প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫০

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫০
জান্নাত নুসরাত

রাতের বেলায়। মেশিনারি জিনিস দিয়ে আবৃত রুম। ইসরাত নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আবার চোখ বুজে নিল। নাকে ফিনাইলের গন্ধ আসছে সাথে মাথা যন্ত্রনায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। আবার চোখ খুলে তাকালো। ঝাপসা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমটা দেখলো। সাদা পর্দা উড়ছে বাহিরের হালকা বাতাসে। চারিদিকে থেকে শুধু কানে ভিপ ভিপ শব্দ আসছে। জানালার বাহিরে চোখ দিল ইসরাত। স্নো ফল হচ্ছে। স্নো-ফলের কারণে সামনে বিস্তৃত জায়গায় সাদা হয়ে আছে। ইসরাত সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের কোণ গলে এক ফোটা পানি বের হয়ে আসলো। শূন্য চোখে জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আসলো।

ডাক্তার এসে ঢুকল ক্যামেলিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে কেবিনের ভিতর। ডাক্তার কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেল কেবিনের বাহিরে।
ইসরাত যতটুকু বুঝল অতিরিক্ত চিন্তা আর স্ট্রেস নেওয়ার ফলে প্যানিক এ্যাটাক করেছে। ইসরাত ক্যামেলিয়ার দিকে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
ক্যামেলিয়া ইসরাতের পাশের টেবিল থেকে ফ্রুটস হাতে নিয়ে নাইফ দিয়ে কাটতে লাগলো। ইসরাত কে ইশারা করলো ফ্রুটস খাওয়ার জন্য। ইসরাত একবার ভাবলেশহীন নজরে ফ্রুটসের দিকে তাকিয়ে অনিহা নিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
ইসরাত ক্যামেলিয়ার দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমার মোবাইল কোথায়?
ক্যামেলিয়া মুখ কালো করে নিল। মিন মিন করে বলল,
” তখন তুমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর মোবাইল হাত থেকে পড়ে গিয়ে ডিসপ্লে চলে গিয়েছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু টাচ কাজ করছে না।
ইসরাত মুখ গম্ভীর করে শুয়ে রইলো। চোখ বুজে ক্যামেলিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলল,”তোমার মোবাইল সাথে আছে!
ক্যামেলিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। ইসরাত কথা বলতে ইচ্ছে করলো না। শরীরে অন্যরকম অস্বস্তি অনুভব করছে।চোখ বুজে থেকেই আদেশের স্বরে বলল,”আমি যে নাম্বার বলছি, সেটা টাইপ করে তোমার মোবাইল দাও আমার কাছে।
ইসরাত টেনে টেনে নাম্বার বলল। ক্যামেলিয়া নাম্বার ডায়েল করে ইসরাতের হাতে দিল। ইসরাত চোখ বুজে ফোন কানে চেপে ধরে রাখলো।
গম্ভীর গলায় বলল,

“আমার স্পেস চাই ক্যামেলিয়া।
ইসরাতের আর কোনো শব্দ ব্যয় করতে হলো না। ক্যামেলিয়া চুপচাপ কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। রিং হয়ে কল কাটার সেকেন্ড আগে নুসরাত কল ধরলো।
নুসরাত ফিসফিস করে বলল,
” হ্যালো! কে বলছেন?
ইসরাত হায় হ্যালো করলো না। সোজা কথায় আসলো।
ছোট শব্দ ব্যবহার করে বলল,”আমি দেশে আসছি।
নুসরাত বিকট শব্দে চেচিয়ে উঠলো।
“কি?

নুসরাত নিজেকে ধাতস্ত করে নিল। একবার গাড়িতে তার পাশে বসে থাকা আরশের দিকে চোরা চোখে চেয়ে নিল। যে তার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে আছে।
নুসরাত চোখ সরিয়ে এনে ফোন কানে লাগাল।ফোনের দিকে তাকিয়ে আরেকবার নিজেকে ধাতস্থ করে নিল এটা ইসরাত। ইসরাতের উদ্দেশ্যে বলল,”কবে আসছিস? আর কখন?
ইসরাত অনেক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“এখনো প্রসেসিং করিনি! আর্জেন্ট ব্যবস্থা করে আসছি!
নুসরাত যথাসম্ভব গলার আওয়াজ নামিয়ে বলল,
“বাড়িতে কাউকে জানিয়েছিস!
“না!
” কেন?

“কারণ আমি বাড়িতে ফিরছি না। তোকে ও জানাতাম না, কিন্তু তুই আমার জন্য ফ্ল্যাট দেখবি বাংলাদেশে তাই জানিয়েছি।
নুসরাত ইসরাতের কথা বাতাসে উড়িয়ে দিল। তার কাছে মনে হলো ইসরাতের থাকার বিষয় নিয়ে পরে ভাবা যাবে।
” আচ্ছা! সবকিছুর আপডেট টাইমে টাইমে আমাকে দিস! আমি অপেক্ষায় থাকবো!
“আচ্ছা!
ইসরাত ফোন কাটতে নিল নুসরাত বলল,
” এই দাঁড়া! কল কাটিস না!
ইসরাত বিরক্তির গলায় বলল,
“আবার কি?

“তোর গলা এমন ভাঙা ভাঙা মনে হচ্ছে কেন? তুই কি অসুস্থ? ভিডিও কল দে তো এরকম ভিপ ভিপ শব্দ তোর কাছ থেকে আসছে কেন? তুই কি হসপিটালাইজড?
ইসরাতের গলা কিছুটা কেঁপে উঠলো। গলা পরিস্কার করে বলল,”আমি হসপিটালিজাইড এমন কেন মনে হলো তোর কাছে?
“না তোর কথা শুনে সন্দেহ হচ্ছে! আবার প্যানিক এট্যাক হয়েছে নাকি?
ইসরাত থতমত খেল। ঢোক গিলে নুসরাতের সাথে কথা শেষ করতে চাইলো, ধরা পরার ভয়ে।
” না তেমন কিছু না!
নুসরাত কথা থামিয়ে দিয়ে নিজের কথা ঢুকিয়ে দিল।
“তাহলে কেমন কিছু? আমার নাকে কিরকম হসপিটালের গন্ধ আসছে। আর ইউ অলরাইট ব্রাহ!
” ইয়াহ আই এম! আচ্ছা ভালো থাক পরে কথা বলবো।
নুসরাতের কথা না শুনেই ইসরাত কল কেটে দিল। নুসরাত কান থেকে ফোন নামিয়ে মুখের সামনে ধরে বলল,”যাহ বাবা কল কেটে দিল। কি এমন তাড়া যে কল কেটে দিল এতো তড়িঘড়ি করে? আমাকে বিদায় নিতেই দিল না।

গাড়ির কোণ ঘেঁষে বসে আছে নুসরাত। আরশ মুখ চোখ শান্ত করে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ির সাথে আরেকটু কোণ ঠাসা হয়ে বসলো মেয়েটা। জানালার উপর হাত রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। শা শা করে বাতাস এসে জানালার ভিতর প্রবেশ করেছে। বাতাসের ঝাপটায় নুসরাতের চুল গুলো উড়ছে। হঠাৎ করে নুসরাতের নাক পিটপিট করতে শুরু করলো। নাক মুখ কুঁচকে হা হা হাঁচ্চু দিয়ে উঠলো। নাক হাতের পিঠে ঘষে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরশ চুপচাপ গ্লাস তুলে লক করে দিল।
নুসরাত ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো আরশের দিকে। শাহপরান বাজারে আসতেই ছোট খাটো একটা জ্যামের সৃষ্টি হলো। নুসরাত আরশের দিকে না তাকিয়ে বলল,”গাড়ির কাচ নামান?
আরশ কথা বাড়ালো না, গ্লাস নামিয়ে দিল। নুসরাত চোখ বের করে বাহিরের জ্যাম দেখতে লাগলো। একটা ছেলেকে গাজরা বিক্রি করতে দেখে নুসরাত ছেলেটাকে গাড়িতে বসে চিৎকার করে ডাক দিল।
“এই যে,এদিকে আসো!

আরশ চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারিদিকে তাকালো। কেউ কি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা একবার খেয়াল করে নিল। যখন দেখলো কেউ তাকাচ্ছে না তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” মাঝ রাস্তায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছিস কেন? ভদ্র মানুষের মতো আচরণ করা যায় না!
“আপনি তো জানেন আমি অভদ্র তাহলে কেন ভদ্র মানুষের মতো আচরণ করবো? আর আমি মাঝ রাস্তায় এভাবে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি। প্রয়োজন হলে গলা খুলে হাতে নিয়ে চিৎকার করবো।
আরশ এই পাগলের সাথে কথা বাড়ালো না। ছেলেটা নুসরাতের দিকে গাজরা নিয়ে এগিয়ে আসলো। নুসরাত ছেলেটার থেকে চোখ ফিরিয়ে আরশের দিকে মিটমিট চোখে তাকাল। আরশ নুসরাতকে মিটমিট করে তাকাতে দেখে নিজে ও ভ্রু বাঁকা করে তাকালো । তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কি?
নুসরাত ঝটপট উত্তর দিল,

“কিনে দিন?
আরশের সোজা জবাব,
” পারবো না।
নুসরাত দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করল। আরশ পাত্তা দিল না, নুসরাতের দৃষ্টি।
“আমি একজন ওয়েল ডিপেন্ডেন মেয়ে। আমার জিনিস আমি নিজে কিনতে পারি। অন্য কারোর আমার দরকার নেই।
আরশ চোখ উল্টে নিল। নুসরাত নিজের প্যান্টের পকেট থেকে ৫০ টাকার নোট বের করলো। যা দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে অবস্থা যাতা। ৫০টাকা পকেটে পেয়ে নুসরাত বিজয়ের হাসি হাসল।
আরশ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে যাবে তার আগেই দেখলো নুসরাত ছেলেটাকে দাঁড়াতে বলে গাড়ির কাচ তুলে ফেলল। আরশের কিছু বোঝে উঠার আগে নুসরাত নিজের হাত নিয়ে আরশের প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। মানিব্যাগ টেনে বের করতে নিলে আরশ এক হাত দিয়ে নুসরাতের হাত চেপে ধরলো প্যান্টের উপর থেকে। নুসরাতের হাত থেকে মানিব্যাগ নেওয়ার জন্য নিজের হাত ঢুকাল প্যান্টের পকেটে। নুসরাতের হাত থেকে মানিব্যাগ আলগোছে নিয়ে এসে নিজের হাতের মুঠোয় রাখলো।
নুসরাত করুণ চোখে তাকিয়ে থেকে বড় গলায় বলল,

” আমি কে?
আরশ ভ্রু বাঁকালো। অনিহা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কে?
” আমি স্ত্রী!
আরশ কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরে জানালার বাহিরে চোখ রাখলো,হাসি আটকানোর জন্য। হালকা কপাল ঘষে হাসি থামিয়ে নুসরাতের দিকে আবার ফিরে তাকাল।নুসরাত তিক্ত বিরক্ত হয়ে বলল,” আরে ভাই দিচ্ছেন না কেন? আমি তো আপনার বউ তাই না! আপনার টাকা মানে আমার টাকা, আমার টাকা মানে আমার টাকা।
আরশ গম্ভীর মুখ বানিয়ে বসে রইলো। নুসরাত চোখ ঝাপটে বলল,”ভাই দিয়ে দিন। এগুলো তো আমার অধিকার। প্লিজ দিয়ে দিন! আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না প্লিজ!
নুসরাতের এতো কথায় আরশ গলল না। মেয়েটা বুঝলো এই শালাকে এভাবে পটানো যাবে না। অন্য ট্রিকস ব্যবহার করা লাগবে।

” চলুন ডিল করি! আপনি আমাকে গাজরা কিনে দিবেন আমি আপনাকে এর বদলে আপনি যা চাইবেন তা একটা কিছু দিব। একটা কিছু দিব,দুটো না।
আরশ এবার মানলো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হয়ে হাসল। গ্লাস নামিয়ে আরশ ছেলেটাকে তার দিকে আসার জন্য বলল।
“কত টাকা?
” বেশি না ভাই ১টা মাত্র ৭০ টাকা।
আরশ বিড়বিড় করে বলল,
“একটু বেশি দাম!
নুসরাত গালি দিতে গিয়ে মুখ আটকালো। ধীরে ধীরে বলল,” কিপটের বংশধর।
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কয়টা গাজরা নিবি?
” এই তো একটা!
“একটা দিয়ে কি করবি তুই?
” ভিডিও বানিয়ে ইন্সটাগ্রামে স্টোরি দিব।
আরশ বিরক্ত হলো। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কয়টা গাজরা আছে তোমার কাছে?
ছেলেটা গুণে বলল,
” এই তো দশটার মতো!
আরশ গম্ভীর গলায় বলল,
“সব দিয়ে দাও!
গলা নামিয়ে বলল,
” কত টাকা দিব?
“ভাই সাতশত টাকা।
আরশ নুসরাতের দিকে হাত পাতল। নুসরাত ভ্রু উঁচিয়ে নিল। বুঝলো না আরশ কেন হাত পাতছে?

” পঞ্চাশ টাকা দে?
নুসরাতের মুখ লটকে গেল। মুখ হা করে এগিয়ে দিল পঞ্চাশ টাকা। মিনমিন করে বলল,”পঞ্চাশ টাকা ও নিতে হবে?
আরশ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। ছেলেটার হাতে দুটো পাঁচশত টাকার নোট গুজে দিল। নুসরাতের থেকে নেওয়া পঞ্চাশ টাকা মানিব্যাগে রাখলো।
“দাও গাজরা!
ছেলেটা সব গাজরা এগিয়ে দিল আরশের দিকে। আরশ হাত বাড়িয়ে গাজরা গুলো নিল। নুসরাত হাত বাড়ালো গাজরা নেওয়ার জন্য আরশ দিল না।
” কি? দিচ্ছেন না কেন?
“দাঁড়া গাড়ি এক পাশে সাইড করে দিচ্ছি!
আরশ জ্যাম ছুটতেই গাড়ি রাস্তার এক পাশে সাইড করল। নুসরাত অধির আগ্রহ নিয়ে গাজরার দিকে তাকিয়ে আছে। তার বর্তমানে সব আগ্রহ গাজরার দিকে।
আরশ গম্ভীর কন্ঠে ডাক দিল,

” নুসরাত!
নুসরাত অন্যমনষ্ক হয়ে বলল,
“হু!
” ডিলের কথা মনে আছে।
নুসরাত উচ্ছাসিত হয়ে বলল,
“জি!
আরশ আদেশের স্বরে বলল,
” তাহলে ডিল পূরণ কর।
নুসরাত চোখ তুলে তাকালো আরশের দিকে। আরশকে তার দিকে গভীর চোখে তাকাতে দেখে নুসরাত চোখ সরিয়ে নিল। ছন্নছাড়া দৃষ্টি ফেলল এদিক-সেদিক। আবার ফিরে আরশের চোখে চোখ স্থির করলো না। আরশের চোখে আজ কিছু আছে যা নুসরাতের ভিতর নাড়িয়ে দিয়েছে। চোখের পাতা অগোছালো ভঙ্গিতে ফেলল মেয়েটা।
আরশ শান্ত গলায় বলল,

“আমার দিকে তাকা?
নুসরাত তাকালো না। আজ আরশের দিকে তাকালে তার সর্বনাশ নিশ্চিত। অগোছালো ভঙ্গিতে এদিক সেদিক চোখ ঘুরাল। তবুও একবারের জন্য আরশের পানে তাকালো না।
আরশ ডিপ গলায় বলল,
” তাকাবি না তাই তো। আচ্ছা ঠিক আছে! গাজরা নিবি নাকি আমি ফেলে দিব?
নুসরাত নিজেকে ধাতস্ত করে নিল। বুক ভর্তি করে শ্বাস টেনে নিল। এবার নির্লিপ্ত চোখ তুলে তাকালো সামনে বসা ছেলেটার দিকে। আরশের দিকে তাকাতেই বুক কেঁপে উঠলো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে চুপচাপ দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলালো।
“আমি এখন যা করবো তার জন্য আমি পারমিশন নিব না। তুই বলেছিস তুই আমাকে একটা কিছু দিবি তো এখন তা আমি নিব।
নুসরাত নাক মুখ বিকৃত করে বলল,

” প্যাঁচাল না করে বলে ফেলুন কি নিবেন?
নুসরাতের কথা মুখে আটকে গেল। পরের কথা আর বলতে পারল না। আরশ নুসরাতের খোপা করা চুল গুলো চেপে ধরে টেনে নিয়ে আসলো সামনের দিকে। নুসরাত চুপচাপ চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইলো। আরশ কিছু বিড়বিড় করে নুসরাতের আর তার মাঝে দূরত্ব গুচিয়ে দিয়ে নিচের ঠোঁটে সফট চুমু খেল।
মেয়েটার মাথা আরেকটু টেনে সামনের দিকে আনলো। ঠোঁটে চুমু খেতে যাবে নুসরাত থামিয়ে দিয়ে বলল,”একটা কিছু দিব বলেছি আপনি তো দুটো নিয়ে নিচ্ছে…
কথা শেষ করার আগেই আরশ ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট গলিয়ে দিল। নুসরাত কোনো ধরণের রেসপন্স করলো না। নুসরাত কে রেসপন্স করতে না দেখে আরশ ঠোঁটে কামড় মারল। নুসরাত আরশের হাতে থাপ্পড় মারল। আরশকে ছাড়তে না দেখে আরশের মাথা এক হাত দিয়ে পিছনের দিকে ঠেলতে লাগলো। কাজ হলো না! আরশ ছাড়ল না! আরো ধীরভাবে নুসরাতের মাথা চেপে ধরে নিজের সাথে রাখলো।

জায়িন এপার্টমেন্টে এসে ঢুকল ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ল। ইসরাতের রুমের দিকে ক্লান্ত দৃষ্টি ছুঁড়লো। রুম লক করা দেখে ফোন হাতে নিল। ফোন হাতে নিতেই কিছু নটিফিকেশন সো করলো। তাতে ইসরাতের অনেকক্ষণ আগের মেসেজ সো করছে। জায়িন মেসেজে কিক্ল করলো যাতে লেখা ছিল আমি ক্যামেলিয়ার সাথে আছি। জায়িন ইসরাতকে কল দিতে গিয়ে ও দিল না অনেক রাত হয়েছে দেখে। সকালে কল দিবে ভেবে ফোন রেখে রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
সকাল ৯:১০ ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙল জায়িনের। অনেক রাত করে ঘুমানোর জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। জায়িন লাফিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হলো।

অফিসে পৌঁছানোর পর জায়িন নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর কেউ এসে নক করলো জায়িনের কেবিনের বাহিরে। জায়িন চোখ তুলে দরজার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কাজ করতে লাগলো।
“আপনাকে মিসেস জোসেফ উনার কেবিনে ডেকে পাঠিয়েছেন।
জায়িন কোনো প্রতিউত্তর করলো না। জায়িন নিজের হাতের কাজ শেষ করে ধীরে সুস্থা কেবিন থেকে বের হলো। বড় বড় পা ফেলে এলিভেটরের দিকে গেল। এলিভেটরে গিয়ে নির্দিষ্ট বোতামে চেপে দাঁড়িয়ে রইলো ।
” মে আই কাম !
“ইয়েস কাম! আপনার অপেক্ষায় ছিলাম মিস্টার জাইন। হাউ আর ইউ?
” আ’ম গুড। কোনো দরকার ছিল আমাকে ডেকে পাঠালেন।
এমেলি ফিসফিস করে বলল,
“আপনাকেই ত আমার দরকার

” কিছু কি বললেন।
এমেলি দু-পাশে মাথা নাড়াল। এমেলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে অনেক সময় অতিবাহিত করলো। জায়িন বিরক্ত হয়ে হাতের ঘড়ি চেক করলো। কথায় কিছুটা ঝাঁঝ মিশিয়ে বলল,”কিছু বলবেন মিসেস এমেলি!
এমেলি কিছুক্ষণ আমতা-আমতা করলো। নিজেকে ধাতস্ত করে নিয়ে বলল “মিস্টার জাইন আমি আপনাকে পছন্দ করি এবং আমি আপনাকে ডেট করতে চাই।
জায়িন কিছুক্ষণ এমেলির দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”আ’ম মেরিড, ইউ নো দেট।
” আই নো! বাট আই লাইক ইউ জাইন।
“কিন্তু আমার লাইফে ইসরাত আছে!
এমেলি ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবলো। ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলল,”আচ্ছা ইসরাইট ওর জায়গায় থাকবে তুমি আমার সাথে ডেট করবে।

“সরি মিসেস এমেলি, আমার এইরকম কোনো ইনটেশন নেই,আই থিংক আ’ম অবসেস উইত মাই ওয়াইফ।এক্সকিউজ মি।
এমেলিয়া ডেসপারেট হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
“মিস্টার জাইন লিসেন্ট টু মি?
জায়িন কথা না শুনে বের হতে যাবে কেবিন থেকে এমেলি তার হাত চেপে ধরলো। জায়িন নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল এমেলির হাত থেকে। এমেলি বলতে শুরু করলো, ” কি নেই আমার মাঝে! টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য্য কি নেই? ওই বিচ মেয়ের মাঝে কি আছে? যে তুমি আমাকে ছেড়ে ওকে চুজ করছ!
জায়িন আঙুল তুলে চিৎকার করে বলল,

“জাস্ট শাট-আপ! তোর সাহস কি করে হয় আমার ওয়াইফকে বাজে কথা বলার। অন্তত তোর মুখে আমি আমার ওয়াইফের চরিত্রে বর্ণনা শুনতে আসবো না। তুই কাকে বিচ বলছিস, যে স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
জায়িন এমেলির গলা চেপে ধরলো। এমেলি অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।
” তোমার ইসরাত কে আমি আস্তো রাখবো না। তুমি আমার না হলে কারোর হতে পারবে না।
” হাউ ডেয়ার ইউ? আমার ওয়াইফকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবি না, আমার ওয়াইফের কিছু হলে এই আমি জায়িন তোকে জিন্দা পুঁতে ফেলবো। কথাটা মনে থাকে যেন।
জায়িন নিজের হাত এমেলি গলা থেকে ছাড়িয়ে আনলো।
জায়িন বের হতে যাবে এমেলিয়া ছেহ্ বলে মুখের বিকৃতি ঘটালো।
” তুমি কোথায় যাচ্ছো?

জায়িন কোনো প্রতিউত্তর করলো না। সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
এমেলি নিজে নিজের কথার উত্তর দিল,
“তোমার কেবিন এ যাচ্ছো! যার গলায় চেপে ধরলে তার কোম্পানিতে কাজ করবে। তোমার এতো এটিটিউড দেখিয়ে কি হলো জায়িন? সেই তো আমার কোম্পানি তে থাকবে! আমার দেওয়া ইউরো দিয়ে তোমার সংসার চলবে। তুমি আমার নখের যোগ্য নয়।
“তোকে কে বলেছে আমি কেবিনে যাচ্ছি। আর তোর মনে হয় এই জায়িন হেলাল তোর মতো থার্ড ক্লাস মানুষের কোম্পানিতে কাজ করবে। গো টু হেল ইউর উইথ ইউ্যের ফাকিং কোম্পানি।

” তাহলে কোথায় যাচ্ছো।
” তোকে বলতে বাধ্য নই!
” ওহ বুঝতে পেরেছি তোমার ওয়াইফের কাছে যাচ্ছো।
” ইট’স নান অফ ইউর বিজনেস
“এবার তো কনফার্ম তুমি ওই বিচ গার্লের কাছে যাচ্ছো।
” তোর নোংরা মুখ দিয়ে ওর নাম নিবি না।
এমেলি শয়তানি হাসি দিল।
“ওওওও তা ইসরাত কি এপার্টমেন্টে আছে?
জায়িন এমেলির কথার পাত্তা না দিয়ে বের হয়ে আসলো।

আজ কাল মমো ভার্সিটিতে যাচ্ছে না সব সময় সে নিজের রুমে থাকে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না। খাওয়া দাওয়া অনিয়ম করে। সব সময় কি রকম একটা ভয়ে থাকে। জানালার পাশে দেওয়ালে মাথা ঠেশ মেরে বসে থাকে। আজ ও বসে আছে দেয়ালের সাথে মাথা লাগিয়ে। হঠাৎ ফোনের শব্দে ওর ধ্যান ভাঙে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেই বিরক্তিকর ব্যাক্তি। মমো বিরক্তিতে মুখের বিকৃতি ঘটিয়ে কল ধরলো। কল ধরতেই সেই বিরক্তিকর স্বর
এসে কানে লাগলো।

“কি করছিলি কল ধরতে এতো লেট কেন হলো?
মমো বরাবরের মতো চুপ থাকলো।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন? খাওয়া দাওয়া করেছিস?
মমো ছোট্ট করে হুম বলল।
“একটা কথা বলার ছিল।
“হুম বল।
” আমি শুনলাম আপনার মা, আপনার খালাতো বোনের সাথে আপনার বিয়ে দিতে চায়। তাহলে আপনি আমার পিছনে এইরকম পড়ে আছেন কেন?
“মা বিয়ে করবে নাকি আমি বিয়ে করবো! মা সংসার করবে নাকি আমি সংসার করবো।
” বিষয় এটা না আপনারা তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ। এখন আপনার মা যদি আমাকে কুপিয়ে মেরে ফেলে তাহলে।
মাহাদি হালকা করে হেসে উঠলো।

“এই আমি মাহাদি বেঁচে থাকতে তোকে কেউ হাত লাগাতে পারবে না,আর ভুল করে যদি কেউ হাত দেয় আমি পুরো দুনিয়া এক করে দিবো তোর কিছু হলে।
” আপনাকে আমার পছন্দ না। আমি কেন আপনাকে বিয়ে করতে যাব?
“শুনো মেয়ে এই মাহদি যা চায়, তা পেয়ে তবে হাল ছাড়ে।
” আর না পেলে,
মাহদি মুখ গম্ভীর করে বলল।,
“আমি ধ্বংস করে দেই, তা যতোই আমার শখের জিনিস হোক না কেন? তুই ও আমার শখের! আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করিস না।
” আপনি কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন।
“আমি কখন থ্রেট দেই না আমি করে দেখাই।
মমো অনুরোধের সুরে বলল ,

” আচ্ছা বুঝলাম! তাহলে আমি একটা কথা বলি আপনি আমার কথাটা রাখবেন।
“হুম বল।
” আপনি এইভাবে আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। আপনার হুট হাট এইসব কাজে আমি কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারছি না।
কথা বলতে বলতে মমোর চোখ ভিজে উঠলো।
“আমি ভার্সিটির ক্লাসে মনোযোগী হতে পারি না। রাতে ঘুমাতে পারি না। এইরকম করলে আমি আমার এক্সামে খারাপ করবো। আমি আমার একটা ব্রাইট ফিউচার গড়তে চাই।
” এখন আমার কি করা উচিত? তোকে কীভাবে সাহায্য করবো?

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৪৯

“আমি চাচ্ছি আমার পড়াশোনা শেষ করে এসব নিয়ে ভাবার জন্য। তাই এখন আপনি যদি…
মমোর আর কিছু বলতে হলো না। মাহাদি বুঝে নিল।
” ঠিক আছে! কথা হবে যখন পড়া লেখার পাট তোর চুকিয়ে যাবে তখন। তাহলে আজ ভালো থাক রাখছি। আর অভিয়েসলি নিজের খেয়াল রাখবি। এখন যেমন গুলুমুলু আছিস পরে ও যেন এরকম থাকিস। আল্লাহ হাফিজ! দেখা হবে তাহলে এক বছর পর।

প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৫১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here