প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৯
জান্নাত নুসরাত
২৯ এপ্রিল ২০২৭
অন্ধকার রাত! থাই গ্লাসের বাহিরে সাদা কণা ঝড়ে পড়ছে। আকাশ থেকে নিচে নেমে আসছে সাদা সাদা কণা। কণাগুলো গাছের শাখা প্রশাখা পাতার কোণে কোণে আটকে আছে। কংক্রিটের রাস্তার উপর কণাগুলো পড়ে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। দেখতে যতোটা মনোমুগ্ধকর লাগছে ততোটা রাস্তায় হাঁটতে গেলে ভয়ংকর। জায়িন কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে বাহিরে। এই অসময় কেন স্নো-ফল হচ্ছে? এসব প্রাকৃতিক চিন্তা পাশে রেখে চুপচাপ বসে রইল।
ইসরাত নড়ে-চড়ে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। জায়িন চিন্তিত মুখে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। গত দু-দিন যাবত তার চোখে ঘুম নেই চোখ থেকে ঘুম হাওয়া হয়ে গিয়েছে। ইসরাতের ডেলিভারি ডেইট দু-দিন আগে পেরিয়েছে। ডা:ক্রিস্টেবেলা নিশ্চিত করেছেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরকম হয়ে থাকে। টাইম পেরিয়ে যাওয়ার পর বেবি জন্ম নেয় তাই চিন্তা করার কিছু নেই। তবুও জায়িনের চিন্তার অবসান ঘটেনি।
জায়িন ইসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকতে তাকতে পা ফেলে এগিয়ে আসলো। সিঙ্গেল বেডের পাশ ঘেঁষে বসল জায়িন। ইসরাতের হাত চেপে ধরে কেঁদে উঠল।চোখের কোণ গলে বেরিয়ে আসলো জলের ফোয়ারা। জায়িন ইসরাতের হাতে চুমু খেল অনেক সময় নিয়ে! ইসরাতের হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে নিল। হাত বাড়িয়ে ইসরাতের মুখে হাত বুলিয়ে দিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সময়ের সাথে জায়িনের শরীর কেঁপে উঠতে লাগলো।ইসরাতের পেটের কাছে মুখ গুজে ফিসফিস করে বলল,”আমার বেবি চাই না! আমি তোমাকে চাই রেই! তোমাকে..
জায়িন ডুকরে কেঁদে উঠল। চোখের জল বেডে ঘষে মুছে নিল। ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলল,
“তাড়াতাড়ি চলে আসো! দু-জন মিলে যা যা ভোগান্তি দিচ্ছ চলে আসার পর দু-জনের একজনের কাউকে ছাড়বো না। এক পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে দু-জনকে শাস্তি দিব।
জায়িন কথাটা বলার পর পর ইসরাতের পেটের উপর দিয়ে দুটো পা ভেসে উঠল। জায়িন অবাক হয়ে তাকাল। ইসরাতের পরণে হসপিটাল অথোরিটি থেকে কাপড় পরানো থাকায় সাথে কাপড়টা পাতলা হওয়ার ধরুন কাপড়ের উপর দিয়ে পা ভাসছে। সময়ের সাথে পা ভেসে উঠা বাড়তে লাগলো।
ইসরাত নড়ে-চড়ে শুয়ে মুখ দিয়ে ব্যথাতুর শব্দ বের করল। ব্যথার জন্য নাক মুখ কুঁচকে রেখেছে। জায়িন ইসরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে যে জায়গায় পা ভেসে উঠছে সে জায়গায় হাত বুলিয়ে দিল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে জায়িনের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা জল। ফিসফিসিয়ে আওড়াল,” পাপা মাম্মাকে চায়, মাম্মাকে কষ্ট দিও না বাচ্চারা আমার।
৩০ এপ্রিল ২০২৭
রাতে ঘুম না হওয়ার ধরুন জায়িনের চোখের নিচে কালো আভা পড়েছে। চোখ ফোলে আপেলের মতো হয়ে আছে। জায়িন ইসরাতের দিকে তাকাল। এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঠোঁট কামড়ে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কপালে চুমু খেয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল ডা: ক্রিস্টেবেলার কেবিনের দিকে। বাহিরে দাঁড়িয়ে নক করল। ক্রিস্টেবেলা ভিতর থেকে বলল,” কামিং!
জায়িন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। ক্রিস্টেবেলা কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছিল। জায়িনকে দেখে অধর মেলে হাসল। নরম কন্ঠে জায়িন কে বলল,
“গুড মর্নিং মিস্টার জাইন!
ক্রিস্টেবেলা যতোটা নরম কন্ঠে অবিবাধন জানাল জায়িন ততোটা শক্ত কন্ঠে বলল,” মর্নিং!
ক্রিস্টেবেলার মুখের হাসি ধপ করে নিভে গেল। মনে মনে ভেংচি কাটল। লোকটা কি হাসতে জানে না? সুন্দর করে গুড মর্নিং ও কি বলতে পারে না? ক্রিস্টেবেল সৌজন্যতা মূলক হেসে বলল,”সিট ডাউন মিস্টার জাইন! দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
জায়িন চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ক্রিস্টেবেলা দু-হাত টেবিলে এনে ভাঁজ করে রাখল। জায়িন ক্রিস্টেবেলার দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করল না। টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল,”সি-সেকশন করে ফেলুন।
ক্রিস্টেবেলার মুখে রাগের আভা ফুটে উঠল। এই মাথা মোটা লোককে বুঝাচ্ছে গত দু-দিন ধরে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব তবুও এই লোক সি সেকশন সি-সেকশন বলে বলে মাথা খারাপ করে ফেলছে। ক্রিস্টেবেলা তার হাতের কলম ছুঁড়ে ফেলল টেবিলের উপর। দু-হাত টেবিলের উপর রেখে জায়িনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। রাগ সামলে বলল,”আমাদের হসপিটালের কিছু রোলস রেগুলেশন আছে যতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চা নড়াচড়া করছে এবং নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব ততক্ষণ পর্যন্ত যেন আমাদের প্রচেষ্টা জারি রাখি। ঈশ্বরের কাছে শুকরিয়া করুন আপনার স্ত্রী এবং সন্তানেরা ফিট এন্ড ফাইন আছে। আমরা আমাদের রোলস রেগুলেশন তো আর আপনার জন্য ভাঙতে পারি না। আর আপনি এতো ডেস্পারেট হচ্ছেন কেন মিস্টার জাইন?
জায়িন হাতের কাছে থাকা রবিস্কিউব ছুঁড়ে ফেলল। দূরে পড়ে সেটা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। ক্রিস্টেবেলা ভয় পেয়ে তাকাল দরজার দিকে, যেখানে রবিস্কিউব পড়ে আছে। নিজেকে ধাতস্ত করে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আসলো ক্রিস্টেবেলা। জায়িনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিল।
জায়িন রাগে কাঁপছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ক্রিস্টেবেলার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,”আমার স্ত্রী আর সন্তানদের যদি কিছু হয় আপনাদের কাউকে আমি ছাড়ব না। এই হসপিটালের নামে ক্যাইস করব। এই হসপিটাল বন্ধ করিয়ে ছাড়ব। আপনার পুরো ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিব একটাকে ও ছাড়ব না।
জায়িন রাগে ফুসছে। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে আছে। ক্রিস্টেবেলার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
“আমি যখন বলছি সি-সেকশন করানোর জন্য তাহলে তোরা কে নরমাল ডেলিভারি করার। আমাদের হসপিটালের কিছু রোলস রেগুলেশন আছে, কিসের রোলস রেগুলেশন? তুই কে নরমাল ডেলিভারি করার? আমি যখন বলছি সি-সেকশন তাহলে সি-সেকশন কর না তুই!
জায়িন আঙ্গুল তুলে ক্রিস্টেবেলাকে বলল,
” আমার বউ বাচ্চাদের কিছু হলে সবগুলোকে গলা টিপে হত্যা করব। মাথায় তুলে আছাড় মারব একেকটা কে। সবার আগে তোকে মাথায় তুলে আছাড় মারব তুই কেন সি-সেকশন করিস নি মনে রাখিস! আর আমি ডেস্পারেট হবো না তো কি তুই হবি ডেস্পারেট?
জায়িনের কথা বুঝল না ক্রিস্টেবেলা। কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইল। বুঝল জায়িন ভালো কিছু বলেনি তাকে। জায়িন রাগ দেখিয়ে বড় বড় পা ফেলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
ক্রিস্টেবেলা হেসে জায়িনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। জায়িনের পরণে দু-দিন, ক্রিস্টেবেলা নিজেকে সূদরে নিয়ে বলল না না তিনদিন আগের শার্ট। ইন করা শার্ট, প্যান্টের বাহিরে বেরিয়ে আসছে। জায়গায় জায়গায় ভাঁজ পড়ে আছে। ক্রিস্টেবেলা বিড়বিড় করে বলল,”সাচ আ ক্রেইজি পার্সন!
ক্রিস্টেবেলা মাথা দু-দিকে নাড়িয়ে হাসল। হেসে ফাইল দেখতে ব্যস্ত হলো। তার এই দশ বছরের ক্যারিয়ার জীবনে এই প্রথম এমন বউয়ের জন্য ডেস্পারেট লোক দেখছে। চশমা ঠেলে নাকের ঢগায় তুলে ফাইল দেখতে লাগলো।
ভিডিও কলে কথা বলছে নুসরাত। মোবাইল বালিশের সাথে রেখে আইজানের ডায়পার চেঞ্জ করছে। ডায়পার চেঞ্জ করা শেষে নুসরাত আইজানকে দাঁড় করিয়ে প্যান্ট দিল। কোলে তুলে নিয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই ইসরাতকে ডাক দিল,”আম্মা!
ইসরাত হেসে উঠল। আইজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“জি আব্বা!
আইজান খিলখিল করে হেসে উঠে নুসরাতের কাঁধে মাথা রাখল। নুসরাত ইসরাতের দিকে তাকাল। ইসরাত আগের তুলনায় রোগা হয়েছে। শরীর থেকে পেট আলাদা হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়ে যাবে।
নুসরাতকে ইসরাত জিজ্ঞেস করল,
“রোগা হয়ে যাচ্ছিস কেন?
নুসরাত কিছু বলার আগেই আইজান কোল থেকে নেমে গেল। বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে বলল,” ইচরাত!
ইসরাত খিলখিল করে হেসে উঠল। আইজানকে বলল,
“জি আব্বা!
আইজান ও খিলখিল করে হেসে উঠল। বিছানার এপাশ থেকে অপাশে গেল আবার হাসল।
ইসরাত নুসরাতের দিকে প্রশ্নাতক দৃষ্টিতে তাকাল। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,” ডায়েটে আছি!
ইসরাত গম্ভীর গলায় বলল,
“কেন?
নুসরাত বলল,
” মোটা হয়ে যাচ্ছি! শরীর নিয়ে হাঁটতে পারি না।
আইজান বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে বলল,
“আটা আটা, ইচরাত!
নুসরাত ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিল আইজানের দিকে। আইজান খিলখিল করে হাসল। বালিশের কোণার মুখ লুকালো।
নুসরাত নিজের দিকে ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিল। ইসরাত বলল,” ঠিক তো স্বাস্থ্য আছে দেখতে ভালো লাগে তো। রোগা হচ্ছিস কেন?
নুসরাত কিছু বলার আগেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে তড়াক করে আরশ বের হয়ে আসলো। দেখে মনে হলো তড়িগড়ি করে পেটে কোনোরকম টাওয়াল বেঁধে বের হয়েছে। টি-শার্ট টেনে টুনে পড়ে দৌড়ে এসে নুসরাতের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিল। ইসরাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,”জানিস ইসরাত, তোর বোন কি করেছে? তুই জানবি কীভাবে দাঁড়া আমি বলছি! এই যে, আমার ম্যাডাম সামনের সপ্তাহ থেকে অফিস জয়েন করছেন। এই জন্য ডায়েট করে ম্যাডাম রোগা হচ্ছেন যাতে নিউজ পেপারে ম্যাডামের ছবি বের হলে পুরুষ মানুষের নজর কাড়তে পারেন। আবার কোনো ডিল সাইন করার পর যখন ম্যাডামের আর ডিলারের পিক সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হবে তখন মানুষ যেন বলে দেই মেইড ফর ইচ আদার।
নুসরাত আরশকে ভেংচি কেটে মোবাইল টেনে নিয়ে নিল। আরশ থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আসলো ধীরে সুস্থে। আইজান বিছানায় শুয়ে মা-বাবার ঝগড়া দেখছে। নুসরাত বলল,”ভাইয়ার কথায় কান দিস না!
আরশ দৌড়ে এসে নুসরাতের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিল।
“জানিস ইসরাত, আমি ওকে বললাম তুই আইজান কে সাথে করে নিয়ে অফিসে যাবি। এই মহিলা কি বলে জানিস? পারব না! বাচ্চা নিয়ে কেন অফিস করতে যেতে পারবে না? ওটা ওর বাচ্চা না! ওই বাচ্চার মা ও না! অফিসে বাচ্চা নিয়ে গেলে তো বুঝতে পারবে সকলে ও একজন বিবাহিত মহিলা।
নুসরাত ফোন কেড়ে নিল আরশের কাছ থেকে। আরশের চুল টেনে ধরে বলল,” আপনি যখন নেচে কুদে একা একা অফিসে যান তখন আমি কিছু বলি তাহলে এখন চেচামেচি করছেন কেন?
আইজান বিছানায় শুয়ে রয়েছে দু-পা উপরে তুলে। জায়িন ইসরাতের পিছন থেকে গম্ভীর গলায় বলল,
“দু-জন এক কাজ করো! অফিসে যাওয়ার সময় গলায় একটা কার্ড ঝুলিয়ে ফেল। যেখানে লেখা থাকবে আমরা দু-জন বিবাহিত পুরুষ মহিলা। আমাদের একটা পনেরো মাসের বাচ্চা আছে দয়া করে আমাদের দিকে কেউ নজর দিবেন না।
আইজান জায়িনের কথা শুনে মুখে হাত ঢুকিয়ে বসে আঙ্গুল খেতে লাগলো।
আরশ নুসরাতের হাত থেকে ফোন নিয়ে নুসরাত কে বিছানায় বসিয়ে দিল। কাঁধ জড়িয়ে ধরে নুসরাতের পাশ ঘেঁষে বসল। আইজান পিছন থেকে আসলো। নুসরাত আর আরশকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁট টেনে কেঁদে দিল। আরশ বিরক্তির চোখে তাকাল আইজানের দিকে। টেনে কোলে এনে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,”মা বাপকে এক সাথে বসে থাকতে দেখলেই কান্না শুরু করিস কেন বলদ?
ইসরাত দু-জনের দিকে তাকিয়ে রইল। এক বাচ্চার বাপ মা হয়ে এরা এখনো মারামারি আর ঝগড়া বাঁধ দেয়নি। একে অন্যের পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে।
” ইনায়া আর জায়ান ভাইয়া কোথায়?
আইজান সামনের দাঁত বের করে হাসল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”চানিমুনে।
ইসরাত শব্দ করে হাসল। আইজানকে জিজ্ঞেস করল,”এটা তোমাকে কে বলেছে আব্বা?
আইজান সামনের চারটা দাঁত বের করে হাসল। নুসরাতের গালে মুখের সব থু থু লাগিয়ে বলল,”আম্মা আম্মা ম্মামা!
আরশ ইসরাতকে বলল,
“দেখছ ইসরাত, এই বয়সে আমার ছেলেকে ও হানিমুনে সম্পর্কে বলছে। আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে নির্লজ্জ বানিয়ে দিচ্ছে। এই অবগতি আমি মেনে নিতে পারলাম না।
জায়িন ইসরাতকে নিজের দিকে ক্যামেরা দেওয়ার কথা বলল। জায়িনের দিকে ক্যামেরা ঘুরাতেই জায়িন বলল,” আরশ ২০০৮ সালে দেশ থেকে ফিরার পর ছোট চাচ্চু আর ছোট আম্মু হানিমুনে যাওয়ার কথা শুনে তুই বলছিলি না নুসরাত কে নিয়ে তুই ও হানিমুনে যেতে চাস।
নুসরাতের বুক ধ্বক করে উঠল। আরশ থতমত খেয়ে নুসরাতের দিকে তাকাল। তার বড় ভাই তার এতো বড় রহস্য এভাবে ফাঁস করে দিল। নুসরাতের দিকে তাকাতেই দেখল নুসরাত তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আইজান আরশের গলা ধরে ঝুলে বলল,”আম্মা আম্মা আব্বা আব্বা চানিমুন!
আইজান কথা শেষ করে দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসল। আরশ ঢোক গিলে আইজানকে কোলে নিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করল। একপ্রকার ওখান থেকে পালিয়ে গেল।
নুসরাত এবার তাকাল ইসরাতের দিকে। জিজ্ঞেস করল ইসরাতকে,” বাবুদের জন্য কোনো নাম ঠিক করেছিস?
ইসরাত না ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল। নুসরাত বলল,
“দুলাভাই এর কাছে ফোন দে!
ইসরাত ফোন এগিয়ে দিল। জায়িন ফোন হাতে নিয়ে নুসরাতের দিকে তাকাল। নুসরাত বলল,” কোনো নাম ঠিক করেছেন দুল্লাভাই?
“হ্যাঁ ঠিক করেছি! আর নুসরাত মজা করা বন্ধ কর! আমি তোমার কিসের দুলাভাই!
” একমাত্র বোনের একমাত্র জামাইকে দুলাভাই ডাকব না তো কি ডাকব?
“নুসরাত ভুলে যাচ্ছ কেন? আমি তোমার এক সম্পর্কে চাচাতো ভাই এক সম্পর্কের ভাশুর! তাহলে ভাই ডাকা যুতসই নয় কি?
নুসরাত কথা বাড়াল না। জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,” ভাইয়া আমি একটা নাম ঠিক করেছি, ছেলে হলে নামটা রাখবেন।
নুসরাত কোনোরকম টেনে টুনে জায়িনকে ভাইয়া ডাকল। সারাজীবন যাকে শালা বলে ডাকত আজ ভাইয়া ডাকতে গিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে। ইসরাত শব্দ করে হেসে উঠল নুসরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে।
জায়িন কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“কি নাম?
” তেহরাব জোহান!
জায়িন মৃদু হেসে বলল,
“আইজানের সাথে মিলিয়ে নাম রাখতে চাচ্ছ, সুন্দর হয়েছে নাম।
নুসরাত টেনে টুনে হাসল। ইসরাত নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল নুসরাতের হাসি। যে মেয়ে আগে কথার সাথে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেত সেই মেয়ে এখন ঠোঁট চেপে হাসে।
” ভাইয়া মেয়ে হলে কি নাম রাখবেন বললেন না?
” ঈশানী জায়িন।
আইজান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” পুপ্পু, পুপ্পু!
ইসরাত হেসে উঠল। নুসরাত কপালে ভাঁজ ফেলে সামনে তাকাল। আইজান তাকে পুপ্পু পুপ্পু বলে ডাকছে। নুসরাত ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করে আসি তারপর তোকে কল দিচ্ছি।
ইসরাত মুচকি হেসে বলল,
“যা হ্যান্ডেল করে আয়!
নুসরাত কল কেটে দিল। ফোন ঢিল মেরে বিছানার এক পাশে রাখল। আইজানের দিকে তাকাতেই দেখল বিছানা ধরে উপরে উঠছে। নুসরাতের কাছে দৌড়ে আসলো।
” পুপ্পু, পুপ্পু!
নুসরাত রাগী গলায় বলল,
” পুপ্পু কে?
নুসরাত দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আরশ দাঁত বের করে হাসছে। এক হাত থ্রি কোয়াটার প্যান্টের পকেটে রাখা। নুসরাতের চোখ ছোট হয়ে আসলো।আইজান নুসরাতকে পুপ্পু পুপ্পু বলে জড়িয়ে ধরতে গেল নুসরাত ঠেলে সরিয়ে দিল। আঙ্গুল তুলে আইজান কে শাসিয়ে বলল,” চুপ একদম চুপ! থাপড়ে গাল লাল করে দিব! কে তোমার পুপ্পু! সরো আমার থেকে! আমাকে স্পর্শ করবে না তুমি।
আইজান ঠোঁট টেনে কেঁদে উঠল। নুসরাতকে আবার জড়িয়ে ধরতে গেলে নুসরাত ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল।
“একদম কাঁদবে না বাজে ছেলে! আরেকটা আওয়াজ যদি মুখ দিয়ে বের হয় তাহলে মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দিব। চুপ..
আইজান নুসরাতের কাঁধে মাথা রেখে দু-হাত দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে রাগে সামনের দাঁত দিয়ে কামড় মারল। নুসরাত ঠেলে দূরে সরাতে চাইল ব্যথায়, পারল না। আইজান শক্ত করে গলা পেঁচিয়ে নুসরাতের ধরে কাঁধে মাথা ফেলে দাঁড়িয়ে রইল। মাথা রাখা অবস্থায় বলল,” আম্মা, আব্বা! আম্মা আম্মা ম্মা মা মা!
আরশ দাঁত কেলানো বন্ধ করে বারান্দায় গেল। নুসরাত আইজানের কানে কানে বলল, “ওই যে বারান্দায় তোমার মামা! মামার কোলে যাও।
আইজান কোল থেকে নেমে গেল। বারান্দায় গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল কোলের উঠার জন্য। আরশ কোলে তুলার জন্য ঝুঁকতেই অপ্রার্থিব কথা শুনে তার মাথা ঘুরে উঠল।
” মামমা, মামমা!
নুসরাত রুমের ভিতর থেকে শব্দ করে হেসে উঠল। আইজানের উদ্দেশ্যে বলল,”আব্বা মামাকে বল কোলে নেওয়ার জন্য!
আইজান মামা আবার ডাকতেই আরশ চোখে মুখে অন্ধকার দেখল। নুসরাত বাহিরে তাকাতেই দেখল আরশ ধুপ করে সোফার উপর পড়ে গিয়েছে। নুসরাত হায় হায় করে বারান্দায় গেল। আইজান আরশের হাত ধরে টানছে আর মামা বলে ডাকছে। নুসরাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাথা এক হাত দিল। আরশকে টেনে কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে আসলো রুমে। ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর দুই হাত ঝাড়া মারল। হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে! মোটা কে টানতে গিয়ে। আইজান আরশের পিঠে বসে মামা বলে ডাকতে শুরু করল। নুসরাত কোলে তুলে নিয়ে আইজানকে বলল,”মামা ডাকতে হবে না বাবা! আব্বা ডাকো! বেচারা শক নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
” আব্বা, বাবাব্বা!
“তোর বাপের হার্ট অতিরিক্ত দূর্বল! অতিরিক্ত শক নিতে না পেরে সবসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । মায়ের মতো সাহসী জীবনে হবি! এসব ছোট দূর্বল হার্ট নিয়ে জীবনে মেয়ে পটাতে পারবি না। বুঝেছিস!
আইজান মাথা নাড়াল। কোল থেকে নামার জন্য মুচড়া মুচড়ি করল। নুসরাত বিছানায় ছেড়ে দিল আইজানকে। আইজান আরশের পিঠের উপর বসে ডাকল,”এই ঝে, এই ঝে, আব্বা বা বা ব্বা আব্বা!
আরশের জ্ঞান ফিরার পর থেকে ধ্যান মেরে বসে আছে। আইজান আর নুসরাতের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। নুসরাত আর আইজান দু-জন পিছনে বসে কথা বলছে। আরশ চুপচাপ বসে আছে! সে গভীর শোকাহত সাথে চিন্তিত! আইজানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ভবিষ্যতে তার ছেলে না তাকে মামা ডেকে বসে। এখনই তো মামা ডেকে তার হার্টের চলাচল কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার যদি ডাকে তাহলে সে তো টা টা হয়ে যাবে দুনিয়া ছেড়ে।
আরশ ঢোক গিলে এসে বসল নুসরাত আর আইজানের পাশ ঘেষে। ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ নুসরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে গালে চুমু খেলে শব্দ করে। আইজান একবার আরশের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজে নিজে কথা বলে খেলতে লাগলো। আরশ নুসরাতের মুখ দু-হাতের তালুর মধ্যে রেখে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল নুসরাতের চোখের দিকে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,” শোন নুসরাত!
নুসরাত চোখ তুলে তাকাল। আরশ নুসরাতের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,”আজ থেকে তুই ও ভুলে যাবি আমি তোর চাচাতো ভাই ছিলাম আর আমি ভুলে যাব এককালে তুই আমার বোন ছিলি!
নুসরাত ঠোঁট কামড়ে হেসে আরশের দিকে চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে বলল,”কেন ভাইয়া?
আরশ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
“আগে তো ভাইয়া ডাকতি না! এখন একটা বাক্যের সাথে লাগিয়ে ভাইয়া বলিস কেন? আমার ছেলে আমাকে মামা ডাকছে। কিছুক্ষণের জন্য আমার বাঁ-পাশের এই যন্ত্রের চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল এই মরে গেলাম। ওটা আমার বাচ্চা না! গাঁধাটা বাপকে মামা ডাকে।
আরশ নুসরাতের দুই হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
” তুই ও ভুলে যা আমি তোর ভাই ছিলাম আর আমি ও ভুলে যাচ্ছি তুই আমার বোন ছিলি!
নুসরাত হাসল। আরশকে জ্বালানোর জন্য বলল,
“আচ্ছা ভুলে গেলাম। কিন্তু,,
আরশ অসহায় গলায় বলল,
” আবার কিন্তু কেন?
“আপনি তো আমার বোনের দেবর লাগেন। আবার আমার চাচাতো ভাইয়ের ভাই লাগেন। তাহলে তো আমার ও ভাই আপনি!
আরশ নুসরাতের পিঠে কিল মারল।
” চূপ বেডি বেশি কথা বলিস তুই! থাপড়ে নাক বোচা বানিয়ে ফেলব।
“জেলাস আমার নাকের উপরে! আল্লাহ তো দেয়নি আমার মতো একটা সোজা নাক, তাই তো থাপড়ে ত্যাড়া করার চেষ্টা করছেন।
আরশ রাগী চোখে তাকিয়ে রইল। নুসরাতের কপালের সাথে কপালে লাগিয়ে ধুপ ধাপ মাথা দিয়ে বারি মারল। নুসরাতের মাথায় ধাক্কা মেরে বলল,” মহিলা মানুষ আসলেই ত্যাড়া! বাজে মহিলা!
নুসরাত খিলখিল করে হাসল। আইজান বিছানা থেকে নেমে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আরশ নুসরাতের দিকে রাগী চোখে তাকাল। নুসরাত আরশের বুকের বাঁ-পাশে হাত রেখে বলল,”আপনার পাজরের হাড় কতোটা বাজে তার তো ধারণা আপনি পেয়ে গেছেন তাই না? এখানে আমার কি দোষ আপনার পাজরের হাড় যদি খারাপ আর ত্যাড়া হয় তাহলে সেই পাজরের হাড় দিয়ে আমাকে তৈরি করলে আমি তো ত্যাড়া হবোই!
আরশ নুসরাতের গাল চেপে ধরল। গুলুমুলু গাল চেপে ধরতেই ঠোঁট বের হয়ে আসলো। আরশ আলগোছে ঠোঁটে চুমু খেয়ে নিল। তারপর শক্ত করে চেপে ধরল নিজের ঠোঁটের সাথে।
নুসরাত ধস্তাধস্তি করে চুমু ভাঙল। আরশের বুকে দুই হাত দিয়ে ঠেলে দূরে সরাতে সরাতে বলল,”দূরে সরুন বাজে লোক! এক বাচ্চার বাপ হয়ে ও এখনো চুমু খাওয়ার শখ মেটেনি।
আরশ নুসরাতের চুল চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। নুসরাতের ঘাড়ে দু-হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বলল,”চুপ বেডি! চুমু খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব দিবি না। দুই দিন হয়ে গিয়েছে চুমু খেতে পারিনি।
নুসরাত অবাক হয়ে বলল,
“গতকাল রাতে না গালে চুমু খেলেন।
“ওটা তো গালে খেয়েছিলাম। ঠোঁটে দু-দিন আগে লাস্ট খেয়েছিলাম। তোর ছেলের জন্য তো এক মিনিটের বেশি চুমু খেতে পারলাম না। গাঁধাটা তোকে চুমু খেতে দেখলেই কান্না করে। মায়ের মতো গাঁধা হয়েছে! এই বয়সে এত আনরোমান্টিক ছেলেটা বড় হয়ে যে কি হবে এর আল্লাহ ভালো জানে?
নুসরাত আরশকে দূরে সরাতে পারল না। সে আজ ঠায় নিয়েছে চুমু খাবে চুমু খেয়েই উঠবে তার আগে না। নুসরাত ধস্তাধস্তি বাঁধ দিয়ে বলল,” আচ্ছা চুমু খাবেন কিন্তু আস্তে ধীরে। ডান…
আরশ মাথা নাড়াল। নুসরাত গম্ভীর গলায় বলল,
“আগে ডান করুন!
” ডান!
নুসরাত হ্যাঁ বলার আগেই আরশ ঠোঁটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঠোঁট দু-একটা কামড় মারল সময় ওয়েস্ট করার জন্য। কিছুক্ষণ পর আরশের ঠোঁট কিছুটা শীতিল হয়ে আসতেই নুসরাত আরশকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল।
আরশ বিরক্তির চোখে তাকিয়ে বলল,
“কি চুমু খেতে দিবি না? ডিস্টার্ব করছিস কেন? নিজে তো চুমু খাবি না আমাকে ও চুমু খেতে দিচ্ছিস না।
নুসরাত আরশের ঠোঁট চেপে ধরে সামনে ফিরিয়ে দিল। ইরহাম দরজার সামনে হা করে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহামের কোলে আইজান। আইজানকে কোলে নিয়ে যেতে যেতে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,”মা বাপ দরজা খুলে রোমান্স করছে আর ছেলে আম্মা আব্বা বলে বলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চল বাপ তোর মা-বাপ আগে রোমান্স শেষ করে নিক তারপর না হয় তোকে নেবে। ভুল টাইমে তুই এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছিস। তাদের রোমান্স করার সময় এখনো শেষ হয়নি।
নুসরাত আরশের পিঠে থাপ্পড় মারল। আরশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,”অসভ্য লোক!
“আরে চুমু খাবো না, ধাক্কা মারছিস কেন? এখনো তো ঠিকভাবে চুমু খেতে পারলাম না।
নুসরাত চোখ রাঙিয়ে তাকাল। আরশের পিঠে কিল মেরে বলল,” এক বাচ্চার বাপ হয়ে গিয়েছেন! লজ্জা করে না, লুচ্চামি করতে।
আরশ দু-পাশে মাথা নাড়াল। নুসরাত আরশের মুখে খামচি মেরে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল। আরশ বিড়বিড় করে বলল,”এখানে লুচ্চা*মি টা করলাম কি?
১ মে ২০২৭
রাত তিনটা, ইসরাতের হঠাৎ করে পেট ব্যথা শুরু হলো। জায়িন ইসরাতকে মুচড়া মুচড়ি করতে দেখে এগিয়ে গেল। ইসরাত ততক্ষণে উঠে বসেছে। ঘামে ভিজে গেছে পুরো শরীর। জায়িন থাইগ্লাসের বাহিরে তাকাতেই দেখল বৃষ্টি হচ্ছে। ইসরাত পেটের ব্যথায় কান্না করে দিল। জায়িন আকস্মিক ইসরাতকে কান্না করতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে?
“ব্যথা উঠেছে!
কথাটা শেষ করে ইসরাত ফুঁপিয়ে উঠল। জায়িন ইসরাতের কান্না দেখে নিজের চোখের কোণে জল জমা হলো। ইসরাতের সাথে নিজে ও কেঁদে উঠল।
ইসরাত জায়িনের দিকে তাকাল। নাক টেনে জিজ্ঞেস করল,” আপনি কান্না করছেন কেন?
“তোমার কান্না দেখে আমার কান্না চলে আসছে রেই।
ইসরাত জায়িনের দিকে বিরক্তির চোখে তাকাল। পেট ব্যথার জন্য ঠোঁট কামড়ে জায়িনের মাথায় থাপ্পড় মারল। জায়িন ইসরাতের দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছল। শাসানো গলায় বলল,” বলদ লোক ক্রিস্টেবেলা কে ডাকুন। গাধার মতো বসে কান্না করছেন কেন?
জায়িন মাথা নেড়ে ক্রিস্টেবেলাকে নিয়ে আসতে গেল। ক্রিস্টেবেলার কেবিনে গিয়ে জায়িন কথা বলতে পারল না কান্নার জন্য। ক্রিস্টেবেলা জায়িনের দিকে বিরক্তির চোখে তাকিয়ে হাঁটা দিল ইসরাতের রুমের দিকে। তার ক্যারিয়ার জীবনে দেখা সব থেকে অদ্ভুত কেস এইটা। বাচ্চাগুলো যেমন দুনিয়ায় আসতে চাইছে না বাপ তেমন এগুলোকে আনবে বলে কান্না কাটি করে সব শেষ করে ফেলছে।
রাত ৩:৩০ মিনিটের সময় ইসরাতকে ডেলিভারি রুমে নেওয়া হলো। ইসরাতকে ডেলিভারি রুমে ঢুকানোর আগে জায়িন ইসরাতের হাত ছাড়ছিল না। ক্রিস্টেবেলা এক প্রকার টেনে নিয়ে গেছে ইসরাতকে ডেলিভারি রুমে। মনে মনে গালি ও দিয়েছে জায়িনকে দু-একটা।
ভোর ৪:৫০ মিনিটের সময় ডেলিভারি রুমের দরজা খুলে বের হয়ে আসলো একজন নার্স আর ক্রিস্টেবেলা। মৃদু গলায় কান্না করছে বাচ্চা গুলো। ক্রিস্টেবেলা জায়িনের কোলে একটা শিশুকে তুলে দেওয়ার জন্য বাড়িয়ে দিয়ে বলল,” কংগ্রেস মিস্টার জাইন, আপনার একটা মেয়ে এবং একটা ছেলে হয়েছে।
জায়িন কোলে নিল না। দুঃখি গলায় বলল,
“আমার স্ত্রী!
” আপনার স্ত্রী সুস্থ আছেন! এবার বাচ্চা কোলে নিন।
জায়িন দু-জনকে দু হাত দিয়ে কোলে নিল। আইজানের তুলনায় এরা একটু বেশি ছোট। জায়িন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মেয়ের দিকে। মেয়ের মুখের রং শ্যামলা হয়েছে! চোখের সামনে ভেসে উঠল নুসরাতের মুখ! জায়িন বিড়বিড় করল,”আর কারোর রং পেলি না মা, আমার জল্লাদ শালীর রং পেলি।
জায়িন দু-জনের কানে আজান দিল। ফিসফিস করে কানে কিছু বলল তারপর ঠোঁট, গালে, নাকে, চুমু খেল। বিড়বিড় করে বলল,”আমার ঈশানী,আমার জোহান! আমার দুই কলিজা!
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৮
জায়িন দু-জনকে কোলে নিয়ে ইসরাতের কেবিনে গেল। ইসরাতের দিকে তাকিয়ে তাকল অনেকক্ষণ! তারপর ইসরাতের কপালে চুমু খেল আলগোছে। বাচ্চা গুলো কান্না করছে মৃদু স্বরে। জায়িন একবার বাবুদের দিকে তাকিয়ে ইসরাতকে ফিসফিস করে বলল,”জীবনে সুখী হও! স্বামীর সাথে হাসি খুশি থাকো! সন্তান দিয়ে ফুটবল টিম বানাও! বাচ্চায় ঘর ভরে যাক এই দোয়া দিলাম তোমাকে রেই। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারলাম না কারণ দু-জন আমার হাত জুড়ে বসে আছে। ভালো থেকো সুস্থ থাকো! স্বামীর মন যুগিয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকো।
কথা শেষ করে মৃদু হাসলো জায়িন।