প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৭
জান্নাত নুসরাত
সুন্দর নীর্মল পরিবেশ। যেখানে চিন্তারা মানুষকে স্পর্শ করতে পারে না। জীবনের সকল চিন্তা এক পাশে রেখে এখানে কিছু সময়ের জন্য জীবনকে উপভোগ করা যায়। বাগাতেল গার্ডেনে এমন অহরহ মানুষ আছে যারা দৈনিক জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে বাগাতেল গার্ডেনে এসেছে কিছুক্ষণ নিজের মস্তিষ্ক কে শান্ত করার জন্য। নিজেকে ফুলের সমাহারে মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।
ইসরাত এক দৃষ্টি ফুলের বাগানের দিকে তাকিয়ে কিছু চিন্তা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ফোনের শব্দে চিন্তার ব্যাঘাত ঘটলো। ইসরাত অন্যমনস্ক ছিল তাই ফোনের রিংটোনের শব্দে একটু কেঁপে উঠলো। ফুলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে মোবাইলের দিকে দৃষ্টি ফেলল। নুসরাত ভিডিও কল দিয়েছে। অলস ভঙ্গিতে ফোন ধরে সামনের ফলের ঝুড়ির সাথে লাগিয়ে রাখলো।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!
নুসরাত সালাম টেনে টেনে করে ইসরাতের দিকে তাকালো। মুখ আজ অন্যদিনের তোলনায় গম্ভীর। ইসরাত কিছুটা অবাক হলো। নুসরাতের মুখ গম্ভীর, হাসি নেই, এটা হতেই পারে না। আজ কি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠছে?
” ওয়ালাইকুম আসসালাম! কি হয়েছে? মুখ ফাটা কলসির মতো বানিয়ে রেখেছিস কেন?
নুসরাত শ্বাস ফেলল। তার কিছু ভালো লাগছে না। ছাদের দিকে চোখ রেখে হাফ ছাড়লো। ইসরাতের কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তুই দেশে আসবি কবে? আমার একা একা ভালো লাগে না।
” এখন না, কয়েকদিন যাক তারপর আসবো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ইসরাতের কাছে মনে হলো কিছু তো গন্ডগোল হয়েছে বাড়িতে নাহলে নুসরাত এতক্ষণ এতো কথা বলতো তাকে কথার বলার সুযোগ দিত না। ইসরাত আশ-পাশ তাকিয়ে একবার দেখলো ক্যামেলিয়া আর লিও আসছে কি না? কিন্তু তাদের এখানে নাম গন্ধ নেই। তারা গরম খাবার আনতে গিয়েছে এই ঠান্ডা পরিবেশে খাওয়ার জন্য।
“বাড়িতে কিছু হয়েছে?
” আরে না বোন, বাড়িতে কিছু হয়নি। আমি একটা কাজ করে ফেলেছি।
ইসরাত ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘কি?
নুসরাত মুখ কাঁদো কাঁদো করে ইসরাতের দিকে তাকালো। ইসরাত উত্তর জানার জন্য নুসরাতের দৃষ্টিপানে তাকিয়ে আছে। নুসরাত কিছু বলার পূর্বেই ক্যামেলিয়া এসে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেল।
“ওহ ইসরাইট তুমি কি আমাদের মিস করেছ? আমি তোমাকে অনেক বেশি মিস করেছি।
“এই তো কিছুক্ষণ হলো গেলে এর মধ্যে মিস করা শুরু করেছ।
” ওহে বালিকা, তুমি কেন বোঝো না তোমাকে ছাড়া আমার এখন একমুহূর্ত একা থাকতে ভালো লাগে না। আমার ইচ্ছে করে তোমাকে প্যাকেট করে নিজের সাথে নিজের এপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ক্যামেলিয়ার এতো কথা বলতে দেখে নুসরাত বিরক্ত হলো। এতো কথা বলছে কেন? নিজে কথা বলবে ঠিক আছে কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে কথা বলার সুযোগ তো করে দিবে।
ক্যামেলিয়া কথা বলতে বলতে ফলের ঝুড়ির দিকে চোখ গেল। ইসরাতের মতো দেখতে একটা মেয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যামেলিয়া ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হু ইজ সি?
” ওহো, পরিচয় করাতেই ভুলে গিয়েছি সি ইজ মাই সিস্টার নুসরাত। আর নুসরাত আমি যেখানে কাজ করি সেখানে ওনার উনি। উনার নাম ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়া অমায়িক হেসে নুসরাতকে জিজ্ঞেস করলো,
“হ্যালো গার্ল! হাও আর ইউ?
” আ’ম ফাইন! এন্ড ইউ?
“আ’ম অলসো ফাইন ড্রালিং।
ক্যামেলিয়া ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ইসরাইট ইউ্যের সিস্টার এক্সেক্টলি লুক লাইক ইউ।
ইসরাত হেসে জিজ্ঞেস করল,
” ওহ রিয়েলি!
“ইয়াহ!
নুসরাত নিজে কথা বলতে না পেরে বিরক্ত হলো। ইসরাতকে পরে কল দিবে বলে ফোন রেখে দিল।
ইসরাতকে নিয়ে ক্যামেলিয়া জলাশয়ের আশ পাশে গেল হাঁটার জন্য সাথে ইসরাতকে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। ক্যামেলিয়ার বয়স বত্রিশ হওয়ার পর ও তাকে আটারো বছরের যুবতীদের মতো মনে হয়। তার হাইট কম তার উপর সে হাঁটু সমান ফ্রক পরায় দেখতে কিছুটা বাচ্চাদের মতো লাগে। ক্যামেলিয়ার পাশে ইসরাত দাঁড়ালে ইসরাতের কাছে নিজেকে বয়স্ক মনে হয়।
ইসরাত আশ-পাশ দেখছিল তখন চোখ পড়ল জলাশয় থেকে কিছুটা দূরে জায়িনের উপর। যে চুপচাপ মেট্রেসের উপর বসে আছে। আর তার সামনে শর্ট স্কার্ট আর স্কিনি টি-শার্ট পরে একটা মেয়ে বসে আছে। যে জায়িনের সাথে কথা বলছে আর জায়িন মোবাইল দেখে মাথা নাড়িয়ে কিছুক্ষণ পর হ্যাঁ না করছে। ইসরাত চোখ ফিরিয়ে এনে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকালো। যে ক্যামেরা দিয়ে টিউলিপ, লিলি, ক্যামেলিয়া ফুলের ফটো তুলছে। ইসরাত তার দিকে তাকাতেই ইসরাতের দিকে ক্যামেরা করে ক্যামেলিয়া তার ও ফটো দু-একটা তুলল।
ক্যামেলিয়াকে ফটো তুলতে দেখে ইসরাত নিজের মুখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল। ইসরাত মুখ ঢাকার আগেই ক্যামেলিয়া ফটো তুলতে পেরে হালকা হাসল। ইসরাত জায়িনের দিক থেকে চোখ সরাতেই জায়িন ইসরাতের দিকে চোখ রাখলো।। দশ হাত দূরে বসে ইসরাত কে চিনতে তার মোটেও অসুবিধা হলো না। ক্যামেলিয়া ফটো তুলা শেষে ইসরাত কে বগলদাবা করে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। ইসরাত যেদিক দিয়ে গেল জায়িন সেদিক দিয়ে তাকিয়ে রইলো।
ইসরাত বাগাতেল গার্ডেন থেকে ফিরে এসে নুসরাত কে ভিডিও কল দিল। নুসরাত কল ধরলো না। ইসরাত ফোন সোফার উপর রেখে রাতের রান্নার জন্য কিচেনে গেল। নুসরাত কল দেখলে এমনিতেই ব্যাক করবে।
জায়িন সাতটার দিকে এপার্টমেন্টে ফিরে আসলো। ইসরাত কিচেন থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেল। তারপর ও এসে দেখে গেল না কে এসেছে? জায়িন নিজের রুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো। কিচেনে টুক টাক শব্দ হচ্ছিল, ইসরাত রান্না করার জন্য। জায়িন একবার কিচেনের দিকে তাকিয়ে আবার চুপচাপ বসে রইলো। অস্বস্থি একপাশে ফেলে ইসরাতকে ডাক দিল।
“ইসরাত, ইসরাত!
ইসরাত ডাক শুনেও প্রতিউত্তর করার প্রয়োজন বোধ করলো না। জায়িন সোফা থেকে উঠে নিজে গিয়ে কিচেনের সামনে দাঁড়ালো। ইসরাত বুঝলো জায়িন উঠে এসে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও সে নিজের কাজ করা জারি রাখলো।
” ডাক দিচ্ছি শুনতে পাচ্ছো না! উত্তর দিচ্ছো না কেন?
ইসরাত টমেটো কাটতে কাটতে বলল,
“উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।
জায়িন ঠান্ডা মাথার মানুষ। এসব ছোট খাটো কথায় সে রাগ করে না। ইসরাতের নির্লিপ্ত কথা গিলে নিল চুপচাপ নিজের ভিতর। ইসরাতের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আজ বাহিরে যাদের সাথে গিয়েছিল তাদের তুমি জানো।
ইসরাত টমেটোর স্লাইস মুখে ঢুকিয়ে বলল,
“আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নই।
জায়িন বিরক্তির দৃষ্টি ইসরাতের দিকে তাকালো। একটা সিম্পল প্রশ্নের সিম্পল উত্তর দিয়ে দিলেই হয় এতো কুল হওয়ার কি দরকার?
ইসরাত টমেটোর স্লাইস মুখে ঢুকিয়ে জায়িনকে দরজার সামনে থেকে সরতে বলল। জায়িন সরল না। ঘাড়ত্যাড়ার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তার প্রশ্নের উত্তর দেয়নি সে ও এখন এখান থেকে সরবে না। ইসরাত জায়িনের মুখের ভাবমূর্তি দেখে বুঝলো এখান থেকে সরবে না। জায়িনের পাশ কাটিয়ে যেতে হলে তার শরীরের সাথে স্পর্শ লাগবে। ইসরাতের কি করার, সরবে না যখন তখন গায়ের সাথে গা লাগিয়ে পাশ কাটাতেই হবে। ইসরাত দরজার সাথে পিঠ টেকিয়ে আলগোছে বের হয়ে যেতে চাইলো কিন্তু জায়িনের মতো সুঠাম দেহের ব্যক্তির সাথে শরীর লাগবে না এটা কীভাবে হয়? কিছুটা শরীরের সাথে শরীরের স্পর্শ লাগল। তবুও জায়িন প্রতিক্রিয়া বিহীন কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু ইসরাতের শিরদাড়া বেয়ে শির শির অনুভূতি বয়ে গেল।
ফোনের শব্দ শুনে সে কিচেন থেকে এসেছে। সোফার উপর থেকে মোবাইল নিয়ে কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই নুসরাতের গম্ভীর মুখ ভেসে উঠলো মোবাইলে। ইসরাতের পানি পিপাসা পাওয়ায় কল লাউড স্পিকারে রেখে পানির গ্লাস আনতে গেল। গ্লাস নিতে গিয়ে বলল,
” তখন কি বলতে চাইছিলি বল? আমি শুনছি!
নুসরাত মুখ থমথমে করে বলল,
“আমি একটা কাজ করে ফেলেছি তোকে বলেনি?
ইসরাত গ্লাস নিয়ে এসে সোফায় বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল, ” কি এমন কাজ করলি যা, আমাকে না বলে করেছিস?
“শুভ কাজ করে ফেলেছি।
ইসরাত পানির গ্লাসে পানি ঢেলে পানি মুখে দেওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো, ” কি এমন শুভ কাজ করলি আমি ও শুনি, শুনে নিজেকে ধন্য করি।
নুসরাত ব্যথিত গলায় বলল,
“শক নিতে পারবি তো!
ইসরাত এক চুমুক পানি খেয়ে বলল,
” ডং না করে বল কি করেছিস? আমি সবসময় প্রিপায়ার থাকি এসব ছোট খাটো শক খাওয়ার জন্য, এইসব আমার জন্য কিছুই না।
নুসরাত গলা পরিস্কার করে নিল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “আরইশ্শারে কিডন্যাপ কইরা বিয়া কইরা ফালাইছি।
ইসরাতের মুখের ভিতর থেকে পানি ছিটকে বের হলো। মোবাইলের দিকে চোখ বড় বড় করে চাইলো। দেখে মনে হলো ইসরাতের চোখ খুলে বের হয়ে আসবে। লাউড স্পিকার থাকায় কিচেন থেকে জায়িন এতক্ষণ শুনছিল নুসরাতের কথা যখন আরশের কথা শুনল হাতে চামচ নিয়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো স্পষ্ট সব শোনার জন্য। আরশকে নুসরাত কিডন্যাপ করে বিয়ে করছে শুনে ইসরাত আর জায়িন একসাথে চিৎকার করে উঠলো,” কি?
নুসরাত বোকা হাসল। জায়িন চামচ হাতে নিয়ে এসে বসলো ইসরাতের কাছে। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,” এই মাত্র কি বললে আবার বলো?
নুসরাত সেই কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
“আরে দুলাভাই! আপনি রান্না করছিলেন বুঝি।
” নুসরাত এখন ডং করা বাঁধ দিয়ে আরশের সাথে কি করেছ সেটা বলো?
“এই তো যা শুনেছেন তাই করেছি। কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ফেলেছি।
ইসরাত আর জায়িন দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে নুসরাতের দিকে বিস্ফোরিত নজরে তাকালো।
” আরশ বিয়েতে রাজি হয়ে গেল।
“আরে দুলাভাই বুঝেন না কেন? কিডন্যাপ করেছি কিডন্যাপ।
ইসরাত নুসরাতের উপর বিরক্ত হয়ে বলল,
” তুই এই কথা এখন জানাচ্ছিস আগে জানালি না কেন? এই গাঁধি এসব তুই করেছিস আমাকে জানিয়েছিলি।
“এটা আবার জানানোর কি?
ইসরাত নিজে নিজের মাথায় থাপ্পড় মারলো। এই মেন্টাল এটা কি করেছে?
” কীভাবে বিয়ে করলি?
নুসরাত মুখ লজ্জা লজ্জা বানিয়ে বলল,
“জি ভাবি, ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছি।
” নুসরাত তুমি এতো সিরিয়াস মোমেন্টে ভাই ভাবি লাগিয়ে রেখেছ। তোমার আমাদের দেখে কি ফান করছি মনে হচ্ছে। কি হয়েছে ফাস্ট টু লাস্ট বলো? একটা পয়েন্ট যেন মিস না যায়।
নুসরাত গতকাল রাত থেকে শুরু করে আজ রাত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবকিছু খুলে বলল। জায়িন চামচ মুখের কাছে নিয়ে বলল,”যা বুঝলাম দু-জনের সমান সমান দোষ! কিন্তু আরশের তোমাকে এটা বলা ঠিক হয়নি। এভাবে বলায় তুমি অবশ্যই হার্ট হয়েছ।
নুসরাত জায়িনের কথা উড়িয়ে দিল। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল, ” এই আমি কারোর কথায় হার্ট হইনা। যখন আমার নিজের ইচ্ছে হবে কষ্ট পেতে তখন আমি কষ্ট পাই। আসলে ওই বেটা আমাকে ইগো দেখায়। নিজেকে মনে করে খুব সুন্দর। আসলে ওকে তো কালা বান্দরের মতো লাগে। তাই না বড় ভাইয়া ওহ না দুলাভাই।
জায়িন মাথা নাড়িয়ে হালকা হাসল। হঠাৎ নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ আসলো। জায়িন ওহ নো বলে কিচেনে দৌড়ালো। গ্যাস থেকে তরকারি নামিয়ে সিঙ্কে রাখলো। তরকারি পুড়ে গিয়ে পুরো কিচেনে ধোঁয়া ছড়িয়ে পরেছে।
নুসরাত ইসরাতের থেকে বিদায় নিল। রাত বারোটা বাজতে চলল সে এখন ঘুমাবে। ইসরাত ও বিদায় জানালো। আর ওখানে কি কি হয় তার আপডেট দিতে বলল?
নুসরাত এসি বন্ধ করে সিলিং ফ্যান অন করে বিছানা উঠবে তখন পেটে গুড় গুড় শব্দ হলো। দুপুর থেকে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। তাই দুপুর আর রাতের খাবার এখনো না খাওয়া। রুমে দরজা খুলে বের হতেই আকস্মিক ধাক্কা লাগায় পায়ের সাথে পা পেঁচ লেগে নুসরাত মেঝেতে উল্টে পড়ল। অন্ধকারের মাঝে নুসরাতের এক সেকেন্ড সময় লাগলো না যার সাথে তার ধাক্কা লেগেছে সেই লোকটাকে চিনতে।
আরশ জানতো এই মেয়ে রাতে চিপস্,চকলেট আইস্ক্রিমের ক্রেভিং হয় আর তা খাওয়ার জন্য বের হবে রুম থেকে। আরশ নিজে ও জানতো না রুম থেকে বের হতেই তার শিকার কে সে পেয়ে যাবে। নুসরাত মেঝেতে উল্টে পড়ে যাওয়ায় উঠে বসলো। দাঁড়ানোর আগে আরশ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে মেঝেতে বসলো। চোখে চোখ রেখে নুসরাতের দিকে ঝুঁকে তাকালো। আরশকে ঝুঁকে বসতে দেখে নুসরাত উঠে দাঁড়ালো না।
নুসরাতের রুমের হালকা নিয়ন আলো দরজার ফাঁক দিয়ে এসে পড়ল আরশের মুখের উপর। নিয়ন আলোয় দেখা গেল আরশের চোখে হাই পাওয়ারের চশমা আটা। আরশকে তার দিকে তাকিয়ে তাকতে দেখে নুসরাত নিজের চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। পিছন দিকে কিছুটা সরল নিজেদের মধ্যে দূরত্ব আনার জন্য। আরশ সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে নুসরাতের দিকে আরেকটু এগিয়ে বসলো। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে আরো কিছুটা সরল পিছন দিকে। আরশ নুসরাতের দিকে আরো কিছুটা এগিয়ে গেল। নুসরাত পিছনে সরলে আরশ নুসরাতের আরেকটু কাছ নেয় নুসরাত আবার পিছনে সরে। এভাবে একটু একটু করে সরতে সরতে নুসরাতের পিঠ রেলিঙের সাথে ঠেকে গেল। আরশ তবুও নুসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকলো চোখ সরাল না এক সেকেন্ডের জন্যে ও। নুসরাত বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াতে গেল আরশ দু-কাঁধ চেপে ধরে রেলিঙের সাথে ধরে রাখলো যাতে নড়চড় করতে না পারে।
নুসরাত ঠাই হয়ে বসে রইল। যা ইচ্ছা করার করুক আজ সে কথা বলবে না। নুসরাত নিজের মুখ আরো কিছুটা শক্ত বানালো। আরশ নুসরাতের শান্ত নির্লিপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের মুখ নুসরাতের কানের কাছে নিল। হাত দিয়ে কপালের পাশে থাকা বেবি হেয়ার গুলো কানের পিছনে গুজলো। নুসরাত রোবটের মতো বসে রইলো। কিছু বলল না।
আরশ ফিসফিস করে নুসরাতের কানের কাছে বলল,
“পুরো ফুল প্রোপ প্লেনের সাথে মাঠে নেমেছিস। বাহ আ’ম ইম্প্রেসড। তো বিয়ে করেছিস কেন? শাস্তি দেওয়ার জন্য। শাস্তি কি দিবি তুই? উমম ম মম মম…..
আরশ কিছুটা চিন্তা ভাবনা করার ভান করলো। তারপর বলল, দেখবি তুই আমার একটা চুল ও বাঁকা করতে পারবি না। নিজেই আফসোস করবি কেন আমাকে তুই বিয়ে করতে গেলি। নিজের কাজে নিজে পস্তাবি। নুসরাত তুই হারবি।
নুসরাত এবার একটু শব্দ করে হাসল। আরশের কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,” আপনার চুল তো এমনিতেই বাঁকা আমি আর কি বাঁকা করবো। আচ্ছা যাই হোক,আপনি কি ইন্ড্রায়েক্টলি বলছেন আমি আপনার প্রেমে পরবো?
“বাহ তোকে যতোটা বোকা ভাবি তুই ততোটা নস। ইঙ্গিত দিতেই বুঝে গেলি।
নুসরাত ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল।
” যান আপনি একটা চ্যালেঞ্জ করলেন আমি সেটা এক্সেপ্ট করলাম। আমি আপনার প্রেমে পরবো না এটা লিখে নিন।
কিন্তু আপনাকে ও আমি একটা চ্যালেঞ্জ করলাম আপনি আমার প্রেমে পরবেন। আরে, প্রেমে কি? ভালোবেসে ফেলবেন আমায়। আমি আপনাকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাব।আজকের তারিখ নোটপ্যাডে লিখে রাখুন। এটা আপনার জন্য স্মরণীয় হতে যাচ্ছে।
আরশ নুসরাতের কানের পাশে চুল গুজে দিয়ে হালকা শব্দ করে হাসল।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৬
“কনফিডেন্ট ভালো কিন্তু ওভার কনফিডেন্ট ভালো না।
নুসরাত আরশের কপালের উপরের চুলে ফু দিয়ে বলল,
” আই চ্যালেঞ্জ ইউ বেব? আপনার প্রেমে পরার আগে আপনি আমার প্রেমে পরবেন।
আরশ কথা শেষ করে নুসরাতের কাছ থেকে সরে গেল। নুসরাত উঠে দাঁড়ালো। পেট গুড় গুড় করছে একটু কিছু না খেলে হবে না। আরশের পাশ কাটিয়ে চলে গেল সিঁড়ির দিকে। আরশ নুসরাত সিঁড়ির দিকে যেতেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। অন্ধকারে শুধু দুই মানব মানবীর অভয়ব দেখা গেল। কিন্তু কার মনোভাব কি তা বোঝা গেল না!