প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪
জান্নাত নুসরাত

পুরুষ কন্ঠটি কানে বজ্রপাত করলো। ইসরাত নিজের হাত ছাড়িয়ে আনলো লোকটার কাছ থেকে। চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল চুপচাপ। বৃষ্টির টপটপ পানিতে ভিজে যেতে থাকলো ইসরাত ও পুরুষটি। পুরুষ টি বিরক্তি নিয়ে তাকালো গোলগাল বিশিষ্ট মেয়েটির দিকে। একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে এতো সময় লাগে নিজ মনে ভাবলো। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে উত্তর আসলো মেয়েটার কাছ থেকে।
” আমি বৃষ্টিতে ভিজছি না ভাইয়া।
ছোট্ট উত্তর করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। পুরুষ টি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো ইসরাতের যাওয়ার দিকে। তাকে কি মেয়েটা চিনতে পারেনি? হয়তোবা! অনেক বছর পর দেখা হওয়ার জন্য।

রাতের খাবার এক এক করে খাওয়া হলো। প্রথমবারে খেতে বসলেন সৈয়দ বাড়ির পুরুষেরা ও ছেলেরা। দ্বিতীয়বার বসলেন বাড়ির মেয়েরা ও মহিলারা। খাওয়া দাওয়া শেষে পুরুষেরা সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেলেন।মহিলারা কিচেনের কাজ শেষ করে রুমে চলে গেলেন।
রাত২:০০,
টার্কিস সিরিজ দেখছিল নুসরাত। লাস্ট পর্ব দেখা শেষে বিছানা থেকে উঠে বসলো। শরীর মেজমেজ করার জন্য হাত উপরের দিকে তুলে শরীরের আলসি কমালো। পাশে তাকিয়ে দেখল ইসরাত পাকিস্তানি ড্রামা দেখছে।
“ঘুমাবি না?
“ঘুমাবো একটু পর! এইটা শেষ করে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুসরাত ইসরাত কে ছেড়ে দিল ওর মতো। রুমের দরজা খুলে বের হলো। পুরো বাড়ি অন্ধকার দেখলো। হাত দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে সিঁড়ির দিকে গেল। অন্ধকারে নুসরাতকে দেখতে কিছুটা ভুতের মতো মনে হলো। নিজের পিছন থেকে হাঁটার শব্দ শোনে হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো নুসরাত। অন্ধকারে পরিস্কার মুখ দেখা না গেলে শরীরের গঠনে মনে হলো কোনো পুরুষ। হাঁটা থামালো! পুরুষটাকে জায়ান মনে করে ডাকলো,” জায়ান ভাইয়া!
অপরপাশ থেকে কোনো শব্দ ভেসে আসলো না। উত্তর আসতে না দেখে নুসরাত আর কোনো কথা না বলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলো। অন্ধকার থাকায় পা পিছলে পড়ে যেতে নিতেই পুরুষালি হাত কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। এমন সময় মেহেরুন নেছা নিজের রুম থেকে বের হলেন। মেহেরুন নেছার রুমের আলো এসে নুসরাতের চোখের উপর পড়ল। হাত দ্বারা নিজের মুখ ঢাকা দিল নুসরাত, আলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য। ততক্ষণে পুরুষালি হাতের বাহিরে চলে এসেছে সে।

“কি রে দুটো কি পিরিত করতাছস?
আকস্মিক এমন প্রশ্নে নুসরাত ভয় পেয়ে গেল। মেহেরুন নেছার অগোচরে বুকে ফু দিয়ে চোখ নাক বিকৃত করে নুসরাত বলল,” ইয়াক! দাদা এসব কি বল?
“তাইলে দুইটা এইহানে কি করছ?
“তোমাকে এক্সকিউজ দিতে আমি বাধ্য নই!
মেহেরুন নেছার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শরীর দিয়ে হালকা ধাক্কা দিল। মেহেরুন নেছা ও কম যান না, তিনি হাত তুলে ঠাস করে নুসরাতের পিঠে থাপ্পড় মারলেন। থাপ্পড় খেয়ে পিছন ফিরে তাকালো না। মেহেরুন নেছাকে রাগানোর জন্য হেসে উঠলো নুসরাত।

“দাদা তোমার হাতের জোর কমে গিয়েছে। একটু ও ব্যাথা লাগেনি। বুড়ি হয়ে গিয়েছ বুঝাই যাচ্ছে।
হাঁটার তালে খোপা করা চুলগুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে পড়ল। আরশ তাকিয়ে তাকলো ফিনফিনে শরীরের মেয়েটার যাওয়ার দিকে। দু জনের কথোপকথন পিছনে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ শুনছিল সে চুপচাপ। এই ঝগরুটে মেয়ের মুখ দেখার ইচ্ছে জাগলো। ইচ্ছেকে ধামাচাপা দিয়ে কিচেনের দিকে গেল।
মেহেরুন নেছা কখন থেকে আরশের পিছনে পড়ে আছেন নুসরাত আর তার মধ্যে এতক্ষণ কি হচ্ছিল জানার জন্য?আরশ কফি বানাতে বানাতে বলল,” কিছু চলছিল না।
“আমি জানি তোগো মইধ্যে কিছু চইলতাছে।

“দাদি কোনো কিছুই চলছে না? তুমি আজব কথাবার্তা বলছ? ওই মেয়ের মুখ পর্যন্ত আমি এখনো দেখিনি আর তুমি কি না কি ভেবে বসে আছো? তোমার চিন্তাভাবনা ঘড়ির কাটার তোলনায় আরো দ্রুত চলে।
“একটু আগে দেখলাম, তোরা দুইটা জড়াজড়ি করতাছিস।এইখন আমারে বুড়ি পাইয়া বোকা বানাইবার চাও? তুমি কি নাটক দেখাইলা আরশ। আর মুখ দেখনি এইডা আমারে বিশ্বাস করবার কও। হুহ..আমি বুঝি সব বুঝি!
” আজগুবি কথাবার্তা বল! কি বুঝ তুমি? যাও ঘুমাতে যাও!ঘুমের চোখে কি দেখতে কি দেখেছ? আর নাটক কি দেখাব? আজব কথা বলো দাদি।

মেহেরুন নেছাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরশ উনার রুমে ঢুকিয়ে দিল।
“আরশ আমি সব দেইখা লইছি। কাইল সকালে সবাইরে কইমু তুই আর নুসরাত ইন্টু পিন্টু করতাছিলি।
মেহেরুন নেছার কথা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে উড়িয়ে দিল আরশ।
“আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পরো! গতকাল সকালে যা করার করো! যা বলার বলো! এখন ঘুমাও তো দাদি ঘুমাও!

রৌদ্রজ্জ্বল সকাল। হাতে পানির পাইপ নিয়ে ইসরাত বাগানে পানি দিচ্ছিলো। অতিরিক্ত গরম পড়ায় রোদের তাপে গাছগুলো মুছড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ বাড়ির দিকে চোখ গেলে দেখতে পেল গ্রে কালার শার্ট, ব্ল্যাক কালার প্যান্ট,পরিহিত সুঠাম দেহের পুরুষ হেঁটে এদিকে আসছে। ইসরাত চোখ আলগোছে সরিয়ে নিল।
“কি করছো?
“বাগানে পানি দিচ্ছি দেখতে পাচ্ছেন না ভাইয়া।
“নাহ,এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
” নাস্তা করে ফেলেছ?
” এখনো করিনি! একটু পর করব ভাইয়া।

“চলে আসো! এক সাথে নাস্তা করব। আমি এখনো নাস্তা করিনি!
ইসরাত কথা না বাড়িয়ে জায়িনের সাথে বাড়ির ভিতর গেল। নাস্তার টেবিলে বসতেই অনিকা এসে নাস্তার টেবিলে জায়িনের সাথে লেগে বসলো।
” নাস্তা করেছিস?
“হ্যাঁ করেছি!
” ভাইয়া সাথে একবার করে নাও। বলে পরোটা বের করে অনিকা কে দিল।
“ইসরাত তোমাকে কিছু দিব?
” না ভাইয়া! লাগবে না! আমার শেষ।
জায়িনের মুখ চুপসে গেল। ইসরাত নাস্তা শেষ করে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

রুমে গিয়ে নুসরাত কে মুচড়া-মুচড়ি করতে দেখলো। মাথা বিছানার দিকে দিয়ে বালিশ চেপে ধরে শুয়ে আছে। শরীরে হাত দিয়ে তাপ পরীক্ষা করে দেখলো স্বাভাবিক আছে কিনা?ফজরের ওয়াক্তের নামাজের পর থেকে পেট ব্যথার জন্য কান্না করছিল। শরীর ঠিক থাকলে এতক্ষণে কথা বলতে বলতে কান ঝালাপালা করে দিতো। এমন সময় রুমের দরজায় নক পড়ল।
“দরজা খোলা আছে ভিতরে আসো।
আরশ বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। ভিতরে কাউকে শুয়ে থাকতে দেখে।
” ইসরাত তোমার ল্যাপটপ টা একবার দেওয়া যাবে। আসলে ব্যবসার কিছু ডকুমেন্টস তোমার ল্যাপটপে আছে চাচা বলল।
“হ্যাঁ হ্যাঁ দিচ্ছি ভাইয়া।
বইয়ের টেবিলের উপর থেকে ইসরাত ল্যাপটপ এনে দিল আরশকে।

” পাসওয়ার্ড কি?
“১৪২১১৯১৮১২০ ভাইয়া যদি ভুলে যান, তাহলে নুসরাতের নামের এলপাভেটের সংখ্যা আকারে গণে নিবেন।
“ওহ! ও এরকম সাপের মতো পেঁচিয়ে শুয়ে আছে কেন?
” নুসরাতের শরীর খারাপ করেছে।
“ইসরাত ওকে বলবে যাতে চুল গুলো বান করে রাখে। সবসময় অগোছালো তাকে ওর চুল। আমার কী রকম লাগে দেখতে?
ইসরাত নুসরাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মাঝামাঝি আকারের লম্বা চুল গুলো অগোছালো ভাবে মুখের উপর পড়ে একপাশ ঘুরে রেখেছে।

“মেয়েটা কে বলেও চুল বান করা যায় না। এজন্য আম্মু মাঝে মাঝে দু-একটা থাপ্পড় মারে।
দরজার সামনে থেকে চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এলো আরশ।
” ভাইয়া আর কিছু দরকার?
“আর ওকে বলে দিবে ছেলেদের মতো জিন্স আর টি-শার্ট না পরতে। মেয়ে মেয়ের মতো থ্রি-পিস, না হলে কুর্তা পরতে, আমার পছন্দ নয় মেয়েদের এসব কাপড় পড়া। ও অনেক শব্দ করে কথা বলে, মেয়ে মানুষ গলা ফাটিয়ে কথা বলা ও আমার পছন্দ নয়। আর এসব করলে ওকে বলবে আমার সামনে না পড়তে। পরে আমি কিছু বলে দিলে ভালো হবে না।
“ঠিক আছে ভাইয়া।
কথাগুলো বলে আরশ চলে গেল বড় বড় পা ফেলে। ইসরাত বিড়বিড় করে বলল,” এদের যদি সামনাসামনি দেখা হয় তাহলে কি হবে? নুসরাত তো কারোর কথা শোনার পাত্রি নয়। এবার মনে হচ্ছে বাড়িতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যাবে। বিড়বিড় করা শেষে ইসরাত রেডি হতে গেল।

“ইসরাত চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে? ইসরাত সোনা রাগ করে না, রাগ করলে তোমায় লাগে আরো ভালো…
ইসরাত পায়ের জুতো খুলে হাতে নিল। এতোদিন ধরে এর আজব আজব কথা শোনে বিরক্ত। জুতো খুলে ঢিল মারল ছেলেটার মাথায়। নিশানা ঠিকঠাক, ছেলেটার মাথা বরাবর গিয়ে পড়ল জুতো।
ছেলেটা হয়তো বুঝতে পারেনি ইসরাত জুতো খুলে ঢিল মারবে। আকস্মিক এমন ঘটনায় ছেলেটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে তাকালো।
“আজ তোর একদিন কি, আমার একদিন।
ইসরাত বাঁ পায়ের জুতো খুলল পিটানোর জন্য। পিটানোর আগেই বাইক নিয়ে শো করে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ছেলেটা।

“বেবি, আজকে মনে হচ্ছে তোমার মাথা গরম। আগামীকাল দেখা করব, বেবি।
ফ্লায়িং কিস দিয়ে বলল, বায় বায়।
ইসরাত হতে পাঁচ হাত দূরে বাইক থামিয়ে আবার বলল, “বেবি, কাল দেখা করব, আজ তুমি ভার্সিটিতে যাও! কেমন? উম্মাহ!
“শালা বদমাস! আরেকদিন হাতের কাছে পাই, পিটিয়ে তোর অবস্থা কি করি দেখিস? আর যে মুখ দিয়ে ফ্লায়িং কিস দিচ্ছিস, ওই মুখই আমি বাঁকিয়ে দিব।
জুতো পরতে পরতে চিৎকার করে বলল ইসরাত।
“বেবি, টা টা বায় বায়।
বাইক নিয়ে শো করে চলে গেল ছেলেটা।

নাজমিন বেগম রুমে এসে দেখলেন নুসরাত এখনো ঘুমিয়ে আছে। হাত দিয়ে ধাক্কা দিলেন, নরম সুরে বললেন,
‘কিছু খাবার খেয়ে নে?
”খাবো না! পেট ব্যথা করছে।
”এখনো কমেনি।
পেট ব্যথার জন্য টেনে টেনে কথা বলল,
”নাহ।
”যা গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আয়। আমি পানি গরম করছি। শাওয়ার নিলে ভালো লাগবে। কিছু খাবারও খেয়ে নিবি।
“খাব না।
”চুপচাপ নিচে নেমে এসে টেবিলে বসবি! আমার যেন আবার তোকে না ডাকতে হয়।
নুসরাত ত্যাড়ামি করল না। পেট ব্যথার জন্য কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।

নাস্তা শেষ করে চুপচাপ রুমে যাওয়ার পথে মেহেরুন নেছা পিছন থেকে ডাকলেন “আমার রুমে আয়।
রোবটের মতো হেঁটে গেল দাদির রুমে। মেহেরুন নেছা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন উনার পাশে বসার জন্য । আজ আর গায়ে লেগে বসলো না নুসরাত,নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে বসল।
” আজ এতো চুপচাপ হইয়া রইছস ক্যা?
“পেট ব্যথা করছে।
মেহেরুন নেছা বুঝে নিলেন যা বুঝার। প্রতি মাসেই এরকম হয়, পেট ব্যথার জন্য দু-এক দিন বাচাল মেয়েটা চুপচাপ হয়ে যায়। মেহেরুন নেছা এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকলেন। অনুশোচনায় তার ভিতর দগ্ধ! সময় থাকতে কেন মানুষ বুঝে না পরে গিয়ে সেটার জন্য আফসোস করতে হবে? তাহলে এরুপ ভুল করত না কেউই!
মেহেরুন নেছা পান চিবাতে চিবাতে ভাবলেন, বাড়িতে বড় চাচা,বড় ভাইয়েরা থাকায় আজ আর চিৎকার করছে না। নাহলে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলত।

মেহেরুন নেছা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন নুসরাতের। দোয়া পরে ফু দিয়ে দিলেন।
“কইমা যাইবো পেট ব্যথা আইজ রাইতের মধ্যে চিন্তা করবার লাগব না। আর আরশের থাইকা দূরে থাকিস। ও তোরে মনে হয় পছন্দ করে না।
নুসরাত শুধু মাথা নাড়ালো। পেটে এক হাত চেপে নিজের রুমের ভিতর ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। আরশ এসেছিল ল্যাপটপ দেওয়ার জন্য, নক করার আগে ঠাস করে দরজা লাগানোর জন্য অপমানিত বোধ করলো।
” আমাকে অপমান করার জন্যই দরজা লাগিয়েছে এভাবে।
নিজ মনে মনগড়া কথা ভেবে নিল আরশ। ওপাশের মেয়েটা জানতে পারলো না দরজা বাহিরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

ইসরাতের ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখা হলো জায়ান আর মমোর সাথে। দু-জন ফুচকা খেতে বের হয়েছে। জায়িন ইসরাত কে জিজ্ঞেস করল এই এড়িয়ার ভিতর কোনো ফুচকা হাউজ বা রেস্টুরেন্ট আছে কি না?
ইসরাত সনান্দে উত্তর দিল,
“সামনে একটা শপিংমলের উপরের তলায় দারুণ ফুচকা পাওয়া যায়। দু-জন ওখানে গেলে যেতে পারো।
” ইসরাত তুমিও জয়েন কর আমাদের সাথে।
“আমায় বাসায় যেতে হবে ভাইয়া। নুসরাত একা বাসায়। ও বোরিং ফিল করবে! কোনো একদিন আমরা সবাই মিলে ফুচকা খেতে রেস্টুরেন্টে যাব।
” আচ্ছা সাবধানে যাও বাসায়। আমরা তাড়াতাড়ি আসছি ফুচকা খেয়ে।

ইসরাত বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে দেখল ড্রয়িং রুমে মাহাদি বসে আছে। সালাম দিল মাহাদিকে ইসরাত। মাহাদি ও সালামের উত্তর দিল। ইসরাত কোনো শব্দ ব্যয় না করে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। লিপি বেগম কিচেন থেকে ডেকে বললেন,”আরশকে নিচে আসার জন্য বলিস! আর বলে দিস মাহাদি এসেছে।
“আচ্ছা।
আরশের রুমের বাহির থেকে ইসরাত বলল,
” ভাইয়া আপনার ফ্রেন্ড আসছে, বড় আম্মু বলছে নিচে যাওয়ার জন্য। আপনার ফ্রেন্ড ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
রুমের ভিতর থেকে উত্তর দিল আরশ,
“আচ্ছা যাচ্ছি। অপেক্ষা করতে বলো।
ইসরাত মেহমানের কথা বলে রুমে চলে গেল। বিছানায় তাকিয়ে দেখলো নুসরাত শুয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুইটা বাজে।

“পেট ব্যথা কমেছে?
” হুম কমেছে।
“আরেকটা ঔষধ খেয়ে নিস।
” আচ্ছা।
কথা বলা শেষ করে শাওয়ার নিতে চলে গেল ইসরাত। শাওয়ার শেষ করে বের হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে। ইসরাত লেডিস গেঞ্জি আর প্লাজু পরেছে। নুসরাত ইসরাত কে জ্বালানোর জন্য বলল,”আজ কীভাবে গেঞ্জি পরলি? দাদা দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাবে। তার সুশীল নাতনি এসব কীভাবে পড়ছে? ওতো এসব পরতে পারে না। ও এম জি…
” দূর গরম প্রচুর লাগছে। গরমের কারণে কি মারা যাব? রুম থেকে বের হলে থ্রি-পিস পরব। তুই দাদির মতো ঠেস দিয়ে কথা বলা শিখে গিয়েছিস।
নুসরাত বোনের কথা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে উড়িয়ে দিল। এসব কথা সে পাত্তা দে না।

“আরে মাহদি এহসান খানের পদধূলি কীভাবে আমাদের বাড়িতে পড়ল?
” হয়েছে, নাটক বন্ধ কর!
“আগামীকাল আসার জন্য বললি! কোনো দরকার?
” না, তেমন কিছু না! ছোটো খাটো দরকার রুমে গিয়ে বলছি ।
এরমধ্যে লিপি বেগম ও রুহিনি নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন।নাস্তা টেবিলে রেখে কিচেনে চলে গেলেন দুই বন্ধুকে একা ছেড়ে দিয়ে। অনিকা উপর থেকে একটা অপরিচিত ছেলেকে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে নিচে নেমে আসলো। চিনা নেই জানা নেই ছেলেটার গায়ে গা লাগিয়ে বসে গেল।আরশ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অনিকা কে ধমক দিল। বজ্র কন্ঠে ধমক শুনে বাড়ির কর্তীরা কিচেন থেকে বের হয়ে আসলেন। আরিশা, ইরহাম,ইসরাত,জায়ান,সবাই দু-তলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসলো।

লিপি বেগম বললেন,
“কি হয়েছে বাবা? কাকে ধমক দিলি?
অনিকার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ” ও ম্যানার্স জানে না। ও কে ভালো করে ম্যানার্স শিখিয়ে দিবে। আর অনিকা তুই, তোকে যেন দ্বিতীয় বার এমন করতে না দেখি! দেখলে তোর গালগুলো থাপড়ে লাল করে ফেলব। অসভ্য মেয়ে।! বড়দের সাথে কীভাবে থাকতে হয় কেউ শেখায়নি? ওকে চিনিস তুই যে, ওর সাথে লেগে বসেছিস।
সবাই উপর থেকে নিচ তলায় নেমে আসলে ও নুসরাত উপরের তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরশ কে দেখতে লাগল।ওখান থেকে দাঁড়িয়ে সকলের অগোচরে আরশকে মিডিল ফিঙ্গার দেখিয়ে বলল,”উনি বাল করবেন! শালার এতো ভাব কোথায় থেকে আসে?

ইসরাতের চোখ হঠাৎ দ্বিতীয় তলার দিকে গেল। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো “মেয়েটা এসব কি করছে?
নিশ্চুপ পরিবেশে ইসরাতের কথা অনেক জোরালো শুনালো! সবাই ইসরাতের চোখ অনুসরণ করে উপরে তাকিয়ে দেখল আস্তে আস্তে হেঁটে নুসরাত রুমের দিকে যাচ্ছে। আরশ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তাকলো শ্যামলা বর্ণের মেয়েটার পিছন দিকে। আজ ও মুখ দেখতে পারলো না সে!
নাজমিন বেগম ডাকলেন,
” এই নিচে এসে খাবার খেয়ে যা।
নাজমিন বেগমের কথা উত্তর রুম থেকে চিৎকার করে দিল,
“এখন খাব না! খিদে পায়নি! তুমি খেয়ে নাও আম্মা!।ইসরাত রুমে আয় কথা আছে।
বিড়বিড় করে বলল আরশ,
“কি বেয়াদব মেয়ে বড় বোনের নাম ধরে ডাকে? এই মেয়ের দেখেই অনিকা বেয়াদব হয়েছে।
পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিল মাহদি।
মাহদি কন্ঠ নিচে নামিয়ে বলল,

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৩

” ওর কি দোষ? তুই দেখছি মেয়েটা কে পছন্দই করিস না। গতকাল রাতে মেয়েটার বিষয় নিয়ে আমাদের বাসায় এসে চির চির করেছিস আর আজ ও। মেয়েটা তোর সাথে নিজে থেকে এসে কথা না বলার জন্য,তোকে পাত্তা দিচ্ছে না,তোর মতো এতো সুন্দর একটা ছেলেকে তাই তুই ওর ওপর জেলাস তাই না। ভেরি ভেরি বেড আরশ।
“তুই ওর এতো পক্ষ নিচ্ছিস কেন? তুই আমার ফ্রেন্ড না ওর ফ্রেন্ড।
মাহাদি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বিড়বিড় করে বলল,
” তোর বোনের!
আরশ দাঁত খিচে বলল,
”কি?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here