প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১ (২)
জান্নাত নুসরাত
সকালের নাস্তা শেষে সবাই যে যার রুমের দিকে চলে গেল। হেলাল সাহেব আদেশ দিয়েছেন যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে ওয়েটিং লাউঞ্জে আসার জন্য। সবাই ওখান থেকে এক সাথে যাবে বেড়াতে।
ইসরাত মুখে সানস্ক্রিন লাগিয়ে পায়ে স্টিলেটো পরতে নিল। জায়িন আদেশ দিয়ে বলল,”শু পরে আসো। ভিজে বালু মাটিতে পা দেবে যেতে পারে।
ইসরাত চুপচাপ লাগেজ থেকে স্নিকার্স বের করে পরে নিল। চুলগুলো পনিটেল করে চোখে রোদ নিবারক চশমা লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
জায়িন নিজেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিয়ে চোখে চশমা লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। পা বাড়ালো ওয়েটিং লাউঞ্জের দিকে যাওয়ার জন্য। ইসরাত ততক্ষণে অগ্রসর হয়ে গিয়েছে সবার কাছে যাওয়ার জন্য।
“উঁচু জুতো পরবি না! স্লিপার নাহয় কেডস পরিস!
আরশের না করতে দেরি হলো নুসরাতের পায়ে পেন্সিল হিল পরতে দেরি হলো না! আরশ নুসরাতের কান্ড দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে ফেলল। না করাতে আরো তাড়াতাড়ি পেন্সিল হিল পরে নিল! তার বলাই ভুল হয়েছে নুসরাতকে। এই মেয়ে তার কথার যে উল্টো করে তা তো তার জানা বিষয় তারপর ও কেন যেন বলতে গেল….।
নুসরাতকে সাবধান করে বলল,
” দেখিস, পা উল্টে পরে না যাস।
নুসরাত ভাব নিয়ে ওভার সাইজড টিশার্টের গলা ধরে উপরের দিকে তোলে বলল,”এই আমি, উল্টে পড়ার মেয়ে না!
“আমি আগে বলে দিচ্ছি তোকে, বালুতে পা দেবে গেলে তখন কিছু বলতে আসিস না।
নুসরাত নাক উল্টে বলল,
” হুহ কে আসছে!
আরশ নির্লিপ্ত গলায় বলল,
“সময় বলে দিবে!
” হ্যাঁ হ্যাঁ দেখে নেব, সময় কি বলে আপনাকে?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ওয়েটিং লাউঞ্জে সবাই আসার পর আজ ও মিস রয়ে গেলেন মেহেরুন নেছা। তার সাথে মিস রয়ে গেলেন লুৎফা বেগম। হেলাল সাহেব চিকন লেন্সের চশমা ঠেলে নাকের ঢগায় তুলে হাতের কালো বেল্টের ঘড়িতে সময় দেখে নিলেন। বিড়বিড় করলেন,”আজ আবার কি ডং সাজছে কে জানে? এদের নিয়ে আর পারি না।
হেলাল সাহেবের বিড়বিড় শেষ হতেই মার্বেল টাইলসে ঠকঠক জুতোর শব্দ তুলে মেহেরুন নেছা আর লুৎফা বেগম এগিয়ে আসলেন। মেহেরুন নেছার ঠোঁটে ঘায়েল করা হাসি। হাতে লাঠি নেই। লুৎফা বেগমের হাতে ভর দিয়ে হেঁটে আসছেন
হেলাল সাহেব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালেন। মেহেরুন নেছার পায়ে পাম্পস। চোখে হলুদ কালার ফ্রেমের প্রজাপতি সেপ বিশিষ্ট চশমা। লুৎফা বেগমের পায়ে কেডস। চোখে লাভ সেপ বিশিষ্ট চশমা।
লিপি বেগম বিস্ময়ে ঠোঁট চেপে ধরলেন। মুখ দিয়ে অপ্রতিরোধ্য শব্দ বের হয়ে আসলো না চাইতে ও।
” আম্মা আপনি এটা কি পরেছেন?
মেহেরুন নেছা চশমা চোখ থেকে খোলে মাথার মধ্যে রাখলেন। ঠোঁটে হাত রেখে শব্দ করে হেসে বললেন,
“সুন্দর লাগতাছে না?
লিপি বেগম বিভ্রান্ত হয়ে মাথা নাড়ালেন।
হেলাল সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” আম্মা তোমার লাঠি কোথায়?
“কেন? আমাকে এভাবে দেখতে তোমার ভালা লাগতাছে না তাই না। লাঠি লগে লইয়া ঘুরলে তোমার ভালো লাগব।
হেলাল সাহেব বিভ্রান্ত গলায় বললেন,
” আমি সেটা কখন বললাম।
লুৎফা বেগমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুই ও এই ডং শুরু করেছিস! বুঝলাম আম্মা বয়স্ক মানুষ বোঝে কম কিন্তু তুই…!
লুৎফা বেগম চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
” ভাইয়া এই স্টাইল টা না পুরাই জোস! গতকাল আম্মাকে নুসরাত কিরকম সুন্দর করে স্টাইল করে দিয়েছে দেখোনি? আমার কাছে তো আম্মাকে পুরাই আগুন লেগেছে।
হেলাল সাহেব নুসরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে লুৎফার উদ্দেশ্যে বললেন,”তোমাদের যে জোকার সাজিয়েছে তা কি তোমরা বুঝতে পারছ না? দু-জনকে মেলাতে থাকা দুই জোকারের মতো লাগছে।
মেহেরুন নেছা আঙুল তোলে হেলাল সাহেবকে সাবধান করে বললেন,”ওরে কি কইতাছস? আমার সাথে কডা কো?
“আম্মা তুমি এইসব উঁচু জুতো পরে যাবে ওখানে। জুতো মাটিতে আটকে, উল্টে পড়বে মনে রেখো।
নুসরাতের পায়ের দিকে ইশারা করে বললেন,
” ওই দেখ ও আমার থেকে কতো উঁচু জুতা পরে আছে তখন তো কিছু হইবো না তাইলে আমি পরলে ক্যা সমইস্যা হইব?
“আম্মা ওর বয়স আর তোমার বয়স কি এক?
” চপ বেশি কডা কইবি না। এই স্টিলিং এর আইডিয়া আমি টিকটিক থাইকা আনছি।
“টিকটিক কি? আবার বলো! বুঝিনি…
ইরহাম হাস্যজ্বল গলায় বলল,
” টিকটক এর কথা বলছে দাদি।
হেলাল সাহেব মাথা নাড়ালেন উপর নিচ। মেহেরুন নেছা নিজের পার্স ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে কতক্ষণ কি দেখলেন? তারপর হেলাল সাহেবের সামনে মোবাইল ধরে দেখালেন,”এই দেখ, যুবতী মেয়েটাকে দেখ! কতো সুন্দর চশমা পরছে আর কত উঁচু জুতা পরছে! আমার বয়সী যুবতী একটা মেয়ে। কি সুন্দর স্টিলিং করেছে! আর তুই আমাগো জোকার কাইতাছস!
হেলাল সাহেব সাথে সবাই চোখ মুখের বিকৃতি করে সমস্বরে বললেন,”এটা যুবতী?
“অবশ্যই! আমার বয়সী যুবতী মেয়েডারে কত ভালো লাগতাছে। আর তুই বলছিস আমারে আর লুৎফারে জোকার লাগতাছে। হুহ….
হেলাল সাহেব মিনমিন করে বললেন,
” সত্যি তো বলেছি! জোকার থেকে আর খারাপ কিছু থাকলে ওইটা লাগতাছে। যুবতীদের বয়সী কাপড় জুতো পরলেই যুবতী হওয়া যায় না আম্মা। বুড়ো বয়সে দু-জনকে ভিমরতি ধরেছে।
হেলাল সাহেব কথা বাড়ালেন না। এগিয়ে গেলেন বাহিরের দিকে। যার যা ইচ্ছা তাই করুক। তার কি? উল্টে পড়ে কোমর ভেঙে হসপিটালে ভর্তি হবে—তারপর হাই হুতাশ করবে।
গলার আওয়াজ উঁচু করে বললেন,
“যার যা ইচ্ছা করো! কোমর ভাঙলে দায়বার তুমি আর তোমার মেয়ে জানো। পরে হসপিটালে ভর্তি হয়ে কান্না কাটি করোনা, আমি কিছুতেই নেই।
গাড়ি স্টার্ট করা হলো। গাড়িগুলোর গতিবেগ বাড়িয়ে রাস্তা ধরা হলো কলাতলী সৈকতের উদ্দেশ্যে। এটি কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতের মতো এতো দীর্ঘ নয় কিন্তু সুন্দর সময় কাটানোর জন্য, ভ্রমণ করার জন্য ভালো একটা জায়গা।
সকাল এগারোটার সময় সবাই কলাতলী সৈকতে গিয়ে পৌঁছালো। সূর্যের মিষ্টি রোদ ধরণীতে পরে আলোকিত করছে। সমূদ্র কিছুক্ষণ পর পর গর্জন করে ঢেউ তুলছে।
সমূদ্রের পাশ ঘেঁষে শুকনো বালিগুলো ঢেউয়ের সাথে ভিজে যাচ্ছে। ওখানকার স্থানীয় মানুষ ছোট ছোট ট্যান্ট করে বিভিন্ন স্বাদের খাবার বিক্রি করছে। সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাঁটছে। সাথে সমূদ্রের শীতল পরিবেশ উপভোগ করছে।
মেহেরুন নেছা গলার আওয়াজ বাড়িয়ে জায়িনকে ডেকে উঠলেন। জায়িন আর ইসরাত হাঁটছিল উপভোগ করছিল সমূদ্রের মনোমুগ্ধকর পরিবেশটা। সমূদ্রের গর্জন, মিষ্টি রোদ, সাথে শনশন করে বয়ে চলা বাতাস। মেহেরুন নেছার ডাকে জায়িন বিরক্ত হয়ে তাকালো। বেড়াতে এসে ও শান্তি নেই।
জায়িন বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল। ইসরাতকে সাথে আসার জন্য বললে ও সে না করে দিল। ইসরাত এগিয়ে গেল সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে। শীতল পানিতে পা ভিজানোর জন্য।
জায়িন মেহেরুন নেছার কাছে আসতেই মেহেরুন নেছা বললেন,”আমাকে কোলে লো জায়িন।
মেহেরুন নেছার আকস্মিক ও অপ্রতিরোধ্য কথায় জায়িন যারপরনাই অবাক হয়ে কিছুটা চিৎকার করে বলল,”কি?!
মেহেরুন নেছা মুখ ফুলালেন। জায়িনের উপর বিরক্ত হয়ে বললেন,”কোলে লো আমি ফুটো তুলব।
“তো আমার কোলে উঠে আপনি কি করবেন?
” আমি টিকটিকে দেখছি ছ্যাঁমড়ি রা পোলাগো কোলে উইঠা ফুটো তোলে। আমি ও ওইভাবে ফুটো তুলবো।
জায়িন বিরক্ত হলো। নিজের বিরক্তি নিজের কাছে চেপে রেখে মেহেরুন নেছার হাঁটুর নিচে হাত ঢুকিয়ে কোলে তুলে নিল। মেহেরুন নেছা কোলে উঠতে পেরে প্রচুর খুশি হলেন। পান খাওয়া দাঁত বের করে হেসে ভি পোজ দিলেন হাত দিয়ে।
“লুৎফা তাড়াতাড়ি কইরা ফুটো তোল!
” হ্যাঁ হ্যাঁ তুলছি আম্মা!
মেহেরুন নেছা ফটো তোলা শেষে জায়িনের কোল থেকে নেমে আসলেন। লুৎফা বেগম এসে মায়ের হাত জড়িয়ে ধরলেন। তারপর জায়িনকে তাদের ফটোগ্রাফার বানিয়ে একের পর এক ফটো তুলতে লাগলেন।
জায়িন একসময় বিরক্ত হয়ে মোবাইল তাদের হাতে ধরিয়ে দিল। গম্ভীর গলায় বলল,”আমি পারব না। আমার বউ ওদিকে একা সমূদ্র বিলাস করছে আর আমি কি করছি?
—তোমাদের ফটো তুলে দিচ্ছি। নিজেরা নিজেদের ফটো তোলো। আমাকে আর ডাকবা না! আমি বিরক্ত হচ্ছি!
জায়িন পা বাড়িয়ে চলে গেল যে-দিকে ইসরাত দাঁড়িয়ে সে-দিকে। সূর্য কিছুটা হেলে পরল। হঠাৎ করে পুরো আকাশ অন্ধকার হলো। বাতাস কিছুটা জোরে বইতে লাগলো।
ইসরাত পানিতে পা ভিজাচ্ছিল,ঠোঁটে তার মুচকি হাসি। জায়িন পিছন থেকে গিয়ে ঝাপটে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরলো। উদর চেপে ধরলো দুই হাত দিয়ে, থুতনি নিয়ে রাখলো ইসরাতের ঘাড়ের কাছে।
আকস্মিক জড়িয়ে ধরায় ইসরাত ধড়ফড় করে উঠলো ভয় পেয়ে। জায়িন সে-দিকে না তাকিয়ে নাক ঘষল ইসরাতের ঘাড়ে। গরম নিঃশ্বাস ফেলল ঘাড়ের উপর।
ইসরাত মুচড়া মুচড়ি করলো জায়িনের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। জায়িনকে ছাড়তে না দেখে হুশিয়ারি গলায় বলল,”এটা আপনার বেডরুম নয় মিস্টার জায়িন।
জায়িন ডিপ গলায় বলল,
“তুমি কি বেডরুমে যেতে চাচ্ছো?
ইসরাত দাঁতে দাঁত পিষল। কটমট শব্দ করে বলল,
” একটা কথা বললে আরেকটা কথার মিনিং কেন বের করেন?
“তুমি তো ডাবল মিনিং কথা বলছো,এখানে আমার দোষ কি?
ইসরাত কথার উত্তর না দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। জায়িন হাত ঢিলে করে ইসরাতকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল।
” বউ চুমু খাবো!
জায়িনের মুখে আকস্মিক অভাবনীয় কথা শুনে ইসরাতের কানে ঝংকার হলো। ইসরাত চোয়াল ঝুলিয়ে বলল,”কি?
জায়িন বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোমাকে এক কথা দুই বার কেন বলতে হয়? একবার বললে বুঝো না। চুমু খাওয়ার ক্রেভিং হচ্ছে। এদিকে আসো তো বউ।
ইসরাত নাক মুখ ছিটকে বলল,
” সরুন তো সরুন!
জায়িন ইসরাতের কথা না শুনে পা বাড়িয়ে এগিয়ে আসলো। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল। ইসরাত বুঝলো জায়িনের মতলব। নিজেকে বলল পালা ইসরাত পালা, এই বেডার মতলব ভালো নয়।
ইসরাত চুমুর হাত থেকে বাঁচার জন্য দৌড় দিল সামনের দিকে। জায়িন ভাবতে পারেনি ইসরাত এভাবে দৌড় দিবে। সে তো এমনি বলছিলে! তারপর আবার নিজেকে সূদরে নিয়ে বলল,”না না এমনি কেন বলবো? সত্যি তো চুমু খাবো!
গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল,
“এই ইসরাত দাঁড়াও! এই দেখো তোমার নিষ্পাপ স্বামীর চুমুর অভাবে ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে এসো তো!স্বামী চুমুর অভাবে মরার আগে একটা চুমু দিয়ে যাও বউ।
ইসরাত দাঁড়ালো না এক সেকেন্ডের জন্য। জায়িন ইসরাতের পিছন পিছন দৌড়ে গেল। সমূদ্র গর্জন করে ঢেউ নিয়ে আসলো তীরের দিকে। কিছু সময়ের মধ্যে ঢেউ আছড়ে পড়ল,গর্জন থেমে গেল।
জায়িন শব্দ করে হাসল। ইসরাতের পিছন পিছন দৌড়ে আসতে আসতে বলল,”দাঁড়াও ইসরাত!
ইসরাত সামনের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে জায়িনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। জায়িন ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে ইসরাতের দিকে দৌড়ে গেল। সমূদ্রের পাশ ঘেঁষে শুকনো বালির মধ্যে মানবী সামনের দিকে এগিয়ে গেল মানবের হাত থেকে বাঁচার জন্য—আর মানব, মানবীকে ধরার জন্য তার পিছু পিছু দৌড়ে গেল। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে চিৎকার করে বলল, “আ্যই ইসরাত দাঁড়াও!
ইসরাত আর জায়িন কিছুক্ষণ গোল গোল ঘুরতে ঘুরতে হাপিয়ে গিয়ে থেমে গেল। ইসরাত পেটে হাত চেপে শ্বাস নিতে লাগলো। আকস্মিক জায়িন এসে ইসরাতের বাহু দুই-হাত দিয়ে চেপে ধরলো। স্মির্ক করে বলল,”কোথায় পালাবে আমার কাছ থেকে ইসরাত?
ইসরাত হালকা হেসে জায়িনের দিকে তাকালো। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। ইসরাত শ্বাস নিল জায়িনের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ থেকে। জায়িন ইসরাতের সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিল। গালে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
ইসরাত চোখ তুলে তাকালো জায়িনের দিকে। চোখের দিকে একবার তাকিয়ে ছন্নছাড়া দৃষ্টি ফেলল চারিদিকে। জায়িনে ইসরাতের গাল নিজের দুই হাতের তালু মধ্যে চেপে ধরলো। গম্ভীর অথচ শান্ত গলায় আবেগ মিশিয়ে বলল,”আমি কখনো তোমার মতো কোনো নারীকে দেখিনি। তোমার দিকে তাকালে আমি এক পরীকে দেখি। তোমার ত্বক স্পর্শ করলে আমার পুরো শরীর যেন আগুনে জ্বলে ওঠে। তোমাকে চুমু দিলে বুঝি, আমি প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমার আত্মা,আমার সহধর্মিণী।
ইসরাতের শ্বাস চলাচল বেড়ে গেল। জায়িনের গালে ঘর্ষন করা হাত ততক্ষণে থেমে গেছে। ধীরে ধীরে জায়িনের ওষ্ঠ ইসরাতের ওষ্ঠের দিকে অগ্রসর হলো। চেপে ধরলো ইসরাতের অধর। মিলন ঘটলো দুই ওষ্ঠযুগলের।
নুসরাত হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল সমূদ্রের পাশ ঘেঁষে হঠাৎ দেখলো কারা যেন লিপ কিস করতে ব্যস্ত। নুসরাত বিব্রত হয়ে চোখ ঘুরিয়ে উল্টো পায়ে হেঁটে অগ্রসর হলো অন্যদিকে যাওয়ার জন্য। মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “ইয়ে হামনে কেয়াহ দেক লিয়া। হামারা গুণগার আকোছে আব আক কেছে মিলায়েগা। ইয়ে সাব কিউ মেরে আকো কা সামনে আগায়া। হামনে জিন্দেগি মে কেয়া পাপ কিয়া তা যো ইয়ে হামারা সামনে আগায়া। আল্লাহ মাফ কারে হামকো।
হঠাৎ কি মনে করে চোখ বড় বড় করে নুসরাত এতো হাই হুতাশ ভুলে গিয়ে তড়াক করে পিছনের দিকে তাকালো। তীব্র নজর দিল সমূদ্রের তীরপ। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওই দিকে। লজ্জা সরম ভুলে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। স্ক্রিন জুম করে ফটাফট কয়েকটা ফটো তুলে নিল। নুসরাতের ঠোঁটে শয়তানি হাসি। ফটো তুলে নাচতে নাচতে চলে গেল অন্যদিকে। হাতে থাকা পেন্সিল হিলের বেল্ট ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে গান গাইল, “মেনে যাব দেখা হে তুজকো রাত বি ও ইয়াদ হে মুজকো তারে গিনতে গিনতে সো গ্যায়া।
নাচতে নাচতে গিয়ে ধাক্কা খেল শক্ত কোনে দেহের সাথে। রেগে নাক মুখ কুঁচকে তাকালো। গালি দিল,
“কোন শালারে এরকম ইস্পাতের মতো শক্ত হয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ তোলে তাকাতেই দেখলে আবির। মুখের বিরক্তি আরেকটু স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে রাগী কন্ঠে বলল,
“আরে এইরকম আমার মুখের সামনে এসে হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?
” আমি কোথায় দাঁড়ালাম! আমি একপাশে….
নুসরাত হাত তুলে কথা থামিয়ে দিল। চেঁচিয়ে বলল,
“নিজের সাফাই দেওয়া বন্ধ করো! এসেছো তো এসেছো, এতো দেরি করে আসলে কেন?
আবির চুল চুলকে বলল,
” একটু কাজ এসে গিয়েছিল।
“অওঅঅঅঅ!
আবির কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে গেল সমূদ্রের দিকে।
“কেমন লাগলো আমার শহর?
নুসরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এখনো তো কোনো জায়গায় যায়নি গতকালই তো এসেছি। তুমি এরকম গাঁধার মতো প্রশ্ন করছো কেন?
” ওহ স্যরি স্যরি! আসো একটু পানি বিলাস করো। পরে বলবে চট্টগ্রাম আসলাম আর সমূদ্রে পা ভিজালাম না।
নুসরাত এগিয়ে গেল আবিরের পিছন পিছন।
“তোমার জামাই কোথায়?
” আছে কোথাও?
আবির কন্ঠে অবাকতা রেশ,
“তোমার জামাইয়ের খবর তুমি জানো না!
নুসরাত নির্লিপ্ত গলায় বলল,
” জামাইয়ের খবর দিয়ে আমি কি করবো?
আবির কথা না বাড়িয়ে সমূদ্রের শীতল পানিতে পা ভিজিয়ে মাটিতে বসলো। ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে দূরে তাকিয়ে রইলো। সমূদ্রের শেষ দেখতে চাইলো কিন্তু সমূদ্রের শেষ কি এখানে? সেটা তো মাইল মাইল দূরত্বে! এই দূরত্ব সাধারণ মানুষের চোখে ধরা দেওয়া বহুমুল্য বিষয়।
দুপুর ৩ টা, হেলাল সাহেব কল দিলেন সবাইকে। আদেশ দিয়ে বললেন,”তাড়াতাড়ি খেতে আসো! আমরা ছোট ছোট ট্যান্টের কাছে আছি।
কথাটা বলে ফোন কেটে দিলেন। একে একে সবাই আসতে লাগলো। এসে জমায়েত হলো খাবার খাওয়ার স্থানে। মেহেরুন নেছা লুৎফার কাঁধে ভর দিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে আসছেন। হেলাল সাহেব বিরক্তিতে নাক মুখের অবস্থা বিকৃতি করে বললেন,”দেখো দুজনের অবস্থা। যত্তসব…
মেহেরুন নেছা চোখ থেকে চশমা খুলে কুর্তির মধ্যে ঝুলিয়ে রাখলেন। লুৎফা বেগম কানের পিছনে চুল গুজে চোখ পিট পিট করে মিষ্টি হেসে এগিয়ে আসলেন।
হেলাল সাহেব চোখ বুলিয়ে দেখলেন সবাই এসেছে কি না? যখন দেখলেন নুসরাতের মিসিং পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিতেই দূর থেকে মোবাইলের রিং বেজে উঠলো।
নুসরাত হাত তুলে ইশারা করল সে আসছে। নুসরাতের সাথে পুরুষ দেহের অবয়ব দেখে আরশের চোখ আপনা আপনি ছোট ছোট হয়ে গেল। যখন পুরুষ দেহের লোকটি কে অবগত হলো তখন চোয়াল শক্ত করে নিল।
নুসরাতের হাতে পেন্সিল হাই হিল। হাত উপরের দিকে তুলে নাচতে নাচতে এগিয়ে আসলো। পায়ে কাদা মাটি। পরনের প্যান্ট পায়ের গোড়ালি থেকে ভাঁজ করে হাঁটুর কিছুটা নিচে রাখা। ঠোঁটে মৃদু হাসি তার সাথে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে গান গাচ্ছে,”স্বপ্ন যাবে বাড়ি ফিরে, সঙ্গে যাবে জামাই আমার।
নুসরাত নাচতে নাচতে এসে শুকনো বালুতে রাখা মেট্রেস এর উপর বসে পড়ল। একে একে সবাই বসলেন। নাছির সাহেব ভ্রু কুঁচকে কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার পায়ে এতো কাদা লাগলো কীভাবে? আর তোমার এসিট্যান্ট এখানে কেন?
নুসরাত আড়চোখে তাকালো বাবার দিকে। বাড়িতে একমাত্র সে এই ব্যক্তিকে ভয় পায়। একমাত্র উনার কথা শোনে। নাছির সাহেবের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,”জি! পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আর ওর বাসা চট্টগ্রামে, বেড়াতে আসছে।
নাছির সাহেব মাথা নাড়ালেন। সন্দেহি গলায় জেরা করে বললেন,”পানিতে উল্টে পড়ে এই অবস্থা!
নুসরাত মাথা নাড়ালো। হেলাল সাহেব তাড়া দিলেন হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার জন্য। কথা পরে ও বলা যাবে। খাবার শেষে নুসরাত দৌড়াল অন্যদিকে। সবাই খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে অগ্রসর হলো ঘুরে দেখার জন্য।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬১
সন্ধ্যা বেলা সবাই সানসেট দেখার জন্য সমূদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। সূর্য পশ্চিম আকাশ থেকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। গোলাটে লাল রঙ পশ্চিম আকাশে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সূর্য নিজ আবাস্থলে ফিরে গেল। শনশন করে বাতাস বইতে লাগলো সমূদ্রে। বালু উড়ে যাচ্ছে নিজ স্থান থেকে, বাতাসের ঝাপটায় ইসরাতের মাঝারি আকারের চুল গুলো চারিদিকে উড়ছে। জায়িন আলগোছে চুলগুলো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের হাতের সাথে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একসাথে দেখতে লাগলো সূর্য গভীর সমূদ্রে ডুবে যাওয়া।