প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮ (২)

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮ (২)
জান্নাত নুসরাত

আবহাওয়া অত্যাধিক ঠান্ডা। দূর থেকে পানির কলকল শব্দ ভেসে আসছে। সমূদ্র এতো দূরে হওয়া সত্ত্বেও পানির শব্দ ভেসে আসছে কারণ সব কিছু আজ নিস্তব্ধ হয়ে আছে বলে। একটা পোকা কি ঝিঝি পোকার ঝিঝি ডাকার শব্দও শোনা যাচ্ছে না। মৃদু বাতাস বইছে। আশ-পাশ থেকে মানুষের কি, কোনো কুকুরের নড়চড়ের শব্দ নেই। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলো ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বড় বড় ওক গাছ গুলো দানবের মতো নিজের ডাল, পাতা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যা রাতের বেলা দেখতে কারোর কাছে মর্মন্তিক আর কারোর কাছে ভয়ানক মনে হয়।
পরিত্যক্ত ব্লিডিং যা লতা-পাতায় চারিদিক থেকে ঘুরে আছে। ব্লিডিং দেখে মনে হচ্ছে সাত-আট বছর ধরে বন্ধ পরে আছে। ফ্রান্সে অহরহ এরকম পরিত্যক্ত ব্লিডিং পরে আছে। এই সব ব্লিডিং কেউ থাকে না। কিন্তু কখনো কখনো বড় বড় জঙ্গি মাস্তানরা এখানে এসে নিজেদের আস্তানা তৈরি করে।

জান বাঁচানোর স্বার্থে ইসরাত দৌড়ে পরিত্যক্ত ব্লিডিং এর ভিতর ঢুকে গেল। এতক্ষণ ধরে দৌড়ানোর জন্য ইসরাত জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলো। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। অন্ধকারে সামনে কিছু দেখা গেল না। সামনে পা বাড়াতেই পাথরের টুকরোর সাথে পা ভেঁজে পড়ে গেল। হাতে সূক্ষ্ম ব্যথায় আউচ বলে উঠলো। উঠে বসতে গিয়ে স্লিপ হয়ে আবার ওই জায়গায় গিয়ে উল্টে পড়ল। নাক আর কপালে সরু কিছুতে লাগলো। ইসরাত হাতে ভর দিয়ে উঠতে নিয়ে পাথরের ধারালো প্রান্ত হাতে লেগে হাতের তালু ছেঁচে গেল। ইসরাত উঠে বসে কপালে যেখানে ব্যথা লেগেছিল সেখানে হাত দিল। কপালে হাত স্পর্শ করতেই হাতের আঙুল গুলো আটালো হয়ে গেল। উঠে বসতেই দেখল টর্চের মৃদ্যু আলো ব্লিডিং এর সামনের রাস্তা দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে। ইসরাত কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে ওই জায়গা থেকে সরতে যাবে বড়সড় পাথরের সাথে পা ভেঁজে উল্টে গিয়ে টাইলসের ভাঙা আস্তরণে পড়ল। পড়তেই ধপ করে শব্দ হলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ছেলেগুলো ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল যেখানে আছে সেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য। তারা পেলে ইসরাতকে পিস পিস করে কাটবে তাদের এতো হয়রানি করার জন্য। তাই ভালোয় ভালোয় বের হয়ে আসার জন্য।
টাইলসের আস্তরণে পরে হাতের কনুইয়ে আর পায়ের গোড়ালির হাড্ডিতে ব্যথা পেল। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে শব্দ বের হয়ে আসলো। টর্চের আলো এদিক দিয়ে পরতেই ইসরাত নিজের মুখ চেপে ধরলো। শ্বাস বন্ধ করে বসে রইলো। এই ঠান্ডার মধ্যে ও ভ্যাপসা গরম লাগলো। ইসরাতের কাছে মনে হলো নিজের শ্বাস নেওয়ার শব্দ জোরে হচ্ছে। এই শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে দু-তিন জোড়া পায়ের দৌড়ে যাওয়ার শব্দ শুনা গেল সামনের দিকে। ইসরাত মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এ কোন বিপদে পড়ল সে?

কিছুক্ষণ পর ইসরাত ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। পায়ের গোড়ালির কাছের হাড্ডি মট করে উঠলল। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হওয়ার আগে ইসরাত নিজের মুখ চেপে ধরল। পা টেনে টেনে সামনের দিকে গেল। রাস্তা ভালোভাবে তাকিয়ে পরখ করে নিল কেউ আছে কিনা? রাস্তা খালি দেখে এপার্টমেন্টের দিকে দৌড়ালো। পায়ের সূক্ষ্ম ব্যথা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল দৌড়ানোর জন্য। ইসরাত পায়ের ব্যথা উপেক্ষা করে ও দৌড়াল। পা ঠিক হবে কিন্তু সম্মান গেলে সেটা আর ফিরে আসবে না। আগে সম্মান বাঁচানো ফরজ।
“হেই লেডি স্টপ!

ইসরাত পিছন ফিরে মাতাল আর তার বন্ধুদের দেখে আরো জোরে দৌড় লাগালো। পায়ের ব্যথায় ইচ্ছে করছে রাস্তায় শুয়ে পড়তে কিন্তু ইসরাত ব্যথা যুক্ত পা নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দৌড়ানোর চেষ্টা করলো। নিজেকে নিজে বলল আর একটু হাঁটলে এপার্টমেন্ট। একটু কষ্ট কর আজ। হাঁপিয়ে যাস না। ইউ কেন ডু ইট ইসরাত। ইউ কেন ডু ইট।
ইসরাত পায়ের ব্যথায় পা মুচড়ে পড়ে গেল। পিছন ফিরে দেখলো আর চার পা বাড়ালে মাতাল গুলো তাকে ধরে ফেলবে। ব্যথা যুক্ত পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সামনে তাকাতেই চোখের সামনে নিজের এপার্টমেন্ট ভেসে উঠলো। ইসরাত এপার্টমেন্টের দশ হাত দূর থেকে চিৎকার করতে করতে আসলো,” ওপেন দ্যা গেট। ওপেন দ্যা গেট!
দারোয়ান গেট খুলে দিয়ে আশেপাশে তাকাল কে শব্দ দিয়েছে দেখার জন্য? তখনি দারোয়ানের পাশ ঘেঁষে ইসরাত শা করে দৌড়ে গিয়ে গেটের ভিতর ঢুকে গেল। ছেলেগুলো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো এপার্টমেন্টের গেটের দিকে। ইসরাতকে গালি দিল,” শালি মাদার ফাকার বিচ! তোকে হাতের কাছে পেয়ে নেই দেখবি কি করি? এতো হয়রান করার জন্য হলেও তোকে শাস্তি দিব। ফাকিং বিচ গার্ল।

নুসরাত আরশের কাছ থেকে নিজের পা ছাড়ানোর জন্য আরশের হাতে থাপ্পড় মারলো। আরশকে পা ছাড়তে না দেখে নুসরাত নিজের পা দিয়ে আরশের পেটে লাথি মারতে গেল। আরশ নুসরাতের দু-পা ধরে নিজের হাতে মধ্যে আটকে রাখলো।
“কি ভাই? পা ধরে আছেন কেন? মাফ চাইতে এসেছেন আচ্ছা মাফ করে দিলাম এবার পা ছাড়ুন ভাই।
আরশ নুসরাতের পা না ছেড়ে বিছানার মাঝখান থেকে টেনে নিচের দিকে নিয়ে আসলো। নুসরাত আরশের হাত থেকে পা ছাড়ানোর জন্য বিছানার চাদর দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো। আরশের পা ধরে টানা টানিতে নুসরাতের প্যান্ট পায়ের গোড়ালি থেকে কিছুটা উপরে উঠে গেল।
নুসরাত এক হাত দিয়ে প্যান্ট নিচের দিকে ঠেলে নামাতে নামাতে বলল,” আরে ভাই না বললে বুঝবো কীভাবে? পা ছাড়ুন, পা কি ছুটিয়ে হাতে নিয়ে নিবেন? এসব জন্তু জানোয়ারের ভাষা আমি বুঝি না। বাংলা ভাষায় বলেন।
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,

“বিছানা থেকে নেমে নিচে আয়!
নুসরাত নিজের পা আরশের হাত থেকে ছুটানোর চেষ্টা করে বলল,” আরে ভাই এই শীতের মধ্যে আমি মেঝেতে ঘুমাতে পারব না। আপনার ইচ্ছে হলে নিচে ঘুমান। আমি বিছানা ছেড়ে কোথাও যাব না।
“এই খাচ্চরের বাচ্চা…
নুসরাত ফোড়ন কাটল আরশের কথায়। মাথা দু-দিকে নাড়িয়ে বলল,” বাপ তুলে গালি দিলে আমি ছেড়ে কথা বলব না। আপনার চৌদ্দ গুষ্টি তুলেও আমি গালি দিব।
আরশ সে কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
“এই গাঁধি তোর পায়ের নিচ দেখেছিস। সারাদিন খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচ তো এরকমই থাকবে। জুতো পরিস না কেন?

” এইইইই একদম বেশি কথা বলবেন না। জুতো কিনে দেয় আমায়, যে জুতো পরব। এই বাড়ির মধ্যে সবথেকে বড় গরীব হলাম আমি। এক জোড়া জুতো ছাড়া আর নেই। তা ও স্লিপার জোড়া ইরহামের। এজন্য তো খালি পায়ে হাঁটি।
“যা পা ধুয়ে আয়?
নুসরাত নিজের পা ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা বাঁধ দিয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকলো। সে এখন বিছানা থেকে উঠবে, হেঁটে ওয়াশরুমে যাবে, পা ধুয়ে এসে পা মুছতে হবে, তারপর লাইট বন্ধ করে আবার এসে বিছানাতে ঘুমাতে হবে, নুসরাতের ভাবতেই মাথা চক্কর মেরে উঠল। বাপড়ে বাপ এতো কাজ কে করবে? তার বাপের জন্মে এতো কাজ সে করেনি।

নিজ মনে বলল, আমি তো পারবো না। তার চেয়ে ভালো চোখ বুজে মরার মতো পড়ে থাকা বিছানার মধ্যে। আরশ পায়ে ধরে টানলো নুসরাত তবুও নড়লো না। আজ পা ছুটে গেলেও সে নড়বে না। আরশ নুসরাত কে টানতে টানতে নাড়াতে পারল না। নুসরাত বিছানায় সব শক্তি ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছে।
আরশ নিজের উপর বিরক্ত হলো। সে ময়লার বস্তাকে বলছে ময়লা পরিস্কার করার জন্য। যে নিজেই ময়লা সাথে নিয়ে ঘুরে সে আবার করবে পায়ের নিচের ময়লা পরিস্কার। হাসালি আরশ!
আরশ নুসরাত কে ঘাড়ত্যাড়ার মতো পড়ে থাকতে দেখে লাইট বন্ধ করে হালকা আলোর লাইট জ্বালিয়ে এসে শুয়ে পড়ল। দরজা লক করেছিল তা আবার খুলে আসলো।
আরশ এসে এক প্রান্তে শুয়ে পড়ল। দু-জন দুই কোনায় শুয়ায় দু-জনের মাঝে ইয়া বড় জায়গা রইলো। যেখানে আরশের মতো আরো দু-জন ব্যক্তির অনায়াসে শুয়ার জন্য জায়গা হয়ে যাবে।

রাত দুটো কি আড়াইটে? নুসরাতের কাছে মনে হলো দুনিয়ার সব থেকে ভারী বস্তু তার উপর রেখে দেওয়া হয়েছে। ঘুমের মধ্যে টেলে সরিয়ে দিল বস্তুটি কে, কিছুক্ষণ পর আবার সেই বস্তু এসে নিজের দু-হাত আর দু-পা দিয়ে পেৃচিয়ে ধরলো নুসরাত কে। নুসরাত নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চোখ বুজে রেখে বস্তুটিকে সরাতে চাইলো কিন্তু সরাতে পারলো না। বস্তুটি কে যতো সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে সে ততো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ছে। নুসরাত এক চোখ খুলে কিছুক্ষণ ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে আসলে কোথায় সেটা বুঝতেই দু-মিনিট সময় লেগে গেল। নিজের পায়ের আর পেটের উপর ভারী বস্তুর অস্থিত্ব পেয়ে সেদিকে তাকালো। আরশের এরকম তার উপর হাত পা মেলে আরাম করে শোয়া নুসরাতের সহ্য হলো না। তাকে ঘুমাতে দেয়নি সে কেন ঘুমাতে দিবে?

আরশের হাত সরিয়ে দিল নুসরাত। আরশ আবার হাত এনে নুসরাতের কপালের উপর রাখলো। নুসরাতের রাগী চোখে চাইলো আরশের দিকে। রাগে আরশের গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসালো। আরশ এক লাফে ঘুম থেকে উঠে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো। নুসরাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বুঝতে চাইলো কি হয়েছে? গালে জ্বলন অনুভব করে রুক্ষ হাতের তালু স্পর্শ করলো সেখানে। নুসরাতের দিকে কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”রাত বিরাতে থাপ্পড় মারছিস কেন? একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি কে মারতে তোর মোটেও দ্বিধাবোধ হলো না।
” না মোটেও দ্বিধাবোধ হয়নি। এরকম মহিষের মতো পা হাত কোথায় তুলে ঘুমালে থাপ্পড় তো খাবেন। আর আপনার জায়গা ছেড়ে আমার জায়গা আসলেন কেন?
“তুই কাকে মহিষ বলছিস?
নুসরাতের নির্বিকার জবাব,
” আপনাকে।

আরশ নুসরাতের গাল চেপে ধরলো। নুসরাত দু-হাত দিয়ে গাল থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করলো আরশ নিজের এক হাত দিয়ে নুসরাতের হাত চেপে ধরে রাখলো।
“এটা আমার রুম, আমার বিছানা, আমি যেখানে ইচ্ছা ঘুমাবো। তুই উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস। এখন আবার আমাকে মহিষ ও বলছিস। বাহ বাহ..
নুসরাতের মনে হলো গাল ফেটে দাঁত ভেঙে যাবে। আরশকে গাল থেকে হাত সরানোর কোনো লক্ষণ না দেখে নুসরাত আরশের গালে কামড় মেরে ধরলো। কামড় না মারলে তার গাল ফেটে আরশের হাত মুখে ঢুকে যাবে। আরশ চিৎকার করে নুসরাতের গালে থাপ্পড় মারলো। নুসরাত থাপ্পড় খেয়ে গাল ছেড়ে দিল। আরশের দিকে লাল চোখ মেলে তাকালো। আরেকটা থাপ্পড় পড়ল নুসরাতের হালকা ফোলা গালে। নুসরাত নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য শ্বাস নিল। দাঁত ভেঙে যায়নি এটাই বড় কথা!

আরশকে তার দিকে তাকাতে দেখে বাঁ-হাত দিয়ে আরশের যে গালে কামড় মেরেছিল সেই গালে থাপ্পড় মারলো। এক হাত দিয়ে আরশ নুসরাতের থুতনি চেপে ধরলো। গাকে চাপ প্রয়োগ করলো অন্য হাত দিয়ে! নুসরাতের মনে হলো দাঁত গুলো মটমট করে সব ভেঙে যাবে। এই বয়সে সে বুড়ি হয়ে যাবে এই আরশের জন্য। আরশের হাত থেকে নিজের থুতনি আর গাল ছুটাতে না পেরে আরশের কপালে পড়ে থাকা চুল দু-হাত দিয়ে চেপে ধরলো। নুসরাত আরশকে গাল এতো জোরে চেপে ধরতে দেখে পা দিয়ে আরশের পেটে লাথ মারলল। আরশ নুসরাতের থেকে কম যায় না। নুসরাতের গালে কামড় মেরে ধরলো। নুসরাত আরশকে ছুটাতে চাইলো আরশ ছাড়লো না। নুসরাত আরশের পিঠে, ঘাড়ে, থাপ্পড় মারতে লাগলো।

আরশ থাপ্পড় খেয়ে ও ছাড়লো না। নুসরাত আরশের গালে দু-হাতের নক বসিয়ে দিল। আরশ নুসরাতের গালে দাঁত বসিয়ে তারপর ছাড়লো। নুসরাত রাগে আরশের গালে থাপ্পড় মেরে বসলো। আরশ এক হাত দিয়ে নুসরাতের দু-হাত আর আরেক হাত দিয়ে দু-পা এক সাথে চেপে ধরল। নুসরাত বসা থেকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। আরশের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইলো আরশ ছাড়লো না। নুসরাতকে চেপে ধরে রেখে গলার খাঁজে দাঁত বসাল। নুসরাত ছটফট করলো। নুসরাতকে নড়াচড়া করতে দেখে পা ছেড়ে দিয়ে ওই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাখলো। নিজের সুবিধা মতো কামড় মেরে সরে আসলো। নুসরাত সমান সমান করার জন্য আরশের চুল চেপে ধরলো। আরশ এবার নুসরাতের চুল ছাড়ল না,সে ও চেপে ধরল।

দু-জনের হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন হেলাল সাহেব, নাছির সাহেব, ইরহাম নাজমিন বেগম, আর লিপি বেগম। নুসরাত আর আরশ দরজার সামনে নিজের বাপ মা চাচাকে দেখে তাকিয়ে বোকা হাসল। দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে দেখল চুল চেপে ধরে দু-জন বসে আছে। নুসরাতের চুল থেকে হাত সরিয়ে এনে ছিটকে দূরে সরে গেল আরশ। তারপর দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে বোকা হাসল হা হা করে।
হেলাল সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,

“বাড়ি ভেঙে ফেলবে নাকি? এই রাতের বেলায় তোমাদের দুজনের ধুম ধারাক্কা শুনে আমাদের যে সমস্যা হবে সেটা ভেবে তো আস্তে ধীরে মারামারি করতে পারো। তোমরা তো জঙ্গলি বোঝলাম, তাই তোমাদের ঘুম নেই, কিন্তু আমরা মানুষ, আমাদের তো রাতে একবার হলে ঘুমাতে হবে। এই রাতের বেলা আবার ঝগড়া বাঁধিয়েছ কেন? কুকুর বিড়ালের মতো না ঘুমিয়ে কুকুরের কামড়া কামড়ি করছো কেন? সারাদিন তো কুকুরের কামড়া কামড়ি করতে দেখা যায় এখন থেকে মনে হচ্ছে রাতে ও দেখা যাবে।
নুসরাত আরশের কাধে ঘুষি মেরে বলল,

” সব দোষ ভাইয়ার।
আরশ মুখের বিকৃতি ঘটিয়ে ভেঙালো নুসরাতকে,
“সব দোষ ভাইয়ার। বললেই হলো সব দোষ আমার!
লিপি বেগম হাত থাপ্পড়ের মতো করে দেখালেন আর একটা কথা বললে তার গালে পড়বে থাপ্পড় গুলো। আরশ চোয়াল ঝুলিয়ে বসে রইলো। নুসরাত নাজমিন বেগমের দিকে তাকাবে না তাকাবে না করে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো নাজমিন বেগম ভয়ংকর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন। একা পেলে আজ আর আস্তো রাখবেন না। বিনা ভেজে কাঁচা গিলে খেয়ে ফেলবেন সেই লুক দিচ্ছেন।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৮

ইসরাত কোনোরকম এলিভেটরের ভিতরে দাঁড়িয়ে রইলো। শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। নিজেকে বলল,আরেকটু অপেক্ষা কর, এই তো আর দুই মিনিট রুমে গিয়ে শান্তির ঘুম দিব। এলিভেটর সাত তলায় এসে খুলে যেতেই ইসরাত পা টেনে টেনে এগিয়ে গেল নিজের ফ্লাটের সামনে। পিন মারার আগেই ওপাশ থেকে দরজা খুলে গেল। ইসরাতের এই অবস্থা দেখে দরজার ওপাশের মানুষ টা কি আঁতকে উঠলো। হয়তোবা একটু আঁতকে উঠলো ঠিক বুঝে গেল না। মুখ তো সবসময়ের মতো গম্ভীর হয়ে আছে।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here