। এতক্ষণ ধরে তোর বকবক শুনছি, এখন ঝটপট কবুল বল আর এসব ক্যাচ্ছা শেষ কর ভাই।
আরশ মুখ গম্ভীর করে ফেলল। নুসরাত বুঝলো এভাবে হবে না।

” ইরহাম রেজিষ্ট্রি পেপার নিয়ে আয়।
“কি করবি?
” রেজিষ্ট্রি করবো।
“কিন্তু , ভাইয়ার সিগনেচার ছাড়া রেজিষ্ট্রি হবে কীভাবে?
“কেন আগের যুগে সিগনেচার ছাড়া বিয়ে হতো না।
“হ্যাঁ হতো তো!
” ওইভাবে হবে যা কালি নিয়ে আয় ভাইয়ার বুড়ো আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিব।
ইরহাম পাশের দোকান থেকে দৌড়ে গিয়ে খুঁজে কালি নিয়ে আসলো। আরশ হাত মুঠো করে রাখলো শক্ত করে কিন্তু জায়ান মুঠো থেকে আঙুল বের করে আনলো। নাহিদ কালির মধ্যে আরশের বুড়ো আঙুল চেপে ধরে সেটা নিয়ে গিয়ে রেজিষ্টারে বসালো। নুসরাত হাফ ছাড়লো! পা তুলে বসে নিজে ও আঙুলের ছাপ দিল।
“নে এবার ঝটপট কবুল বলে ফেলতো বাবা।
আরশ মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলো। নুসরাত ফ্যামিলি গ্রুপে ঢুকে আরশের সব ছবি যা যা প্রমাণ হিসেবে ছিল, ডায়নার সাথে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার, রুবার সাথে কথা বলার, সিগারেট খাওয়ার, কোন এক হোটেলের সামনে পকেটে হাত দিয়ে তোলা ছবি ছেড়ে দিল।
আরশ চিৎকার করে বলল,

” নুসরাত ডোন্ট ডু দিজ? আমি বিয়ে করবো! ডিলিট কর ওটা!
নুসরাত মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ বের করলো।
“ইশ, ভাইয়া ফ্যামেলি গ্রুপে ছেড়ে দিয়েছি।
কাজী সাহেব বিড়বিড় করলেন,
“কি যুগ আসলো রে বাবা, মেয়েরা ছেলেদের জোর করে বেঁধে বিয়ে করছে। এতো জীবন দেখতাম ছেলেরা জোর করে বিয়ে করছে আর এখানে দেখি তার উল্টো হচ্ছে। এটা মেয়ে না গুন্ডি!
নুসরাত ঠোঁট কামড়ে হাসল। কাজী সাহেবের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই তিনি মুখ বন্ধ করে নিলেন।
“ভাইয়া ঝটপট কবুল বলুন আর আমি ও ঝটপট ছবি গুলো ডিলিট দিয়ে দিচ্ছি। বাবু শুরু করো তো কবুল বলা! আর ইরহাম ক্যামেরা অন কর। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাবা-মায়ের বিয়ের ফটো দেখবে না। তা কি করে হয়? কয়েকটা ভিডিও করিস আর ছবি ও তুলিস এলবাম করে রাখবো।
আরশ রাগে গজগজ করে চিৎকার করে বলল,

” কবুল।
সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলল। নুসরাতকে বলতে বলা হলো কবুল বলার জন্য সে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একসাথে তিনবার কবুল বলল। আর ওই দিকে ইরহাম নুসরাত আর আরশের বিয়ের ভিডিও করছে। আর নুসরাত যে গুলো ফটো ফ্যামেলি গ্রুপে ছেড়েছিল তা ডিলিট ফর এভ্রিওয়ান করছে।
নাহিদ বলল,
” বোন আমার কান্না কর।
“আমার কান্না আসছে না। কান্না করতেই হবে?
” হ্যাঁ কান্না করতে হবে! আর কান্না না আসলে জোর করে আন।
নুসরাত এমনি হু হু করে কান্না করলো। চোখ নিয়ে ঘষলো নাহিদের বুকের কাছের কাপড়ে।

“হয়েছে! আর কান্না করতে হবে।
কাজী অদ্ভুত চোখে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দোয়া পড়তে শুরু করলেন। নুসরাত পা নামিয়ে সুন্দর করে বসলো। দোয়া পড়া শেষে আরশকে আবার চোখে পট্টি মেরে দিল।
কাজী সাহেব বিড়বিড় করলেন,
” সারাজীবন দেখলাম মেয়েকে কিডন্যাপ করে এনে ছেলেরা বিয়ে করে আর এখানে দেখছি ছেলেকে কিডন্যাপ করে এনে মেয়ে বিয়ে করছে। কলি যুগ কলি যুগ!

“আমি নুসরাত নাছির সবাই যা করে আমি তার উল্টো টা করি, অন্যের সাথে আমাকে মিলাবেন না কাজী সাহেব।
কাজী সাহেব মুখে কুলুপ আটলেন। নুসরাত উঠে দাঁড়ালো। আড়মোড়া ভেঙে বলল,” বিয়ে যে পড়িয়েছেন তার টাকা উনার কাছ থেকে আই মিন আমার স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে নিবেন! তাহলে আজ আসি কাজী সাহেব। আর একটা কাজ করবেন আমরা এখান থেকে যাওয়ার ঠিক দশ মিনিট পর উনার হাতের বাঁধন খুলে দিবেন। যে যার বাড়ি গিয়ে সহিসালামত পৌঁছাক তারপর উনাকে ছেড়ে দিবেন। এর আগে যদি এর হাত পা খুলে দিন তাহলে এই বন্দুক দিয়ে আপনার মাথা ঝাঁঝড়া করে দিব।

নুসরাত যাওয়ার আগে ঝুঁকল আরশের দিকে। কানে কানে বলল,”অপমান করছিলি না,কে বিয়ে করবে আমাকে! তুই অপমান করেছিস তোকেই বিয়ে করে নিয়েছি। আর এবার থেকে এক একটা কথার জন্য এক একটা শাস্তি পাবি। বি রেডি, ফর ইউ্যের পানিশমেন্ট মিস্টার আরশ হেলাল!
নুসরাত মেকি হাসি হাসল। ইরহাম জায়ান মাহাদি ইনায়া বের হয়ে গেল কাজী অফিস থেকে। আরশ বলল,” কাজী সাহেব আমার হাত খুলে দিন। আমি আপনাকে বিয়ে পড়ানোর জন্য যত টাকা দিবে বলেছে তার থেকে তিনগুণ বেশি টাকা দিব।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৫

“বাবা একটা কথা আছে না নিজে বাঁচলে বাপের নাম।আমার আর আপনার অবস্থা সেরকম। যেখানে আপনার মতো রুষ্ট পুষ্ট একজন মানুষকে বেঁধে রেখে বিয়ে করে নিল সেখানে আমি কোন খেতের মুলা। আমাকে গুলি মেরে উড়িয়ে দিবে টাইমের আগে আপনাকে ছেড়ে দিলে। তাই বাবা চুপচাপ বসে থেকে নিজের জান হেফাজত করো, আর আমার জান ও আমাকে হেফাজত করতে দাও।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here